মেয়েদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া
তাহমিনা হক জয়া
বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ।
মেয়েদের স্বাস্থ্য সমস্যার প্রধান একটি সমস্যা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করার প্রধান জীবাণুটি হলো ব্যাকটেরিয়া। তবে ছত্রাক এবং ভাইরাসও এ ধরনের প্রদাহ ঘটায়। মেয়েদের মূত্রনালী পায়ুপথের খুব কাছে থাকে বলে সহজেই জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। ই-কলাই নামক জীবাণু শতকরা ৭০-৮০ ভাগ প্রস্রাবের প্রদাহের কারণ। অনেক সময় যৌন সঙ্গমের কারণেও জীবাণু মূত্রনালীতে প্রবেশ করে। এসব জীবাণু মূত্রনালীপথে মূত্রথলিতে ও কিডনিতে প্রবেশ করে।
এড়্গেত্রে শুধু প্রস্রাবে জ্বালাপোড়াই করে না, বার বার প্রস্রাবের বেগ হয়, ফোঁটায় ফোঁটায় প্রস্রাব পড়ে। প্রস্রাবের রঙ ধোঁয়াটে, দুর্গন্ধযুক্ত ও পরিমাণে কম হয়। মাঝে মাঝে তলপেটে ব্যথা হতে পারে। যৌনকাজে অনিচ্ছা জাগে। অনেক সময় শরীরে জ্বর আসে। মাঝে মাঝে বমি হতে পারে। নববিবাহিত মেয়েদের মধুচন্দ্রিমা যাপনকালে প্রস্রাবের প্রদাহ হতে পারে। গর্ভবতী মহিলারা প্রস্রাবের প্রদাহে আক্রান্তô হন। চিকিৎসা ড়্গেত্রে প্রচুর পানি খেতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শমতো। এ সময় সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে। গর্ভবতী মহিলাদের ড়্গেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে?
০ প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। পানির পরিমাণ এত বেশি হতে হবে যাতে দৈনিক কমপড়্গে দুই লিটার প্রস্রাব তৈরি হয়। দিনের মধ্যে দুই থেকে তিন ঘন্টার মধ্যে প্রস্রাব করতে হবে। কখনো প্রস্রাব আটকে রাখা যাবে না।
০ ঘুমোতে যাওয়ার আগে এবং ঘুম থেকে জাগার পর প্রস্রাব করতে হবে।
০ সহবাসের পর পানি দিয়ে ভালোভাবে প্রস্রাবের রাস্তôা ধুয়ে ফেলতে হবে।
০ মলত্যাগের পর শৌচকাজ সতর্কতার সাথে করতে হবে যাতে ঐ পানি প্রস্রাবের রাস্তôায় না আসে। ম ডাঃ মিজানুর রহমান কলেস্নাল
কম ঘুমে মহিলাদের বস্নাড প্রেসার
সারাদিনের খাঁটুনির পর রাতের ঘুম দেয় প্রশান্তিô। দূর করে সব ক্লান্তিô। দেয় পরদিন নতুন উদ্যোমে কাজ করার শক্তি। কিন্তু ঘুমটি হওয়া চাই নির্বিঘ্ন ও অবশ্যই পর্যাপ্ত। ঘুম যদি পর্যাপ্ত না হয় তাহলে তা শরীরের ওপর অত্যন্তô নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা অপর্যাপ্ত ঘুম নীরবে শরীরের নানা ড়্গতি করে।
সম্প্রতি একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন অপর্যাপ্ত ঘুম কিভাবে মহিলাদের বস্নাড প্রেশার বা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা যায়, যেসব মহিলা দিনে সাত ঘন্টারও কম ঘুমায় তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
যুক্তরাজ্যের গবেষকরা ১০ হাজারেরও বেশি পুরম্নষ ও মহিলার ওপর পাঁচ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে দেখেন, যেসব মহিলা দিনে ছয় ঘন্টা বা তারও কম ঘুমিয়েছে তারা অন্যদের তুলনায় বেশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তô হয়েছে।
যেসব মহিলা রাতে সাত ঘন্টা করে ঘুমিয়েছে তাদের তুলনায় যারা ছয় ঘন্টা করে ঘুমিয়েছে তাদের উচ্চ রক্তচাপে ভোগার সম্ভাবনা ৪২ শতাংশ বেশি বলে গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন।তবে গবেষকরা পুরম্নষদের ড়্গেত্রে কম ঘুমের সাথে উচ্চ রক্তচাপের সম্পর্ক খুঁজে পাননি। যুক্তরাজ্যের কেভেন্ট্রি’র ওয়ারউইক মেডিকেল স্কুল-এর ডক্টর ফ্রান্সিসকো পিজ্ঝ ক্যাপসিও-এর নেতৃত্বে গবেষকরা ১০ হাজার ৩০০ জনের ওপর দীর্ঘমেয়াদী এ গবেষণা চালান। তখন ঐ ব্যক্তিদের বয়স ছিল ৩৫ থেকে ৫৫ বছর। গবেষণা শেষে দেখা যায়, ঐ ব্যক্তিদের ২০ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তô হয়েছে এবং তাদের বেশির ভাগই সেইসব মহিলা যারা কম ঘুমিয়েছে।
গবেষকরা ধারণা করেছেন, অপর্যাপ্ত ঘুম স্নায়ুতন্ত্রকে অতিমাত্রায় সক্রিয় রাখেযৈা হার্ট ও রক্তনালীসহ শরীরেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
উঠতি বয়সী মেয়েদের স্বাস্থ্য
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
মেয়েরা যখন বড় হয়ে ওঠে, তখন সৌন্দর্যসচেতন হয়ে ওঠে স্বভাবতই। আর স্বাস্থ্যসচেতন হওয়া আরও প্রয়োজন।
তাই গ্রুমিং ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু আলাপচারিতা। যখন খুব ছোট, তখন স্মান করতে পালাই-পালাই ভাব ছিল অনেকের। কিন্তু যখন উঠতি বয়স, বড় হওয়ার সময়, তখন গোসল-বারবার করারই ইচ্ছা হয়।
বোঝা যায় যে স্মান করা আর পরিহার করার বিষয় নয়। হয়তো মনে হয় শরীরে যেসব পরিবর্তন হচ্ছে, সে জন্য নতুন আরও স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতা বিধি জরুরি হয়ে পড়ছে। যা হোক, মেয়েরা সে বয়সে নিজের মধ্যে যে পরিবর্তনগুলো দেখে, এতে অনুভব করে, নিজেদের দেখতে একটু অন্য রকম লাগছে, শরীরের বসনও ভিন্ন। বড় হয়ে ওঠার সময় হলো।
ঘামলেই শরীরে দুর্গন্ধ নয়
ব্যায়াম না করলেও শরীর থেকে প্রায় তিন পোয়া পানি বেরিয়ে যায়। তাই শরীর যাতে শীতল থাকে, সে জন্য প্রচুর পানি পান করা দরকার। হয়তো বেশ ঘাম হচ্ছে, গরম পড়েছে, দেহের যে স্বেদগ্রন্থিগুলো রয়েছে, সেগুলো ঝরবেই। বয়ঃসন্ধিকালে স্বেদগ্রন্থিগুলো আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে।
ঘাম হওয়া স্বাভাবিক, স্বাস্থ্যকর ও প্রয়োজনীয় ব্যাপার। শরীরের ভেতর দেহযন্ত্রগুলো কাজ করছে অহর্নিশ, হৃৎপিণ্ড স্পন্দিত হচ্ছে, পাকস্থলীতে পরিপাক হচ্ছে, মস্তিষ্ক চিন্তা করছে, পেশি সচল হচ্ছে, সেসব কাজের জন্য দেহে তৈরি হচ্ছে তাপ।
দেহতাপ এভাবে উঠে যেতে পারে বিপজ্জনক মানে, আর তাই দেহের তাপ থেকে দেহ মুক্ত না হলে মৃত্যুও ঘটতে পারে। আর সে জন্যই ঘামের প্রয়োজন।
দেহে যে বাড়তি উত্তাপ তৈরি হচ্ছে, এ থেকে মুক্ত হতে গেলে ঘাম হওয়া প্রয়োজন।
উত্তপ্ত দিনে এ জন্য শরীর থাকে নিরাপদ তাপমাত্রায়, ঘাম হয় বলেই তো। ত্বকের ঘামের বিন্দু দেখা না গেলেও আমাদের ঘাম কিন্তু হচ্ছে, তাপও নির্গত হচ্ছে।
দেহের সর্বত্রই রয়েছে স্বেদগ্রন্থি, তবে বেশি রয়েছে বগলে, পায়ের নিচে ও কুচকিতে। অবশ্য লক্ষ করা গেছে, এসব স্থানে বেশি ঘাম হয়, গন্ধও হয়। এগুলো স্বাভাবিক, এবং নিরাপদেই একে মোকাবিলা করা যায়।
ঘামের গন্ধ হয় কীভাবে
অবাক ব্যাপার হলো, একে ঘামের গন্ধ বলা হলেও এই দুর্গন্ধের জন্য ঘাম কিন্তু দায়ী নয়।
দেহে যেসব ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, এগুলো ঘামের সংস্পর্শে এলে এমন দুর্গন্ধ হয়। আর ঘামের চরিত্র ভিন্ন হতে পারে; ব্যায়াম করলে শরীরে যে ঘাম হয় আর নার্ভাস বা ভয় পেলে যে ঘাম হয়, দুটো একই রকম নয়।তাই ব্যায়াম করার পর ঘামে দুর্গন্ধ না পেলেও চাপগ্রস্ত পরিস্থিতির পর ঘামে গন্ধ হতে পারে। বগলের ঘামে এমন কিছু আছে, যাতে এটি ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে জোরে প্রতিক্রিয়া করে, তাই বেশি ঘামে গন্ধ।
যেমন ক্লাসে একগাদা ছেলেমেয়ের সামনে প্রথম দিন বক্তৃতা দেওয়ার পর শিক্ষকের দেহে যে ঘাম হবে, এতে গন্ধ বেশি হওয়া স্বাভাবিক। পায়ে ঘামের গন্ধ বিব্রতকর। কারও কারও এ সমস্যা বেশি হয়।
ঘামের গন্ধ প্রতিরোধ
পায়ে যদি এমন দুর্গন্ধ হয়, তাহলে মোছার ন্যাকড়া বা টাওয়েল দিয়ে প্রতিদিন পা মোছা উচিত। বেবি পাউডার পায়ে দিলে এবং পরিষ্কার মোজা পরলে ঘাম ও দুর্গন্ধ দুটোই কমবে।
যদি মোজা না পরে স্যান্ডেল বা জুতা কেউ পরেন, তাহলে বাতাস চলাচল করে এমন পাদুকা পরা উচিত। পায়ে স্বেদরোধী বা অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট ব্যবহার করতে হবে। গন্ধ শুষে নেয় এমন শুকতলা জুতায় ব্যবহার করা উচিত। এ ছাড়া রাতে জুতা খোলা হাওয়ায় রাখা উচিত।
প্রায় প্রত্যেকের জীবনে কোনো না কোনো সময়ে শরীরে ঘামের গন্ধ হয়, তবে একে মোকাবিলা করেন অনেকেই সন্তর্পণে। নিজে সজীব ও সতেজ থাকার উপায় প্রতিদিন গোসল করা, যাতে শরীরের ধুলো-ময়লা ধুয়ে যায়। কোমল সাবান আর খুব বেশি পরিমাণে কুসুম গরমপানি ব্যবহার করতে হবে। তবে শুষ্ক ত্বক থাকলে শুষ্কতা বাড়িয়ে দিতে পারে উষ্ণ পানি।
প্রতিদিন পরা উচিত পরিষ্কার মোজা ও অন্তর্বাস। সুতি অন্তর্বাস সবচেয়ে ভালো।
সোয়েটার বা গরম জামা পরতে হলে নিচে পরা উচিত সুতির টিশার্ট। বগলে ঘাম হওয়া স্বাভাবিক, তাই ডিওডরেন্ট বা অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট বগলে ঘাম হওয়া রোধ করতে পারে। ডিওডরেন্ট তা রোধ করতে পারে না, তবে বগলে গন্ধ আড়াল করে রাখতে পারে।
সূত্রঃ দ্য ন্যাশনাল উইমেন হেলথ ইনফরমেশন সেন্টার
প্রসবোত্তর মায়ের মানসিক সমস্যা
ডা. জিল্লুর কামাল
লেখকঃ সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।
মোবাঃ ০১৭১১৮১৯৫৩৭, ০১৮১৯২২৬৭০৮
সন্তান প্রসব একজন নারীর জীবনে অতি কাঙ্ক্ষিত ব্যাপার। প্রসবের সাথে সাথে নারী দীর্ঘদিনের গর্ভধারণে পরিবারের সাথে গর্ভকালীন নানা দৈহিক হরমোনাল পরিবর্তনের পরিসমাপ্তি ঘটে। প্রসব করার কাজটিও বেশ পরিশ্রমের। সন্তান প্রসবের পর পর মায়ের দেহে দ্রুত পরিবর্তন ঘটায় তার মধ্যে কিছু শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা দেখা দেয়। এ সময়ের মানসিক অসুস্থতাগুলোকে তিনটি ভাগে বর্ণনা করা যায়।
১. মেটারনিটি ব্লু
২. পারপিউরাল সাইকোসিস
৩. পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন
১. মেটারনিটি ব্লুঃ শতকরা ৫০-৭০ ভাগ মা এ সমস্যায় ভোগেন। প্রসবের তিন-চার দিন পর অসুস্থতা দেখা দেয়। এ সময় মায়ের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। তার মুডে ত্বরিত পরিবর্তন হয় এই খুশি, এই দুঃখ; মাঝে মধ্যে অকারণেই কেঁদে ফেলে, সব কিছুতে কেমন ঘোলা ঘোলা ভাব।
এ অবস্থার জন্য তেমন কোনো চিকিৎসার দরকার হয় না। কয়েক দিনের মধ্যেই প্রসূতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এ অসুস্থতার একটা সামাজিক গুরুত্ব আছে। বিশেষত পুত্রসন্তান চাচ্ছেন এমন মা কন্যাসন্তান প্রসব করলে তার আশপাশের লোকজন এ অসুস্থতাকে ‘পুত্র’সন্তানের জন্য মন খারাপ বলে মনে করেন। এ রকম ভাবনা প্রসূতির পরিচর্যায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
২. পারপিউরাল সাইকোসিসঃ প্রসবোত্তর মানসিক সমস্যার মধ্যে এ রোগটিই মানুষের কাছে বেশি পরিচিত। প্রতি হাজার প্রসূতির মধ্যে এক থেকে দু’জন এ রোগে আক্রান্ত হন। সাধারণত প্রসবোত্তর প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তায় এ রোগটি দেখা দেয়। এ রোগের প্রধান উপসর্গগুলো ঘুম না হওয়া, বিরক্তি, খিটখিটে মেজাজ, খাওয়া-দাওয়া ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার প্রতি উদাসীন, আবোল-তাবোল বলা, বাড়ির বাইরে এদিক-ওদিক চলে যেতে চাওয়া, অযথা ভয় পাওয়া, সন্তানটির যত্ন না নেয়া, যেমন- নবজাতক সম্পর্কে ভ্রান্ত বিশ্বাস এ সন্তান আসলে একটা শয়তান বা খারাপ কিছু, একে মেরে ফেলাই ভালো।
চিকিৎসাঃ বৈদ্যুতিক চিকিৎসা (ইসিটি) এ রোগের অতি কার্যকর চিকিৎসা। এন্টিসাইকোটিক ওষুধের দ্বারা রোগটির চিকিৎসা করা হয়। কয়েক মাসের মধ্যেই অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে যায়। কিছু কিছু রোগীর অসুস্থতা দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে।
৩. পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনঃ প্রসবোত্তর বিষণ্নতার প্রকোপ কম নয়, প্রায় শতকরা ১০-১৫ জন প্রসূতি প্রসবোত্তর বিষণ্নতায় ভোগেন। সাধারণত প্রসবের দুই সপ্তাহ পর এ সমস্যা শুরু হয়। রোগিণী অত্যন্ত ক্লান্তবোধ করেন, অহেতুক দুশ্চিন্তা করেন এবং অযথা ভয়ভীতি পান, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, মন বিষণ্ন থাকে। এ সময় প্রসূতির মনে এমন ভ্রান্ত বিশ্বাস জন্ম নিতে পারে যে সদ্যজাত সন্তানের কোনো শারীরিক বা মানসিক খুঁত আছে, সন্তানটি তিনি মানুষ করতে পারবেন না, অতএব একে মেরে ফেলাই ভালো। প্রসূতি নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারেন।
চিকিৎসাঃ সাইকোথেরাপি, সামাজিক সচেতনতার উন্নয়ন ও বিষণ্নতাবিরোধী ওষুধ দ্বারা এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। প্রয়োজনে বৈদ্যুতিক চিকিৎসা (ইসিটি) ব্যবহার করা যেতে পারে।
কাদের প্রসবোত্তর মানসিক সমস্যা
বেশি হয়ঃ
যেকোনো প্রসূতির প্রসবোত্তর মানসিক সমস্যা হতে পারে। তবে কিছু কিছু বিষয় এ ধরনের মানসিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। যেমন কম বয়সী মা, আগে যার মানসিক অসুস্থতা হয়েছিল, যার পরিবারের মানসিক অসুস্থতার ইতিহাস আছে, তা সদ্যজাত সন্তানের যত্নের জন্য মায়ের ওপর যে চাপ থাকে তা লাঘবের পারিবারিক বা সামাজিক ব্যবস্থা না থাকা, মানসিক চাপ, দাম্পত্য অশান্তি ইত্যাদি।
প্রতিরোধঃ
যেসব কারণে সদ্যপ্রসূতির মানসিক সমস্যার সম্ভাবনা বেড়ে যায় সেসবের প্রতিবিধান করতে পারলে এসব মানসিক রোগ প্রতিরোধ করা অনেকাংশে সম্ভব। এ জন্য দরকার বিশ বছর বয়সের আগে মা না হওয়া, সদ্যপ্রসূতির শারীরিক ও মানসিক বিশ্রামের ব্যবস্থা করা, সদ্যজাত শিশুর যত্নের জন্য পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, দাম্পত্য কলহ মিটিয়ে ফেলা। তার পরও মানসিক সমস্যা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব তার চিকিৎসা নিতে হবে। এতে রোগীর সুস্থতা নিশ্চিত হবে আর মানসিক অসুস্থতার জটিলতাও কম থাকবে।
গর্ভাবস্থায় শরীর ও ত্বকের যত্ন
ডা. সায়লা পারভীন (মিলি)
লেখকঃ স্ত্রীরোগ, প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস, রোড -২৮, বাড়ি -১৬, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা। মোবাইল -০১৭১১৫৬৩৫১৭
গর্ভাবস্থা একটি স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় অবস্থা। যখন শরীরে অনিবার্য কতগুলো পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। যেমন- ভ্রূণ ধীরে ধীরে বড় হয়, ফলে জরায়ু বড় হতে থাকে। পেট উঁচু হতে থাকে। রক্তের পরিমাণ বাড়ে। কিন্তু হিমোগ্লোবিন কমে। শরীরের ওজন বাড়ে। চর্বিও জমা হয় দেহে। পেটের ত্বকেও স্ট্রেচ পড়ে তাই ফাটা ফাটা দাগ হয়। এটাকে বলে স্ট্রিয়া গ্রাভিডেরাম (ঝয়ড়মথ এড়থংমনথড়ৎশ) এই ফাটা কারো কারো কম হয় বা হয় না একেবারেই। আবার কারো খুব বেশি হয়। গর্ভাবস্থায় কেউ কেউ পুরোপুরি সুস্থ স্বাভাবিক থাকে। কেউ কেউ গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন, যা কখনো কখনো মৃত্যু পর্যন্ত ঘটায়। ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্যসমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করা ও যথাযথ চিকিৎসা নেয়ার জন্য গর্ভবতীকে নিয়মিত স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ দ্বারা মেডিক্যাল চেকআপ করানো উচিত।
প্রথম ভিজিট অর্থাৎ প্রথম তিন মাসে একবার চেকআপ করানো উচিত। তখন রোগীর ওজন, উচ্চতা, ব্লাড প্রেসার চেক করি। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। (১) ঐদ% (২) ইলসসন বড়সহমষব থষন জভ য়ীহমষব (৩) ইলসসন --- (৪) টড়মষপ জ/গ/ঊ থষন ধ/দ (৫) ঐইঢ় অঝ (৬) ঠউজখ (৭) ইলসসন ঢ়ৎবথড় ্ভসশ থফয়পড় ৭৫বশ বলৎধসঢ়প. (৮) হড়পবষথষধী য়পঢ়য়
যদি সম্ভব হয় তাহলে - (৯) টঝএ-য়স ঢ়পপ হড়পবষথষধী হড়সফমলপ.
রোগীকে কিছু কাউন্সেলিং করা হয় গর্ভাবস্থা ও পরবর্তী দুগ্ধদান সম্পর্কে। রোগীর খাবার ও বিশ্রাম সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়।
নিয়মিত, পরিমিত, পুষ্টিকর খাবার যার পরিমাণ গর্ভাবস্থার আগের থেকে ৩০০ কিলোক্যালরি বেশি হবে। দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার খেতে হবে। তিনটি প্রধান খাবার (ভালো খাবার), তিনটি স্ন্যাকস (হালকা) জাতীয় খাবার খেতে হবে।
সকালেঃ রুটি বা ভাত, সবজি, ডাল,
ডিম একটি, দুধ এক গ্লাস
ফল-মৌসুমি ফল- যেকোনো একটি
১১টায়ঃ ফল একটি,
মুড়ি/ চিঁড়া/ বিস্কুট
২টায়ঃ ভাত, ডাল, সবজি, মাছ বা গোশত- দু’টুকরা
বিকেলেঃ চা, বিস্কুট/ মুড়ি/ চিঁড়া
দই বা দুধ ১ গ্লাস
রাতেঃ ভাত/রুটি+সবজি+ডাল+ মাছ বা গোশত
শোয়ার আগেঃ হরলিকস/ দুধ ১ গ্লাস
স্যান্ডউইচ বা ফল
বিশ্রামের ব্যাপারেও তাকে সতর্ক থাকতে হবে। দিনে ২-৩ ঘণ্টা বা কাত হয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। রাতে ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
যাবতীয় সাংসারিক কাজ, রান্না করা যাবে। তবে ভারী বস্তু তোলা নিষেধ। চাপকল চাপা যাবে না। যাদের একেবারেই কাজ করা হয় না, তারা সকালে বা বিকেলে হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করতে পারবেন, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো।
ত্বকের যত্নঃ শীতকালে বেশি ত্বকের যত্ন দরকার হয়। কুসুম গরম পানিতে সাবান দিয়ে গোসল করবেন। গোসলের পর অলিভ অয়েল বা ভালো কোনো লোশন দিয়ে পুরো শরীর ম্যাসাজ করবেন। পেট ত্বক ফাটা রোধ করতে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো আধুনিক ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। তা ছাড়া দিনে দু-তিনবার অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করতে পারেন। তাতে পেটে ফাটা দাগ কম পড়ে। পরিশেষে বলতে চাই, পরিবারে কেউ গর্ভবতী হলে তাকে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়মিত নিয়ে যাবেন (গাইনোকলোজিস্ট) চেকআপের জন্য। তাকে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত তাকে বিশ্রাম নিতে দিন। তাহলেই একটি সুস্থ মা ও সুস্থ সবল শিশুর জন্মদান সম্ভব। একটি হাবাগোবা, রোগাপটকা, অসুস্থ বা ত্রুটিপূর্ণ শিশু যে কী বোঝা, তা শুধু যার শিশু ওই রকম তিনিই বলতে পারবেন। যেমন সাপে কাটলে বিষের যে কী যন্ত্রণা, তা শুধু যাকে সাপে কেটেছে সে-ই বলতে পারে। তেমনি অসুস্থ রুগ্ণ মা বা শিশুর জন্ম দিয়ে যে মা মারা যায়, উপযুক্ত পুষ্টি, ওষুধ ও চিকিৎসার অভাবে, সে-ই শিশু বা তার পরিবার, জানে যে মা হারা পরিবার কত অসহায়; জনম দুঃখী। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করি, যেন গর্ভাবস্থায় সব মাকে আমরা পুষ্টিকর, সুষম, পরিমিত, নিয়মিত, আহার দেবো। তাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেবো, তাকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও টিকা দেবো। অসুখ-বিসুখে তাকে উপযুক্ত চিকিৎসা দেবো। তাকে সবসময় হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করব, যার ফলে একটি সুস্থ সবল শিশু ও মা দুয়েরই প্রাপ্তি হবে।
প্রজননস্বাস্থ্য সমস্যা
পরামর্শ দিয়েছেন
ডাজ্ঝ রওশন আরা খানম
স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক, বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা
সমস্যাঃ আমার বয়স ৩১। আমরা সন্তান নিতে চাইছি, কিন্তু আমার স্ত্রীর কনসিভ হচ্ছে না। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে আমি সিমেন পরীক্ষা করিয়েছি; কিন্তু কোনো শুক্রাণু পাওয়া যায়নি।
আমার স্ত্রীর রিপোর্ট ভালোই এসেছে। আগে একবার আমার স্ত্রী কনসিভ করেছিল, কিন্তু বাচ্চাটা রাখতে পারিনি। আমার হেপাটাইটিস-বি পজিটিভ আছে। হেপাটাইটিস-বি পজিটিভ হলে কি শুক্রাণু নষ্ট হয়? নাকি অন্য কারণে? পরামর্শ দিয়ে মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি দিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শঃ আপনার স্ত্রী আগে কনসিভ করেছিলেন; কিন্তু তা কত দিন আগে সেটা জানাননি। যদি এ সময়ে আপনার এমন কোনো অসুখ হয়ে থাকে, যাতে শুক্রাণু তৈরিতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় অথবা শুক্রাণু নির্গমনে বাধা সৃষ্টি হয়, তাহলে এ রকম হতে পারে।
তা না হলে শুধু হেপাটাইটিস-বি পজিটিভের কারণে শুক্রাণু নষ্ট হওয়ার কথা নয়। আপনি আবারও পরীক্ষা করিয়ে দেখতে পারেন। অবশ্যই পুরুষ-বন্ধ্যত্ব নিয়ে কাজ করেন এমন কোনো বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করে পরামর্শ নিন।
গর্ভপাতের কারণ ও প্রতিকার
গর্ভধারণ করার পর প্রসবকাল পর্যন্তô চলিস্নশ সপ্তাহের পরিক্রমায় জমাট পানি থেকে পূর্ণাঙ্গ শিশুর অবয়ব পর্যন্তô বিভিন্ন আকার-প্রকার ধারণ করে। এর প্রথম চতুর্থ সপ্তাহ থেকে আটাশ সপ্তাহের মধ্যে যদি কোন কারণে গর্ভস্থ সন্তôান নষ্ট হয় তাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে মিসক্যারেজ। ২৮ সপ্তাহ থেকে ৩৭ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভস্থ সন্তôানের মৃত্যু হলে তাকে বলা হয় প্রিটার্ম লেবার। তাছাড়া ৩৭ সপ্তাহ থেকে ৪০ সপ্তাহের মধ্যে যদি গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হয় তখন তা টার্ম লেবার অর্থাৎ এ সময় গর্ভস্থ শিশু পূর্ণ অবয়ব পায়।
মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত হয় আর্লি স্টেজে অর্থাৎ পাঁচ মাসের মধ্যে। এ সময় গর্ভস্থ শিশুর তেমন অবয়ব গড়ে ওঠে না। কিন্তু ২৮ সপ্তাহের পরে, যা প্রিটার্ম লেবার বলে পরিচিত। এ সময় মানবিক আকৃতির অনেকটাই হয়ে যায়। কোন কারণে সেই শিশু যদি মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন তাকে বাঁচানো প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। কারণ আমাদের দেশে অতোটা উন্নত ধরনের যন্ত্রপাতি আর্থিক সংকটের কারণে আনা সম্ভব হয় না।
মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসা শিশু বাইরের শীত-গরম বায়ুদূষণের প্রতিকূল অবস্থা বুঝতে পারে না। ফলে অপরিণত শিশুর শ্বাসকষ্ট হয়। ঐ শিশুর পাকস্থলি, লিভার, থার্মোরেগুলেটরি সেন্টার এবং ইমিউনিটি ডেভেলাপ করে না।
এছাড়া লাঙ্গসের মধ্যে যে অ্যালভিউলাস মেমব্রেন থাকে, যা দিয়ে অিজেন যাতায়াত করে। একে সাহায্য করে সারফেকটেন্ট নামে এক রকম ক্যামিক্যাল, এর অভাবে অপরিণত শিশুর শ্বাসকষ্ট হয়। তার পরিণতিতে মৃত্যুও হতে পারে।
আমরা যে কোন খাবার খাই না কেনো, তা হজম রেচনের পর শরীর পায় কার্বোহাইড্রেট, শর্করা, প্রোটিন, পানি ও মিনারেল। হজম রেচনের পরিক্রমায় শিশুর অপরিণত পাকস্থলি থাকায় খাবার ভেঙ্গে প্রসেস করতে পারে না। এছাড়া শিশুর লিভার অপরিণত থাকায় সহজেই জন্ডিসে আক্রান্তô হয়। যার পরিণতি হতে পারে মারাত্মক।
আমাদের ব্রেনের মধ্যে থার্মোরেগুলেটরি সেন্টার আছে যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরের তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট অর্থাৎ স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় থাকে। কিন্তু এসমস্তô শিশুর ড়্গেত্রে থার্মোরেগুলেটরি সেন্টার অপরিণত থাকার কারণে গরম বা ঠান্ডা পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। ফলে হিট বা কোল্ড স্ট্রোক হয়। পরিণামে মৃত্যুও হতে পারে।
তাছাড়া ঐসব শিশুর ইমিউনিটি পাওয়ার ডেভেলাপ করে না। অর্থাৎ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ড়্গমতা গড়ে ওঠে না। ফলে ভাইরাস আক্রান্তô বা সংক্রমিত হয়ে অপরিণত শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। আমাদের দেশে এই সমস্তô প্রিমেচিওর বেবি বা অপরিণত শিশুকে বাঁচানো কষ্টসাধ্য।
গর্ভপাত কেনো হয়
গর্ভস্থ শিশু, মা, বাবার বা দুইজনের শারীরিক ত্রম্নটির কারণে গর্ভপাত হয়। মায়ের যদি হাইপ্রেসার, ডায়াবেটি, হঠাৎ কোন কারণে জ্বর হয়। এছাড়া রক্ত ও জরায়ুর সংক্রমণ, রক্তে টোপস্নাজমার সংক্রমণ হলে ও জরায়ুতে টিউমার বা ফাইব্রয়েড থাকলে গর্ভপাত হতে পারে। অনেক সময় বাচ্চা ধরে রাখার ড়্গমতা জরায়ুর থাকে না। ডাক্তারি পরিভাষায় তাকে বলে সারভাইবাল ইনকমপেন্টন্স। জরায়ুর পানি কম থাকলে গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হতে পারে। তাছাড়া প্রসবের সময় পেরিয়ে গেলে জরায়ুর পানি কমতে বা ঘন হতে থাকে। এক সময় গর্ভস্থ শিশু দুর্বল হতে হতে মারা যায়। মা ও শিশুর দুইজনের শারীরিক ত্রম্নটি থাকার কারণে শিশু বিকলাঙ্গ, মাথা বড় বা পেটের কোন অংশ ডেভেলাপ করে না। তখন গর্ভপাত ঘটতে পারে।
মিসক্যারেজ বা গর্ভপাতের আরো অনেক কারণ আছে। যেমন, জেনেটিক ডিফেক্ট, ক্রোমজমের অ্যাবনরমালিটি, হরমোনাল ডিফেক্ট ইত্যাদি। হরমোন প্রজেস্টোরন ও এইচসিজি মায়ের জরায়ুকে ইরিটেট করা থেকে শান্তô রাখে। অর্থাৎ ক্রমাগত ধাক্কা থেকে মুক্ত রাখে। ফলে বাচ্চা মাতৃগর্ভে অড়্গত থাকে। কিন্তু এই দুই হরমোনের পরিমাণ বেড়ে গেলে বা কমে গেলে, ইনবেলেন্সড হলে, বাচ্চা বেরিয়ে যেতে পারে।
আবার থাইরয়েড হরমোন কম থাকলেও বাচ্চা বেরিয়ে যেতে পারে। এছাড়া প্রোলাক্টিন নামে আরো এক রকম হরমোন রয়েছে মায়ের শরীরে। এই হরমোন বেশি থাকলেও বাচ্চা বেরিয়ে যেতে পারে।
শরীর বৃত্তীয় ত্রম্নটিজনিত কারণে অর্থাৎ মায়ের জরায়ুতে ত্রম্নটি (যথা সেপ্টেড ইউটেরাস, বাইকরনয়েট ইউটেরাস) থাকলে মাতৃত্ব আসার পর শিশু স্বাভাবিক বেড়ে উঠতে পারে না। এমতাবস্থায় গর্ভপাত হতে পারে। ম্যালেরিয়া বা নিউমোনিয়া জাতীয় সংক্রমণ থেকে গর্ভস্থ সন্তôানের মৃত্যু হতে পারে। জরায়ুতে ক্রনিক ইনফেকশনেও জরায়ুতে বাচ্চা ধরে রাখতে পারে না বা মৃত্যু হতে পারে।
অটোইউমন প্রসেস দুর্বল হলেও গর্ভপাত হতে পারে। বার বার গর্ভপাতের ফলে ইনফেকশন হয়ে বন্ধ্যাত্বও আসতে পারে। এক কথায় মা হতে হলে তিনটি জিনিস দরকার।
১। ইউটেরাসকে শান্তô থাকতে হবে।
২। বাচ্চা থাকার মতো জায়গা ইউটেরাসে থাকতে হবে।
৩। ইউটেরাসের মুখ বন্ধ রাখতে হবে।
আর সহজ কথায় গর্ভপাতের কারণ হলোঅৈস্বাভাবিক ভ্রূণ, খুঁতযুক্ত ডিম্বানু বা শুক্রানু, নিষেকের ফলে পরিপূর্ণ ভ্রূণ গর্ভচ্যুত হয়। ক্রোমজন বা জিন ঘটিত কারণে যদি ভ্রূণ সঠিকভাবে গঠিত না হয় তবে, গর্ভপাত হতে পারে। প্রসূতির ইস্টোজেন, পজেস্টেরন ও থাইরঙ্নি ইত্যাদি হরমোনের অভাব থাকলে গর্ভপাত হতে পারে।
ইনফেকশনঃ
সিফিলিস, টোপস্নাজমোসিস ধরনের সংক্রামক ব্যাধির কারণে বার বার গর্ভপাত ঘটে। টোপস্নাজমিক রোগের জীবাণু টোপস্নাজম নামক এক কোষী পরজীবী প্রাণী যা অধিকাংশ সময় বিড়ালের মলের সঙ্গে বের হয়। এ জীবাণু প্রতিকূল পরিবেশেও ছয়-সাত মাস বেঁচে থাকে। ঐ সময় খাদ্য বা পানীয়ের সাথে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে টোপস্নাজমা রোগের সৃষ্টি হয়। এ রোগে আক্রান্তô প্রসূতিদের বার বার গর্ভপাত হবার সম্ভাবনা থাকে। জন্মাতে পারে অন্ধ বিকলাঙ্গ বা মৃত শিশু। অনেক সময় শিশুদের মাথায় পানি জমতে পারে তাদের বলা হয় হাইড্রোসেফালাস।
জরায়ুর মুখের কার্যহীনতা
গঠিত ভ্রূণ যখন বড় হয় জরায়ু মুখের কাজ ভ্রূণকে ধরে রাখা। কোন কারণে জরায়ুর মুখ বড় হলে বর্ধনশীল ভ্রম্নণ ধরে রাখতে পারে না। ফলে গর্ভপাত হয়। অনেক প্রসূতি ইচ্ছে করে গর্ভনাশ করেন। ফলে ভবিষ্যতে হতে পারে বন্ধ্যাত্ব। বার বার বা প্রথমবার গর্ভনাশ করলে পরবর্তীতে গর্ভধারণ অসুবিধা দেখা দেয়। গর্ভনাশ করানোর ফলে জরায়ুর মুখের কার্যহীনতা বা ইনফেকশনের জন্যও গর্ভপাত হতে পারে। অস্বাভাবিক জরায়ু জন্মগতভাবে অস্বাভাবিক জরায়ু বা প্রজননতন্ত্র সঠিক না হলে গর্ভধারণে অসুবিধা দেখা দেয়। ভ্রূণ জরায়ুতে সঠিকভাবে স্থাপিত না হওয়ায় গর্ভপাত ঘটে।
বিভিন্ন রোগের কারণে গর্ভপাত
অপুষ্টি, ডায়াবেটিস, নেফ্রাইটিস, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি কারণে গর্ভপাত হতে পারে। আবার মায়ের শরীরে যদি কোনভাবে সর্বদা ইরিটেট হতে থাকে তাহলেও বাচ্চা বেরিয়ে আসতে পারে।
প্রতিকার
গর্ভপাত থেকে রেহাই বা বন্ধ্যাত্বের সঠিক চিকিৎসা হলো ওষুধ, ইনজেকশন আর অপারেশন। হরমোনাল ওষুধ ও ইনজেকশন দেয়া হয়। জরম্নরি হলে জরায়ুতে সূড়্গ্ন অপারেশন দরকার হয়। এর চিকিৎসা ব্যয় সাধারণ মানুষের আওতার মধ্যেই আছে। যেটা প্রথমেই মনে রাখা দরকার তা হলো ৈমাতৃত্বকালীন সময় মাসিকের মতো পানি বা রক্ত বা রক্তিম পানি বের হতে থাকলে, অস্বাভাবিক ব্যথা করলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। তারপর পরীড়্গা-নিরীড়্গা করিয়ে গর্ভনষ্টের সঠিক কারণ জেনে উপযুক্ত চিকিৎসা করালে গর্ভপাত ঠেকানো সম্ভব।
গর্ভসঞ্চারের পর শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশ্রাম দরকার। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া কারণে-অকারণে ওষুধ খাওয়া ড়্গতিকর হতে পারে। হরমোনের ঘাটতি থাকলে ওষুধের মাধ্যমে তা পূরণ করা দরকার। ইনফেকশন থাকলে চিকিৎসা করা দরকার।
জন্মগতভাবে জরায়ুতে বা প্রজননতন্ত্রে ত্রম্নটি থাকলে অপারেশনের মাধ্যম ঠিক করে নেয়া দরকার। চিকিৎসা শাস্ত্রে সাড়া জাগানো বৈপস্নবিক পরিবর্তন হলো টেস্ট টিউব বেবি। এই চিকিৎসায় প্রায় শতকরা ত্রিশজনের জীবনে মাতৃত্ব আসে। তবে এই চিকিৎসা এখনো ব্যয়বহুল। যে সমস্তô নারীর বন্ধ্যাত্ব নেই কিন্তু বার বার গর্ভপাত হয়, তার জন্য দরকার মনোবিজ্ঞানসম্মত এক চিকিৎসা। যাকে বলে টেডার লভিং কেয়ার। সংড়্গেপে টিএলসি।
বাচ্চা না হবার ভয় যাদের মনে ভর করে, যারা মনোবল হারিয়ে ফেলে হতাশাগ্রস্তô হন এবং ভঙ্গুর বিশ্বাস তার দেহকে গর্ভপাতের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। এমতাবস্থায় তাকে প্রতিদিন মনোবল জুগিয়ে মা হবার স্বপ্ন দেখান, তার মধ্যে বাচ্চা হবার বিশ্বাসকে জাগিয়ে তুলুন। এ বিশ্বাস তার দেহকে গর্ভপাত প্রবণতা থেকে মুক্ত রাখবে। আর এ ব্যাপারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে প্রার্থনা। পরম করম্নণাময়ের কাছে উপযুক্ত প্রার্থনাই কাঙিড়্গত মাতৃত্বের হাসি ফোটাবে।
০ ডাঃ নাদিরা বেগম
প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন।
সহকারী অধ্যাপক, জালালাবাদ রাগিব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল, সিলেট।
চেম্বারঃ মেডি এইড, মধুশহীদ মাজারের কাছে।
মেয়েদের স্তনে চাকা বা গোটা
ডা. ওয়ানাইজা
মহিলাদের স্তনে চাকা বা গোটা হওয়া অথবা গোটা ভাব অনুভূত হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। এসব গোটার বেশিরভাগই ক্ষতিকর কিছু নয় অর্থাৎ এগুলো ক্যান্সার নয়। মাসিকের পূর্বে স্তনে কিছু পরিবর্তন হয়। স্তনের টিস্যু নানান হরমোন দ্বারা প্রভাবিত হয়। ফলে স্তনে চাকা অথবা গোটা ভাব বা ব্যথাও অনুভব হতে পারে। নিজেদের স্তনের স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো মহিলাদের সবারই জানা প্রয়োজন। তাহলে অস্বাভাবিক কিছু হলে সহজে বোঝা যাবে। মাসিকের আগে সাধারণত স্তনে ব্যথা এবং চাকা ভাব মনে হতে পারে। এ রকম অবস্থায় দুশ্চিন্তা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়াই শ্রেয়। ডাক্তার আপনাকে পরীক্ষা করে দেখে প্রয়োজন হলে আরো কিছু পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেন।
সাধারণত যেসব পরীক্ষা করা হয় সেগুলো হলোঃ
মেমোগ্রাম
মেমোগ্রাম স্তনের এক্স-রে। ৩০ বছরের বেশি বয়সে মেমোগ্রাম সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। কারণ এই বয়সে স্তনের টিস্যু কম গ্লান্ডুলার থাকে এবং এক্স-রের ছবি ভালো আসে।
ফাইন নিডল এসপিরেশন সাইটোলজিঃ একটি সূক্ষ্ম সুঁচ দ্বারা স্তনের গোটা থেকে কিছু কোষ সরিয়ে নিয়ে তা অনুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষা করতে সাধারণত খুব একটা কষ্ট হয় না।
আলট্রাসাউন্ডঃ শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে এই পরীক্ষা করা হয়। ছোট মাইক্রোফোন জাতীয় যন্ত্র স্তনের উপর ধরা হয়। স্তনের গোটা বা চাকা ভাব এই পরীক্ষায় ধরা পড়ে। সব বয়সের মহিলাদের জন্য এই পরীক্ষা অত্যন্ত কার্যকর। এগুলোর সাথে রোগীকে পরীক্ষা করে ডাক্তার নিশ্চিত হন যে স্তনে গোটা বা চাকা ভাব হয়েছে কি না। এই পার্থক্যটা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফাইব্রোএডেনোমা এবং সিস্ট এই দু’টি সবচেয়ে সাধারণ ক্ষতিকর নয় এমন গোটা।
ফাইব্রোএডেনোমাঃ ১৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ফাইব্রোএডেনোমো হয়। স্তনে একটি শক্ত চাকা যা চাপ দিলে বেশ সহজে নড়াচড়া করে। আকৃতিতে বাড়তে অথবা কমতে পারে, সময়ে চাকাটা মিলিয়েও যেতে পারে। পরীক্ষা করে ফাইব্রোএডেনোমা নিশ্চিত হওয়া যায় তাহলে অপারেশন না করলেও চলে। তবে রোগী যদি ৩০ বছরের বেশি বয়সী হন তাহলে ফাইব্রোএডেনোমা নিশ্চিত হওয়া যায় তাহলে অপারেশন করে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দেয়া হয়। অজ্ঞান করে ছোট অপারেশনের মাধ্যমে গুটিটা সরিয়ে ফেলা হয়। এ ক্ষেত্রে শুধু একটা ছোট কাটা দাগ থাকে, যা আস্তে আস্তে পরে মিলিয়ে যায়। অনেক সময় স্তনের অন্য জায়গায় ফাইব্রোএডেনোমা নতুন করে আবারো হতে পারে।
সিস্টঃ স্তনের সিস্ট একটি তরল পদার্থে ভরা থলি। হঠাৎ করে সিস্ট হলে ব্যথা হতে পারে। ৩০-৫০ বছর বয়সে সাধারণত এগুলো হয়। সিস্টের চিকিৎসাও খুব সহজ। একটি ছোট সুঁচ দিয়ে চাকা থেকে পানিটা বা তরল পদার্থটা বের করে ফেলা হয়। কোনো জটিলতা না থাকলে চাকাটা সম্পূর্ণরূপে চলে যায়। যে মহিলাদের সিস্ট হয় তাদের পরবর্তীতেও স্তনের বিভিন্ন জায়গায় সিস্ট হতে পারে। অনেক সময় এসব সিস্ট অপারেশন করে সরানো হয়। ওষুধ দ্বারাও কোনো সময় চিকিৎসা করা প্রয়োজন হতে পারে। ফাইব্রোএডেনোমা এবং সিস্ট ক্যান্সার নয় এবং এগুলো হলে ক্যান্সারের সম্ভাবনাকে বাড়ায় না। মহিলাদের নিজেদের স্তন সম্পর্কে সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে, যাতে নতুন কোনো উপসর্গ দেখা দিলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। সব স্তনের গুটি পরীক্ষা করা আবশ্যক। ৯০ শতাংশ গুটি ক্ষতিকর নয়। সময়মতো ধরা পড়লে ছোট অপারেশন দ্বারা এর চিকিৎসা হতে পারে এবং তাতে আপনার জীবন রক্ষা পেতে পারে।
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৯১১৫৬৬৮৪২
জরায়ু টিউমার প্রতিরোধে শাকসবজি
ডা. মনিরুল ইসলাম
অনেক মহিলা জরায়ুর টিউমার ‘ফাইব্রয়েডে’ আক্রান্ত হন। সচরাচর এই টিউমার উপসর্গবিহীন থাকলেও কখনো কখনো এটা তলপেটে ব্যথা, রক্তস্বল্পতা এবং প্রজননগত সমস্যা ঘটাতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মহিলা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেডমিট খান এবং সবুজ শাকসবজি কম খান তারা এ সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হন।
এসবের সাথে জরায়ুর টিউমারের সম্পর্ক কী? অতিরিক্ত পরিমাণ উচ্চমাত্রার ইস্ট্রোজেন ফাইব্রয়েড উৎপাদন একটি ভূমিকা পালন করে। আর গবেষণায় দেখা গেছে, পক্ষান্তরে সবজি ও ফলমূলে এক ধরনের উপাদান থাকে যার নাম ‘আইসোফ্লাভোনয়েডস’। এটা শরীর থেকে ইস্ট্রোজেনের প্রভাব কিছুটা কমিয়ে সমতা বিধান করে।
আপনি যদি জরায়ুর টিউমার ‘ফাইব্রয়েড’-এর ঝুঁকি কমাতে চান তাহলে নিচের পরামর্শগুলো
মেনে চলুনঃ ক্স গরুর গোশত কম খাবেন। অন্য রেডমিট যেমন ছাগল ও ভেড়ার গোশতও কম খাবেন। যারা শূকরের মাংস খান তারা সেটা বাদ দেবেন। দৈনিক তিন আউন্সের বেশি রেডমিট খাবেন না।
ক্স বেশি করে ব্রকলি, অ্যাসপারাগাস, স্পিনেক এবং অন্য সবুজ শাকসবজি খাবেন। চেষ্টা করবেন দৈনিক পাঁচ ধরনের সবজি খেতে, আর এই পাঁচ ধরনের মধ্যে একটি বা একাধিক সবজি যেন সবুজ হয়।
স্তন-ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি
ডা· পারভীন শাহিদা আখতার
অধ্যাপক, মেডিকেল অনকোলজি বিভাগ
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা
স্তন-ক্যান্সার নির্ণয় হওয়ার পরের সময়টা রোগী ও তার পরিবারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক রোগী ও তার পরিবার সহজে এ রোগ মেনে নিতে পারে না। এ ছাড়া রোগী নিজে ক্যান্সার রোগের ভয়ে ও শোকে এতই কাতর হয়ে থাকে যে তার নাওয়া-খাওয়া, ঘুম, স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে রোগী মানসিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যায়।
রোগীর প্রিয়জনকে তাই এ সময় কাছে কাছে থাকতে হবে ও সাহস দিতে হবে। রোগীকে সঠিক তথ্য দিতে হবে। সম্ভব হলে রোগীর সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনা করা উচিত, যাতে চিকিৎসা গ্রহণ করার জন্য রোগী শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে পারে।
এ বিষয়ে আলোচনা করতে পারে পরিবারের অভিজ্ঞজন, সমাজকর্মী, নার্স, চিকিৎসক কিংবা ভুক্তভোগী যারা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ জীবন যাপন করছে।
আক্রান্ত রোগী ও তার পরিবারের কয়েকটি তথ্য অবশ্যই জানা উচিতঃ
স্তন-ক্যান্সার একটি নিরাময়যোগ্য রোগ। এ রোগ যেকোনো পর্যায়ে শনাক্ত হলে, কোনো না কোনো চিকিৎসা দেওয়া যায়, জীবনকে দীর্ঘায়িত করা যায় এবং জীবনের মান বাড়ানো যায়।
কোন পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হয়েছে, কী কী চিকিৎসাপদ্ধতির প্রয়োজন ও চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী কী এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার উপশম বা কমানোর উপায়, চিকিৎসার সময়কাল ও খরচ, চিকিৎসা-পরবর্তী যত্ন প্রভৃতি অবশ্যই জানতে হবে।
স্তন-ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা হয়। যেমন রোগের পর্যায়, বয়স, শারীরিক অবস্থা, অন্য কোনো অসুখে আক্রান্ত কি না ইত্যাদি। স্তন-ক্যান্সারের প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতিগুলো হলো সার্জারি বা শল্যচিকিৎসা, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও হরমোনথেরাপি।
রেডিওথেরাপি কী
রেডিওথেরাপি হচ্ছে আয়ন প্রস্তুতকারী অদৃশ্য শক্তি যেমন এক্স-রে, গামা-রে, ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন দিয়ে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা।
গামা-রে বা রশ্মির উৎস কোবাল্ট৬০ টেলিথেরাপি মেশিন এবং এক্স-রে, ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন শক্তির উৎস লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন।
কোবাল্ট৬০ ও লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন দিয়ে রেডিওথেরাপি চিকিৎসা করা হয়। এতে ঠান্ডা বা গরম কিছুই অনুভূত হয় না। ব্যথাও হয় না। অনেকটা এক্স-রে করানোর মতো।
রেডিওথেরাপি চিকিৎসাপদ্ধতি
রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট (রেডিওথেরাপি চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক) রেডিওথেরাপি চিকিৎসার মূল দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ চিকিৎসা আক্রান্ত স্থানে দেওয়া হয়। রেডিওথেরাপি মেশিন দিয়ে চিকিৎসার আগে সিমুলেটর মেশিনের সাহায্যে চিকিৎসার স্থান নির্ধêারণ করে চিহ্নিত করা হয়।
পরে মার্কার কলম দিয়ে চিকিৎসার স্থানে দাগ দেওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ দাগ কোনোভাবেই মোছা যাবে না।
কলমের এ দাগ সাময়িক। তবে তা মুছে গেলেও যাতে চিকিৎসার স্থান সহজেই চেনা যায়, সে জন্য চিকিৎসার সীমানায় টাট্টু (সুই ফুটিয়ে ও কালি দিয়ে যা করা হয়) করা হয়।
স্তন-ক্যান্সার অপারেশনের পর রেডিওথেরাপি চিকিৎসা (অ্যাডজুভেন্ট রেডিওথেরাপি) প্রতিদিন তিন-চারটি ধাপে দেওয়া হয়। প্রতিটি ধাপে চিকিৎসার সময় খুবই কম। মাত্র দুই-এক মিনিট বা তারও কম। তবে রেডিওথেরাপি চিকিৎসার প্রস্তুতিতে বেশ সময় লেগে যায়। একটি লম্বা সময় নিয়ে রেডিওথেরাপি চিকিৎসা দেওয়া হয়। রেডিওথেরাপি চিকিৎসার মাত্রা (ডোজ) ২৫-৩০টি অংশে ভাগ করে দেওয়া হয়।
সপ্তাহে পাঁচ দিন করে পাঁচ-ছয় সপ্তাহ চিকিৎসা দিতে হয়। প্রয়োজনে রেডিওথেরাপি ডোজ বাড়িয়ে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়।
মেশিনে রেডিওথেরাপি চিকিৎসা
প্রথম দিন চিকিৎসা দিতে একটু দেরি হয়। কারণ, রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট তাঁর দল নিয়ে রেডিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য রোগীকে পরিকল্পনা অনুযায়ী রেডিওথেরাপি মেশিনে সেট করে থাকেন। পরে রেডিওথেরাপি টেকনোলজিস্ট (রেডিওথেরাপি মেশিন যিনি চালনা করেন) পরামর্শপত্র অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। রেডিওথেরাপি চিকিৎসার সময় রোগীকে মেশিন রুমে একা থাকতে হয়।
ক্লোজসার্কিট মনিটরে কন্ট্রোল রুম থেকে টেকনোলজিস্ট ও অন্যরা তা পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুম থেকে রোগীর সঙ্গে কথাও বলা যায়। রেডিওথেরাপি চিকিৎসারত রোগীর শরীর থেকে অন্যের শরীরে রেডিওথেরাপি ছড়ায় না। তাই পরিবারের সঙ্গে স্বাভাবিক জীবন যাপন করে এ চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া যায়। প্রতি সপ্তাহে রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট রোগীকে পরীক্ষা করে থাকেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ত ও অন্যান্য পরীক্ষা করানো হয়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
রেডিওথেরাপি চিকিৎসা অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অল্প দিনেই তা সেরে যায়।
ক্লান্তি লাগা
রেডিওথেরাপি চিকিৎসায় ক্লান্তি শুরু হয় চিকিৎসার দুই-তিন সপ্তাহ পর থেকে। এ চিকিৎসায় শরীরের ক্ষয়রোধে কিছুটা শক্তি ব্যয় হয়। চিকিৎসাকালে শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে একটু বেশি সময় বিশ্রাম নিলে, পুষ্টিকর খাবার খেলে, রাতে বেশি সময় ঘুমালে ক্লান্তি দূর হয়।
ত্বকের পরিবর্তন
রেডিওথেরাপি চিকিৎসা ত্বকের ওপর দিয়ে দিতে হয়। কখনো কখনো ত্বকে চুলকানো ভাব থাকে। চিকিৎসার তিন-চার সপ্তাহ পর সূর্যতাপে ত্বক পোড়ার মতো লাল হয়ে ওঠে।
রেডিওথেরাপি চিকিৎসার সময় ত্বকের যত্ন
চিকিৎসা-স্থানের আলাদা করে যত্ন নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চিকিৎসা-স্থানে কোনো ধরনের সাবান, লোশন, সুগন্ধি, ট্যালকম পাউডার, কসমেটিকস, ওষুধ বা অন্য কিছু ব্যবহার করা যাবে না। চিকিৎসা-স্থানের ত্বক ঘষামাজা করা যাবে না।
ত্বকে লেগে থাকে এমন কোনো ধরনের টেপ ব্যবহার করা যাবে না।
অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা কোনো কিছুই চিকিৎসার স্থানে ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি গরম পানি ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। গোসলে স্বাভাবিক অথবা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। গোসলের পর নরম কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে হালকা চাপ দিয়ে পানি শুকাতে হবে।
বগলের নিচে ও সংলগ্ন স্থানে শেভ করার জন্য ইলেকট্রিক শেভার বা রেজর ব্যবহার করা যেতে পারে; অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। তবে শেভিং লোশন কিংবা হেয়ার রিমুভাল ক্রিম ব্যবহার করা যাবে না।
প্রয়োজন না হলে রোদে ঘোরাঘুরি না করাই ভালো। বাইরে বের হওয়ার সময় শরীর ভালোভাবে ঢেকে নিতে হবে, যাতে চিকিৎসা-স্থান রোদে পুড়তে না পারে। রেডিওথেরাপি চিকিৎসাকালে ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরতে হবে।
অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
রেডিওথেরাপি চিকিৎসাকালে স্তন সামান্য স্কীত হয়ে উঠতে পারে। তাতে অল্প ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় উপুড় হয়ে ঘুমাতে অসুবিধা হতে পারে।
তবে চিকিৎসার পর এ সমস্যা সেরে যায়। চিকিৎসা শেষ হওয়ার দীর্ঘদিন পরও (কয়েক মাস থেকে বছর) স্তনে সামান্য ব্যথা হতে পারে এবং আকারে কিছুটা ছোট বা বড় হতে পারে।