প্রাথমিক পর্যায়ে এলার্জি ও অ্যাজমা রোগ নির্ণয়
ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস
লেখকঃ এলার্জি ও অ্যাজমা রোগ বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান, এলার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা। মোবাইলঃ ০১৭২১ ৮৬৮৬০৬
ছয় বছর বা তার কাছাকাছি বয়সের সন্তানের পিতা মাতা তাদের শিশুদের অসুখ প্রসঙ্গে নিচের কথাগুলো প্রায়ই বলে থাকেন।
আমার ছেলের ঘন ঘন সর্দি হয়। সারতে সময় লাগে কয়েক সপ্তাহ। এর বন্ধুদেরও সর্দি হয়। তবে ওরা খুব তাড়াতাড়ি সেরে ওঠে। আমার ছেলে সুস্থ হয় খুব ধীরে ধীরে। আর সর্দি সেরে যাওয়ার পরপরই ওর কানে ইনফেকশন হয়, কাশি থাকে এবং বুকে শন শন শব্দ হয় কয়েক সপ্তাহ ধরে। ওর বয়স যখন ১২ মাস, তখন থেকেই ওর এসব অসুবিধা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া তিন বছর বয়স পর্যন্ত সে খারাপ ধরনের একজিমায় আক্রান্ত ছিল।
এ ধরনের শিশু শ্বাসতন্ত্রের অসুখ নিয়ে প্রায়ই ডাক্তারের কাছে আসে। তাদের অনেকেরই এসব উপসর্গের মূল কারণ হয়ে থাকে এলার্জি এবং অ্যাজমা।
শিশুদের অ্যাজমা ও এলার্জি শনাক্ত করতে হলে ডাক্তার এবং শিশুর অভিভাবকদের পাস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। পারিবারিক চিকিৎসা হয়তো শিশুকে এলার্জি-ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাতে পারেন। বিশেষজ্ঞের কাছে রোগের অনুপুঙ্খ ইতিহাস বলার পাশাপাশি পরিবারের অন্য কারো এলার্জি বা অ্যাজমা থাকলে সে কথাও জানাতে হবে।
পাঁচ বছরের নিচের শিশুর অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না তা ধারণা করার নির্দিষ্ট গাইডলাইন আছে। এ ধারণা করা যায় কিছু বড় লক্ষণ এবং কিছু ছোট লক্ষণকে একত্রে মিলিয়েঃ
ষ কম বয়সে বুকে সাঁই সাঁই শব্দ (এক বছরে অন্তত তিনবার এমনটি ঘটেছে, প্রতিবার কমপক্ষে ১ ঘণ্টা করে এটি থেকেছে এবং শিশুর নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটেছে)।
এর সাথে থাকতে হবে দু’টি বড় লক্ষণের মধ্যে কমপক্ষে একটির উপস্থিতি অথবা তিনটি ছোট লক্ষণের মধ্যে কমপক্ষে দু’টির উপস্থিতি।
বড় লক্ষণ বা প্রধান লক্ষণ
বাবা মায়ের অ্যাজমা
এটোপিক ডারমাটাইটিস (একজিমা)
ছোট লক্ষণ বা অপ্রধান লক্ষণ
এলার্জিক রাইনাইটিস (হে ফিভার)।
রক্তের মধ্যে এলার্জি কোষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া।
সর্দি বা ভাইরাস সংক্রমণ ছাড়াই বুকের সাঁ সাঁ শব্দ।
পারিবারিক রোগের ইতিাহস ছাড়াও জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত শিশুর সব অসুখের তথ্য সবিস্তারে জেনে নিতে হবে। বিশেষ করে খোঁজ নিতে হবে গলাফোলা, ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া হয়েছিল কি না। পিতা মাতা কোনো কিছুকে শিশুর অসুখের কারণ বলে মনে করেন কি না। শিশুকে ইতোমধ্যে কোন কোন ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে তার পূর্ব তালিকা সংগ্রহ করতে পারলে খুব ভালো হয়। এটাও জানতে হবে যে ওষুধ ব্যবহার করে উপকার পাওয়া গিয়েছিল কি না। কিংবা কোনো ওষুধ থেকে শিশুর কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছিল কি না।
অসুস্থতার ইতিহাস জানার পর ডাক্তার রোগীকে শারীরিক পরীক্ষা করবেন। তিনি দেখবেন শরীরে এলার্জি ও অ্যাজমার নিØোক্ত চিহ্নগুলো আছে কি না
ত্বকঃ শুষ্ক, লালচে, চুলকানি বা চুলকানির দাগ।
ফুসফুসঃ সাঁই সাঁই শব্দ, কাশি, নিঃশ্বাসের শব্দে কোনো অস্বাভাবিকতা, শ্বাসবায়ু প্রবাহের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য।
বুকঃ ঠেলে ওঠা বুক, বা কাঁধের ফোলা মাংসপেশি যা নিঃশ্বাসের কষ্টের কারণে হয়ে থাকে।
চোখ, কান, নাক, গলাঃ লাল চোখ, চোখ থেকে পানি ঝরা, নাকের পাটা ফুলে থাকা, নাক থেকে নিঃসৃত সর্দির বর্ণ ও পরিমাণ, টনসিলের আকার ও রঙ, ঘাড়ে কোনো নাসিকাগ্রন্থি ফোলা কি না।
এসব ছাড়াও থাকতে পারে হাঁচি, নাকটানা, চোখ ও নাক বারবার ডলাডলি করা, চোখের নিচে কালো দাগ পড়া।
শারীরিক পরীক্ষার শেষে যদি চিকিৎসক শিশুটির এলার্জি আছে বলে সন্দেহ করেন, তাহলে তিনি তার পরিবেশের বিশদ তথ্য নিতে চেষ্টা করবেন। যেমন
দিনের অধিকাংশ সময় শিশুটি কোথায় থাকে? (বাড়িতে, ডে কেয়ারে, প্রাক স্কুল শিক্ষালয়ে, কোনো আত্মীয়দের বাড়িতে, ইত্যাদি)।
ওই জায়গায় কোনো গৃহপালিত পশু-পাখি আছে কি না।
তার পাশে কেউ ধূমপান করে কি না।
অন্য কোনো জিনিস, যা এলার্জি বাড়িয়ে দিতে পারে, সেগুলোর সংস্পর্শ আছে কি না।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাজমা আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে শতকরা ৮৫ জনই এলার্জি স্কিন টেস্টে পজিটিভ হয়েছে। এলার্জি স্কিন টেস্ট এখন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত। এ ক্ষেত্রে শিশুর ত্বকে সন্দেহভাজন অ্যালার্জেনগুলোকে প্রিক-এর মাধ্যমে দিয়ে দেয়া হয়। যদি শিশু ওই এলার্জেন দ্বারা প্রভাবিত থাকে, তাহলে ১০-২০ মিনিটের মধ্যে ত্বকে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
ছয় থেকে আট বছরের শিশুদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা পরিমাপ করার জন্য স্পাইরোমেট্রি একটি নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা।
প্রথামিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হলে এলার্জি ও অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হয়।
শীতে নাকের অ্যালার্জি
লেখকঃ সহযোগী অধ্যাপক (নাক কান গলা), চেম্বারঃ ইনসাফ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, ১২৯ নিউ ইস্কাটন, ঢাকা। মোবাইলঃ ০১৭১৬৩০৬৬৩১
নাকের অ্যালার্জি অনেকের কাছেই একটি পরিচিত সমস্যা। ছোট-বড় সবাই এ সমস্যায় ভুগতে পারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১০ শতাংশ মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় নাকের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। নাকের অ্যালার্জির এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়ে থাকে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস কথার অর্থ হচ্ছে অ্যালার্জিজনিত নাকের প্রদাহ।
নাকের অ্যালার্জি কেন হয়, কিভাবে হয়
মূলত শ্বাসের সাথে নাসারন্ধ্রে ঢুকে যাওয়া অ্যালার্জি উদ্রেককারী বস্তুকেই অ্যালার্জির প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। তবে অ্যালার্জি উদ্রেককারী খাবার গ্রহণের কারণে নাকের অ্যালার্জি হওয়ার ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। শ্বাসের সাথে নাকের মধ্যে ঢুকে পড়া অ্যালার্জি উদ্রেককারী এই বস্তুকে বলা হয় অ্যালার্জেন। এই অ্যালার্জেন বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ও এর প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে নাকে অ্যালার্জিজনিত উপসর্গ সৃষ্টি করে থাকে। ফলে নাকে চুলকানি বা অস্বস্তি, নাকের ঝিল্লি ফুলে যাওয়া ও লালাভ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি ঝরা ইত্যাদি দেখা যায়। অনেক সময় একটু দেরিতে এ কারণে শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে। তবে নাকের এই অ্যালার্জি কার কিসে হচ্ছে বা কী কারণে হচ্ছে বুদ্ধিমান বা বুদ্ধিমতী রোগীরা তা সহজেই বুঝে নিতে পারেন। যেমন অনেককেই বলতে শোনা যায়, ধুলাবালিতে গেলেই কিংবা শীতের সময় ঠাণ্ডা হাওয়া নাকে লাগলেই তার এই অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। বিষয়টা একটু সচেতনভাবে লক্ষ করলেই বের করা সম্ভব।
সব ঋতুতেই বিভিন্ন ফুলের পরাগরেণু উড়ে বেড়ায় এবং ফাঙ্গাসের স্পোর বা বীজ বেশি বেশি সংস্পর্শে আসার সুযোগ পায়। এসব অ্যালার্জিতে আক্রান্ত রোগীর নাক-চোখ চুলকায়, হাঁচি হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে এবং শেষে নাক বন্ধ হয়ে থাকে। এ ছাড়া ঘরবাড়ির ধুলায় অবস্থিত মাইটের মল থেকে এ ধরনের নাকের অ্যালার্জি প্রায় সারা বছর ধরেই হতে পারে। তবে মাইটের সাথে ঘরবাড়ির অন্যান্য ধুলা, পাখির পালক, পশুর লোম থেকেও এ ধরনের অ্যালার্জি হয়ে থাকে। এ ধরনের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত রোগীদের নাসারন্ধ্রের পার্শ্ববর্তী মাংসপিণ্ড (ইনফিরিয়র টারবিনেট) ফুলে বড় হয়ে যায়। অনেকে এটিকে নাকের পলিপ বলে ভুল করে থাকেন।
নাক পর্যবেক্ষণঃ যদিও উপসর্গ থেকেই নাকের অ্যালার্জি সম্পর্কে অনেকটা ধারণা নেয়া যায়। তারপরও নাক পর্যবেক্ষণ করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার দরকার আছে। এ ক্ষেত্রে নাক পর্যবেক্ষণ করে তীব্র অবস্থায় নাকের ভেতরে ভেজাভাব, ফোলা ও ফ্যাকাসে ঝিল্লি, নাসারন্ধ্রের পার্শ্ববর্তী মাংসপিণ্ড ফুলে বড় হওয়া ইত্যাদি দেখা যায়।
দীর্ঘদিনের অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় নাসারন্ধ্রের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে হাল্কা গোলাপি রঙের ফুলে বড় হওয়া মাংসপিণ্ড দেখা যায়, যার পেছনের দিকটা ফুলে থাকে।
ল্যাব টেস্টঃ দুয়েকটা ল্যাবরেটরি টেস্ট এ ক্ষেত্রে করা যায়। যেমন ইমিউনোলজিক্যাল টেস্ট (অ্যান্টিজেনিক চ্যালেঞ্জ, ইয়োসিনোফিল কাউন্ট এবং আইজি-ই মাত্রা)।
কেমন হবে চিকিৎসাঃ কিছু নিয়ম মেনে চলা, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং কিছু ওষুধপত্রের মাধ্যমে অ্যালার্জিজনিত নাকের সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। নাকের এই অ্যালার্জি পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব হয় না। কারণ এর সাথে অ্যালার্জেনের উপস্থিতির বিষয়টি জড়িত। অ্যালার্জেনকে কখনোই এই পরিবেশ থেকে চিরতরে নির্মূল করা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি অ্যালার্জেনকে সব সময় এড়িয়ে চলাও প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবে সবকিছু মিলিয়ে ভালো থাকা কোনো কঠিন বিষয় নয়।
অ্যালার্জি উদ্রেককারী বস্তু এড়িয়ে চলাঃ অ্যালার্জি উদ্রেককারী বস্তু বা অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলার পূর্বশর্ত হচ্ছে, কোন জিনিসে অ্যালার্জির উদ্রেক হচ্ছে সেটি বের করা। ঘরবাড়ির ধুলার কারণে অ্যালার্জি দেখা দিলে ঘর পরিষ্কার, ধুলামুক্ত রাখতে হবে। প্রয়োজনে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ঘর ধুলামুক্ত রাখতে হবে। দরকার হলে ধুলার উৎস কার্পেট সরিয়ে ফেলতে হবে, বিছানার চাদর নিয়মিত ধুতে হবে, ঘরটিকে একটু খোলামেলা রাখতে হবে, যাতে ঘরের আর্দ্রতা কম থাকে।
ওষুধপত্রঃ ওষুধপত্র দেয়া হয় উপসর্গ অনুযায়ী। অ্যান্টিহিস্টামিনজাতীয় বিভিন্ন ওষুধের যে কোনোটি উপযুক্ততা বিচার করে ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়া রয়েছে সরাসরি অ্যালার্জিরোধক কিছু ওষুধ। এগুলো কারো বেলায় বেশ ভালো কাজ করে। অ্যালার্জির কারণে নাক বন্ধ হলে নাক বন্ধ প্রতিরোধক ওষুধও সাথে ব্যবহার করতে হয়। অনেক সময় নাকে স্টেরয়েডজাতীয় স্প্রে নাকের অ্যালার্জি সমস্যায় ব্যবহার করতে হয়। এজাতীয় স্প্রে একটু বেশি সময় ধরে ব্যবহার করতে হয়। এগুলো রক্তে খুব একটা শোষিত হয় না বলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম। তবে ৫-৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের এ স্প্রে ব্যবহারের ব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে।
মুখে খাওয়ার স্টেরয়েড এবং স্টেরয়েড ইনজেকশন গ্রহণের ব্যাপারে এখন আর তেমন উৎসাহিত করা হয় না। একইভাবে এ ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন খুব একটা কার্যকর নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। নাকের অ্যালার্জির জন্য কার্যকর কোনো অপারেশন নেই। তবে নাসারন্ধ্রের পার্শ্ববর্তী মাংসপিণ্ড ফুলে বড় হয়ে নাক বন্ধ হয়ে গেলে সেই মাংসপিণ্ডগুলো ডায়াথারমি করে কিংবা ছোট ছোট করে দেয়ার দরকার হয়।
একজন নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে নাকের অ্যালার্জিজনিত সমস্যার চিকিৎসা ধৈর্যসহ গ্রহণ করা উচিত। চিকিৎসায় শুধু ওষুধের ওপর নির্ভর করলেই চলবে না। অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন করতে হবে।
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণের কলাকৌশল
গতকাল ৬ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হলো বিশ্ব হাঁপানি দিবস ২০০৮। গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ ফর অ্যাজমা (জিআইএনএ) প্রতিবছর এ দিবস পালনের আয়োজন করে থাকে। উদ্দেশ্য হলো, বিশ্বজুড়ে হাঁপানি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও এর পরিচর্যাকে জোরদার করা। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হলো-‘নিজের হাঁপানি নিজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়’। বিশ্ব হাঁপানি দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্যকুশল-এর বিশেষ আয়োজন।
ডা· মো· দেলোয়ার হোসেন
মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ ও বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
অ্যাজমা বা হাঁপানি হলো শ্বাসনালির দীর্ঘস্থায়ী ও প্রদাহজনিত একটি রোগ। এ রোগটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত। বিশ্বের প্রায় ২০ কোটি লোক এতে আক্রান্ত। প্রতিবছর প্রায় দুই লাখ লোক এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আমাদের দেশে ৭০ লাখ লোক এ রোগে ভুগছে। তাদের ৫০ শতাংশের বয়সই ১৫ বছরের নিচে। যদিও গত দুই দশকে অ্যাজমা রোগের চিকিৎসায় অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে, এর প্রদুর্ভাব ও তীব্রতা এবং এ রোগের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলেছে। যদিও দারিদ্র্য, অশিক্ষা, পরিবেশদূষণ ও অপর্যাপ্ত চিকিৎসাব্যবস্থাকে দায়ী করা হয় কিন্তু রোগের সঠিক নির্ণয় না হওয়া, রোগের তীব্রতা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ না করা, অপর্যাপ্ত বা ভুল চিকিৎসা এবং চিকিৎসায় রোগীর অনীহা যথেষ্ট দায়ী। যদিও আপাতদৃষ্টিতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব উন্নত দেশেই বেশি, তবে জনসংখ্যার অনুপাতে এ রোগ আমাদের দেশেও কম নয়।
হাঁপানি কেন হয়
হাঁপানি যেকোনো বয়সের নারী বা পুরুষের হতে পারে। এটা শ্বাসনালির একটা প্রদাহজনিত রোগ। সংক্রামক বা ছোঁয়াচে নয়। প্রদাহজনিত কারণে শ্বাসনালির সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। ফলে ঘন ঘন কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, আওয়াজ, বুকে চাপ বা দম নিতে কষ্ট হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যদি সঠিকভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা না নেওয়া হয়, তাহলে এ রোগে অনেক সময় মৃত্যুও হতে পারে।
হাঁপানির সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। এ রোগের জন্য কোনো কিছুকে এককভাবে দায়ী করা যায় না। গবেষণায় দেখা গেছে, কারও কারও বংশগত কারণে বা পরিবেশগত কারণেও এ রোগ হতে পারে। কারও নিকটাত্মীয় যদি এতে আক্রান্ত থাকে বা কেউ যদি বিভিন্ন দ্রব্যের প্রতি অতিমাত্রায় অ্যালার্জিক হয় তাহলে তার হাঁপানি হতে পারে। এ ছাড়া শ্বাসনালি যদি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়, এ রোগ হতে পারে।
এ ছাড়া ধুলোবালির মধ্যে থাকা মাইট নামের ক্ষুদ্র কীট, ফুলের পরাগরেণু থেকে; পশুপাখির পালক, ছত্রাক, মল্ট, ইস্ট, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে যারা থাকে তাদের এ রোগ হতে পারে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সিগারেটের ধোঁয়া শুধু শ্বাসকষ্টের কারণই নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রেই এটা হাঁপানির তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। হাঁপানির ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, কখনো কখনো ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী কার্যক্ষমতাও কমে যায়।
কখনো কখনো ব্যক্তির পেশাগত কারণেও এ রোগটি হতে পারে। কিছু উত্তেজক উপাদান বা ট্রিগার ফ্যাক্টর অনেক সময় সংবেদনশীল রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু করতে পারে-যেমন শ্বাসনালির সংক্রমণ, অ্যালার্জি-জাতীয় বস্তুর সংস্পর্শ, বায়ুদূষণ, সিগারেটের ধোঁয়ার কারণেও এটি হতে পারে। কোনো কোনো ড্রাগ, যেমন বিটা ব্লকার, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়, এনএসএআইডি (ব্যথা নিরাময়কারী ওষুধ) এসপিরিন কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাঁপানির কারণ হতে পারে।
এ ছাড়া মানসিক চাপে থাকলে হাঁপানির তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে। কোনো কোনো খাবারের প্রতি সংবেদনশীল বা চিংড়ি মাছ, হাঁসের ডিম, গরুর মাংস, বেগুন, পুঁইশাক, মিষ্টিকুমড়া, ইলিশ মাছ প্রভৃতি খেলে চুলকায়, নাক দিয়ে পানি পড়ে কারও কারও-অর্থাৎ অ্যালার্জি হয়। তবে খাবারের মাধ্যমে যে অ্যালার্জি হয় তাতে খুব কম লোকের অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। কারও কারও বিভিন্ন সুগন্ধি, মশার কয়েল বা কারও কারও কীটনাশকের গন্ধ থেকেও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে।
রোগ নির্ণয়
রোগ নির্ণয়ের প্রথম ধাপ হচ্ছে রোগীর মুখে রোগের বিস্তারিত ইতিহাস জানা।
হাঁপানির প্রধান উপসর্গগুলো হলো শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকের মধ্যে দপ দপ শব্দ হওয়া, বুকে চাপ অনুভব করা, বা অল্পতেই দম ফুরিয়ে যাওয়া। তবে কখনো কখনো দুবার অ্যাটাকের মধ্যে রোগীর হাঁপানির কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। অল্প যেকোনো একটি বা তারও বেশি উপসর্গ থাকতে পারে।
সাধারণত এ উপসর্গগুলো রাতে বা খুব সকালে বেশি হয় এবং শ্বাসনালিতে কোনো ধরনের অ্যালজেন প্রবাহ প্রবেশ করলে বা অল্পমাত্রায় পরিবর্তন হলে এ উপসর্গের তীব্রতা বেড়ে যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে কাশি বা শ্বাসকষ্ট শুরুর আগে নাক চুলকায়, হাঁচি হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, চোখ লাল হয়ে যায়। ওপরের উপসর্গগুলোর সঙ্গে বংশে কারও যদি হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকে, তাহলে ধরে নেওয়া যায় তার হাঁপানি রয়েছে।
হাঁপানি নির্ণয়ে সহায়ক পরীক্ষা
লাং ফাংশন টেস্ট বা স্পাইরোমেট্রি, যা দিয়ে শ্বাসনালির কতটুকু সরু হয়েছে তা বোঝা যায়।
কফের মধ্যে থাকা ইয়োসোনোফিলের সংখ্যা থেকে বোঝা যায়, শ্বাসনালিতে কোনো ক্ষত হয়েছে কি না।
কখনো কখনো স্কিন অ্যালার্জি পরীক্ষা করে কোন বিশেষ উত্তেজক জিনিস হাঁপানির জন্য দায়ী তা শনাক্ত করা হয়।
পিক ফ্লো মিটার পরীক্ষাঃ রোগী কত তাড়াতাড়ি ও কত জোরে ফুঁ দিতে পারে সেটি এ যন্ত্রের মাধ্যমে পরিমাপ করা যায়। শ্বাসনালি সরু হলে পিক ফ্লো কমে যায়। হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা এ যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করা যায়।
চিকিৎসা
হাঁপানি সম্পূর্ণ নিরাময়ের জন্য এখনো কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। হাঁপানি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগী পুরো সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত হাঁপানি হার্ট-অ্যাটাকের মতোই ভয়াবহ। এতে মৃত্যুও হতে পারে।
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণের একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো সতর্কভাবে খেয়াল রাখা, কোন কোন উপসর্গে রোগীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় তা নির্ণয় করা এবং তা থেকে দূরে থাকা। কারণ সব হাঁপানি রোগীর রোগের উপসর্গ কমা বা বাড়ার জন্য একই উত্তেজক বা ট্রিগার ফ্যাক্টর দায়ী নয়। এ ছাড়া অনেক সময় পরিবেশের ওপর মানুষের কোনো হাত থাকে না। অনেক সময় পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপরও আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। বাজারে হাঁপানির যেসব ওষুধ পাওয়া যায় তা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন সম্ভব।
ওষুধ-পথ্য
হাঁপানির চিকিৎসায় প্রধানত দুই ধরনের ওষুধ ব্যবহৃত হয়।
উপশমকারী ওষুধ বা রিলিভার এবং
রোগ নিরাময় বা প্রতিরোধকারী ওষুধ।
উপশমকারী ওষুধের আরেক নাম হলো ব্রংকোডায়ালেটর, যা সরু শ্বাসনালির পথ প্রসারিত করে তাৎক্ষণিকভাবে শ্বাসকষ্ট কমিয়ে দেয়। যেহেতু এটি শ্বাসনালির প্রদাহ বা ক্ষত সারাতে সাহায্য করে না, তাই এটি নিয়মিত অবিরাম ব্যবহার করা উচিত নয়। শুধু প্রয়োজন হলেই ব্যবহার করা উচিত। বাজারে বিভিন্ন নামে ও বিভিন্ন আকারে এটি পাওয়া যায়। ইনহেলার বা ট্যাবলেট হিসেবে পাওয়া যায়। যেমন ভেনটোলিন, সালটোলিন, অ্যাজমাসোল, সালমোলিন ও সেলোমেন্স। নিরাময়কারী ওষুধ হলো স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ, যা অনেক সময় জীবন বাঁচায়। এটা অ্যালার্জিনাশক ও প্রদাহবিরোধী। স্টেরয়েড ইনহেলার শ্বাসনালির প্রদাহ কমিয়ে শ্বাসনালির সংবেদনশীলতা কমায়। স্টেরয়েড এমন একটা ওষুধ, যার পরিমিত ব্যবহারে হাঁপানি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
অন্যদিকে এর অপরিমিত ব্যবহার হলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ক্ষতিকর উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই ইনহেলারের মাধ্যমে চিকিৎসা করলে যথাযথ ইনহেলার ব্যবহার করবেন এবং এর সঠিক মাত্রা জেনে ব্যবহার করবেন। কোনোভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি ব্যবহার করবেন না। বাজারে বিভিন্ন ধরনের স্টেরয়েড ইনহেলার পাওয়া যায়, যেমন সেরেটাইড ইভোহেলার বা ইকোহেলার, বেক্সিটোন এফ, টিকামেট প্রভৃতি।
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রোগীর ভূমিকা
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রোগীর ভূমিকাও কম নয়। রোগীকে জানতে হবে তার রোগটির প্রকৃতি কী, এর চিকিৎসা কী, তিনি ইনহেলার ব্যবহার করবেন কি না, ইনহেলারের কাজ কী প্রভৃতি। গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিকভাবে ইনহেলার ব্যবহার করতে জানা। রোগীকে জানতে হবে কী চিকিৎসা তার প্রয়োজন, তার হাঁপানির উপসর্গ কখন বাড়ে, কখন ইনহেলার ব্যবহার করবে, কখন রোগটি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে এবং কখন রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ নেবে।
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা
পাশের বক্সটি হাঁপানি রোগীদের (১২ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সের) হাঁপানি নিয়ন্ত্রণের অবস্থা মূল্যায়নে সাহায্য করতে পারে। প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তরের ডান পাশের নম্বরের ওপর টিকচিহ্ন দিন। পাঁচটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে আপনি আপনার হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষার মোট নম্বর আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করতে ভুলবেন না। আপনার নম্বর কী অর্থ বহন করে তা জানার জন্য স্কোর মিলিয়ে দেখুন।
আপনার হাঁপানির মাত্রা জানুন
প্রথম ধাপঃ প্রতিটি প্রশ্নের জন্য আপনার প্রাপ্ত নম্বরের ওপর একটি টিক চিহ্ন দিন এবং ডান পাশের ঘরে নম্বরটি লিখুন। অনুগ্রহ করে যতটা সম্ভব সঠিক উত্তর দিন। এটি আপনাকে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে হাঁপানি বিষয়ে আলোচনায় সাহায্য করবে।
প্রশ্ন-১ঃ গত চার সপ্তাহে আপনার হাঁপানি আপনাকে কী পরিমাণ সময় কর্মক্ষেত্রে, স্কুলে বা বাসায় স্বাভাবিক কাজকর্ম করা থেকে বিরত রেখেছে?
সব সময় (১) বেশির ভাগ সময় (২) কিছু সময় (৩) অল্প কিছু সময় (৪) কখনোই নয় (৫)
প্রশ্ন-২ঃ গত চার সপ্তাহে কত ঘন ঘন আপনার শ্বাসকষ্ট হয়েছে?
দিনে একবারের বেশি (১) দিনে একবার (২) সপ্তাহে তিন থেকে ছয়বার (৩) সপ্তাহে এক বা দুবার (৪) কখনোই নয় (৫)
প্রশ্ন-৩ঃ গত চার সপ্তাহে আপনার হাঁপানির উপসর্গ (ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস গ্রহণ, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে আড়ষ্টতা বা ব্যথা) কত ঘন ঘন আপনাকে রাতে বা সকালে নিয়মিত সময়ের আগে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিয়েছে?
সপ্তাহে চার রাত বা বেশি (১) সপ্তাহে দুই থেকে তিন রাত (২) সপ্তাহে একবার (৩) এক বা দুবার (৪) কখনোই নয় (৫)
প্রশ্ন-৪ঃ গত চার সপ্তাহে কত ঘন ঘন আপনি দ্রুত উপশমকারী ইনহেলার ব্যবহার করেছেন, যেমন স্যালবিউটামল অথবা টারবিউটালিন?
দিনে তিনবার বা তার চেয়ে বেশি (১) দিনে এক বা দুবার (২) সপ্তাহে দুই বা তিনবার (৩) সপ্তাহে এক বা তার চেয়ে কম (৪) কখনোই নয় (৫)
প্রশ্ন-৫ঃ গত চার সপ্তাহে আপনি কীভাবে আপনার হাঁপানি নিয়ন্ত্রণকে মূল্যায়ন করবেন?
একেবারেই নিয়ন্ত্রণ নয় (১) দুর্বলভাবে নিয়ন্ত্রণ (২) কিছুটা নিয়ন্ত্রণ (৩) ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ (৪) সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ (৫) নম্বর
দ্বিতীয় ধাপঃ আপনার মোট নম্বর জানার জন্য আপনার প্রাপ্ত সব নম্বর যোগ করুন।
তৃতীয় ধাপঃ আপনার নম্বর কী অর্থ বহন করে তা জানার জন্য নিচে দেখুন।
নম্বরঃ ২৫-আপনাকে অভিনন্দন
গত চার সপ্তাহে আপনার হাঁপানি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। আপনার হাঁপানির কোনো লক্ষণ ছিল না এবং হাঁপানিসংক্রান্ত কোনো সীমাবদ্ধতা ছিল না। এ অবস্থার পরিবর্তন হলে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করুন।
নম্বরঃ ২০ থেকে ২৪-আপনি ভালো করেছেন
গত চার সপ্তাহে আপনার হাঁপানি হয়তো ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে ছিল কিন্তু সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল না। হাঁপানি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আপনার চিকিৎসক হয়তো আপনাকে সাহায্য করতে সক্ষম হতে পারেন।
নম্বরঃ ২০-এর কম-আপনি ভালো করতে পারছেন না
গত চার সপ্তাহে আপনার হাঁপানি হয়তো ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল না। হাঁপানির ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে আপনাকে সাহায্য করার জন্য আপনার চিকিৎসক একটি হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা প্রদান করতে পারেন।
তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন ও অ্যাজমা অ্যাসোসিয়েশন
হাঁপানি নিয়ে হাঁপাবেন না
প্রথম বিশ্ব হাঁপানি দিবস পালিত হয়েছিল ১৯৯৮ সালে, বিশ্বের ৩৫টি দেশে। সেই সঙ্গে প্রথম বিশ্ব হাঁপানি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল স্পেনের বার্সেলোনায়। এর পর থেকে এ দিবসটি আরও গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে পৃথিবীর নানা দেশে। একটি গুরুতর স্বাস্থ্যসমস্যা হিসেবে হাঁপানি রোগ বিশ্বজুড়ে বিবেচিত হয়ে আসছে। বায়ুপথের এই ক্রনিক রোগটি বিশ্বের নানা দেশের সব বয়সের মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রোগটি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে দৈনন্দিন জীবন যাপনে আসে সীমাবদ্ধতা, অনেক সময় ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে রোগী।
হাঁপানি ক্রমেই বাড়ছে পৃথিবীতে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। রোগ যত বাড়ছে, স্বাস্থ্য-পরিচর্যার ব্যয়ও তত বাড়ছে; উৎপাদনশীলতাকেও এটি খর্ব করছে, বাড়ছে পরিবারের ভোগান্তি।
অথচ গত দুই দশকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন সব অগ্রগতি হয়েছে, এ রোগ সম্পর্কে অনেক বেশি জেনেছি আমরা, একে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার নতুন নতুন পথের সন্ধানও পাওয়া গেছে। তবে চিকিৎসাটি স্থানীয় পরিস্থিতি ও পরিবেশ-উপযোগী হওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর্মী ও পেশাজীবী হাঁপানি চিকিৎসার উপায় এবং এর ব্যয় সম্পর্কে অবহিত হওয়া উচিত; কীভাবে এই ক্রনিক রোগ মোকাবিলা করা যায় কার্যকরভাবে, এও জানা উচিত। জনগণেরও হাঁপানি পরিচর্যা ও পরিষেবা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা উচিত। ১৯৯৩ সালে ন্যাশনাল হার্ট, লাং অ্যান্ড ব্লাড ইনস্টিটিউট, আমেরিকা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ উদ্যোগে একটি কর্মশালা হয় এবং ‘পরবর্তী সময়ে হাঁপানি ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরোধ সম্বন্ধে বৈশ্বিক কৌশল’ নামে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল-হাঁপানি-ব্যবস্থাপনার একটি ব্যাপক পরিকল্পনা প্রণয়ন। লক্ষ্য হলো, ক্রনিক এই রোগের প্রকোপ হ্রাস এবং এ থেকে মৃত্যু কমিয়ে আনা; আর হাঁপানি রোগীরা যাতে একটি কর্মক্ষম পূর্ণ জীবন যাপন করতে পারেন, এর ব্যবস্থা করা। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ ফর অ্যাজমা’ (জিআইএনএ), যারা প্রতিবছর বিশ্ব হাঁপানি দিবসের আয়োজন করে আসছে। জিআইএনএর সর্বশেষ যে গাইড লাইন ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, এতে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ বছর বিশ্ব হাঁপানি দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়টি জিআইএনএর গাইড লাইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। হাঁপানি চিকিৎসার লক্ষ্য হলো ‘হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ’ ও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক রোগীকে এর আওতায় আনা।
একজন রোগীর হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কি না, তা বোঝার জন্য যে সূচকগুলো জানা উচিত-
হাঁপানির উপসর্গ থাকে না বা থাকলেও অত্যন্ত মৃদু মাত্রায় থাকে।
হাঁপানির কারণে রাতে ঘুম থেকে উঠতে হয় না।
হাঁপানির জন্য ওষুধ লাগছে না বা লাগলেও খুব কম পরিমাণে লাগে।
স্বাভাবিক কাজকর্ম ও ব্যায়াম করার ক্ষমতা রয়েছে।
ফুসফুসের কর্মক্ষমতা পরীক্ষা করে (পিইএফ এবং এফইভি১) ফলাফল স্বাভাবিক বা প্রায় স্বাভাবিক পাওয়া গেছে।
হাঁপানির আক্রমণ ঘটার ঘটনা খুব কম।
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণকে অর্জন করার এবং একে বজায় রাখার কৌশল ‘জিআইএনএ গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজি ফর অ্যাজমা ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এ কৌশলপত্রে বর্ণিত রয়েছে। এ কৌশলপত্রে চিকিৎসার চারটি পরস্পর সম্পর্কিত উপকরণের কথা বলা হয়েছে-
রোগী-চিকিৎসক সম্পর্ক ও অংশীদারি।
ঝুঁকি উপাদানগুলো চিহ্নিত করা এবং এর মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা হ্রাস করা।
হাঁপানি নির্ণয়, চিকিৎসা ও তদারক করা।
হাঁপানির আক্রমণের ব্যবস্থাপনা।
এ কৌশল অবলম্বন করে এই অসুখ নিয়ন্ত্রণ করা এবং একে বজায় রাখার জন্য চিকিৎসা করতে হয় ধাপে ধাপে। হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে না এলে ওষুধ বাড়াতে হয় এবং একবার তা নিয়ন্ত্রণে এলে এবং বেশ কিছু সময়ের জন্য নিয়ন্ত্রণটি বজায় থাকলে ওষুধ পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনতে হয়।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘নিজের হাঁপানি নিজেই নিয়ন্ত্রণ’ উৎসাহিত করে তুলবে দেশের সরকার, স্বাস্থ্য-পরিচর্যা পেশাজীবী, রোগী ও জনগণকে-নিজ নিজ দেশের স্বাস্থ্য-পরিচর্যাব্যবস্থার মধ্যে সবাই মিলে গড়ে তুলবে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা।
দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে সচরাচর দৃষ্ট ক্রনিক রোগ হলো হাঁপানি। শিশুদের মধ্যে এটি বাড়ছে। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীতে এক থেকে ৩০ শতাংশের বেশি শিশুর রয়েছে হাঁপানি। তবে সৌভাগ্যবশত এর কার্যকর চিকিৎসা সম্ভব। বেশির ভাগ রোগী সন্তোষজনক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে রোগকে। দিন-রাতে উপসর্গগুলো আর থাকে না। ওষুধও তেমন লাগে না। সক্রিয়, সজীব জীবন যাপন করতে পারে। ফুসফুসের কর্মক্ষমতা হয় স্বাভাবিক। এর আক্রমণও হঠাৎ ঘটে না। হাঁপানি হলে রোগীর মধ্যে বারবার দেখা যায় ও শোনা যায় বুকে শনশন শব্দ আর শ্বাসকষ্ট, বুক আঁটসাঁট হয়ে যাওয়া, কফ-কাশ, বিশেষ করে রাতে বা খুব ভোরে।
বায়ুপথে প্রদাহ হয়ে বিকল হয়ে যায়-রোগটি হলো ক্রনিক। ক্রনিক প্রদাহজনিত বৈকল্য হলো হাঁপানি, এই প্রদাহ হয় বায়ুপথে। বায়ুপথগুলো তখন হয়ে ওঠে প্রচণ্ড সংবেদনশীল। বায়ুপথ হয় রুদ্ধ, বায়ু চলাচল হয় খুবই কম। বায়ুপথের একটি অংশ ক্লোমনালি হয় সংকুচিত, শ্লে্না জমে পথ হয় রুদ্ধ, প্রদাহ তখন একে আরও জটিল করে তোলে। বিভিন্ন ঝুঁকি-উপাদানের মুখোমুখি রোগ হয়ে ওঠে প্রবল।
সাধারণ ঝুঁকিগুলো হলো
এলার্জেনের মুখোমুখি হওয়া, যেমন-ঘরের ধুলা ও ময়লা, পোকা-কীট, পশুর রোম, তেলাপোকা, পরাগরেণু ও ছত্রাক।
অন্যান্য ঝুঁকি হলোঃ পেশাগত উত্তেজক পদার্থ, সিগারেটের ধোঁয়া, শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাল রোগ, তীব্র আবেগ, রাসায়নিক উত্তেজক পদার্থ এবং ওষুধ (যেমন এসপিরিন ও বিটাব্লকার ওষুধ)। হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করা এবং তা বজায় রাখার জন্য ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করতে হয় ধাপে ধাপে। এতে চিকিৎসা হয় নিরাপদ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দিকে নজর দিতে হয়, চিকিৎসার খরচও বিবেচ্য বিষয়।
এ জন্য ব্যক্তিপর্যায়ে, পরিবার ও সমাজের ওপর এর বোঝা ক্রমেই বাড়ছে। এ রোগের নিয়ন্ত্রণ তেমন হচ্ছে না তা বলা বাহুল্য। হাঁপানির সঠিক দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থাপনা না হলে নিয়ন্ত্রণ ভালো হয় না। হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় গুরুতর হাঁপানি হয়ে হাসপাতালবাস, জরুরি চিকিৎসাকেন্দ্রে গমন, জরুরি পরিচর্যা হচ্ছে অনেকেরই। নিয়ন্ত্রণ ভালো না হওয়ায় অনেকের জীবনযাপন হচ্ছে সীমিত। এই নিয়ন্ত্রণ অর্জনের পথে বাধাগুলো হলো, অনেকের হাঁপানি নির্ণয় হচ্ছে না, ওষুধ ব্যয়বহুল হওয়ায় চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে না। কোনো কোনো অঞ্চলে হাঁপানির ওষুধও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। অনেকের চিকিৎসা ঠিকমতো হয় না, অনেক অঞ্চলে মানুষ স্বাস্থ্য-পরিচর্যার আওতায়ও নেই। অনেকের হাঁপানি রোগ, এর নিয়ন্ত্রণে ওষুধ ব্যবহারবিধি, কখন সহায়তা ও পরামর্শ নিতে হবে-এসব সম্পর্কে ধারণাই নেই। নিয়ন্ত্রণকে উন্নত করার জন্য শ্বাসের সঙ্গে স্টেরয়েড ওষুধ ব্যবহার অনেক দেশে বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে।
অনেক দেশে ‘জাতীয় হাঁপানি অভিযান’ হাঁপানি রোগে রুগ্ণতা ও মৃত্যু অনেক হ্রাস করেছে। হাঁপানির রয়েছে কার্যকর চিকিৎসা। সঠিক রোগ নির্ণয়, হাঁপানি সম্পর্কে সচেতনতা ও চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক রোগী নিজেরাই রোগকে আনতে পারবে নিয়ন্ত্রণে।
অ্যাজমা
গ্রীক ভাষায় অ্যাজমা শব্দের অর্থ হল হাঁপ ধরা অথবা হ্যাঁ করে শ্বাস টানা। গ্রীক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস যে কোন ধরনের শ্বাসকষ্টকে হাঁপানি নাম দিয়েছিলেন। অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট এমন একটা রোগ যার নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। আবার যার অ্যাজমা আছে সে কখনও এ রোগ থেকে একেবারে ভালো হবে না কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। অ্যাজমাকে বলা হয় এমন একটা রোগ যার নিয়ন্ত্রণই একমাত্র চিকিৎসা। অ্যাজমার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। উন্নত দেশ বলুন আর উন্নয়নশীল দেশই বলুন সব স্থানেই অ্যাজমা বেড়েই চলেছে। ৩০০ মিলিয়ন মানুষ বর্তমানে সারাবিশ্বে এ রোগে ভুগছেন। ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ১০০ মিলিয়ন মানুষ এ রোগে আক্রান্তô হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কম বয়সের ছেলেদের মাঝে এ রোগ বেশি দেখা যায়। আর প্রাপ্ত বয়সের রোগীদের মাঝে মহিলারাই বেশি আক্রান্তô হয়। অ্যাজমা রোগ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে স্কুল, কলেজ, কর্মড়্গেত্রে স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়। প্রায়ই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, অনেক সময় মৃত্যুও হতে পারে।
অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীর শ্বাসনালী অতিরিক্ত সংবেদনশীল। এর ফলে কোন উত্তেজক যেমন ঘরে ধুলা, সিগারেটের ধোঁয়া, ঘরের ঝুল, ঠান্ডা লাগা, ফুলের রেণু বা পশুপাখির সংস্পর্শে আসা ইত্যাদিতে হঠাৎ করে শ্বাসনালী সংকুচিত করে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করতে পারে। রোগীর শ্বাসনালীর পথ স্বাভাবিক অবস্থার থেকে সরম্ন হয়ে যায়, ফলে ফুসফুসে বাতাস প্রবেশের পথে বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে বুকের মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ হয়, শ্বাস নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়, কাঁশি হয়, বুকে ভার হয়ে চেপে আসে। এই আক্রমণ মৃদু আকারে দেখা দিলে সামান্য ওষুধ বা ওষুধ ছাড়াই ভালো হয়ে যেতে পারে, আবার এটা মারাত্মক আকার ধারণ করে রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা হলে এ ধরনের মৃত্যুর ৯০% রোধ করা সম্ভব। এছাড়া রোগীর শ্বাসনালীতে দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ হয়ে থাকে।
একই পরিবেশে একজনের অ্যাজমা অ্যাটাক হচ্ছে কিন্তু অন্য জনের হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ ঐ আবহাওয়ায় এমন কিছু জিনিস আছে, যার অ্যাজমা অ্যাটাক হলো সে ঐ জিনিসের প্রতি সংবেদনশীল। ঐ সব জিনিসকে বলা হয় অ্যাজমা ট্রিগার বা অ্যালার্জেন। অ্যাজমা অ্যাটকে ট্রিগার বা অ্যালার্জেনগুলো মোটামুটি নিম্নরূপ
১। ধুলোবালি, ২। ফুলের রেণু, ৩। পোকা মাকড়, ৪। ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম, ৫। কিছু ওষুধ (যেমন অ্যাসপিরিন, বিটাবস্নকার), ৬। আবেগ (দুঃখের, ভয়ের কিংবা আনন্দের কারণে হতে পারে), ৭। ধূমপান, ৮। পোষা প্রাণী। ৯। ঠাণ্ডা এবং ভাইরাস, ১০। পশু-পাখীর লোম ইত্যাদি।
শ্বাসনালীতে রেসপেরিটরী সিনসাইটিয়াল ভাইরাস আক্রমণ করলে অ্যাজমা হতে পারে।
এছাড়া যৌন কার্যক্রম কারো ড়্গেত্রে অ্যাজমা অ্যাটাক করতে পারে।
এসব অ্যালার্জেন একেকজনের বেলায় একেক রকম হতে পারে। কারো একটা, দুটো কারো পাঁচ সাতটাও থাকতে পারে।
সুতরাং অ্যাজমা অ্যাটাক থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই ধরণ অনুযায়ী এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
যেসব কারণে হাঁপানি সৃষ্টি হয়ে থাকে, তার উপর ভিত্তি করে অ্যাজমাকে দুভাগে ভাগ করা যায়।
১জ্ঝ এলার্জি বা বাহিরের কারণ জনিত অ্যাজমাঃ এর ফলে কোন উত্তেজক যেমন ঘরের ধুলা, ধুলাবালি, ফুলের গন্ধ, নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্য, ছত্রাক, সিগেরেটের ধোঁয়া, ঘরের ঝুল ঝাড়া, ঠাণ্ডা লাগা, ফুলের রেণু বা পশুপাখির সংস্পর্শে আসা ইত্যাদিতে হঠাৎ করে শ্বাসনালী সংকুচিত করে প্রচণ্ড শ্বাসকণ্টের সৃষ্টি করতে পারে। জন্ম থেকেই এদের হাঁপানি হওয়ার প্রবণতা থাকে। অনেক সময় এসব রোগীর এলার্জির অন্যান্য উপসর্গও থাকতে পারে। যেমন এলার্জিক রাইনাইটিজ, একজিমা ইত্যাদি। জীবনের প্রথম দিকে এধরনের হাঁপানি হয়ে থাকে।
২জ্ঝ স্প্যাজমোটিক বা ভিতরগত কারণজনিত অ্যাজমাঃ এধরনের রোগীদের এলার্জির কোন ইতিহাস থাকে না। জীবনের শেষ দিকে অর্থাৎ অধিক বয়সে এরূপ হাঁপানি হয়ে থাকে।
লড়্গণঃ শ্বাসকষ্ট, বুকে সাঁই সাঁই আওয়াজ, বুকে চাপবোধ হওয়া, কাশি উঠতে থাকে। কোনো কোনো সময় কাশি একমাত্র লড়্গণ হতে পারে। প্রায় সময়ই রাত্রে, ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রমের সময় হয়। তবে যেকোন সময়ই অ্যাজমা অ্যাটাক হতে পারে।
চিকিৎসাঃ হাঁপানি তীব্র আক্রমণ হলে রোগীকে সোজা করে বসান, শান্তô করম্নন এবং আশ্বস্তô করম্নন। সলবিউটামল জাতীয় ওষুধ এর ইনহেলার ৫ বার ঝাঁকিয়ে নিন, ৫ চাপ ওষুধ নিন, প্রতি চাপ নেওয়ার পর ৫ সেকেন্ড দম ধরে রাখুন, ৫ মিনিট পরে আবার একইভাবে ইনহেলার ব্যবহার করম্নণ। কোন পরিবর্তন না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এলার্জিজনিত হাঁপানির ড়্গেত্রে যেসব জিনিসে রোগীর শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায় তা পরিহার করা উচিত। অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের জন্য দুধরনের ওষুধ ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন।
১) রেসকিউ মেডিকেশনঃ যেমন- সালবিউটামল, পিরবিউটারল, মেটাপ্রোটারেনল ইত্যাদি।
২) কন্ট্রোলার মেডিকেশনঃ যেমন- মন্টোলিউকাস্ট, প্রেডনিসোলন, থিউফাইলিন, ইনহেল স্টেরয়েড ইত্যাদি।
মনে রাখতে হবে কন্ট্রোলার মেডিকেশনগুলো হঠাৎ অ্যাটাকে কখনই কাজ করে না। এজন্য অবশ্যই রেসকিউ মেডিকেশনগুলো যেমন- সালবিউটামল জাতীয় ইনহেলার ব্যবহার করতে দ্বিধা-দ্বন্ধে ভুগবেন না। অনেকে মনে করেন প্রথম অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করলে সারাজীবন ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে হঠাৎ অ্যাটাকে ইনহেলার ব্যবহারের বিকল্প নেই।
এছাড়াও অ্যালার্জির ধরন অনুযায়ী ডাক্তার যদি ভ্যাকসিন দিতে চায়, অবশ্যই নিয়মিতভাবে নিতে হবে। অ্যাজমা ভালো হওয়ার জন্য কোনো ঔষুধ এখন পর্যন্তô জানা যায়নি। কিন্তু কিছু পদড়্গেপের মাধ্যমে আপনি আপনার অ্যাজমার চরম অবস্থা এবং মাত্রা কমাতে পারেন। যেসব জিনিসে রোগীর শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায় তা পরিহার করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষুধ সেবন করে হাঁপানির রোগীরা অনেকাংশেই সুস্থ্য থাকতে পারেন।
কখনো কখনো হার্ট ফেইলিউর হলে অ্যাজমার মতোই শ্বাসকষ্ট হতে থাকে যাকে কার্ডিয়াক অ্যাজমা বলা হয়। আবার কিডনির সমস্যা হলেও শ্বাসকষ্ট হতে থাকে যাকে রেনাল অ্যাজমা বলা হয়। রোগ নির্ণয়ে ফুসফুসের কার্জড়্গমতা পরীড়্গা করা, এরে, ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, রক্তের পরীড়্গার প্রয়োজন হতে পারে। শ্বাসকষ্ট হলে সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা রোগীর অনেক কল্যাণ বয়ে আনতে পারে।
শীতে হাঁপানি থেকে সাবধান
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৫ কোটির বেশি এবং প্রতি বছরে বিশ্বে ২৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় এই রোগের কারণে। এর মধ্যে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ৪ লাখের মত। অন্যদিকে একই রিপোর্টে প্রকাশিত হয় যে, বাংলাদেশে বর্তমানে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা ৭০ লাখের বেশী। প্রতিবছর নতুন করে আরো ৫০ হাজার লোক এই রোগে আক্রান্তô হচ্ছে এবং মাত্র পাঁচ শতাংশ রোগী এই রোগের যথার্থ চিকিৎসা পাচ্ছে (দুই শতাংশ রোগী বিদেশে বা পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে)। স্বাভাবিক কারণেই এই রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পর আমাদের যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হবার কারণ রয়েছে। বাংলাদেশে এই রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল এবং চিকিৎসক কম হলেও আধুনিক চিকিৎসা, যে নেই তা বলা যাবে না। সরকারি হাসপাতাল এবং ব্যক্তি পর্যায়ে অনেক সংশিস্নষ্ট চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা বিদ্যমান। রোগের ধরন অনুযায়ী কম বা বেশি সময় হলেও এই রোগ থেকে রোগীকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করা সম্ভব। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেও মাত্র পাঁচ শতাংশ রোগী কেন চিকিৎসা পাচ্ছে? এর বড় কারণ রোগীদের অসচেতনতা, কুসংস্কার ইত্যাদি। অনেকেই রোগে আক্রান্তô হবার প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয় না। চূড়ান্তôভাবে রোগে আক্রান্তô হবার পরও অনেকে অজ্ঞতাবশত তথাকথিত ঝাড়ফুঁক, তাবিজ কবজ ইত্যাদি চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগের জটিল অবস্থায় উপনীত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। রোগে প্রাথমিক অবস্থায় যথাযথ চিকিৎসা নিলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব।
হাঁপানি রোগের উপসর্গ বা লড়্গণঃ
০ বুকের ভিতর বাঁশির মত সাঁই সাঁই শব্দ হওয়া
০ শ্বাস নিতে ছাড়তে কষ্ট হওয়া
০ দম খাটো অর্থাৎ ফুসফুস ভরে দম নিতে না পারা
০ ঘন ঘন কাশি
০ বুকে আঁটসাঁট অথবা দম বন্ধ ভাব
০ স্বস্তিôতে রাতে ঘুমাতে না পারা
রোগীদের জানা দরকারঃ
হাঁপানি রোগ সম্পর্কে অনেক রোগীর ভ্রান্তô ধারণা রয়েছে যে, দেশে এই রোগের আধুনিক চিকিৎসা নেই। সচ্ছল রোগীরা তাই পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা এবং সময় দুটোই নষ্ট করছে। অন্যদিকে অশিড়্গিত ও দরিদ্র শ্রেণীর রোগীরা মনে করে তাবিজ কবজ, পানিপড়া, মালাপড়া দিয়ে এই রোগ সেরে যাবে। এসব অপচিকিৎসা, দেরিতে চিকিৎসা, অজ্ঞতা অনেক রোগীকে অকালে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এজন্য রোগীদের জানা দরকার যে, সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয পরীড়্গা-নিরীড়্গা করে চিকিৎসা গ্রহন করলে হাঁপানি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়া সম্ভব। উন্নত দেশের সকল প্রয়োজনীয পরীড়্গা ও চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশেই রয়েছে। অপচিকিৎসা নিয়ে মৃত্যুবরণ কিংবা বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় করে বিদেশে যাবার কোন দরকার নেই।
০ ডাঃ গোবিন্দ চন্দ্র দাস
এলার্জি ও এ্যাজমা রোগ বিশেষজ্ঞ
সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান
এলার্জি এন্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজী বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা
এ্যাজমার ওষুধ ও অস্থিড়্গয়
অস্থিড়্গয় বা অস্টিও পোরেসিস হচ্ছে এমন একটি অসুখ যার ফলে অস্থি বা হাড়ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। হাড়ের শক্তি কমে যায়, ফলে প্রবণতা তৈরি হয় হাড় ভাঙ্গার। অস্টিও পোরোসিসের দ্বারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্তô হয় যে হাড়গুলি তারা হচ্ছে মেরম্নদন্ডের ছোট ছোট হাড় (কশেরম্নকা), কবজি, বাহু এবং বস্থি প্রদেশের হাড়গুলি।
অস্থিড়্গয় বা অস্টিও পোরেসিস হচ্ছে এমন একটি অসুখ যার ফলে অস্থি বা হাড়ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। হাড়ের শক্তি কমে যায়, ফলে প্রবণতা তৈরি হয় হাড় ভাঙ্গার। অস্টিও পোরোসিসের দ্বারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্তô হয় যে হাড়গুলি তারা হচ্ছে মেরম্নদন্ডের ছোট ছোট হাড় (কশেরম্নকা), কবজি, বাহু এবং বস্থি প্রদেশের হাড়গুলি। একবার ভেঙ্গে গেলে আবার আশংকা থাকে, সঙ্গে থাকে তীব্র ব্যথা, ফলে চলাফেরায় অড়্গমতা। সেই কারণেই রোগীর প্রয়োজন হয় অপারেশনের।
অস্টিও পোরেসিস কাদের হয়?
আমেরিকাতে ২৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্তô। বয়স্ক মানুষ, বিশেষত মহিলা, যাদের মেনোপজ (ঋতুবন্ধ) হয়ে গেছে তারাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী। অন্য যে সব বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে, সেগুলো হচ্ছে-
> পারিবারিক ইতিহাস। > জাতি। শ্বেতাঙ্গ এবং এশীয়দের মধ্যে এই রোগ বেশি হয়। আফ্রিকানদের মধ্যে কম। > খাদ্যে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি কম থাকা। > শরীর চর্চার অভাব। > ধুমপান। অতিরিক্ত মদ্যপান। > ওজনহীনতা। > মহিলাদের কিছু মাসিকের ত্রম্নটি, সেগুলোর ফলে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাপ কমে যায়। > কিছু ঔষধ যেমন-গস্নুকোকর্টিকোস্টেরয়েড, খিচুঁনি রোধী ঔষধ।
এ্যাজমার সঙ্গে অস্টিও পোরোসিসের সম্পর্কঃ যেহেতু এ্যাজমা হচ্ছে ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি রোগ, তাই এ্যাজমা রোগীকে প্রচুর প্রদাহরোধী ঔষধ খেতে হয়। এদের মধ্যে গস্নুকোকর্টিকোস্টেরয়েড হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী সিম্পেসিক এবং নিঃশ্বাসের সঙ্গে নেবার বা স্থানীয়।
দীর্ঘদিন ধরে কোনো এ্যাজমা রোগী যদি মুখে খাওয়ার গস্নুকোকর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করেন (যেমন প্রেডনিসোলোন টেবলেট) তাহলে তিনি যতগুলি ড়্গতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অস্টিও পোরোসিস। অন্যদিকে ইনহেলার হিসাবে যে গস্নুকোকর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা হয় সেগুলি এ্যাজমা প্রশমনে যেমন কার্যকরী, তেমনই সেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম। আপনার ডাক্তার তাই আপনাকে সেই ওষুধ ব্যবহার করতে বলবেন, যেগুলোর ড়্গতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম।
অস্টিও পোরোসিস বা অস্থিড়্গয় কীভাবে রোধ করবেন?
বেশি ক্যালশিয়াম গ্রহণঃ ক্যালসিয়াম শরীরের সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে যখন এটি খাদ্যের সাথে অল্প পরিমাণে সারা দিন ধরে খাওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম থাকে দুগ্ধজাত খাদ্যে। এসব খাবারে ভিটামিন ডি থাকে কিছু পরিমাণে। যেমন এক গস্নাস স্কিমড মিল্কে থাকে ৩০২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৮৫ ক্যালরি। কম স্নেহজাতীয় ইফোগার্টে থাকে ৪১৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১৪৫ ক্যালোরি শক্তি।
শরীরে প্রতিদিন ক্যালসিয়াম চাহিদা নিম্নরূপ-
> ১ থেকে ১০ বৎসর পর্যন্তô প্রতিদিন ৮০০ মিলিগ্রাম। > ১১ থেকে ২৪ বৎসর পর্যন্তô প্রতিদিন ১২০০ মিলিগ্রাম। গর্ভবতী এবং স্তôন্যদানরত মায়ের জন্য প্রতিদিন ১২০০ মিলিগ্রাম। > ২৪ বৎসরের বেশি বয়স্ক পুরম্নষ প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম। ঋতুবন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে মহিলাদের জন্য প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম। > যাদের অস্টিও পোরেসিস এর ঝুঁকি আছে এমন পুরম্নষ/মহিলা প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম।
কিছু মানুষের শরীরে ল্যাকটেজ নামক এনজাইমের ঘাটতি থাকে। এই এনজাইম ল্যাকটোজ নামক দুগ্ধ শর্করা হজমে সাহায্য করে থাকে। এই এনজাইমের অভাব ঘটলে মানুষ দুধ খেয়ে হজম করতে পারে না। তবে কেউ কেউ ইফোগার্ট এবং মাখন কিছুটা হজম করতে পারে। অন্যদের জন্য ল্যাকটেজ মিশ্রিত দুধ ব্যবহার কম সহজ। দুধ ছাড়া অন্য যে সব খাদ্যে ক্যাসিয়াম ভালো পরিমাণে থাকে, সেগুলোর মধ্যে টফু (প্রতি ৪ আউন্সে ১৫০ মিলিগ্রাম), বাঁধাকপি, (সেদ্ধ এক কাপে ১৩৬ মিলিগ্রাম), কলার্ড (প্রতিকাপে ১৫০ মিলিগ্রাম), শালগম (প্রতিকাপে ২০০ মিলিগ্রাম) এবং সার্ডিন মাছ (প্রতি ৩ আউন্সে ৩৭৫ মিলিগ্রাম) অন্যতম।
যারা খাদ্যর সাথে ঠিকমতো ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে পারে না, তাদের ক্যাসিয়াম সরবরাহ করতে হবে। তবে নিশ্চিত করতে হবে ঔষধের মধ্যে প্রকৃত ক্যালসিয়ামের পরিমাণ। দিনে একসঙ্গে ৫০০ বা ৬০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা চলবে না। কিংবা ক্যাসিয়ামের সঙ্গে আঁশ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত নয়। এতে সীসা বা অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ থাকতে পারে। এ ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে।
ভিটামিন ডি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, তবে তা যেন অতিরিক্ত না হয়ঃ প্রতিদিন ভিটামিন ডি গ্রহণের স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৪০০ আন্তôর্জাতিক একক (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট)। বেশিরভাগ মাল্টিভিটামিন ঔষুধে এই পরিমাণেই ভিটামিন ডি থাকে। দেখা গেছে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৫০০ আন্তôর্জাতিক একক পর্যন্তô ভিটামিন ডি খেলে ক্যালসিয়াম বিশোষণ ও অস্থির বিপাক ক্রিয়ায় তা সহায়তা করে। এই ভিটামিন পাওয়া যায় ডিমে, লোনা পানির মাছে, গরম্নর কলিজায়। ইদানিং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ প্রকিয়াকৃত দুধ বাজারে পাওয়া যায়।
ব্যায়ামঃ হাঁটা, উপরের দিকে ওঠা বা জগিং জাতীয় ব্যায়াম করতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ব্যায়াম করতে হবে একদিন পর পর কিংবা সপ্তাহে চার দিন। প্রতিদিন কতড়্গণ ধরে ব্যায়াম করতে হবে তা নির্ভর করে ব্যায়ামের ধরনের ওপর। ৪০ থেকে ৬০ মিনিট হাঁটার কথা বলা হয়েছে। তবে ব্যায়াম শুরম্নর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ধূমপান ত্যাগ করতে হবে এবং বেশ পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন করা যাবে নাঃ ধূমপান এবং অতিরিক্ত এলকোহল শরীরের অন্যান্য ড়্গতির পাশাপাশি অস্টিও পোরোসিসের আশংকা বাড়িয়ে দেয়।
রক্তের এস্ট্রাজেনের পরিমাণ মনিটর করম্ননঃ আপনি নারী হলে এবং আপনার মেনোপজ শুরম্ন হলে ইস্ট্রোজেন প্রতিস্থাপন চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করম্নন।
মহিলাদের হরমোন রিপেস্নসমেন্টঃ মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেন রিপেস্নসমেন্ট থেরাপি মহিলাদের অস্টিও পোরেসিসের আশংকা কমায় তবে অন্য ড়্গতির সম্মুখিনও করে। কাজেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তô নেবার ভার আপনার চিচিৎসকের ওপর ছেড়ে দিন।
টেস্টোস্টেবস্নন মনিটর করম্ননঃ পুরম্নষ রোগীরা গস্নুকোকর্টিকোস্টেরয়েড (প্রেডলিসালোন) খেলে রক্তের টেস্টোস্টেরণের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তাই এটি মনিটর করতে হবে।
চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন নিয়মিতঃ যদি আপনার অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি থাকে বা আপনাকে যদি এ্যাজমার জন্য প্রেডনিসলোন খেতে হয়, তাহলে হয়তো আপনার চিকিৎসক আপনার অস্থির ঘনত্ব পরীড়্গা করে দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।
০ ডাঃ গোবিন্দ চন্দ্র দাস
এলার্জি ও এ্যাজমা রোগ বিষেশজ্ঞ
সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান
এলার্জি এন্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজী বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা
দি এলার্জি এন্ড এ্যাজমা সেন্টার
৫৭/১৫ পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা
অ্যাজমা ও অ্যালার্জির ওষুধ
অ্যাজমার দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের জন্য লং অ্যাকটিং ওষুধ পাওয়া যায়। যেমন-সালমেটারোল ও ফরমেটারোল। এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে নার্ভাসনেস, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা এবং কখনো কখনো মাথা ব্যথা।
আমেরিকাতে ৫০ মিলিয়নেরও বেশি লোক অ্যাজমা ও অ্যালার্জিতে আক্রান্তô। তবে সৌভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে বর্তমানে এসব রোগের অনেক কার্যকর ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধের সাথে পরিচিত করতে পারলে রোগ নিয়ন্ত্রণ অনেকটা সহজ হয়ে আসবে।
এন্টিহিস্টামিনঃ অ্যালার্জি রোগীদের চিকিৎসা ও ‘হে ফিভার’ প্রতিরোধে ডাক্তাররা এই জাতীয় ওষুধ দিয়ে থাকেন। অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ার সময় শরীরে হিস্টাসিন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়। এন্টিহিস্টামিন এই নিঃসরণে বাধা প্রদান করে। ফলে অ্যালার্জির উপসর্গ কম হয়। এন্টিহিস্টামিন দুই ধরনের-
সিডেটিং বা নিদ্রাউদ্রেককারীঃ এটা খেলে রোগীর শরীর ঝিমঝিম করতে পারে।
নন-সিডেটিংঃ এটি খেলে রোগীর ঝিমুনি আনে না।
এন্টিহিস্টামিনের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
মুখ শুকিয়ে যাওয়া বা ড্রাই মডিস।
প্রসাবে অসুবিধা
কোষ্ঠকাঠিন্য
ঝিমুনি
শিশুদের ড়্গেত্রে দুঃস্বপ্ন দেখা, আঁতকে ওঠা, অস্থিরতা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া তবে নন-সিডেটিং এন্টিহিস্টামিনে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক কম হয়ে থাকে।
ডিকনজেস্ট্যান্টঃ এই জাতীয় ওষুধ বন্ধ নাক খুলে দেয়। সেই সঙ্গে সর্দি ও অ্যালার্জির উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। এরা রক্তনালীকে সংযুক্ত করে দেয়, ফলে জলীয় অংশ শেস্নষ্মার সঙ্গে বেরিয়ে যায়। ডিবানজেস্ট্যান্টগুলো নিম্নোক্ত ধরনেরঃ
তরল, নাকের স্প্রে এবং ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ও এগুলো ওষুধের দোকান থকে কিনতে পারা যায়।
এন্টিহিস্টামিন এবং ডিকনজেস্ট্যান্টকে একত্রে ব্যবহার করলে বেশি ভালো ফল পাওয়া যায়।
ডিকনজেস্ট্যান্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে-
নার্ভাসনেস, নিদ্রাহীনতা ও
রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া
রিবাউন্ড রাইনাইটিস। হতে পারে যদি স্প্রে আকারে ডিকনজেস্ট্যান্ট একনাগাড়ে তিন বা চারদিনের বেশি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে নাকের কনজেসন খুব বেশি হয়ে যায়; ফলে অনেক রোগীকে এই ওষুধের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয়।
প্রদাহরোধী ওষুধঃ অ্যালার্জির ড়্গেত্রে প্রদাহ একটি গুরম্নত্বপূর্ণ ধাপ। এই প্রদাহ হতে পারে সর্বড়্গেত্রে। একজিমার ড়্গেত্রে ত্বকে, অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের ড়্গেত্রে নাকে, কনজাংটিভাইটিসের ড়্গেত্রে চোখে, অ্যাজমার ড়্গেত্রে শ্বাসনালীতে।
অ্যালার্জি ও অ্যাজমা চিকিৎসায় সচরাচর তিন ধরনের প্রদাহরোধী ওষুধ ব্যবহৃত হয়-
মাস্টসেল স্ট্যাবিলাইজারঃ এগুলো নন-স্টেরয়েড ওষুধ। এরা প্রদাহ উৎপাদক কেমিক্যাল বা রাসায়নিক দ্রব্যের নিঃসরণকে রেধ করার মাধ্যমে প্রদাহ কমিয়ে থাকে। এদের মধ্যে আছে ক্রোমোলিন, নিডোক্রোমিল, লোডোামাইড ইত্যাদি। এগুলো বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায়।
কার্টিকোস্টেরয়েডঃ এগুলো স্টেরয়েড নামেও পরিচিত। এগুলো প্রদাহরোধে খুবই কার্যকরী। এগুলো অ্যানাবলিক স্টেরয়েড থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। (অ্যানারজিক স্টেরয়েডের অনৈতিক ব্যবহারের দ্বারা ক্রিড়াবিদরা নিজেদের সামর্থø বৃদ্ধি করে থাকে)। ক্যার্টিকোস্টেরয়েড পাওয়া যায় মলম, নাকের স্প্রে, ইনহেলার, ট্যাবলেট ও ইনজেকশনের আকারে।
চিকিৎসকের প্রত্যড়্গ তত্ত্বাবধান ছাড়া কার্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা উচিত নয়।
ক্যার্টিকোস্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহারে সমস্তô কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন কণ্ঠস্বরের কর্কশতা, মুখ ও গলায় ছত্রাক সংক্রমণ। ইনহেলার গ্রহণের পর পানি দিয়ে গড়গড়া ও কুলকুচা করলে এই অসুবিধা এড়ানো যায়।
শিশুদের ড়্গেত্রে দীর্ঘদিন ক্যার্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করলে শারীরিক বৃদ্ধির গতি তুলনামূলক কম হতে পারে। তবে অ্যাজমা আক্রান্তô শিশুকে এই ওষুধের মাধ্যমে যে উপশম প্রদান করা যায়, তার তুলনায় এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে মেনে নেওয়া যায়।
মুখে ক্যার্টিকোস্টেরয়েড খাওয়া বা ট্যাবলেটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইনহেলার বা মলমের তুলনায় বেশি।
স্বল্পমেয়াদে ক্যার্টিকোস্টেরয়েড খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তেমন একটা হয় না, স্বল্প মেয়াদ মানে কয়েক সপ্তাহ।
স্বল্পমেয়াদে কার্টিকোস্টেরয়েড খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে সামান্য ওজন বৃদ্ধি, ড়্গুধা বৃদ্ধি, মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক, মাংসপেশিতে খিঁচুনি, বুকজ্বালা ও বদহজম। ওষুধ খাওয়া বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দূর হয়ে যায়।
অনেকদিন ধরে (মাসের পর মাস ধরে বছর পর্যন্তô) ক্যার্টিকোস্টেরয়েড খেলে আলসার, ওজন বৃদ্ধি, চোখে ছানি, দুর্বল অস্থি ও ত্বকের পুরম্নত্ব কমে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, সহজে শরীরে ড়্গত সৃষ্টি হওয়া, শিশুদের শরীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া-ইত্যাদি প্রার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
অ্যাজমা ও অ্যালার্জি চিকিৎসায় ক্যার্টিকোস্টেরয়েডের সঠিক ব্যবহার অত্যন্তô মঙ্গলদায়ক।
ক্যার্টিকোস্টেরয়েড ট্যাবলেট সাধারণত স্বল্পমেয়াদী চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন অ্যাজমার তীব্রতা কমানো, নাকের কনজেশন কমানো এবং পয়জন আইভি রোগে ত্বকের প্রদাহ কমানো।
স্থায়ী অ্যাজমার দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় ক্যার্টিকোস্টেরয়েড ইনহেলার সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
এন্টি লিউকোট্রেইনঃ লিউকোট্রেইন হচ্ছে সেইসব কোষ যারা শক্তিশালী রাসায়নিক দ্রব্য নিঃসরণের মাধ্যমে শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এরা শ্বাসনালীর মাংসপেশিকে সংকুচিত করে দেয় এবং রক্তনালী থেকে জলীয় পদার্থ বের করে শ্বাসনালীতে নিয়ে আসে। সম্প্রতি এন্টি লিউকোষ্টেটন জাতীয় উচ্চ ড়্গমতাসম্পন্ন ওষুধ অবিষ্কৃত হয়েছে।
স্থায়ী অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে এসব ওষুধ কার্যকরী।
অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের চিকিৎসাতেও এই জাতীয় ওষুধ ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই ওষুধগুলো শুধু ট্যাবলেট আকারেই পাওয়া যায়।
ব্রংকোডাইলেটঃ অ্যাজমা চিকিৎসায় বেশ কয়েক ধরনের ব্রংকোডাইলেট ব্যবহৃত হয়।
বিটা-অ্যাগোনিষ্ট ব্রংকোডাইলেটরঃ শ্বাসতন্ত্রের ব্রংফিয়াল টিউবের মাংশপেশিকে রিল্যা করে।
দ্রম্নত উপসমের জন্য সর্ট-অ্যাকটিং ওষুধ ব্যবহৃত হয়। এগুলো ইনহেলার, ট্যাবলেট, সিরাপ ও ইঞ্জেকশন আকারে পাওয়া যায়। (অ্যালবিউটারোল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত)।
অ্যাজমার দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের জন্য লং অ্যাকটিং ওষুধ পাওয়া যায়। যেমন-সালমেটারোল ও ফরমেটারোল। এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে নার্ভাসনেস, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা এবং কখনো কখনো মাথা ব্যথা।
থিওফাইলিন গত ৩০ বৎসর যাবৎ অ্যামা চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
এগুলো ট্যাবলেট, ক্যাপসুল এবং সিরাপের ইনজেকশন হিসাবে পাওয়া যায়।
রক্তে এই ওষুধের মাত্রা মনিটর করা প্রয়োজন হয়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে আছে মাথা ব্যথা, হদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া এবং বদহজম।
এন্টিকোলিনাজক, ওষুধগুলো ইনহেলার আকারে পাওয়া যায়। এগুলো এককভাবে কিংবা বিটা-অ্যাগোক্রিট ব্রংকোডাইলেটরের সঙ্গে একত্রে ব্যবহার করা যায়।
ইপরাট্রোপিয়াম ব্যবহৃত হয় অ্যাজমা রোগে দ্রম্নত উপসমকারী হিসাবে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে আছে কাশি ও মাথা ব্যথা।
ওমালিজুমাজঃ এই ওষুধ অ্যাজমা চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে ২০০৩ সাল থেকে। এগুলো এন্টি আইজি-ই। আইজি-ই এন্টিবডি আমাদের প্রত্যেকের শরীরেই রয়েছে। তবে কারো কারো শরীরে এটি অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ওমালিজুমান শরীর থেকে আইজি-ই বের করে দেয়, ফলে এরা অ্যালার্জেনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না।
মৃদু ও মধ্যম তীব্রতার অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা রোগীদের চিকিৎসামাত্রই শুধুমাত্র এই ওষুধ ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে যেসব রোগীর অ্যাজমা (১) কম্বিনেশন থেরাপি দেওয়ার পরেও ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না (২) স্টেরয়েড ট্যাবলেট বা ইনহেলার ব্যবহারে অসুবিধা হচ্ছে (৩) যাদের অ্যাজমার তীব্র আক্রমণের জন্য বার বার জরম্নরি বিভাগে নিয়ে যেতে হচ্ছে (৪) যাদের জীবনযাত্রা অ্যাজমার কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে (৫) যাদের পড়্গে প্রতিদিন ওষুধ গ্রহণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ওমালিকুলার প্রতি দুই বা চার সপ্তাহ পর পর ইঞ্জেকশন আকারে প্রদান করা হয়। ওষুধের ডোজ নির্ভর করে রোগীর ওজন এবং রক্তে আইজি-ই এন্টিবডির পরিমাপের ওপর।
অ্যালার্জি ও অ্যাজমা চিকিৎসায় অনেক ধরনের ওষুধ ব্যবহৃত হয়। আপনার জন্য কোন্ ওষুধটির প্রয়োগ সঠিক হবে, তা নির্ধারণ করে দেবেন ইমিউনোলজিস্ট ও অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ। তবে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানাতে হবে।
ম ডাঃ গোবিন্দ চন্দ্র দাস
অ্যালার্জি ও অ্যাজমা রোগ বিশেষজ্ঞ
সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান
অ্যালার্জি এন্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজী বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা।
শীতকালে অ্যাজমা রোগ ও করণীয়
অধ্যাপক মির্জা মোহাম্মদ হিরন
অ্যাজমা বা হাঁপানি শ্বাসকষ্টের অসুখ। দীর্ঘস্থায়ী, কষ্টকর এবং পুরনো রোগগুলোর শীর্ষে এর অবস্থান। আমাদের দেশে ৭০ লক্ষাধিক অ্যাজমা রোগী রয়েছে বলে ন্যাপস স্টাডি অর্থাৎ ন্যাশনাল অ্যাজমা প্রিভিলেন্স সার্ভে সূত্রে জানা যায়। আক্রান্তদের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শিশু ও কিশোর আর একটা বড় অংশ বৃদ্ধ রোগী। নারী, পুরুষ নির্বিশেষে যেকোনো বয়সে যেকোনো মানুষের এ রোগ হতে পারে। তবে এটি জানা প্রয়োজন, হাঁপানি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। যদি কারো শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট অনুভব হয়; বুকের ভেতর শাঁ শাঁ করে শব্দ হয়, শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার সময় ঘন ঘন কাশি দেয়, দম বন্ধ হয়ে বা ফুরিয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হয় এবং বুকে আঁটসাঁট ধরনের চাপ অনুভব হয় তবে হাঁপানি হয়েছে ধরে নেয়া যায়। যথাযথ চিকিৎসা করা না হলে মানুষ ধুঁকে ধুঁকে কষ্ট পায় এবং অনেক সময় মৃত্যুরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অ্যাজমার সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে কিছু ট্রিগার ফ্যাক্টর বা উত্তেজক থেকে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। যেমন এলার্জি, ভাইরাস সংক্রমণ, ব্যায়াম, বিভিন্ন পেশাগত কারণ, বিরূপ আবাহওয়া, কিছু ওষুধ বা মানসিক চাপ। বেশিরভাগ রোগীরই এলার্জির কারণে হাঁপানি হতে দেখা যায়। এই হাঁপানি সাধারণত অল্প বয়সে শুরু ও পরিবারের অন্য সদস্যদের বিশেষ করে মা, নানীদের হাঁপানি আছে দেখা যায়। এই ধরনের রোগীদের অন্যান্য এলার্জিও সাথে থাকতে পারে যেমন সর্দি বা একজিমা ইত্যাদির।
অ্যাজমার জন্য দায়ী এলার্জিক বস্তুসমূহঃ ক) মাইট নামক কীট, খ) পলেন বা ফুলের বা ঘাসের পরাগ রেণু, গ) মোল্ড স্পোর বা ছত্রাকের বীজগুটি, ঘ) পাখির পালক, ঙ) জীবজন্তুর পশম, চ) কিছু খাদ্য, ছ) কিছু কিছু ওষুধ, জ) রাসায়নিক পদার্থ।
মাইট এক ধরনের কীট যা খালি চোখে দেখা যায় না। হাউস ডাস্ট বা ঘরবাড়ির ধুলা, বিছানার চাদর, লেপ, কম্বল, কার্পেট, তোষক, পুরাতন বই, পুরাতন কাপড়, দরজা জানালায় যে ধুলা থাকে সেখানে মাইট থাকে। ধুলার সাথে মাইট বা মাইটের অংশ শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে এবং মাইট সেনসিটিভ বা সংবেদনশীল রোগীকে অ্যাজমাতে আক্রান্ত করে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ অ্যাজমা রোগী মাইট সেনসিটিভ বিভিন্ন গবেষণালব্ধ তথ্যে জানা গেছে। পলেন বা ফুল ও ঘাসের পরাগ রেণুতে যাদের এলার্জি তারা সাধারণত শীতকাল, বসন্তকালে বেশি অ্যাজমাতে আক্রান্ত হয় কারণ তখন বাতাসে পরাগ রেণু বেশি থাকে। আবার অন্য ঋতুতেও হতে পারে। কারণ এক-এক ফুল এক-এক ঋতুতে পরাগ রেণু ছড়ায়।
বর্ষাকালে পুরাতন ড্যাম্প বাড়িতে এবং স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় ছত্রাক বেশি জন্মায়। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে ছত্রাকের স্পোর বাতাসে উড়ে বেড়ায় যা মোল্ড সংবেদনশীল রোগীদের অ্যাজমা বাড়িয়ে দেয়। পোষা বিড়াল, কুকুরের পশমেও অনেক সময় অ্যালার্জি হয় এবং রোগী অ্যাজমাতে আক্রান্ত হয়।
যাদের অ্যালার্জির প্রকোপ অনেক বেশি তাদের চিংড়ি মাছ, হাঁসের ডিম, হাঁসের গোশত, গরুর গোশত, বেগুন, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, ইলিশ ইত্যাদি খেলে চোখ লাল হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, শ্বাসকষ্ট হয় এবং গায়ে আরটিকেবিয়া বা লাল লাল চাকা ওঠে যা খুব চুলকায়। তবে খাদ্যের দ্বারা যে এলার্জি হয়, তাতে কদাচিৎ শ্বাসকষ্ট হতে দেখা যায়। খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবন্ধত রাসায়নিক বস্তু থেকেও অ্যাজমা হয়। শিশুদের অ্যাজমা আক্রমণের একমাত্র কারণ ভাইরাস জ্বর। ২ বছরের নিচে শিশুদের অ্যাজমা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। এই ধরনের রোগীদের পরিবারে এলার্জির ইতিহাস থাকে না। ভাইরাস সংক্রমণে সব অ্যাজমা রোগীই সাময়িকভাবে অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়। ব্যায়াম করলে অনেকের অ্যাজমা দেখা দেয়। ব্যায়ামে শ্বাস-প্রশ্বাস বেশি হওয়ার কারণে শ্বাসনালীর ভিতরটা শীতল হয় যার ফলে অ্যাজমা শুরু হয়। হাসি বা কান্নায় হাঁপানির উপসর্গ বৃদ্ধি পায়।
পেশাগত কারণেও অনেক সময় অ্যাজমা হতে দেখা যায়। কোনো বিশেষ যোগ দেয়ার কিছু দিন পর যদি শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়, কর্মস্থলে গেলে যদি শ্বাসকষ্ট বাড়ে এবং ছুটির দিনে যদি ভালো থাকে তখন পেশাগত কারণে অ্যাজমা বলা হয়। যারা রঙ স্প্রের কাজ করে, বেকারির শ্রমিক, ধান কাটা, স’ মিলে যারা কাজ করে বা সারকারখানা, প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করে তাদের ভেতর পেশাগত কারণে অ্যাজমা দেখা যায়। অ্যাজমার উপসর্গ সবচেয়ে বেশি হয় শীতের শুরুতে, শীতের শেষে এবং অতিরিক্ত গরমে। আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে, ঠাণ্ডা বাতাস হলে বা হঠাৎ বৃষ্টি নামলে পুরাতন এবং বেশি মাত্রায় হাঁপানি রোগীদের শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। তবে বেশিরভাগ রোগীর শীতকালে শ্বাসকষ্ট বাড়ে।
সাধারণভাবে সব অ্যাজমা রোগীর ঠাণ্ডা পড়লেই শ্বাসকষ্ট হয়। কারণ ঠাণ্ডা বাতাসে পানির ভাগ কম থাকে, যা সরাসরি শ্বাসনালীকে সঙ্কুচিত করে। তা ছাড়া শীতে ভাইরাস সংক্রমণ বেশি হয়। এ ছাড়া আবাহওয়ায় গাড়ির ধোঁয়া, কুয়াশা, সিগারেটের ধোঁয়া, কলকারখানার ধোঁয়া এবং সাধারণ ধুলাবালি থাকলেও শ্বাসকষ্ট হয়।
হাঁপানি এড়াতে করণীয়ঃ ক) পরিবেশে যে এলার্জিক বস্তু আছে তা থেকে দূরে থাকা। রোগীকে খুব সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে কোন জিনিসে শ্বাসকষ্ট বাড়ায়। সেই সব যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। যেমন ধুলা, ঠাণ্ডা, পোষা কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি। মাইট নামক কীট ধুলার সাথে শ্বাসনালীতে ঢোকে। তাই ঘরকে ধুলামুক্ত রাখতে হবে। দৈনিক অন্তত একবার ঘরের মেঝে, আসবাবপত্র মুছতে হবে ভেজা কাপড় দিয়ে। শোবার ঘর হবে ছিমছাম, অল্প জিনিসপত্র থাকবে শোবার ঘরে। ঘরে কার্পেট না থাকা ভালো। যদি থাকে তবে ভ্যাকিউম ক্লিনার দিয়ে ধুলামুক্ত রাখতে হবে। তবে এ কাজটি অন্যকে দিয়ে করাতে হবে। ঘর যেন স্যাঁতস্যাঁতে না থাকে সেটা সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। শোবার ঘরে পর্যাপ্ত আলো ঢোকা দরকার। বালিশ, তোষক, ম্যাট্রেস-এ তুলা ব্যবহার করার চেয়ে স্পঞ্জ ব্যবহার করা ভাল। শীতকালে থাকতে হবে সতর্ক। শীতকালে যথাসম্ভব গরম পানি ব্যবহার করতে হবে গোসলে, ওজুতে বা হাত-পা ধুতে। গরম পানি পান করতে হবে আর শোবার ঘরটা গরম রাখার চেষ্টা করতে হবে।
খ) অ্যালার্জির জিনিস নয় অথচ শ্বাসকষ্ট বাড়ায় এমন জিনিসকে পরিহার করতে হবে। যেসব জিনিস থেকে ধুলা ওড়ে সেগুলো থেকে অ্যাজমা রোগীরা দূরে থাকবে। যেমন- গুঁড়া মসলা, ধান, চাল, ডাল, গম ঝারা বা বাছা। রোগীরা পারতপক্ষে ঘর ঝাট দেবেন না এবং ঘরে ঝুল ঝাড়াবেন না। রাস্তায় ধুলা, গাড়ির ধোঁয়া থেকে বাঁচার জন্য রুমাল, কাপড়ের মুখোশ ব্যবহার করতে হবে। যেকোনো ঝাঁঝালো গন্ধ থেকে দূরে থাকতে হবে। যেমন- চুনকামের গন্ধ, মশা মারার ওষুধ, ডিডিটির গন্ধ, মসলা ভাজার গন্ধ ইত্যাদি। এ ছাড়া ধুলা, ধোঁয়া, বর্ষা, কুয়াশাকে যথাসম্ভব পরিহার করে চলতে হবে। গ) কোনো খাদ্যে এলার্জি থাকলে তা খাওয়া যাবে না। ঠাণ্ডা জিনিস, আইসক্রিম ইত্যাদি খাবেন না। খাদ্যের ব্যাপারে খেয়াল করতে হবে কোনটায় শ্বাসকষ্ট বাড়ায়। যদি গরুর গোশত বা চিংড়ি মাছ খেলে শ্বাসকষ্ট বাড়ে তবে তা খাবেন না। ঘ) উচ্চ রক্তচাপ বা বুক ধড়ফড়ের জন্য বিটারকার খাওয়া যাবে না। ঙ) ধূমপান পরিহার করতে হবে। চ) পরিশ্রম বা দৌড়াদৌড়ি করলে যদি শ্বাসকষ্ট বাড়ে তবে উপযুক্ত ওষুধ সেবনের পর তা করতে হবে। ছ) পেশাগত কারণে অ্যাজমা হলে কাজের স্থান পরিবর্তন করে নিতে বা প্রয়োজনে পেশা বদলাতে হবে।
চিকিৎসাঃ অ্যাজমা রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়ের কোনো ওষুধ যদিও এখন পর্যন্ত বের হয়নি কিন্তু নির্ভুল চিকিৎসা ব্যবস্থা হলে হাঁপানি হওয়া মানুষের মধ্যে বিরাট এক অংশ স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত জটিল অ্যাজমা হার্ট অ্যাটাকের মতোই মারাত্মক। অনেক ক্ষেত্রে এই রোগ মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকে। অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের উল্লেখযোগ্য হলো ঠাণ্ডা, ধুলা, ভাইরাস বা পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, যার ওপর রোগীর অনেক সময় হাত থাকে না। এই রকম অবস্থায় অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ নির্ভর করে রোগীর সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার ওপর। অ্যাজমার যেসব ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়, তা ঠিকমতো ব্যবহার করলে উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মতো রোগ নিয়ন্ত্রণ রেখে সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব। আর একটি বিষয় হলো যাদের অল্প বয়সে অ্যাজমা শুরু হয় তাদের অনেকে বয়স বাড়লে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। অ্যাল্যার্জির কারণে যাদের অ্যাজমা হয়, পরিবেশ পরিবর্তন অর্থাৎ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে গেলে অনেক সময় সুস্থ হয়ে যায়।
হাঁপানির ওষুধ দুই ধরনেরঃ ১) উপশমকারী ওষুধ এবং ২) বাধাদানকারী ওষুধ। উপশমকারী ওষুধের আরেক নাম ব্রঙ্কোডাইলেটর। এই ওষুধগুলো সংকীর্ণ শ্বাসনালীর পথকে খুলে দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে শ্বাসকষ্টের যন্ত্রণা কমিয়ে দেয়। এই ওষুধগুলো যেহেতু শ্বাসনালীর ভেতরের ইনফ্লামেশন বা ক্ষত শুখাতে সাহায্য করে না তাই রোগের প্রকোপ কমায় না।
বাধাদানকারী বা প্রতিরোধকারী ওষুধ দুই ধরনের যেমন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ও ক্রোমগ্লাইকেট জাতীয় ওষুধ। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ অ্যাজমা রোগীদের জন্য জীবন রক্ষাকারী হিসেবে চিহ্নিত।
অ্যাজমা চিকিৎসায় নেবুলাইজার থেরাপি
নেবুলাইজার একটা মেশিন যার ভেতর তরল ওষুধ দিলে বাষ্পাকারে বের হয়ে আসে এবং রোগী সহজে শ্বাস গ্রহণ করতে পারে। নেবুলাইজারে চিকিৎসা দিতে হয় রোগী মারাত্মকভাবে হাঁপানি হলে, ছোট শিশু যে স্পেসারে ও ওষুধ ঠিকমতো নিতে পারে না এবং বহুদিনের পুরাতন ও জটিল হাঁপানি যার ইনহেলারে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ হয় না। নেবুলাইজার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। কারণ ১ ডোজ নেবুলাইজারে ইনহেলারের চাইতে ১০ থেকে ৫০ গুণ বেশি ওষুধ থাকে। শিশুদের বেলায় এবং যারা ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন না- স্পেসারের সাহায্যে ইনহেলার টানতে হবে।
লেখকঃমেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক, রেসপিরেটরি মেডিসন, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল