Saturday, June 14, 2008

Sex (যোন রোগ)

এইডস প্রতিরোধে সচেতনতা
ডাজ্ঝ মাসুদা বেগম
সহযোগী অধ্যাপক, হেমাটোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

কেস স্টাডি
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে এক রোগী এলেন ঘাড়ে অনেকগুলো গ্রন্থি ফোলা নিয়ে। তিনি দুই বছর ধরে দেশে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন। কিন্তু কোনো উপকার পাচ্ছেন না। তিনি এখানে ভর্তি হলেন। শরীরের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা গেল যে তিনি এইচআইভি বা এইডসে আক্রান্ত। যে মুহূর্তে রিপোর্ট হাতে এল, তখন থেকে রোগী পলাতক। উল্লেখ্য, রোগী সৌদি আরবে পাঁচ বছর চাকরি করেছেন। সম্ভবত ওখানেই এই রোগটা ধরা পড়েছে এবং তাঁকে সেখান থেকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। বাড়ি ফিরে নিসংকোচে স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা করেছেন এত দিন। ফলে তিনি স্ত্রীকে সংক্রমিত করেছেন; বাদ যায়নি দুই বছরের বাচ্চাটাও।
দেখা যাচ্ছে, দ্রুত বিশ্বায়নের ফলে এ রোগটিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোয়। ধীরে ধীরে আমাদের দেশেও এইচআইভি বা এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই।
এ বছর ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বঙ্গবুõ শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭৩১। বাংলাদেশে এইচআইভি প্রজিটিভ রোগীর সংখ্যা এ পর্যন্ত এক হাজার ২০৭ (সূত্র ভাইরোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ)।
২০০৬ সালের শেষদিকে বিশ্বে এইচআইভি বা এইডস রোগীর সংখ্যা ৩৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন। প্রতিদিন বিশ্বে ১১ হাজার নারী-পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আমাদের দেশে মা ও শিশুরাই হচ্ছে নীরব শিকার। ২০০৪ সালে এশিয়ায় প্রতি এক লাখ মা ও শিশুর মধ্যে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ আক্রান্ত হচ্ছে এইচআইভিতে (ঈগউঞ-২০৭, চথবপ ১৩৪৮)। মা থেকে শিশুরা সরাসরি আক্রান্ত হচ্ছে, এটাকে বলা হয় ভার্টিকাল ট্রান্সমিশন।
এইডস রোগের জীবাণু এইচআইভি সাধারণত শরীরের সমস্ত তরল অংশে যেমন বুকের দুধ, চোখের পানি, মুখের লালা, রক্ত, যোনির নিঃসরণ, বীর্য এগুলোর মধ্যে থাকে।
কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি যখন অন্য কারও সঙ্গে এসব শরীরের তরল পদার্থ আদান-প্রদান ঘটায়, তখন একজনের থেকে আরেকজনের মাধ্যমে রোগের বিস্তার হয়। ১৯৮১ সালে আমেরিকায় প্রথম এই রোগের অস্তিত্ব আবিষ্কার হয়। তারপর পর্যায়ক্রমে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষ জানতে পারে।
এইচআইভি যেভাবে ছড়ায়
জ্ঝ বিশেষ করে মাদকসেবীরা যখন একটি সুচ অনেকেই ব্যবহার করে।
জ্ঝ আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে।
জ্ঝ সমকামিতা।
জ্ঝ অনিয়ন্ত্রিত যৌনতা।
জ্ঝ বহুগামিতা।
জ্ঝ এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের থেকে শিশুর মধ্যে।
জ্ঝ যৌনকর্মীর মাধ্যমে।

যেভাবে এইচআইভি ছড়ায় না
জ্ঝ হাঁচি, কাশি, থুথুর মাধ্যমে।
জ্ঝ মশা বা মাছির মাধ্যমে।
জ্ঝ যৌনতা ছাড়া সংস্পর্শ।

এইচআইভি সংক্রমিত হওয়া বা এইডস আক্রান্ত হওয়ার পর দুই থেকে ছয় সপ্তাহ কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। ছয় সপ্তাহ পরে সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বর, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হওয়া এ ধরনের কিছু উপসর্গ দেখা যায়, যা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। এ রকম অবস্থায় কোনো কোনো রোগী ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। কিন্তু তাঁর শরীরে এই ভাইরাসগুলোর বংশবৃদ্ধি বন্ধ থাকে না। পরে যা জীবননাশী হয়ে যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণ লোপ পায়।
এইডস রোগ প্রতিরোধ
জ্ঝ প্রত্যেক গর্ভবতী গর্ভাবস্থায় এবং পরবর্তী সময় মা ও শিশুর এইচআইভি পরীক্ষা করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
জ্ঝ একজনের ব্যবহৃত সুচ অপর জন ব্যবহার না করা।
জ্ঝ নিরাপদ যৌনতার জন্য যৌনকর্মীদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
জ্ঝ ঘন ঘন সঙ্গী বদল না করা।
জ্ঝ সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকা।
জ্ঝ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা।
জ্ঝ পোশাক, শরীর ও সর্বোপরি আত্মাকে পবিত্র রাখা।
এইডস প্রতিরোধ আমাদের ইচ্ছাই যথেষ্ট। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনেই প্রতিরোধের প্রধান উপায়। তা না হলে এমন দিন আসবে বাঁধ দিয়েও যেমন বন্যার পানি রোধ করা যায় না, তেমনি আকারে ছড়িয়ে পড়বে এ রোগ ঘর থেকে ঘরে। তাই এখন সবার সচেতনতা জরুরি।


নানা ভুল ধারনা থেকে বিভ্রান্ত

নারী-পুরম্নষের যৌন জীবন নিয়ে নানা ভুল ধারনার বিষয়ে আলোচনা করবো বেশীর ভাগ পুরম্নষের ধারনা থাকে শরীরের ওপর নানাবিধ অত্যাচার-অনাচার করেছেন, তাই তাদের যৌন জীবন শেষ হয়ে গেছে। অনেক ডাক্তার-কবিরাজের কাছে গিয়েও কোন লাভ হয়নি। শেষ চিকিৎসা হিসাবে এসেছেন। এসব কথা রেকর্ডের মত বাজানো হয় প্রতি নিয়ত। শুধু কি তাই, আজকাল ইন্টারনেটের সুবাদে বেশীরভাগ তরম্নণ-তরম্নণীদের যৌন জীবন সম্পর্কে খানিকটা বাড়তি ধারনা ও কৌতুহল তেরী হয়েছে। যদিও এসব ধারনার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এখানে কিছু কিছু ভুল ধারনার বিষয়ে উত্থাপন করা হলো।

বেশীর ভাগ তরম্নণ-যুবক বা বিবাহিত পুরম্নষের অভিযোগ তাদের বিশেষ অঙ্গ নিয়ে পরিতৃপ্ত নয়, মিলনে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেন না। টেলিফোন আলাপ বা সঙ্গিনীর কাছে এলে বীর্যপাত ঘটে ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেক সময় বন্ধুদের পালায় পড়েও অনেকে ভুল ধারনার শিকার হন। যেমনঃ-

বিশেষ ড়্গেত্রে আকৃতি সম্পর্কে প্রায় শতকরা একশত ভাগ পুরম্নষের ভুল ধারনা রয়েছে। তরম্নণ বা পুরম্নষের ধারণার কোন সাইন্টিফিক যুক্তি না থাকলেও তরম্নণরা বেশীর ভাগ ড়্গেত্রেই বিভ্রান্তô হচ্ছেন। আসলে এসব বিষয়ে ইন্টারনেটের লব্ধ ভুল ধারনা তরম্নণদের বেশী ড়্গতি করছে।

প্রথমতঃ বিশেষ অঙ্গের সুনির্দিষ্ট কোন আকৃতির ওপর যৌন জীবনের সফলতা নির্ভর করে না। কাংখিত ফলাফল পাওয়ার ড়্গেত্রে পুরম্নষদের দৃঢ়তা, শারীরিক সড়্গমতা, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সমঝোতা, নানা কৌশল এবং উপযুক্ত সময় ও পরিবেশের ওপর নির্ভর করে মিলনের স্থায়ীত্ব ও আনন্দ। কেবলমাত্র বিশেষ অঙ্গের আকৃতির ওপর দাম্পত্য জীবনের সুখ আসেনা। অনেক ড়্গেত্রে এর কোন স্ট্যান্ডার্ড পরিমাপ নেই। তবে আমার চেম্বার প্রাকটিসে পুরম্নষের আকৃতিগত যে ভুল ধারণা রয়েছে তা অনেক ড়্গেত্রে নিরসন করতে পেরেছি। তবে মনে রাখতে হবে কোন ওষুধে পুরম্নষের বিশেষ অঙ্গের আকৃতির কোন পরিবর্তন হয়না। এজন্য কোন ধরনের ওষুধ সেবনেরও প্রয়োজন নেই।

দ্বিতীয়ঃ বেশীর ভাগ পুরম্নষের ধারণা তরম্নণ বয়সে শরীরের ওপর নানা অত্যাচার-অনাচার যেমনঃ- হচ্চ মৈথুন, অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ এবং অনেকেই অসৎ সংস্পর্শের কারণে নিজেকে নিঃশেষ করে দিয়েছেন। তাই তাদের সে নিঃশেষ হয়ে গেছে। এসব ধারণারও কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। মনে রাখতে হবে হচ্চমৈথুন, স্বপ্নদোষ বা যৌবনে বিবাহ বহিভূত মিলনের কারণে যৌনশক্তি হ্রাস পায়না। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতা থাকলে এবং গুরম্নতর কোন রোগ না থাকলে অবশ্যই সুন্দর দাম্পত্য জীবন যাপন সম্ভব। তবে কিছু কিছু সমস্যার কথা আগেই বলেছি যেমনঃ ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন, দীর্ঘদিন মানসিক চাপ কমানোর ওষুধ সেবন, অতিরিক্ত মদ্যপান, মাদক গ্রহন, ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ, স্ত্রী-ভীতি, স্বামী-স্ত্রীর অসহযোগিতা, পারস্পরিক সন্দেহ, ক্যান্সারসহ কিছু রোগ ব্যাধি নানা কারণে যৌন জীবনে কাংখিত ফল পাওয়া নাও যেতে পারে। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হলে অবশ্যই দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়া যায়। পাশাপাশি কোন ধরনের যৌন উত্তেজক ওষুধ সেবন করা উচিৎ না। বিভিন্ন ধরণের যৌন উত্তেজক ওষুধে শরীরের স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় ড়্গমতা হ্রাস পায়। ফলে ওষুধ ছাড়া আর শরীরের উত্তেজনা তৈরী হয়না। তাই সংশিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন যৌন উত্তেজক ওষুধ সেবন করা উচিৎ নয়।

তবে একথা সত্য যে, ড়্গেত্র বিশেষ আকৃতিগত সমস্যা এবং পুরম্নষের শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে। যাকে বলা হয় পুরম্নষের শারীরিক অড়্গমতা বা ওসঢ়ড়ঃবহপব। পুরম্নষের এধরনের সমস্যা থাকলে কিছু কিছু হরমোন ও অন্যান্য পরীড়্গা-নিরীড়্গার মাধ্যমে কারণ সনাক্ত করে চিকিৎসা দিলে ফল পাওয়া যায়। অনেক ড়্গেত্রে যৌন সমস্যার সার্জিক্যাল চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। যেমনঃ- পেনাইল প্রোস্থেসিস ব্যবহারের ফলে স্বাভাবিক নিয়মে শারীরিক সমস্যা স্থাপনে অড়্গমতায় এ পদ্ধতি বেশ কার্যকর।

বাংলাদেশেও পেনাইল প্রোস্থেসিস সংযোজন করা হয়। তবে পেনাইল প্রোস্থেসিস স্থাপনের পূর্বে পুরম্নষের প্রয়োজনীয় ড়্গেত্রে ‘পেনাইল কালার ডপলার স্ট্যাডিম্ব পরীড়্গা করা হয়। এই পরীড়্গায় যদি সমস্যা ধরা পড়ে কেবল তখনই চধহরষব চৎড়ংঃযবংবং করার প্রয়োজন পড়ে। তাই যৌন সমস্যার ড়্গেত্রে ভুল ধারনার বশবর্তী হয়ে যত্রতত্র চিকিৎসা করানো উচিৎ নয়। যেসমচ্চ ভুল ধারণার কথা তুলে ধরা হলো এসবের বেশীর ভাগ মানসিক, শারীরিক সমস্যা নয়।

তাছাড়া আজকাল বিভিন্ন আয়ুবেদিক ওষুধ কোম্পানী এমনকি কিছু কিছু এলোপ্যাথিক ওষুধ কোম্পানী উত্তেজক ওষুধ তৈরী করছে। উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ব্যতীত কোন অবস্থাতেই কোন ধরণের যৌন উত্তেজক ওষুধ সেবন উচিৎ নয়। একই ভাবে পুরম্নষ ও মহিলাদের মধ্যেও কিছু ভুলধারণা রয়েছে। এসব ভুল ধারণারও কোন বাস্তôব ভিত্তিক বা বৈজ্ঞানিক সমর্থন নেই। বিশেষ করে একটা কথা মনে রাখা দরকার বেশীর ভাগ ড়্গেত্রে মহিলারা তাদের যৌন জীবন নিয়ে অন্যদের কাছে অতিরঞ্জিত করে বলে, ফলে শ্রোতা মহিলাটি বিভ্রান্তিôতে পড়েন। ফলে নিজের সংসারে অশান্তিô তৈরী হয়। তাই মহিলাদের যেকোন ভুলধারনার ড়্গেত্রে পুরম্নষের মত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিৎ। তবে একথা সত্য যে, মহিলাদের কিছু সমস্যার কারণেও যৌন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। মহিলাদেরও মিলনের আকাংখা কমে যাওয়াসহ বিশেষ ড়্গেত্রে শুষ্কতাজনিত সমস্যা হতে পারে। এছাড়া পেইনফুল মিলনের সমস্যাও রয়েছে। এসবের উপযুক্ত চিকিৎসা ও পরামর্শে স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনে ফিরে আসা যায়।

০ ডাঃ মোড়ল নজরম্নল ইসলাম

চর্মরোগ, যৌন সমস্যা ও পুরম্নষের বন্ধ্যাত্ব বিষেজ্ঞ এবং লেজার ও কসমেটিক সার্জন, বাংলাদেশ লেজার স্কিন সেন্টার

বাড়ী ২২/এ, রোড ২, ধানমন্ডি, ঢাকা।