সাইনাসের সমস্যা
সাইনুসাইটিস একটি অতি সাধারণ রোগ। শতকরা পঁচিশ শতাংশ জনগণ উক্ত রোগে ভুগে থাকে। নাকের চারপাশে অস্থিসমূহে বাতাসপূর্ণ কুঠুরি থাকে যাদেরকে সাইনাস বলা হয়। সাইনুসাইটিস হলো উক্ত সাইনাসসমূহের ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন।
সাইনাসসমূহের কাজঃ
১· মাথাকে হালকা রাখা।
২· মস্তিôষ্ককে আঘাত হতে রড়্গা করা।
৩· সাইনাসগুলো কণ্ঠস্বরকে অনুরণিত এবং সুরেলা করে।
৪· দাঁত ও চোয়াল গঠনের সহায়তা করে।
৫· মুখমন্ডল গঠনে সাহয্য করে।
সাইনাসের প্রদাহের কারণসমূহঃ
সাইনাসসমূহের প্রদাহের মধ্যে ম্যাগজিলারি সাইনাসের প্রদাহ সবচেয়ে বেশী হয়। নাকের ইনফেকশন থেকে শতকরা নব্বই ভাগ। উপরের দাঁতের ইনফেকশন যাহা উপরের চোয়াল থেকে ছড়ায় এবং ইহা ম্যাগজিলারি সাইনাস বা কুঠুরির কাছাকাছি অবস্থিত।
রোগের লড়্গণসমূহঃ
নাকের পাশে, মাথার সামনের দিকে এবং মাথার দুই পাশে ব্যথা। মাথা ভারি হওয়া বা ভারি ভারি লাগা। নাক দিয়ে পানি পড়া। নাক বন্ধ থাকা। কাজকর্মে অনীহা।
চিকিৎসাঃ
সাইনাসের ইনফেকশনের জন্য প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। যেহেতু সাইনুসাইটিস একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত অসুখ, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক খেতে হবে। ব্যথার জন্য ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। নাকের ড্রপ এবং এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ নেয়া যায়। নাকে গরম পানির ভাব (মেনথল দিয়ে) নিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
অধ্যাপক ডাঃ এম আলমগীর চৌধুরী
নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি
মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন এন্ড হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা।
দৈনিক পাঁচবার খাওয়া ভালো
আমরা সাধারণতঃ সকালের নাস্তôাসহ তিন বেলা খেতে অভ্যস্তô। কিন্তু তিনটি প্রধান মিল না খেয়ে দিনে ছোট ছোট মিল আকারে পাঁচবার আহার করা স্বাস্থ্যের জন্য হিতকর। বিশেষজ্ঞগণ দেখেছে কম কম করে বার বার খাওয়া হলে পাকস্থলী ও লিভারের ওপর চাপ কম পড়ে। আর একবার বেশী করে আহার করলে হজম ও বিপাকীয় প্রক্রিয়া খানিকটা ড়্গতিগ্রস্তô হতে পারে। তাই বার বার কম করে আহার করা শ্রেয়। এড়্গেত্রে দুপুরের খাবার অথবা রাতের খাবারে ভাত রাখা উচিৎ। অন্যান্য সব আহারের ড়্গেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত স্নাকস বা হালকা খাবার শ্রেয়। বার বার কম করে আহারে শুধু লিভার ও পাকস্থলীসহ ডাইজেস্টিভ সিস্টেম ভালো থাকে তাই নয়, যাদের রক্তের গস্নুকোজ উঠানামা করে তাদের জন্য খাবার কম আহার ভালো। এছাড়া বার বার কম আহার করলে সারাদিনই শরীরে শক্তি প্রবাহ থাকে। এতে কাজকর্মে উদ্যম তৈরী হয়। যারা তিনবারের স্থলে কমপড়্গে পাঁচবার আহার করতে চান তাদের সময় নির্ধারণ করে করে নেয়া উচিত।
আপনার কণ্ঠকে সুস্থ রাখুন
অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী
লেখকঃ অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, মেডিক্যাল কলেজ ফর উইমেন অ্যান্ড হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা; সভাপতি, বিশ্ব কণ্ঠ দিবস উদযাপন কমিটি। মোবাইলঃ ০১৮১৯২২২১৮২
অনেকেই কণ্ঠস্বর সম্পর্কে সচেতন নয় এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। পারস্পরিক যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হলো কণ্ঠ বা কথা বলা। বিশ্ব কণ্ঠ দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে কণ্ঠ ও কণ্ঠনালীর সমস্যা এবং সেই সাথে কিভাবে কণ্ঠকে সুস্থ রাখা যায় ও তার প্রতিকার সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানানো। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘আপনার কণ্ঠ বা কণ্ঠনালীর ওপর অতিরিক্ত চাপ দেবেন না’।
আমরা কিভাবে কথা বলি?
গলায় অবস্থিত ল্যারিংস বা শব্দযন্ত্রে (ংসমধপ দস)ি দু’টি ভোকাল কর্ড থাকে। এই কর্ড দু’টির কম্পনের মাধ্যমে শব্দ তৈরি হয়। নিঃশ্বাসের সময় ফুসফুস থেকে প্রবাহিত বাতাস ভোকাল কর্ডে কম্পনের সৃষ্টি করে। কথা বলা বা গান গাওয়ার সময় এই কম্পনের পরিমাণ প্রতি সেকেন্ডে ১০০ থেকে ১০০০ বার। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দিনে এক মিলিয়ন বার ভোকাল কর্ড দু’টির সংস্পর্শ হয়। অতএব চিন্তা করুন আমাদের ভোকাল কর্ডের ওপর আমরা কতটুকু নির্ভরশীল কাজে, গৃহে ও সব সময় সবখানে। তাই আমাদের কণ্ঠকে সুস্থ রাখা খুবই জরুরি।
কিভাবে কণ্ঠকে সুস্থ ও সুন্দর রাখা যায়
প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন, কমপক্ষে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। পানি ভোকাল কর্ডকে আর্দ্র রাখে এবং আর্দ্র ভোকাল কর্ড শুষ্ক ভোকাল কর্ড থেকে বেশি ব্যবহার করা যায়। খেলা শুরুর আগে যেমন প্রস্তুতি দরকার তেমন দীর্ঘ বক্তৃতার আগে ভোকাল কর্ডের একইভাবে হালকা ব্যায়াম করা উচিত। প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজে নামা উচিত নয়। প্র্যাক্টিস করলে ভোকাল কর্ডের কণ্ঠের মান ও উপস্থাপনা সুন্দর হয়। কথা বলা ও গান গাওয়ার মাঝখানে দীর্ঘ শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে কথা বলা, গান গাওয়াকে সুন্দর করে এবং ভোকাল কর্ডের অবসাদ হয় না। বক্তব্য বা উপস্থাপনা বা বড় সমাবেশে বক্তৃতা দেয়ার সময় মাইক্রোফোন ব্যবহার করা উত্তম। দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে কণ্ঠনালীকে বিশ্রাম দেয়া উচিত। যা কণ্ঠনালীর অবসাদ দূর করে এবং শক্তি ফিরিয়ে দেয়। নিজের কণ্ঠকে শুনুন এবং যদি কোনো রকমের উপসর্গ থাকে বা পরিবর্তন লক্ষ করেন তাহলে যথাযথ যত্ন নিন। যদি দুই সপ্তাহের বেশি স্বর পরিবর্তন লক্ষণীয় হয়, তাহলে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দিন। এমন কিছু করবেন না যা কণ্ঠনালীর ক্ষতি হয়।
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপান কণ্ঠনালীর ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এটা ছাড়াও ধূমপান কণ্ঠনালীর প্রদাহ করে। জোরে জোরে বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বলা উচিত নয়। জোরে কথা বললে বা কণ্ঠনালীর অপব্যবহার করলে কণ্ঠনালীতে সূক্ষ্ম আঘাত হতে পারে। দূর থেকে কাউকে ডাকতে হলে হাততালি বা শিস বা হাত নেড়ে অথবা লাইটের মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। বড় খেলা উপভোগ করার সময় পছন্দের দলকে সাপোর্ট করার জন্য জোরে চিৎকার না করে পতাকা উড়ান বা ব্যানার লিখেন।
এমন কিছু খাবেন না যাতে এসিডিটি হতে পারে। তাই মাথা উঁচু করে ঘুমাবেন, টাইট কাপড় পরে ঘুমানো যাবে না, হালকা ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করে ঘুমাবেন। খাবারের সাথে সাথে ঘুমানো বা ক্যাফেইনযুক্ত খাবার গ্রহণ করা বাদ দিতে হবে। দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে ভোকাল কর্ডে চাপ পরে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন।
মোবাইল ফোনে কথা বলতে সাবধানতা অবলম্বন করুন। গাড়িতে ভ্রমণ বা ট্রেনে যাত্রার সময় কণ্ঠনালীকে বিশ্রাম দিন। দৈনন্দিন খাবারের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না। অতিরিক্ত মোবাইল ফোনে কথা বললে ভোকাল কর্ডে চাপ করে। চিন্তা করুন ফোন কলটি আপনার প্রয়োজনীয় কিনা। শব্দপূর্ণ পরিবেশে মোবাইল ফোনে উচ্চস্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। এতে কণ্ঠনালীর বিশ্রাম হবে, পাশাপাশি ফোন বিলও সাশ্রয় হবে।
কণ্ঠনালীর সমস্যার কারণ
যদি ঘন ঘন কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয় বা দীর্ঘ পনেরো দিন বা দুই সপ্তাহে ভালো হচ্ছে না তবে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে। বিভিন্ন কারণে কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হতে পারে। কণ্ঠস্বর বা কণ্ঠনালীর বিভিন্ন সমস্যা নিØে আলোচনা করা হলো
তীব্র কণ্ঠনালীর প্রদাহ
কণ্ঠস্বর পরিবর্তনের প্রধান কারণ হলো তীব্র কণ্ঠনালীর প্রদাহ। সাধারণত ভাইরাসজনিত কারণে প্রদাহ হয়, কণ্ঠনালী ফুলে যায় যাতে কণ্ঠনালীর কম্পনের সমস্যা সৃষ্টি করে ফলে স্বর পরিবর্তন হয়। প্রচুর পানি খেলে, কণ্ঠনালীকে বিশ্রাম দিলে এটা ভালো হয়ে যায়। তীব্র প্রদাহ অবস্থায় যদি জোরে কথা বলেন তা কণ্ঠনালীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তবে যেহেতু তীব্র কণ্ঠনালীর প্রদাহ ভাইরাসজনিত এতে এন্টিবায়োটিক লাগে না। যদি ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন হয় তবে এর সাথে শ্বাসকষ্ট হয় যার বিশেষ চিকিৎসা দরকার।
দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস
পাকস্থলির এসিড রিফ্লাক্সের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কণ্ঠনালীর প্রদাহ হতে পারে, ধূমপান, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির জন্য ইনহেলার ব্যবহার বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস হতে পারে।
কণ্ঠস্বরের অতি ব্যবহার
কথা বলার সময় কণ্ঠনালীর সাথে আশপাশে অবস্থিত মাংসপেশিরও সাহায্য লাগে। কণ্ঠনালীকে সঠিক ও নিয়মের বাইরে ব্যবহার করা, কঠিন উচ্চস্বরে, অতিরিক্ত, দীর্ঘমেয়াদি বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বললে কণ্ঠনালীর প্রদাহ দেখা যায়। যা ভারী জিনিসকে ঠিকভাবে না উঠানোর জন্য পিঠে ব্যথার সমতুল্য। গলা ও শব্দযন্ত্রের মাংসপেশির সঙ্কোচন এবং কথা বলার সময় ঠিকভাবে শ্বাস না নিলে শ্বাসযন্ত্রের অবসাদ হয়, কথা বলতে কষ্ট হয়; ফলে কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে এবং ভোকাল কর্ডে পলিপ বা নডিউল এমনকি রক্তক্ষরণও হতে পারে।
ভোকাল কর্ড অপব্যবহারের কারণ
কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে জোরে কথা বলা। অতিরিক্ত ও দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা। ঘাড় ও কানের মাঝে ফোন চেপে ধরে কথা বলায় ঘাড় ও শব্দযন্ত্রের মাংসপেশিতে টান লাগে। উচ্চস্বরে বা চিৎকার করে কথা বলা। জনসমাবেশে বা বড় লেকচার গ্যালারিতে মাইক ছাড়াই জোরে কথা বলা।
বিনাইন বা কম ক্ষতিকারক কণ্ঠনালীর রোগ
দীর্ঘমেয়াদি কণ্ঠনালীর অপব্যবহারে যে ক্ষতি হয় পরিবর্তিতে তা কণ্ঠনালীর কম্পনের মাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে এবং কণ্ঠনালীর পলিপ, নডিউল বা সিস্ট হতে পারে। নডিউল সাধারণত কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে বেশি হয়। রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, আইনজীবী, অধিক সন্তানের জননী, মসজিদের ইমাম, হকারদের মধ্যে এসব রোগ হতে পারে। চিকিৎসা হলো অপারেশন এবং ভয়েস থেরাপি।
কণ্ঠনালীতে রক্তক্ষরণ
প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করলে বা গলায় অধিক শক্তি দিয়ে কথা বললে বা গলায় আঘাত পেলে হঠাৎ করে কথা বন্ধ হতে পারে। ভোকাল কর্ডের সূক্ষ্ম রক্তনালী ছিঁড়ে রক্তজমাট বাঁধতে পারে। এ অবস্থায় কথা বলা বন্ধ রাখতে হবে যত দিন না জমাট রক্ত মিলিয়ে না যায়।
ভোকাল কর্ড প্যারালাইসিস বা দুর্বলতা
ভোকাল কর্ড বা ল্যারিংসের নার্ভের দুর্বলতা বা কোনো সমস্যার জন্য কণ্ঠনালীর পরিবর্তন হতে পারে। ভাইরাসজনিত প্রদাহের জন্য নার্ভের দুর্বলতা হয়। সাধারণত একদিকের নার্ভই প্যারালাইসিস হয়, দুই দিকের নার্ভ একই সাথে আক্রান্ত হওয়া খুবই বিরল। এক দিকের নার্ভ প্যারালাইসিসের কারণ হচ্ছে ভাইরাল ইনফেক্শন, টিউমার, ক্যান্সার ও থাইরয়েড অপারেশন। কণ্ঠনালীর প্যারালাইসিসের জন্য ফেঁসফেঁসে আওয়াজ হয় এবং এটি নিঃশ্বাসের সাথে জড়িত। কয়েক মাসের মধ্যে এক দিকের প্যারালাইসিস ভালো হয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভোকাল কর্ড প্যারালাইসিস ভালো হয় না, তখন চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।
কণ্ঠনালীর ক্যান্সার
গলার ক্যান্সার বা কণ্ঠনালীর ক্যান্সারকে মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়। গলার স্বর পরিবর্তন পনের দিনের মধ্যে ভালো না হলে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া ও প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার নির্ণয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কণ্ঠনালীর ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করে চিকিৎসা করলে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায় এবং এ চিকিৎসা আমাদের দেশেই বিদ্যমান।
কানপাকা রোগের সার্জারি টিম্পানোপস্নাষ্টি
অধ্যাপক মোঃ আশরাফুল ইসলাম
বিভাগীয় প্রধান, নাক কান গলা বিভাগ
বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ধানমণ্ডি, ঢাকা।
ডায়াবেটিস থেকে কিডনি অকেজো
চিফ কনসালটেন্ট এবং বিভাগীয় প্রধান, কিডনি রোগ বিভাগ, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল
কান পাকা রোগের চিকিৎসায় বর্তমান বিশ্বে টিম্পানোপস্নাষ্টি অতি পরিচিত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। কান পাকা রোগীর কান থেকে পানি বা পুঁজ নির্গত হয়। কানের পর্দায় ছিদ্র থাকে এবং রোগীর শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়। ওষুধের দ্বারা অনেকের কান থেকে পুঁজ বা পানি নির্গত বন্ধ হয় বটে, তবে বেশীর ভাগ ড়্গেত্রেই কানের পর্দার ছিদ্র স্থায়ীভাবে থেকে যায় এবং শ্রবণশক্তিও বেশ লোপ পায়। সংকটজনক কান পাকা রোগীর যদি সময়োপযোগী পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত চিকিৎসা করা হয় তবে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা এ রোগ দীর্ঘস্থায়ী কানপাকা রোগে রূপান্তôরিত হতে পারে না। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী কানপাকা রোগ পুঁজ নির্গত একেবারে বন্ধ হয়ে গেলেও তাদের কানের পর্দায় ছিদ্র থাকার কারণে মধ্যকর্ণ অত্যন্তô নাজুক অবস্থায় থাকে এবং কোন অবস্থায় পানি বা ঘাম কানের মধ্যে প্রবেশ করলে আবার পুঁজ পড়া আরম্ভ হয়। প্রতিবার প্রদাহে কানের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কলা বা কোষসমূহ ড়্গয় হয়ে অপরিবর্তনশীল অবস্থায় চলে যায় এবং সাথে সাথে শ্রবণশক্তিও লোপ পেতে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা পথ খুঁজতে শুরম্ন করলেন কিভাবে এ পথকে রম্নদ্ধ করা যায়। আর তাইতো টিম্পানোপস্নাষ্টির আবির্ভাব। টিম্পানোপস্নাষ্টি এমন একটি অপারেশন পদ্ধতি যা কিনা মধ্যকর্ণের সমস্তô রোগাক্রান্তô কলা বা কোষসমূহ নির্মূল করে যথাসম্ভব পুনরায় সেগুলো পুনঃস্থাপন করে কানের কার্যকারিতা সহনীয় এবং কার্যকরী পর্যায়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
টিম্পানোপস্নাষ্টির ঐতিহাসিক প্রেড়্গাপট অতি পুরানো। তবে এর সূক্ষ্ম কার্যপদ্ধতি ও ফলাফল নির্ভর করে মধ্যকর্ণের অপরিবর্তনশীল রোগের চিকিৎসা ও নির্মূল করার উপর। এ পদ্ধতির সংযোজনায় যোগ হয়েছে অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ। অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ এ কাজের সূক্ষ্মতা বাড়িয়েছে এবং অতি নির্ভুলভাবে রোগীর হারানো কানের পর্দার সফল প্রতিস্থাপন এবং অস্থি সংযোজনের সুযোগ করে দিয়েছে। যার ফলে রোগীর আর কান থেকে পুঁজ বা পানি জাতীয় পদার্থ বের হয় না এবং শ্রবণশক্তি পূর্বের ন্যায় কিংবা কার্যোপযোগী করা সম্ভব হয়। পুঁজ বা পানি জাতীয় পদার্থ নির্গত বন্ধ হলে কানের প্রদাহ থাকে না, আর কানের প্রদাহ না থাকলে কানের ভয়াবহ জটিলতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও থাকে না।
টিম্পানোপস্নাষ্টি বা পুনর্গঠন অপারেশন করতে কাঠামোগত দিক থেকে মূলতঃ নিম্নের অতি গুরম্নত্বপূর্ণ অংশসমূহ বা অঙ্গের প্রয়োজন হয়।
১। একটি স্বাভাবিক কানের পর্দা।
২। এ পর্দার সাথে সচল বা গতিময় কানের অস্থির পূর্ণ, আংশিক কিংবা কোন প্রস্থেটিক অস্থির চেইনের সঠিক সংযোগ।
৩। পর্দা এমনভাবে বসাতে হবে যাতে করে রাউন্ড উইন্ডোকে প্রত্যড়্গ শব্দ থেকে রড়্গা করতে পারে।
৪। পর্দা যেন স্বাভাবিকভাবে বাতাস ভর্তি মধ্যকর্ণকে পরিবেষ্টিত করে রাখে। এ বাতাস শ্রম্নতিনালীর বা ইস্টাশিয়ান টিউবের মধ্য দিয়ে এমনভাবে প্রতিস্থাপন হয় যাতে বায়ুমন্ডলের বাতাসের চাপ এবং মধ্যকর্ণের বাতাসের চাপের সামঞ্জস্য বজায় থাকে।
টিম্পানোপস্নাষ্টির মূলতঃ দুটি অংশ-এর একটি কানের পর্দা জোড়া লাগানো ও অপরটি অস্থি সংযোজন । আর এ কাজ দুটির সফল সমাধানের জন্য মধ্যকর্ণের যাবতীয় রোগজীবাণু নিখুঁতভাবে নির্মূল করা। কানের পর্দা জোড়া লাগাতে সাধারণতঃ রোগীর নিজের শরীরের অর্থাৎ কানের পাশ থেকে এক ধরনের পাতলা টিস্যু বা কলা নেওয়া হয়, যাকে বলে টেম্পোরাল ফ্যাসা। এছাড়াও তরম্নণাস্থি বা তরম্নণাস্থির পাতলা আবরণ এ কাজে ব্যবহার করা হয়। অস্থি সংযোজনের জন্য তরম্নণাস্থি, শরীরের অন্যান্য অংশের অস্থি সুন্দর করে আবার কানের অস্থির মতো বানিয়ে পর্দা ও অন্যান্য ধ্বংসপ্রাপ্ত অস্থির সাথে সংযোগ স্থাপন করা হয়। রোগীর শরীর থেকে এমতাবস্থায় অস্থি না পাওয়া গেলে অন্য মানুষের শরীর থেকেও নেয়া যেতে পারে। এছাড়াও অনেক ড়্গেত্রে একেবারে বানানো কানের অস্থির মডেল, যা বাজারে সহজলভ্য, সেটা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এগুলো সোনা বা পস্নাটিনামের তৈরি জিনিস হয়ে থাকে। কানের পর্দা লাগানো বা অস্থি সংযোজনের পূর্ব শর্তঃ
১) কানের প্রদাহকে নিয়ন্ত্রণে আনা।
২) মধ্যকর্ণকে শুকনা করা।
এ অবস্থায় পুনর্গঠন অপারেশনের ফলাফল খুবই ভাল এবং উপরোক্ত বিষয় দীর্ঘমেয়াদী কান পাকা রোগের চিকিৎসায় বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
টিম্পোনোপস্নাস্টি অপারেশনের সুবিধাঃ
১) কান থেকে পুঁজ পড়া বন্ধ করা
২) শ্রবণশক্তি প্রায় পূর্বের অবস্থায় বা কার্যোপযোগী করা।
৩) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ করা।
৪) সাঁতারম্নদের আগের মতো সাঁতার কাটানোর সুযোগ করে দেয়া।
৫) বিভিন্ন পেশাগত চাকরির সুযোগ করে দেয়া যেমন-সামরিক, নৌ, বিমান, পুলিশ, বিডিআর ইত্যাদি।
৬) সর্বোপরি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা।
অতএব শ্রবণশক্তি সম্পূর্ণ লোপ পাওয়ার পূর্বে কিংবা কানপাকা রোগের জন্য একজন অভিজ্ঞ ইএনটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। অকালে বধিরতার হাত থেকে নিজেকে, পরিবারের অন্যান্য সদস্য, সমাজ ও দেশের সব কান পাকা রোগীদের রড়্গা করম্নন।
টনসিলের ফোড়া বা পেরিটনসিলার অ্যাবসেস
অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী
তীব্র প্রদাহের ফলে টনসিলের ওপরে ও আশপাশে এবং টনসিলের ক্যাপসুলের পাশে পুঁজ জমা হয়। যথাযথ চিকিৎসা না করালে টনসিলের ইনফেকশনের জটিলতা থেকে এ রোগ হতে পারে। এ রোগে তীব্র গলা ব্যথা হয়। টনসিলের ফোড়া সাধারণত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া জীবাণু সংক্রমিত হয়। টনসিলাইটিস বা টনসিলে প্রদাহ যদিও দুই পাশে হয় কিন্তু পেরিটনসিলার অ্যাবসেস সব সময় একপাশে হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণঃ ১. টনসিলের ফোড়া প্রাপ্তবয়স্কদের বেশি হয়। ২. তীব্র গলা ব্যথা। ৩. উচ্চ তাপমাত্রা (১০৩ফ্রঋ-১০৪ফ্রঋ) পর্যন্ত হতে পারে। ৪. খাবার খেতে কষ্ট ও মুখ হাঁ করতে অসুবিধা হয়। ৫. কানে ব্যথা হতে পারে। ৬. মুখ দিয়ে লালা বের হয় ও কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে যেতে পারে। ৭. মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে পারে। রোগীর গলা পরীক্ষা করলে দেখা যাবে টনসিল ও টনসিলের উপরিভাগ, তালু লাল হয়ে ফুলে আছে। চিকিৎসা বিলম্ব করলে রোগীর মুখ হা করতে কষ্ট হয় এবং আরো বিলম্ব হলে ফোড়া ফেটে পুঁজ বের হয়ে আসতে পারে।
জটিলতাঃ ১. ইনফেকশন শ্বাসনালী পর্যন্ত ছড়ায়ে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ২. গলায় সেলুলাইটিস হতে পারে।
৩. সেপটিসেমিয়া বা ইনফেকশন সমগ্র শরীরে ছড়াতে পারে। ৪. পুঁজ ফুসফুসে গিয়ে নিউমোনিয়া হতে পারে।
চিকিৎসাঃ ১. ছোট অপারেশনের মাধ্যমে কেটে পুঁজ বের করে দিতে হবে। ২. কালবিলম্ব না করে প্রথমে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন এবং পরে মুখে খাবার এন্টিবায়োটিক দিতে হবে। ৩. ব্যথার জন্য ওষুধ দিতে হবে। ৪. এন্টিসেপটিক দিয়ে গড়গড় করতে হবে। ৫. ছয় সপ্তাহ পর টনসিল অপারেশন করে নিলে ভালো হয়, অন্যথায় একই সমস্যা আবার হতে পারে।
লেখকঃ অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, নাক কান ও গলা বিভাগ, মেডিক্যাল কলেজ ফর উইমেন অ্যান্ড হাসপাতাল, উত্তরা, ঢাকা। চেম্বারঃ কনফোর্ট টাওয়ার, ১৬৭বি গ্রিন রোড, ঢাকা। ফোনঃ -১৭১৫৫৩৮৬১৯
গ্রন্থনাঃ ডা. মৌসুমী সুলতানা
মুখের রোগ লিউকোপ্লাকিয়া
ডাজ্ঝ মোজ্ঝ ফারুক হোসেন
দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
লিউকোপ্লাকিয়া একটি ক্যান্সারপূর্ব রোগ, যা জিভের ওপর বা মুখের ভেতর দেখা যায়। অনবরত প্রদাহজনিত কারণে এটি হয়ে থাকে। লিউকোপ্লাকিয়া রোগে মুখের ভেতর বা গালের মিউকাস মেমব্রেনে সাদা দাগের সৃষ্টি হয়।
মুখের ক্যান্ডিডিয়াসিস ও লাইকেন প্ল্যানাস রোগে মুখের ভেতর একই ধরনের দাগ দেখা যায়। তাই মুখের লিউকোপ্লাকিয়া রোগ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে লাইকেন প্ল্যানাস ও ক্যান্ডিডিয়াসিসও বিবেচনায় আনতে হবে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্যানডিডা এবং এইচআইভি সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। একে হেয়ার লিউকোপ্লাকিয়া বা ্নোকার্স কেরাটোসিসও বলা হয়। সাধারণত খুব অল্পসংখ্যক লোক লিউকোপ্লাকিয়ায় আক্রান্ত হয়। এটি ৫০ থেকে ৭০ বছর বয়সে বেশি হয়ে থাকে। তবে এর মানে এই নয় যে কম বয়সীদের এ রোগ হয় না।
কারণ
লিউকোপ্লাকিয়ার কারণ এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এটি ধূমপান, দীর্ঘমেয়াদি মুখের জ্বালাপোড়া বা প্রদাহের কারণে হয়ে থাকে। মুখের জ্বালাপোড়া বা প্রদাহ বিভিন্নভাবে হতে পারে, যেমন-মুখের ভেতর ধারালো দাঁতের অংশবিশেষ দীর্ঘদিন ধরে থাকলে; কৃত্রিম দাঁতের অমসৃণ অংশ এবং ফিলিং বা ক্রাউনের অমসৃণ অংশ থাকলে এ রোগ হতে পারে।
ধূমপান ও অন্যান্য তামাকের কারণেও এ রোগ হয়। সে ক্ষেত্রে একে ্নোকার্স কেরাটোসিস বলা হয়। দীর্ঘদিন পাইপ দিয়ে ধূমপান বা যেকোনো ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য ও মাদক গ্রহণ করলে এবং ঠোঁটের ওপর ক্রমাগত সরাসরি সূর্যের আলো পড়লেও এ রোগ হতে পারে।
হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়া সাধারণত বেশি দেখা যায় না। এটি দেখা যায় এইচআইভি পজিটিভ হলে। এইচআইভি সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটি একটি প্রাথমিক লক্ষণ। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা ভালোভাবে কাজ করছে না, তাদের ক্ষেত্রেও হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়া দেখা যেতে পারে। এপস্টেন বার ভাইরাসের মাধ্যমেও এটি হতে পারে। তবে হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়ায় ক্যান্সারের কোনো ঝুঁকি থাকে না।
কোথায় হয়
অধিকাংশ ক্ষেত্রে জিভের পাশে বা ওপরে হয়ে থাকে। তা ছাড়া মুখের ভেতর দুপাশে হতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো প্রজনন অঙ্গের বাইরের অংশে লিউকোপ্লাকিয়া দেখা যায়। তবে এর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি। সাধারণত লিউকোপ্লাকিয়ায় আক্রান্ত স্থানের রং সাদা অথবা ধূসর হয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে তা লাল বর্ণেরও হতে পারে, তখন একে ইরাইথ্রোপ্লাকিয়া বলা হয়।
বাহ্যিক অবস্থা
লিউকোপ্লাকিয়ায় আক্রান্ত স্থান পুরু হয়ে থাকে। এর উপরিভাগ কিছুটা শক্ত হয়ে থাকে। আর হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়া সাধারণত ব্যথাযুক্ত হয়ে থাকে।
জটিলতা
আক্রান্ত স্থানে ক্রমাগত অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করে। ধীরে ধীরে এটি আকারে বেড়ে যেতে পারে। কখনো বা ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
লিউকোপ্লাকিয়ায় সাদা দাগ আক্রান্ত স্থান বাড়তে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সংক্রমিত স্থান ক্রমশ অমসৃণ হয় এবং স্পর্শ করলে ব্যথা হতে পারে। মসলাযুক্ত খাবার বা ঝাল খাবার খেলে জ্বালাপোড়া হতে পারে। লিউকোপ্লাকিয়া কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বায়োপসি বা টিসু পরীক্ষা করতে হয়। মুখের ক্যান্সারও এতে নির্ণয় করা যায়।
চিকিৎসা
লিউকোপ্লাকিয়ার চিকিৎসা শুরুর আগে যেসব কারণে এ রোগ হতে পারে সেগুলো বর্জন করতে হবে। ধূমপান, পান-সুপারি খাওয়া, অ্যালকোহল পানের অভ্যাস থাকলে তা অবশ্যই বর্জন করতে হবে। ক্রমাগত প্রদাহজনিত কোনো কারণ যদি থাকে, যেমন-ধারালো দাঁতের অংশবিশেষ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা করাতে হবে।
সংক্রমিত স্থানে অপারেশন করা জরুরি হতে পারে। সাধারণত লোকাল অ্যানেসথেসিয়ার মাধ্যমে সংক্রমিত স্থান সার্জারির মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ‘এ’ ও ভিটামিন ‘ই’ লিউকোপ্লাকিয়ার সংক্রমিত স্থানকে সংকুচিত করে।
এ ক্ষেত্রে রোগীকে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। ভিটামিন ‘এ’ ও ভিটামিন ‘ই’ একটি সুনির্দিষ্ট মাত্রায় বিশেষ পদ্ধতিতে সেবন করতে হয়।
না হলে ভিটামিন দীর্ঘদিন সেবন করলেও তা কার্যকর হবে না। ভিটামিন প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে প্রচলিত মলমের বদলে কিছু ওষুধ বিশেষ পদ্ধতিতে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। একটা বিষয় বিশেষভাবে বলা দরকার, তা হলো-মুখস্থ বা প্রচলিত চিকিৎসা অনেক ক্ষেত্রেই লিউকোপ্লাকিয়ার চিকিৎসায় কোনো অবদান রাখে না।
যেহেতু লিউকোপ্লাকিয়ার শতকরা তিন ভাগ ক্যান্সারের দিকে মোড় নেয়, তাই এ রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট সবার আরও বেশি সচেতন ও যত্নশীল হওয়া জরুরি।
নাক ডাকা সমস্যা
পারিবারিক ও অন্যান্য পরিবেশে আমরা অনেক সময় নাক ডাকার সমস্যায় ভুগে থাকি। নাক ডাকার শব্দ অন্যদের কষ্টের কারণ হলেও যে নাক ডাকে সে কিন্তু অনেক সময় এ ব্যাপারে কিছুই বুঝতে পারে না বা জানে না। নাক ডাকা নিয়ে সমস্যা কোনো নতুন ঘটনা নয়। নাক ডাকার কারণে বিদেশে দাম্পত্য কলহ থেকে শুরম্ন করে বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্তô হয়ে থাকে। তা ছাড়া শারীরিকভাবে নাক ডাকার জটিলতায় শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতিবন্ধকতার কারণে ঘুমের মধ্যে শ্বাসরোধজনিত সমস্যায় হৃদরোগ ও শ্বাস প্রশ্বাসের নানা রোগসহ কদাচিৎ ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হতে পারে। উন্নত বিশ্বে এ রোগকে বেশ গুরম্নত্বের সঙ্গে দেখা হয় এবং এর চিকিৎসায়ও প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। পুরম্নষরাই বেশী নাক ডাকে। বয়স থাকে ৪০ থেকে ৬০ এর মধ্যের দেখতে নাদুস নুদুস, স্থূলকায় গলা এবং যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। কদাচিৎ মেয়েরাও নাক যেতে থাকে। তবে মিহি সুরেলা শব্দে। অনেক পুরম্নষ হয়তো সেটা পছন্দও করেন।
কিভাবে নাক ডাকে
নাক বা মুখ দিয়ে যে বাতাস আমরা গ্রহণ করি, তা ফ্যারিংস বা গলবিল হয়ে, ল্যারিংস বা স্বরযন্ত্র হয়ে ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে। সেখান থেকে ব্রংকাস বা ক্লোমনালি হয়ে ব্রোংকিওল বা ক্লোমনালিকা হয়ে এলভিওলাস বা ফুসফুসের বায়ুথলিতে পৌঁছে। নিঃশ্বাসের সময় বাতাস আবার এ পথেই ফিরে আসে। শ্বাসপথের সবচেয়ে কোমল অংশ ফ্যারিংস, যা ওপরের দিকে শেষ হয় নাকের পেছনে বা ন্যাসোফ্যারিংসে এবং নিচের দিকে র্যারিংগোফ্যারিংসে। স্বাভাবিক অবস্থায় ফ্যারিংসের আকার বেস বড় সড়, অনেকটা জায়গাজুড়ে। কিন্তু ঘুমানোর সময় এর আয়তন ছোট হয়ে যায়। তালু, ফ্যারিংস, জিভ ইত্যাদির মাংসপেশির মিথিলতার কাণে জিভ এসময় কিছুটা পেছনে অর্থাৎ ফ্যারিংসের দিকে ঝুলে পড়ে। ফলে নিঃশ্বাসের সময় ফুসফুস থেকে যে বাতাস শ্বাসপথ ধরে বের হতে থাকে, সেটা বাধা পায় অপ্রশস্তô পথে। কম্পন সৃষ্টি হয় তালু ও ফ্যারিংসে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় এই কম্পনের ফলে সৃষ্ট শব্দে নাক ডাকে।
নাক ডাকার কারণ
প্রধানত নাক ও গলার অসুখসহ শরীরের অন্যান্য অসুখ-বিসুখেও অনেকে নাক ডেকে থাকে।
নাকের অসুখঃ নাকের মধ্যবর্তী, হাড় বাঁকা, নাকের মাংসপেশির স্ফীতি, এলার্জি, নাকে পলিপ, টিউমার, নানা কারণে নাক বন্ধ থাকলে।
গলার অসুখঃ টনসিলের প্রদাহ, নাকের পেছনে এনিয়েড গস্ন্যান্ড বৃদ্ধি, ফ্যারিনজাইটিস, তালুর প্যারালাইসিস, ল্যারিংসেস সিস্ট, পলিপ, প্যারালাইসিস।
অন্যান্যঃ অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান, থাইরয়েডের অসুখ, মস্তিôষ্কের অসুখ, স্নায়ুঘটিত রোগ ইত্যাদি।
ঘুমের মধ্যে নাক অনেকেই ডাকে, তাই বলে সবার শ্বাসরোধজনিত রোগ থাকে না।
িপ এপনিয়া বা ঘুমের মধ্যে শ্বাসরোধজনিত রোগ
ঘুমের মধ্যে বারবার শ্বাসরোধ হওয়া, যার স্থায়িত্ব সাধারণত ১০ সেকেন্ডের মতো এবং যা সাত ঘন্টার ঘুমে অন্তôত ৩০ বার হয়ে থাকে। যেখানে রোগী প্রথমে খুব নাক ডাকবে, হঠাৎ নাক ডাকা থেমে যাবে। তারপরেই রোগী ধড়ফড় করে জেড়ে উঠবে। নাক ডেকে থেমে যাওয়া মানেই সেই সময়টুকুর জন্য রোগীর হৃদপিন্ডে অিজেন সরবরাহ কমে গিয়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর পরে উচ্চ রক্তচাপ রক্তচাপ শ্বাসপ্রশ্বাসের রোগ (করপালমোনালি) হৃদরোগ ইত্যাদিসহ হার্টফেল হয়ে ঘুমের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তাছাড়া এসব রোগীর সারারাত বারবার ঘুম ভাঙার কারণে অপরিমিত ঘুম দিনের বেলায় অবসাদ ও ঘুম ঘুম ভাব, কাজকর্মে অমনোযোগী, মাথা ধরা ইত্যাদি সবসময় থাকে।
িপ এপনিয়া তিন ধরনের হয়ে থাকে
সেন্ট্রাল িপ এপনিয়াঃ যেখানে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের পেশিগুলো ভালভাবে কাজ করে না। অবস্ট্রাকটিভ িপ এপনিয়াঃ রোগীর শ্বাসপথে প্রতিবন্ধকতার কারণে হয়ে থাকে এবং সবেচেয়ে বেশি দেখা যায়। মিঙ্ড এপনিয়াঃ এক সঙ্গে উভয় ধরনের এপনিয়ার কারণে হয়ে থাকে। পলিসমনোগ্রাফি রোগ নির্ণয়ের সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ পরীড়্গা এ পরীড়্গা বেশ ব্যয়বহুল, যার জন্য রোগীকে এক রাত ঘুমের পরীড়্গাগারে কাটাতে হয়, যাতে ঘুমের মধ্যে মস্তিôষ্কের কর্মকাণ্ড, পায়ের মাংসের নড়াচড়া, হৃদযন্ত্রের অবস্থা, চোখের নড়াচড়া, নাড়ির স্পন্দন, শ্বাস প্রশ্বাসের মাত্রা ও নাক মুখ দিয়ে বায়ুর গতিবিধি পর্যবেড়্গণ করা হয়। এ পরীড়্গার সাহায্যে শ্বাসরোধজনিত সমস্যা থেকে স্বাভাবিক নাক ডাকা, রোগের ব্যাপ্তি ইত্যাদি নির্ণয় করা যায়।
চিকিৎসা
সাধারণভাবে ওজন কমানো, সুষম ও পরিমিত খাদ্যাভাস, নিয়মিত শরীর চর্চা এবং মদ্যপান, ধূমপান ও ঘুমের ওষুধ বর্জন, খাওয়ার পরপরই শুয়ে না পড়া, মাথায় বালিশ ব্যবহার না করে যে কোনো একপাশে কাত হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করা। বিভিন্ন ধরনের নাক ডাকা বন্ধের যন্ত্র বোতামের মতো ইলেকট্রনিক যন্ত্রঃ কানে পরে শুতে হয়। এর সঙ্গে একটা ছোট্ট মাইক্রোফোন ও বেল লাগানো থাকে। নাসিকা গর্জন শুরম্ন হলেই মাইক্রোফোনে তা ধরা পড়বে এবং বেল বেজে উঠবে। সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ভেঙে যাবে। আরেকটা যন্ত্র, যেটা মুখের ভেতরে নিয়ে শুতে হয়। যন্ত্রটা থাকবে নরম গরম তালুর ওপর, দাঁতের সঙ্গে বাধা, যাতে গলার ভেতর চলে না যায়, যা তালুর কম্পন রোধ করে। এগুলো িপ এপনিয়াতে খুব একটা কাজ করে না। কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসর ডিভাইস িপ এপনিয়াতে কার্যকর, যেখানে নাকে মুখোশ পরিয়ে চিকিৎসা করা হয়। মুখোশের লেজের দিকে থাকে একটি যন্ত্র যার সাহায্যে মুখোশের মধ্যে সারারাত হাওয়া প্রবেশ করানো হয়। অপারেশনের মাধ্যমেঃ মুখগহ্বর, গলা ও নাকের প্রতিবন্ধকতা নিরোধে নানা ধরনের অপারেশন যেমন-গলার টনসিল ও এডিনয়েড অপারেশন। নাকের স্ফীত মাংসপেশি, বাঁকা হাড় পলিপ, টিউমার ইত্যাদি ফেলে দেয়া। উভুলোপ্যালেটো ফ্যারিঙ্গোপস্নাস্টিঃ যেখানে রোগীর টনসিলসহ তালু, ফ্যারিংস ও আলজিভ থেকে অংশবিশেষ কেটে ফেলা হয়। তাছাড়া জিভ যাতে ঘুমের মধ্যে পেছনে হেলতে না পারে, সেজন্য জিভের নিচের পেশিকে চিবুকের হাড়ের ভেতরের অংশে সেলাই করে দেয়া হয়। ছোটখাটো নাক ডাকার ড়্গেত্রে লেজার সার্জারিতেও ভালো ফল পাওয়া যায়। সঙ্গে প্রয়োজনে ওষুধপত্র ব্যবহার করা হয়।
টনসিল অপারেশনঃ জীবনযাত্রার মান উন্নত করে
অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী
জানুয়ারি ২০০৮ সালে প্রকাশিত দু’টি গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, বারবার টনসিল প্রদাহে আক্রান্তô শিশু ও বয়স্ক রোগীদের টনসিল অপারেশন করলে জীবনযাত্রার মানের যথেষ্ট উন্নতি ঘটে। একটি গবেষণায় ৯২ জন প্রায়ই টনসিল প্রদাহে আক্রান্তô শিশুর পিতামাতার মতামত সংগ্রহ করা হয় টনসিল অপারেশনের আগে, অপারেশনের ৬ মাস ও ১ বছর পর।
এক বছরের মধ্যে ৩ বার বা তার চেয়েও বেশি টনসিল প্রদাহ হলে তাকে দীর্ঘমেয়াদি টনসিলাইটিস (জপধৎড়ড়পষয় ঞসষঢ়মললময়মঢ়) বলা হয়।
৫৮ জন শিশুর ৬ মাসের এবং ৩৮ জন শিশুর ১ বছরের অপারেশন-পরবর্তী তথ্য প্রদান করা হলোঃ নিউইয়র্কের ব্রম্নকলিনস্থ স্টেটস ইউনিভার্সিটির ডাউনস্টেট মেডিক্যাল সেন্টারের ডা. এন এ গোল্ডস্টেইন রয়টার্স হেলথকে জানান, গড় বয়স ১০.৬ বছরের শিশুদের মধ্যে টনসিল অপারেশনের পর জীবনযাত্রার মানের উলে্নখযোগ্য উন্নতি হয়েছে, যেমন তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া, খাওয়া-দাওয়া এবং আচার-ব্যবহারে উন্নতি লড়্গণীয়।
উপরিউক্ত শিশুদের অপারেশনের পর মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক বিকাশ ঘটেছে এবং স্বাস্থ্যের যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে। ডা. গোল্ডস্টেইনের মতে, পিতামাতারা আরো জানিয়েছেন, শিশুদের গলায় প্রদাহে ভোগেনি, ডাক্তারের কাছে যেতে হয়নি এবং অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হয়নি। এমনকি শিশুদের ডে-কেয়ার বা স্কুলের কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রয়েছে।
একইভাবে বারবার টনসিল প্রদাহে আক্রান্তô বয়স্ক ৭২ জনের অপারেশন-পূর্ববর্তী এবং ৬ মাস ও ১ বছর-পরবর্তী জীবনযাত্রার মানের তুলনা করা হলে দেখা গেছে, অপারেশনের পর দৈনন্দিন কাজে অধিক উন্নতি ঘটেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দড়্গিণ ক্যারোলিনাস্থ ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের ডা. ডেভিড এল উইটসেল ও তার সহকর্মীরা জানান, ৯৮ শতাংশ রোগীর সামান্য ইনফেকশন হয়েছে এবং ৭৭ শতাংশ পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেছে। বয়স্ক রোগীরা আরো জানান, গলাব্যথা, টনসিলে ব্যথা আর হয়নি, শ্বাস-নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হয়নি এবং ডাক্তারের কাছেও যেতে হয়নি।
টনসিল অপারেশন একটি নিয়মিত অপারেশন যা বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ড়্গেত্রে অধিক পরিমাণে করা হয়।
নিউইয়র্কের ওয়েইল করনেল মেডিক্যাল কলেজের ডা. মাইকেল জি স্টুয়ার্ট বলেন, বারবার টনসিলে আক্রান্তô রোগী এবং টনসিল অপারেশনের ড়্গেত্রে ওই গবেষণাগুলো বিশেষ অবদান রেখেছে।
টনসিল অপারেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। ওই প্রবন্ধের লেখক আল্ট্রাসনিক পদ্ধতিতে রক্তপাতহীন টনসিল অপারেশন করেন। বাংলাদেশের কমফোর্ট হাসপাতাল ১৬৭ বি, গ্রিন রোড, ঢাকায় নিয়মিত আল্ট্রাসনিক টনসিল অপারেশন হয়। এই পদ্ধতিতে সুবিধা হচ্ছে রক্তপাতহীন, নিরাপদ, অত্যন্তô কম সময় লাগে, অপারেশনের পরই রোগী মুখে খেতে পারে এবং অতি শিগগির আরোগ্য লাভ করে।
লেখকঃ নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, মেডিক্যাল কলেজ ফর উইমেন অ্যান্ড হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা। চেম্বারঃ কমফোর্ট টাওয়ার (তৃতীয় তলা), ১৬৭/বি, গ্রিন রোড, ঢাকা-১২০৫। মোবাইলঃ ০১৮১৯২২২১৮২
টনসিল অপারেশন কেন করবেন
জানুয়ারি ২০০৮-এ প্রকাশিত দুইটি গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায় যে, বার বার টনসিল প্রদাহে আক্রান্তô শিশু ও বয়স্ক রোগীদের টনসিল অপারেশন করলে জীবন-যাত্রার মানের যথেষ্ট উন্নতি ঘটে। একটি গবেষণায় ৯২ জন প্রায়ই টনসিল প্রদাহে আক্রান্তô শিশুর পিতা-মাতার মতামত সংগ্রহ করা হয় টনসিল অপারেশনের পূর্বে, অপারেশনের ৬ মাস ও ১ বছর পর।
এক বছরের মধ্যে ৩ বার বা তার চেয়েও বেশি টনসিল প্রদাহ হলে তাকে দীর্ঘমেয়াদী টনসিলাইটিস (জবপঁৎৎবহঃ ঞড়হংরষষরঃরং) বলা হয়।
৫৮ জন শিশুর ৬ মাসের এবং ৩৮ জন শিশুর ১ বছরের অপারেশন পরবর্তী তথ্য প্রদান করা হলোঃ নিউইয়র্কের ব্রম্নকলিনস্থ স্টেটস ইউনিভার্সিটির ডাউনস্টেট মেডিক্যাল সেন্টারের ডাঃ এনএ গোল্ডস্টেইন রয়টার্স হেলথকে জানান যে, গড় বয়স ১০জ্ঝ৬ বছরের শিশুদের মধ্যে টনসিল অপারেশনের পর জীবন-যাত্রার মানের উলেস্নখযোগ্য উন্নতি, যেমনতৈাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ায়, খাওয়া-দাওয়া এবং আচার ব্যবহারে উন্নতি লড়্গ্যণীয়।
উপরোক্ত শিশুদের অপারেশনের পর মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক বিকাশ ঘটেছে এবং স্বাস্থ্যের যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে। ডাঃ গোল্ডস্টেইনের মতে পিতা-মাতারা আরো জানিয়েছেন যে, শিশুদের গলায় প্রদাহে ভোগেনি, ডাক্তারের কাছে যেতে হয়নি এবং অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হয়নি। এমনকি শিশুদের ডে-কেয়ার বা স্কুলের কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রয়েছে।
একইভাবে বার বার টনসিল প্রদাহে আক্রান্তô ৭২ জন বয়স্কদের অপারেশন পূর্ববর্তী এবং ৬ মাস ও ১ বছর পরবর্তী জীবন-যাত্রার মানের তুলনা করা হলে দেখা গেছে যে, অপারেশনের পর দৈনন্দিন কাজে অধিক উন্নতি ঘটেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দড়্গিণ ক্যারোলিনাস্থ ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের ডাঃ ডেভিড এল উইটসেল ও তার সহকর্মীরা জানান যে, ৯৮% রোগীর সামান্য ইনফেকশন হয়েছে এবং ৭৭% পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেছে। বয়স্ক রোগীরা আরো জানায় যে, গলা ব্যথা, টনসিলে ব্যথা আর হয়নি, শ্বাস নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হয়নি এবং ডাক্তারের কাছেও যেতে হয়নি। টনসিল অপারেশন একটি নিয়মিত অপারেশন যা বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ড়্গেত্রে অধিক পরিমাণে করা হয়। নিউইয়র্কের ওয়েইল করনেল মেডিক্যাল কলেজের ডাঃ মাইকেল জি স্টুয়ার্ট, যিনি এই গবেষণার সাথে সংশিস্নষ্ট ছিলেন না, বলেন যে, বার বার টনসিলে আক্রান্তô রোগী এবং টনসিল অপারেশনের ড়্গেত্রে উক্ত গবেষণাগুলো বিশেষ অবদান রেখেছে।
টনসিল অপারেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। উক্ত প্রবন্ধের লেখক আল্ট্রাসনিক পদ্ধতিতে রক্তপাতহীন টনসিল অপারেশন করেন। বাংলাদেশের কমফোর্ট হাসপাতাল ১৬৭/বি, গ্রীন রোড ঢাকায় নিয়মিত আল্ট্রাসনিক টনসিল অপারেশন হয়। এই পদ্ধতিতে সুবিধাসমূহ হচ্ছে, রক্তপাতহীন, নিরাপদ, অত্যন্তô কম সময় লাগে, অপারেশনের পরেই রোগী মুখে খেতে পারে এবং অতি শীঘ্র আরোগ্য লাভ করে।
অধ্যাপক ডাঃ এম আলমগীর চৌধুরী
নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি
মেডিক্যাল কলেজ ফর উইমেন এন্ড হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৮১৯২২২১৮২
কানে পানি ঢুকলে কি কান পাকে?
ডা. সজল আশফাক
কানপাকা রোগ নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর রোগের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কারণ হিসেবে অতীতে কোনো একসময়ে কানে পানি যাওয়াকে দায়ী বলে মনে করেন রোগীরা। অনেক রোগীই মনে করেন, কানে পানি গেলে কান পাকে। তাদের ধারণা, কোনো একসময়ে গোসল করতে গিয়ে ঢুকে যাওয়া পানিই কানপাকার পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। কোনো কোনো সময় রোগীরা সাম্প্রতিককালে কানে পানি ঢোকার ইতিহাস না বলে পাঁচ-সাত বছর আগের ঘটনাও বলে থাকেন।
কানপাকা সম্পর্কে সাধারণের এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। আসল কথা হচ্ছে, কানের পর্দায় যদি কোনো ধরনের ফুটো না থাকে তখন বহিঃকর্ণের পথে পানি ঢুকলেও তা পর্দা ফুটো করে মধ্যকর্ণে ঢুকতে পারে না এবং কানপাকা রোগ সৃষ্টিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। সাধারণের কাছে কানপাকা বলে পরিচিত রোগটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয়, ক্রনিক সাপোরেটিভ ওটাইটিস মিডিয়া বা সিএসওএম। কানপাকা রোগের পেছনে দায়ী বিষয়গুলো হচ্ছে ঘন ঘন মধ্যকর্ণে ইনফেকশন, শৈশবে হাম, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডিপথেরিয়ার মতো সংক্রামক রোগ হওয়া, কানের পর্দার পেছন দিকে উপরের অংশে, মধ্যকর্ণের ভেন্টিলেসন বা বায়ু চলনে সৃষ্ট সমস্যার জন্য সংহরণ পকেট তৈরি হওয়া (সংহরণ পকেট হচ্ছে কানে পর্দার কোনো অংশে ভেতরের দিকে ঢুকে গিয়ে গর্তের মতো হয়ে যাওয়া) এবং কোলেস্টিয়েটমা নামক ধ্বংসাত্মক পদার্থ সৃষ্টির প্রক্রিয়া চালু থাকা; নির্দিষ্ট কিছু সমস্যার জন্য মধ্যকর্ণে বারবার পানি জমে যাওয়া; মধ্যকর্ণের সাথে নাস-গলবিল বা ন্যাসোফ্যারিংসের যোগাযোগ রক্ষাকারী ইউস্ট্যাশিয়ান টিউব সঠিকভাবে কাজ করতে না পারা ইত্যাদি। এসব কারণ ছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে কানপাকার। তবে উল্লিখিত কারণগুলো থেকে কানপাকা রোগ সৃষ্টির পেছনে ঊর্ধ্বশ্বাসনালীর ইনফেকশন, টনসিলাইটিস ও এডিনয়েড বেড়ে যাওয়া (নাকের পেছন দিক বরাবর নাস-গলবিল অঞ্চলে এডিনয়েড নামক লসিকাগ্রন্থির বৃদ্ধি) বিশেষ ভূমিকা রেখে থাকে। প্রকৃতভাবে এসব সমস্যা থেকেই প্রকারান্তরে মধ্যকর্ণে তীব্র সংক্রমণ দেখা দেয়, যা পরে স্থায়ী রূপ নেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব সংক্রমণের মূল অনুঘটক হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া কিংবা ভাইরাস। কানপাকা রোগ সৃষ্টির পেছনে কোনোভাবেই কানে পানি ঢোকা দায়ী নয়। বরং কানপাকা রোগ থাকলে কোনোক্রমেই যাতে কানে পানি ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ কানপাকা রোগ থাকা অবস্থায় কানে পানি ঢুকলেই কানপাকা রোগ আরো খারাপ হওয়ার সমূহ আশঙ্কা দেখা দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কানপাকা রোগ সেরে যাওয়ার পরও কানের পর্দা ছিদ্র থাকা রয়েই যায় কিংবা কারো কারো ক্ষেত্রে একেবারেই পর্দা থাকে না। উভয় ক্ষেত্রেই কানে যাতে পানি না ঢোকে সে ব্যবস্থা নিয়মিতভাবে মেনে চলতে হয়। সেই সাথে যাতে ঘন ঘন সর্দিকাশি না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হয়। কাজেই যাদের কানপাকা রোগ রয়েছে তাদের কানে পানি ঢুকলে সেই কানে বারবার কানপাকা রোগ দেখা দেবে।
তবে যাদের কান ভালো রয়েছে অর্থাৎ যাদের কানের পর্দা ছিদ্র নয় কিংবা যাদের কানের পর্দা অক্ষত আছে তাদের বহিঃকর্ণে পানি ঢুকলে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কখনো কখনো বহিঃকর্ণে পানি ঢুকে আটকে গেলে তা সাময়িক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করলেও শরীরের তাপেই সেই সামান্য পরিমাণ পানি অল্প সময়ের মধ্যেই বাষ্পীভূত হতে বাধ্য। কিন্তু কোনো কারণে কানে নোংরা ময়লা পানি ঢুকলে বহিঃকর্ণে ইনফেকশন হতে পারে। তাই সুস্থ কানে বহিঃকর্ণ অংশে পানি ঢোকা সমস্যা নয়, এ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করলেও চলবে।
লেখকঃ নাক কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ, চেম্বারঃ ইনসাফ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, ১২৯ নিউ ইস্কাটন, ঢাকা। মোবাইলঃ ০১৫৫২৩০৮৬২৩
কানে ইনফেকশন
বেশিরভাগ শিশুই বেড়ে ওঠার সময় কমপড়্গে একবার হলেও মধ্যকর্ণের ইনফেকশনে ভুগে থাকে। সাধারণত ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে এ ধরনের ইনফেকশন বেশি হয়ে থাকে এবং সেই সাথে ওই শিশুদের ঠাণ্ডায় আক্রান্তô হতে দেখা যায়। টেক্সাস চিলড্রেনস হাসাপাতালের ওটোল্যারিংগোলজি বিভাগের প্রধান ডা. এলেন ফ্রাইডম্যান বলেন, ‘যখন কোনো শিশুর ঠাণ্ডা লাগে তখন মধ্যকর্ণের ইউস্টেশিয়ান টিউব ফুলে যেতে পারে এবং পরে বন্ধও হয়ে যায়। ফলে জীবাণু এবং তরল পদার্থ মধ্যকর্ণে জমা হয়ে ব্যথাযুক্ত ইনফেকশনের সৃষ্টি করতে পারে।’
এসব ড়্গেত্রে শুধু একজন ডাক্তারই সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারবেন আপনার শিশুর কানে ইনফেকশন হয়েছে কি না। শিশুদের কানে ইনফেকশন হলে যে লড়্গণগুলো দেখা যায় তা হলো শিশু হাত দিয়ে কান রগড়াতে বা চুলকাতে থাকে, অস্বস্তিôবোধ করে এবং কান খামচাতে থাকে। এ ছাড়া কান থেকে পুঁজ বের হওয়া, কান ব্যথা করা, কানে কম শোনা এবং জ্বর থাকতে পারে। বেশি ছোট শিশুরা এ সময় অন্য সময়ের চেয়ে বেশি কাঁদে।
যদি আপনার শিশুর কানে ইনফেকশন হয়ে থাকে তাহলে ডাক্তার সাধারণত এন্টিবায়োটিকের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। এটা খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ যে, ওষুধের কোর্স সমাপ্ত হওয়ার আগেই যদি শিশুটি সুস্থবোধ করতে থাকে তার পরও ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ করতে হবে। না হলে ইনফেকশন সৃষ্টিকারী জীবাণু ওষুধটির বিরম্নদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে এবং তখন শিশুটির কানে ইনফেকশন হওয়ার অশঙ্কাও বেড়ে যায়।
শিশুর নাক দিয়ে রক্তড়্গরণ হলে
নাক দিয়ে অনেক কারণেই রক্ত পড়তে পারে। তার মধ্যে কিছু কারণ হচ্ছে নাকে আঘাত পাওয়া, অত্যধিক নাক ঘষা অথবা তীব্র গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ায় অনেকড়্গণ অবস্থান করা। নাক দিয়ে হঠাৎ করে রক্ত পড়তে শুরম্ন করলে অস্থির হবেন না। রক্তপাত বন্ধ করতে নাসারন্ধ্রের ঠিক উপরেই বৃদ্ধাঙ্গুল এবং তর্জনি দিয়ে জোরে চেপে ধরম্নন। শিশুদের ড়্গেত্রে তাদের মাথাকে সামনের দিকে এমনভাবে ঝুঁকিয়ে দিন যেন থুতনি বুকের সাথে লেগে থাকে। এবার একটি রম্নমালজাতীয় পরিষ্কার কাপড় ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে নাকের ওপর চেপে ধরম্নন। টেক্সাস চিলড্রেনস হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. জ্যান দ্রম্নৎজ বলেন, ‘যদি অত্যধিক রক্তপাত হয় অথবা পনেরো থেকে বিশ মিনিটের মধ্যেও রক্তপাত বন্ধ করা না যায় তাহলে একজন শিশু বিশেষজ্ঞকে ডাকাই উত্তম হবে। যদি প্রায়ই আপনার শিশুর নাক দিয়ে রক্ত পড়ে অথবা রক্তড়্গরণের জন্য কোনো উপসর্গ যেমন ত্বকের নিচে রক্ত জমাটবাঁধা অথবা মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া ইত্যাদি লড়্গ করেন তাহলে অতি সত্বর আপনার শিশু ডাক্তারকে তা অবহিত করম্নন।
কানের উপরের অংশ ফোঁড়ানো নিরাপদ নয়
আজকাল কানে একাধিক ফুটো না করলে যেন ফ্যাশনটা জমে না। তরম্নণীরা খুব আগ্রহ করেই কানের উপরের অংশে দু-তিনটা ছিদ্র করে তাতে বাহারি অলঙ্কার বসিয়ে দেন। কিন্তু তারা অনেকেই হয়তো জানেন না যে, কানের উপরের অংশ ফোঁড়ানো সবসময় নিরাপদ নয়। কারণ কানের উপরের অংশটা হলো তরম্নণাস্থি দিয়ে তৈরি। আর এই তরম্নণাস্থির নিজস্ব কোনো রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালী নেই। সুতরাং এই তরম্নণাস্থি কোনো প্রদাহ অথবা ইনফেকশন হলে তা খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে এবং সহজে ভালো হয় না। এমনকি রক্তনালী নেই বলে সেখানে অ্যান্টিবায়োটিকও পৌঁছায় না। কিন্তু কানের লতিতে এসব সমস্যা নেই। সুতরাং কান ফোঁড়ানোর জন্য কানের লতিকেই বেছে নেয়া ভালো। ফ্যাশন চর্চার নাম করে কানের উপরের অংশ না ফোঁড়ানোই সমীচীন
নাক কান গলায় লেজার সার্জারি এখন দেশেই
ডা. শারমিন সুলতানা
কণ্ঠস্বর মানুষের এক অমূল্য সম্পদ। সুন্দর কণ্ঠস্বর সকলেরই কাম্য। বিশেষ করে যারা কণ্ঠস্বরনির্ভর পেশা, যেমন শিক্ষকতা, রাজনীতি, অভিনয়, আবৃত্তি, সংবাদ পরিবেশন, সংগীত ইত্যাদিতে জড়িত তাদের কাছে সুন্দর কণ্ঠস্বর কতটা প্রয়োজন তা বলাই বাহুল্য। কণ্ঠস্বর বিকৃতি কিংবা কণ্ঠস্বর নষ্ট হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। মূলত স্বরধ্বনি শ্বাসযন্ত্রের যে অংশ থেকে তৈরি হয় সেখানকার বিভিন্ন অসুখের সূচনাতেই স্বরভঙ্গ ঘটে কিংবা কণ্ঠস্বর ভেঙে যায়। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে এই সব সমস্যার অধিকাংশই সেরে ওঠে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, সময়োচিত উপদেশ তথা যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে। এই বাস্তবতায় ১৩ মে ২০০৮ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা ও হেড-নেক সার্জারি (ইএনটি) বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ১ম জাতীয় মাইক্রোল্যারিঞ্জিয়াল সার্জারি (ফোনোসার্জারি বা কণ্ঠস্বরসম্পর্কিত শৈল্য চিকিৎসা) বিষয়ক কর্মশালা। মাইক্রোল্যারিঞ্জায়াল সার্জারির এই কর্মশালায় মূল আকর্ষণ ছিল লেজার সার্জারি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো দেশের কোন জাতীয় কর্মশালায় কণ্ঠনালীর ওপর লেজার রশ্মি প্রয়োগে অপারেশন করলেন দেশের প্রখ্যাত নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোঃ জিল্লুর রহমান। লেজার নির্ভর কণ্ঠনালীর লাইভ সার্জারি প্রদর্শনসহ বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ উপস্থাপন করতে যেয়ে অধ্যাপক জিল্লুর রহমান বলেন, কণ্ঠনালীর সূক্ষ্ন অপারেশনসহ নাক কান গলার অনেক অপারেশনই অত্যন্ত সফলভাবে লেজারের মাধ্যমে করা যায়। গত কয়েকমাস ধরে নাক কান গলায় বিভিন্ন ধরনের লেজার সার্জারি করছেন তিনি। লেজার হচ্ছে বিশেষ ধরণের আলোক রশ্মি। এই রশ্মিকে ব্যবহার করা হয় অপারেশনের জন্য ব্যবহৃত ব্লেডের বিকল্প হিসেবে কিংবা বৈদ্যুতিক প্রবাহ দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার উন্নত বিকল্প প্রযুক্তি হিসেবে। লেজারের সুবিধা হচ্ছে অত্যন্ত সরু ও সূক্ষ্ন রেখার মতো এটি যেমন কাটতে পারে তেমনি কাটা অংশটুকু কতটুকু গভীর হবে তাও আগে থেকে নির্দিষ্ট করে দেয়া যায়। লেজার রশ্মি একই সঙ্গে কাটে এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে পারে। কোনো কোনো সময়ে কোষ-কলাকে বাষ্পীভূত করে দেয়া যায়। এই সব কাজের সময় আশপাশের কোষ-কলা ততটা প্রভাব পড়ে না। তাই অপারেশনজনিত ইনজুরি খুবই কম হয় বলে জানালেন অধ্যাপক ডা. জিল্লুর রহমান। তবে এই অপারেশনের জন্য সার্জনকে অবশ্যই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত হতে হবে। একইভাবে অজ্ঞানের কাজে নিয়োজিত চিকিৎসককে হতে হবে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। তবে নাকের অপারেশনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগী অজ্ঞান করে অবশ করেই কাজটি করা যাচ্ছে।
নাক কান গলা বিষয়ে যে সব অপারেশন লেজার রশ্মি প্রয়োগে করা যায় সেগুলো হচ্ছে-
নাকের টারবিনোপ্লাস্টি বা এলার্জিজনিত কারণে নাসারন্ধে ্র বেড়ে যাওয়া মাংসপিন্ডকে কার্যকরভাবে সঙ্কুুচিত করে দেয়া।
নাকের পলিপ কেটে ফেলা।
কানের পলিপ কেটে ফেলা।
জিহবার কিংবা গালের ভিতরের দিকে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা মাংসপিন্ড কিংবা টিউমার/ ক্যান্সারের অপারেশন।
নাকডাকা কিংবা ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টের জন্য প্রযোজ্য অপারেশন।
টনসিলের অপারেশন, কণ্ঠনালীর ভোকাল কর্ডে বেড়ে ওঠা বিভিন্ন ধরনের পিন্ড কেটে ফেলা।
নাকের ভিতর দিয়ে চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়া দূর করার জন্য প্রযোজ্য অপারেশন ইত্যাদি।
লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সব অপারেশনের বাড়তি সুবিধা হলো-
অপারেশন সুনির্দিষ্টভাবে দরকারী স্থানে করা যায় বলে কাটাছেঁড়া অনেক কম লাগে ফলে অপারেশনজনিত আঘাত কম হয়।
রোগী তুলনামূলকভাবে অপারেশনের পর অনেক কম ব্যথা অনুভব করে।
খুব কম সময় হাসপাতালে থাকতে হয়।
লেজার দিয়ে কাটাছেঁড়া করা হয় বলে রক্তক্ষরণ হয় না বললেই চলে।
রোগী দ্রুত সেরে ওঠে।
কর্মশালায় দেশের প্রায় ২ শতাধিক নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ গভীর আগ্রহ নিয়ে বড় পর্দায় কণ্ঠনালীতে লাইভ লেজার সার্জারি অবলোকন করেন। লেজার সার্জারির দেশে একটি নতুন বিষয় হওয়ায় এর প্রতি যেমন চিকিৎসকদেরও ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে তেমনি আগ্রহ রয়েছে রোগীদেরও। তবে এর সঠিক প্রয়োগ প্রয়োজন। ইএনটি সাধারণত ডায়ো ও কার্বন ডাই অক্সাইড লেজার ব্যবহার করা হচ্ছে।
নাকের ড্রপ বেশি ব্যবহার করবেন না
ডা. সজল আশফাক
সর্দি হলেই যাদের নাক বন্ধ হয়ে যায় তারা সাধারণত নাকের ড্রপ ব্যবহার করেন। এই ড্রপগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বেশ কাজ করে। নাকে দুই-তিন ফোঁটা ড্রপ দেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে বন্ধ নাক খুলে যায়। স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নেয়া যায়। কিন্তু এই ড্রপগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যা মোটেই সুখকর নয়। নাকের ড্রপ একটানা তিন-চার দিন ব্যবহার করলে নাসারন্ধে ্রর আবরণী কলাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সাইনুসাইটিসের জটিলতা বাড়ে। তাই নাকের ড্রপ যতই কম ব্যবহার করা যায় ততই মঙ্গল। তবে দিনের অধিকাংশ সময়ই যাদের নাক বন্ধ থাকে এবং যারা এসব ড্রপের ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল তাদের জন্য একটি ভালো পরামর্শ রয়েছে। আর তা হলো বিকল্প ন্যসাল ড্রপ। ব্যবহার্য ন্যসাল ড্রপের অর্ধেক ফেলে দিয়ে তাতে পানি ভরে নিতে হবে। পানি অবশ্য কমপক্ষে ১০ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে। ব্যস, হয়ে গেল বিকল্প ন্যসাল ড্রপ। এই ড্রপটি এক নাগাড়ে ছয়-সাত দিন ব্যবহার করা যাবে।
রাইনোস্পরিডিওসিস নাকের ফাংগাল ইনফেকশন প্রফেসর ডা. এম আলমগীর চৌধুরীনাকের ফাংগাল ইনফেকশনকে রাইনোস্পরিডিওসিস বলা হয়। এই ইনফেকশন নাক ছাড়াও দেহের অন্য অঙ্গেও হতে পারে। কিভাবে ছড়ায়ঃ ফাংগাল স্পোর গরু-ছাগল, ঘোড়ার মলদ্বারা পুকুরের পানি ও বাতাসে ছড়ায়। এই স্পোর সংক্রমিত পানিতে গোসল করলে বা সংক্রমিত বাতাসে শ্বাস গ্রহণ করার মাধ্যমে তা মানুষের দেহে প্রবেশ করে। নাকে কোনো ক্ষত থাকলে সেই ক্ষত দিয়ে জীবাণু ছড়াতে থাকে। এই স্পোর নাকের সাব মিউকোসাতে বংশ বৃদ্ধি করে স্পোরানজিয়া গঠন করে। এই স্পোর জার্মিনাল পোর-এর মধ্য দিয়ে ভেঙে যায় এবং টিস্যুতে নিঃসরিত হয় এবং টিস্যুতে রিএকটিভ হাইপারপ্লাসিয়া হয় এবং পলিপের মতো বা টিউমারের মতো দেখতে অনেকটা স্ট্রবেরি ফলের মতো দেখায়। কাদের এবং কোথায় বেশি হয়ঃ নাকের ছত্রাকজনিত রোগ পুরুষের বেশি হয়। সাধারণত ১১ থেকে ৪০ বছর বয়সে বেশি হয়। তবে যে কোনো বয়সে এবং মহিলারাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগ ভারতীয় উপমহাদেশে যেমন বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বেশি হয়ে থাকে। রোগের লক্ষণসমূহঃ নাক বন্ধ হওয়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, নাকে চুলকানি হওয়া, নাকে টিউমারের মতো বা পলিপের মতো কিছু (স্ট্রবেরি ফলের মতো) দেখা যেতে পারে। রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতিঃ বায়োপসি এবং হিস্টোপ্যাথলজি করে রোগ নিশ্চিত করা যায়। চিকিৎসাঃ পলিপয়েড মাস এবং আশপাশের আক্রান্ত জায়গায় সম্পূর্ণ এবং বিস্তৃতভাবে অপারেশন করতে হবে। কেটে ফেলা স্থানটি কটারাইজেশন করতে হবে। এতে করে রক্তপাত কম হবে এবং আবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। লেখকঃ বিভাগীয় প্রধান, নাক, কান ও গলা বিভাগ, মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন, উত্তরা, ঢাকা। মোবাইলঃ ০১৮১৯২২২১৮২