কিডনির সমস্যা
পরামর্শ দিয়েছেন
অধ্যাপক ডা· এম এ সালাম
অধ্যাপক, ইউরোঅনকোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২৬ বছর। উচ্চতা পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি, ওজন ৫৭ কেজি। কয়েক মাস আগে থেকে আমার কোমরের বাঁ পাশে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে। আমি একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাই। তিনি আমাকে আলট্রাসনোগ্রাম ও এক্স-রে করাতে বলেন। পরীক্ষাগুলো করানোর পর দেখা গেল, আমার কিডনিতে লেফট রেনাল করটিক্যাল সিস্ট হয়েছে। তারপর চিকিৎসক আমাকে একটি ওষুধ এক মাস খেতে দেন। কিন্তু ওষুধগুলো খাওয়ার পরও কোনো কাজ হয়নি। এ রোগের জন্য আমার অপারেশন করানোর প্রয়োজন আছে, নাকি শুধু ওষুধ খেলেই এ রোগ থেকে মুক্তি পাব?
নাম ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
বাগিচাগাঁও, চট্টগ্রাম।
পরামর্শঃ কিডনির সিস্ট হচ্ছে পানিভর্তি এক ধরনের ফোসকা। কিডনির সিস্ট সাধারণত এমনিতেই ভালো হয়ে যায়; কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে এ থেকে যদি কোনো জটিলতা দেখা দেয়, যেমন-ক্যান্সার ধরা পড়ে, তাহলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কপি করা লাগতে পারে।
এ ছাড়া কিছু সিস্ট আছে, যেগুলো বেশিসংখ্যকভাবে দুটি কিডনিতেই হয়ে থাকে। এ ধরনের সিস্ট হলে কিডনির কার্যক্ষমতা অনেক কমে যায় এবং নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়।
একে বলে অ্যাডাল্ট পলিসিস্টিক ডিজিজেস অব দ্য কিডনি। এ রকম হলে অভিজ্ঞ নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে সাধারণ পর্যবেক্ষণই যথেষ্ট। নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞও হয়তো তেমন দীর্ঘমেয়াদি কোনো চিকিৎসা দেবেন না। এ রোগে খুব অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে শল্যচিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয়। ৪০ বছর বয়সের পর থেকে ইউরোলজি বা নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। তাই এখনই আপনার দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
ডায়াবেটিস সম্পর্কিত জিজ্ঞাসা
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা· মো· ফরিদউদ্দিন
সহযোগী অধ্যাপক, অ্যান্ডোক্রাইন মেডিসিন
বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২৪ বছর। আমার টাইপ-২ ডায়াবেটিস আছে। মিষ্টিজাতীয় যেকোনো খাবার না খেলেই তা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমি একটি ছেলেকে পছন্দ করি। তারও ডায়াবেটিস আছে। তাঁর বয়স ৩০ বছর। ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানদের কি ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা আছে? থাকলেও তা কতটুকু। বিস্তারিত জানালে খুশি হব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
কুমিল্লা।
পরামর্শঃ টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার জন্য পরিবেশগত অবস্থা বেশি দায়ী। এ ক্ষেত্রে বংশগত প্রভাবের চেয়েও পারিপার্শ্বিক অবস্থাই বেশি দায়ী। বর্তমানে আমাদের দেশের পারিপার্শ্বিকতা টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে। এর পাশাপাশি বংশের কারও, বিশেষ করে মা-বাবার ডায়াবেটিস থাকলে সন্তানদের ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকেই।
তাই টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে হলে স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করার অভ্যাস করতে হবে। যেমন-পরিমিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা, শাকসবজি-ফলমূল বেশি করে খাওয়া, চর্বিযুক্ত ও বেশি কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার কম খাওয়া এবং সম্ভব হলে একেবারেই না খাওয়া। শারীরিক কায়িক পরিশ্রম বাড়ানো, শরীর-মেদ স্থূল হলে তা নিয়ন্ত্রণ, অর্থাৎ শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখাটা জরুরি।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস বহুলাংশে প্রতিরোধ করা যায়। আর টাইপ-২ ডায়াবেটিস হয়ে থাকলে প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই এ দিকগুলোর দিকে নজর রাখলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়েও সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব। আপনাদের সন্তান যদি তার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে, নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করে এবং পরিমিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলে, তাহলে তার পক্ষেও টাইপ-২ ডায়াবেটিস অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
নারীস্বাস্থ্য সমস্যা
পরামর্শ দিয়েছেন
ডাজ্ঝ রওশন আরা খানম
স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক, বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২৫। ছয় মাস হলো বিয়ে হয়েছে। আমার মাসিক নিয়মিত হয়। সমস্যা হলো মিলিত হতে গেলে কোনো অনুভূতি হয় না। মনে হয় যেন জোর করে হচ্ছে। আমি সামান্য ব্যথাও পাই। এটা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছি। এটা কি শারীরিক সমস্যা? সন্তান নিতে কি কোনো সমস্যা হবে? আমার স্বামীর বয়স ২৯ বছর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
চট্টগ্রাম।
পরামর্শঃ এ ধরনের সমস্যা শারীরিক ও মানসিক উভয় কারণেই হতে পারে। অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, পুষ্টিহীনতা, অতিরিক্ত স্থূলতা এবং আরও কিছু কিছু অসুস্থতায় এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। পরস্পরের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অভাবেও এ রকমটি হতে পারে। আপনারা যদি মনে করেন উপরিউক্ত কোনো কারণই এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, তাহলে অবশ্যই চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অথবা হরমোন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করবেন। মানসিক সাপোর্ট বা অন্য কিছু লাগবে কি না সেটা তাঁরাই নির্ণয় করে প্রয়োজন হলে পরামর্শ দেবেন। এ ছাড়া আপনার সমস্যার জন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করুন।
ত্বকের সমস্যা
পরামর্শ দিয়েছেন
ডাজ্ঝ সৈয়দ আফজালুল করিম
চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২২। উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি, ওজন ৫৮ কেজি। বেশ কয়েক বছর আগে আমার অণ্ডকোষে বেশ কয়েকটা ছোট ছোট শক্ত গোটা অনুভব করি। ব্যথা কিংবা অন্য কোনো সমস্যা না হওয়ায় প্রথমে তেমন গুরুত্ব দিইনি। এখন এগুলো আরও বড় ও শক্ত হয়েছে। বেশ চুলকায়। বেশ কিছুদিন পরপর দু-একটির শক্ত অংশ নরম হয়ে এ থেকে ধবধবে সাদা ঘন পদার্থ বেরিয়ে আসে। এ নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। কোনো চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতেও অস্বস্তি বোধ করছি। পরামর্শ দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
পরামর্শঃ আপনার সমস্যাটিকে স্ক্রোটাল সিবাসিয়াস সিস্ট বলা হয়। এ রোগটির ব্যাপারে যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন, তত ভালো ফল পাবেন। এটা কোনো মারাত্মক রোগ নয়। সার্জারি বা অস্ত্রোপচার করে এটি সম্পূর্ণ ভালো করা যায়। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ যাঁরা সার্জারি বা অস্ত্রোপচার করেন অথবা সার্জারি বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে পারেন। দেরি করবেন না। এতে রোগ জটিল হতে পারে। লজ্জার জন্য প্রকাশ না করলে বা চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে পরে রোগ জটিল হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন।
কিডনি ও মূত্রতন্ত্রের সমস্যা
পরামর্শ দিয়েছেন
অধ্যাপক ডাজ্ঝ এম এ সালাম
ইউরোঅনকোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সমস্যাঃ আমার বয়স ১৬। উচ্চতা পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি, ওজন ৫০ কেজি। পাঁচ মাস আগে থেকে আমার কোমরের বাঁ পাশে প্রচণ্ড ব্যথা। আমি একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাই। চিকিৎসক আমাকে আলট্রাসনোগ্রাম ও এক্স-রে করাতে বলেন। পরীক্ষাগুলো করানোর পর দেখা গেল, আমার কিডনিতে লেফট রেনাল করটিক্যাল সিস্ট হয়েছে। চিকিৎসক আমাকে একটা ওষুধ এক মাস খেতে বলেন। কিন্তু ওষুধগুলো খাওয়ার পরও কোনো কাজ হয়নি। এ রোগের জন্য অস্ত্রোপচার করানোর প্রয়োজন আছে কি না কিংবা অস্ত্রোপচার ছাড়া ওষুধ খেলে আমি এ রোগ থেকে মুক্ত পাব কি?
মোজ্ঝ রহিমউল্যাহ
কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী।
পরামর্শঃ কিডনির সিস্ট হচ্ছে পানিভর্তি এক ধরনের ফোসকা। কিডনির সিস্ট সাধারণত এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। কোনো রকম চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে এ থেকে যদি কোনো জটিলতা দেখা দেয়, যদি ক্যান্সার ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কপি করা লাগতে পারে।
এ ছাড়া কতগুলো সিস্ট আছে যেগুলো বেশিসংখ্যক দুটি কিডনিতেই হয়ে থাকে। এ ধরনের সিস্ট হলে কিডনির কর্মক্ষমতা অনেক কমে যায় ও নানা ধরনের শারীরিক জটিলতাও দেখা দেয়। একে বলে এডাল্ট পলিসিস্টিক ডিজিজেস অব দ্য কিডনি। এ রকম হলে অভিজ্ঞ নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।
অবশ্য এ ক্ষেত্রে সাধারণ পর্যবেক্ষণই যথেষ্ট। নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞও হয়তো তেমন দীর্ঘমেয়াদি কোনো চিকিৎসা দেবেন না। এই রোগে খুব অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে শল্যচিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয়। ৪০ বছর বয়সের পর থেকে ইউরোলজি বা নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। তাই আপনার এখনই চিন্তার কোনো কারণ নেই।
কাশির সমস্যা
পরামর্শ দিয়েছেন
ডাজ্ঝ মোজ্ঝ দেলোয়ার হোসেন
বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, শাহবাগ, ঢাকা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২৬ বছর। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খুঁজছি। বন্ধুদের সঙ্গে একটি মেসে থাকি। দেড় মাস ধরে আমার গায়ে জ্বর ও গরম-গরম লাগে। বিকেলে ও রাতে জ্বর বেশি হয় এবং ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায়। এত ঘাম হয় যে রাতে জামাকাপড় ভিজে যায়। এক মাস ধরে কাশি হচ্ছে। প্রথমে কাশির সঙ্গে কোনো কফ বেরোত না, কিন্তু এখন মাঝেমধ্যে বের হয়। কাশির জন্য কফের সিরাপ খেয়েছি, কোনো উপকার পাইনি; বরং কাশি দিন দিন বাড়ছে। ইদানীং লক্ষ করছি, আমার ক্ষুধা একেবারে কমে গেছে এবং গত দুই মাসে ওজন ৬০ কেজি থেকে ৫৬ কেজিতে নেমেছে। আমার খুব দুর্বল লাগে। মাঝেমধ্যে এত দুর্বল লাগে যে চাকরির ইন্টারভিউ দিতেও খুব কষ্ট হয়। এখানে উল্লেখ্য, ১৫ বছর আগে আমার দাদুর ফুসফুসে যক্ষ্মা হয়েছিল। তিনি নয় মাসের চিকিৎসা নিয়েছিলেন এবং এখন তিনি সুস্থ। আমি তাঁর সঙ্গে একই ঘরে থাকতাম। এখন ভয় হচ্ছে, দাদুর মতো আমারও যক্ষ্মা হলো কি না! আমার এখন কী করা উচিত? মাসুদ রানা, বাড্ডা, ঢাকা।
পরামর্শঃ আপনার শারীরিক উপসর্গগুলোর সঙ্গে যক্ষ্মার উপসর্গের অনেক মিল আছে। তবে আপনার ফুসফুসের যক্ষ্মা হয়েছে কি না, তা নির্ণয় করার জন্য একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে কিছু পরীক্ষা প্রাথমিকভাবে করাতে পারেন। যেমন-কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (টিসি, ডিসি, এইচপি, ইএসআর), চেস্ট এক্স-রে পিএ ভিউ, স্পিউটাম ফর এএফবি পরপর তিন দিন, টিউবারকিউলিন স্কিন টেস্ট। পরীক্ষাগুলোর ফলাফল দেখে জানা যাবে আপনার ফুসফুসের যক্ষ্মা হয়েছে কি না বা আপনার আর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে কি না। যদি আপনার যক্ষ্মা হয়ে থাকে, তাহলেও ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সঠিক মাত্রার ফুসফুসের যক্ষ্মার ওষুধ নিয়মিত খেলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ লোক যক্ষ্মায় আক্রান্ত। শতকরা ৯৫ ভাগ যক্ষ্মা রোগী ও শতকরা ৯৮ ভাগ যক্ষ্মা রোগের জন্য মৃত্যু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে হয়ে থাকে। এ উন্নয়নশীল দেশের শতকরা ৭৫ ভাগ যক্ষ্মা রোগী জীবনের সবচেয়ে উপার্জনক্ষম সময়ে, অর্থাৎ ১৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে আক্রান্ত হয়। যক্ষ্মা আমাদের দেশে একটি বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ২০০০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমাদের দেশে প্রতি লাখ মানুষের মধ্যে ২৩৮ জন এবং প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ মানুষ নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হয়। সহজ ভাষায় বলা যায়, আমাদের দেশে প্রতি দুই মিনিটে একজন নতুন করে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয় এবং প্রতি আট মিনিটে একজন যক্ষ্মা রোগের জন্য মৃত্যুবরণ করে। যদিও যক্ষ্মা রোগের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ নেই, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ রোগে আক্রান্ত রোগীর জ্বর, কাশি, ক্ষুধামান্দ্য, ওজন কমে যাওয়া, রক্ত আসার মতো উপসর্গ থাকে। তাই এ ধরনের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পেলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সমস্যাঃ আমার বয়স ২৪। রক্তের গ্রুপ এবি নেগেটিভ। আমার হবু স্ত্রীর বয়স এবং রক্তের গ্রুপও একই। আমরা আগামী মাসে বিয়ে করতে যাচ্ছি। বয়স ও রক্তের গ্রুপ এক হওয়ায় ভবিষ্যতে সন্তান নিতে কোনো সমস্যা হবে কি? সমস্যা হলে তা এড়ানোর জন্য এখনই কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে? আমরা পাঁচ বছরের মধ্যে সন্তান নিতে চাই না-সে জন্য এখন কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে, জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
খন্দকার হাসান শাহ্রিয়ার
নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।
পরামর্শঃ আপনার সচেতনতা প্রশংসাযোগ্য। বর্তমান প্রজ্ন যদি তাদের ভবিষ্যৎ প্রজ্নের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তাহলে আগামী দিনে অনেক বংশানুক্রমিক রোগ থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারব বলে আশা করা যায়। স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ একই থাকলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। রক্তের গ্রুপ যদি একজনের আরএইচ পজিটিভ এবং আরেকজনের আরএইচ নেগেটিভ হয় তাহলে প্রথম সন্তান হওয়ার সময় কোনো সমস্যা নাও হতে পারে। কিন্তু পরে সন্তান নেওয়ার সময় সমস্যার সৃষ্টি হয়। আপনাদের বিয়ে এবং জীবনের পরবর্তী ধাপে কোনো সমস্যা হবে না বলেই আশা করা যায়।
বুকের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২৩। উচ্চতা পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি, ওজন ৫৬ কেজি। দুই মৌসুম ধরে শীতের এ সময় আমার প্রচণ্ড জ্বর, সঙ্গে বুকের ডান পাশে বেশ ব্যথা হয়। একজন চিকিৎসককে দেখালে তিনি বুকের এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষা করতে দেন। তাতে আমার ফুসফুসে ইনফেকশন ধরা পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করার পর জ্বর ও বুকের ব্যথা সেরে যায়।
কিন্তু তার পরও জোরে নিঃশ্বাস নিলে বুকে ব্যথা হতো। তাই আবার চিকিৎসকের কাছে গেলে একই ধরনের আরেক ডোজ অ্যান্টিবায়োটিক দেন। সেগুলো শেষ করি। তার পরও বিভিন্ন সময়ে বৃষ্টিতে ভিজলে অথবা বেশিক্ষণ এসির ভেতর বা পাখার নিচে থাকলে বুকের ব্যথাটা দেখা দেয় এবং সঙ্গে অল্প জ্বরও হয়। তাই আবার চিকিৎসককে দেখালে বুকের এক্স-রে ও টিবি পরীক্ষা করতে দেন।
এতে কিছু ধরা না পড়লেও বুকের এক্স-রেতে আবারও ফুসফুসের ইনফেকশন ধরা পড়ে। চিকিৎসক আবারও অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে দেন। সেগুলো সেবন করার পর এখনো জোরে নিঃশ্বাস নিলে বুকের ডান পাশে ব্যথা হয় এবং একটু বৃষ্টিতে ভিজলে বা যেকোনো কারণে ঠান্ডা লাগলে অল্প কাশি, জ্বর ও বুকের ব্যথা দেখা দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
তালতলা, ঢাকা।
পরামর্শঃ শীতকালে এ ধরনের কাশি, জ্বর প্রতিবছর হওয়াটা আসলে ট্রপিক্যাল পালমোনারি ইয়োসিনোফিলিয়া অথবা কফ ভ্যারিয়েন্ট অ্যাজমার কারণে হয়ে থাকে। আপনাকে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। আপনি রক্তের ইয়োসিনোফিল কাউন্ট, সিরাম আইজিই লেভেল ও মিথাকলিন চ্যালেঞ্জ টেস্ট করাবেন। পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করুন।
এই পরীক্ষাগুলোর ফলাফল থেকে আপনার সমস্যার আসল কারণ জানা যাবে। এরপর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিলেই আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
এই পরীক্ষাগুলো এখনই করানো সম্ভব না হলে সাময়িকভাবে সুস্থ থাকার জন্য আপাতত ট্যাবলেট ফ্রেনজিট ০জ্ঝ৫ মিলি একটি করে সকালে এবং ট্যাবলেট মোনাস ১০ মিলিগ্রাম একটা করে রাতে এক মাস সেবন করে দেখতে পারেন। এগুলোর সঙ্গে রেনিটিডিন-জাতীয় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ প্রতিদিন সকালে ও রাতে একটি করে সেবন করুন। উল্লিখিত পরীক্ষাগুলো করিয়ে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়াটাই আপনার জন্য ভালো হবে।
ত্বকের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২৪। উচ্চতা পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। ওজন ৫৩ কেজি। আমার বয়স যখন তিন বা চার বছর, তখন থেকে আমার সারা শরীর শীতকাল এলেই ফেটে যায়। শীত বাড়লে শরীরে ময়লা আবরণের মতো হয়। তখন থেকেই শীতে সারা শরীরে মাছের আঁশের মতো গোল ময়লা আবরণ বসে যায়।
এগুলো পরিষ্কার করার চেষ্টা করলেও ওঠে না। তেল না দিলে সারা শরীরই চুলকায়।
এখন অবশ্য সেই আবরণ নেই। তবে সারা শরীর ফেটে যায় এবং ময়লা বসে যায়। আমি অনেক আগে থেকেই গ্লিসারিন পানিতে মিশিয়ে শরীরে ব্যবহার করি। এতে চুলকানো কমে আর শরীর বেশি ফাটতে পারে না। শীত কমে এলে শরীর ফাটে না। আবরণটা উঠে যায় এবং ত্বক আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে। আমার ত্বকের ধরন শুষ্ক। শরীরে তেলতেলে ভাব কম।
মোজ্ঝ শাহ আলম
কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।
পরামর্শঃ আপনার ত্বকের রোগটি হচ্ছে ইকথায়োথিস। এ রোগের কিছু জেনেটিক কারণ রয়েছে। আপনি সব সময় পানিতে কিছু লবণ মিশিয়ে গোসল করবেন। মাঝেমধ্যে ইউরিয়াযুক্ত ক্রিম ইকিউরা সারা শরীরে ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক শুষ্ক হতে দেবেন না।
বিশেষ করে শীতকালে ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করবেন। সমস্যা বেশি হলে শীতকাল থাকতেই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করুন।
চোখের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২১ বছর। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি। ওজন ৫৯ কেজি। আমার দুই চোখ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এমনিতেই পানি পড়ে। যেমন-ঘুমানোর সময় কাত হয়ে ঘুমালে, বেশি বেশি হাসাহাসি করলে, উচ্চ স্বরে কথা বললে, ঘুম থেকে উঠলে, একদিকে তাকিয়ে থাকলে। পানি পড়ার কারণে আমার চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে, যা আমার কাছে খুব খারাপ লাগে। বন্ধুবান্ধব সবাই বলে, তোর চোখের নিচে এত কালো দাগ কেন? আমি এখনো কোনো চিকিৎসা নিইনি।
তোজাম্মেল হক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
পরামর্শঃ অনেক কারণে চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে। যেমন-চোখে কিছু পড়লে, চোখে কোনো প্রদাহজাতীয় রোগ হলে, চোখে পাওয়ারের সমস্যা থাকলে। তবে এসব রোগে পানি পড়ার সঙ্গে অন্য উপসর্গও থাকবে। যেমন-চোখ লাল হওয়া, চোখে ব্যথা, আলোর দিকে তাকাতে অসুবিধা ইত্যাদি। দীর্ঘদিন ধরে পানি পড়ার অন্যতম কারণ, নেত্রনালি বন্ধ হয়ে যাওয়া। কী কারণে আপনার চোখ দিয়ে পানি পড়ে সেটা সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য আপনাকে অবশ্যই চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। তবে চোখের নিচে কালো দাগের সঙ্গে পানি পড়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
নারীস্বাস্থ্য সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২১ বছর। ওজন ৫০ কেজি। নয় মাস আগে আমার বিয়ে হয়েছে। পাঁচ মাস আগে আমি গর্ভধারণ করি। এখনই সন্তান চাইনি, তাই একটি ট্যাবলেট খাই। এভাবে পর পর তিনবার খাই। ওষুধ খাওয়ার পর মাসিক হয়। তবে খুব কম। গত মাসে মাসিক বন্ধ ছিল। এ মাসেও তারিখ পার হয়েছে কিন্তু এখনো মাসিক হচ্ছে না। এমন হলে ভবিষ্যতে সন্তান নিতে কোনো সমস্যা হবে কি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঢাকা
পরামর্শঃ বারবার গর্ভপাত ঘটানো কোনোক্রমেই উচিত নয়। এতে ভবিষ্যতে সন্তান ধারণ করতে সমস্যা হতে পারে। আপনারা যদি এখনই সন্তান না চান, তাহলে ভালো কোনো নিরোধক ব্যবস্থা নিতে পারেন। আপনি জ্ননিয়ন্ত্রণ বড়ি খেতে পারেন অথবা আপনার স্বামী নিরোধক ব্যবহার করতে পারেন।
যে ট্যাবলেটটি আপনি খেয়েছেন তা ভ্রূণ নষ্ট করার কোনো বড়ি নয়। সম্ভবত আপনি গর্ভবতী ছিলেন না, তাই এ বড়ি খাওয়ার পর মাসিক হয়েছে। নিজের ইচ্ছামতো হরমোন ট্যাবলেট খাবেন না। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করে চিকিৎসা নিন।
নাকের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২৪। দু-তিন বছর ধরে আমি সারা দিন হাঁচি দিতে থাকি। আমার নাক দিয়ে অনবরত পরিষ্কার পানি পড়ে। রাতে ঘুমাতে গেলে নাকের ডান দিকে সমস্যা বেশি হয়, আর বাঁ দিক একটু ভালো থাকে। মাঝেমধ্যে শ্বাসকষ্ট হয়।
নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞকে দেখানো হয়েছে। তিনি আমার রক্ত পরীক্ষা ও এক্স-রে করে বলেছেন, আমার অ্যালার্জি ও সাইনাসের ইনফেকশন হয়েছে। এ জন্য সাইনাস ওয়াশ করাতে হবে। আমি গ্রামের রোগী। অ্যালার্জি ও নাকের অসুবিধার জন্য আমাকে কী করতে হবে?
হিমেল পরী
চাতলপাড়।
পরামর্শঃ আপনার নাকে অ্যালার্জি আছে। এ কারণে আপনার সাইনাসের ইনফেকশন হয়েছে। আরও দেখতে হবে, আপনার নাকের হাঁড় বাঁকা ও নাকে পলিপ বা অন্য সমস্যা আছে কি না। এ ছাড়া আপনি শ্বাসকষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন; তাই আপনার হাঁপানি বা অ্যাজমা আছে কি না তাও দেখা দরকার।
আপনার নাকের অ্যালার্জির জন্য দীর্ঘমেয়াদি এবং সাইনাস ইনফেকশনের জন্য স্বল্পমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন। সাইনাস ইনফেকশন সারানোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন ও এন্ট্রাল ওয়াশ অপারেশন লাগতে পারে। অ্যালার্জির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিট সেবন ও নাকে ডিকনজেসটেন্ট ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। তবে অ্যালার্জি ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে অ্যালারজেন, যেমন-ঠান্ডা, ধুলাবালি, নির্দিষ্ট খাবার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা।
দাঁতের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ১৭ বছর, ওজন ৪৫ কেজি, উচ্চতা পাঁচ ফুট। অবিবাহিতা। সমস্যা হচ্ছে, প্রতিদিন রাতে ঘুমের মধ্যে আমার মুখ দিয়ে প্রচুর পরিমাণে লালা ঝরে। লালার সঙ্গে দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়ে। এ সমস্যাটি এক বছর ধরে হচ্ছে। এ কারণে আমি এর আগে একবার কিছু ওষুধ খেয়েছিলাম; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আমি প্রতিদিন টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করি। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাব কীভাবে?
সানজিদা রহমান কাকলি
আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম
পরামর্শঃ সাধারণত দাঁতের গোড়ায় বা মাড়িতে পাথর হলে মুখ দিয়ে এ রকম রক্ত ঝরে। তাই প্রথমেই আপনার দাঁতের গোড়ার পাথরগুলো দন্ত্য বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে স্কেলিংয়ের মাধ্যমে পরিষ্কার করাতে হবে।
এতে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। তবে আপনার দাঁত ও মুখে অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না, তাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা দরকার। দাঁত ও মুখের অন্য কোনো সমস্যা না থাকলেও যদি সমস্যা না যায় তাহলে রক্তের কিছু পরীক্ষা করা প্রয়োজন হতে পারে। তবে আপাতত অভিজ্ঞ দন্ত্য চিকিৎসককে দেখান।
হাঁপানির সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ১০ বছর। জ্নের চার-পাঁচ বছর পর থেকে মাঝেমধ্যে আমার শ্বাস-প্রশ্বাসে প্রচণ্ড কষ্ট হয়ে আসছে। যখন শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা শুরু হয় তখন তা প্রায় সাত-আট দিন স্থায়ী হয়। দুই দিন বিরতির পর আবার এ সমস্যা শুরু হয় এবং প্রায় এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে আমার বুকের ভেতর গরগর শব্দ প্রায় সব সময়ই হয়। একজন চিকিৎসকের পরামর্শে বেশ কিছু ওষুধ সেবন করেছি। কিন্তু কাজ হয়নি।
মামুনুল বারী
কাপাসিয়া, গাজীপুর।
পরামর্শঃ আপনি সম্ভবত ব্রংকিয়াল অ্যাজমা রোগে ভুগছেন। দেরি না করে শিগগিরই চিকিৎসা শুরু করুন। আপনি একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। আপাতত টিকামেট বা বেক্সিট্রল-এফ বা সেরেটাইড ইভোহেলার-জাতীয় ওষুধ এবং সালবিউটামল ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন এবং থিওফাইলিন ও মন্টিলুকাস্ট-জাতীয় ওষুধ সেবন করতে পারেন। বাসায় কার্পেট থাকলে তা ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ঘরবাড়ি যতটুকু সম্ভব ধুলোবালি থেকে মুক্ত রাখতে হবে। ঘরে পোষা কুকুর-বিড়াল রাখা যাবে না। ঠান্ডা খাবার-পানীয় ইত্যাদি খাওয়া একদম বাদ দিতে হবে।
ডায়াবেটিস সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২১ বছর। উচ্চতা পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি। ওজন ৭৭ কেজি। গত বছর আমার ডায়াবেটিস (টাইপ-২) ধরা পড়ে। আমার মা-বাবা, চাচা-ফুফু, মামা-খালা সবারই ডায়াবেটিস আছে। দাদা-দাদি, নানা-নানির অবশ্য ডায়াবেটিস ছিল না বলেই শুনেছি। একজন চিকিৎসক আমাকে বলেছেন, আস্তে আস্তে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে। তিনি শরীরের ওজন কমানোর কথা বলেছেন। ডায়াবেটিস কি আসলে কখনো কমে? সারা জীবনই কি আমাকে এটি বয়ে বেড়াতে হবে? অল্প বয়সেই আমাকে এ ধরনের নিয়মের গণ্ডির মধ্যে থাকতে হচ্ছে। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গেও আর মেলামেশা করতে ইচ্ছে করে না। মনে হয়, আমি তো তাদের মতো স্বাধীন নই। শুনেছি ডায়াবেটিস মানুষকে তাড়াতাড়ি বৃদ্ধ করে ফেলে আর নানা শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে। আমার চোখে পাওয়ার আছে। চশমা পরি। স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য ডায়াবেটিস কি অন্তরায়? টেনশনে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছি না।
স্বপ্না
ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক।
পরামর্শঃ আপনার বংশে অনেকেরই ডায়াবেটিস আছে। তা ছাড়া আপনার ওজন বেশি হওয়ায় এবং কায়িক শ্রম কম করার কারণে অল্প বয়সেই ডায়াবেটিস হয়েছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল কথাই হলো, সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করা। জীবনে উন্নতির জন্য সুশৃঙ্খল জীবন যাপন যেমন অপরিহার্য, তেমনি ডায়াবেটিস বা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্যও শৃঙ্খলার কোনো বিকল্প নেই।
শর্করা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়। নিয়ম মেনে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে সম্পূর্ণ সুস্থ লোকের মতোই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন। তাই খাওয়া-দাওয়ায় নিয়ম মেনে চলুন এবং কায়িক পরিশ্রম করুন। ঘরে বসে নিজে নিজেই রক্তের শর্করা পরীক্ষা করতে পারেন। ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন এবং তাঁর পরামর্শমতো চলুন। হতাশ হবেন না।
চুলের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২৫ বছর। চার-পাঁচ বছর ধরে আমার মাথার চুল কিছু কিছু করে পড়ে যাচ্ছে। ইদানীং চুল পড়ার পরিমাণ অনেক বেড়েছে। প্রায় টাক হওয়ার মতো অবস্থা। সংসার, চাকরি ইত্যাদি নিয়ে আমি বেশ দুশ্চিন্তা করি। আমার মাথায় খুশকি নেই। কিন্তু মাথা ঘামে, অনেক সময় চুলকায়। আমি নিয়মিত ভালো মানের শ্যাম্পু ব্যবহার করি। গোসল করলেও অনেক চুল পড়ে। তারপর দুই-তিন দিন বন্ধ থাকে, পরে আবারও চুল পড়া শুরু হয়। আমি অনেকবার শ্যাম্পু বদল করেছি। কোনো লাভ হয়নি। মাথায় তেল ব্যবহার করি না বললেই চলে। ইদানীং চিরুনি ব্যবহারেও চুল পড়ছে। আমি এখনো চিকিৎসকের কাছে যাইনি। আশা করি আমাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
ঢাকা।
পরামর্শঃ চুল পড়ার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ডায়েটিং, ঘুম কম হওয়া, অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার প্রভৃতি। আবার বংশগত কারণেও চুল পড়তে পারে। একে বলা হয় এন্ড্রোজেনেটিক এলোপেশিয়া। আপনার ক্ষেত্রে কোনটি হয়েছে প্রথমেই তা নির্ণয় করতে হবে। ডায়েটিং করতে থাকলে তা আপাতত বন্ধ রাখুন। নিয়মিত ঘুমানোর চেষ্টা করুন। হালকা ব্যায়াম করুন। দুশ্চিন্তা করবেন না।
সপ্তাহে দুইবারের বেশি শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। প্রোটিনযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। কিছুদিন পর অবস্থার উন্নতি না হলে ত্বক-বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করুন। দিনে ৮০ থেকে ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। এগুলো পড়ে গিয়ে আবার গজায়। হেয়ার জেল, ক্রিম প্রভৃতি চুলে বেশি লাগালে, হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করে চুল শুকালে বা হিট দিলে, রং ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্য নষ্ট হয় এবং চুল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পড়তে পারে। তাই এ বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা ভালো।
শিশুস্বাস্থ্য সমস্যা
সমস্যাঃ আমার মেয়ের বয়স সাড়ে চার বছর। ৮-১০ দিন হলো ওর বেশ ঠান্ডা লেগেছে। সর্দি-কাশি হয়েছে বেশ। শরীরে জ্বর নেই। খাওয়া-দাওয়া করছে মোটামুটি ঠিকমতোই। যদিও খাওয়ানোর সময় মাঝেমধ্যে কাশি আসলে সামান্য বমি করে মুখের খাবার ফেলে দিতে চায়। কিছুক্ষণ খাওয়ানো বন্ধ রাখলে আবার ঠিক হয়ে যায়। গত বছরও শীতের সময় ওর ঠান্ডা লেগেছিল। সেবার এক সপ্তাহের মধ্যেই সে পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। তবে এবার একটু বেশি সময় ধরেই সর্দি-কার্শি লেগে আছে। শিশুবিশেষজ্ঞের দেওয়া অ্যান্টিবায়োটিকে তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। এ নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি আমরা। উল্লেখ্য, এ বছর শীতে এই প্রথম ঠান্ডা লাগল।
ফজলুল আবেদীন, কুড়িল, ঢাকা।
পরামর্শঃ আপনার মেয়ের সম্ভবত সাধারণ ঠান্ডাই লেগেছে। এ ধরনের সর্দি-কাশি এ সময় শিশুদের হতে পারে। এটা বড় কোনো সমস্যা নয়। তাই ভয়ের কিছু নেই। তবে শীতের সময় শিশুদের আলাদা যত্ন-আত্তি নেওয়া দরকার। আপনার শিশুর শরীরে জ্বর মেপে দেখুন। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। শিশুর অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য শিশুবিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। আপাতত নরসল বা এন্টাজল নাকের ড্রপ দু-এক ফোঁটা দিতে পারেন। বাচ্চাকে অবশ্যই সহনীয় মাত্রায় গরমপানিতে গোসল করাবেন। সব সময় গরম কাপড় পরিয়ে রাখুন। প্রয়োজনে মাথায় টুপিও ব্যবহার করতে পারেন। কোনোভাবেই যেন ঠান্ডা যাতে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখুন। ঠান্ডা কোন খাবার খেতে দেবেন না। কাশির সঙ্গে ওর শ্বাসকষ্ট আছে কি না তা উল্লেখ করেননি। শ্বাসকষ্ট থাকলে ব্রডিল বা ভেনটলিন সিরাপ এক চামচ করে দিনে তিনবার খাওয়াতে পারেন। শ্বাসকষ্ট না থাকলে সিরাপ খাওয়ানোর দরকার নেই। প্রয়োজনে বুকের এক্সরে করতে হতে পারে। এখন যে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াচ্ছেন, এতে কাজ না হলে শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী তা বদলে নিতে পারেন।
নারীস্বাস্থ্য সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২০ বছর। উচ্চতা পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি। ওজন ৪৫ কেজি। প্রথম থেকেই আমার মাসিকের অনিয়ম চলে আসছে। প্রথম দু-তিন বছর অনিয়মিত মাসিক হতো। দু-তিন মাস বা চার মাস পর পর হতো। দু-আড়াই বছর ধরে সমস্যাটা বেশি দেখা দিয়েছে। এমনও হয়েছে যে ছয় মাসেও একবার মাসিক হয়নি। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়ে কিছু ওষুধ খেয়েছি। আলট্রাসনোগ্রামও করিয়েছি। রিপোর্ট স্বাভাবিক। ওষুধ খেলে শরীর খারাপ হয়, না-খেলে বন্ধ হয়ে যায় মাসিক। অন্য একজন চিকিৎসক বলেছেন, বিয়ে হলে নাকি ঠিক হয়ে যাবে। আমি শিগগিরই বিয়ে করব না। আমার অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা নেই। খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি নেই। তাহলে মাসিক নিয়মিত হচ্ছে না কেন? অনেক দিন ধরে আমার ওজন বাড়ছে না। এসব নিয়ে খুবই চিন্তিত আছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
রামচন্দ্রপুর, কুমিল্লা।
পরামর্শঃ এ বয়সে মাসিক এত অনিয়মিত থাকাটা স্বাভাবিক নয়। আপনার সমস্যা নির্ণয়ের জন্য শুধু আলট্রাসনোগ্রাম নয়, সঙ্গে অন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যেমন-হরমোন পরীক্ষা, এফআর, রক্তে চিনির মাত্রা ইত্যাদিও পরীক্ষা করাতে হবে। পরীক্ষাগুলো করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করুন। রিপোর্ট দেখে চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী আপনার শরীরের ওজন কম। ওজন স্বাভাবিক করার চেষ্টা করুন। এ জন্য পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে খাওয়া দরকার। দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
পিঠ ও ঘাড়ের সমস্যা
পরামর্শ দিয়েছেন
ডাজ্ঝ এ কে এম সালেক
ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২১ বছর। সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্র। প্রায়ই আমার পিঠের ডান দিকে ব্যথা এবং পরে বাঁ দিকেও ব্যথা হয়। কয়েক মাস ধরে পিঠে কোনো ব্যথা নেই কিন্তু ঘাড়ে ব্যথা হচ্ছে। ওপরে বা ডানে-বাঁয়ে তাকানোর সময়ও ব্যথা হয়। প্রথম দিকে কম হলেও বর্তমানে বেশ ব্যথা হচ্ছে। শীতকালে মাঝেমধ্যে আমার নাকবন্ধ ভাব হয়। এ সমস্যার জন্য আমি একজন মেডিসিন ও স্মায়ুরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখালে তিনি আমাকে কিছু ব্যায়াম শিখিয়ে দেন। ব্যথার জন্য বেশ কিছু ওষুধও সেবনের পরামর্শ দেন। নাকের স্প্রে ও ড্রপ দেন। এগুলো ব্যবহারে সাময়িকভাবে ব্যথা কমলেও এখন সমস্যা আরও বেড়ে গেছে।
মাসরুর করিম
ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শঃ এ বয়সে যেসব কারণে ঘাড় ব্যথা হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে হাঁটা-চলা, শোয়া-বসায় অনিয়ম, শরীরে কোনো আঘাত পাওয়া ইত্যাদি। আপাতত ঘাড়ে হালকা গরমপানির সেঁক দিয়ে দেখুন। পড়াশোনা করার সময় চেয়ার-টেবিলে বসুন। শুয়ে পড়বেন না। বিশ্রাম নেওয়া বা ঘুমের সময় পাতলা বালিশ ব্যবহার করুন।
অল্প বয়সে ঘাড়ের ব্যথা সাধারণত ক্ষয়জনিত রোগ স্পনডাইলোসিসের কারণে হয় না; বরং একটানা বেশি সময় ধরে সামনে ঝুঁকে কাজ করা, কম্পিউটার ব্যবহার করা, বই পড়া, শুয়ে টিভি দেখা, খুব বেশি গরম বা ঠান্ডা খাওয়া, শীতাতপ-নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের বাতাসে ঘাম শুকানো বা অন্যান্য কারণে ঠান্ডা লাগলে ঘাড়ের পেশিগুলো শক্ত হয়ে যেতে পারে।
ফলে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বাঁক নষ্ট হয়ে স্মায়ুর ওপর চাপ পড়তে পারে। উঠতি বয়সে সব সময় টেবিল-চেয়ারে বসে পড়াশোনা করা দরকার। টিভি দেখলেও বসে দেখুন। একটানা বেশি সময় ধরে কম্পিউটার ব্যবহার করবেন না। সাঁতার ও অন্যান্য ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন। ঘন ঘন সর্দি-কাশি বা ঠান্ডা লাগলে এর চিকিৎসা নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনে অবশ্যই ফিজিক্যাল বা নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করুন।
চোখের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২৪ বছর। আমি দূরের জিনিস বা ছোট লেখা দেখতে পাই না। যে কারণে স্মাতক শ্রেণীতে ভর্তি হয়েও পড়ালেখা ছাড়তে বাধ্য হই। এ কারণে আমাকে প্রতিনিয়তই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সঠিকভাবে কোনো কাজই করতে পারি না। বিশেষ করে অতিরিক্ত আলো বা ঝলমলে আলোতে দেখতে পাই না। ফটো সানগ্লাস ব্যবহার করছি। চশমার পাওয়ার হচ্ছে দুই চোখে যথাক্রমে মাইনাস ২জ্ঝ৫০ ও ১জ্ঝ৫০। চশমা ব্যবহার করেও তেমন সুফল পাচ্ছি না। আমার পরিবারে কারও এ রকম সমস্যা নেই। আমার প্রশ্ন হলো-চোখের এ রোগ কি কোনো দিন ভালো হবে না? এটা নিয়ে কোনো গবেষণা হচ্ছে না। আমি তো চোখ থাকতেও অন্ধের মতোই। এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।
কবির আহমদ
খাসদবীর, সিলেট।
পরামর্শঃ আপনার চশমার পাওয়ার যদি সঠিক হয় তবে দূরের জিনিস অবশ্যই দেখতে পাবেন। এ জন্য লেখাপড়া ছাড়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আপনার চেয়েও অনেক বেশি পাওয়ারের চশমা পরে অনেকে পড়াশোনা ভালোভাবেই করতে পারছে।
আপনি আসলে মানসিকভাবে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন। দৃষ্টিশক্তিজনিত কারণ ছাড়া যদি চোখের অন্য কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে সঠিক পাওয়ারের চশমা পরার পরও সমস্যা হতে পারে।
এ জন্য অবশ্যই আপনাকে চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। অন্তত উল্লিখিত সমস্যার জন্য আপনি অন্ধ হবেন না, এ আশ্বাস আপনাকে দেওয়া যেতে পারে। চিন্তামুক্ত থাকুন, চক্ষুবিশেষজ্ঞ দেখিয়ে সঠিক চিকিৎসা নিন।
কিডনির সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ১৭ বছর। এক বছর আগে আমার ডান দিকে বুকের হাড়ের নিচে ও পিঠের প্রায় সর্বত্র ব্যথা করে; সেই সঙ্গে ডান স্তনের নিপ্ল বরাবর চিনচিন করে। ব্যথা উঠলে দম বন্ধ হয়ে আসে। তিন-চার মাস পর রাজশাহীতে মেডিসিন ও কিডনি বিশেষজ্ঞকে দেখাই। সেখানে আলট্রাসনোগ্রাম করে ডান পাশের কিডনিতে চার মিলিমিটার আকারের পাথর ধরা পড়ে। তিনি শুধু ব্যথার ওষুধ ও ভিটামিন দিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস পর ব্যথা আবারও বেড়ে যায়। পুনরায় সেখানে আলট্রাসনোগ্রাম করে আরেকটি পাথর ধরা পড়ে-চার মিলিমিটার; এবং আগেরটা বেড়ে ছয় মিলিমিটার হয়ে যায়। আমার ওজন ৪০ কেজি। ওজন সামান্য কমেছে। রুচি নেই। মাঝেমধ্যে মুখে ঘা হয়, ঘুম কম হয়। মাসিক নিয়মিতই হয়। মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত সাদা স্রাব হয়। রক্ত, প্রস্রাব পরীক্ষা করিয়েছি-সব স্বাভাবিক। চিকিৎসক ভিটামিন ছাড়াও ঘুমের, রুচির ওষুধ দিয়েছেন। পাশাপাশি টোরাক্স ট্যাবলেট দিয়েছেন দুই মাসের জন্য। কিন্তু এসব খেয়ে কোনো ফল পাচ্ছি না। ব্যথার ওষুধ খেলেও ব্যথা যায় না। ইদানীং বাঁ পাশেও ব্যথা করছে। এ অবস্থায় অপারেশন করাতে হবে কি না এবং কী করলে সুস্থ হয়ে উঠব?
শারমিন আক্তার শিমু, আরামবাগ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
পরামর্শঃ আপনি যে সমস্যাগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন, কিডনিতে পাথর হলে সাধারণত এ ধরনের সমস্যা হয় না। শারীরিক দুর্বলতা থাকতে পারে কিছুটা। তবে নারীস্বাস্থ্য ও অন্যান্য সমস্যা, যেগুলো উল্লেখ করেছেন, তা হওয়ার জন্য কিডনির পাথর দায়ী নয়। আমাদের মধ্যে যদিও এ নিয়ে বেশ ভুূল ধারণা রয়েছে। চার মিলিমিটার পাথর সাধারণত প্রস্রাবের সঙ্গেই বেরিয়ে যায়। পাথরের আকার বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন। আইভিও (ওঠঙ) পরীক্ষাটি করালে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগে এই পরীক্ষা করা হয়। আপনি সেখানে দেখা করুন। কিডনিতে পাথর হওয়া সাময়িক সমস্যা। এ নিয়ে বেশি টেনশন করবেন না।
ত্বকের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ১৮ বছর। উচ্চতা পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি। আমার ওজন প্রায় ৬৭ কেজি। আমার দুটো সমস্যা আছে। প্রথম সমস্যা হলো-আমার বগলের ভাঁজে, কোমরে সাদা সাদা ফাটা দাগ আছে। এগুলো গাছের শেকড়ের মতো ছড়িয়ে আছে। দেখতে খুবই খারাপ লাগে। আরেকটি সমস্যা হলো-আমার গলা, ঘাড় ও দুই বগলের ভাঁজ শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি কালো। এ সমস্যাগুলোর জন্য আমাকে সব সময় গরমের মধ্যেও ঘরে শার্ট পরে থাকতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শঃ আপনার বগলের ভাঁজে ও কোমরে যে ফাটা দাগ সৃষ্টি হয়েছে, এটাকে ইসটেরিয়া ডিসটেনসিয়া বলা হয়। সাধারণত বাচ্চা হওয়ার পর মেয়েদের পেটে এটি হতে পারে। আর ছেলেমেয়েদের বাড়ন্ত বয়সে হতে দেখা যায়। এ ছাড়া হরমোনজনিত কারণেও হতে পারে। আক্রান্ত স্থানে ত্বকের কোলাজেন কমে যাওয়ায় এটি সৃষ্টি হয়। ভাসকুলার লেসার লাগানোর জন্য টেরিটিনয়েন ক্রিম ব্যবহার করলে কিছুটা কাজ হয়। আপনার শরীরের বিশেষ কিছু স্থান সাধারণ রঙের তুলনায় বেশি কালো, যাকে একানথসিস নাইগ্রা বলা হয়। এটা বংশগতভাবেও হতে পারে, মোটা হওয়ার কারণেও, ডায়াবেটিস রোগীদের অথবা কোনো কারণ ছাড়াও এটা হতে পারে। উল্লিখিত যেকোনো কারণ যদি থাকে তার চিকিৎসা নিন।
হরমোনের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২১ বছর ১০ মাস। ওজন ৭৩ কেজি, উচ্চতা ১৬৩ সেন্টিমিটার। অবিবাহিত। সমস্যা হচ্ছে, মাসিক একেবারেই অনিয়মিত। ১৯৯৮ সালে প্রথম হয়েছিল। আর এত বছর পর্যন্ত মাত্র সাত-আটবার হয়েছে। কখনো সাত মাস, কখনো দুই বছর, আবার কখনো চার বছর পর একবার করে হতো। কিন্তু তিন-চার দিনের বেশি থাকত না। ছয় মাস আগে শেষবার হয়েছে। মাথার চুল উঠে খুব পাতলা হয়ে যাচ্ছে। ওজনও বেড়ে যাচ্ছে। পুরো মুখে রোম গজাচ্ছে, যা দিন দিন বড় ও ঘন হচ্ছে।
এগুলো দেখতে খুব বাজে দেখায়। অনেক হরমোন বিশেষজ্ঞ দেখিয়েও কোনো আশাপ্রদ ফল পাইনি। হরমোন পরীক্ষা করিয়েছি দু-তিনবার। প্রতিবার প্রায় একই ধরনের রিপোর্ট। সব বিশেষজ্ঞই বলেছেন, ‘সবই প্রায় নরমাল। এতে সমস্যাও নেই।’ তার পরও সমস্য থেকে যাচ্ছে।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন বিদেশে পরীক্ষা করাতে। কিন্তু সময় হয়ে ওঠেনি।
আর আমি আমার মুখের রোমের জন্য লেজার চিকিৎসা করাতে চেয়েছি। এটা করা কি ঠিক হবে? এটার মাধ্যমে কি আর কখনো রোম গজাবে না? ত্বকের কোনো সমস্যা হবে না তো? আমি খুব মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে আছি।
বৃষ্টি
চট্টগ্রাম।
পরামর্শঃ আপনার সম্ভবত পলিসিসটিক ওভারি হয়েছে। এটি মেয়েদের হরমোনজনিত একটি রোগ। আপনি যে পরীক্ষাগুলো করিয়েছেন তা আপনার রোগ পুরোপুরি নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। মাসিকের পঞ্চম দিনে এফএসএইচ, এলএইচ, লোয়ার অ্যাবডোমেনের আলট্রাসনোগ্রাম প্রভৃতি পরীক্ষা করিয়ে নিন। এর রিপোর্ট দেখে নিশ্চিত হতে হবে আপনার ওভারিতে কোনো সিস্ট রয়েছে কি না। তারপর চিকিৎসার পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী আপনার শরীরের ওজন বেশি। শরীরের ওজনের সঙ্গে মেয়েদের এ রোগটি সরাসরি সম্পর্কিত। তাই ওজন কমান। শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখুন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে খাওয়া-দাওয়ার চার্ট বানিয়ে নিন। প্রতিদিন অন্তত আধঘণ্টা এমনভাবে হাঁটুন, যেন শরীর থেকে ঘাম ঝরে। আর লেজার চিকিৎসার ব্যাপারে আপনার হরমোন পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২৩ বছর। উচ্চতা পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি, ওজন ৬১ কেজি। আমি বেশ কয়েক বছর ধরে ঠান্ডার সমস্যায় ভুগছি। একটু ঠান্ডা লাগলেই নাক দিয়ে পানি পড়ে, হাঁচি হয়। যখন খুব বেশি ঠান্ডা লাগে তখন শ্বাসকষ্ট, কাশি ও বুকের ভেতর চাপ অনুভব করি। অনেক সময় কাশি ও শ্বাসকষ্টের জন্য রাতে ঘুমাতেও কষ্ট হয়। বছরের এ সময় কষ্টের তীব্রতা বেড়ে যায়। আমার খাবারে কিছুটা অ্যালার্জি আছে। যেমন-চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ খেলে আমার হাঁচি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় এবং ত্বকে লাল র্যাশ হয়। সমস্যাগুলোর জন্য আমি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়েছি। কিন্তু ঠান্ডা লাগা কমছে না। কীভাবে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠব? অ্যালার্জি ও ঠান্ডার সমস্যা কি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব?
নিয়াজ আহমেদ
ধামরাই, ঢাকা।
পরামর্শঃ আপনি সম্ভবত অ্যালার্জিজনিত রোগ অ্যালার্জিক রাইনাইটিস ও ব্রংকিয়াল অ্যাজমা রোগে ভুগছেন। তবে এ রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনাকে কিছু পরীক্ষা করাতে হবে। যেমন-কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, টোটাল ইয়োসনোফিল কাউন্ট, স্পিউটাম ইয়োসনোফিল কাউন্ট, স্কিন টেস্ট ফর অ্যালার্জি, সেরাম আইজিই, লাং ফাংশন টেস্ট বা স্পাইরোমেট্রি এবং বুকের এক্স-রে। তবে পরীক্ষাগুলো অবশ্যই একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করাবেন। অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের জন্য প্রথমে আপনাকে যে কাজটি করতে হবে, তা হলো যে যে কারণে আপনার এই সমস্যাটা বাড়ে, তা চিহ্নিত করা এবং যতটুকু সম্ভব তা এড়িয়ে চলা। নিয়মিত লং অ্যাকটিং অ্যান্টিহিস্টামিন, যেমন-লরাটাডিন, ডিসলরাটাডিন ট্যাবলেট, মাস্টসেল স্টেবিলাইজার, কিটোটিফেন ট্যাবলেট, স্টেরয়েড নাকের স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যাজমার জন্য রোগ প্রতিরোধকারী স্টেরয়েড ইনহেলার, যেমন-বেকলো মিথাসন, ফ্লটিকাসন, লং অ্যাকটিং থিয়ো ফাইলিন, মনটিলুকাস্ট ট্যাবলেট ও উপশমকারী ইনহেলার সালবিউটামল ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধের প্রকার, সঠিক মাত্রা এবং কত দিন নিতে হবে জেনে নেবেন। যদি আপনার রোগটি অ্যালার্জিক রাইনাইটিস ও অ্যাজমা হয়, সে ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরাময়ও সম্ভব।
দাঁতের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২৩ বছর। উচ্চতা পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। ওজন ৫৬ কেজি। স্বাস্থ্য ভালো। সম্প্রতি আমার দাঁতের মাঢ়িগুলো একটু ফুলে গেছে। শক্ত খাবার খেতে ভয় হয়। মনে হয় এই বুঝি দাঁত ভেঙে যাবে। এ ছাড়া কয়েকটি মাঢ়ির দাঁতে ডেন্টাল ক্যারিজ রয়েছে। দুই বেলা নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করার পরও মুখে দুর্গন্ধ হচ্ছে, যা ভীষণ বিব্রতকর। এ ছাড়া দাঁতের হলদেটে ভাবও রয়েছে। কিছুদিন আগে দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শে স্কেলিং করিয়েছিলাম। তিনি কিছু ওষুধ দেন এবং একটি মাউথ ওয়াশ দিয়ে কুলি করতে পরামর্শ দেন। এসব পরামর্শ মেনে চলেছি কিছুদিন। তবে এখনো মাঢ়ি দিয়ে রক্ত ঝরে অল্প অল্প। সহজেই দাঁতে ময়লা জমে যায়। তাই কদিন পরপর শক্ত কিছু দিয়ে দাঁতের ময়লাগুলো নিজেই পরিষ্কার করি।
রাজিয়া সুলতানা, ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শঃ অনেক কারণেই দাঁতের মাঢ়িতে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। এতে ভয়ের কিছু নেই। সাধারণভাবে দাঁতে খাদ্যকণা লেগে থাকলে পরিষ্কার সুতা বা ডেন্টাল ফ্লস দিয়ে পরিষ্কার করা যায়। তবে দাঁতের গোড়ায় পাথর জমলে সেটি স্কেলিংয়ের মাধ্যমেই পরিষ্কার করতে হয়। এটি করলে মাঢ়ি শক্ত হবে, রক্ত পড়াও বন্ধ হবে।
আপনার দাঁতের মাঢ়ির পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য সম্ভবত শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হবে। শক্ত কিছু দিয়ে কখনোই দাঁতের ময়লা পরিষ্কার করবেন না। প্রয়োজনে নরম সুতা ব্যবহার করতে পারেন। ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করেও দেখতে পারেন। দাঁত মাজার জন্য ভালো নরম ব্রাশ ও টুথপেস্ট ব্যবহার করুন। ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার, ফলমূল বেশি করে খান। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করুন।
গলার সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ৩২ বছর। উচ্চতা পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি। ওজন ৭০ কেজি। পেশায় শিক্ষক। গত নভেম্বর থেকে ঠান্ডা লেগে আমার গলার স্বর অস্বাভাবিকভাবে বসে গেছে। কথা বিকৃত হয়ে বের হয় এবং বলতে বেশ কষ্ট হয়। তবে কথা না বললে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। নাক, কান ও গলারোগ বিশেষজ্ঞসহ একাধিক চিকিৎসককে দেখিয়েছি এবং তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিয়েছি। তাঁদের পরামর্শে বুকের এক্স-রে, সাইনাসের এক্স-রে, এফওএল এবং পরমাণু চিকিৎসা ও আলট্রাসাউন্ড কেন্দ্র থেকে সেরাম টি থ্রি, টি ফোর, টিএসএইচ, এফটি থ্রি, এফটি ফোর এবং ইমিউনো রেডিও মেট্রিক অ্যাসে অব সেরাম টিএসএইচ করিয়েছি। কিন্তু কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। এসব নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। আমার পেশাগত জীবনেও এর প্রভাব পড়ছে অনেকখানি।
মুহিবুল আলম, ময়মনসিংহ
পরামর্শঃ ঠান্ডা লেগে অনেক সময় গলার স্বর বসে যেতে পারে। এ জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। প্রথমেই এক সপ্তাহ স্বরযন্ত্রের বিশ্রাম দিন। ঠান্ডা লাগার চিকিৎসা করার পরও যদি গলার স্বর স্বাভাবিক না হয়, তাহলে কিছু পরামর্শ আপনাকে মেনে চলতে হবে। শিক্ষক হওয়ায় পেশাগতভাবেই আপনি একজন স্বরযন্ত্র ব্যবহারকারী। স্বরযন্ত্রের ত্রুটিপূর্ণ ব্যবহারের কারণে অনেক সময় স্বর বসে যেতে পারে। উল্লেখ্য, অনেকের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্রমাগত কথা বলা বা লেকচার দেওয়ার পরও স্বরের কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে অল্প কথা বললেও স্বরের পরিবর্তন হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষের স্বরযন্ত্রের সংবেদনশীলতাই দায়ী। পেশাগত স্বর ব্যবহারকারী সবারই যে নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত তা হলো-পেশাগত কাজের বাইরে বাকি সময়টুকু স্বরযন্ত্রের যতটুকু সম্ভব বিশ্রাম দিন। স্বাভাবিক মাত্রায় এবং সাধারণ ঢঙে কথা বলা, যেমনটা আমরা বাসায় পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন সবার সঙ্গে বলে থাকি। ক্লাস নেওয়ার সময় কৃত্রিম বাচনভঙ্গি এবং স্বরে অনাবশ্যক গুরুত্ব না দেওয়াই ভালো।
ব্ল্যাকবোর্ডে চক দিয়ে লেখা ও ডাস্টার ব্যবহারে অ্যালার্জিজনিত কারণে গলার স্বরে পরিবর্তন হতে পারে। এ ব্যাপারে সচেতন হোন। স্বর দুর্বল থাকলে ক্রমাগত লেকচার না দিয়ে শিক্ষকতার ধরনে পরিবর্তন আনা যেতে পারে। যেমন-প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে পড়ানো অথবা ছাত্রদের কিছু লেখার কাজ দেওয়া। পাশাপাশি বেশি বেশি উত্তর চাইতে পারেন, যাতে আপনার স্বরতন্ত্রের কিছুটা বিশ্রাম হয়। পড়ানোর সময় গলা শুকিয়ে গেলে পানি খেতে পারেন। এসিডিটি, গ্যাসট্রিক আলসার, সাইনাসের রোগ, অ্যালার্জি ইত্যাদি স্বরযন্ত্রকে আরও বসিয়ে দিতে পারে। তাই এগুলো হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিন। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। এতে গলার পেশি সচল হবে।
স্পিচ থেরাপি নিতে পারেন। অভিজ্ঞ নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকুন। ছয় মাস পরপর ইনডাইরেক্ট লেরিংগোস্কপি, এফওএলের মাধ্যমে আপনার স্বরযন্ত্র পরীক্ষা করুন।
সমস্যাঃ আমার বয়স বর্তমানে ৩৫ বছর। ১৮-১৯ বছর বয়সে হার্টের প্রচুর ব্যথা অনুভব করি, তখন একজন হার্টের সার্জনের কাছে যাই। পরীড়্গা-নিরীড়্গা করে দেখা গেল আমার একটি ভাল্ব নষ্ট হয়েছে এবং খুব দ্রম্নত অপারেশন করানোর প্রয়োজন। কিন্তু অর্থকষ্টের জন্য অপারেশন করানো সম্ভব হয়নি। মাঝে মধ্যে ব্যথা হলেই ওষুধ খেয়ে কমিয়ে রাখতাম। এখন প্রচণ্ডভাবে ব্যথা হয় এবং খুব কষ্ট পাচ্ছি। এমতাবস্থায় আমার অন্য ভাল্বটি কি নষ্ট হতে পারে? অপারেশন করাতে অর্থ কেমন ব্যয় হতে পারে? আমাদের দেশে এ চিকিৎসায় কতটুকু সাফল্য বয়ে আনে। তা ছাড়া সুস্থ হতে ক’দিন সময় লাগে, ভাল্ব নষ্ট হওয়ার জন্য কারণ কী হতে পারে?
সবুজ হোসেন রিপন
মৌসুমী সিনেমা হল, পাকুন্দীয়া, কিশোরগঞ্জ।
সমাধানঃ হ্যাঁ, আরেকটি ভাল্ব নষ্ট হতে পারে তবে পরীড়্গা-নিরীড়্গার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে যে ক’টি ভাল্ব নষ্ট আছে। ভাল্বের অপারেশন করাতে আমাদের দেশে সরকারিভাবে সাধারণত খরচ হয়ে থাকে সর্বসাকুল্যে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা একটি ভাল্বের বেলায়। আর দুইটি ভাল্বের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বেসরকারিভাবে ২৫-৩০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়ে থাকে। ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে সুস্থ হওয়া যায়। স্বাভাবিক চলাফেরা ও কাজকর্ম করা যায়। কিছু দিন বিশ্রামে থাকার প্রয়োজন এবং খাবার-দাবার স্বাভাবিক গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করবেন। বাতজ্বরজনিত কারণে সাধারণত এই ভাল্ব নষ্ট হয়ে থাকে। অপারেশন না করানো পর্যন্তô ব্যথা হলে নিজে নিজে কোনো প্রকার ওষুধ ব্যবহার করবেন না। নিয়মিত হার্ট সার্জনের সাথে পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যথাসম্ভব অপারেশন করানোটাই হচ্ছে আপনার জন্য একান্তô উত্তম বলে মনে করি।
কিডনির সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২৩। বছরখানেক কিডনির সমস্যায় ভুগছি। অবহেলার কারণে তীব্র পেটব্যথার তিন মাসের মাথায় চিকিৎসক বলেন, ইউরিন ইনফেকশন। প্রথমে একটি ওষুধ দেন। এরপর ঘন ঘন ব্যথার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় আরেকটি ওষুধ খেতে পরামর্শ দেন। ব্যথা উঠলে বাঁ পাশে পেটে ক্রমাগত সুচের মতো বিঁধে। আমি প্রচুর পানি খাই। প্রস্রাবের বেগ কখনোই ২০ মিনিটের বেশি সহ্য করা সম্ভব হয় না। বেশিক্ষণ হয়ে গেলে আমার পায়ের শিরায় তীব্র টান পড়ে, মাংসপেশি শক্ত হয়ে আসে। এখন আমি চিরতার জল খাই। রোগ নির্ণয়ে দেরি হওয়ার কারণে আমার কিডনির কি স্থায়ী কোনো ক্ষতি হয়ে গেছে? পরে কি বড় কোনো সমস্যা হতে পারে?
প্রাণেশা
ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক।
পরামর্শঃ সম্ভবত প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি পান করার কারণেই আপনার সমস্যাটি হচ্ছে। তাই পানি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পান করবেন না। আমাদের শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি পান করলে মূত্রাশয়ে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কখনোই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি পান করবেন না। সাধারণভাবে দিনে দেড়-দুই লিটার পানি পান করাই যথেষ্ট। আপনি আরও কিছুদিন অপেক্ষা করুন এবং নিজেকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন।
হয়তো সমস্যাগুলো আস্তে আস্তে চলে যাবে। শরীরে যদি রোগই না থাকে তাহলে রোগ নির্ণয়ের প্রশ্নও থাকছে না। তাই চিন্তার কিছু নেই। প্রয়োজন মনে করলে পরে কিডনি অথবা মূত্ররোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
সমস্যাঃ আমার বয়স ১৭ বছর। ওজন ৪৮ কেজি। এক বছর আগে থেকে আমার কোমরের বাঁ পাশে প্রচণ্ড ব্যথা। আমি একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ দেখাই। তাঁর পরামর্শে আলট্রাসনোগ্রাম করাই। পরীক্ষা করে দেখা গেল, আমার কিডনিতে সিস্ট হয়েছে। চিকিৎসক আমাকে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু ওষুধগুলো খাওয়ার পরও কোনো উপকার পাইনি। আমার প্রশ্ন, এই রোগের জন্য অপারেশন করার প্রয়োজন আছে কি? অপারেশন ছাড়া ওষুধের মাধ্যমে ভালো হওয়া কি সম্ভব?
মুক্তা আক্তার
মধুপুর, ফেনী।
পরামর্শঃ শুধু ওষুধ সেবনের মাধ্যমে কিডনির সিস্টের চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন হলে শল্যচিকিৎসা নিতে হবে। তবে শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো রকম চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। যদি অ্যাডাল্ট পলিসিস্টিক ডিজিজেস অব দ্য কিডনি (যা দুটি কিডনিতেই একসঙ্গে হয়) হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে। এটি হলে অভিজ্ঞ নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে সাধারণ পর্যবেক্ষণে থাকাই যথেষ্ট।
রক্তরোগ সম্পর্কিত জিজ্ঞাসা
সমস্যাঃ আমার রক্তে এইচবিএসএজি পজিটিভ ধরা পড়ে গত বছর। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এইচবিএসএজি, এইচবিইএজি, অ্যান্টি-এইচবিসিআইজিএম, এস বিলিরুবিন, এসজিপিটি, প্রস্রাব, আলট্রাসনোগ্রাম ইত্যাদি পরীক্ষা করি। যার ফলাফল হচ্ছে এইচবিএসএজি পজিটিভ (মান ২জ্ঝ২৪৩), এইচবিইএজি পজিটিভ (মান ৩জ্ঝ০৬৫), অ্যান্টি এইচবিসিআইজিএম পজিটিভ (মান ১২জ্ঝ০ ইউ/মিলি), এস বিলিরুবিন (১জ্ঝ৭ মিলিগ্রাম ডেলি), এমজিপিটি (৫৮৫জ্ঝ০৭ ইউ/এল)। পরে এস বিলিরুবিন ও এসজিপিটি পরীক্ষা করি, যার ফলাফল বিলিরুবিন (১জ্ঝ৬) মিলিগ্রাম, ১০০ মিলি ও এসজিপিটি (১২৭ ইউনিট/টি)। পরে এইচবিভি ডিএনএ টেস্ট করি, যার ফলাফল হাই পজিটিভ। এর দুই মাস পর এস বিলিরুবিন ও এসজিপিটি পরীক্ষা করাই, যার ফলাফল যথাক্রমে (০জ্ঝ৯ মিলিগ্রাম/১০০ মিলিগ্রাম) ও এসজিপিটি (৬৮ ইউ/লি)। এর পরের মাসে এইচবিএসএজি করি, যার ফলাফলও পজিটিভ। এখন আমি রোগটির কোন পর্যায়ে আছি এবং আমাকে কোনো ওষুধ খেতে হবে কি না, জানালে উপকৃত হব। (চিঠিটি সংক্ষেপিত)
আশিকুর রহমান
ময়মনসিংহ
পরামর্শঃ আপনি চিঠিতে বয়স উল্লেখ করেননি। আপনার রক্তে এইচবিএসএজি যখন ধরা পড়েছে, তখন কি আপনার কোনো অসুখ, যেমন-জ্বর, জন্ডিস এগুলো দেখা দিয়েছিল, নাকি এমনিতেই রক্ত পরীক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়েছে? সেটা জানা প্রয়োজন।
যা-ই হোক, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে আপনার রক্তে এইচবিএসএজি পজিটিভের সঙ্গে লিভার এনজাইম, যেমন-এসজিপিটি ক্রমাগত অনেক বেশি (স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি) এবং এইচবিভি ডিএনএ ১০০জ্ঝ০০০ কপিস (প্রতি মিলি) হলে ধরে নেওয়া হয় রোগটি ক্রনিক পর্যায়ে আছে।
আপনার যেহেতু এখনো ছয় মাস হয়নি এবং এসজিপিটির মান কমে যাচ্ছে, আপনি আবার ছয় মাস পর রক্তের এইচবিএসএজি, এইচবিইএজি, অ্যান্টি এইচবিসি, এসজিপিটি, এস বিলিরুবিন এবং এইচবিভি-ডিনএ পরীক্ষা করাবেন।
তখন সব রিপোর্ট দেখে আপনি রোগের কোন পর্যায়ে আছেন তা ঠিক করে ওষুধ খেতে হতে পারে। আবার ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নাও হতে পারে। আপনি রোগটির রিজল্ভ্ড পর্যায়েও চলে যেতে পারেন। তাই হতাশ হবেন না।
সমস্যাঃ ডাক্তার সাহেব, অনেকে বলেন ডায়াবেটিস হলে সেক্স পাওয়ার কমে যায়। এটা কি সঠিক?
ইকবাল আহমেদ
রামপুরা, ঢাকা
সমাধানঃ দীর্ঘ দিন রক্তের সুপার অস্বাভাবিক মাত্রায় থাকলে সেক্সের সমস্যা কিছুটা হতে পারে। তবে ডায়াবেটিসের নিয়মাবলি সঠিকভাবে যদি মেনে চলা যায় এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে কিন্তু সেক্সের আনন্দ উপভোগ করতে কোনোরকম বাধা দেখা যায় না।
সমস্যাঃ আমার মেয়ে অত্যন্ত মোটা। বয়স ২২। অথচ তার ওজন ৮০ কেজি। দয়া করে বলুন এখন আমি কী করব?
শান্ত ইসলাম
ফরিদাবাদ, ঢাকা
সমাধানঃ আপনার মেয়ের সমস্যার সমাধান দীর্ঘমেয়াদি। এর জন্য প্রয়োজন ধৈর্য ও অধ্যবসায়। ছুটির দিন বাদে যেকোনো দিন বারডেম হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, রুম নং-১১১ এ যোগাযোগ করুন।
সমস্যাঃ স্যার, সম্প্রতি লক্ষ্য করছি, দেহের ওজন কমে যাচ্ছে, গরম ভালো লাগে না। শরীর অতিরিক্ত ঘামে, মাসিক খুবই কম, ঘন ঘন পায়খানা হয়, বুক ধড়ফড় করে, মেজাজ খিটখিটে। খুবই অশান্তিতে আছি। স্থানীয় চিকিৎসকের ওষুধ খাচ্ছি। কিন্তু তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করছি না। অনুগ্রহ করে এর সমাধান দিন।
ডলি আক্তার
ইস্কাটন, ঢাকা
সমাধানঃ আপনি থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন। দেরি না করে আগামীকাল সকাল ৯টায় পিজি হাসপাতালের নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগে গিয়ে রক্তের টি থ্রি, টি ফোর ও টিথ্রিএইচ (ঞ৩, ঞ৪ ্ ঞ৩ঐ) পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট জানান। আপাতত ট্যাবলেট এডলোক ১০ মিলিগ্রাম ১টা করে রোজ ৩ বার এবং রাতে খাবার পর ১টা করে ট্যাবলেট লেক্সোটেনিল ৩ মিলিগ্রাম খেতে থাকুন।
শ্বাসকষ্টের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ১৭ বছর। এক বছর আগে শ্বাসকষ্ট, কাশি, হাঁচির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে টিকামেট ইনহেলার ও ফেনার্ট ট্যাবলেট ব্যবহার শুরু করি। গত এক বছর আর চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।
নিয়মিত দুইবার ইনহেলার নিলে এবং একটি করে ফেনার্ট ট্যাবলেট খেলে মোটামুটি সুস্থ থাকি। ঠান্ডা থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকি। একাধারে তিন-চার দিন ওষুধ না নিলে আমার শ্বাসকষ্ট, হাঁচি ও কাশি দেখা দেয়। উল্লেখ্য, আমি বেশির ভাগ সময় সর্দিতে ভুগি, একটু ধুলাবালি লাগলেই নাক চুলকায়, হাঁচি হয় এবং নাক দিয়ে পানি পড়ে। আমার প্রশ্ন-আমার কী রোগ হয়েছে? আমার কি আজীবন ওষুধ ব্যবহার করতে হবে? চিকিৎসকের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করতে হবে? একাধারে ইনহেলার ব্যবহার করলে আমার শরীরের বড় কোনো ধরনের ক্ষতি হবে কি?
রাফিয়া, নোয়াখালী।
পরামর্শঃ আপনি সম্ভবত অ্যাজমা বা হাঁপানি ও এলারজিক রাইনাইটিস রোগে ভুগছেন। অ্যাজমা ও এলারজিক রাইনাইটিস হলো যথাক্রমে শ্বাসনালি ও নাকের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ। ফলে শ্বাসনালি ও নাকের মিউকাস মেমব্রেন অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এতে শ্বাসনালির অতি সামান্য উত্তেজনায় শ্বাসকষ্ট, কাঁশি, নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক চুলকানির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
অ্যাজমার জন্য আপনি নিয়মিত স্টেরয়েড ইনহেলার, যেমন বেকলোমিথাসন, বুডিসোনাইড, ফ্লুটিকাসন ইনহেলার ও মনটিলুকস্ট, লং একটিং থিউফাইলিন ট্যাবলেট এবং প্রয়োজনমতো সালবিউটামল ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন। আপনার নাকের সমস্যার জন্য নিয়মিত বেকলোমিথাসন, ফ্লটিকাসন, মোমেসন বা ট্রাইসিনালন নাকের স্প্রে, কিটোটিফেন ও লরাটাডিন ট্যাবলেট ব্যবহার করতে পারেন। তবে ওষুধের ধরন ও সঠিক মাত্রা অবশ্যই একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী করবেন।
এ জন্য অবশ্যই আপনাকে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। কারণ আপনার চিকিৎসকই রোগের প্রকৃত অবস্থা বা রোগটি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না তা যাচাই করে নির্দিষ্ট সময় পরপর ওষুধের ধরন ও মাত্রা ঠিক করে দেবেন।
উল্লেখ্য, অ্যাজমার ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করা উচিত নয় এবং নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার না করলে অনেক সময় রোগটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। কিন্তু নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
আপনার অ্যাজমা বা হাঁপানি যদি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকে সে ক্ষেত্রে প্রতি তিন মাস পর ওষুধের মাত্রা, বিশেষ করে স্টেরয়েড ইনহেলার শতকরা ২৫ ভাগ করে কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
এভাবে নিয়মিত সঠিক মাত্রায় ওষুধ ব্যবহার করলে অনেক ক্ষেত্রে দু-তিন বছর পর কোনো ওষুধ ছাড়াই সুস্থ থাকা সম্ভব এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সারা জীবন আর কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। দীর্ঘদিন স্বল্পমাত্রায় স্টেরয়েড ইনহেলার শরীরে বড় কোনো ধরনের সমস্যা করে না। তবে যদি ১০-১৫ বছর অতিমাত্রায় স্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার করা যায়, তাহলে কারও কারও শরীরে এডরেনাল গ্ল্যান্ডের কার্যক্ষমতা সাময়িকভাবে কমতে পারে।
চোখের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২১। ১৮ বছর বয়স থেকে আমি চোখে দূরের জিনিস কম দেখি। অন্ধ কল্যাণ সমিতিতে দেখালে আমাকে মাইনাস ৪জ্ঝ৫০ পাওয়ারের চশমা দেওয়া হয়। এখন ছয় মাস পরপর দেখাচ্ছি। কিন্তু শুয়ে শুয়ে পড়তে গেলে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ে। চিকিৎসক আমাকে এ কারণে একটি ড্রপ দেন। এই ড্রপ ব্যবহার করলে কি আমার চোখের ক্ষতি হবে? চোখ ভালো করতে হলে আমাকে কী ওষুধ সেবন করতে হবে বা কী করতে হবে? উল্লেখ্য, আমার চশমার পাওয়ার এখন মাইনাস ৪জ্ঝ৫০। সারা দিন এবং রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত চশমা ব্যবহার করি। পরামর্শ দিলে উপকৃত হব।
লুবনা
ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শঃ দূরের জিনিস ভালোভাবে দেখার জন্যই চিকিৎসক আপনাকে মাইনাস ৪জ্ঝ৫০ পাওয়ারের চশমা দিয়েছেন এবং এটাই আপনার সঠিক চিকিৎসা। শুয়ে শুয়ে পড়তে গেলে চোখ দিয়ে পানি পড়লে শুয়ে না পড়াই ভালো। যে ড্রপটি দেওয়া হয়েছে তা ব্যবহার করলে চোখের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে আপনার সমস্যার জন্য এটি প্রয়োজন নেই। চোখ ভালো করার জন্য আপাতত কোনো ওষুধও সেবন করতে হবে না। নিয়মিত চশমা ব্যবহার করুন। প্রয়োজন হলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২৬। মাস্টার্স পাস করেছি। তিন বছর ধরে কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকের ব্যথা ও বুকের ভেতর শোঁ শোঁ আওয়াজে ভুগছি। সমস্যাটা সব সময় থাকে না। মাঝেমধ্যে খুব ভালো থাকি। সমস্যাটা শুরু হলে দিনে-রাতে কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়; কখনো কখনো এর তীব্রতা এত বেশি হয় যে রাতে ঘুমাতে পারি না। এ সমস্যার জন্য আমি অস্বস্তিতে ভুগতাম। চিকিৎসক দেখালে বলত কোনো সমস্যা নেই, ঠান্ডা লেগে এ অবস্থা হয়েছে; ভালো হয়ে যাবে। প্রায়ই অ্যান্টিবায়োটিক ও কাশির সিরাপ দিত। তবে কোনো লাভ হতো না, কিন্তু কাশির সিরাপ খেলে আমার খুব ঘুম পেত। তখন কোনো একটা কারণে আমি মানসিক টেনশনে ছিলাম।
খুব হতাশা কাজ করত এবং তখন থেকে আমি নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের কাশির সিরাপ খেতে থাকি। যদিও কাশির সিরাপ খেলে আমার কাশি ও শ্বাসকষ্ট ভালো হতো না বা কমত না, তবু আমি অনেক কাশির সিরাপ খেতাম। এখন আমার খাওয়ায় রুচি কমে গেছে, ওজন কমে যাচ্ছে, বুকে ব্যথা ও পেটে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। মাঝেমধ্যে ঢেকুর হয় এবং ভেতর থেকে পানি ও খাবার মুখে আসে। কাশি ও শ্বাসকষ্ট কমছে না বরং দিন দিন এর তীব্রতা বাড়ছে। মানসিকভাবে আমি খুব কষ্টে আছি; মাঝেমধ্যে মনে হয় আর বাঁচব না। এ অবস্থায় কী করব?
মোজ্ঝ রবিউল হোসেন
গুলশান, ঢাকা।
পরামর্শঃ সম্ভবত আপনি তিনটি সমস্যায় ভুগছেন-১জ্ঝ অ্যাজমা, ২জ্ঝ বিষণ্নতা ৩জ্ঝ পেপটিক আলসার।
যদিও আপনি শ্বাসকষ্ট ও কাশির জন্য সিরাপ ও অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েছেন; কাশির সিরাপ বা অ্যান্টিবায়োটিক কোনোটিই অ্যাজমার সঠিক চিকিৎসা নয়, বরং কখনো কখনো কোনো কোনো কাশির সিরাপ অ্যাজমার সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। আপনার কাশি বা শ্বাসকষ্টের জন্য নিয়মিত স্টেরয়েড ইনহেলার, যেমন-বেকলোমিথাসন, ফ্লুটিকাসন, বুডিসনাইড ইনহেলার এবং প্রয়োজনমতো কাশি বা শ্বাসকষ্ট কিংবা বুকে চাপ অনুভূত হলে ভেন্টলিন, অ্যাজমাসল বা সালটলিন ইনহেলার ব্যবহার করবেন।
এ ছাড়া আপনি থিওফাইলিন ট্যাবলেট ও মন্টিলুকাস্ট ট্যাবলেট খেতে পাবেন। তবে ওষুধের ধরন ও সঠিক মাত্রা একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো নেবেন।
মাত্রাতিরিক্ত বিভিন্ন ধরনের কাশির সিরাপ সেবনের ফলে আপনার খাওয়ায় অরুচি ও অনিয়ম হয়েছে; ফলে সম্ভবত আপনার পেপটিক আলসার বা ডিসপেপসিয়া হয়েছে। এ জন্য আপনাকে কাশির সিরাপ থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং ওমিপ্রাজল ক্যাপসুল ২০ মিলি ও ডমপেরিডন ১০ মিলি খেতে পারেন।
যদিও প্রথমে আপনি কাশি থেকে নিরাময়ের জন্য কাশির সিরাপ সেবন শুরু করেছিলেন, কিন্তু পরবর্তীকালে আপনি হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের কাশির সিরাপ সেবন করছেন; যা আপনার হতাশাকে না কমিয়ে বরং বিভিন্ন ধরনের শারীরিক বা মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করছে।
এ জন্য আপনি অতিসত্বর একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
চিকিৎসকেরা কখনো কখনো বিশেষ ক্ষেত্রে কাশি নিয়ন্ত্রণের জন্য সিরাপ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু কখনোই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এবং মাত্রাতিরিক্ত কাশির সিরাপ সেবন করা উচিত নয়। এতে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক বা মানসিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। কোনো কোনো কাশির সিরাপে কডিন নামের একটি রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা মাত্রাতিরিক্ত সেবন করলে কেউ কেউ এর প্রতি শারীরিক বা মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক, যেমন-ক্ষুধামান্দ্য, ওজন কমে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া এবং মানসিক, যেমন-অতিরিক্ত ঘুম পাওয়া বা ঘুম না আসা, কোনো কিছুতে মন স্থির করতে না পারা বা বিষণ্নতার মতো বিভিন্ন উপসর্গ হতে পারে।
বুকের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ১৯ বছর। দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। প্রায় দুই বছর ধরে গলার মধ্যে এক ধরনের কফ আটকে থাকে। খুব আঠালো এবং সাদা ও খসখসে। গলায় আটকে গেলে মুখ দিয়ে বমি আসে। সঙ্গে একটু কফ ও অনেক আঠালো লালা বের হয়। তখন দুই চোখ দিয়ে প্রচুর পানি ঝরতে থাকে। আবার কোনো কিছুর গন্ধ পেলে তা একই রকম মনে হয়। পানি খাওয়ার পর এ সমস্যাটা বেশি দেখা যায়। এ সমস্যার কারণে আমি ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছি না। বারবার থুথু ফেলতে ফেলতে অতিষ্ঠ হয়ে যাই। প্রতিদিন শিক্ষকদের কাছে কথা শুনতে হয়। আমি একবার নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে একটি ট্যাবলেট দিয়েছেন, যা খেয়ে কোনো কাজ হয়নি।
মোজ্ঝ শফিকুল ইসলাম শিহাব
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট।
পরামর্শঃ আপনি সম্ভবত অ্যালার্জিজনিত রোগে ভুগছেন। এ ধরনের কফ সাদা ও আঠালো পদার্থ ক্রনিক ফ্যারিংজাইটিস রোগের জন্য হয়ে থাকে। এ জন্য আপনি প্রতিদিন রাতে একটি করে ট্যাবলেট লরাটিডিনজাতীয় ওষুধ সেবন করতে পারেন। যেকোনো ঝাঁঝালো গন্ধ এড়িয়ে চলবেন। রক্তের ইয়োসিনফিল কাউন্ট ও থ্রট সোয়াব পরীক্ষা করুন। প্রয়োজনে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করুন। উপযুক্ত চিকিৎসা নিলে এ ধরনের সমস্যা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।
নাকের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ১৮। ছোটবেলা থেকেই আমি আমার নাকের দুই অংশ দিয়ে একসঙ্গে নিঃশ্বাস নিতে পারি না। নাকের একটি ছিদ্র দিয়ে নিঃশ্বাস নিলে অন্যটি বন্ধ থাকে। এভাবে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে একবার একটি দিয়ে, পরে অন্যটি দিয়ে বাতাস বের হয়। এটা থেকে কী সমস্যা হতে পারে? উল্লেখ্য, গত বছর আমার মাঢ়ির শেষে চারটি দাঁত উঠেছে। এ জন্য আমার গলার ভেতরে ব্যথা ও ঘা হয়।
নাম প্রকাশেঅনিচ্ছুক,
ঢাকা।
পরামর্শঃ আমাদের দুই নাসারন্ধ্র দিয়ে বাতাস চলাচল সাধারণত অসম। বেশির ভাগ সুস্থ মানুষের নাকের বাতাস চলাচল নিয়মিত চক্রাকারে চলে। সময়ের ব্যবধানে একবার নাকের একটি ছিদ্র দিয়ে, পরে অন্যটি দিয়ে বাতাস চলাচল করে। শতকরা ৮০ ভাগ লোকের ক্ষেত্রে এই নাসিকা চক্র উপস্থিত থাকলেও বেশির ভাগ মানুষই তা খেয়াল করতে পারে না। তাই আপনার নাকের এই ব্যাপারটিকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা যায়। তবে নাক বন্ধ বেশি হলে বা নাক দিয়ে মোট বাতাস চলাচল কম মনে হলে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে নিন। আপনার মাঢ়ির পেছনের দিকের দাঁত বড় বা বাঁকা থাকলে আঘাত লেগে গলায় ঘা ও ব্যথা হতে পারে। এ জন্য আপনাকে নাক, কান ও গলা এবং দন্ত উভয় বিশেষজ্ঞের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে হবে।
দাঁতের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২২ বছর। উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। স্বাস্থ্য ভলো। আমার দাঁতের গোড়া থেকে প্রায়ই রক্ত পড়ে। দাঁত ব্রাশ করার সময়ও পড়ে। আমি প্রতিদিন সকাল ও রাতে দাঁত ব্রাশ করি। মুখ ধোওয়ার সময় হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে থাকি ও কুলি করি। আমি ঠান্ডাজাতীয় জিনিস, মিষ্টি ও চকলেট খাই না। একজন চিকিৎসকে দেখালে তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল ও রাতে ভালো টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করতে। তবু কোনো লাভ হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম।
পরামর্শঃ মাঢ়ি দিয়ে রক্ত পড়ার অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে প্রধান হলো মাঢ়িতে প্রদাহ হওয়া। প্রদাহের কারণে রক্তক্ষরণ হলে ডেন্টাল সার্জনকে দেখিয়ে স্কেলিং করিয়ে নিন। প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনও করতে হতে পারে।
এতে দাঁত বা মাঢ়ি দিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে। এ ধরনের সমস্যা হলে মাঢ়ি ও দাঁতের মধ্যে ক্ষত হওয়ায় সেখানে নানা ধরনের জীবাণু বংশ বিস্তার করে মাড়িতে প্রদাহের সৃষ্টি করে। একে জিনজিভাইটিস বলে। এসব ক্ষেত্রে স্কেলিংয়ের মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার করে ফেলাই হচ্ছে প্রধান চিকিৎসা। দাঁতের ফাঁকে ময়লা জমতে দেবেন না। যেকোনো কিছু খাওয়ার পরে ভালো করে কুলি করবেন।
চোখের সমস্যা
মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন অ্যান্ড হসপিটাল, ঢাকা এবং অনারারি প্রফেসর, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, টাঙ্গাইল
সমস্যাঃ আমার বয়স ২২ বছর। পাঁচ-ছয় বছর আগে আমি ডান চোখে শক্ত আঘাত পেয়েছিলাম। তখন থেকে আমি ওই চোখে দেখতে পাই না। বর্তমানে সামান্য দেখি; প্রথম অবস্থায় কিছুই দেখতাম না। তারপর আস্তে আস্তে সামান্য একটু আলো দেখি এবং চোখের লক্ষ্য বরাবর একটা কালো দাগ দেখতে পাই। তারপর আমার ডান চোখ আস্তে আস্তে ট্যারা হয়ে যায়। তবে আমি জ্ন থেকে বা আঘাত পাওয়ার সময় বা আঘাত পাওয়ার প্রথম অবস্থায় ট্যারা ছিলাম না। এখন আমার বাঁ চোখ ও ডান চোখ দুটি বিম্ব গঠন করে। বাঁ চোখে আমি স্পষ্ট দেখি, ডান চোখে সামান্য দেখি; তবে মোটামুটি কাছে আনলে দেখতে পাই। চোখ সোজা করে তাকালে ডান চোখে কালো দাগের জন্য কিছু অংশ দেখা যায় আর কিছু অংশ দেখা যায় না। বর্তমানে আমার সমস্যা ডান চোখে সামান্য দেখা এবং ডান চোখ ট্যারা।
এ কারণে আমি প্রতিটি বস্তু দুটি দেখছি। বাঁ চোখের বিম্ব স্পষ্ট এবং ডান চোখেরটা অস্পষ্ট। একটি বিম্ব থেকে আরেকটি দূরে ও পাশে। আমি কিছুদিন আগে ইসলামিয়া হাসপাতালে বহির্বিভাগে গিয়েছিলাম।
ওখানে আমার ডান চোখের একটি পরীক্ষা করে বলা হয়, চোখের ভেতরের অংশ ভালো আছে; শুধু লেন্স সংযোজন করতে হবে। কিন্তু আমার ট্যারা সমস্যার সমাধান না হলে আমি প্রতিটি বস্তু দুটি দেখতে থাকব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শঃ আঘাতের ফলে পাঁচ-ছয় বছর আপনি ডান চোখে দেখতে পারছেন না। আর এই না-দেখার কারণে আপনার ডান চোখটা ট্যারা হয়ে গেছে। আপনি কী কারণে দেখতে পারছেন না, সেটা আগে বের করতে হবে। যেমন-আঘাতের কারণে আপনার চোখে ছানি পড়তে পারে, চোখের ভেতর রক্তক্ষরণ হতে পারে, রেটিনায়ও সমস্যা হতে পারে। যেহেতু বি-স্ক্যান পরীক্ষা করে চোখের ভেতরের অংশ (রেটিনা, ভিট্রিয়াস) ভালো আছে বলে জানা গেছে এবং লেন্স লাগাতে বলা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে, আপনার চোখে ছানি পড়েছে। ছানি অপারেশনের পর দৃষ্টিশক্তি ফিরে এলে আপনার সমস্যা অনেকটা কমে যাবে।
অবশ্য প্রয়োজন হলে ট্যারা চোখেরও চিকিৎসা করা যাবে। এ জন্য আপনাকে চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে এবং তাঁর পরামর্শমতো চিকিৎসা করাতে হবে।
ত্বকের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ১৬ বছর। প্রতিবছর শীতকাল এলেই আমার হাড়ের ত্বক পুরু ও শক্ত হয়ে যায়। তারপর আস্তে আস্তে উঠতে থাকে। এভাবে সারা শীতে দুই থেকে তিনবার হাতের চামড়া ওঠে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, প্রথমবার ওঠার পরপরই আঙুলের ওপরের দিকে ফেটে যায়। এমনকি লিখতে বা খেলতে গেলে অনেক সময় ফাটল দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে।
উল্লেখ্য, আমার বাবা ও বড় ভাইয়ের ছোটবেলায় এ রোগটি ছিল। পরে অনেক বড় হলে সেরে যায়। কিন্তু তাঁদের সমস্যা আমার মতো ব্যাপক ছিল না। আমার কী করা উচিত?
রফিকুল
খুলনা
পরামর্শঃ আপনার ত্বকের রোগটি হচ্ছে লেমেলার ডিজহাইড্রোসিস। এটা ত্বকের এক ধরনের অ্যাকজিমা।
আপনি শীতকালে সাবান, বিশেষ করে ডিটারজেন্ট কম ব্যবহার করবেন। হাতে রাতের বেলা তিন শতাংশ সেলিসাইলিক এসিড মলম এবং দিনের বেলা ক্লোবিটাসোন প্রোপিওনেট স্টেরয়েড মলম ব্যবহার করতে পারেন দু-তিন সপ্তাহ।
মাঝেমধ্যে ভেসলিন লাগিয়ে হাতের তেলতেলে ভাব বজায় রাখবেন। খেয়াল রাখবেন, ত্বক যেন সহজেই শুষ্ক হয়ে না পড়ে।
ডায়াবেটিস, হৃদরোগ সমস্যা
সমস্যাঃ একজন সাধারণ ডায়াবেটিস রোগী ও একজন ডায়াবেটিক বাইপাস বা রিং পরানো রোগীর কোলেস্টেরল প্রোফাইল একই হওয়া উচিত কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
মনিরুজ্জামান
স্টেশন রোড, নওগাঁ।
পরামর্শঃ একজন সুস্থ লোকের কোলেস্টেরলের প্রোফাইল আর ডায়াবেটিস রোগীর কাঙ্ক্ষিত কোলেস্টেরল প্রোফাইল এক নয়। কোলেস্টেরল প্রোফাইল বলতে আমরা ভালো ও মন্দ কোলেস্টেরলের অংশবিশেষগুলোর সামগ্রিক চিত্রটি বুঝি। এইচডিএল কোলেস্টেরল হচ্ছে ভালো কোলেস্টেরল, যা অনেকটা ঝাড়ুদারের মতো হার্ট থেকে মন্দ কোলেস্টেরল অর্থাৎ এলডিএল-কে বের করে নিয়ে আসে। অন্যদিকে ট্রাইগ্লিসারাইড (টিজি) নিজে সরাসরি ততটা খারাপ না হলেও এলডিএলের ক্ষতিকর দিকগুলোকে সহায়তা করে থাকে। কাজেই আমরা চাইব যেন ভালো (এইচডিএল) কোলেস্টেরল বেশি থাকে, এলডিএল খুব কম থাকে; টিজি যেন মোটামুটি কম থাকে।
আকাঙ্ক্ষিত কোলেস্টেরল প্রোফাইল হলো-সুস্থ লোকের জন্য মোট কোলেস্টেরল ২০০ মিলিগ্রামের কম, এইচডিএল ৪০ মিলিগ্রামের বেশি, এলডিএল ১৩০ মিলিগ্রামের কম, টিজি ২০০ মিলিগ্রামের কম। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কাঙ্ক্ষিত কোলেস্টেরল প্রোফাইল হলো-মোট কোলেস্টেরল ১৫০ মিলিগ্রামের কম, এইচডিএল ৪০ মিলিগ্রামের বেশি; এলডিএল ১০০ মিলিগ্রামের কম, টিজি ১৫০ মিলিগ্রামের কম।
হার্টের বাইপাস বা স্টেন্ট পরানো রোগীর জন্য এই মাত্রা হলো- মোট কোলেস্টেরল ১২০ মিলিগ্রাম বা তার চেয়ে কম; এইচডিএল ৫০ মিলিগ্রাম বা তার চেয়ে বেশি; এলডিএল ৭০ মিলিগ্রাম বা তার চেয়ে কম, টিজি ১৫০ মিলিগ্রামের কম।
এ উপমহাদেশের রোগীদের সমস্যা হলো, সাধারণত তাদের লিপিড প্রোফাইলে দেখা যায় মোট কোলেস্টেরল সামান্য বেশি;
এলডিএল স্বাভাবিক বা কিছুটা বেশি, কিন্তু টিজি অনেক বেশি, এইচডিএল অনেক কম। সাধারণভাবে কার্বহাইড্রেট কম খেলে (ভাত, মিষ্টি), তার সঙ্গে যদি চর্বিজাতীয় জিনিস কম খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তাহলে এলডিএলও কমে। এ ছাড়া ওজন কমালে, নিয়মিত হাঁটলে বা ব্যায়াম করলে এবং সিগারেট না খেলে এইচডিএল বাড়ে, টিজি কমে।
প্রয়োজনে চিকিৎসক কোলেস্টেরল কমানোর জন্য ওষুধ দিতে পারেন। বেশি পরিমাণে শাকসবজি খাওয়া, সব সময় মাছ খাওয়া, মুরগির মাংসের চামড়া, মগজ, কলিজা বাদ দিয়ে খেলে, ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে খেলে, দুধ ভালো করে জ্বাল দিয়ে সর তুলে নিয়ে সে দুধটুকু খেলে, রান্নায় তেল কম ব্যবহার করলে খাদ্যে চর্বির পরিমাণ অনেক কমে আসে।
দাঁতের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ১৫ বছর। উচ্চতা ৫ ফুট ১ ইঞ্চি। ওজন ৪৯ কেজি। আমার মুখ থেকে সব সময় দুর্গন্ধ ছড়ায়। এটি খুবই বিব্রতকর। এটি আমার চেয়ে আমার আশপাশের লোকজন বেশি অনুভব করে। প্রায় এক বছর ধরে আমি এ সমস্যায় ভুগছি। প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করার পরও সমস্যা রয়েই গেছে। আমি খাওয়াদাওয়ার পর ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করি। দাঁতে কোনো রকম ব্যথা নেই। এক বছর আগে আমি সামনের দুই পাশের দুটি অতিরিক্ত দাঁত ফেলে দেওয়ার পর থেকে এ সমস্যার শুরু। কী কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। উল্লেখ, আমার মাঢ়ির দাঁতে সামান্য গর্তের মতো রয়েছে। আমি এখনো কোনো ওষুধ সেবন করিনি। কী করলে আমি এ সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারব।
আরমান, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম।
পরামর্শঃ মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার অনেক কারণ আছে। সাধারণত দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা আটকে থাকলে সেটা পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়। দাঁত নিয়মিত পরিষ্কার করলেও আমাদের জিহ্বার পেছনে বা গোড়ার দিকে এন্টেরিক ব্যাকটেরিয়া জ্ন নেয়। এ থেকেও দুর্গন্ধ হতে পারে।
জর্দা ছাড়া পান খাওয়া মুখে দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া পেটের সমস্যা, কিডনি রোগ এবং নাক, কান ও গলার সমস্যা থাকলেও মুখে এ ধরনের দুর্গন্ধ হতে পারে। যে কারণেই হোক না কেন, সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসা নিলে এবং মুখ ও দাঁতের পরিচ্ছন্নতা সঠিকভাবে বজায় রাখলে দুর্গন্ধ থাকবে না, মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। যেকোনো খাবার খাওয়ার পর অবশ্যই ভালোভাবে কুলি করে দাঁত পরিষ্কার করবেন। রাতে ঘুমানোর আগে ও সকালে ভালো নরম টুথব্রাশ ও টুথপেস্ট দিয়ে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করবেন। জিহ্বার গোড়ায় যাতে এন্টেরিক ব্যাকটেরিয়া জ্নাতে না পারে সে জন্য জিহ্বার চারপাশে ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। জর্দা বা পান খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিন। এ থেকে মুখের আরও অনেক সমস্যাও হতে পারে। সম্ভব হলে মুখে মাউথ ওয়াশ বা মাউথ ফ্রেশনার ব্যবহার করতে পারেন। এখন থেকেই নিয়মিত মুখ ও দাঁতের যত্ন নিলে এ সংশ্লিষ্ট নানা সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
সমস্যাঃ মিসেস লায়লা, গুলশান ঢাকা থেকে জানতে চেয়েছেন ‘ওষুধ নিয়মিত খেলে কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে’।
সমাধানঃ এক কথায় বলতে হলে বলব ‘না’। কারণ ওষুধ ছাড়াও আরো দু’টি বিষয় ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এক. খাদ্য নির্বাচন, দুই. ব্যায়াম।
তাই মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার বর্জনসহ অধিক পরিমাণ টক ফল ও শাকসবজি এবং পরিমাণমতো শর্করা, আমিষ ও চর্বিজাতীয় খাবার খেতে হবে এবং সপ্তাহে অন্তত তিন-চার দিন ৩০-৪০ মিনিট করে মুক্ত বায়ুতে কাপড়ের জুতা পায়ে একটু জোরে জোরে হাঁটতে হবে। মনে রাখবেন, এই দু’টি নিয়ম ভালোভাবে মেনে চললে হয়তো আপনার ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন নাও হতে পারে।
সমস্যাঃ ২৪ বছর বয়সী মিসেস লাবনী, চকবাজার, ফরিদপুর থেকে জানতে চেয়ে চিঠি লিখেছেন তার শরীরের অতিরিক্ত ওজন ও মুখে অস্বাভাবিক লোমের চিকিৎসা সম্পর্কে।
সমাধানঃ এ রোগের নাম ‘হারসুটিজম’ বা হরমোনজনিত একটি সমস্যা। শরীর মুটিয়ে যাওয়া এ সমস্যার অন্যতম একটি কারণ। একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারলে ভালো হয়। কারণ আপনাকে খাবারের নিয়মাবলি ও ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। আপাতত খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠুন, হাত-মুখ ধুয়ে ২০-৩০ মিনিট করে হাঁটুন ও দড়ি দিয়ে যতক্ষণ ভালো লাগে লাফালাফি করুন। ফাস্ট ফুড, তৈলাক্ত খাবার, গরু, খাসি, ডিমের কুসুম, ইলিশ-চিংড়ি ও মিষ্টি খাওয়া বাদ দিন। শাকসবজি ও টক ফল যত খুশি খেতে থাকুন। ভাত-রুটি প্রতি দিন যে পরিমাণ খাচ্ছেন তার চেয়ে শতকরা ২৫ ভাগ কমিয়ে দিন এবং ১২-১৫ গ্লাস পানি খান। ৯টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে ১১টার দিকে ঘুমিয়ে পড়ুন। ওপরের নিয়মের পাশাপাশি রোজ মেটফো (৫০০ মিলিগ্রাম) বড়ি একটা সকালে ও একটা রাতে খাবার পর খাওয়া শুরু করুন।
প্রশ্নঃ মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই বুকে ব্যথা হয়। সব বুকের ব্যথাই কি হার্টের ব্যথা?
উত্তরঃ না, হার্টের ব্যথা ছাড়াও অন্যান্য অনেক কারণে বুকের ব্যথা হয়। যেমনফৈুসফুসের রোগ। গলার ব্যথা, লাং-এর রোগ, খাদনালীর সমস্যা, হাড়ের সমস্যা এবং বুকের চামড়া থেকে বুকের ভেতরের সব অঙ্গগুলোর যে কোনটার রোগ হলেই বুকে ব্যথা হয়।
প্রশ্নঃ যাদের দেহে কোলস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে তারা মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে পারবে কি না?
উত্তরঃ মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে পারবে তবে ফ্যাট জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। সাধারণত যাদের ডায়বেটিস ও যারা মোটা তাদের মিষ্টি খাওয়া নিষেধ।
প্রশ্নঃ উচ্চরক্তচাপ কিছুদিন ওষুধ খাওয়ার ফলে নিয়ন্ত্রণে আছে। ওষুধ ছেড়ে দিলে ড়্গতি হবে কিনা।
উত্তরঃ উচ্চরক্তচাপের প্রায় সব ওষুধই ২৪ ঘন্টার বেশি কাজ করে না। তাই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিনই ওষুধ খেতে হবে।
প্রশ্নঃ অনিয়মিত হার্টবিট কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
উত্তরঃ সাধারণত ধূমপান, চিন্তôা, অতিমাত্রায় কাজ, এগুলোর জন্য অনিয়মিত হার্টবিট দেখা দেয়। এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া কিছু কিছু হার্ট ডিজিজ আছে যেসব কারণে অনিয়মিত হার্টবিট হয় সেগুলোর চিকিৎসা করাতে হবে।
প্রশ্নঃ সাধারণত দেখা যায় হার্টের রোগীদের বিশ্রাম নিতে বলে ডাক্তাররা ৈএটা কেন?
উত্তরঃ কাজ করলে হার্টের ওপর চাপ পড়ে। এজন্য কিছু কিছু হার্টের রোগ যেমনহৈার্ট ফেইলিওর, স্কিমিক হার্ট ডিজিজ। এসব হার্টের রোগীরা কাজ বেশি করলে হার্টে চাপ পড়ে ফলে অবস্থা খারাপ হতে পারে।
প্রশ্নঃ উচ্চরক্তচাপ হার্ট এ্যাটাকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কি না?
উত্তরঃ উচ্চরক্তচাপ হার্ট এ্যাটাকের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এটা নিয়ন্ত্রিত না থাকলে হার্টের জটিলতা যেমনহৈার্ট ফেইলিওর, স্কিমিক হার্ট ডিজিজ হয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ হার্টের ব্যথা বা বুকের ব্যথা হলে প্রাথমিক কি চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে?
উত্তরঃ প্রথমেই রোগের ইতিহাস নিয়ে পরীড়্গা করে এবং ইসিজি করে নিশ্চিত হতে হবে হার্ট ডিজিজ কিনা। হার্ট ডিজিজ হলে নাইট্রো গিস্নসারিন, ইকোস্ত্র্নিন জাতীয় ওষুধ দেয়া যেতে পারে। তবে এসব চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াই উত্তম।
প্রশ্নঃ হার্ট ডিজিজ বা হার্ট এ্যাটাক হলে কি কি ধরনের চিকিৎসা হতে পারে?
উত্তরঃ হার্ট এট্যাকের প্রকারভেদ চিকিৎসা নির্ভর করে কি ধরনের ডিজিজ হয়েছে এবং রোগ ভেদে চিকিৎসা করতে হবে। যেমন ৈকনজেসটিভ কার্ডিয়াক ফেইলিওর হলে ঘুমের ওষুধ ও লবণ কম খেতে বলা হয়। এছাড়া রোগের কারণ ও চিকিৎসা করতে হয়। করনারী হার্ট ডিজিজ হলে করনারী বাইপাস বা বাল্ব পরিবর্তন করা হয়।
প্রশ্নঃ বিয়ের পর ওজন বেড়ে যাচ্ছে, কিভাবে কমাব?
উত্তরঃ বিয়ের সাথে ওজন বাড়ার কোন সম্পর্ক নেই। জীবনের অনিশ্চয়তা থেকে নিশ্চয়তা এবং সুখী জীবন ওজন বাড়ার কারণ হতে পারে। তবে ওজন রাখতে হলে নিয়মিত ব্যায়াম, নিয়মিত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
বর্তমানে গলবস্নাডারস্টোন হতে প্রায়ই শোনা যায়। এটা সময়মত অপারেশন না করলে কোন সমস্যা হয় কি?
উত্তরঃ গলবস্নাডারে পাথর হলে এটা অবশ্যই সময়মত অপারেশন করাতে হবে। তা না হলে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। পাথর হলে অনেক সময় এটা নালীর মুখে আটকে পচন ধরে যায়। অনেক দিন পেটের ভেতর থাকলে ক্যান্সার হয়ে যায়। এটা সময় মত না ফেললে পেটের মধ্যে ইনফেক্সন হয়ে মারা যাবার সম্ভাবনা থাকে। কোন সিমটম না থাকলে পাথর ধরা পড়ার সাথে সাথে অপারেশন করে ফেলাই ভাল।
পিত্তে পাথর হলেই কি এটা অপারেশন করতে হবে? অন্য কোন উপায়ে এটা ভাল করা যায় কি?
উত্তরঃ আসলে এটা তিন রকম রোগ হয়। গেইজ, অশ্ব ও ভগন্দর হতে পারে। পাইলস বলতে বোঝায় অশ্বটাকে। তিনটার চিকিৎসা তিন রকম। রক্ত পড়লেই তা পাইলস এটা ঠিক না। খাদ্য অভ্যাস পাল্টালেই ৭০% গেইজ ভাল হয়ে যায়। অনেকসময় পাইলস হলে রক্তনালী ফুলে যায় এটা আসলে অন্যান্য রোগ থাকলে বা বংশগত কারণে হয়ে যাকে। এটা খাদ্য বা অপারেশন দুটোর মধ্যেই ঠিক করা যায়।
আরেকটা হল ভগন্দর যাকে ফিষ্টুলা বলা হয়। এটা ফিসারের কারণে হতে পারে। এটাতে অপারেশন করতেই হবে।
পাইলস কি কোনভাবে প্রতিরোধ করা যায়? এটা কেন হয়?
উত্তরঃ এটা প্রতিরোধ করার কোন উপায় নেই। এটা বংশগত হতে পারে। এছাড়া খাদ্যাভ্যাস, কিছু কিছু কারণে নাড়ীতে ক্যান্সার হলে বা সিরোসিম হলে পাইলস হতে পারে। এজন্য প্রচুর শাক-সবজি, মাছ, মাংস এবং প্রচুর পানিত খেতে হবে। গর্ভবতী মহিলাদের এটা হতে পারে। সন্তôান জন্ম দেয়ার পর এটা এমনিতেই ভাল হয়ে যায়।
পিত্তের পাথর থেকে ক্যান্সার হয় এটা প্রতিরোধ করার কোন উপায় আছে কি? এই ক্যান্সাËের কোন চিকিৎসা আছে কি?
উত্তরঃ পিত্তের পাথর প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করলে ক্যান্সার হয় না। শরীরের ক্যান্সার সেল মারার জন্য কোন কেমো থেরাপি নেই যার দ্বারা এটা প্রতিরোধ করা যায়।
আমাদের দেশে অনেক ভাল চিকিৎসা হচ্ছে, বেশ বড় বড় অপারেশন হচ্ছে। তারপরও মানুষ চিকিৎসা করতে বিদেশ পাড়ি জমায় কেন?
উত্তরঃ আমাদের দেশের ৮৫% লোক দরিদ্র, ১০% মোটামুটি পয়সাওয়ালা। আর বাকি ৫% এর পয়সা খরচের ড়্গমতা রয়েছে। এই ৮৫% লোক বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। সেই ১০% সারা দেশের নানা প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। আর ঐ ৫% বিদেশ যায়। এটা কে অনেকে ঝড়পরধষ ংঃধঃড়ঁং মনে করে। তবে হ্যাঁ কিছু রোগ যেমন কিডনী লিভার ট্রান্সপস্নান্ট নিউরোসার্জারী এগুলো খুব ভাল হয় না। এছাড়া আমাদের সমাজ ব্যবস্থারও কিছু গাফলতি রয়েছে।
অনেকের ধারণা অপারেশনের পর টক জাতীয় খাবার খেলে ঘা পেকে যায়, শুকাতে দেরি হয়। এটা কি ঠিক?
উত্তরঃ ভিটামিন সি এটা খুবই প্রয়োজনীয়। এড়্গেত্রে ২টা আমলকী, ১টা কামরাঙ্গা, পেয়ারা প্রভৃতি খাওয়া ভাল। এছাড়া দুধ তো খুবই উন্নতমানের প্রোটিন, এটাও ঘা শুকাতে সাহায্য করে।
গলবস্নাডার স্টোন অপারেশনে কি ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে?
উত্তরঃ এটা ওপেন এবং সার্জারী দু’ভাবে করা হয়। এটা খুব দড়্গ চিকিৎসক না হলে অনেক সময় পিত্তনালী ফেটে গেলে জীবনের ঝুঁকি আসতে পারে। এর প্রধান সমস্যা পিত্তনালীতে ইনফেক্সন হলে জীবনহানির সম্ভাবনা দেখা দেয়। তবে ওপেন হলে ইনফেক্সন হতে পারে।
আজকাল পত্র-পত্রিকায় দেখি অনেক জায়গায় পাইলস অপারেশন করা হচ্ছে। এগুলো কতটাস্বাস্থ্য সম্মত? এসব জায়গায় চিকিৎসা করানো উচিত বলে কি আপনি মনে করেন?
উত্তরঃ খুব সুদড়্গ সার্জন ছাড়া এটা অপারেশন করা উচিত নয়। এটা টেকনিক্যাল অপারেশন যে সব সময় করে তাকে ছাড়া করানো ঠিক না। এসব নামধারী ছোটখাট চেম্বার এর ডাক্তাররা কার্বলিক এসিড দিয়ে পোড়ায় দেয় ফলে পচন ধরে ও নানা জটিলতা দেখা দেয়। আমাদের কাছে প্রায়ই এমন রোগী আসতে থাকে। সবচেয়ে ভাল এগুলো বন্ধ করার জন্য সরকারকে সচেতন হওয়া। উনার মতে, সরকারি পদড়্গেপ নিয়ে এসব পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞান দেয়া বন্ধ করা উচিত।
অনেকে পিত্তের পাথর অপারেশন করতে ভয় পায়। এটা কি খুব বড় অপারেশন?
উত্তরঃ কোন অপারেশনই ছোট নয়। অন্য অসুবিধা না থাকলে সকালে করে বিকেলে বাসায় চলে যেতে পারেন। সমস্যা বা জটিলতা থাকলে কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। আমার সতের হাজার পিত্তের পাথর অপারেশনের মাঝে ১টাকে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল।
আমি শুনেছি অপারেশনের সময় ডাক্তারদের হাতে রোগী মারা গেলে শরীর সাময়িক গরম রাখার জন্য ইনজেকশন দেয়া হয় জেন বোঝা না যায় ডাক্তারদের হাতে রোগী মারা গেছে। এটা কতটুকু সত্য বলে আপনি মনে করেন?
উত্তরঃ এমন কোন ইনজেকশন দেয়া যায় না। যার দ্বারা শরীর গরম রাখা যায়। কিন্তু ফরমালিন দিয়ে পচন রোধ করা যায়। মানুষ মরার ১০-১২ মিনিট পর থেকে শরীর ঠান্ডা হতে শুরম্ন করে। ডাক্তারদের ভুল হতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে অবহেলার ফলে যেন কোন রোগী মারা না যায়। এমনটা হলে অবশ্যই তাকে শাস্তিô পেতে হবে।