বয়স্কদের কোমর ব্যথা
ডা. এম এ শাকুর
লেখকঃ বাতব্যথা রোগ ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ইমেজিং সেন্টার, বাড়ি- ৪৮, রোড- ৯/এ, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা। মোবাইলঃ ০১৮১৯৪১০০৮০, ০১৭১৭৩৫১৬৪৩১
কোমরে ব্যথার কারণ অনেক। নড়াচড়া বা চলাফেরা করার সময় কোমরের অবস্থান সঠিক না থাকলে কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে। তবে কোমরে ব্যথা বয়স বাড়লে সাধারণত লাম্বার স্পনডাইলোসিসের জন্য হয়ে থাকে। মেরুদণ্ডের নিচের হাড়ের মধ্যবর্তী তরুণাস্থি বা ডিস্কের বার্ধক্যজনিত পরিবর্তনের ফলেই এ রোগের সূত্রপাত হয়। তরুণাস্থির এই পরিবর্তনের সাথে সাথে মেরুদণ্ডের নিচের দিকে সংবেদনশীল পরিবর্তনসাধিত হয়। সাধারণত এ পরিবর্তন ৩০ বছর বয়স থেকে শুরু হয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ রোগের কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে রোগের উপসর্গও বাড়তে থাকে।
রোগের উপসর্গ
কোমরে ব্যথা। প্রথম দিকে এ ব্যথা কম থাকে এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে এ ব্যথা কিছুটা কমে আসে।
কোমরে সামান্য নাড়াচাড়া হলেই এ ব্যথা বেড়ে যায়।
অনেক সময় ব্যথা পায়ের দিকে নামতে পারে এবং অবশ ভাব বা ঝিনঝিন অনুভূতিও হতে পারে।
কোমরের মাংসপেশি কামড়ানো ও শক্ত ভাব হয়ে যাওয়া এ ধরনের উপসর্গও রোগে দেখা দিতে পারে।
প্রাত্যহিক কাজে, যেমন নামাজ পড়া, তোলা পানিতে গোসল করা, হাঁটাহাঁটি করা ইত্যাদিতে কোমরের ব্যথা বেড়ে যায়।
কোমরের ব্যথা রোগের চিকিৎসা
বিশ্রামঃ এ রোগী শক্ত ও সমান বিছানায় বিশ্রামে থাকবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের বিশ্রামে ব্যথা উপশম হয়। ব্যথা উপশমক ওষুধ ব্যথা থাকা অবস্থায় এবং মাংসপেশি শিথিলকরণ ওষুধ দেয়া যেতে পারে। সব ক্ষেত্রে একমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক নির্দিষ্ট মাত্রায় সঠিক নিয়মে ওষুধ খেতে হবে।
ফিজিক্যাল থেরাপিঃ ক) বিভিন্ন প্রকার তাপ এ রোগে চিকিৎসকরা প্রয়োগ করে থাকেন। যেমন ডিপ হিট সুপারফিসিয়াল হিট রোগীর কোন অবস্থায় কোন ধরনের থেরাপি প্রয়োগ করতে হবে তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নির্ধারণ করে দেন।
খ) লাম্বার ট্রাকশনঃ লাম্বার ট্রাকশনে সাধারণত ২৫-৫০ পাউন্ড ওজন দেয়া হয়। তবে রোগীর অবস্থা, ওজন, বয়স ও পুরুষ/মহিলা ভেদে ওজন কম-বেশি হয়। লাম্বার ট্রাকশন বিশেষ সতর্কতার সাথে চিকিৎসকের (ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ) পরামর্শ অনুযায়ী দেয়া উচিত।
গ) লোকাল স্পাইনাল সাপোর্টঃ কোমরের ব্যথায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা লোকাল স্পাইনাল সাপোর্ট হিসেবে কোমরের বেল্ট বা করসেট ব্যবহার করতে উপদেশ দিয়ে থাকেন। লাম্বোসেকরাল করসেট শুধু চলাফেরা ও কাজের সময় ব্যবহার করা উচিত।
ঘ) ইলেকট্রোথেরাপিঃ ইলেকট্রোথেরাপি হিসেবে ট্রান্সকিউটেনাস ইলেকট্রিক নার্ভ স্টিমুলেশন কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে রোগীর অবস্থা ও প্রকারভেদে চিকিৎসকরা এসব চিকিৎসা প্রয়োগের উপদেশ দিয়ে থাকেন।
ব্যায়ামঃ কোমরে ব্যথায় বিভিন্ন ব্যায়াম দেয়া হয়। এ ধরনের ব্যায়াম রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসকরা ধাপে ধাপে দিয়ে থাকেন।
ক) ব্যায়াম মাংসপেশির স্পাজম বা কামড়ানো কমিয়ে দিয়ে ব্যথামুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
খ) এ ব্যায়াম বিভিন্ন মাংসপেশির দুর্বলতা দূর করে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
গ) এই ব্যায়াম মাংসপেশির শক্ত ভাব দূর করে সাধারণ শিথিল ভাব আনতে সাহায্য করে।
ঘ) এ ব্যায়াম বিভিন্ন মাংসপেশির মধ্যে সমতা এবং নিয়ন্ত্রিত যোগাযোগ রক্ষা করতে সাহায্য করে।
ঙ) এ ধরনের ব্যায়াম মাংসপেশির সাধারণ চরিত্র ও কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে এ চিকিৎসা সর্বদা একজন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী নেয়া উচিত।
কোমরের ব্যথা রোগীর জন্য কিছু পরামর্শ
কাজ করার সময় করসেট ব্যবহার করুন।
সব সময় শক্ত সমান বিছানায় ঘুমাবেন।
কোনো জিনিস তোলার সময় সোজা হয়ে বসে তুলবেন।
চেয়ারে বসার সময় ঘাড় ও পিঠ সোজা রেখে বসবেন।
ফোমের বিছানায় ঘুমাবেন না এবং ফোমের (নরম সোফা) সোফায় অনেক্ষণ বসবেন না।
একই সাথে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে অথবা বসে থাকবেন না।
ঝুঁকে বা মেরুদণ্ড বাঁকা করে কোনো কাজ করবেন না।
ভারী কোনো জিনিস, যেমন বেশি ওজনের থলি, পানিভর্তি বালতি ইত্যাদি বহন করবেন না।
পিঁড়িতে বসে কোনো কাজ যেমন মাছ কাটা, শাকসবজি কাটা ইত্যাদি করবেন না।
টিউবওয়েল চেপে পানি উঠাবেন না।
ঝরনায় অথবা সোজা হয়ে বসে তোলা পানি দিয়ে গোসল করবেন।
সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় মেরুদণ্ড সোজা রেখে ধীরে ধীরে উঠবেন ও নামবেন।
হাই হিল জুতা ব্যবহার পরিহার করুন।
মোটা ব্যক্তিদের শরীরের ওজন কমাতে হবে।
যানবাহনে চড়ার সময় সামনের আসনে বসবেন, কখনো দাঁড়িয়ে থাকবেন না।
ঘুম থেকে ওঠার সময় যেকোনো একদিকে কাত হয়ে উঠবেন।
জয়েন্টের ব্যথা
ডাঃ মোঃ সফিউল্যাহ প্রধান
প্রভাষক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ
চেম্বারঃ পেইন এন্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টার
২ প্রবাল হাউজিং, রিং রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
স্বাস্থ্য সচেতনতা, চিকিৎসা সুবিধা, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি পরিবর্তনের ফলে দিনে দিনে মানুষের বয়স বৃদ্ধি পাচ্ছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের শারীরিক ও মানসিক শক্তি এবং দেহ কোষের কর্মড়্গমতা বা সামর্থø ধীরে ধীরে কমতে থাকে। টিস্যুর এই সামর্থø ক্রমাবনতির হার বিভিন্ন ব্যক্তির ড়্গেত্রে বিভিন্ন অনুপাতে হয়। একজন ৮০ বছর বয়সের বৃদ্ধ যেমন কর্মড়্গম থাকতে পারেন, তেমনি আবার ৫০/৬০ বছর বয়সের ব্যক্তিরা ভুগতে পারেন বিভিন্ন ধরনের বার্ধক্যজনিত সমস্যা ও জয়েন্টের ব্যথায় যাকে আমরা সহজ ভাষায় বাত বলে জানি। সাধারণতঃ ৫০ বছর পর বয়সজনিত জয়েন্টের সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের দেশে ৫০ ঊর্ধ্ব জনসংখ্যার শতকরা ৬৫ ভাগ লোক জয়েন্টের ব্যথাজনিত সমস্যায় ভোগেন।
বয়স্করা সাধারণত যে সকল জয়েন্টের সমস্যায় ভোগেনঃ
মানুষের রোগের ভেতর ব্যথা বা যন্ত্রণা একটি অস্বস্তিô ও কষ্টকর সমস্যা। আলস্নাহতাআলা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের জয়েন্ট বা সন্ধি স্বাভাবিক চলাচল এবং কর্মসম্পাদন করে জীবন নির্বাহের জন্য দিয়েছেন। সাধারণতঃ দুই বা দুইয়ের অধিক হাড় বা তরম্নণাস্থি শরীরের কোন এক যায়গায় সংযোগস্থাপনকারী টিসুøুর মাধ্যমে যুক্ত হয়ে একটি অস্থি সন্ধি বা জয়েন্ট তৈরি করে। আর এই সংযোগ স্থাপনকারী টিস্যুগুলো হচ্ছে মাংসপেশী, টেন্ডন, লিগামেন্ট, ক্যাপসুল, ডিস্ক, সাইনোভিয়াল পর্দা বা মেমব্রেন ইতাদি। এগুলো জয়েন্টকে শক্তি ও দৃঢ়তা প্রদান করে, জয়েন্ট-এর তল বা সারফেসসমূহকে মসৃণ বা পিচ্ছিল রাখে। এছাড়া মেরম্নদণ্ডের দুইটি হাড়ের মাঝে অবস্থিত ডিস্ক সক এবজরবার হিসাবে কাজ করে হাড়কে ড়্গয়ে যাওয়া থেকে রড়্গা করে। এইসব অস্থি বা জয়েন্টগুলোতে প্রধানত বয়স বাড়ার সাথে সাথে ড়্গয়, প্রদাহজনিত এবং আভ্যন্তôরীণ পরিবর্তনের কারণে ব্যথা-বেদনা সৃষ্টি করে মানুষের চলাচল ও কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটায়। বৃদ্ধ বয়সে প্রায় সকল সন্ধি বা জয়েন্টে কম-বেশি ব্যথার সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যেসব জয়েন্ট শরীরের ওজন বহন করে এবং অতিরিক্ত ব্যবহৃত হয় যেমনঃ ঘাড়, কোমর ব্যথা, স্কন্ধ অস্থি সন্ধি বা সোল্ডার জয়েন্ট এবং হাটুর ব্যথার সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া যায়।
ঘাড়ে ব্যথা, চিকিৎসা ও পরামর্শঃ
ঘাড়ের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, মূলতঃ ঘাড়ের মেরম্নদন্ডে যে হাড় ও জয়েন্ট আছে তা বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্যবহারের ফলে তাতে ড়্গয়জনিত পরিবর্তন ঘটে তার লিগামেন্টগুলো মোটা ও শক্ত হয়ে যায় এবং দুইটি হাড়ের মাঝে যে ডিস্ক থাকে তার উচ্চতা কমে এবং সরম্ন হওয়া শুরম্ন হয়। আবার অনেক সময় হাড়ের প্রান্তôভাগে নতুন নতুন সূক্ষ্ম হাড়কণা জন্মায়। কোন কোন সময় দুইটি ভাট্রিব্রার বা মেরম্ন হাড়ের মাঝে দূরত্ব কমে গিয়ে পাশে অবস্থিত স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে ব্যথার জন্ম দিতে পারে। অনেক সময় স্নায়ু রজ্জু সরম্ন হয়ে যেতে পারে। ফলে ঘাড় ব্যথা ও নড়াচড়া করতে অসুবিধাসহ মাথা ব্যথা কিম্বা ব্যথা হাতের আঙ্গুল পর্যন্তô ছড়িয়ে যেতে পারে। দীর্ঘদিন এই ব্যথা অব্যাহত থাকলে ঘাড়ের মেরম্নদণ্ডের বিকৃতি বা স্পাইনাল ডিফরমিটি দেখা দিতে পারে। এই সমস্যাগুলোকে প্রকার ভেদে বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয় যেমনঃ সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস, সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসথোসিস, সারভাইক্যাল রিব, স্টিফ নেক, সারভাইক্যাল ইনজুরি ইত্যাদি।
লড়্গণঃ সাধারণত এই সমস্তô রোগীরা ঘাড়ের ব্যথাসহ ঘাড় নড়াচড়া করা এবং হাতে ঝিন ঝিন অনুভব করার অসুবিধার কথা বর্ণনা করতে পারেন। অনেক ড়্গেত্রে হাতে শক্তি কমে যাওয়াসহ হাতের আঙ্গুলের বোধশক্তির তারতম্যের কথা বলতে পারে। ব্যথা ঘাড় হতে মাথার দিকে উঠতে পারে।
চিকিৎসাঃ এই রোগের চিকিৎসার উদ্দেশ্য হলো ব্যথা কমানোর পাশাপাশি ঘাড়ের স্বাভাবিক নড়াচড়ার ড়্গমতা ফিরিয়ে আনা, ঘাড়ের মাংস পেশীর শক্তি বৃদ্ধি করা, ঘাড় বা স্পাইনের সঠিক পজিশন বা অবস্থা সম্পর্কে শিড়্গা দেয়া এবং যে সকল কারণে পুনরায় ঘাড় ব্যথা হতে পারে তা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করে সেভাবে চলার চেষ্টা করা। ব্যথা কমানোর জন্য সাধারণতঃ ব্যথানাশক ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এইসব রোগে অত্যন্তô কার্যকরী। বিশেষ করে পদ্ধতিগত ব্যায়াম যেমনঃ হাত দিয়ে মাথায় বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে ঘাড়ের মাংসপেশী শক্ত করা, দুই কাঁধ একত্রে উপরে উঠানো, হালকা বালিশ ব্যবহার করা ইত্যাদি। ফিজিওথেরাপিতে বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে হিট চিকিৎসা, থেরাপিউটিক এারসাইজ, মেনিপুলেশন এবং প্রয়োজন হলে ট্রাকশন এ রোগের উপকারে আসে। ঘাড়কে অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া থেকে বিরত এবং সাপোর্ট দেয়ার জন্য অনেক ড়্গেত্রে সারভাইক্যাল কলার ব্যবহার, মাথার নীচে হালকা নরম বালিশ ব্যবহার করা ইত্যাদি।
কোমর ব্যথার চিকিৎসা ও পরামর্শঃ
বার্ধøক্যজনিত বয়সে কোমরে ব্যথার প্রধান কারণ হচ্ছে কোমরের হাড় ও ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক এর ড়্গয় এবং কোমরের মাংস পেশীর দুর্বলতা। কোমর ব্যথার রোগগুলোকে আমরা, লো-ব্যাক পেইন/লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস/ প্রোলাপস্ ডিস্ক ইত্যাদি রোগ বলে থাকি। এই রোগের কারণ, প্রক্রিয়া ও চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় ঘাড় ব্যথা বা সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস এর অনুরূপ। তবে রোগীর শরীরের অবস্থান/ পোশ্চার সঠিকভাবে রড়্গার গুরম্নত্ব দিলে অনেক ড়্গেত্রে কোমরের ব্যথা এড়ানো সম্ভব। শক্ত বিছানায় শোয়া, কাত হয়ে বিছানায় শুতে যাওয়া, ওঠা, ভারী জিনিস বহন বা তোলা পরিহার করা, নিয়মিত কোমরের ব্যায়াম করা এবং অসমতল যায়গায় চলাচল না করা ইত্যাদি। কোমরের ব্যায়ামের ভিতরে উলেস্নখযোগ্য চিত হয়ে শুয়ে হাঁটু ভাজ করে পিঠ দিয়ে বিছানায় চাপ দেয়া, একই অবস্থায় শুয়ে হাঁটু একত্রে এপাশ ওপাশ দেয়া, একই অবস্থায় শুয়ে এক পা এক পা করে হাঁটু ভাজ করে পেটের সাথে চাপ দেয়া ইত্যাদি। কোমরের ব্যথার রোগীরা ব্যথানাশক ওষুদের সাথে সাথে ফিজিওথেরাপিষ্ট-এর পরামর্শ মোতাবেক শর্টওয়েভ, আরট্রাসাউন্ট, আইএফটি কোমরের ব্যায়াম ও হাইড্রোথেরাপি অর্থাৎ পানিতে সাঁতার কাটলে উপকার পেতে পারেন।
স্কন্ধ অস্থি সন্ধি বা সোল্ডাল জয়েন্টে ব্যথা, চিকিৎসা ও পরামর্শঃ
স্কন্ধ অস্থি সন্ধি একটি জয়েন্ট। বয়স ও ব্যবহার জনিত কারণে এই সকল জয়েন্টের আশেপাশের মাংসপেশী, টেন্ডন, লিগামেন্ট, ক্যাপসুল ও বার্সাতে প্রদাহ হতে পারে এবং রোগী জয়েন্ট নড়াচড়া করতে ব্যথা অনুভব করে, ফলে জয়েন্ট নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকেন এবং জয়েন্টটি আস্তেô আস্তেô শক্ত হয়ে জমতে শুরম্ন করে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় জয়েন্ট এর নড়াচড়া করার ড়্গমতা হ্রাস হয় এবং স্টিফনেস ডেভলআপ করে। ডায়াবেটিস, ঘাড়ের ব্যথা ও বুকের সার্জারীর কারণেও এ জোড়ায় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসাঃ এই রোগের চিকিৎসায় ব্যথা নিবারক ওষুধের সাথে সাথে কার্যকরী ও প্রধান চিকিৎসা ব্যবস্থা হচ্ছে ফিজিওথেরাপি। ফিজিওথেরাপিতে সাধারণতঃ বিভিন্ন ধরনের ইলেট্রোমেডিকেল যন্ত্রপাতি যেমনঃ সর্টওয়েভ ডায়াথার্মি আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, আইএফটি ব্যবহার করে ব্যথা কমানো যায়। ইলেক্ট্রোথেরাপির সাথে সাথে জয়েন্টের সচলতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম যেমনঃ পেন্ডুলার এারসাইজ, মেনিপুলেশন, কৌশলগত ব্যায়াম করা উচিত। এ ছাড়া ফ্রোজেন সোল্ডার রোগীদের নিয়মিত সাঁতার কাটা ও ব্যবহারিক ব্যায়াম যেমনঃ দেয়ালের সামনে দাড়িয়ে হাত আস্তেô আস্তেô উপরে উঠানো, উপরে ঝুলানো পুলির মাধ্যমে দড়ির সাহায্যে হাত উপরে নীচে করা, তোয়ালে দিয়ে পিঠ মোছা ইত্যাদি। যে জোড়ার ব্যথা সে দিকে কাত হয়ে না শোয়া এবং জোড়ায় গরম শেখ দেয়া ইত্যাদি উপদেশ মেনে চলতে হয়। অনেক সময় সোল্ডার জয়েন্টে ইনজেকশান প্রয়োগ করলেও ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
হাঁটুর ব্যথা, চিকিৎসা ও পরামর্শঃ
হাঁটু মানুষের একটি বড় জয়েন্ট। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বয়সজনিত ড়্গয়ের জন্য হাঁটুর ভিতরের লিগামেন্ট, মিনিসকাস এবং হাড়ের প্রদাহজনিত পরিবর্তনের ফলে হাঁটুতে ব্যথার সৃষ্টি হয়ে চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি করে এই রোগকে সাধারণতঃ অষ্টিও আর্থাইটিস বলে বেশি পরিচিত। সাধারণতঃ আঘাত, শারীরিক ওজন বৃদ্ধি, হরমোনজনিত সমস্যা এই রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
চিকিৎসাঃ ব্যথা নিবারক ওষুধ দীর্ঘদিন গ্রহণ করতে হয় বলে তাতে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই এই রোগের উৎকৃষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা হচ্ছে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি। ফিজিওথেরাপিতে সর্টওয়েভ ডায়াথার্মি, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, কিংবা আইছ থেরাপি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। নিয়মিত সঠিকভাবে হাঁটুর চারপাশের মাংসেপেশীর শক্তি বর্ধন জাতীয় ব্যয়াম দেয়া হয়ে থাকে যাতে জয়েন্ট এর রেন্জ এবং মাংসপেশীর শক্তি বৃদ্ধি পায়। তবে কোন ক্রমেই এমন কোন কাজ বা ব্যয়াম করা ঠিক হবে না যাতে ব্যথা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া রোগীকে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে যেমনঃ হাঁটু অতিরিক্ত ভাজ না করা, শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখা কিম্বা অতিরিক্ত ওজন কমানো, হাঁটু আড়াআড়ি করে না বসা, ভারী ওজন বহন না করা ইত্যাদি। হাঁটুর ব্যথার রোগীদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে তারা আক্রান্তô হাঁটু কোন অবস্থায় পুরোপুরি ভাজ করা ঠিক হবে না, সেই ড়্গেত্রে তারা নামাজ পড়ার সময় চেয়ার এবং বাথরম্নম ব্যবহার করার সময় কোমড ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।
কোমরের ব্যথা
ডাজ্ঝ মাহবুব হোসেন
বিভাগীয় প্রধান, ক্যাজুয়ালিটি ও ট্রমাটোলজি বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।
কোমরের ব্যথা কমবেশি সব মানুষকেই জীবনের কোনো না কোনো সময় কষ্ট দেয়। আমাদের দেশের অল্পসংখ্যক শিক্ষিত লোকের কথা বাদ দিলে বলা যায়-অনেকেই এ ব্যাপারে সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেন না। এখনো আমাদের দেশে অনেকেই কোমরে ব্যথা হলে পানিপড়া খায় বা তেল মালিশ করে, যা রোগীকে সুস্থ তো করেই না বরং আরও অসুস্থ করে তোলে। অনেকেই আবার যেনতেনভাবে কোমর মালিশ করিয়ে নেয়, যা আরও বেশি ক্ষতিকর। কোমরব্যথা হলে অবশ্যই সঠিক চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত, নইলে আরও বেশি কষ্ট ভোগ করতে হতে পারে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিবছর প্রতি ৩০ জনে অন্তত একজন কোমরব্যথায় ভোগে। যারা অফিস-আদালত বা কলকারখানায় টানা বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করে, তাদের সাধারণত কোমরব্যথা বেশি হয়। কোমরের ব্যথায় ভোগা কোনো মানুষ শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ অক্ষম বা পঙ্গুও হয়ে যেতে পারে।
আরেক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে অন্তত চারজন জীবনের কোনো না কোনো সময় কোমরের ব্যথায় ভোগে। ৯২ শতাংশ মানুষ দুই মাসের আগেই কোমরের ব্যথা থেকে সেরে ওঠে। আর ১৪ শতাংশ মানুষ দুই সপ্তাহের আগেই সুস্থ হয়। কোমরব্যথার অন্যতম কারণ-মাংস-হাড়ের আঘাত, বার্ধক্যজনিত রোগ (যেমন-অস্টিওআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপরোসিস ইত্যাদি), পিএলআইডি প্রলাপসে লিম্বার ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্ক, স্পাইনাল স্টেনোসিস, ক্যান্সার, প্রদাহ, মাসিকের ব্যথা, কিডনি রোগের ব্যথা প্রভৃতি। সংক্ষেপে বলা যায়, তিনটি কারণে কোমরব্যথা হতে পারে। অল্প বয়সে সাধারণত আঘাতের কারণে; বৃদ্ধ বয়সে বার্ধক্যজনিত রোগে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিকজনিত কারণে।
রোগ নির্ণয়ের জন্য শুরুতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেও চলে। তবে ব্যথার কারণ নির্ণয়ে সাধারণ এক্স-রে এবং এমআরআই খুব সহায়ক। চিকিৎসা করা হয় দুভাবে-রক্ষণাত্মক চিকিৎসায় এবং অপারেশনে। রক্ষণাত্মক চিকিৎসা হচ্ছে চিকিৎসকের শিখিয়ে দেওয়া ব্যায়াম অভ্যাস করা। এটি বেশ কাজে দেয়।
কোমরে ব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, সুস্থ থাকুন।
কাঁধের ব্যথা
ডাজ্ঝ এস এ জুনায়েদ
সদর হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জ।
মকবুল সাহেব (কাল্পনিক নাম) আজকাল প্রায় প্রতিদিন রাতেই ঘুমাতে গেলে বাঁ পাশটায় কাত হয়ে শুতে পারেন না। প্রচণ্ড ব্যথা হয় বাঁ কাঁধে। ঘুমানোর শত চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত সফল না হওয়ায় হাহাকার করেন। অবশ্য এর শুরুটা তিন মাস কিংবা তার চেয়েও বেশি। শুরুতে অল্প অল্প ব্যথা হতো। কোনো জিনিস ওঠাতে, বিশেষ করে কাঁধ ঘুরিয়ে পিঠ চুলকাতে গেলেই ব্যথা বেশি হতো। তিনি ভেবেছিলেন, প্রতিদিন বাসে যাতায়াত করেন, হয়তো কোনো আঘাত পেয়েছেন, যা তিনি ভালোভাবে খেয়াল করেননি-এটা তারই ফল। তাঁর মতো সমস্যা আরও অনেকের আছে, যাকে ফ্রোজেন শোলডার বলা হয়।
সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগ দেখা যায়। এটা হালো কাঁধের এমন একটা রোগ, যাতে ব্যথার মাত্রাটা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে; একসময় তা অসহনীয় হয়ে পড়ে। এমনকি কাঁধের নড়াচড়াই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। মজার ব্যাপার হলো, এটা এক-দেড় বছরের মধ্যে একসময় আবার আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়। কিন্তু ভুক্তভোগীরাই জানেন, এর ফলে সৃষ্ট সমস্যা জীবনকে কতটা দুর্বিষহ করে তোলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের কাজকর্মে অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে কোমরব্যথা, হাঁটুব্যথার পরই তৃতীয় স্থানে রয়েছে এটি।
কারণঃ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর তেমন কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, ডায়াবেটিস, হাইপারলিপিডেমিয়া বা শরীরে অতিরিক্ত চর্বি থাকা, হাইপারথাইরয়েড, হৃদরোগ বা প্যারালাইসিস রোগীদের মধ্যে এর প্রকোপ দেখা যায়। এ রোগে কাঁধের অস্থিসন্ধিতে যে ক্যাপসুল বা পর্দা থাকে, তার দুটো আবরণ থাকে-একটা বাইরের দিকে অন্যটা ভেতরের দিকে। এ দুটি আবরণের মাঝখানে কিছুটা জায়গা ফাঁক থাকে, যেখানে এক ধরনের তরল বা ফ্লুইড থাকে। এ ক্ষেত্রে দুই পর্দার মাঝখানের স্থান কমে যায়; ফলে কাঁধ নড়াচড়াটা ততটা মসৃণ হয় না, এতে ব্যথা হয়। ব্যথাটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং একসময় তা এত অসহ্য হয়ে পড়ে যে ঘুমানোই প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। এভাবে এক-দেড় বছর চলার পর তা আপনা-আপনিই বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ব্যথা থেকেই যায়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ পরীক্ষা করলে দেখা যায়, রোগীর কাঁধের নড়াচড়া বিশেষ করে হাত উঠানো এবং হাত ঘুরিয়ে পিঠ চুলকানোর মতো কাজ করাটা প্রায় অসম্ভব। কদাচিৎ কাঁধ কিছুটা শুকিয়ে যাওয়ার মতো মনে হতে পারে। কাঁধের এক্স-রে করালে দেখা যায়, তা প্রায় স্বাভাবিক। কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে সেখানে আঘাত ছিলো বলে জানা যায়। তবে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। কোনো কোনো রোগী অবশ্য হাতে ঝিঁ ঝিঁ ধরা বা হাত অবশ বা ক্ষয় হয়ে যাওয়ার কথাও বলে। সে ক্ষেত্রে খুব সতর্কতার সঙ্গে ঘাড় পরীক্ষা করতে হবে।
চিকিৎসা
প্রথমে রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে যে এটা একটা বয়সজনিত রোগ। বয়সজনিত কারণে অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তন, যেমন-চুল পাকা, দাড়ি পাকার মতোই হাড় ও অস্থিসন্ধিতে কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে; যা সঠিক চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপি বা বিশেষ ব্যায়ামের মাধ্যমে ভালো হয়ে যায় বা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এ ব্যাপারে একজন অর্থোপেডিক সার্জনের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীকে বোঝানোর পাশাপাশি চিকিৎসকেরা ব্যথানাশক ও মাংশপেশি প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধপত্র দিয়ে থাকেন। সেই সঙ্গে রোগীকে ব্যায়াম, যেমন-পেনডুলাম এক্সারসাইজ করার জন্যও উৎসাহ দেওয়া হয়ে থাকে। ঘড়ির কাঁটার দোলক বা পেনডুলাম যেভাবে দুলে থাকে, ঠিক তেমনিভাবে আক্রান্ত বাহু দুলিয়ে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত বাহু ঝোলানো থাকবে আর অন্যটা পিঠের ওপর থাকবে। শরীরকে শিথিল করে দিতে হবে, যাতে কাঁধের অস্থিসন্ধির মাংশপেশিগুলো একেবারে শিথিল হয়ে পড়ে। তারপর খুব আস্তে করে হাতকে সামনে-পেছনে, উত্তরে-দক্ষিণে এবং ঘড়ির কাঁটার দিকে ও বিপরীতে ২০ বার করে ঘোরাতে হবে। প্রথম দিকে একটু ব্যথা হতে পারে এ ব্যায়ামের কারণে, তবে আস্তে আস্তে তা সেরে যাবে। যদি এতেও কাজ না হয়, তাহলে জয়েন্টের মধ্যে স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে। এটার ফল বেশ ভালো। রোগীরাও অনেক সময় এটা নেওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এটা দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় দক্ষতা না থাকলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এমনকি হাত অবশ হয়ে যেতে পারে বা শুকিয়েও যেতে পারে। তাই যেখানে-সেখানে চিকিৎসা নেওয়া নয়, একজন অর্থোপেডিক সার্জনই হলো এ ব্যাপারে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি।
ফ্রোজেন শোলডার নামের অর্ধপঙ্গুত্ব নিয়ে আর বসবাস নয়। উপযুক্ত চিকিৎসা নিন এবং পাশাপাশি অন্যান্য পারিপার্শ্বিক কারণ, যেমন-ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন, ভালো থাকুন।
পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা
ডা. এম এ শাকুর
লেখকঃ সহযোগী অধ্যাপক, ফিজিক্যাল মেডিসিন বঙ্গবন্ধ ু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, চেম্বারঃ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ইমেজিং সেন্টার, বাড়ি নং-৪৮, রোড-৯/এ, ধানমন্ডি, সাতমসজিদ রোড, ঢাকা। মোবাইলঃ ০১৭১৭৩৫১৬৩১
মানবদেহের পা একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। পা না থাকলে যেমন মানুষ হাঁটতে পারে না, তেমনি পায়ে ব্যথা থাকলে হাঁটতে খুবই অসুবিধা হয়। আর চলাফেরা যিনি করতে পারেন না তিনি পঙ্গু বৈ আর কিছুই নন। মানবদেহের পায়ের প্রধান দু’টি অংশ হলো গোড়ালি ও পায়ের পাতা। পায়ের গোড়ালিতে যেসব কারণে ব্যথা হয় তার মধ্যে ক্যালকেনিয়ান স্পার বা কাঁটাই বেশি দায়ী। তা ছাড়া পায়ে কোনো আঘাত লাগলে বা পায়ের হাড় ভেঙে গেলে ব্যথা হয়। ক্যালকেনিয়ান স্পার থেকে অনেক সময় প্রদাহ হয়ে প্লান্টার ফাসাইটিস হতে পারে। তা ছাড়া গেঁটেবাত, ওস্টিওমাইলাইটিস, স্পন্ডাইলো আর্থোপ্যাথি ইত্যাদি রোগে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে। তবে বয়স বাড়লে ক্যালকেনিয়ান স্পারের কারণেই বেশি হয় পায়ে ব্যথা। এ রোগের উপসর্গগুলো নিুরূপ
পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা, ব্যথা সাধারণত হাঁটলে বেড়ে যায়।
গোড়ালি কখনো কখনো ফুলে যেতে পারে।
খালি পায়ে শক্ত জায়গায় হাঁটলে সাধারণত ব্যথা বেশি বাড়ে।
প্লান্টার ফাসাইটিস হলে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা সকালে বেশি থাকে এবং তা বেলা বাড়ার সাথে সাথে একটু কমে আসে।
কখনো কখনো গোড়ালি শক্ত মনে হয়।
শক্ত জুতা ব্যবহার করলেও ব্যথা বেড়ে যায়।
চিকিৎসাঃ সাধারণত ব্যথানাশক ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল, ইন্ডোমেথাসিন, নেপক্রিন ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। প্রয়োজন অনুসারে ফিজিক্যাল থেরাপি যেমন মোমথেরাপি, হাইড্রোথেরাপি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। জুতার পরিবর্তন, যেমন নরম সোল ব্যবহার করা, আর্চ সাপোর্ট দেয়া, গোড়ালির কাছে ছিদ্র করে নেয়া ইত্যাদি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপারেশন করে ক্যালকেনিয়ান স্পার বা কাঁটা কেটে ফেলতে হয়।
পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা রোগীর জন্য উপদেশ
সব সময় নরম জুতা ব্যবহার করবেন।
শক্ত স্থানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন না বা হাঁটবেন না।
ভারী কোনো জিনিস, যেমন বেশি ওজনের বাজারের থলি, পানিভর্তি বালতি ইত্যাদি বহন করবেন না।
সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় মেরুদণ্ড সোজা রেখে হাতে সাপোর্ট দিয়ে ধীরে ধীরে উঠবেন ও নামবেন এবং যথাসম্ভব গোড়ালির ব্যবহার কম করবেন।
ব্যথা বেশি থাকা অবস্থায় কোনো প্রকার ব্যায়াম নিষেধ।
হাইহিল জুতা ব্যবহার করা নিষেধ।
মোটা ব্যক্তিদের শরীরের ওজন কমাতে হবে।
মালিশ ব্যবহার করবেন না।
এসব পরামর্শ মেনে চললে একজন সুস্থ মানুষও এ রোগ থেকে দূরে থাকতে পারে। তাই আসুন আমরা সবাই এগুলো মেনে চলি এবং পায়ের সমস্যা থেকে দূরে থাকি।
মাথা ও ঘাড় ব্যথা
রক্তের নালীর স্ফীতি বা প্রসারণের কারণে এ ধরনের মাথাব্যথা হয়।
যেমন ৈমাইগ্রেইন বা ক্লাস্টার হেডেক। বস্তুত এই টেনশনও ভাসকুলার হেডেক সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং সব মাথাব্যথার কারণের মধ্যে অন্যতম।
মাথাব্যথা হয় না এমন লোক কমই আছে। শতকরা ৭০ থেকে ৯০ জন মানুষ বছরে কম করে হলেও একবার কোনো না কোনো সময় মাথাব্যথায় ভুগছে। রোগীরা এই মাথাব্যথাকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন। যেমনমৈাথাব্যথা, মাথা ধরা, মাথা ভারি মাথার শূন্যতা ইত্যাদি। আবার মাথার আশপাশের অন্য কোনো জায়গায় ব্যথা হলেও একই সাথে মাথাব্যথাও হতে পারে। যেমনকৈান ব্যথা, সাইনাসের ব্যথা, চোখের ব্যথা। আবার এসব নাক, কান, গলা, চোখ, ঘাড়ের অসুখের কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। ভালকুয়িস্ট তার এক সমীড়্গায় জানিয়েছেন, শতকরা ১৮ জন ছেলেমেয়ে যাদের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে, তারা বেশিভাগ সময় বিভিন্নভাবে মাথাব্যথার অভিযোগ করেন। এই মাথাব্যথা কম বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে বেশি বিদ্যমান এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাথাব্যথার অভিযোগও কমতে থাকে।
আবার এই মাথাব্যথা হতাশা, আবেগ, রাগ, অসন্তুষ্টি, মানসিক চাপ, ঘুমের অতৃপ্তি, কাজের চাপ ইত্যাদির কারণেও হতে পারে। তবে যে কারণেই মাথাব্যথা হোক না কেন, এর কারণ খুঁজে অবশ্যই বের করতে হবে এবং তার সুষ্ঠু চিকিৎসা করা দরকার।
মমাথাব্যথার উৎপত্তিঃ অনেক সময় মাথাব্যথার রোগী চিকিৎসকের কাছে সরাসরি জানতে চান তাদের মাথায় কোনো টিউমার হয়েছে কি-না। কেননা, অনেকে মনে করেন মাথাব্যথা টিউমারের জন্য হয়ে থাকে। তাহলে আমাদের প্রথমেই জানা দরকার মাথা বলতে কী বুঝি। সাধারণত মাথা বা হেড বলতে মস্তôক বা শরীরের একেবারে উপরের অংশ বোঝানো হয়। কাঠামোগত দিক থেকে যদি মাথা বা হেডকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন- মাথার খুলি, মাংসপেশী ও অন্যান্য আবরণ যা মাথাকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে মাথার খুলির মধ্যে আছে ব্রেইন, যা কিনা স্নায়ুকলা দিয়ে তৈরি এবং সেটারও সুন্দর আবরণ আছে। আর এই ব্রেইনের মধ্যে স্নায়ুকলা ছাড়াও আছে রক্তনালী এবং আরো অনেক সূক্ষ্ম জিনিস। সুতরাং পুরো ব্যাপারটাকে যদি এখন ব্যথার দিক থেকে বিবেচনা করা হয়, তাহলে ওইসব কাঠামোর মধ্যে যেগুলো ব্যথার স্পর্শতুল্য সেগুলোর ওপর কোনো না কোনোভাবে চাপ পড়লে ব্যথার উৎপত্তির হয়। এছাড়াও মাথার আশপাশের কোনো জায়গায় স্বাভাবিক কাজকর্মের ব্যাঘাত ঘটলেও মাথাব্যথার সৃষ্টি হতে পারে।
পাঁচ থেকৈ ১০/১২ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের মাথাব্যথা সাধারণত এডিনয়েডের (নাকের পেছনের টনসিল বড় হলে) কারণে হয়ে থাকে। মাথার আবরণ, স্কিন, মাথা ও ঘাড়ের মাংসপেশী, চোখ, কান ও নাকের বিভিন্ন অংশ বিশেষ গুরম্নত্ব বহন করে। এ তো গেল ব্রেইনের বাইরের কারণ আর ব্রেইনির ব্যাপারগুলো যেমনxৈটউমার, প্রদাহ, রক্তনালী কিংবা ব্রেইনের আবরণের কোনো অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হলেও মাথাব্যথা হয়ে থাকে। এখানে মাথাব্যথা বলতে মূলত মাথার খুলি বা ব্রেইনের বাইরের অংশগুলো নিয়েই আলোচনা। আর সেগুলোর মধ্যে নাক, সাইনাস ডিএনএস, কান, গলা, চোখ, দাঁতের কোনো রোগ, মাথা, মুখমণ্ডল, চোখ কিংবা ঘাড়ের মাংসপেশীর সঙ্কোচনে মাথার শিরা-উপশিরার প্রদাহ কিংবা কোনোরকমের জটিলতা, মাথা, মুখমণ্ডল, চোখ কান নাক গলায় কিংবা ঘাড়ের মধ্যে বা আশপাশের কোথাও আঘাতজনিত কারণ কিংবা টিউমার বা টিউমারজাতীয় রোগ হলে মাথা বা মুখমণ্ডলের যেকোনো জায়গায় ব্যথা হতে পারে।
মাথাব্যথা প্রকারভেদঃ মাথাব্যথাকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে যেসব কারণে কিংবা যে ধরনের মাথাব্যথা খুবই সচরাচর হয়ে থাকে সেগুলো উলেস্নখ করা হলোঃ
১। টেনশন হেডেকঃ যখন কখনো অনেক সময় ধরে মাথা বা ঘাড়ের মাংসপেশী সঙ্কুচিত অবস্থায় থাকে তখন এ ধরনের হেডেক হয়ে থাকে।
২। ভাসকুলার হেডেকঃ রক্তের নালীর স্ফীতি বা প্রসারণের কারণে এ ধরনের মাথাব্যথা হয়। যেমনমৈাইগ্রেইন বা ক্লাস্টার হেডেক। বস্তুত এই টেনশনও ভাসকুলার হেডেক সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং সব মাথাব্যথার কারণের মধ্যে অন্যতম।
৩। সাইনোসাইটিস এবং হেডেকঃ বিভিন্ন ধরনের সাইনাসের প্রদাহের কারণে মাথার বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা হয়ে থাকে। চোখের সমস্যার কারণে এ জাতীয় মাথাব্যথা হয়।
৪। ওকুলার হেডেকঃ চোখের সমস্যার কারণে এজাতীয় মাথাব্যথা হয়ে থাকে।
৫। মাথার মধ্যে কিংবা মাথার বাইরে কোনো টিউমার বা টিউমারজাতীয় রোগ কিংবা প্রদাহ হলেও মাথাব্যথা হতে পারে। সুতরাং মাথাব্যথা রোগীকে সঠিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে এবং সুন্দর করে পরীড়্গা করে মাথাব্যথার কারণ উঞ্ছঘাটন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মাথাব্যথা হলেই প্যারাসিটামল বড়ি খেয়ে মাথাব্যথা সহসাই উপশম করা উচিত নয়।
সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস
ডা. এম এ শাকুর
ঘাড়ে ব্যথার নানাবিধ কারণ রয়েছে যেমন যেকোনো ধরনের আঘাত লাগা, পজিশনাল অর্থাৎ ঘাড়ের নড়াচড়ার কারণে ব্যথা, হাড়ের ইনফেকশন, অস্টিওপরোসিস, টিউমার, অস্টিওমালেসিয়া বা ভিটামিন ডি’র অভাব, সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস ইত্যাদি। তবে সাধারণত ঘাড়ে ব্যথা সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিসের জন্য বেশি হয়। যাদের বয়স ৪৫ বছরের বেশি তাদের মধ্যেই এ রোগ বেশি দেখা যায়। সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস ঘাড়ের দুই হাড়ের মধ্যবর্তী তরুণাস্থির বার্ধক্যজনিত পরিবর্তনের ফলে হয়ে থাকে।
উপসর্গ
- ঘাড়ে ব্যথা হওয়া।
- ঘাড় নড়াতে না পারা এবং ঘুরালেই ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়া।
- ঘাড়ের মাংসপেশি কামড়ানো।
- ঘাড়ের ব্যথাসহ হাতের আঙুল ঝিন ঝিন করা।
- ঘাড়ে ব্যথাসহ হাত বা হাতের আঙুল অবশ অবশ ভাব হওয়া।
- ঘাড়ের পেছনের ব্যথা মাঝে মাঝে শরীরের অন্য স্থানে ছড়িয়ে যায় কাঁধে, হাতে অথবা মাথার পেছনের দিকে।
এ রোগের চিকিৎসা প্রতিকার ও উপদেশ
সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস রোগটি ভালো হওয়ার রোগ নয়, ভালো থাকার রোগ। তাই এ রোগের চিকিৎসায় রোগীর সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। এ রোগে ভালো থাকতে হলে
- ব্যথা উপশমকারী ওষুধ যেমন ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম, আইবুপ্রোফেন, নেপরোকসিন ইত্যাদি গ্রুপের ওষুধ ভরা পেটে খাওয়া যেতে পারে। ব্যথা বেশি হলে অথবা পেপটিক আলসার থাকলে পায়ু পথে কিংবা মাংসপেশিতে ইনজেকশনের মাধ্যমে এ জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যায়। অনেক সময় রোগীকে মাংসপেশি শিথিলকরণ ওষুধ যেমন ডায়াজিপাম দেয়া হয়ে থাকে।
সব ক্ষেত্রে একমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক নির্দিষ্ট মাত্রায় সঠিক নিয়ম অনুযায়ীঃ ওষুধু খেতে হবে।
- সার্ভাইক্যাল কলার
ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা থাকা অবস্থায় ঘাড়কে বিশ্রাম দেয়া একান্ত জরুরি। ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা অবস্থায় সার্ভাইক্যাল কলার ব্যবহার করে ঘাড়কে বিশ্রাম দিতে হবে। কলার রাতে ঘুমের সময় খুলে ফেলা উচিত।
- সার্ভাইক্যাল ট্রাকসন
সাধারণত কম ওজন দিয়ে সার্ভাইক্যাল ট্রাকসন শুরু করতে হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৬-১২ কেজি ওজনের ট্রাকসন দেয়া হয়। অবশ্য রোগীর ওজন, বয়স এবং পুরুষ-মহিলা ভেদে কম বেশি হয়। সার্ভাইক্যাল ট্রাকসন দেয়ার সময় রোগীর কোনো অসুবিধা হলে অবশ্যই ট্রাকসন দেয়া বন্ধ করতে হবে। এ জন্য বলা হয়ে তাকে রোগী যতটুকু ওজনে আরামবোধ করেন ততটুকু ওজন দিয়ে শুরু করা উচিত এবং এ আরামবোধ ধরে রেখেই আস্তে আস্তে ওজন বাড়ানো উচিত।
- থার্মো থেরাপিঃ ডিপহিট-জাতীয় চিকিৎসা এ রোগে প্রয়োগ করা হয়। যেমনশর্ট ওয়েভ ডায়াথারপি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথারমিও আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি।
- এক্সারসাইজ বা ব্যায়ামঃ থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ যেমনআইসোমেট্রিক নেক্ মাসল্স স্ট্রেনদেনিং এক্সারসাইজ, সোল্ডার ইলিভেসন এক্সারসাইজ ইত্যাদি করতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
এসব থেরাপি ও ব্যায়াম কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে তা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন। কারণ সব ক্ষেত্রে থেরাপি ও ব্যায়াম দেয়া যাবে না।
এ রোগে ভালো থাকার জন্য কিছু পরামর্শঃ
- চলাফেরা করার সময় সর্বদা কলার ব্যবহার করুন।
- ছোট নরম একটা বালিশ রোল করে ঘাড়ে সাপোর্ট দিন।
- যেকোনো এক কাত হয়ে শোয়া থেকে উঠবেন।
- নিচু হয়ে ঝুঁকে কোনো কাজ করবেন না।
- চেয়ারে বসার বসয় ঘাড় ও পিট সোজা রেখে বসবেন।
- সোজা হয়ে গোসল করবেন।
- টিউবওয়েল চাপবেন না।
- ঘাড় সোজা রেখে দাঁড়িয়ে রান্না করবেন, প্রয়োজন হলে চেয়ারে বসবেন।
- ঘাড় পেছনের দিকে বাঁকিয়ে কোনো কাজ (যেমন ওপরের দেয়ালের ময়লা পরিষ্কার করা, গাল সেভ করা ইত্যাদি) করবেন না।
- আধ সোয়া অবস্থায় শুয়ে কোনো কাজ যেমন খবরের কাগজ পড়া, টিভি দেখা ইত্যাদি পরিহার করুন।
-গাড়িতে চড়ার সময় সামনের আসনে বসবেন, কখনো দাঁড়িয়ে থাকবেন না।
- কলার পরা অবস্থায় নিজে গাড়ি চালাবেন না।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না।
- ব্যথা থাকা অবস্থায় মালিশ ও ব্যায়াম করবেন না।
রোগী এসব পরামর্শ মেনে চললে এবং চিকিৎসকের দেয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তিনি অবশ্যই সুস্থ হবেন। সুস্থ থাকা অবস্থায়ও এসব উপদেশ মেনে চললে ঘাড়ে ব্যথা হতে দূরে থাকা সম্ভব। তাই আসুন আমরা সবাই এগুলো মেনে চলি এবং ঘাড়ের ব্যথা এড়িয়ে চলি।
লেখকঃ বাতব্যথা রোগ ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ, ইবনে সিনা, ডায়াগনোস্টিক অ্যান্ড ইমেজিং সেন্টার, বাড়ি-৪৮, রোড-৯/এ, সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯। ফোনঃ ০১৮১৯৪১০০৮০
পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা
মানবদেহের পা একটি গুরম্নত্বপূর্ণ অঙ্গ। পা না থাকলে যেমন মানুষ হাঁটতে পারে না, তেমনি পায়ে ব্যথা থাকলেও হাঁটতে খুবই অসুবিধা হয়। আর চলাফেরা যিনি করতে পারেন না তিনিতো পঙ্গু বৈ আর কিছুই নন। মানবদেহের পা-এর প্রধান দুটি অংশ হল গোড়ালি ও পায়ের পাতা। পায়ের গোড়ালিতে যেসব কারণে ব্যথা হয় তার মধ্যে ক্যালকেনিয়ান স্পার বা কাঁটাই বেশি দায়ী। তাছাড়া পায়ে কোন আঘাত লাগলে বা পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেলে ব্যথা হয়। ক্যালকেনিয়ান স্পার থেকে অনেক সময় প্রদাহ হয়ে পস্নান্টার ফাসাইটিস হতে পারে। তাছাড়া গেঁটেবাত, ওস্টিওমাইলাইটিস, স্পন্ডাইলোআর্থোপ্যাথী ইত্যাদি রোগে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে। তবে বয়স বাড়লে ক্যালকেনিয়ান স্পার-এর কারণেই বেশি হয় পায়ে ব্যথা। এ রোগের উপসর্গগুলো নিম্নরূপ-
পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা, ব্যথা সাধারণত হাঁটলে বেড়ে যায়।
গোড়ালি কখনও কখনও ফুলে যেতে পারে।
খালি পায়ে শক্ত জায়গায় হাঁটলে সাধারণত ব্যথা বেশি বাড়ে।
পস্নান্টার ফাসাইটিস হলে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা সকালে বেশি থাকে এবং তা বেলা বাড়ার সাথে সাথে একটু কমে আসে।
কখনও কখনও গোড়ালি শক্ত শক্ত মনে হয়।
শক্ত জুতা ব্যবহার করলেও ব্যথা বেড়ে যায়।
চিকিৎসাঃ সাধারণত ব্যথানাশক ওষুধ- যেমন প্যারাসিটামল, ইন্ডোমেথাসিন, নেপ্রক্রিন ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। প্রয়োজন অনুসারে ফিজিক্যাল থেরাপী যেমন- মোম থেরাপী, হাইড্রোথেরাপী, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপী ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। জুতার পরিবর্তন যেমন- নরম সোল ব্যবহার করা, আর্চ সাপোর্ট দেয়া, গোড়ালির কাছে ছিদ্র করে নেয়া ইত্যাদি। কোন কোন ড়্গেত্রে অপারেশন করে ক্যালকেনিয়ান স্পার বা কাঁটা কেটে ফেলতে হয়।
পায়ের গাড়ালিতে ব্যথা রোগীর জন্য উপদেশঃ
সকল সময় নরম জুতা ব্যবহার করবেন।
শক্ত স্থানে বেশিড়্গণ দাঁড়িয়ে থাকবেন না বা হাঁটবেন না।
ভারি কোন জিনিস, যেমন ৈবেশি ওজনের বাজারের থলি, পানিভর্তি বালতি ইত্যাদি বহন করবেন না।
সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় মেরম্নদণ্ড সোজা রেখে হাতে সাপোর্ট দিয়ে ধীরে ধীরে উঠবেন ও নামবেন এবং যথাসম্ভব গোড়ালির ব্যবহার কম করবেন।
ব্যথা বেশি থাকা অবস্থায় কোন প্রকার ব্যায়াম নিষেধ।
হাই হিল জুতা ব্যবহার করা নিষেধ।
মোটা ব্যক্তিদের শরীরের ওজন কমাতে হবে।
মালিশ ব্যবহার করবেন না।
এ সমস্তô পরামর্শ মেনে চললে একজন সুস্থ মানুষও এ রোগ হতে দূরে থাকতে পারে। তাই আসুন আমরা সকলে এগুলো মেনে চলি এবং পায়ের সমস্যা হতে দূরে থাকি।
০ ডাজ্ঝ এম এ শাকুর
সহযোগী অধ্যাপক, ফিজিক্যাল মেডিসিন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
হাতের কব্জির ব্যথা হলে
নানা কারণে হাতের কব্জিতে ব্যথা হতে পারে যেমন- আঘাত পাওয়া, দীর্ঘড়্গণ কব্জির মাধ্যমে কোন কাজ করা, ডিকোয়ারবেইনস ডিজিজ, রিউমাইয়েড আর্থাইটিস, গাঁউট ও অন্যান্য বাত জাতীয় রোগ। এসমস্থ রোগে কব্জিতে ব্যাথা ছাড়াও অন্য জোড়ায় ব্যথা হতে পারে। ডান হাতের কব্জিতে ব্যথা হলে লিখতে এমনকি খেতেও অসুবিধা হয়। বাত জাতীয় রোগে হাতের কব্জিতে ব্যথা হলে তা সাধারণত বিশ্রাম নিলে ও সকালে বেড়ে যায় কাজ করলে কিছুটা কমে আসে। এড়্গেত্রে নির্দিষ্ট বাত রোগটি নির্ণয় করা জরম্নরী ও সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করা দরকার। কিছু কিছু ড়্গেত্রে কব্জিতে ব্যথা হলে তা সাধারণত বিশ্রাম নিলে কমে যায় কাজ করলে বেড়ে যায়। সবড়্গেত্রেই কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা দিতে হবে। তবে সাধারণভাবে নিম্নলিখিত চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে।
০ প্রথম আক্রান্তô হাতের কব্জিকে বিশ্রামে রাখতে হবে।
০ যদি কোন নির্দিষ্ট রোগের কারণে কব্জিতে ব্যথা হয়ে থাকে তবে তার উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে হবে।
০ ব্যথা নাশক অষুধ যেমন- প্যারাসিটামল বা এনএসএআইডি দেয়া দেয়া যেতে পারে। এনএসএআইডি ট্যাবলেট হিসাবে মুখে খাওয়া ছাড়াও এনএসএআইডি জেল আক্রান্তô স্থানে লাগান যেতে পারে। তবে কোনভাবেই জেল দিয়ে মালিশ করা যাবে না।
০ ফিজিক্যাল থেরাপী হিসাবে আলট্রাসাউন্ড থেরাপী বা ফোনোফনোসিস ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
০ অল্প গরম পানিতে হাতের কব্জিকে ডুবিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে নাড়াচড়া করালেও বেশ উপকার হয়।
০ আক্রান্তô কব্জির সাহায্যে কাপড় ধোয়া বা মোচরান, হাত পাখা দিয়ে বাতাস করা, টেনিস খেলা ইত্যাদি কাজ অর্থাৎ যে কাজ করতে হলে হাতের কব্জিকে বারবার ঘুমাতে হয় সে ধরনের কাজ করা যাবে না।
০ আক্রান্তô হাতের কব্জিকে নড়াচড়া করা থেকে কিছুটা রড়্গা করার জন্য রিষ্ট ব্যান্ড ব্যবহার করা যেতে পারে।
০ এভাবে চিকিৎসা করালে ও নিয়ম মেনে চললে হাতের কব্জির ব্যথা হতে পরিত্রাণ পাওয়া সহজ হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ নিজের হাতে ব্যথাহীনভাবে করা সম্ভব হবে।
ঘাড় ব্যথার রকম ফের
বিভিন্ন কারণে ঘাড় ব্যথা হতে পারে। তাই ঘাড় ব্যথা রোগীদের মধ্যে বয়সের ভিন্নতাও দেখা যায়। যে কোন বয়সে ঘাড় ব্যথা হতে পারে। তবে চলিস্নশ বা তিরিশোর্ধ্ব নারী-পুরম্নষ সবচেয়ে বেশী ঘাড় ব্যথায় ভুগে থাকেন। এই বয়সের রোগীদের ঘার ব্যথার অন্যতম কারণ মেরম্নদন্ডের ঘাড়ের অংশের অস্থির আকারের পরিবর্তন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে স্পন্ডাইলোসিস বলা হয়। অস্থির আকারের পরিবর্তনের ফলে ঘাড় থেকে বের হওয়া স্নায়ু বা নার্ভ যা হাত, হাতের আঙ্গুল, বুক ও পিঠের কিছু অংশ এমনকি মাথার দিকের মাংস পেশীকে উদ্দিপনা সরবরাহ করে থাকে তার মূল বা রম্নট-এর উপর চাপ সৃষ্টি হয়। তাই সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের লড়্গণগুলো বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। মেরম্নদণ্ডের ঘাড়ের অংশের অস্থির পরিবর্তন বা সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস নিয়েই আজকের আলোচনাঃ-
কেস স্টাডি-১ঃ মিজ্ঝ আফতাব উদ্দিন। বয়স ৫১। চাকরিজীবী। বেশ কয়েকদিন যাবৎ বুকের বাম পার্শ্বে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছেন। টেবিলে বসে কাজ করলে ঘাড় ধরে আসে এমনকি মাঝে মাঝে হাত ঝি ঝি ধরে থাকে। আফতাব সাহেবের পিতা হৃদরোগে আক্রান্তô হয়ে মারা গেছেন। আফতাব সাহেব ভীষণভাবে আতংকগ্রস্তô হয়ে পড়েছেন। তিনি ধরেই নিয়েছেন তিনি হৃদরোগে ভুগছেন। তার ধারণা মতে হৃদরোগের বিভিন্ন ধরনের পরীড়্গা নিরিড়্গা করেও কোন সমস্যা ধরা না পড়ায় তিনি হতাশ ও ড়্গুব্ধ। অবশেষে ঘাড়ের একটি এ-রে করে দেখা গেল, তিনি সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসে ভুগছেন।
কেস স্ট্যাডি-২ঃ হোসনে আরা উচ্চরক্ত চাপের রোগী। প্রায় পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ সেবন করেন। রক্তচাপ প্রায় নিয়ন্ত্রণেই থাকে। কিন্তু ইদানীং তিনি ঘাড়ে ব্যথা অনুভব করছেন। রক্তচাপ পরিমাপ করে দেখা গেল রক্তচাপ সামান্য বেড়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতে ওষুধ পরিবর্তন করা হলো। এখন রক্তচাপ পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে তবুও ঘাড় ব্যথা কমার কোন লড়্গণ নেই। মিসেস হোসনে আরো সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসে ভুগছিলেন।
কেস স্ট্যাডি-৩ঃ ডায়াবেটিক রোগী মানজার হক। একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সিইও। শৃঙ্খলা বদ্ধ জীবন-যাপন করেন। পঞ্চাশ পেরিয়ে গেলেও শরীর সম্পূর্ণ ফিট। প্রচুর টেবিল ওয়ার্ক করতে হয়। ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকেন সারা দিন। কিন্তু ইদানীং কম্পিউটারে টাইপ করতে গেলে হাতের আঙ্গুল জড়িয়ে আসছে। লিখতে গেলেও শক্তি পাচ্ছেন না। ঘাড়ে বা পিঠে কোন ধরনের ব্যথা অনুভব করছেন না। হক সাহেব সচেতন মানুষ। প্রথমেই বুঝতে পেরেছেন তিনি ঘাড়ের হাড়ের কোন সমস্যায় ভুগছেন।
এছাড়া অনেক রোগী সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস ঘাড় ব্যথার বদলে পিঠে ব্যথা, হাতে ব্যথা, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা এমনকি কানে ব্যথায় ভুগতে পারেন। তাই কোন রোগ নিয়ে বদ্ধমূল ধারণা পোষণ করবেন না। আগে অনুমান করার চেষ্টা করম্নন এবং সেই অনুযায়ী বিশেষজ্ঞর পরামর্শ গ্রহণ করম্নন ও রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসককে সুযোগ দিন। রোগ নির্ণয়ই চিকিৎসার মূল স্তôম্ভ। এখানে একটি কথা স্পষ্ট হওয়া দরকার ৈরোগ নির্ণয় মানেই রক্ত, প্রস্রাব ইত্যাদি পরীড়্গা নয়। ফিজিক্যাল এামিনেশন বা শারীরিকভাবে পরীড়্গা করে প্রাথমিক ধারণা পাওয়ার পরই চিকিৎসকগণ নিশ্চিত করণ পরীড়্গা অর্থাৎ ল্যাবরেটরি টেস্ট দিয়ে থাকেন।
০ ডাজ্ঝ মোহাম্মদ আলী
ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
চেম্বারঃ হলি ল্যাব ফিজিওথেরাপি সেন্টার
বাড়ী-১, রোড-১, শায়েস্তôাখান এভিনিউ
সেক্টর-৪, উত্তরা, ঢাকা।
কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপি
সোনিয়া বেগম (কাল্পনিক নাম) আজকাল প্রায়ই সংসারের কাজকর্ম করেত পারেন না। রান্নাবান্না, থালা-বাসন ধোয়া, ঘর মোছা ইত্যাদি কাজ এখন তার জন্য যন্ত্রণাময় হয়ে উঠেছে। প্রায়ই তার স্বামী অফিস থেকে ফিরে এসে দেখে সোনিয়া বেগম কোমরের ব্যথায় কাতরাচ্ছে। প্রচন্ড ব্যথায় সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। কিছুড়্গণ দাঁড়িয়ে থাকলে হাঁটলে ব্যথা অস্বাভাবিক রকম বেড়ে যায়। সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ করতে গেলে ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠে। এর শুরম্নটা দেড় বছর আগে থেকে। শুরম্নতে অল্প অল্প ব্যথা হতো। ঘর ঝাড় দিতে গেলেই ব্যথা অনুভব করতেন। স্বল্পশিড়্গিতা মহিলা তখন ভেবেছিলেন- খারাপ বাতাস লেগেছে। তাই তিনি পানিপড়া খেয়েছিলেন। তার মতো সমস্যা আরো অনেকেরই আছে, যাকে মেডিক্যালের পরিভাষায় পিএলআইডি (প্রেলাপ্ড লাম্বার ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক) বলা হয়।
কোমরের ব্যথা (ইধপশ ঢ়ধরহ) কমবেশী সব মানুষকেই জীবনের কোন না কোন সময় কষ্ট দেয়। কিছু শিড়্গিত সচেতন নাগরিক ছাড়া অধিকাংশ রোগীই সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেন না। পরামর্শ নেন কবিরাজ, দরবেশের। তাদের পানি পড়া ও দেয়া তেল মারিশের মাধ্যমেই কোমর ব্যথা ভালো হবে বলে তাদের বিশ্বাস। এসবে ব্যথাতো ভালো হয়ই না বরং রোগী আগের চেয়ে আরো বেশী ব্যথায় ভোগে। তাছাড়া যারা চিকিৎসকের পরামর্শ নেন, তাদের মধ্যেও অনেকেই জানেন না- কোন চিকিৎসকের কাচে গেলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। ভুল ধারণাবশত বা ভুল রেফারেন্সে অধিক সংখ্যক ডিগ্রীধারী কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে কিংবা কোন এক অধ্যাপকের কাছে গিয়ে স্বল্পমেয়াদী কিছু উপকার পেলেও দীর্ঘমেয়াদী মারাত্মক ড়্গতির স্বীকার হন। অনেকেই খোঁজ নেন না যে- ডাক্তার কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। প্রত্যেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই তাঁর নিজস্ব এরিয়াতেই ভালো জানেন, অন্য বিষয়ে/ এরিয়াতে ভালো জানে না, কম জানে। এভাবে ভুল রেফারেন্স ও অজ্ঞতাবশত রোগী শুধুমাত্র ব্যথানাশক ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা পেয়ে থাকেন। কিছুুদিনের জন্য স্নায়ু নিষ্ত্র্নিয় থাকলেও ওষুধের কার্যকারিতার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ব্যথা আবার চলে আসে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন রোগী ব্যথার ওষুধ সেবন করলে পাকস্থলী ও অন্ত্রে আলসার, কিডনী ফেইলুর, লিভার ডিজিজ, রক্ত সংবহনতন্ত্রে নানা জটিলতাসহ কিছু স্নায়ুরোগে ভোগে। তাই কোমর ব্যথা হলে সঠিক চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত, না হলে সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিবছর প্রতি ৩০ জনে অন্তôত একজন কোমর ব্যথায় ভোগে। যারা অফিস-আদালতে বা কলকারখানায় একটানা বসে বা দাঁড়িয়ে, মেঝেতে কুঁজো হয়ে বসে সবজি কাটাকাটি, ঘর মোছা, জমিতে নিড়ানি, ঝাড় দেয়া ইত্যাদি কাজে জড়িত তাদের সাধরণত কোমর ব্যথা বেশী হয়। কোমর ব্যথায় ভোগা কোন রোগী সম্পূর্ণ অড়্গম বা পঙ্গু (দুই পা প্যারালাইসিস) হয়ে যেতে পারে।
আরেক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- প্রতি পাঁচজনের মধ্যে অন্তôত একজন জীবনের কোন না কোন সময়ে কোমরের ব্যথায় ভোগে। ৯২ শতাংশ মানুষ দুই মাসের আগেই কোমর ব্যথা থেকে সেরে উঠে আর ১৪ শতাংশ মানুষ দুই সপ্তাহের আগেই সুস্থ হয়।
কোমর ব্যথার কারণঃ
নানা কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে। অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে-মাংস-হাড়ের আঘাত, বার্ধক্যজনিত রোগ (যেমনঃ অস্টিওআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপরোসিস), পিএলআইডি (চখওউ), স্পাইনাল স্টেনোসিস, ক্যান্সার, প্রদাহ, মাসিকের ব্যথা, কিডনী রোগের ব্যথা প্রভৃতি।
সংড়্গেপে বলা যায়, তিনটি কারণে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। অল্প বয়সে- আঘাতের কারণে, বৃদ্ধ বয়সে- বার্ধক্যজনিত রোগে এবং মেয়েদের ড়্গেত্রে -মাসিকজনিত কারণে।
পরীড়্গা-নিরীড়্গাঃ
কোন কারণে কোমর ব্যথা হয়েছে তা নির্ণয়ে নানারকম পরীড়্গা করা হয়। একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট শুধুমাত্র ব্যথার চিকিৎসাই করেন না- যে কারণে ব্যথার উৎপত্তি সেই কারণকে দূরীভূত করার জন্য থেরাপিউটিক স্কিল পারফরম করেন। এড়্গেত্রে পরীড়্গা-নিরীড়্গা হিসাবে সাধারণত এমআরআই (গজও) ও এ-রে করা হয়। এম আর আই’র মাধ্যমে পিএলআইডি, নার্ভ ইনভল্বমেন্ট, কর্ড ইনভল্বমেন্ট আছে কিনা তা দেখা হয় এবং এ-রে দ্বারা হাড়ের কোন পরিবর্তন (ইড়হু পযধহমব) হয়েছে কিনা দেখা হয়। ফিজিওথেরাপিস্ট তার ফিজিক্যাল এামিনেশনের মাধ্যমে মাসকুলার সমস্যা নির্ণয় করেন।
চিকিৎসাঃ
প্রথমেই রোগীকে জানাতে হবে কেন কোমর ব্যথা হয়েছে। রোগীকে পরামর্শ দিতে হয়- যাতে সামনের দিকে ঝুঁকে কিছু না করেন এবং সোজা হয়ে বসেন। অযথা চিন্তôা না করে যত দ্রম্নত সম্ভব একজন পেশাদারও দড়্গ ফিজিওথেরাপিস্টের নিয়ন্ত্রনে চিকিৎসা করালে ব্যথা সেরে উঠে। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট প্রথমেই রোগীকে অ্যাসেস করেন, কারণ নির্ণয় করেন, তারপর রোগীর অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপিউটিক টেকনিক অঢ়ঢ়ষু করেন। উলেস্নখযোগ্য টেকনিকগুলো হলো, মেসেজ, মবিলাইজেশন, ট্রাকশন, মেনিপুলেশন, মবিলাইজেন-রোটেশন, মবিলাইজেশন-এটেনশন, স্ট্রেচিং ইলেকট্রোথেরাপি (যদি প্রয়োজন হয়)।
এছাড়া পিএলআইডি (চখওউ) খুবই মারাত্মক পর্যায়ের হলে, স্পাইনাল স্টেনোসিস হয়ে একজন স্পাইনাল সার্জনের পরামর্শ নিতে হবে। এড়্গেত্রেও সার্জারী পরবর্তী একজন ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে যেতে হবে যাতে করে সেকোন্ডারী কম্পিস্নকেশন (যেমনঃ পিঠ কুঁজো হয়ে যাওয়া, হাঁটতে না পারা, খুঁড়ি হয়ে হাঁটা, পায়ে শক্তি কমে যাওয়া) প্রতিরোধ করা যায়।
অন্য কারণে ব্যথা হলে জয়েন্টের মধ্যে স্টেরয়েড ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে। এটার ফল বেশ ভালো। এটা অবশ্যই একজন দড়্গ অর্থোপেডিক মেডিসিন ফিজিওথেরাপিষ্টের তত্ত্ববধানে নেয়া উচিত। প্রয়োজনীয় দড়্গতা না থাকলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাছাড়া স্টেরয়েড ইনজেকশনের ড়্গতিকর দিকগুলো হচ্ছে মেরম্নদন্ডের হাড়ের মধ্যে অস্টিও পোরোটিক পরিবর্তন (পযধহমব)। এতে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়। তাই যেখানে-সেখানে চিচিৎসা নয়, একজন পেশাদার, দড়্গ ফিজিওথেরাপিস্টই হলো এ ব্যাপারে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। তাই কোমর ব্যথা নিয়ে সোনিয়া বেগমের মত আর বিছানায় ছটফট নয়- উপযুক্ত চিকিৎসা (ফিজিওথেরাপি) নিন এবং সুস্থ থাকুন।
০ ডিজ্ঝএমজ্ঝনুরম্নল আমিন উৎপল
কোমর ব্যথা
বাতজনিত কারণেই কোমরে ব্যথা বেশি হয়ে থাকে। বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন ধরনের বাত দেখা দেয়। তবে বয়স বাড়লে সাধারণত লাম্বার স্পনডাইলোসিস নামক বাত জাতীয় রোগের জন্য কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে। এখানে বার্ধক্যজনিত কোমরে ব্যথা নিয়ে আলোচনা করব। মেরম্নদণ্ডের নিচের হাড়ের মধ্যবর্তী তরম্নণাস্থি বা ডিস্কের বার্ধক্যজনিত পরিবর্তনের ফলেই এ রোগের সূত্রপাত হয়। তরম্নণাস্থির এ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মেরম্নদণ্ডের নিচের দিকে সংবেদনশীল পরিবর্তন সাধিত হয়। সাধারণত এ পরিবর্তন ৩০ বৎসর বয়স থেকে শুরম্ন হয় এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে।
রোগের উপসর্গ
- কোমরে ব্যথা। প্রথম দিকে এ ব্যথা কম থাকে এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকে। অধিকাংশ ড়্গেত্রে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে এ ব্যথা কিছুটা কমে আসে।
- কোমরে সামান্য নাড়াচাড়া হলেই এ ব্যথা বেড়ে যায়।
- অনেক সময় ব্যথা পায়ের দিকে নামতে পারে এবং অবশ অবশভাব বা ঝিন ঝিন অনুভূতিও হতে পারে। এ অবস্থাকে সায়াটিকা নামে অভিহিত করা হয়।
- কোমরের মাংশপেশি কামড়ানো ও শক্ত ভাব হয়ে যাওয়া -এ ধরনের উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
- প্রাত্যহিক কাজ যেমন-নামাজপড়া, তোলা পানিতে গোসল করা, হাঁটাহাঁটি করা, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা, নিচু হয়ে কোনে কাজ করা ইত্যাদি করলে কোমরের ব্যথা বেড়ে যায়।
এ রোগের চিকিৎসা
বিশ্রাম ও ওষুধ
এ রোগী শক্ত ও সমান বিছানায় বিশ্রামে থাকবেন। অধিকাংশ ড়্গেত্রে এ ধরনের বিশ্রামে ব্যথা উপশম হয়। গবেষণালব্ধ ফলাফলে দেখা গেছে যে, সাধারণ কোমরের ব্যথা তিন থেকে সাত দিন বিশ্রাম নিলে ভালো হয়ে যায়। বিশ্রামে না কমলে চিকিৎসা করাতে হবে। ব্যথা উপশমে ওষুধ এবং মাংসপেশি শিথিলকরণ ওষুধ স্বল্প মেয়াদে দেয়া যেতে পারে। তবে ব্যথা উপশম ওষুধের পাশাপাশি রেনিটিডিন বা ওমিপ্রজল ব্যবহার করা ভালো, তাতে রোগীর গ্যাস্ট্রিকের কোন সমস্যা হয় না।
ফিজিক্যাল থেরাপি
ক) থার্মোথেরাপিঃ বিভিন্ন প্রকার তাপ এ রোগে চিকিৎসকরা প্রয়োগ করে থাকেন যেমন- ডিপ হিট বা সুপারফিসিয়াল হিট। রোগীর কোন অবস্থায় কোন ধরনের থেরাপি প্রয়োগ করতে হবে তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নির্ধারণ করে দেন।
খ) লাম্বার ট্রাকশনঃ লাম্বার ট্রাকশনের সাধারণত ২৫-৫০ পাউন্ড ওজন দেয়া হয়। তবে রোগীর অবস্থা, ওজন, বয়স ও পুরম্নষ/মহিলা ভেদে ওজন কম বেশি হয়। লাম্বার ট্রাকশন বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসকের (ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ) পরামর্শ অনুযায়ী দেয়া উচিত।
গ) লোকাল স্পাইনাল সাপোর্টঃ এ রোগে লোকাল স্পাইনাল সাপোর্ট হিসেবে কোমরের বেল্ট বা করসেট ব্যবহার করা যায়। তবে করসেট শুধু চলাফেরা ও কাজের সময় ব্যবহার করা উচিত।
ঘ) ইলেকট্রো থেরাপিঃ ইলেকট্রো থেরাপি হিসাবে ট্রান্সকিউটেনাস ইলেকট্রিক্যাল নার্ভ স্টিমুলেসন কিছু কিছু ড়্গেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে রোগীর অবস্থাভেদে চিকিৎসকরা এ সব চিকিৎসা প্রয়োগে উপদেশ দিয়ে থাকেন।
ঙ) থেরাপিউটিক এারসাইজঃ কোমরে ব্যথায় বিভিন্ন প্রকার থেরাপিউটিক এাসারসাইজ দেয়া হয়ে থাকে। ব্যায়াম রোগীর মাংসপেশিকে সবল করে এবং বেশি চাপ সহ্য করার ড়্গমতা তৈরি করে।
কোমরের বাতজনিত ব্যথার রোগীর জন্য কিছু পরামর্শঃ
Ìৈচয়ারে বসার সময় ঘাড় ও পিঠ সোজা রেখে বসবেন।
সৈব সময় শক্ত (একটি পাতলা তোষক) সমান বিছানায় ঘুমাবেন।
কৈাজ করার সময় করসেট ব্যবহার করম্নন।
Ìৈকানো জিনিস তোলার সময় সোজা হয়ে বসে তুলবেন।
Ìৈফামের বিছানায় ঘুমাবেন না এবং ফোমের (নরম সোফা) সোফায় অনেকড়্গণ বসবেন না।
এৈকই স্থানে বেশীড়্গণ দাঁড়িয়ে অথবা বসে থাকবেন না।
ঝৈুঁকে বা মেরম্নদণ্ড বাঁকা করে কোনো কাজ করবেন না।
ভৈারী কোনো জিনিস যেমন- বেশি ওজনের থলি, পানি ভর্তি বালতি ইত্যাদি বহন করবেন না।
xৈপঁড়িতে বসে কোনো কাজ যেমন মাছ কাটা, শাক-সবজি কাটা ইত্যাদি করবেন না।
xৈটউবওয়েল চেপে পানি উঠাবেন না।
ঝৈরনা অথবা সোজা হয়ে বসে তোলা পানি দিয়ে গোসল করবেন।
Ìৈচয়ারে টেবিলে বসে ভাত খাবেন।
xৈসঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় মেরম্নদণ্ড সোজা রেখে ধীরে ধীরে উঠবেন ও নামবেন।
হৈাইহিল জুতা ব্যবহার পরিহার করম্নন।
Ìৈমাটা ব্যক্তিরা শরীরের ওজন কমাবেন।
যৈানবাহনে চড়ার সময় সামনের আসনে বসবেন, কখনো দাঁড়িয়ে থাকবেন না।
xৈবছানা থেকে ওঠার সময় যে কোনো একদিকে কাত হয়ে উঠবেন।
Ìৈকানো প্রকার মালিশ করবেন না।
বেশি পুরানো হলে যেমন ৈকোনো যন্ত্র প্রায় কর্মড়্গমতা হারিয়ে ফেলে, তেমনি মানুষের বয়স বাড়লেও সে অনেকাংশে তার পূর্বের কর্মড়্গমতাকে ধরে রাখতে পারে না। তবে সুস্থ অবস্থায় এ নিয়মগুলো মেনে চললে কোমরের ব্যথা সহজে মানুষকে আক্রান্তô করতে পারে না বরং কর্মড়্গমতাও অনেক ড়্গেত্রে অটুট থাকে। তাই সুস্থ সকলেরই উচিত এগুলো মেনে চলা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা।
ডাঃ এমএ শাকুরজ্ঝ
বাত ব্যথা রোগ বিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হলে করণীয়
ডা. এম এ শাকুর
মানবদেহের পা একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। পা না থাকলে মানুষ হাঁটতে পারে না, তেমনি পায়ে ব্যর্থ থাকলেও হাঁটতে খুবই অসুবিধা হয়। আর চলাফেরা যিনি করতে পারেন না, তিনি তো পঙ্গু বৈ আর কিছুই নয়। মানবদেহের পায়ের প্রধান দু’টি অংশ হলো গোড়ালি ও পায়ের পাতা। পায়ের গোড়ালিতে যেসব কারণে ব্যথা হয় তার মধ্যে ক্যালকেনিয়ান স্পারই বেশি দায়ী। তা ছাড়া পায়ে কোনো আঘাত লাগলে বা পায়ের হাড় ভেঙে গেলে ব্যথা হয়। ক্যালকেনিয়ান স্পার থেকে অনেক সময় প্রদাহ হয়ে প্লাস্টার ফাসাইটিস হতে পারে। তা ছাড়া গেঁটেবাত, ওস্টিওমাইলাইটিস, স্পন্ডাইলোঅর্থোপ্যাথি ইত্যাদি রোগে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে। তবে বয়স বাড়লে ক্যালকেনিয়ান স্পার বা কাটার কারণেই বেশি হয় পায়ে ব্যথা। এ রোগের উপসর্গগুলো নিুরূপঃ
-পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা। ব্যথা সাধারণত হাঁটলে বেড়ে যায়।
- গোড়ালি কখনো কখনো ফুলে যেতে পারে।
- খালি পায়ে শক্ত জায়গায় হাঁটলে সাধারণত ব্যথা বেশি বাড়ে।
- প্লাস্টার ফাসাইটিস হলে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা সকালে বেশি থাকে এবং তা বেলা বাড়ার সাথে সাথে একটু কমে আসে।
- কখনো কখনো গোড়ালি শক্ত শক্ত মনে হয়।
- শক্ত জুতা ব্যবহার করলেও ব্যথা বেড়ে যায়।
চিকিৎসা
সাধারণত ব্যথানাশক ওষুধ যেমনপ্যারাসিটামল, ইন্ডোমেথাসিন, নেপ্রক্সিন ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। প্রয়োজন অনুসারে ফিজিক্যাল থেরাপি, যেমন মোম থেরাপি, হাইড্রোথেরাপি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। জুতার পরিবর্তন যেমন নরম সোল ব্যবহার করা, আর্চ সাপোর্ট দেয়া, গোড়ালির কাছে ছিদ্র করে নেয়া ইত্যাদি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপারেশন করে ক্যালকেনিয়ান স্পার বা কাটা কেটে ফেলতে হয়।
পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা রোগীর জন্য উপদেশ
- সব সময় নরম জুতা ব্যবহার করবেন।
- শক্ত স্থানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন না বা হাঁটবেন না।
- ভারী কোনো জিনিস, যেমনবেশি ওজনের বাজারের থলি, পানিভর্তি বালতি ইত্যাদি বহন করবেন না।
- সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় মেরুদণ্ড সোজা রেখে হাতে সাপোর্ট দিয়ে ধীরে ধীরে উঠবেন ও নামবেন এবং যথাসম্ভব গোড়ালির ব্যবহার কম করবেন।
- ব্যথা বেশি থাকা অবস্থায় কোনো প্রকার ব্যায়াম নিষেধ।
- হাই হিল জুতা ব্যবহার করা নিষেধ।
- মোটা ব্যক্তিদের শরীরের ওজন কমাতে হবে।
- মালিশ ব্যবহার করবেন না।
এসব পরামর্শ মেনে চললে একজন সুস্থ মানুষও এ রোগ থেকে দূরে থাকতে পারে। তাই আসুন, আমরা সবাই এগুলো মেনে চলি এবং পায়ের সমস্যা থেকে দূরে থাকি।
লেখকঃ বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, ফিজিক্যাল মেডিসিন, বিএসএমএমইউ।
চেম্বারঃ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক এন্ড ইমেজিং সেন্টার, বাড়ী নং-৪৮, রোড নং-৯/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা।
ফোনঃ ০১৮১৯-৪১০০৮০
বাত রোগের কারণ ও প্রতিকার
ডা. এম এ শাকুর
বাত রোগ এবং ব্যথা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যার বাত রোগ আছে তারই ব্যথা রয়েছে। তবে শুধু ব্যথা থাকলেই যে বাত রোগ থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সামান্য একটু আঘাত লাগলেই ব্যথা হতে পারে যা কোনো বাত রোগ নয়। বাত রোগ বয়স্কদের সাধারণত বেশি হয়। মেডিসিনের বিখ্যাত লেখক ও বিজ্ঞানী স্যার স্টানলি ডেবিডসনের মতে, যুক্তরাজ্যের শতকরা ৪০ জন বয়স্ক মানুষ কোনো না কোনো বাত জাতীয় রোগে ভুগছে। বাংলাদেশেও এই রোগীর সংখ্যা অগণিত।
প্রধান প্রধান বাত ব্যথা রোগগুলো হলোন্ধ
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস।
ওসটিও আর্থ্রাইটিস।
গাউট বা গেঁটে বাত।
রিউমেটিক ফিভার বা বাতজ্বর।
স্পন্ডাইলো অর্থোপ্যাথি ইত্যাদি।
এ পর্যায়ে আমরা প্রধান কয়েকটি বাত ব্যথা রোগ নিরাময়ের উপায় আলোচনা করব।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস
এই বাতজনিত রোগ সাধারণত ৩০-৫০ বছর বয়সের মহিলাদের হয়ে থাকে। তবে অনেক পুরুষেরও এই রোগ দেখা যায়। এই রোগ হলে হাত ও পায়ের ছোট ছোট গিরাগুলো ব্যথা করে এবং ফুলে যায়। ব্যথা সাধারণত সকালে ঘুম থেকে উঠলে বেশি অনুভূত হয় এবং এ সময় জোড়াগুলো শক্ত শক্ত মনে হয়। প্রাথমিকভাবে এই রোগীকে কিছু বেদনানাশক ওষুধ দেয়া যেতে পারে। তা ছাড়া রোগীর উপযুক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে রোগীকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হয় যাতে রোগী পঙ্গুত্ব থেকে রেহাই পেতে পারে। ওষুধের পাশাপাশি কুসুম গরম পানির ছ্যাঁক বা ওয়াক্স বাথ দেয়া ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমিত ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
অস্টিও আর্থ্রাইটিস
এটা সাধারণত বড় বড় জোড়া এবং মেরুদণ্ডের মধ্যকার হাড়ে হয়ে থাকে। অর্থাৎ হাঁটু, গোড়ালি, কোমর, ঘাড় ও অন্যান্য বড় বড় জোড়ায় বেশি হয়। চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমত রোগের ইতিহাস জেনে ভালোভাবে পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করতে হবে এবং নির্দিষ্ট কারণ অনুযায়ী তার চিকিৎসা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসানির্ভর করে রোগীর শরীরের কোন অঙ্গ আক্রান্ত হয়েছে তার ওপর। তবে ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেয়া যেতে পারে। তা ছাড়া ব্যায়াম, ফিজিক্যাল থেরাপি এবং কিছু নিয়ম-কানুন পালন করলে এই রোগ পুরোপুরি নিরাময় না হলেও রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
গাউট বা গেঁটে বাত
গেঁটে বাত সাধারণত অল্প বয়সী পুরুষ ও বেশি বয়সী মহিলাদের হয়ে থাকে। এটা সাধারণত ধনী পরিবারে বেশি দেখা যায়। কারণ যারা বেশি পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় বা পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার খায় তাদের বেশি হয় এই রোগ। এই রোগ নিরাময়ের জন্য বেদনানাশক ওষুধ যেমন- ওষনসশপয়লথধমষ বেশ কার্যকর। তা ছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এলুপিউরিনল ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। এই রোগীদের পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার যেমনন্ধ কবুতরের গোশত, হাঁসের গোশত, গরুর লাল গোশত, সামুদ্রিক মাছ, মাছের ডিম, ছোট মাছ, মগজ, কলিজা, পুঁইশাক, ফুলকপি ও শিমের বীচি বর্জন করা উচিত। তবে তা নিরাময়ের সহায়ক হবে।
বাত ব্যথায় ফিজিওথেরাপি
‘বাত’ শব্দটি আমাদের সমাজে বহুল আলোচিত শব্দ। শরীর ব্যথা বিশেষ করে যে কোন জয়েন্ট বা গিরায় ব্যথা হলেই তাকে আমরা বাত বলে থাকি। এছাড়া ঘাড়, কোমরে ব্যথা এবং এই ব্যথা হাত কিংবা পায়ের দিকে ছড়িয়ে গেলেও তার নাম হয়ে যায় বাত। বাতের ব্যথা অমাবস্যায় বাড়ে, পানির জোয়ারে বাড়ে কিংবা শীতে এর প্রকোপ বেশি হয় এমন কথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে সকল ব্যথাই বাত নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘আথ্রাইটিস’কে বাতের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার সকল আথ্রাইটিসের চরিত্র এক নয়। রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস বা গেঁটে বাত এবং অস্টিওআথ্রাইটিস বা বাতই আথ্রাইটিস-এর প্রধান প্রকারভেদ। এর মধ্যে অস্টিওআথ্রাইটিস-এ ভোগা রোগীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। ক্রমবর্ধমান কাজের চাপ, সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যালসিয়াম গ্রহণ না করা, শারীরিক পরিশ্রম না করা এবং সর্বোপরি বংশগত কারণে এই রোগ দেখা দিতে পারে। এখানে সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হলো ৈকোন রোগী যদি এই রোগে একবার আক্রান্তô হয়ে যায় তবে তার আক্রান্তô জয়েন্ট বা হাড়টি স্থায়ীভাবে ড়্গতিগ্রস্তô হয়ে থাকে। তাই এড়্গেত্রে রোগীর ড়্গতিগ্রস্তô হাড়টিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় না। তাই এই সকল ড়্গেত্রে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসার চেয়ে স্থানীয় বা লোকাল ট্রিটমেন্ট যাকে আমরা শারীরিক চিকিৎসা বলি সেটিই সবচেয়ে বেশি কার্যকর। কোন কোন ড়্গেত্রে যেখানে ড়্গয়জনিত ড়্গতের পরিমাণ সামান্য সেখানে এন্টি ইনফ্লামেটরি বা ব্যথানাশক ওষুধ কাজ করে থাকে কিন্তু বেশিরভাগ ড়্গেত্রে অর্থাৎ যেখানে ড়্গয়জনিত ড়্গতের পরিমাণ বেশি সেখানে ব্যথার ওষুধ তেমন কোন ভূমিকাই রাখে না। এড়্গেত্রে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই। তদুপরি যারা সামান্য ড়্গয়ের কারণে ব্যথায় ভোগেন তাদের জন্যও প্রতিরোধমূলক বা প্রিভেনটিভ ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন যাতে রোগীর ড়্গয়জনিত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করতে না পারে। এখানে মজার বিষয় হলো ডায়াবেটিস আক্রান্তô রোগীরাই এ ধরনের ব্যথায় বেশি ভুগে থাকেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের মতে বাজারে প্রচলিত ব্যথানাশকগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে ডায়াবেটিক রোগী এমনকি সাধারণ রোগীদেরও নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। অথচ এসব ড়্গেত্রে ফিজিওথেরাপি সম্পূর্ণ নিরাপদ।
কি ধরনের ফিজিওথেরাপি নেবেনঃ ব্যাপক চাহিদার কারণে ফিজিওথেরাপি এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। তাই ফিজিওথেরাপি নেয়ার পূর্বে রোগীকে সচেতন থাকতে হবে। একজন গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্ট আপনাকে নির্ভুল চিকিৎসা দিতে পারবেন। তাই ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া থেরাপি নেবেন না।
কোন কোন ব্যথায় ফিজিওথেরাপি নেবেনঃ (১) ঘাড় ব্যথাÌৈকান কোন ড়্গেত্রে শুধু ঘাড় ব্যথা হয় আবার কিছু কিছু ড়্গেত্রে ঘাড় থেকে ব্যথা হাতে ছড়িয়ে পড়ে, হাত ঝিঁ ধরে থাকে এমনকি অবশ মনে হয়।
(২) কাঁধের জয়েন্টে ব্যথাঃ কাঁধের ব্যথা বা ফ্রোজেন সোল্ডারে ফিজিওথেরাপি অত্যন্তô কার্যকর।
(৩) হাঁটু ব্যথাঃ ড়্গয়জনিত কারণেই বেশিরভাগ ড়্গেত্রে হাঁটু ব্যথা হয়ে থাকে।
(৪) কোমর ব্যথাঃ লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস-এর জন্য কোমরে ব্যথা হতে পারে এবং তা ছড়িয়ে পড়ে পায়ের দিকে। উপরোক্ত ব্যথাগুলোই সাধারণত বাতের ব্যথা হিসেবে প্রচলিত। এ সকল ব্যথায় ফিজিওথেরাপি অত্যন্তô কার্যকরি এবং কোন কোন ড়্গেত্রে একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি।
শেষ কথাঃ
চিকিৎসার পূর্বশর্ত হলো রোগ নির্ণয়। তাই সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের পর চিকিৎসা গ্রহণ করম্নন। সঠিক রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসা আপনাকে সুস্থ জীবন উপহার দিতে পারে।
হাতের কব্জির ব্যথা
ডা. এম এ শাকুর
নানা কারণে হাতের কব্জিতে ব্যথা হতে পারে, যেমন- আঘাত পাওয়া, দীর্ঘক্ষণ কব্জির মাধ্যমে কোন কাজ করা, ডিকোয়ারবেইনস ডিজিজ, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, গাঁউট ও অন্যান্য বাতজাতীয় রোগ। এসব রোগে কব্জিতে ব্যথা ছাড়াও অন্য জোড়ায় ব্যথা হতে পারে। ডান হাতের কব্জিতে ব্যথা হলে লিখতে এমনকি খেতেও অসুবিধা হয়। বাতজাতীয় রোগে হাতের কব্জিতে ব্যথা হলে তা সাধারণত বিশ্রাম নিলে ও সকালে বেড়ে যায়, কাজ করলে কিছুটা কমে আসে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বাত রোগটি নির্নয় করা জরুরি ও সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করা দরকার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কব্জিতে ব্যথা হলে তা সাধারণত বিশ্রাম নিলে কমে, কাজ করলে বাড়ে। সবক্ষেত্রেই কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা দিতে হবে। তবে সাধারণভাবে নিুলিখিত চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে।
প্রথমত আক্রান্ত হাতের কব্জিকে বিশ্রামে রাখতে হবে।
যদি কোনো নির্দিষ্ট রোগের কারণে কব্জিতে ব্যথা হয়ে থাকে তবে তার উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে হবে।
ব্যথানাশক অষুধ, যেমন- প্যারাসিটামল বা এনএসএআইডি দেয়া যেতে পারে। এনএসএআইডি ট্যাবলেট হিসেবে মুখে খাওয়া ছাড়াও এনএসএআইডি জেল আক্রান্ত স্থানে লাগান যেতে পারে। তবে কোনোভাবেই জেল দিয়ে মালিশ করা যাবে না।
ফিজিক্যাল থেরাপি হিসেবে আলট্রাসাউন্ড থেরাপি বা ফোনোফরোসিস ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
অল্প গরম পানিতে হাতের কব্জিকে ডুবিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে নড়াচড়া করালেও বেশ উপকার হয়।
আক্রান্ত কব্জির সাহায্যে কাপড় ধোয়া বা মোচরানো, হাতপাখা দিয়ে বাতাস করা, টেনিস খেলা ইত্যাদি কাজ অর্থাৎ যে কাজ করতে হলে হাতের কব্জিকে বারবার ঘুরাতে হয় সে ধরনের কাজ করা যাবে না।
া আক্রান্ত হাতের কব্জিকে নড়াচড়া করা থেকে কিছুটা রক্ষা করার জন্য রিস্ট ব্যান্ড ব্যবহার করা যেতে পারে।
এভাবে চিকিৎসা করালে ও নিয়ম মেনে চললে হাতের কব্জির ব্যথা হতে পরিত্রাণ পাওয়া সহজ হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ নিজের হাতে ব্যথাহীনভাবে করা সম্ভব হবে।
লেখকঃ বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, ফিজিক্যাল মেডিসিন, বিএসএমএমইউ (পিজি হাসপাতাল)। চেম্বারঃ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ইমেজিং সেন্টার, বাড়ি নং-৪৮, রোড নং-৯/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা।