Saturday, June 14, 2008

Vitamin (ভিটামিন)

ক্যালসিয়াম দেহের জরম্নরি উপাদান

দেহের জন্য ক্যালসিয়াম একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। অন্যান্য খনিজ পদার্থ থেকে দেহে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশী। দেহে শতকরা ৯০-৯৯ ভাগ ক্যালসিয়াম থাকে হাড় ও দাঁতে। ক্যালসিয়াম ফসফরাসের সাথে মিলে এসব কঠিন তন্তুর কাঠিন্য প্রদান করে। ক্যালসিয়ামের বাকি অংশ শরীরের সব কোষের ক্রিয়াকলাপের জন্য গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আজকাল অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ বা গর্ভবতী মহিলা ক্যালসিয়াম বা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। যে কোন মাছের কাঁটা বা নরম হাড় চিবিয়ে রস খাওয়ার মাধ্যমে অতি সহজে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। ক্যালসিয়ামের দৈনিক চাহিদা গর্ভাবস্থায় এবং স্তôন্যদানকারী মায়েদের সবচেয়ে বেশি, প্রায় ১৫০০-২০০০ মিলিগ্রাম, শিশুদের দৈনিক ১০০০-১৪০০ মিলিগ্রাম এবং প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের ৮০০-১০০০ মিলিগ্রাম।

প্রতিদিন আমাদের প্রচুর ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত। ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস হলো দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য। যেমনদৈই, ছানা, পনির, মাখন, ড়্গির ইত্যাদি। এক গস্নাস দুধের মধ্যে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় ২৯০ মিলিগ্রাম। চর্বিযুক্ত এবং সর উঠানো দুধে ক্যালসিয়াম সামান্য পরিমাণ বেশি থাকে। দুধে অনেক ভিটামিন এবং উৎকৃষ্ট মানের প্রোটিন থাকে, যা ক্যালসিয়ামকে অঙ্গীভূত করতে সাহায্য করে। কোনো যুবক-যুবতী প্রতিদিন তিন গস্নাস দুধ এবং তার সাথে পনির ও দই দিয়ে নাশতা করলে তার প্রোটিনসহ ক্যালসিয়ামের দৈনিক চাহিদা পূরণ হওয়া সম্ভব। দুধ ছাড়া ক্যালসিয়ামের অন্যান্য উৎসের মধ্যে কাঁটাসহ ছোট মাছ, ডিমের কুসুম, শিমের বিচি, সবুজ শাক-সবজি, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক, কচুশাক, ঢেঁড়শ ইত্যাদিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম আছে।

আমাদের দেহে ক্যালসিয়াম তৈরি হয় না। অবশ্যই খাবারের মাধ্যমে এর চাহিদা পূরণ করতে হয়। ক্যালসিয়ামের অভাবে শিশুদের দাঁত ও হাড়ের সুষ্ঠু গঠন হয় না। যার ফলে শরীরে শক্তি হয় না। ক্যালসিয়াম স্বল্পতায় শিশুদের হাড় ও পায়ের মাংসপেশীতে ব্যথা হয়ে থাকে। ক্যালসিয়ামের অভাব হলে শিশুদের দৈহিক গঠন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং হাঁটা বিলম্ব হয়। ক্যালসিয়ামের সাথে ভিটামিন-ডি-এর অভাব হলে শিশুদের রিকেটস রোগ হয়, যার ফলে শিশু এক সময় পঙ্গুত্বের অভিশাপ বরণ করে। চলিস্নশোর্ধ্ব বয়সে বা রজঃনিবৃত্তির পর মহিলাদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় ক্যালসিয়ামের অভাব হলে অস্টিওপোরোসিস বা ‘হাড় ভঙ্গুর’ রোগের প্রবণতা বাড়ে অর্থাৎ অল্প আঘাতে হাড় ভেঙ্গে যায়। এজন্য বয়স্ক মহিলাদের ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অত্যন্তô জরম্নরী। গর্ভকালীন সময়ে এবং প্রসূতি মায়েদের ড়্গেত্রে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া প্রয়োজন। কারণ স্বাভাবিক খাবার দ্বারা অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ নাও হতে পারে। ক্যালসিয়ামের অভাবে গা, হাত-পায়ের জ্বালা-যন্ত্রণা করতে পারে। দেহের বিভিন্ন শিরা-উপশিরা পুরম্ন হয়। এ সময় ক্যালসিয়ামের অভাবে মা ও শিশু দুজনেরই শারীকি সমস্যা হয়। দাঁত ও হাড়ের সুগঠন ছাড়াও ক্যালসিয়ামের আরো কিছু গুরম্নত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে, তাহলো হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক স্পন্দন রড়্গা করা, রক্ত জমাট বাঁধায় সাহায্য করা ও হরমোন প্রক্রিয়া এবং মস্তিôষ্ক, চোখ ও কানের প্রক্রিয়ায় ক্যালসিয়ামের ভূমিকা রয়েছে। মাংসপেশির সঙ্কোচনে ক্যালসিয়ামের গুরম্নত্ব অনেক। কোষ বিভাজন ও রক্ত তৈরিতে ক্যালসিয়াম যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। আমাদের প্রতিদিনের খাবারে লড়্গ্য রাখতে হবে যাতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বাদ না পড়ে এবং খাবারের মাধ্যমেই যেন ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়।

ভিটামিন-সির তাৎপর্য
ডাঃ মেহবুব আহসান রনি
অনকোলজি বিভাগ
বিজ্ঝএসজ্ঝএমজ্ঝএমজ্ঝইউ।

কেবল শুকনো বীজ ও খাদ্যশস্য ছাড়া প্রায় সব ধরনের খাদ্য-উপাদানে ভিটামিন ‘সি’ থাকে বলে এর অভাব তেমন দেখা যায় না। তবে ক্রমাগত এর অভাব ঘটতে থাকলে শরীরে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকেরা বলেন, ভিটামিন-সির অভাবে শিশুর স্কার্ভি রোগ হয়। বড়দের ক্লান্তি লাগা, দুর্বলতা, নড়বড়ে দাঁত-হাড়, বিভিন্ন গ্রন্থিতে ব্যথা, অল্পতেই রক্তক্ষরণ প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা এবং শরীরে পানি জমে বিভিন্ন রকম জটিলতাও সৃষ্টি করতে পারে।
শরীরে মজুদ হিসেবে থাকার ব্যবস্থা নেই, তাই ভিটামিন ‘সি’ আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় থাকা দরকার। এটি সরাসরি অন্ত্র থেকে দেহে শোষিত হয় এবং পোর্টাল শিরা দিয়ে রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন কোষে পৌঁছে গুরুত্বপূর্ণ বিপাকীয় কাজে অংশ নেয়। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলেন, প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে ২০ থেকে ৩০ মিলিগ্রাম এবং শিশুদের দৈনিক ১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি গ্রহণ করা উচিত। সে জন্য কাঁচা ফলমূল বেশি করে খাওয়া দরকার। প্রতিদিন অন্তত একটি আমলকী যদি খাওয়া যায়, তাহলে ভিটামিন-সির অভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকা যাবে। আমলকী ভিটামিন-সির খুবই ভালো একটি উৎস। একটি আমলকী খেলে আপনি পাবেন ৪৬৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, যা অন্যান্য ফলের চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ বেশি। তবে কমলালেবু, কাগজি লেবু, আমড়া, জাম্বুরা, কাঁচা তেঁতুল, বরই প্রভৃতিও ভিটামিন-সির ভালো উৎস।
সবজির মধ্যে ফুলকপি, সজিনা, ডাঁটা, বরবটি, মরিচ, করলায় প্রচুর ভিটামিন-সি রয়েছে। আর শাকের মধ্যে মুলাশাক, সজিনাপাতা, শালগমপাতা, আলুশাক প্রভৃতিতে ভিটামিন-সি বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। তাই শরীরে ভিটামিন-সির অভাব পূরণের জন্য নিয়মিত এসব ফলমূল ও শাকসবজি গ্রহণ করে সুস্থ থাকুন।