রক্তচাপ কমাতে ব্যায়াম
ব্যায়াম শব্দটা খুব সুন্দর না হলেও এটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ হিসাবে খুব সুন্দরভাবে কাজ করে যায় নীরবে। অনেক ছোট খাট রোগ ছাড়াও অনেক বড় বড় রোগ আছে যেগুলো ছাড়াতে ব্যায়ামের ভূমিকা অনস্বীকার্য। উচ্চ ও নিম্ন রক্তচাপ কমাতে ব্যায়াম অত্যন্তô গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবনের পাশাপাশি খুব সহজেই ঘরে বসে সামান্য ব্যায়াম করে তাড়াতাড়ি রোগ হতে আরোগ্য লাভ করতে পারি। উচ্চ ও নিম্ন রোগীদের মুখে প্রায়ই শোনা যায়, শারীরিক দুর্বলতা, মাথা ভার বোধ, বুক ধড়ফড় করা, দম নিতে কষ্ট, দম ছাড়তে কষ্ট, রাত্রে নিদ্রার ব্যাঘাত, দৈনিক ব্যায়ামকরণে দেহের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়, মস্তিôকের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং শরীরে সব অঙ্গগুলো শক্তিশালী হয়, ফলে এসব সমস্যা ব্যায়ামের মাধ্যমে সহজেই দূর করা যায়। উচ্চ ও নিম্ন রক্তচাপের রোগীদের খাদ্যের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে এবং সেইসাথে যৌগিক ব্যায়াম করলে রোগসমূহ সহজেই নিরাময় হয়। উচ্চরক্তচাপে আক্রান্তô রোগীদের মাথা নিচে করে কোন আসন অভ্যাস করা উচিত নয়। তারা শবাসন, বজ্রাসন ইত্যাদি করবে এবং হাঁটার অভ্যাস করবে। কারণ হাঁটা হল সর্বোৎকৃষ্ট ব্যায়াম। উচ্চরক্তচাপের রোগীরা শীর্ষাসন, লোসন প্রভৃতির অভ্যাস করবেন না। এ রোগীরা সর্বদা দুশ্চিন্তôা, উদ্বেগ, উত্তেজনার কারণ বর্জন করম্নন। রক্তচাপের রোগীদের সবসময় ডাক্তারী পরামর্শ করা এবং ডাক্তারের নির্দেশমত ওষুধ সেবন করা উচিত। আঁকাবাঁকা পথে হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। আপনারা হয়তো ভাবছেন এটা কেমন কথা। সহজ রাস্তôা ছেড়ে আঁকাবাঁকা রাস্তôায় চলব কেন? উঁচু, নিচু রাস্তôায় হাঁটলে শরীরের রক্ত চলাচল ভাল হয়, রক্ত চাপ কমে। ফলে প্রতিদিন অন্তôত আধঘন্টা করে হাঁটার চেস্টা করম্নন। নিয়মিত হাঁটা ওষুধের চেয়ে খুব কম কার্যকরী নয়। নিয়মিত ব্যায়াম করলে বা হাঁটলে দেখবেন দেহের অভ্যন্তôরের নানা জানা-অজানা রোগগুলো নিজের অজান্তেôই সেরে গেছে।
উচ্চ রক্তচাপ এবং করণীয়
অধ্যাপক ডা. তোফায়েল আহমেদ
মানবদেহের স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো সিস্টোলিক ১০০-১৪০ মি.মি. মারকারি এবং ডায়াস্টোলিক ৬০-৯০ মি.মি. মারকারি। বয়স এবং লিঙ্গ ভেদে রক্তচাপ এই স্বাভাবিক মাত্রার বেশি হলে তাকে উচ্চরক্তচাপ এবং কম হলে তাকে নিু রক্তচাপ বলে। তবে হঠাৎ করে সাধারণ নিয়মের অতিরিক্ত রক্তচাপ বাড়লেই তাকে আমরা উচ্চরক্তচাপ হিসেবে ধরব না। রাতে ভালো ঘুমের পর ভোরে বিছানায় শোয়া অবস্থায় পরপর তিন দিন রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার বেশি পাওয়া গেলে তাকে আমরা উচ্চরক্তচাপ বলব। কারণ অতিমাত্রায় চিন্তা, পরিশ্রম, মানসিক অশান্তিতে ক্ষণিকের জন্য সিস্টোলিক রক্তচাপ বাড়তে পারে। কিন্তু ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার অতিরিক্ত হওয়া মানেই রোগীর উচ্চরক্তচাপ রয়েছে। উচ্চরক্তচাপ কোনো রোগ নয়; বরং এটি অন্য কিছু রোগের উপসর্গ মাত্র। তবে ৯০-৯৫ শতাংশ উচ্চরক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। একে প্রাইমারি অথবা এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন বলে। এই প্রাইমারি হাইপারটেনশনের জন্য কতগুলো নিয়ামকের ভূমিকা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এগুলো হলো জেনেটিক অথবা পারিবারিক উচ্চরক্তচাপের ইতিহাস, স্থূল ও মেদবহুল শরীর, ধূমপান, বেশি লবণ খাওয়া, বেশি অ্যালকোহল সেবন, কতগুলো বিশেষ হরমোন অথবা নিউরোট্রান্সমিটার। বাকি ৫-১০ শতাংশ উচ্চরক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো কিডনিজনিত রোগ, হরমোনগ্রন্থিজনিত রোগ, রক্তনালীর জন্মগত ত্রুটি, গর্ভধারণজনিত জটিলতা এবং দীর্ঘ দিন বিশেষ কোনো ওষুধ সেবন যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি, স্টেরয়েড, লবণযুক্ত কোনো ওষুধ প্রভৃতি।
উচ্চরক্তচাপের শ্রেণীবিন্যাস
ক্যাটেগরি ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ সিস্টোলিক রক্তচাপ
(মি.মি. মারকারি মি.মি. মারকারি)
স্বাভাবিক <৮৫ <১৩০ স্বাভাবিকের সর্বোচ্চসীমা ৮৫-৮৯ ১৩০-১৩৯ মাইল্ড হাইপারটেনশন ৯০-৯৯ ১৪০-১৫৯ মডারেট হাইপারটেনশন ১০০-১০৯ ১৬০-১৭৯ সিভিয়ার হাইপারটেনশন >১১০ >১৮০
উচ্চরক্তচাপের রোগীরা চিকিৎসকের কাছে যেভাবে উপস্থিত হনঃ
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে উচ্চরক্তচাপ সাধারণত তিন ভাবে নির্ণীত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ
? কিছু রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চরক্তচাপ দৈবাত নির্ণীত হয়। যেমন বার্ষিক বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় অথবা কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় অথবা বিদেশ গমনের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়। এই রোগীদের সাধারণত উচ্চরক্তচাপের কোনো লক্ষণ থাকে না।
ষ দ্বিতীয়ত, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোগীর মাথাধরা, মাথা ঝিম ঝিম করা, ঘাড়ে ব্যথা, নিদ্রাহীনতা, অস্থিরতা, বেশি বেশি প্রস্রাব হওয়া প্রভৃতি সাধারণ উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে উপস্থিত হন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় তাদের উচ্চরক্তচাপ ধরা পড়ে।
ষ শেষোক্ত ভাগের রোগীরা উচ্চরক্তচাপজনিত বিভিন্ন জটিলতা, যেমন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, হৃদরোগ, কিডনিজনিত জটিলতা, রেটিনাজনিত জটিলতায় চোখে কম দেখা প্রভৃতি নিয়ে চিকিৎসকের কাছে উপস্থিত হন। এই রোগীদের পরিণতি সাধারণত মারাত্মক হয়ে থাকে।
উচ্চরক্তচাপের জটিলতা
উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে নিুলিখিত জটিলতা দেখা দিতে পারে
ক) হৃদপিণ্ডে জটিলতা- হৃদপিণ্ড বড় হয়ে যাওয়া, হার্ট ফেইলর, করোনারি হার্ট ডিজিজ প্রভৃতি।
খ) কিডনিতে জটিলতা- প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন বেরিয়ে যাওয়া, রেনাল ফেইলর প্রভৃতি।
গ) চক্ষুতে জটিলতা রেটিনোপ্যাথি, চোখে কম দেখা।
ঘ) মস্তিষ্কে জটিলতা স্ট্রোক, মস্তিষ্কের সাবঅ্যারাকনয়েড স্পেসে রক্তক্ষরণ প্রভৃতি।
রোগ নির্ণয়
রোগের কারণ ও জটিলতা জানার জন্য উচ্চরক্তচাপের রোগীর যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয় সেগুলো হলোঃ
প্রস্রাব পরীক্ষা করা
বুকের এক্স-রে
ইসিজি
কিডনি ও হরমোহনগ্রন্থি সংক্রান্ত পরীক্ষা
ক্ষেত্রবিশেষে অ্যাওর্টোগ্রাফি এবং রেনাল অ্যানজিওগ্রাফি।
চিকিৎসা
উচ্চ রক্তচাপ যে কারণেই হোক না কেন, যথাশিগগির সম্ভব তা নির্ণয় এবং এর উপযুক্ত চিকিৎসা একান্ত প্রয়োজন। এতে করে রোগী নিজে লক্ষণবিহীন থেকে সুস্থ-সবল জীবনযাপন করতে পারে এবং ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতার আশঙ্কা কমে আসে। যেসব উচ্চ রক্তচাপের রোগীর (৬-১০ শতাংশ) ক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ থাকে, সেগুলোর যথাযথ চিকিৎসা করলে উচ্চ রক্তচাপ ভালো হয়ে যায়। যেমন থাইরয়েড বা অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির দোন, টিউমার হলে তা শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে অপসারণ, রেনাল আর্টেরিয়াল স্টেনোসিস বা কোআরকটেশন অব এওর্টা এর শল্য চিকিৎসা অথবা নেফ্রাইটিস, কুশিং সিনড্রোম প্রভৃতির উপযুক্ত চিকিৎসা। বাকি ৯০-৯৫ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ প্রতিকার করা যায় না বরং তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। উচ্চ রক্তচাপের জন্য সবসময় যে ওষুধ খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। রক্তচাপ যদি খুব বেশি না হয় তাহলে লবণ কম খাওয়া, ওজন কমানো, নিয়মিত হাঁটাহাঁটি, ধূমপান পরিহার করেই অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে রক্তচাপ খুব বেশি হলে দৈনিক এক বা একাধিক ওষুধ খেয়েই রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা যায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য নানারকম ওষুধ রয়েছে। রোগীর বয়স, উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা, রেনাল ফাংশন, রোগীর অন্যান্য অসুখ যেমন হাঁপানি, ডায়াবেটিস প্রভৃতি বিবেচনা করে একজন চিকিৎসক রোগীর জন্য ওষুধ বাছাই করে থাকেন। উচ্চ রক্তচাপ রোগীর ওষুধগুলো হলো
ক) ডায়ইউরেটিকস্ - থায়াজাইড্
ফ্রুসেমাইড্
অ্যামিলোরাইড
খ) বিটারব্লকার - প্রোপ্রানোলল
অ্যাটেনোলল
গ) এসিই ইনহিবিটর - ক্যাপটোপ্রিল
অ্যানালেপ্রিল
লিসিনোপ্রিল
ঘ) ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার- নিফেডিপিন
অ্যামলোডিপিন
ভেরাপামিল
ঙ) আলফা ব্লকার - প্রাজোসিন
চ) ভেসোডাইলেটর - হাইড্রালাজিন
মিনোক্সিডিল
ছ) মিথাইল ডোপা
উচ্চ রক্তচাপের সাথে করোনারি হার্ট ডিজিজ থাকলে বিটাব্লকার অথবা ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার সবচেয়ে ভালো কাজ করে।
কিন্তু উচ্চ রক্তচাপের সাথে যদি ডায়াবেটিস অথবা হাঁপানি থাকে তবে বিটা ব্লকার নিষিদ্ধ। সে ক্ষেত্রে এসিই ইনহিবিটর ভালো কাজ করে। আবার হার্ট ফেইলর থাকলে ডায়ইউরেটিকস সবচেয়ে ভালো ওষুধ। রোগী যদি গর্ভবতী হন তবে মিথাইল ডোপা উপযুক্ত ওষুধ। তাই উচ্চ রক্তচাপের নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ বাছাই অবশ্যই একজন চিকিৎসক করবেন। কোনোক্রমেই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে ওষুধ বন্ধ করা বা কম খাওয়া ঠিক হবে না। কারণ উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা যেমন স্ট্রোক, হার্ট ফেইলর নিয়ে যেসব রোগী উপস্থিত হন তাদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তারা হয় নিয়মিত ওষুধ খাননি অথবা কম পরিমাণে খেয়েছেন অথবা কিছু দিন খাওয়ার পর বন্ধ করে দিয়েছেন। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কমপক্ষে প্রতি সপ্তাহে একবার ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পরে স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ পরিমাপ করতে হবে। রক্তচাপ পরিমাপ অনেকেই সঠিকভাবে করতে পারে না। তাই কেবল অভিজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারাই রক্তচাপ পরিমাপ করানো উচিত। কারণ রক্তচাপের মাত্রার ওপরই নির্ভর করে রোগী কী পরিমাণ ওষুধ খাবে। নিয়মিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করলে উচ্চ রক্তচাপের জটিলতা কম হয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব হয়। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের ওষুধ সেবনের সাথে সাথে দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রণালীতেও পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন
রোগী ধূমপায়ী হলে, অবশ্যই ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
সকাল অথবা বিকেলে হালকা ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করতে হবে।
খাবারে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে।
রোগী স্থূল দেহের অধিকারী হলে ওজন কমাতে হবে।
পশু চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া কমাতে হবে।
অতিরিক্ত চিন্তা পরিহার করে সহজ-সরল স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হবে।
অনেক আগে; ২০-৩০ বছর আগে উচ্চ রক্তচাপের জন্য আজকের মতো ভালো ওষুধ পাওয়া যেত না এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে দিনে দুই-তিনবার ওষুধ খেতে হতো। তাতে অনেকেই ঠিকমতো ওষুধ খেতেন না। কিন্তু বর্তমানে অনেক উন্নতমানের ওষুধ পাওয়া যায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিদিন একবার ওষুধ খেলেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এলে এবং নিয়মকানুন মেনে চললে যেকোনো মানুষ সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে।
লেখকঃ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অধ্যক্ষ
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ
উচ্চ রক্তচাপ থেকে রড়্গা পাবেন কিভাবে
একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ মিজ্ঝমি মার্কারী। বয়সভেদে এই রক্তচাপ বাড়তে পারে বা কমতে পারে। কারো রক্তচাপ সব সময়ের জন্য যদি বেশি মাত্রায় থাকে (যেমন১ৈ৩০/৯০ বা ১৪০/৯০ বা তারও বেশি) যা তার দৈনন্দিন কাজ বা স্বাভাবিক কাজকর্মকে ব্যাহত করে, তখনই এই অবস্থাটিকে আমরা উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলি।
কেন হয়ঃ
প্রাপ্ত বয়স্কদের বেশিরভাগ ড়্গেত্রেই কারণ নির্ণয় করা যায় না। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তনের ফলে, কিছু কিছু ড়্গেত্রে হরমোন ও কিডনির ফাংশনজনিত জটিলতায় উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। অনিয়মিত লাইফ স্টাইল, অনিয়ন্ত্রিত ওজন, ধূমপান, এলকোহল, ফাস্টফুড খাবার গ্রহণ, রক্তে কোলেস্টেরল-এর আধিক্য এইসব কারণগুলোতে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ছোটদের ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদেরও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। জেনেটিক কারণে, ফ্যামিলিয়ার হাইপারটেনশনের ড়্গেত্রে (মানে বাবা-মায়ের আছে বাচ্চারও হতে পারে), কিডনির অসুখে, হৃৎপিন্ডের মহাধমনীর কোন একটি জায়গা সংকুচিত থাকলে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়। কিডনির ওপরে এডরেনালগ্রন্থি ঠিকমত কাজ না করলেও উচ্চ রক্তচাপ হয়।
উচ্চ রক্তচাপের লড়্গণঃ
সৈকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথাব্যথা।
ঘৈাড় ব্যথা।
Ìৈচাখে দেখতে অসুবিধা হওয়া বা চোখে ঝাপসা দেখা।
রৈাতে ঘুমাতে না পারা।
সৈব সময় খিটখিটে মেজাজ থাকা।
ড়্গতিকর দিকঃ
দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিচের ব্যাধিগুলো হতে পারে।
(ধ) স্ট্রোকঃ মস্তিôষ্কের রক্তড়্গরণ।
(ধধ) হার্ট ফেইলিওর।
(ধধধ) হার্ট অ্যাটাক, মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন।
(ধশ) কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়া।
চিকিৎসাঃ
উচ্চ রক্তচাপ এর চিকিৎসা দুইভাবে করা যায়। একটি ওষুধ ছাড়া অন্যটি ওষুধ দিয়ে।
ওষুধ ছাড়াঃ যাদের হাইপারটেনশনের মাত্রা খুব বেশি নয় কিংবা অল্প কিছুদিন হয় সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদের এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়।
জৈীবনধারার পরিবর্তনঃ
দৈুশ্চিন্তôা পরিহার করা।
অৈতিরিক্ত ওজন কমানো। শরীরের ওজন অতিরিক্ত হলে ধীরে ধীরে তা কমানো উচিত। এজন্য উচিত নিয়মিত হাঁটা এবং পরিশ্রম করা। অনেকেই ওজন কমানোর জন্য তাড়াহুড়ো করেন এটা কিছুতেই ঠিক নয়।
পৈরিমাণ মতো খাওয়াঃ খাবার পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করা উচিত। অতিরিক্ত লবণ বা লবণ জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত। ফাস্টফুড বা ফ্রোজেন ফুড-এ লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। প্রাণীজ প্রোটিন ত্যাগ করে শাক-সবজি, সালাদের দিকে ঝোঁকা ভাল।
ধৈূমপান, এলকোহল পরিত্যাগ করা উচিত।
প্রাথমিক অবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে উপরের নিয়ম মানলে অনেকের রক্তচাপ ৩-৬ মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসে। যদি এরপরও স্বাভাবিক না হয় তবে ওষুধের সাহায্য নিতে হয়।
উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দিয়ে করা হয়। যেমনডৈাইইউরেটি, বিটাবস্নকার, এসিই ইনহিবিটর, ক্যালসিয়াম চ্যানেল বস্নকার, ভ্যাসোডাইলেটর জাতীয় ওষুধ। ১টি ওষুধ দিয়ে এর প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। প্রয়োজনবোধে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ধীরে ধীরে ডোজ বাড়ানো বা কমানো অথবা নিয়ন্ত্রণের জন্য একাধিক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু ওষুধ কখনোই বন্ধ রাখা যাবে না।
সতর্কতাঃ
চৈলিস্নশোর্ধ্ব বয়সে প্রত্যেকেরই উচিত নির্দিষ্ট সময় পর পর রক্তচাপ পরীড়্গা করা।
হৈঠাৎ করে ওষুধ বন্ধ রাখা বা অনিয়মিতভাবে ওষুধ গ্রহণ না করা।
ওৈষুধ গ্রহণ অবস্থায়ও অন্তôত প্রতিমাসে একবার রক্তচাপ পরীড়্গা করা।
এৈকজন বিশেষজ্ঞের অধীনে থাকা এবং পরামর্শ অনুযায়ী চলা।
অৈালগা লবণ, ফাস্টফুড, ফ্রোজেন ফুড খাওয়ায় সতর্ক থাকা।
Ìৈযহেতু এ রোগে দীর্ঘদিন ওষুধ খেতে হয় কাজেই বছরে অন্তôত একবার কিডনি এবং হার্টের পরীড়্গা অথবা শারীরিক সকল পরীড়্গা চেকআপ করানো উচিত।
বাংলাদেশে পূর্ণবয়স্ক অর্থাৎ ১৮ বছরের উপরের জনসংখ্যার ১৫-২০% উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। বিশ্বে এ হার ২৫-৩০%। বিশ্বের প্রায় ১জ্ঝ১ বিলিয়ন মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে এবং এদের মধ্যে প্রায় ৭জ্ঝ১ মিলিয়ন প্রতিবছর উচ্চ রক্তচাপজনিত বিভিন্ন জটিলতায় মারা যাচ্ছে। কাজেই বয়স বাড়ার সাথে সাথে সতর্ক হোন, উচ্চ রক্তচাপকে ‘না’ বলুন।
উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করম্নন
উচ্চ রক্তচাপ কি?
উচ্চ রক্তচাপ বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। সারা বিশ্বে ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনী রোগের জন্য উচ্চ রক্তচাপ একটা গুরম্নত্বপূর্ণ রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান।
উচ্চ রক্তচাপ দিবসের উদ্দেশ্য
জনগণকে উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানানো, সচেতন করা, প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদড়্গেপ গ্রহণ করা এবং এই রোগের জটিলতা এবং চিকিৎসা সম্পর্কে অবহিত করাই বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবসের উদ্দেশ্য। প্রতি বছর ১৭ মে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে।
বাড়িতে কেন রক্তচাপ পরিমাপ করবেন?
বাড়িতে রক্তচাপ মাপার ফলে আপনি নিজে এবং আপনার চিকিৎসক আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত প্রতিদিনের একটি চিত্র পাবেন। এর ফলে জীবন-যাপনের পরিবর্তন এবং ওষুধ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কতখানি ভূমিকা রাখছে সেটা বোঝা যাবে। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পূর্বের এক সপ্তাহে প্রতিদিন দুই বার করে রক্তচাপ মাপা এবং রেকর্ড রাখা ভালো। আপনার প্রাত্যহিক জীবনে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ড়্গেত্রে এই রেকর্ড বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
আপনার উচ্চ রক্তচাপ আছে কিনা সেটা জানার একমাত্র উপায় রক্তচাপ পরিমাপ করা। এজন্য বাসায় রক্তচাপ মাপুন।
রক্তচাপ পরিমাপের বেশিরভাগ আধুনিক যন্ত্রসমূহ স্বয়ংক্রিয় (অটোমেটিক) অথবা আধা স্বয়ংক্রিয় (সেমি অটোমেটিক) হয়ে থাকে। নিজের রক্তচাপ নিজে মাপা সহজ এবং নিরাপদ। তবে যে সব মানুষ বেশি উদ্বিগ্ন এবং যাদের শারীরিক অড়্গমতা আছে, তাদের রক্তচাপ মাপতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। এ সকল ড়্গেত্রে আপনি চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর সাহায্য নিতে পারেন।
উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করম্নন
রক্তচাপ পরিমাপের জন্য কি ধরনের যন্ত্র (মেশিন) ক্রয় করবেন?
রক্তচাপ পরিমাপের জন্য অনেক ধরনের মেশিন বের হয়েছে। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে আপনার জন্য উপযুক্ত রক্তচাপ মাপার মেশিন এবং বাহুবন্ধনীর সাইজ নির্বাচন করম্নন।
০ ব্রান্ড কোম্পানীর লোগো দেখে সঠিক মেশিন কিনুন। যে সমস্তô মেশিনে এই দুটি লোগো আছে, সেগুলি কেনার চেষ্টা করম্নন।
০ অটোমেটিক মেশিন ব্যবহার করা সহজ, কিন্তু সেমি অটোমেটিক মেশিনের তুলনায় এই মেশিনের দাম বেশি।
০ রক্তচাপ মাপার বিভিন্ন সাইজের বাহুবন্ধনী পাওয়া যায়। বাহুতে যাতে বাহুবন্ধনী সঠিকভাবে লাগানো যায়, সেই দিকে গুরম্নত্ব দিতে হবে। বাহুবন্ধনীর সাইজ সঠিক না হলে রক্তচাপের রিডিং যথার্থ হয় না। বাহুবন্ধনীর সঠিক সাইজ নির্বাচনের জন্য চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা দোকানদারের সাহায্য নিন।
রক্তচাপ কিভাবে পরিমাপ করবেন
০ রক্তচাপ পরিমাপের পূর্বে পাঁচ মিনিট বিশ্রাম নিন এবং প্রশান্তô (রিলা) থাকুন। এ সময় মনোযোগ সহকারে কোন কিছুতে নিবিষ্ট থাকবেন না (যেমন টিভি দেখা)।
০ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করলে, ঠান্ডা লাগলে, রাগান্বিত হলে, কোন কিছুর চাপ বা টেনশনে থাকলে কিংবা ব্যথা অনুভূত হলে সেই সময় রক্তচাপ পরিমাপ করবেন না।
০ ভরপেট খাওয়ার পর অন্তôতঃপড়্গে দুই ঘন্টা অপেড়্গা করম্নন এবং কফি বা ধূমপান করার পর আধা ঘন্টা অপেড়্গা করম্নন।
০ প্রস্রাব এবং পায়খানার বেগ থাকলে রক্তচাপ মাপার পূর্বে তা সেরে ফেলুন।
০ অনাবৃত বাহুতে বাহুবন্ধনী জড়ান।
০ এমন চেয়ারে বসুন, যাতে আপনি হেলান দিয়ে বসতে পারেন এবং বাহু রাখার জন্য সাইড টেবিল ব্যবহার করম্নন (চিত্র দেখুন)।
০ বাহুর নিচে তোয়ালে অথবা বালিশ রাখুন যাতে বাহুটা হার্টের বা হৃদপিন্ডের লেভেলে থাকে।
০ পায়ের পাতা মেঝের সমান্তôরালে রাখুন, পায়ের উপর পা উঠিয়ে বসবেন না।
০ সাতদিন যাবৎ বাড়িতে সকাল-সন্ধ্যা দুইবার রক্তচাপ পরিমাপের মাত্রাকে বাড়ির রক্তচাপের রেকর্ড হিসাবে গণ্য করা উচিত।
০ সঠিক নিয়মে রক্তচাপ পরিমাপের পর পরই তা লিপিবদ্ধ করম্নন।
০ বাড়িতে একদিন অথবা প্রথম দিন রক্তচাপ মাপার মাত্রাকে সঠিক ধরা উচিত নয়।
স্বাভাবিক রক্তচাপ কি?
০ দিনে রক্তচাপ অবশ্যই গড়ে ১৩৫/৮৫ মি·মি· অব মার্কারী এর নিচে থাকতে হবে।
০ বাড়িতে মেপে যদি দেখা যায় রক্তচাপ সব সময় ১৩৫/৮৫ মি·মি· অব মার্কারী এর বেশি আছে, তাহলে চিকিৎসা নিতে হবে্।
০ ডায়াবেটিস অথবা কিডনী রোগীদের রক্তচাপ ১৩৫/৮৫ মি· মি· অব মার্কারী এর কম হতে হবে।
রক্তচাপের মাত্রা অস্বাভাবিক হলে কি করবেন?
০ আতংকিত হবেন না।
০ আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করম্নন এবং তার পরামর্শ মেনে চলুন।
০ নিজে নিজে কোন ওষুধ খাবেন না কিংবা ওষুধের মাত্রা কম-বেশি করবেন না।
রক্তচাপ পরিমাপের সময় করণীয়
কথা বলবেন না
হেলান দিয়ে বসুন
কাফ বাহুর মধ্যবর্তী জায়গায় জড়ান
যাতে বাহুটি হার্টের লেভেলে থাকে
বসে থাকুন।
বাহুটি অবশ্যই কোন কিছুর উপরে রাখুন
পা ছড়িয়ে বসুন।
নিবন্ধটি বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলড়্গে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের
তথ্য অনুযায়ী রচিত
কিভাবে কমাবেন রক্তের কোলেস্টেরল
হৃদরোগ আর কোলেস্টেরল এ দুটো শব্দের সাথে আমরা সবাই কমবেশী পরিচিত। বলা যায়, এ দুটো শব্দ একে অপরের পরিপূরক। একটি ছাড়া আরেকটি প্রায় অসম্পূর্ণ। হৃদরোগ বা হার্টের যে কোন রোগের অন্যতম প্রধান কারণ দেহে কোলেস্টেরোলের আধিক্য, অত্যধিক দুশ্চিন্তôা ও অতিমাত্রায় চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ। ডিমের কুসুম, যকৃত, মস্তিôষ্ক, চর্বিযুক্ত মাংস, দুগ্ধ, চিংড়ি প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরোল রয়েছে। সাধারণত মানবদেহে ১০০ মিঃলিঃ রক্তে ১৫০-২০০ মিঃলিঃ কোলেস্টেরল থাকে। রক্তে এই কোলেস্টেরোলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা ধীরে ধীরে হৃদরোগের সৃষ্টি করে। খাদ্যে কোলেস্টেরোলের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে এথেরোসক্লেরোসিস হয়। যার ফলে ধমনীর গাত্রে একরকম আঠরি সৃষ্টি হয় এবং ধমনীর পথ সরম্ন হতে থাকে। কোলেস্টেরোল রক্তকে ভারি করে দেয় এবং কৌশিক জালিকার গায়ে জমা হয়ে নালীপথ সরম্ন করে দেয়। ফলে সেই পথে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয় এবং পস্নাক তৈরী করে। এ কারণে রক্ত চলাচল বন্ধ হলে হৃদযন্ত্রের কিছু অংশ নষ্ট হয়ে যায় এবং হৃদপিণ্ডের কার্য বন্ধ হয়ে মানুষের মৃত্যু পর্যন্তô হতে পারে।
দেহে অতিরিক্ত কোলেস্টেরোলের সুবিধা-অসুবিধাঃ
দেহে কোলেস্টেরোল আধিক্যের সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশী। কোলেস্টেরোল এক প্রকার চর্বি জাতীয় পদার্থ, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে জমা থাকে এবং দেহের অভ্যন্তôরীণ নানা ক্রিয়াকলাপে সহায়তা করে। কিন্তু যখনই এর মাত্রা বেড়ে যায় তখনই এটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে (১) হৃদরোগ এথোরোসক্লেরোসিস, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি দেখা হয়। ২) এটি শরীরকে ভারি করে, ওজন এবং স্থূলতা বৃদ্ধি করে। ফলে যে কোন কাজ করতে কষ্ট হয়, শরীর একটুতেই হাঁপিয়ে ওঠে, বাহ্যিক সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং মনে অশান্তিô দেখা দেয়। ৩) দেহে কোলেস্টেরোলের আধিক্যের ফলে যেসব রোগ হয় তা অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য সকলেরই কোলেস্টেরোল গ্রহণের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
দেহের অতিরিক্ত কোলেস্টেরোল কমানোর কিছু সহজ উপায়ঃ দেহের কোলেস্টেরোলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই সহজ, শুধু প্রয়োজন সামান্য সচেতনতা। Ìৈতল বা চর্বি জাতীয় খাদ্যগুলো খুবই মুখরোচক, কিন্তু এগুলোই শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশী ড়্গতিকর। তেল জাতীয় বা ভাজা-পোড়া জিনিস কম খাবেন। চিংড়ি মাছ, ডিমের কুসুম প্রভৃতি উচ্চ কোলেস্টেরোলযুক্ত খাবার চেষ্টা করবেন পরিহার করতে। Ñৈদনিক খাদ্য তালিকায় একটু করে হলেও আঁশ জাতীয় খাদ্য রাখার চেষ্টা করম্নন। আঁশ জাতীয় খাদ্য যেমনঃ ইসুবগুল, কচুর লতি, ডাঁটা, বিভিন্ন শাক প্রভৃতি। এগুলো রক্তের কোলেস্টেরোল ও খউখ কমাতে সাহায্য করে। Ñৈদনিক ব্যায়াম করবেন, না পারলে অন্তôত এক ঘন্টা হাঁটার অভ্যাস করম্নন। ব্যায়াম করলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কিছুটা কমে। ওজন কমাতে চেষ্টা করম্নন। xৈচনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার যত পারবেন কম খাওয়ার চেষ্টা করম্নন। মিষ্টি জাতীয় খাবার দেহে শক্তি যোগায়। ফলে দেহে এর প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু অধিক পরিমাণে গ্রহণ করলে তা নানারূপ সমস্যার সৃষ্টি হয়। Ìৈবশি বেশি ভিটামিন সি বা টক জাতীয় খাবার খাবেন। টক জাতীয় খাদ্যে কোলেস্টেরোল কমাতে জাদুর মত কাজ করে। অৈনেকেরই ধারণা মাছের তেল কোলেস্টেরোল বাড়ায়। কিছু কিছু মাছের তেল রয়েছে যেগুলো রক্তের কোলেস্টেরোলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। যাদের দেহে চর্বি বেশি, তাদের মাছের তেল খেতে দিলে ৬৮% কোলেস্টেরোল কমে। উদি্ভদজাত তেল অনেক সময় কোলেস্টেরোল হ্রাস করে। ফালমন মাছের তেল খেলে ৪২% কোলেস্টেরোল কমে যায়। xৈবভিন্ন গাছন্তô ওষুধ খেতে পারেন যেমনঅৈর্জুনের ছাল, চিরতা, এগুলোও কোলেস্টেরোল কমাতে সাহায্য করে। প্রৈচুর পরিমাণে ফলমূল ও শাক-সবজি খাবেন। দেহের কোলেস্টেরোল কমাতে এ দুটোর বিকল্প আর কিছু নেই। বেশি বেশি শসা খাবেন। শসা খুবই উপকারী দেহের ওজন হ্রাস করতে, কোলেস্টেরোল কমাতে। এৈখন রক্তে কোলেস্টেরোল কমানোর নানারকম এন্টিবায়োটিক রয়েছে, যেগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে নানারকম হারবাল ওষুধ সেড়্গেত্রে বেশ ফলদায়ক। হঠাৎ রক্তে কোলেস্টেরোলের মাত্রা বেড়ে গেলে চিন্তিôত হওয়ার কিছু নেই। অনেকে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। এটা শরীরের জন্য আরও বেশি ড়্গতিকর। পরিমিত পরিমাণে দেহের চাহিদা মিটিয়ে খাদ্য গ্রহণ করে, সামান্য ব্যায়াম ও নিয়ম মেনে চলে ধীরে ধীরে খুব সহজেই এই কোলেস্টেরোলের মাত্রা কমিয়ে আনা যায়। তবে চেষ্টা করবেন যতদূর সম্ভব কম কোলেস্টেরোলযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে।
সকালের নাস্তôায় কি রাখবেন
সারাদিন কাজ আর কাজ, উদয়াস্তু খাটুনি, হাতে সময় নেই, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অগ্রাধিকার পায় না। কোনও কোন দিন অনেক বেলা ভরপেট খাওয়া হয় না, চটজলদি হালকা নাস্তôা হয়। তবে নাস্তôাটি স্বাভাবিক হলেই হলো। দু’বেলা আহারের মধ্যে যদি ড়্গুধা লাগে, তাহলে শরীরে পুষ্টি চাই, বোঝা গেলো। তাই ড়্গুধা মেটাতে কিছু একটা মুখে দিতে হয়। উল্টোপাল্টা নাস্তôা খেলে কিন্তু সমস্যা। নাস্তôায় যদি বেশি চর্বি ও শর্করা থাকে তাহলে রক্তে পরবর্তীতে কোলেস্টেরোল বাড়ে, ওজন বাড়ে শরীরে, পরবর্তীতে হতে পারে নানা জটিলতা যেমন হৃদরোগ, উঁচুমান কোলেস্টেরোল এবং ডায়েবেটিস। সুসংবাদ হলো এই যে আজকাল স্বাস্থ্যকর খাবার সম্বন্ধে এত সচেতন হয়েছে মানুষ সেজন্য অনেক খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লোফ্যাট লোশর্করা খাবার তৈরি করছে যা স্বাদে আসল জিনিসের একই রকম।
’’মৎধুরহম ভড়ৎ ভড়ড়ফ’ খাদ্য চয়ন যখন করবেন তখন কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে
ৈ
খাবেন প্রচুর ফল ও শাক-সবজিঃ এতে ক্যালেরি ও চর্বি কমে। এছাড়া এগুলোতে রয়েছে ভিটামিন ও অন্যান্য এন্টিঅিডেন্ট।
সম্পৃক্ত চর্বির দিকে লড়্গ্য রাখতে হবেঃ যত কম সম্ভব, সম্পৃক্ত চর্বি খাওয়া কমাতে হবে। কারণ এরকম চর্বি বেশি খেলে রক্তে বাড়ে কোলেস্টেরোল। তেলে ঘিয়ে ভাজা খাবার, প্রাণীজ চর্বিতে রয়েছে সম্পৃক্ত চর্বি। সে বিবেচনায় কচি মোরগ, মাছ এগুলো লাল গোস্তô থেকে অনেক ভালো।
যে খাদ্য রান্না হচ্ছে সেদিকেও নজর রাখুনঃ
আংশিক হাইড্রোজিনেটেড উদি্ভজ্জ তৈল, যা মার্জারিন ও শর্টেনিং-এ ব্যবহৃত হয়, এতে এক ধরনের চর্বি থাকে একে বলে ট্রান্স ফ্যাটি এসিড। এগুলো খাওয়া এড়ানো উচিত, কারণ এতে রক্তে বাড়ে কোলেস্টেরোল। ভাজা খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন কুকিস, চিপস ও ক্যান্ডিস-এ এসব চর্বি পাওয়া যায়।
খাবারে যেসব তরল সস্ ছড়ানো হয়, সেগুলো কেমন হবেঃ স্যালাড ড্রেসিং সস বা যেসব তরলে খাবার ডুবিয়ে খাওয়া হয়, সেগুলোতে যেন চর্বি থাকে খুব কম। সেই সস খাবারের উপর না ঢেলে পাশে রাখা ভালো। এতেও এসব কম খাওয়া হবে। দুধজাত প্রিয় খাদ্যের মধ্যে যেগুলোতে চর্বি কম সেগুলো খাওয়া ভালো। এতে চর্বি কম খাওয়া হবে। যেমন ফুলক্রিম দুধ বা দধির বদলে লোফ্যাট দধি বা ক্রিম ছাড়া দুধ ভালো।
শ্বেতসার হলো শক্তির গুরম্নত্বপূর্ণ এবং দ্রম্নত উৎসঃ এগুলো শরীরে শর্করায় পরিণত হয়, তাই বেশি বেশি শ্বেতসার খেলে দেহে ওজন বাড়ে এবং রক্তে বাড়ে শর্করা, বিশেষ করে ডায়েবেটিস রোগীদের ড়্গেত্রে তো বটেই। এছাড়া আগের কিছু গবেষণায় দেখা গেছে খুব বেশি শ্বেতসার খেলে হিতকরী কোলেস্টেরোল এইচডিএল রক্তে হ্রাস পায়। গোটা শস্য যেমন গমের রম্নটি, জইচূর্ণ এতে ময়দা কম, আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ কম। বাদাম, বীজ এসবও ভালো নাস্তôা তবে এতে যেন নূন না থাকে। এগুলোতে রয়েছে প্রচুর অসম্পৃক্ত চর্বি, যা রক্তের কোলেস্টেরোল কমাতে সহায়ক। বাদাম, আখম্স্নোট এতে রয়েছে ওমেগা-৩ মেদা, যা ড়্গতিকর এলডিএল কমাতে পারে আবার হিতকরী এইচডিএল বাড়াতে পারে। লাউয়ের বীচি এবং সূর্যমুখীর বীজ এগুলোতে আছে ভিটামিন ই, বি ভিটামিন ও খনিজ। নিবন্ধটি পড়ে মনে হবে যে খাবারে এত বিকল্প আছে, তত বৈচিত্র্য রয়েছে খাবারের মধ্যে এগুলো চেষ্টা করে দেখলে ড়্গতি কি? কেন খাবো ফাস্টফুড, তেলেভাজা, নোংরা ইটালিয়ান রেস্তেôারাঁর পাশে নর্দমার উপর বসে কেন এসব ঝালমুড়ি, ফুচকা, তেলেভাজা মোগলাই খাওয়া? কেবল হৃৎপিণ্ড কেন, দেহের পুরোটাই সুস্থ রাখা তো উচিত।