Tuesday, June 10, 2008

Allergy (অ্যালার্জি)

বসন্তকালে নাকের অ্যালার্জি
ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস

নাকের অ্যালার্জি রোগটি হলো অ্যালার্জিজনিত নাকের প্রদাহ। উপসর্গগুলো হচ্ছে অনবরত হাঁচি, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া এবং নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, কারো কারো চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং চোখ লাল হয়ে যায়।
যদিও বছর ধরেই এ রোগের লড়্গণ দেখা দেয়। বিশেষ করে পুরান ধুলাবালি (যাতে মাইট থাকে), ছত্রাক বা পোষা প্রাণীর লোম সংস্পর্শে এলেই এর লড়্গণ শুরম্ন হয়। তবে বসন্তô ঋতুতে ফুলের রেণু আধিক্য থাকে এবং ওই রেণুর সংস্পর্শ এলেই রোগের লড়্গণগুলো দেখা দেয়।
বারবার রোগাক্রান্তô হওয়ার মাত্রাঃ যদিও বাংলাদেশে কতজন এ রোগে ভুগে থাকেন তার সঠিক তথ্য নেই, তবে মোট জনগণের ১০-১৫ শতাংশ ভুগে থাকেন বলে অনেকেরই ধারণা। বিশ্বের কোনো কোনো দেশ বিশেষত অস্ট্রেলিয়ায় ৩০ শতাংশ লোক এ রোগে ভুগে থাকেন।
যদিও এ রোগের লড়্গণ যেকোনো বয়সেই দেখা দিতে পারে, তবে শিশুদেরই এ রোগে আক্রান্তô হতে দেখা যায় বেশি। যদিও এ রোগটি বংশানুক্রমিক, তথাপি বারবার একই অ্যালারজেনের সংস্পর্শে এলেই রোগের লড়্গণ দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া নতুন পোষা প্রাণী অথবা বাসস্থান পরিবর্তন নতুন পরিবেশে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস রোগের লড়্গণ প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।
কিভাবে অ্যালার্জি নাকের উপসর্গগুলো ঘটায়ঃ যেসব রোগীর বংশানুক্রমিকভাবে অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে তাদের ড়্গেত্রে দেখা যায়, কিছু কিছু অ্যালারজেনের সংস্পর্শে এলে রক্তের আইজিই-এর মাত্রা অনেক বেড়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে নাকে অবস্থিত মাস্ট সেল নামক এক ধরনের কোষের সাথে লেগে থাকে। কোনোভাবে শরীর আবার এই অ্যালারজেনের সংস্পর্শে এলে মাস্ট সেলগুলো ভেঙে যায় এবং এর থেকে ভাসো একটিভএমাইনো নির্গত হয় এবং এই রাসায়নিক পদার্থগুলো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং উপসর্গগুলো ঘটায়।
এ রোগের সম্ভাব্য কারণগুলোঃ মাইট (যা পুরাতন ধুলাবালিতে থাকে) ঘরের ধুলা ময়লা, ফুলের রেণু, প্রাণীর পশম বা চুল প্রসাধনী সামগ্রী।
প্রয়োজনীয় পরীড়্গা-নিরীড়্গা কী? রক্ত পরীড়্গা, বিশেষ করে ইয়োসিনোফিলের মাত্রা বেশি আছে কি না, তা দেখা।
সিরাম আইজিইর মাত্রাঃ সাধারণত অ্যালার্জি রোগীদের ড়্গেত্রে আইজিইর মাত্রা বেশি থাকে।
স্কিন প্রিক টেস্টঃ এ পরীড়্গায় রোগীর চামড়ার উপর বিভিন্ন অ্যালারজেন দিয়ে পরীড়্গা করা হয় এবং এ পরীড়্গায় কোন কোন জিনিসে রোগীর অ্যালার্জি আছে তা ধরা পড়ে।
সাইনাসের এক্স-রে
সমন্বিতভাবে এ রোগের চিকিৎসা
অ্যালারজেন পরিহারঃ যখন অ্যালার্জির সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় তখন তা পরিহার করে চললেই সহজ উপায়ে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ওষুধ প্রয়োগঃ ওষুধ প্রয়োগ করে সাময়িকভাবে অ্যালার্জির উপশম অনেকটা পাওয়া যায়। এ রোগের প্রধান ওষুধ হলো এন্টিহিস্টামিন ও নেসাল স্টেরয়েড। এন্টিহিস্টামিন, নেসাল স্টেরয়েড ব্যবহারে রোগের লড়্গণ তাৎড়্গণিকভাবে উপশম হয়। যেহেতু স্টেরয়েডের বহুল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, তাই এ ওষুধ একনাগাড়ে বেশি দিন ব্যবহার করা যায় না। যত দিন ব্যবহার করা যায় তত দিনই ভালো থাকে এবং ওষুধ বন্ধ করলেই আবার রোগের লড়্গণগুলো দেখা যায়।
অ্যালার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপিঃ অ্যালার্জি দ্রব্যাদি থেকে এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি অ্যালার্জিক রাইনাইটিস রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। অ্যালার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপির মূল উদ্দেশ্য হলো যে মাইট দ্বারা অ্যালার্জিক রাইনাইটিস সমস্যা হচ্ছে সেই মাইট অ্যালারজেন স্বল্পমাত্রায় প্রয়োগ করা হয়। ক্রমান্বয়ে সহনীয় বেশি মাত্রায় দেয়া হয় যাতে শরীরের অ্যালার্জির কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না দেয় কিন্তু শরীরের ইমিউন সিস্টেমের পরিবর্তন ঘটায় বা শরীরের অ্যালার্জির বিরম্নদ্ধে প্রতিরোধ ড়্গমতা গড়ে তুলে অর্থাৎ আইজিইকে আইজিজিতে পরিণত করে, যাতে দীর্ঘমেয়াদি অ্যালার্জি ওষুধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যদিও ওষুধ উপসর্গের কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসে কিন্তু অ্যালার্জির কোনো পরিবর্তন করতে পারে না, বিশেষত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ অ্যালার্জির জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক। যেহেতু এই ওষুধ বেশি দিন ধরে ব্যবহার করতে হয়, তাই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ ধরনের অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের ড়্গেত্রে ইমুনোথেরাপি বা ভ্যাকসিন বেশি কার্যকর।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশ বিশেষত উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ভ্যাকসিন পদ্ধতির চিকিৎসাকে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস রোগের অন্যতম চিকিৎসা বলে অভিহিত করে। এটাই অ্যালার্জিক রাইনাইটিস রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি।
অনেকের ধারণা, অ্যালার্জিজনিত রোগ একবার হলে আর সারে না। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসাব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। প্রথম দিকে ধরা পড়লে অ্যালার্জিজনিত রোগ একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অবহেলা করলে এবং রোগ অনেক দিন ধরে চলতে থাকলে নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং অ্যালার্জিজনিত রোগের কোন চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই। তাই গরিব রোগীরা তাবিজ-কবজের দিকে ঝুঁকে পড়েন আর সচ্ছল রোগীরা পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ও সময় দু’টোই অপচয় করছেন।
এ জন্য রোগীদের জানা দরকার, সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পরীড়্গা-নিরীড়্গা করে চিকিৎসা গ্রহণ করলে এ রোগ থেকে পরে হাঁপানি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব, উন্নত দেশের সব প্রয়োজনীয় পরীড়্গা-নিরীড়্গা ও চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশেই রয়েছে। অপচিকিৎসা নিয়ে মৃত্যুবরণ কিংবা বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় করে বিদেশে যাওয়ার কোনো দরকার নেই।
লেখকঃ অ্যালার্জি ও অ্যাজমা রোগ বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান, অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা। চেম্বারঃ দি অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা সেন্টার, ৫৭/১৫ পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৭২১৮৬৮৬০৬

ইমুনো থেরাপি বা অ্যালার্জি ভ্যাকসিন
ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস

আমাদের অনেকেরই ধারণা অ্যালার্জির কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। ওষুধ দিয়ে উপসর্গ কিছু দিন দমিয়ে রাখা যায় এবং ওষুধ বন্ধ করলেই আবার শুরু হয় উপসর্গগুলো। এ কথা কিন্তু অমূলক কিছু নয়। প্রায় ক্ষেত্রেই তাই দেখা দেয়। এ জন্যই জনগণ তখন অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা বাদ দিয়ে অন্য চিকিৎসা যথা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে থাকেন, আবার অনেক ক্ষেত্রে তাবিজ-কবজ, ঝাঁড়ফুক নিয়ে থাকেন, কিন্তু তার পরও যখন কোনো সমাধান পান না তখনই হতাশ হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
তাই জানা দরকার আপনার রোগটা আদতে অ্যালার্জিজনিত কি না এবং অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের কাছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিকভাবে নির্ণয় করে তার চিকিৎসা করা।
অ্যালার্জিজনিত রোগের তিনটি চিকিৎসাপদ্ধতি প্রথমত, অ্যালার্জি দ্রব্যাদি এড়িয়ে চলা; দ্বিতীয়ত, ওষুধ চিকিৎসা; তৃতীয়ত, অ্যালার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি।
বাংলাদেশের অধিকাংশ রোগীর অ্যালার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি সম্বন্ধে সম্যক কোনো ধারণা নেই। তারা শুধু ওষুধ বিশেষত সালবিউটামল বা অ্যামাইনোফাইলিন জাতীয় ওষুধকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন, যদিও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ইনহেলার, নেসাল স্প্রে, ইনজেকশন বা ট্যাবলেট আকারে অ্যালার্জি রোগের উপসর্গগুলো দ্রুত উপসম করে কিন্তু এর বহুল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হেতু অনেক রোগীই এই ওষুধ বেশিদিন ব্যবহার করেন না। আবার সালবুটামল বা অ্যামাইনোফাইলিন জাতীয় ওষুধ সেবনে শরীর কাঁপানো, বমি বমি ভাব ও ঘুমের ব্যাঘাত হওয়াতে এটাও দীর্ঘ দিন ব্যবহার করেন না, এবং এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ নেয়ার পর ঘুমঘুম ভাব, এমনকি দৈনিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়, তাই এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ একনাগাড়ে খান না, মাঝে মাঝে খান। তাই রোগের উপসর্গগুলো থেকেই যায়। অ্যালার্জি ভ্যাকসিন চিকিৎসাতে তেমন কোনো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং যে অ্যালারজেন দ্বারা রোগী আক্রান্ত হয় সে অ্যালারজেন দ্বারাই ভ্যাকসিন দেয়া হয়।
যদিও আজ প্রায় ৮০ বছর ধরে অ্যালার্জি ভ্যাকসিন বিভিন্ন দেশে প্রচলিত এবং একেক দেশে একেকভাবে প্রয়োগ করা হয় ও কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ছিল না, তাই অ্যালারজেন ভ্যাকসিন বা অ্যালারজেন ইমুনোথেরাপি ব্যবহারের দিকনির্দেশনা তৈরির জন্য ১৯৯৭ সালের ২৭ থেকে ২৯ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডঐঙ) প্রধান কার্যালয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাপি অ্যালার্জি, হাঁপানি ও ইমুনোথেরাপি সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থা যথা আমেরিকান একাডেমি অব অ্যালার্জি এ্যাজমা অ্যান্ড ইমুনোলোজি (অঅঅঅও), ইউরোপিয়ান একাডেমি অব অ্যালারগোলজি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজি (ঊঅঅঈও), ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব পেডিয়াট্রিক্স অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজি, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যালারগোলোজি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজি, জাপানিজ সোসাইটি অব অ্যালারগোলোজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিস একত্র হয়ে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী দ্রব্যাদি বা অ্যালারজেনের বিরুদ্ধে প্রতিষেধকমূলক অ্যালার্জেন ইমুনোথেরাপি বা ভ্যাকসিনের ব্যবহারের দিকনির্দেশনা তৈরি করে। অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস ও অ্যালার্জিক কনজাংটাইভাইটিসের ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন অত্যন্ত কার্যকর বলে অভিমত প্রকাশ করেন।
অ্যালার্জি ভ্যাকসিন কী, কিভাবে কাজ করে, কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী, তা নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।
অ্যালার্জি ভ্যাকসিন কী?
অ্যালারজেন ভাকসিন বা ইমুনোথেরাপি এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে স্বল্পমাত্রা থেকে পর্যায়ক্রমে উচ্চতর মাত্রায় অ্যালারজেন এক্সট্রাক্ট (যে অ্যালারজেন দ্বারা রোগীর শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়) অ্যালারজিক ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করানো হয়। যাতে পরবর্তীতে অ্যালারজেনের সংবেদনশীলতা কমে যায়।
কিভাবে কাজ করে?
১. রক্তের আইজিই (ওবঊ) (যা অ্যালার্জির জন্য মূলত দায়ী) তাকে ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়। ২. রক্তে আইজিজির (ওবএ) মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে। ৩. মাস্ট সেল যা হিস্টামিন নিঃসরণ করে তা কমিয়ে দেয়।
কাদের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি ভ্যাকসিন কার্যকর?
১. অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। ২. ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা। ৩. হাইমেনোপটেরা ভেনম যাতে এনাফাইলোক্সিস বা অ্যালার্জিক বিক্রিয়া দেখা দেয়। ৪. কিছু কিছু ছত্রাক যেমন ক্লডাস্পেরিয়াম ও অলটরেনেরিয়ার দ্বারা অ্যালার্জিজনিত রোগ হলে।
কোন বয়সে ইমুনোথেরাপি শুরু করবেন?
অ্যালার্জি রোগের উপসর্গের প্রথম দিন থেকেই ইমুনোথেরাপি শুরু করা সম্ভব। কোনো কোনো ইমুনোথেরাপিস্ট মনে করেন দু-এক বছর বয়স থেকেই এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে। তবে মাইটি অ্যালার্জির ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের নিচের বয়সের শিশুদের ইমুনোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ইমুনোথেরাপির সফলতা প্রমাণিত, তবে অল্প বয়সে ইমুনোথেরাপি রোগমুক্তির ক্ষেত্রে একটি অন্যতম প্রধান নিয়ামক।
ইমুনোথেরাপির জন্য আপনি কি উপযুক্ত?
যেসব অ্যালারজেন অ্যালার্জি রোগের কারণ তা নিরূপণ পরবর্তী সময়ে ইমুনোথেরাপির জন্য নির্ধারণ করা হয়। তবে ভিন্ন ধরনের তিনটির অধিক অ্যালারজেনের বিরুদ্ধে ইমুনোথেরাপি সাধারণত কার্যকর হয় না। ইমুনোথেরাপি শুরুর আগে মারাত্মকভাবে রোগাক্রান্ত রোগীদের পর্যাপ্ত ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় আনার পরই ইমুনোথেরাপি শুরু করা সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগগুলো যেমন­ নন-অ্যালারজিক, সাইনোসাইটিস ও নেসাল পলিপ রোগীদের ক্ষেত্রে ইমুনথেরাপির কোনো ভূমিকা নেই।
কাদের ভ্যাকসিন দেয়া যাবে না?
১. গুরুতর ইমুনোলোজিক্যাল ও ইমুনোডেফিসিয়েন্সি রোগে যারা ভুগছেন।
২. ক্যান্সার
২. ভীষণ মানসিক ভারসাম্যহীনতা রোগে ভুগছেন এমন রোগী
৪. বিটার ব্লকার দিয়ে চিকিৎসা করা হলে
৫. রোগী সহযোগিতা না করলে
৬. বড় ধরনের হৃদরোগ থাকলে
৭. দুই বছরের নিচের শিশু
৮. গর্ভবতী অবস্থায় ভ্যাকসিন শুরু করা ঠিক না, তবে আগে থেকে চলতে থাকলে তা চালিয়ে যাওয়া যায়
৯. গুরুতর অ্যাজমা যখন কোনো মতেই ওষুধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করা যায় না।
রোগের প্রারম্ভিক অবস্থায় অ্যালার্জি ভ্যাকসিন চিকিৎসা শুরু সুবিধা
১. ইমুনোথেরাপি ব্যবহারে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহকে কমানোর চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হওয়ার পথকে বাধার সৃষ্টি করে।
২. অ্যালার্জিজনিত সহজ রোগ থেকে জটিল রোগ হওয়ার পথকে বাধা দেয় অর্থাৎ যেসব রোগী অ্যালার্জিজনিত সর্দিতে ভোগে তাদের যাতে অ্যাজমা না হয় সেই পথ বন্ধ করে।
৩. প্রাথমিক অবস্থায় রোগের অতিসংবেদনশীলতা কম থাকায় ইমুনোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম থাকে।
কত দিন দিতে হয়?
যদিও ইমুনোথেরাপি কত দিন দিতে হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট কথা নেই, তবে যারা ইমুনোথেরাপির সুফল পান তাদের তিন থেকে পাঁচ বছর চালিয়ে যেতে হবে।
এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী
যদিও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না বললেই চলে, তুবও এর যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় তা হলো­
স্থানীয় প্রতিক্রিয়াঃ যে জায়গায় ভ্যাকসিন দেয়া হয় সেখানে লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে।
সিস্টেমিক রিয়েকশন
এনাফাইলেক্সিস
অ্যাজমা ও রইনাইটিসের উপসর্গগুলো বেড় যেতে পারে।
ইমুনোথেরাপি চিকিৎসা সুফল না পাওয়ার কারণ
১। যদি ঠিকমতো রোগ নির্ণয় না করা হয়।
২। যদি অ্যালারজেন ও তার মাত্রা ঠিকমতো না দেয়া হয়।
৩। ভ্যাকসিন যদি মানসম্মত না দেয়া হয়।
৪। নির্ধারিত সময় পর্যন্ত না হয়।
৫। রোগীকে যদি ইমুনোথেরাপি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না দেয়া হয় ও রোগী যদি ঠিকমতো সহযোগিতা না করে।
৬। অ্যালার্জি দ্রব্যাদি থেকে এড়িয়ে চলার ঠিকমতো উপদেশ না দেয়া হয়।
৭। ভ্যাকসিন দেয়ার প্রথম অবস্থায় কোনো অসুবিধা না হলেও পরে যদি অতিসংবেদনশীলতা দেখা দেয়।
৮। পরিবেশে যদি নতুন কোনো অ্যালারজেনের আবির্ভাব হয় যা রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সময় ধরা পড়েনি।
ইমুনোথেরাপির দীর্ঘমেয়াদি সুফল
ইমুনোথেরাপির মাধ্যমে দীর্ঘ দিন রোগমুক্ত স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।
শুধু ওষুধ চিকিৎসায় আপনার জীবনযাত্রার প্রভাব
ওষুধ চিকিৎসায় সার্বক্ষণিকভাবে ওষুধ গ্রহণ, প্রতিদিন বারবার এর প্রয়োগ, রোগী মানসিকভাবে বিষণ্নতায় ভোগে। কর্মজীবনে সে নিজেকে অসহায় ভাবে। সাধারণ-স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে সে নিজেকে আলাদা ভাবতেই বেশি পছন্দ করে। তাই শুধু ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসায় অনেক রোগীকে মানসিক ভারসাম্য হারাতে দেখা গেছে।
কখন ইমুনোথেরাপি বন্ধ করতে হবে?
১. যখনই রোগীর রোগমুক্ত জীবন শুরু হবে তারপর দু-এক বছরের মধ্যে ধীরে ধীরে ইমুনোথেরাপি বন্ধ করলে পরবর্তী জীবনে উপসর্গহীন জীবনযাপন করা সম্ভব।
২. এ ছাড়া যেসব রোগী এক বছর ইমুনোথেরাপি ব্যবহার করার পরও উপসর্গ উন্নতির লাঘব হয়নি তাদের ক্ষেত্রে ইমুনোথেরাপি বন্ধ করা উচিত।
৩. ইমুনোথেরাপি চলাকালীন বারবার এনাফাইলাইটিক রিঅ্যাকশনে আক্রান্ত রোগীদের ইমুনোথেরাপি ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য বলা যেতে পারে।
৪. এ ছাড়াও যেসব রোগী ইমুনোথেরাপি গ্রহণে অসহযোগিতামূলক আচরণ করেন তাদের ক্ষেত্রে ইমুনোথেরাপি ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।
সঠিক পর্যালোচনায় দেখা যায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ইমুনোথেরাপি গবেষণায় প্রমাণিত সত্য যে, ইমুনোথেরাপি ওষুধ চিকিৎসার পাশাপাশি অ্যাজমা ও অ্যালার্জির তীব্রতা কমায়, বারবার আক্রান্তের হারকে কমায় ও রোগীকে রোগমুক্ত স্বাভাবিক জীবনযাপনে সহযোগিতা করে। তাই ইমুনোথেরাপির মাধ্যমে অ্যালারজেনগুলো শরীরের প্রতিক্রিয়ার ধরনকে বদলিয়ে দিয়ে প্রতিক্রিয়াহীন করার মাধ্যমে রোগীর অ্যালারজেনগুলোর ওপর সহনীয়তা বৃদ্ধি করে। ফলে ইমুনোথেরাপিপ্রাপ্ত রোগী পরবর্তী সময়ে ওই অ্যালারজেন দ্বারা রোগ উপসর্গ প্রকাশ থেকে মুক্ত হয়। তাই ইমুনোথেরাপি ওষুধ চিকিৎসার পাশাপাশি রোগমুক্ত স্বাভাবিক সুন্দর জীবনের জন্য অন্যতম নিয়ামক হিসেবে অ্যাজমা ও অ্যালার্জি রোগীদের রোগ চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি ভূমিকা রাখে।
লেখকঃ অ্যালার্জি ও অ্যাজমা রোগ বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা। মোবাইলঃ ০১৭১১৫৯৪২২৮


ঠাণ্ডা থেকে এলার্জি

ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। ঋতুর পরিবর্তনে আবহাওয়ারও পরিবর্তন হয়। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে আমাদের অনেকেরই স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সাধারণতঃ শীতকালে আমাদের দেশে বিভিন্ন বয়সের মানুষের শীতকালীন কিছু উপসর্গ দেখা দেয়, কোল্ড এলার্জি বা শীত সংবেদনশীলতা। আমরা দেখে থাকি শীত আসলেই অনেক শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন বা সারা শীত জুড়ে অসুস্থ থাকেন। এর বেশীর ভাগ হয়ে থাকে কোল্ড এলার্জির কারণে।

ঠাণ্ডা বাতাস, সিগারেটের ধোঁয়া, সুগন্ধি, তীব্র গন্ধ, পত্রিকা বা বই-খাতার ধুলা যাতে মাইট থাকে, ফুলের রেণু, মোল্ড ইত্যাদির উপস্থিতি অনেকেই একেবারে সহ্য করতে পারেন না। এসবের উপস্থিতি শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি বা এ্যাজমা, সর্দি ইত্যাদির দেখা দেয়। এসব বিষয়কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এলারজেন বলা হয়। এসব এলারজেনজনিত উপসর্গকে আমরা এলার্জি বলে থাকি। সুতরাং প্রচণ্ড শীতও অনেকের জন্য এলারজেন হিসাবে কাজ করে এবং এ কারণে সৃষ্ট উপসর্গকে কোল্ড এলার্জি বলা হয়।

কেন হয়? আমাদের নাসারন্ত্র ও শ্বাসনালীতে স্নায়ুকোষের কিছু রিসেপ্টর আছে। এই রিসেপ্টরগুলো আবার ভ্যাগাস নার্ভ (এই জোড়া নার্ভ যা শ্বাসনালী ও কক্তনালীর মাংসপেশীর সংকোচন ও প্রসারণকে উদ্দীপ্ত করে) এর সাথে সংযুক্ত। ইতিপূর্বে উলেস্নখিত এলারজেনসমূহ শ্বাসনালীর রিসেপ্টর নার্ভকে উদ্দীপ্ত করে। ফলে শ্বাসনালীর মাংসপেশীর সংকোচন ঘটে এবং শ্বাসনালী সরম্ন হয়ে যায় তখন রোগীর শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি দেখা দেয়।

কাদের বেশী হয়? সাধারণত খুব কম বয়সী বাচ্চাদের মধ্যে এর প্রকোপ বেশী দেখা দেয়, তবে যে কোন বয়সেই হতে পারে।

শীতকালে কেন বেশী হয়? শীতকালে কেন এ উপসর্গ বেশী হয় তা এখনো পরিপূর্ণভাবে জানা যায়নি। তবে অনেক রোগীর সামগ্রিক অবস্থা পরীড়্গা করে কিছু জিনিস চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে যেমন- আবহাওয়ার অবস্থা, দ্রম্নত তাপমাত্রা এবং বায়ুচাপের পরিবর্তন, উচ্চ আর্দ্রতা মোল্ড ও মাইট-এর বংশ বিস্তôারের জন্য উপযোগী বা শীতকালীন রোগগুলোর কারণগুলোর অন্যতম।

উপসর্গসমূহঃ নাক দিয়ে পানি পড়ে, নাক চুলকায়, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বাঁশির মত আওয়াজ বের হওয়া, বুক চেপে আসা ইত্যাদি।

কি করণীয়? যে কারণে এ উপসর্গগুলো দেখা দেয় এলার্জি টেস্ট করে কারণ নির্ণয় করে তা পরিহার করে চলা উচিত। ঠাণ্ডা বাতাস থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এক ধরনের মুখোশ (ফিল্টার মাস্ক) বা মুখবন্ধনী ব্যবহার করা যেতে পারে। যা ফ্লানেল কাপড়ের তৈরি এবং মুখের অর্ধাংশসহ মাথা, কান ঢেকে রাখে। ফলে ব্যবহারকারীরা উত্তপ্ত নিঃশ্বাস গ্রহণ করতে পারেন।

শীত প্রধান দেশে সাধারণতঃ তাদের শীতকালীন বিশেষ পোশাক-এর সাথে এই মাস্ক বা মুখোশ ব্যবহার করে থাকেন। সালবিউটামল ইনহেলার নেয়া যেতে পারে কারণ এ ঔষধ উপসর্গ নিঃসরণে প্রথম পছন্দনীয় ঔষধ। দীর্ঘমেয়াদি ভাল থাকার জন্য স্টেরয়েড ইনহেলার নেয়া যেতে পারে। যে এলারজেন একেবারেই পরিহার করা সম্ভব নয় অথচ শ্বাসকষ্টের জন্য বহুলাংশে দায়ী যেমন মাইট, মোল্ড, পোলেন পরাগ রেণু এর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে দীর্ঘমেয়াদী সুস্থ থাকা যায়। ভ্যাকসিন পদ্ধতি-এ পদ্ধতি ব্যবহারে কর্টিকোস্টেরয়েডের ব্যবহার অনেক কমে যায়। ফলে কর্টিকোস্টেরয়েডের বহুল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।

বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ভ্যাকসিন পদ্ধতির চিকিৎসাকে এলার্জিজনিত রোগের অন্যতম চিকিৎসা বলে অভিহিত করেন। এটাই এলার্জি রোগীদের দীর্ঘমেয়াদী সুস্থ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি।

আগে ধারণা ছিল এলার্জি একবার হলে আর সারে না। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। প্রথমদিকে ধরা পড়লে এলার্জিজনিত রোগ একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অবহেলা করলে এবং রোগ অনেকদিন ধরে চলতে থাকলে নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে। উন্নত দেশের সকল প্রয়োজনীয় পরীড়্গা-নিরীড়্গা ও চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশেই রয়েছে। তাই সময়মত এলার্জি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

০ ডাজ্ঝ গোবিন্দ চন্দ্র দাস

এলার্জি ও এ্যাজমা রোগ বিশষজ্ঞ

সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান, এলার্জি এন্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজী বিভাগ

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা।


শীতকালীন হাঁপানি
ডাজ্ঝ মোজ্ঝ দেলোয়ার হোসেন
বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, শাহবাগ, ঢাকা

আমাদের শ্বাসতন্ত্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শরীরে জীবনীশক্তি আনে বাতাস। ফুসফুস দূষিত কার্বন ডাই-অক্সাইড শরীর থেকে বাইরে এবং বাতাসের অক্সিজেন রক্তে প্রবাহিত করে। শ্বাসতন্ত্রে কোনো ধরনের সমস্যা হলে এ প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় আমাদের ফুসফুস, শ্বাসনালি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
তাই এই অঙ্গ অতিসংবেদনশীলতা আমাদের স্বাভাবিক জীবনের ছন্দপতন ঘটায়। অ্যাজমা বা হাঁপানি এ রকম একটি রোগ, যা শ্বাসনালির প্রদাহজনিত অতিসংবেদনশীলতার কারণে হয়ে থাকে। এ সময় শ্বাসনালি খুব বেশি স্পর্শকাতর থাকে, ফলে সামান্য কারণেই শ্বাসনালিতে সংকোচন দেখা দেয়।
এ সংকুচিত শ্বাসনালির পথ এতে সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় স্বাভাবিক বাতাস চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় ও কখনো কখনো শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যেতে পারে। সংকীর্ণ শ্বাসনালির মধ্য দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সময় ঘন ঘন কাশি ও দম বন্ধ হয়ে যাওয়া বা দম ফুরিয়ে যাওয়ার মতো অনুভূত হয়। প্রাথমিক অবস্থাতেই এ শ্বাসকষ্টের যদি চিকিৎসা না করা হয় তাহলে এ রোগ দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল হতে পারে।

হাঁপানির কারণ
হাঁপানির আসল কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে শ্বাসনালির বিভিন্ন রকমের সংবেদনশীলতা এর জন্য দায়ী হতে পারে। মূলত হাঁপানির জন্য কিছু উত্তেজক উপাদান বা ট্রিগার ফ্যাক্টর দরকার হয়।
এ ট্রিগার ফ্যাক্টর হাঁপানি রোগীর শ্বাসনালির ভেতর লুকিয়ে থাকা রোগকে প্রকাশ করে।
উত্তেজকের ওপর নির্ভর করে সাধারণত হাঁপানিকে তুলে ধরা যেতে পারে এভাবে-অ্যালার্জির কারণে হাঁপানি, ভাইরাস সংক্রমণের কারণে, ব্যায়ামের কারণে, পেশাগত কারণে, আবহাওয়ার কারণে, ওষুধের কারণে; আবার কখনো কখনো মানসিক চাপের কারণেও হাঁপানি হতে পারে। তবে এর মধ্যে অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
কেন? আমাদের শরীরের ধর্ম হচ্ছে, শরীরে কোনো ক্ষতিকর উপাদান প্রবেশ করলে শরীর তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং সেই উপাদানকে ধ্বংস করে ফেলে। কখনো কখনো জ্নগতভাবেই অনেকের মধ্যে এ অতিরিক্ত প্রতিরোধব্যবস্থা থাকে। ফলে যে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হয়, তা-ই অ্যালার্জি। শরীরে যা অ্যালাজি তৈরি করে তাকে বলে অ্যালার্জেন।
সাধারণ অ্যালার্জেন বা যে যে জিনিস সাধারণত অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে বা হাঁপানি রোগীর শরীরে হাঁপানির উপসর্গ তৈরি করে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো তাপমাত্রার পরিবর্তন। এ অ্যালার্জেন শ্বাসনালিতে প্রবেশ করলে শ্বাসনালিতে তিন ধরনের পরিবর্তন ঘটে-
* সরু শ্বাসনালির চারপাশের মাংস সংকুচিত হয় এবং শ্বাসনালিকে আরও সরু করে ফেলে, ফলে শ্বাসকষ্ট হয়।
* মিউকাসজাতীয় আঠালো পানি নিঃসৃত হয়, যা শ্বাসনালির পথকে বন্ধ করে দেয় এবং
* শ্বাসনালির ভেতর প্রদাহ তৈরি হয়, ফলে শ্বাসতন্ত্রের আবরণী ফুলে ওঠে। ফলে শ্বাসনালির পথকে আরও সংকুচিত করে দেয়।
অ্যালার্জির কারণে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার আগে সাধারণত চোখ লাল হয়, নাক থেকে পানি পড়ে, নাক চুলকায়, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয় এবং কখনো কখনো গায়ে লাল চাকা ওঠে।
ঘরবাড়ির ধুলা, ধুলায় অবস্থিত ‘মাইট’ নামের এক প্রকার কিট, পাখির পালক, জীবজন্তুর পশম, ছত্রাকের স্পোর, রান্নার ধোঁয়া, সিগারেটের ধোঁয়া, কিছু খাদ্য (যেমন পালংশাক, মিষ্টি কুমড়া, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ ইত্যাদি) কিছু ওষুধ (সালফারজাতীয় ওষুধ), শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত কিছু রাসায়নিক পদার্থ।
একই জিনিস সব হাঁপানি রোগীর অ্যালার্জেন নাও হতে পারে। কার কোন কোন জিনিসে অ্যালার্জি হয় সে সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে এবং তা থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে থাকতে হবে।
শীত এসেই গেছে। এ সময় হাঁপানির প্রকোপটা বছরের অন্য সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকে। প্রকৃতিতে ঠান্ডা-গরমের যে পরিবর্তন কাল, সে সময়টায় হাঁপানির উপসর্গগুলো হঠাৎ করেই দেখা দিতে পারে।
এ ছাড়া বিভিন্ন ঋতু পরিবর্তনের সময় যেমন শরৎকাল, বসন্তকাল, শীতকাল-এ সময়গুলোতে বাতাসে অসংখ্য ফুলের বা ঘাসের পরাগরেণু ভেসে বেড়ায়, যা হাঁপানির একটা ট্রিগার ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। হাঁপানি রোগীদের শ্বাসনালি এমনিতেই অতিমাত্রায় সংবেদনশীল থাকে। শীতকালে বাতাস ঠান্ডা ও শুষ্ক থাকে। এই ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাস যখন ওই সংবেদনশীল শ্বাসনালিতে ঢোকে, তখন শ্বাসনালি সংকুচিত হয় এবং হাঁপানির উপসর্গ আরও বাড়িয়ে দেয়।
শীতকালে আমরা সাধারণ সর্দি-জ্বর বা ফ্লুতে বেশি করে আক্রান্ত হয়ে থাকি, যা হাঁপানি হওয়ার একটি অন্যতম নিয়ামক।
শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য আমরা অনেক সময় ঘরের মধ্যে বেশি সময় কাটাই। সে সময় ঘরের দরজা, জানালা বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে ও ঘরের মধ্যে বাতাসের প্রবাহ ব্যাহত হয়। ফলে ঘরের মধ্যে ধুলাবালি, ধুলায় থাকা মাইট নামের কিট, পোষা জীবজন্তুর লোম বা পাখির পালক ইত্যাদির পরিমাণ বেড়ে যায়।
এগুলো হাঁপানির উপসর্গকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া ঘরে কেউ ধূমপান করলেও হাঁপানি হতে পারে।

ভালো থাকুন শীতকালেও
* শীতের সময় অ্যাজমার প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। শীতল বাতাস হাঁপানির উপসর্গ বাড়িয়ে দেয়। তাই ঠান্ডা বাতাস যেন সরাসরি শ্বাসনালিতে প্রবেশ না করে, সে জন্য মাস্ক বা মুখে রুমাল ব্যবহার করা যেতে পারে।
* নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ, নাক দিয়ে শ্বাস নিলে বাতাসের আদ্রর্তা ও তাপমাত্রা উভয়ই বেড়ে যায় এবং এতে শ্বাসনালি স্বস্তি পায়।
* সাধারণ ঠান্ডা বা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যতটুকু সম্ভব চোখ, নাক বা মুখে হাত দেওয়ার অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করুন।
* নাক পরিষ্কার করার জন্য টিসুপেপার ব্যবহার করতে পারেন এবং ব্যবহারের পর তা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার অভ্যাস করুন। নাক পরিষ্কার করার পর অবশ্যই হাত ভালো করে পরিষ্কার করুন। হাঁচি-কাশির সময় অবশ্যই মুখে কাপড় ব্যবহার করুন। যতটুকু সম্ভব ঘরের বাতাসের গুণগত মান ঠিক রাখার চেষ্টা করুন, বিশেষ করে ঘরের মধ্যে ধূমপান করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে।
* নিজে নিজে ঘর ঝাড়ামোছা, কাপড় পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকুন। ঘর ঝাড়ামোছা বা পরিষ্কার করার সময় ঘরের বাইরে থাকতে হবে।
* বাসায় কার্পেট ব্যবহার করবেন না। বিশেষ করে শোবার ঘরে কোনো অবস্থায়ই কার্পেট রাখবেন না।
* বিছানায় লোমযুক্ত চাদর, কাঁথা, লেপ বা কম্বল ও বালিশ ব্যবহার করবেন না। শোবার বিছানা অবশ্যই বেডকভার দিয়ে ঢেকে রাখবেন, যাতে ধুলাবালি না পড়ে।
* বিছানার চাদর, বালিশের কভার অন্তত সপ্তাহে একবার ধুতে হবে ও কমপক্ষে এক ঘণ্টা রোদে রাখতে হবে, যাতে মাইট মরে যায়।
* পোষা পাখির খাঁচা, লোমযুক্ত প্রাণী, যেমন-বিড়াল, কুকুর, হাঁস-মুরগি বাড়িতে রাখবেন না। রান্না করার সময় অবশ্যই রান্নাঘরের জানালা খুলে রান্না করবেন। রান্না ঘরের ধোঁয়া যাতে শোবার ঘরে প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
বছরের অন্য সময়ের মতো শীতকালেও হাঁপানি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ আছে কি না তা জানা প্রয়োজন। এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শমতো নিয়মিত ওষুধের ধরন ও মাত্রা ঠিক করে নিন। নিয়মিত হাঁপানির রোগ বাধাদানকারী ওষুধ ব্যবহার করুন।