Wednesday, June 11, 2008

Mrigi (মৃগী)

মৃগী রোগের নানা তথ্য

বিশ্বে মৃগী রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন, যার অধিকাংশই উন্নয়নশীল দেশের অধিবাসী। ডঐঙ -এর মতে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ২ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে এ রোগে আক্রান্তô হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেড়্গাপটে মৃগী একটি পরিচিত রোগ। প্রতি ২০০ জনের মধ্যে ১ জন এতে আক্রান্তô হতে পারে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যদি একটি শহরের জনসংখ্যা ৫০,০০০ হয় তবে সেখানে প্রতিবছর ২৫ জন নতুন মৃগী রোগী দেখা যায়, জ্বরের সময় খিঁচুনিতে আক্রান্তেôর সংখ্যা ২৫ জন, সারাজীবনে অন্তôতঃ একবার খিঁচুনিতে আক্রান্তেôর সংখ্যা প্রায় ১০০ জন এবং প্রকৃত মৃগী রোগী পাওয়া যায় ২৫০ জন। এই রোগীদের শতকরা ৫০ থেকে ৬০ ভাগের বয়স ১৫ বছরের নিচে। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে মৃগী রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অন্যথায় এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

মৃগী সম্পর্কে ভ্রান্তô ধারণাগুলি ঝেড়ে ফেলুন

এক সময় মৃগীরোগকে ভাবা হতো আধ্যাত্মিক শক্তির এক ধরনের বহিঃপ্রকাশ। ৫০০০ খ্রিষ্টপূর্বে মেসোপটেমিয়ার অধিবাসীদের মৃগীরোগ ছিল বলে ইতিহাসে প্রথম তথ্য পাওয়া যায়। তখন এই রোগকে “পতন রোগ” বা ” ঞযব ভধষষরহম ফরংবধংব” বলা হতো। এক সময় ভাবা হতো মৃগীরোগ অসাধারণ ড়্গমতাশীল ব্যক্তিদেরই কেবল হয়। আবার অশুভ আত্মা ভর করার কারণে এই রোগ হয় বলেও ভাবা হতো।

মৃগী সম্পর্কে ভ্রান্তô ধারণা আজও রয়ে গেছে। আমাদের দেশে গ্রাম-গঞ্জে এমনকি শহরেও অনেকেই মনে করে মৃগীরোগ এক ধরনের অভিশাপ। আবার মৃগীরোগকে জ্বীন বা ভূতের আছর ভেবে থাকে অনেকে এবং রোগীর উপর চিকিৎসার নামে ঝাড়-ফুঁকসহ বিভিন্ন অপ-চিকিৎসায় শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার চালায়। ফলে রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটে, তখন সঠিক চিকিৎসাতেও ভাল ফল পাওয়া যায় না। এছাড়া অনেক রোগীর অভিভাবক লোকলজ্জার ভয়ে তাদের সন্তôানের রোগ গোপন করে। অথচ চিকিৎসার মাধ্যমে শতকরা ৭০-৮০ ভাগ রোগী সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারে।

মৃগীরোগ কি?

মৃগী মস্তিôষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতাজনিত একটি রোগ। সুস্থ স্বাভাবিক একজন লোক যদি হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপুনি অথবা খিঁচুনির শিকার হয়, চোখ-মুখ উল্টিয়ে ফেলে কিংবা কোন শিশুর চোখের পাতা স্থির হয়ে যায়, একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে অথবা মানসিকভাবে সুস্থ কোন লোক অস্বাভাবিক আচরণ শুরম্ন করেতৈবে তাকে মৃগী রোগী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এসব অস্বাভাবিকতা মস্তিôষ্কের অতি সংবেদনশীলতার কারণে হয়ে থাকে।

মৃগীরোগের কারণঃ

মানবদেহের সমস্তô কার্যাবলী পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিôষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে। কোন কারণে মানবদেহের কার্য পরিচালনাকারী মস্তিôষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের উদ্দীপক এবং নিবৃত্তিকারক অংশদ্বয়ের কার্যপ্রণালীর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেলে মৃগীরোগের লড়্গণ দেখা দিতে পারে। মস্তিôষ্কের অতি-সংবেদনশীলতা ছাড়াও ব্রেন টিউমার, স্ট্রোক, মাথায় আঘাত ও রক্তপাত, রক্তশিরায় সমস্যা, ব্রেনের পুরনো ড়্গত, ইনফেকশন, মাত্রাতিরিক্ত জ্বর, মানসিক প্রতিবন্ধকতা, আলঝেইমার, নেশাজাতীয় ওষুধ সেবন, শরীরের লবণ, ভিটামিন বা খনিজ হ্রাস পাওয়া এবং ডায়াবেটিস থেকেও মৃগীরোগ দেখা দিতে পারে।

মৃগীরোগ কি একটি বংশানুক্রমিক রোগ?

বংশানুক্রমেও মৃগীরোগ দেখা দিতে পারে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি ১০০ জনে ২ জন মৃগীরোগে আক্রান্তô হয়Ìৈসড়্গেত্রে শুধুমাত্র বাবার দিক থেকে শিশুর মৃগীরোগে আক্রান্তô হওয়ার সম্ভাবনা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি, আর শুধু মায়ের দিক থেকে শিশুর এই রোগে আক্রান্তô হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৫ ভাগেরও কম। বাবা-মা উভয়েরই মৃগীরোগ থাকলে এই সম্ভাবনার হার কিছুটা বাড়লেও এটা বলা যায় না যে, মৃগীরোগ একটি বংশানুক্রমিক রোগ। অনেক সময় বাবা-মা কারও এই রোগ নেই, কিন্তু জন্মের সময় ত্রম্নটিযুক্ত মস্তিôষ্কের গঠনের কারণেও এই রোগ দেখা দিতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে শিশু কিংবা শিশু গর্ভে ধারণ করা অবস্থায় মা মৃগীতে আক্রান্তô হলে, শিশুর জন্মের প্রথম মাসে খিঁচুনি দেখা দিলে বা মস্তিôষ্কে আঘাত লাগলে কিংবা অিজেনের ঘাটতি হলে শিশুর মৃগীরোগ দেখা দিতে পারে।

মৃগীরোগের লড়্গণসমূহঃ

একজন মৃগী রোগীর মধ্যে নিম্নের যে কোন একটি বা একাধিক লড়্গণ পরিলড়্গিত হতে পারেঃ

শৈরীর শক্ত হয়ে গিয়ে হঠাৎ পড়ে যাওয়া

হৈঠাৎ নমনীয়ভাবে ঢলে পড়া

হৈঠাৎ শরীরের কোন অংশে খিঁচুনি শুরম্ন হওয়া ও পর্যায়ক্রমে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়া

Ìৈছাট বাচ্চাদের শরীর হঠাৎ ঝাঁকি খাওয়া

ঘৈন ঘন কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়া

হৈঠাৎ মাথা বা পিঠ কিংবা পুরো শরীর সামনে ঝুঁকে আসা

হৈাত থেকে হঠাৎ করে কোন কিছু ছিটকে পড়া

হৈঠাৎ করে অস্বাভাবিক আচরণ শুরম্ন করা এবং হাত, পা এবং মুখের অস্বাভাবিক নাড়াচাড়া শুরম্ন হওয়া

শৈরীরের কোন স্থানে ভিন্ন ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া

উলেস্নখ্য যে, এই রোগের লড়্গণগুলি অন্য কোন কারণেও প্রকাশ পেতে পারে। তবে মৃগীরোগের ড়্গেত্রে সব সময় এইসব লড়্গণ প্রকাশ পায় বলে এগুলি কোন ব্যক্তির মাঝে নিয়মিতভাবে দেখা দিলে তাকে আমরা মৃগীরোগী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি।

খিঁচুনি হলে করণীয়ঃ

মৃগীরোগ এমন একটি রোগ যা হঠাৎ করে যে কোনও পরিস্থিতিতে রোগীকে আক্রমণ করে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দেয়। যার ফলে এই রোগে আক্রান্তôদের জীবনের ঝুঁকি অনেক বেশি। আর এই ঝুঁকি কমাতেই একদিকে যেমন রোগীর জীবনযাত্রাগত কিছু পরিবর্তন আবশ্যক, সেই সাথে পারিপার্শ্বিক মানুষদেরও করণীয় রয়েছে অনেক কিছু। সাধারণতঃ খিঁচুনি শুরম্ন হবার পর নিজ থেকেই থেমে যায়। খিঁচুনি হলে সেটি থামানোর জন্য শক্তি প্রয়োগ রোগীর জন্য ড়্গতির কারণ হতে পারে। এর ফলে তার মাংসপেশী ছিঁড়ে যাওয়াসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। খিঁচুনির সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখা প্রয়োজনঃ

Ìৈরাগীকে আগুন, পানি, ধারালো অস্ত্র, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি থেকে দূরে রাখতে হবে

Ìৈচায়াল বন্ধ হয়ে গেলে জোরপূর্বক খোলার চেষ্টা করা উচিত নয়।

কারও মৃগী হলে করণীয়ঃ

Ìৈরাগীর মুখে চামড়ার জুতো, গরম্নর হাড়, লোহার শিক ইত্যাদি চেপে ধরা উচিত নয়। এতে রোগীর উপকারের চেয়ে ড়্গতি বেশি হয়।

মৈৃগী হঠাৎ শুরম্ন হয়ে নিজ থেকেই থেমে যায়। এজন্য বাড়তি কিছু যেমনঃ মাথায় পানি দেয়া, হাত-পা চেপে ধরা, ওষুধ খাওয়ানোএৈসবের কোন প্রয়োজন নেই।

Ìৈরাগীকে নিজের মতো ছেড়ে দিতে হবে।

Ìৈরাগীর আশেপাশে যেন ধারালো যন্ত্রপাতি, অস্ত্র বা আগুন, ইট-পাথর না থাকে সেদিকে লড়্গ্য রাখতে হবে। কারণ, এসবের কারণে সে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে।

Ìৈরাগী রাস্তôায় থাকলে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হবে।

xৈখঁচুনির স্থায়িত্বের প্রতি দৃষ্টি রাখুন।

Ìৈকৗতূহলী জনতাকে দূরে রাখুন।

Ìৈরাগীর প্রতি সহানুভূতিশীল হোন, তাকে সাহায্য করম্নন এবং অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করম্নন।

এছাড়া রোগীকেও সব সময় সাবধান থাকতে হবে যেন মৃগীতে আক্রান্তô হলে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে। এজন্য সব সময় নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর সম্বলিত পরিচয়পত্র সাথে রাখতে হবে, যানবাহনে কিংবা রাস্তôাঘাটে চলাচলে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবেসৈবচেয়ে বড় কথা সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।

কখন চিকিৎসার প্রয়োজন?

মৃগীরোগের লড়্গণগুলো প্রথমবারের মতো দেখা দিলে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। কারণ কোন ধরনের মৃগীতে রোগী আক্রান্তô বা আদৌ মৃগীরোগ না অন্য কোনও সমস্যা এই বিষয়গুলো নিশ্চিত হয়েই চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসা প্রদান করেন। নিচে উলেস্নখ করা হলো কখন মৃগী রোগীকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবেঃ

যৈদি খিঁচুনি ৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়

যৈদি শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়

যৈদি রোগী একনাগাড়ে অনেকড়্গণ ধরে বিভ্রান্তô হয়ে থাকে কিংবা অচেতন থাকে

যৈদি খিঁচুনির সময়ে রোগী কোনওভাবে আহত হয়

যৈদি রোগী প্রথমবারের মতো মৃগীতে আক্রান্তô হয়

বিস্তôারিত জানার জন্য নিকটস্থ হাসপাতালের নিউরোলজী বিভাগে যোগাযোগ করম্নন।

শেষ কথা

মৃগীরোগ নিয়ে বিভিন্ন কুসংস্কার ও ভ্রান্তô ধারণার বিরম্নদ্ধে প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসাবিদ আত্রেয় এবং পরবর্তীতে প্রাচীন গ্রীসের হিপোক্রেটাস প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। সেই সময়েই তারা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে, মৃগী আসলে একটি মস্তিôষ্কের রোগ, অন্য কিছু নয়।

তারপরও এই রোগের কুসংস্কারমূলক বিশ্বাসগুলি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের মাঝে রয়ে গেছে। এমনকি আজকের এই একবিংশ শতাব্দীতেও একজন মৃগী রোগীকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হয় যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মৃগী যে কোন সাধারণ রোগের মতই একটি রোগ এবং এই রোগীদের প্রতি আমাদের সহযোগী মনোভাবাপন্ন হওয়া উচিত। সমস্তô ভ্রান্তô ধারণা এবং কুসংস্কার ত্যাগ করে মৃগীরোগীকে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করা আমাদের সকলের কর্তব্য। ম


মৃগী রোগীর যত্ন-আত্তি
প্রফেসর আনিসুল হক
চেয়ারম্যান, নিউরোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

যা করবেন
শান্ত থাকুন, অধিকাংশ খিঁচুনি কিছু সময়ের জন্য থাকে।
ঘাড়ের চারপাশে আঁটসাঁট বাঁধা কাপড় বা পোশাক ঢিলা করুন।
রোগীকে আহত হওয়া থেকে রক্ষা করুন, কাছে ধারালো ও শক্ত বস্তু থাকলে তা সরিয়ে ফেলুন।
যদি বেশি নিচে পড়ে যায়, তাহলে তার মাথায় কুশন বা গদি দিন; যদি অন্য কিছু না পাওয়া যায়, তাহলে ভাঁজ করা কাপড়-চোপড় ব্যবহার করুন অথবা আপনার হাত ব্যবহার করুন।
রোগী যদি মেঝেতে পড়ে যায়, তাহলে খিঁচুনি একবার শেষ হওয়ার পরই তাকে পাশ ঘুরিয়ে দিন।
রোগী সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে থাকুন।
আশপাশে ভিড় জমলে তা সরিয়ে দিন।
দৈনন্দিন নিরাপত্তা
গোসল
বাথটাব, সুইমিং পুল ও পুকুরের চেয়ে শাওয়ার (বসে থাকা অবস্থায়) ব্যবহার করা ভালো।
দরজা বন্ধ না করে কোনো চিহ্ন ব্যবহার করা ভালো।
রান্না করা
গ্যাস বা বৈদ্যুতিক চুলার চেয়ে মাইক্রোওয়েভ নিরাপদ।
বৈদ্যুতিক তার
বৈদ্যুতিক তার বা সরঞ্জাম রাখবেন না।
তাপ
হিটার কখনো খোলা অবস্থায় রাখবেন না।
কাজ শেষে চুলা নিভিয়ে ফেলুন।
কাচ
দরজা-জানালায় শক্ত কাচ ব্যবহার করা অথবা কাচের ওপর পাতলা ফিল্ম ব্যবহার করতে পারেন।
মেঝে
ঘরে কার্পেট, বাথরুম ও রান্নাঘরে ভিনাইল কুশন, লাইনোলিয়াম, কর্ক বা রাবার ব্যবহার করা ভালো।
ধারালো বা শক্ত বস্তু
আসবাবপত্রের ধারালো কিনারগুলো রাবার বা ফোম দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
নিরাপত্তা হেলমেট
ঘন ঘন ও পূর্বাভাস ছাড়াই খিঁচুনির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা হেলমেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
সিঁড়ি, লিফট বা এসকেলেটর ব্যবহার
সিঁড়ি পরিষ্কার ও শুকনো রাখা এবং সিঁড়ির গোড়ায় কম্বল বা কার্পেট রাখা।
লিফটের ভেতর প্যাড ব্যবহার করে ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
ইলেকট্রিক হুইল চেয়ার
এর নিরাপত্তা বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
অ্যালার্ম ব্যবহার
ব্যক্তিগত অ্যালার্ম, টেলিফোন অ্যালার্ম, বিছানা অ্যালার্ম, শিশু অ্যালার্ম, পড়ে যাওয়া ইত্যাদির জন্য নানা ধরনের অ্যালার্ম ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিছানা
ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি হলে, বিছানার চারপাশে কুশন বা তোশক রাখা যেতে পারে।
বিছানা নিচু করে রাখা যেতে পারে।
অন্য আসবাবপত্র বিছানা থেকে দূরে রাখুন।
শিশুর নিরাপত্তা
মা-বাবার যদি মৃগীরোগ থাকে, তবে শিশুর নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে। যেমন-বিশেষভাবে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা অথবা ঘন ঘন খিঁচুনি হলে অন্যকে দিয়ে শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে।
বাচ্চাকে গোসল করানো ও দেখাশোনার ব্যবস্থা করা।
পরিচয়পত্র ব্যবহার
একা ভ্রমণের সময় পরিচয়পত্র অথবা গলার লকেটে খিঁচুনির ধরন এবং নাম-ঠিকানা ব্যবহার করা যেতে পারে।
খেলাধুলা
সতর্কতা বজায় রেখে যেকোনো খেলাধুলা করা যেতে পারে।
প্রয়োজন হলে নিরাপত্তা হেলমেট ব্যবহার করা ভালো।
সাঁতার কাটা বা পানির কাছে খেলাধুলার সময় সাবধানতা অবলম্বন এবং সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক থাকা ভালো।
তবে ঝুঁকিপূর্ণ খেলাধুলা, যেমন-পাহাড়ে ওঠা, প্যারাসুট জাম্প প্রভৃতি থেকে বিরত থাকা ভালো।
টেলিভিশন দেখা
মৃগী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাঁচ শতাংশ আলোর প্রতি সংবেদনশীল হয়ে থাকে।
সাত থেকে ১৯ বছরের মধ্যে এ সংবেদনশীলতা ঘটতে পারে। পুরুষের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে এ হার দ্বিগুণ। নতুন ১০০ এইচজেড টেলিভিশনে সমস্যা কম হয়। এ ছাড়া স্ক্যানিং লাইন ছাড়া নতুন স্ক্রিনেও সমস্যা হয়। তবু নিচের বিষয়গুলো পালন করা প্রয়োজন-
আলোকিত রুমে দুই দশমিক পাঁচ মিটার বা আট দশমিক দুই ফুট দূরত্বে বসে এবং টিভির ওপর একটি টেবিল ল্যাম্প স্থাপন করে টিভি দেখা ভালো।
টিভির কাছে না গিয়ে রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করা ভালো। কাছে যেতে হলে এক চোখ বন্ধ করে যাওয়া যেতে পারে।
কম্পিউটার ব্যবহার
এখন অধিকাংশ কম্পিউটারের ডিসপ্লের স্ক্যান ফ্রিকোয়েন্সি প্রতি সেকেন্ডে ৭০ বা তার বেশি। ফলে এরা খিঁচুনি প্রভাবিত করে না। তবে এলসিডি মনিটর ব্যবহার করা ভালো। ভিডিও দেখার সময় সাধারণ মনিটরে দেখা ভালো। কারণ তা আলোর তরঙ্গকে দ্রুত বদলাতে পারে।
ভিডিও গেম খেলা
টেলিভিশনের চেয়ে কম্পিউটার ব্যবহার করা ভালো।
ক্লান্ত অবস্থায়, ঘুম বাদ দিয়ে খেললে খিঁচুনির আশঙ্কা বাড়তে পারে। এ ছাড়া খেলার মাঝামাঝি বিরতি নেওয়া ও কিছু খাওয়া-দাওয়া করা ভালো।
মনিটর থেকে দুই দশমিক পাঁচ মিটার বা আট দশমিক দুই ফুট দূরে বসতে হবে।
পর্যাপ্ত আলো আছে, এমন ঘরে খেলতে হবে।
মনিটরের উজ্জ্বলতা কমিয়ে দিন।
সম্ভব হলে ১০০ এইচজে টিভি বা এলসিডি মনিটর ব্যবহার করুন।
বিউটি ট্রিটমেন্ট
অধিকাংশ রূপচর্চার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বা এতে খিঁচুনির কোনো প্রভাবের কথা জানা যায়নি।
লেজার হেয়ার রিমুভাল, ইলেট্রোলাইসিস, ফুট স্পা ও ম্যাসাজ করতে কোনো বাধা নেই।
কিছু তেল, যেমন-রোজমেরি, সেইজ, হিস্যাপ, ফিন্যাল ওয়ার্মউড ছাড়া অন্যান্য তেল ম্যাসাজের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
বিদেশ ভ্রমণ
মৃগী রোগ নিয়ে ভ্রমণ বা বিমানভ্রমণের ক্ষতিকর কোনো দিক নেই।
আপনার রোগ সম্পর্কে বিমান এজেন্ট বা ক্রুকে জানিয়ে রাখুন। ঘুমের যাতে ব্যাঘাত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। নির্দিষ্ট সময়ের পরই ওষুধ গ্রহণ করুন। অন্য দেশের স্থানীয় সময় দেখবেন না।
হাত-ব্যাগে ওষুধ ও একটি প্রেসক্রিপশন রাখুন।
দীর্ঘ ভ্রমণের ক্ষেত্রে যে দেশে বা স্থানে যাচ্ছেন, সেখানে আপনার ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করুন।
প্রয়োজনে ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স করে নিন। বিভিন্ন দেশের নিয়ম অনুসারে অনেক স্থানে আপনাকে টিকা নিতে হতে পারে। টিকা নিলে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না।
বিষণ্নতা
মৃগী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মন বিষণ্ন হতে পারে। তবে এটি মূলত সামাজিক কারণে হয়ে থাকে। এর ফলে যেসব সমস্যা হতে পারে-
অমনোযোগিতা, ঘুমে ব্যাঘাত (কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া), দৈহিক কামনা কমে যাওয়া, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া প্রভৃতি।
অনেক সময় ওষুধের জন্যও বিষণ্নতা হতে পারে, বারবিটুরেট-জাতীয় ওষুধ, যেমন-ফেনোবারবিটাল ও প্রিমিডোন-জাতীয় ওষুধের জন্য যে বিষণ্নতা হয়, তা মাত্রার ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত মাত্রা কমালে বিষণ্নতা কমে। বারবিটুরেটের সঙ্গে এক বা একাধিক ওষুধ যোগ করলেও বিষণ্নতা বেড়ে যেতে পারে। যে কারণে মৃগী রোগ হয়েছে, সে কারণগুলো থেকেও বিষণ্নতা হতে পারে। যেমন-মস্তিষ্কে আঘাতজনিত কারণ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক, প্রসবজনিত সমস্যা, মাথায় আঘাত; সংক্রমণ যেমন- মেনিনজাইটিস ও এনকেফেলাইটিস। আবার এসব কারণ থাকা সত্ত্বেও অনেক রোগীর বিষণ্নতা নাও হতে পারে। খিঁচুনির পূর্বাভাস হিসেবেও বিষণ্নতা হতে পারে।
বিষণ্নতার চিকিৎসা হচ্ছে, বিষণ্নতা-প্রতিরোধী ওষুধ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো চলা। তবে উপকারিতা ও ঝুঁকি-দুটি বিষয়ই বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ, কিছু ওষুধ খিঁচুনিকে প্রভাবিত করে এবং অনেক সময় বিষণ্নতাকে আরও জটিল করে তোলে।
মৃগী রোগ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আপনার চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিন।