Tuesday, June 10, 2008

Eyes (চক্ষু)

আইরিসের প্রদাহ
ডা. সুমাইয়া নাসরিন লোপা

আইরিসের প্রদাহকে আইরাইটিস বলে। আর আইরিস এবং সিলিয়ারি বডির প্রদাহকে একত্রে আইরিডোসাইক্লিআইটিস্‌ বলা হয়।

কারণঃ আঘাতজনিত কারণে যদি চোখ ছিদ্র হয়ে যায় ষ বিভিন্ন জীবাণুর সরাসরি সংক্রমণে ষ অ্যালার্জি ষ নির্দিষ্ট কারণ যেমনঃ টিউবারকুলোসিস, সিফিলিস প্রভৃতি।

উপসর্গঃ দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
চোখে ব্যথা, যা রাতে গভীর হয়; চোখ থেকে পানি পড়া এবং; আলোক সংবেদনশীলতা
চিকিৎসক সাধারণত যে বিষয়গুলো খেয়াল করে থাকেন-; চোখ লাল হয়ে যাওয়া
কর্নিয়ার ওপরে কিছু কোষের অস্তিত্ব
আইরিসের বর্ণ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
পিউপিল ছোট হয়ে যাওয়া প্রভৃতি।

চিকিৎসাঃ দৈনিক তিন-চারবার গরম সেক দেয়া উচিত। রোগীকে রোদচশমা ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে হবে। ১% এট্রোপিন আই ড্রপ বা অয়েন্টমেন্ট দৈনিক তিনবার ব্যবহার করতে হবে। আক্রান্ত চোখটিকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। প্রদাহকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য হাইড্রোকটিসোন আই ড্রপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা ড্রপ এবং অয়েন্টমেন্ট দু’ভাবেই প্রয়োগ করা হয়। তা ছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা, ব্যথার জন্য ব্যথানাশক ওষুধ সেবন, বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণ বন্ধের জন্য এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন এবং অবস্থা জটিল হলে সাবকনজাংটিভাল স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দেয়া হয়।

জটিলতাঃ বিভিন্ন জটিলতার মধ্যে চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বৃদ্ধি পাওয়া, সাইনেকিয়া, চোখের ছানি তৈরি হওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
মোবাইলঃ ০১৯২০৩৩৮৩৭২

ডায়াবেটিসে চোখের সমস্যাঃ গ্লকোমা
ডাজ্ঝ মোজ্ঝ শফিকুল ইসলাম
সহযোগী অধ্যাপক, চক্ষুবিশেষজ্ঞ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

চোখের স্বাভাবিক আকৃতি বজায় রাখা এবং সঠিকভাবে দেখার জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় অভ্যন্তরীণ চাপ প্রয়োজন। এই চাপ বজায় রাখার জন্য চোখে এক ধরনের জলীয় পদার্থ নিঃসৃত হয়ে থাকে। সংক্ষেপে যাকে বলে ‘অ্যাকুয়াস’। অ্যাকুয়াস অন্তশ্চাপ বজায় রাখা ছাড়াও চোখের বিভিন্ন কোষকলায় কিছুটা পুষ্টি জুগিয়ে থাকে।
চোখের স্বাভাবিক চাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য অ্যাকুয়াসের নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন ও প্রবাহ প্রয়োজন। প্রবাহ আবার নির্ভর করে নির্গমনের ওপর।
নির্গমনপথে কোনো বাধার সৃষ্টি হলে অ্যাকুয়াস চোখের ভেতর জমা হতে থাকে। ফলে চোখের অন্তশ্চাপ বেড়ে যায়, যা চোখের জন্য ক্ষতিকর। চোখের ওই অভ্যন্তরীণ চাপ বৃদ্ধির জন্য দেখতে অসুবিধা হলে তাকে ‘গ্লকোমা’ বলা হয়।
গ্লকোমা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। ডায়াবেটিসের সঙ্গে দুই ধরনের গ্লকোমার সম্পর্ক রয়েছে-প্রাইমারি ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লকোমা ও নিউভাসকুলার গ্লকোমা।

প্রাইমারি ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লকোমা
প্রাইমারি ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লকোমায় দৃষ্টিশক্তি আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যায়। চোখে কোনো ব্যথা বা তীব্র উপসর্গ থাকে না। ফলে রোগী বুঝতেই পারে না যে তার মারাত্মক ধরনের এ রোগটি রয়েছে।
নিয়মিত চোখ পরীক্ষার মাধ্যমেই শুধু এ রোগটির প্রাথমিক পর্যায়ে কার্যকর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব, যা দৃষ্টি হ্রাসের আশঙ্কা থেকে মুক্ত রাখতে পারে। আমাদের দেশে নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষার ব্যবস্থা বা সচেতনতা না থাকার ফলে অধিকাংশ রোগী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে দৃষ্টি হ্রাসের শেষ পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য আসেন।
দেখা যায়, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের গ্লকোমা হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের সময় সময় অন্তশ্চক্ষুচাপ পরিমাপ করিয়ে নেওয়া উচিত। অন্যদিকে যাঁরা গ্লকোমার রোগী তাঁদেরও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই অনেক ক্ষেত্রে গ্লকোমায় আক্রান্ত রোগীর রুটিন চেকআপে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।
তাই গ্লকোমা রোগীর ডায়াবেটিসের উপসর্গ না থাকলেও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নির্ণয় করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট বা জিটিটি করিয়ে নিতে হবে।

নিউভাসকুলার গ্লকোমা
দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস থাকলে এবং তা অনিয়ন্ত্রিত থাকলে চোখের ভেতর এক ধরনের দুর্বল, অস্বাভাবিক রক্তনালিকার উদ্ভব হয়।
এসব রক্তনালিকা অনেক সময় অ্যাকুয়াসের নির্গমনপথে সৃষ্ট হয়ে স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে। নির্গমনপথে উদ্ভূত এসব রক্তনালিকা নির্মূল করা খুবই কষ্টকর।
কিন্তু এসব রক্তনালিকার জন্য চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়ার ফলে যে গ্লকোমা হয়, তার নাম নিউভাসকুলার গ্লকোমা। এই রোগের পরিণতি নিশ্চিত অন্ধত্ব।
তাই যাতে এ ধরনের গ্লকোমায় আক্রান্ত হতে না হয়, এর জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অর্থাৎ ডায়াবেটিসের সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই।
শেষ কথা
ডায়াবেটিসের জটিলতা চোখের পাতা থেকে শুরু করে পেছন দিকে, বিভিন্ন কোষকলায় দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই চোখের সমস্যার সঙ্গে ডায়াবেটিসের পরিচিত উপসর্গের সরাসরি সম্পর্ক থাকে না।
তাই অনেকটা অগোচরেই এ রোগটি দীর্ঘ সময় ধরে দেহে অবস্থান করে বিভিন্ন জটিলতা প্রকাশ করতে পারে।
ফলে বিভ্রান্ত হতে পারেন রোগী ও চিকিৎসক উভয়েই। আবার অনেক সময়ই ডায়াবেটিসের রোগীরা সাধারণ চিকিৎসকদের (বিশেষজ্ঞ নন) অধীনে থাকেন।
চোখের পরিবর্তন বা জটিলতাগুলো তাঁদের মাধ্যমে নিরূপিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীর উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো উপসর্গও থাকে না।
ফলে দেখা যায়, চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে যখন রোগী আসেন, তখন পুরোপরি কার্যকর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। আমাদের দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ডায়াবেটিসের রোগী চোখের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুসংস্কার ইত্যাদির জন্য অনেক রোগী আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
ফলে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক রোগী অকাল-অন্ধত্বের শিকার হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ ডায়াবেটিস একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ।
রোগীদের পূর্ণ সচেতনতা ও চিকিৎসার সহজ সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে চোখের বিভিন্ন জটিলতা প্রতিরোধ সম্ভব। এ ব্যাপারে সবারই সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।

ছানির চিকিৎসায় ম্যানুয়াল ফ্যাকো
ডাজ্ঝ মোজ্ঝ শফিকুল ইসলাম
চক্ষু বিশেষজ্ঞ
বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

ঘটনা
স্বল্প আয়ের চিত্রশিল্পী তিনি। মফস্বলে থাকেন। দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে বেশ কিছুদিন হলো। চোখের চিকিৎসক দেখিয়ে জানতে পেরেছেন, চোখে ছানি পড়েছে। অস্ত্রোপচার করাতে হবে।
চিকিৎসকেরা বলেছেন, ‘ফ্যাকো করালে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাগবে।’ তাঁরা আরও বলেছেন, ‘ইদানীং ছানির অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে এক ধরনের লেন্স বেরিয়েছে, যা ব্যবহার করলে চশমার প্রয়োজনই পড়ে না! তবে এতে খরচ পড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।’ সেই বিশেষজ্ঞ (!) চিকিৎসকের মুখের দিকে বি্নয়ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন তিনি। এ দেশেও ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে মানুষ ছানির অস্ত্রোপচার করায়!
চোখে অপ্রত্যাশিত ছানি পড়ার জন্য দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন তিনি। এবার কৌতূহলভরে চিকিৎসকের কাছে জানতে চান, ‘সত্যই কি ছানির অস্ত্রোপচারের পর কোনো চশমা লাগে না?’ এবার চিকিৎসক কথা ঘুরিয়ে বলেন, ‘না, তেমন একটা লাগে না।
তবে যারা পড়াশোনা করে বা নিকটদৃষ্টির কাজ করে, তাদের সামান্য পাওয়ারের চশমা লাগে।’ এবার চিত্রশিল্পী বিভ্রান্তিতে পড়েন। একটু আগেই চিকিৎসক বলছিলেন, ‘কোনো চশমাই লাগে না’, এখন বলছেন ‘লাগে’; তাহলে কোনটা সঠিক? তাঁর সাহস হয় না চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করে বিষয়টি আরও খোলাসা করে নিতে। এ ছাড়া নিজের সামর্থেøর বিষয়টিও মাথায় আসে। তিনি ভেবেছিলেন, হাজার দুয়েকের ভেতর চোখের চিকিৎসা সম্পন্ন করবেন; সেখানে ২০ হাজার টাকা জোগাড় করা তাঁর পক্ষে দুরূহ।
ছানির অস্ত্রোপচারের জন্য এত টাকা আসলেই কি প্রয়োজন? এ ছাড়া বেশি টাকা দিয়ে অস্ত্রোপচার করালেই চোখে ভালো দেখবেন-এ ধরনের ধারণা কি ঠিক? আমাদের দেশে ইদানীং চিকিৎসাসেবা যেন পণ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। বাজার-অর্থনীতির অনুষঙ্গ চিকিৎসাজগতের দুষ্ট গ্রহের মতো উপস্থিত। গণমাধ্যমে প্রচারিত টক শো, পত্রিকার বিজ্ঞাপন ইত্যাদি থেকে ‘ফ্যাকো’ শব্দটি বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। চোখের চিকিৎসকেরাও তাঁদের ডিগ্রির সঙ্গে ‘ফ্যাকো সার্জন’ শব্দযুগল জুড়ে দিয়েছেন। ছানির অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রচারণায় মানবিক দৃষ্টিকোণে রোগীর প্রয়োজনের বিষয়টি দারুণভাবে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। ‘ফ্যাকো’ (চভথধস) শব্দের অর্থ লেন্স। অংশীদারের চোখের ভেতরের লেন্সের গ্রিক নাম হচ্ছে ‘ফ্যাকো’।
ফ্যাকো সার্জন সেই হিসেবে চোখের লেন্সের সার্জন। স্বাভাবিক অবস্থায় চোখের ভেতরের লেন্স স্বচ্ছ থাকে। এই লেন্সের অস্বচ্ছ অবস্থাকে ছানি বলা হয়। সে হিসেবে ছানির অস্ত্রোপচারের চিকিৎসক ‘ফ্যাকো সার্জন’ হিসেবে অভিহিত হতে পারেন।
ছানির অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। আলট্রাসাউন্ড পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ছানিটাকে গুলিয়ে বের করে আনার নাম ফ্যাকোইমালসিফিকেশন। যন্ত্রের মাধ্যমে ছানির অস্ত্রোপচারের এ পদ্ধতি যাঁরা ব্যবহার করেন, তাঁরা নিজেদের ‘ফ্যাকো সার্জন’ হিসেবে পরিচিত করেছেন; আর যন্ত্রটি ‘ফ্যাকো মেশিন’-এ রূপান্তরিত হয়েছে। এই যন্ত্রের বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বিভিন্নভাবে প্রচারের মাধ্যমে এ অস্ত্রোপচারকে সর্বাধুনিক পদ্ধতি আখ্যা দিয়ে আসছেন। প্রযুক্তিগত দিক থেকে ফ্যাকোইমালসিফিকিশেন যে আধুনিক, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু একে যেভাবে উপস্থাপন করে মুনাফা অর্জনের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য নয়।
কেননা ছানির অস্ত্রোপচারের অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ ছাড়া ফ্যাকোইমালসিফিকেশনই একমাত্র সেলাইবিহীন অস্ত্রোপচার নয়, সেলাইবিহীন বিকল্প পদ্ধতিও রয়েছে। ভারতসহ অনেক দেশেই সেই পদ্ধতি ম্যানুয়াল ফ্যাকো নামে পরিচিতি। এ পদ্ধতি ওইসব দেশে ব্যবহার করে অসংখ্য রোগীর দৃষ্টি ফেরানো গেছে। আমাদের দেশেও এ পদ্ধতিতে ছানির অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো প্রচার নেই। ভারতের বিশ্বখ্যাত অরবিন্দ চক্ষু হাসপাতালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্যাকো সার্জারিতে প্রতি অস্ত্রোপচারে যন্ত্রপাতির ব্যয় এক হাজার ২০০ রুপি, সেখানে ম্যানুয়াল ফ্যাকোতে ব্যয় মাত্র ৪৬ রুপি।
এ পদ্ধতি কথিত ফ্যাকো সার্জারির মতো সেলাইবিহীন, দৃষ্টি-প্রদায়ক। এটি উন্নয়নশীল বিশ্বে ছানির চিকিৎসায় খুলে দিয়েছে নতুন দিগন্ত।
এ পদ্ধতি ফ্যাকো সার্জারির চেয়ে তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ। ফ্যাকো সার্জারিতে যেসব জটিলতা হয়ে থাকে, ম্যানুয়াল ফ্যাকোতে তা ওই মাত্রায় হয় না। এ পদ্ধতিতে সরকারি হাসপাতালে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে সার্জারির পুরো ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব, যা ইনস্ট্রুমেন্টাল ফ্যাকো সার্জারিতে চিন্তাই করা যায় না।
বাংলাদেশে ম্যানুয়াল ফ্যাকো সার্জারি লাগসই প্রযুক্তি, যা দেশের লাখ লাখ ছানিজনিত অন্ধজনের চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ফ্যাকো সার্জারির জন্য জনপ্রতি যে ব্যয় হয়, তা দিয়ে ৩০ জন ছানি রোগীর চিকিৎসা এ পদ্ধতিতে সম্ভব।
অর্থাৎ একটি ফ্যাকো সার্জারির ব্যয় দিয়ে ৩০ জন পরিবারপ্রধানের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ৩০টি পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সম্ভব। এই সাধারণ তথ্যটি মানুষের কাছে এত দিনে পৌঁছানোটা কি ঠিক হয়েছে?
শেষ কথা
শুরুতে উল্লিখিত রোগীর চোখে ম্যানুয়াল ফ্যাকো করা হয়েছে। শেষ পর্যêন্ত সরকারি হাসপাতালে সব মিলিয়ে এক হাজার টাকার অস্ত্রোপচার করিয়ে পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে ঘরে ফিরেছেন তিনি। এত অল্প টাকায় যে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব, তা কিছুদিন আগেও ছিল তাঁর ধারণার বাইরে। আসুন না, সবাই মিলে এ রকম অসংখ্য রোগীর দৃষ্টি ফেরানোর কাজে শামিল হই!

চোখের যত সমস্যা

প্রশ্নঃ চশমা বানাবার পর তা কি আবার চড়্গু বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীড়্গা করানো উচিত?

উত্তরঃ হ্যাঁ। চশমা বানাবার পর আবারো তা পরীড়্গা করানো উচিত। চশমা আসলে একটি জটিল বিষয়। চশমা দেবার সময় কম্পিউটারে চড়্গু পরীড়্গা বা ম্যানুয়াল চড়্গু পরীড়্গা করে আবার রোগীকে অড়্গর পড়িয়ে পাওয়ার কনফার্ম করা হয়। ঐ পাওয়ারটি চশমার প্রেসক্রিপশনে লেখা হয়। চশমার দোকানে ঐ প্রেসক্রিশন দেখে পাওয়ার তৈরি করেন এবং ফিটিং এর জন্য পাঠান। সুতরাং এতগুলো ধাপ পার হয়ে আসার সময় কোথাও কোন ভুল হলো কিনা সেটা দেখার জন্য চড়্গু বিশেষজ্ঞ বা তাঁর কোন সহযোগীকে দিয়ে পাওয়ার মাপার যন্ত্র ‘লেন্সমিটার’ এ পরীড়্গা করা উচিত।

চশমা একবার পরলে তা কি আবার ছাড়া যায়?

উত্তরঃ অনেকেই মনে করেন-চশমা একবার পরলে আর ছাড়া যায় না। আসলে কার চশমা লাগবে, কখন ছাড়া যাবে-এসবই নির্ভর করে ঐ ব্যক্তির পাওয়ার এর উপর। অনেক শিশুকে ছোটবেলায় মাথা ব্যথার জন্য সামান্য পাওয়ার দেয়া হয়। কিছুদিন ব্যবহারের পর তা নাও লাগতে পারে। অনেক শিশুর ছোটবেলায় পস্নাস পাওয়ার লাগতে পারে, বড় হতে হতে তার ঐ পাওয়ার আর নাও লাগতে পারে। বেশিরভাগ শিশুই স্কুলে গিয়ে প্রথম ধরা পড়ে-দূরে বস্নাকবোর্ড দেখতে পারছে না।

এদেরকে মাইনাস পাওয়ার দেবার প্রয়োজন হয়। এরা যত বড় হবে-শরীরের সাথে সাথে চোখের আয়তনও বড় হয়। তখন চোখের পাওয়ারও স্বাবাবিক এর তুলনায় বেড়ে যায়। এদেরকে তখন ভালো দেখতে গেলে অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া পাওয়ার মাইনাস করতে হয় এবং চশমা অনেকদিন পরার প্রয়োজন হয়।

শিশু হোক বা বড় হোক, চোখ পরীড়্গা করে পাওয়ার এর প্রয়োজন হলে তা অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত। তা না হলে চোখের রেটিনার উন্নতি হবে না এবং ৬/৬ দৃষ্টি তৈরি হবে না।

ডাঃ এম নজরম্নল ইসলাম

সহযোগী অধ্যাপক, চড়্গু বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা

চশমা বদলাতে চাইলে
ডা· মো· শফিকুল ইসলাম
সহযোগী অধ্যাপক, চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রয়োজন যখন ডায়াবেটিক রোগীর
‘ডায়াবেটিস’ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের চিনির ওঠানামার সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি পরিবর্তিত হয়। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর চশমা নেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়া জরুরি-
১·
চশমা নেওয়ার আগে সুগার বা চিনির মাত্রা নির্ণয় করে নিতে হবে। রক্তে চিনির মাত্রা বেশি হলে সে মুহূর্তে চশমা বদল করা উচিত হবে না। কেননা সেই সময় থেকে চশমা-পরবর্তী সময়ে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রিত হওয়ার পর তা দৃষ্টিশক্তির সঙ্গে খাপ খাবে না।
২·
রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। এ ক্ষেত্রে একদম স্বাভাবিক পর্যায়েই যে চিনির মাত্রা থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।
তবে তা ১০ মিলিমল/লিটারের নিচে হতে হবে। খালিপেট ও ভরাপেটে রক্তে চিনির মাত্রার পার্থক্য চার মিলিমল/লিটারের ভেতর থাকা ভালো।
৩·
আপনার ঘরে যদি গ্লুকোমিটার থেকে থাকে তাহলে চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার আগমুহূর্তে রক্তে চিনির মাত্রা জেনে নিন এবং তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে জানান।
পরীক্ষার্থীর যখন চশমা বদলানো প্রয়োজন
চোখ ও মাথাব্যথায় আক্রান্ত হলে পরীক্ষার্থী সন্তানকে নিয়ে মা-বাবার দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ছেলেমেয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কোচিং সেন্টার থেকে ফিরে এসেই মা-বাবার কাছে মাথাব্যথা উপসর্গের কথা জানায়। ‘দূরে দেখা যায় না’, ‘সামান্যক্ষণ’ পড়াশোনা করলেই মাথাব্যথা হয়, ‘মনোযোগ থাকে না’ ইত্যাদি উপসর্গের কথা বলে থাকে। এসব ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে মা-বাবা তাদের চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফলপ্রসূ চিকিৎসা পাওয়া যায় না।
কী করবেন
কোচিং সেন্টার থেকে ফিরে আসার বা গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া শেষ করার পরপরই চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাবেন না। কেননা এ সময় ছেলেমেয়েদের চোখ তখন ক্লান্ত থাকে। ক্লান্ত চোখের অন্তঃস্থিত পেশি স্বাভাবিক অবস্থায় না থাকায় সে সময় চোখে এক ধরনের দৃষ্টিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ সময় চশমা নেওয়া হলে তা সঠিক মাত্রার হবে না। ফলে আপনার সন্তানের উপসর্গগুলো ভালো হবে না।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে আপনার সন্তানের চোখের বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দিন। প্রয়োজনে যেদিন তাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাবেন, সেদিন কোচিং সেন্টারে যাওয়া বা ঘণ্টা দুয়েকের জন্য পড়াশোনা থেকে বিরত রাখুন। প্রয়োজনে তাকে ঘুমোতে দিন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে প্রথম দিকে যাতে দেখাতে পারেন সে জন্য আগেই নাম তালিকাভুক্ত করুন। অর্থাৎ পরীক্ষার্থী নিয়ে দীর্ঘ ‘সিরিয়ালের’ পরিবর্তে প্রথম দিকেই পরামর্শ নিন। এতে আপনার সন্তানের চোখের পরীক্ষাটাও ভালো হবে।