Tuesday, June 10, 2008

Child Health (শিশু স্বাস্থ্য)

শীতে নবজাতকের সর্দি-কাশি
অধ্যাপক ডাজ্ঝ তাহমীনা বেগম
শিশু বিভাগ, বারডেম

নবজাতক বলতে জ্নের পর থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত বয়সী শিশুকে বোঝায়। এই শিশুদের শীতের সময় সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা হয় তা হচ্ছে ঠান্ডা লাগা। শিশু ঘনঘন হাঁচি দেয়, নাক বন্ধ থাকে, শব্দ হয়, মাঝেমধ্যে কাশিও হয়। মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন উদ্বিগ্ন মনে শিশুকে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে নিউমোনিয়া হয়েছে ভেবে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কিনে শিশুকে খাওয়াতে থাকেন। কখনো কখনো চিকিৎসকদের মধ্যে কেউ কেউ অকারণেই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ, এমনকি ইনজেকশন পর্যন্ত দেন, যা একদম ঠিক নয়।
আসল কথা হলো নবজাতক পৃথিবীতে নতুন। মাতৃগর্ভের উষ্ণতা থেকে মাত্র পৃথিবীতে এসেছে। শীতের ঠান্ডা বাতাস শিশুর নাক দিয়ে প্রবেশ করে নাক ও শ্বাসনালিতে সুড়সুড়ি দেয়, ফলে শিশুর হাঁচি বা কাশি হয়। নাকের ভেতরের চামড়া ফুলে উঠলে শিশুর নাক বন্ধ থাকে।
এ ক্ষেত্রে খেয়াল করুন আপনার শিশু দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে কি না (মিনিটে ৬০ বার বা তার বেশি)। বুকের পাজরের নিচের অংশ ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে কি না, যদি হয় তাহলে বুঝতে হবে শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে। যদি উল্লিখিত লক্ষণ দুটো থাকে বা শিশু নিস্তেজ হয়ে যায়, কম খায় বা শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট হয় তাহলে জরুরিভিত্তিতে শিশুকে চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণ ঠান্ডায় অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো প্রয়োজন নেই- এ কথাটি আমরা যেন ভুলে না যাই।
নাক বন্ধ থাকলে শুধু নরম কাপড় দিয়ে বা কটন বাডে দুই ফোঁটা ‘নরমাল ড্রপ’ দিয়ে নাক মুছে দিলেই শিশু আরাম পাবে ও খেতে পারবে।
শিশুর যাতে ঠান্ডা না লাগে এ জন্য গরম কাপড় দিয়ে শিশুকে বিশেষ করে তার মাথা ঢেকে রাখুন। নরম কাপড়ের টুপি পরান। দু-তিন দিন পরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করান। আর বারবার শিশুকে মায়ের দুধ দিন। মায়ের বুকের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়; সেই সঙ্গে মায়ের মমতা শিশুকে উষ্ণ রাখে। আপনি ও আপনার নবজাতক সুস্থ থাকুন।

শিশুর ডায়াবেটিস
অধ্যাপক ডাঃ শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস
বারডেম, ঢাকা।

শিশুদের ডায়েবেটিস সাধারণভাবে টাইপ ১ ডায়েবেটিস নামে পরিচিত। এই সমস্যা হলে দেহের প্যানক্রিয়াস যন্ত্রটি ইনসুলিন ড়্গরণ করতে ব্যর্থ হয়। দেহকোষে গস্নুকোজ প্রবেশ করার জন্য ইনসুলিন হরমোনটি অপরিহার্য। স্বাভাবিক অবস্থায় শরীরে শর্করা ভেঙ্গে গস্নুকোজ হয় এবং এই গস্নুকোজ রক্তস্রোতে বাহিত হয়ে পৌঁছায় দেহকোষে জ্বালানি হিসেবে। ইনসুলিনের সহযোগিতায় গস্নুকোজ দেহকোষে প্রবেশ করে খাবারে যোগায় শক্তি। ইনসুলিন না থাকলে শিশুদের ডায়েবেটিসে যা হয়গৈস্নুকোজ দেহকোষে ঢুকতে পারে না এবং জমা হতে থাকে রক্তে, বাড়ে রক্তের গস্নুকোজ মান। রক্তস্রোতে গস্নুকোজ জমা হলে এবং রক্তের গস্নুকোজ ও দেহকোষের গস্নুকোজের মধ্যে সমতা নষ্ট হলে ডায়েবেটিস এর লড়্গণ দেখা দিতে থাকে। হরমোন মানের তারতম্য আনে আচরণে পরিবর্তন। এ রোগ নিরাময় করা না গেলেও ইনসুলিন ইনজেকশন দিয়ে একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

উপসর্গঃ এগুলোর যেকোন একটি বা একাধিক দেখা দিতে পারে


মাথা ধরা, পিপাসা বেড়ে যাওয়া, ড়্গুধা বৃদ্ধি, বারবার প্রস্রাব, ওজন হ্রাস যার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না, ড়্গত যা সহজে সারে না, ক্লান্তিô যার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না, দুর্বলতা বা মাথা ঝিমঝিম্‌, ঝাপসা দৃষ্টি, শ্বাসে ফলের গন্ধ, বদমেজাজ, ঘাম হওয়া, বিহ্বলতা, বমি।

স্কুলের ব্যবস্থাপনাঃ
ডায়েবেটিক শিশুদের ব্যবস্থাপনার বেশ কিছুটা নির্ভর করে বিদ্যালয়ে ডায়েবেটিস সম্বন্ধে পরিচর্যা ব্যবস্থাপনার উপর। এদেশে স্কুল ব্যবস্থাপনা পর্ষদ এখনও এ ব্যাপারে ততটা সজাগ ও তৎপর নয় বলেই ধারণা। বাংলাদেশ ডায়েবেটিক এসোসিয়েশন ও বারডেম এ ব্যাপারে কিছুটা উদ্যোগ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে নেবে। উন্নত দেশেও এ দিকটি যে খুব সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তাও নয়। একটি উন্নত দেশের তেমন একটি চিত্র তুলে ধরিস্কৈুলের মেধাবী, ভালো ফল করা ছাত্রের মিডটার্ম ফলাফলে অকৃতকার্যকর হওয়ার জন্য মা-বাবাকে ডাকা হলো শিড়্গকদের সভায়। মা-বাবা বিস্মিত হয়ে লড়্গ্য করেন সে স্কুলের বিজ্ঞানের শিড়্গয়িত্রী তাকে বেয়াদব ও দিনে ঘুমকাতুরে ছেলে বলে জানেন। দেখা গেলো মধ্য সকালের ক্লাস (বেলা ১০টা/১১টা) থেকে বেরিয়ে নাস্তôা করতে যাওয়ার কথা বলতে ছেলেটি বিব্রতবোধ করত। কালক্রমে যখন বিজ্ঞানের ক্লাসের সময় হতো (মধ্যাহ্ন আহারের আগে আগে), তার রক্তের গস্নুকোজমান বিপজ্জনক নিচু মানে পৌঁছে যেতো (যুঢ়ড়মষুপধবসরধ), তখন সে হতবিহ্বল হয়ে পড়তো এবং চিন্তôা এলোমেলো হয়ে যেতো। শিড়্গকরা একে ইতিবাচকভাবে নিতে পারেননি।

তাহলে কি লড়্গ্য করতে হবে শিশুদের মধ্যে?

ডালস্নাসে শিশুদের মেডিকেল সেন্টারে একজন পেডিয়াট্রিক এনডোক্রিনোলজিস্ট ডাঃ জন গারম্যাক এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। তিনি ডায়েবেটিক শিশুদের মা-বাবাদের পরামর্শ দেন, ‘বাচ্চাদের মধ্যে অকস্মাৎ আচরণগত কোনও পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তা লড়্গ্য করম্নন।’ যদি কোনও স্বাভাবিক ভদ্র শান্তô শিশু হঠাৎ করে খুব বেয়াড়া ও নিয়ন্ত্রণহীন ও অবাধ্য হয়ে যায় তখন এর রক্তের সুগার মেপে দেখা উচিত, বা একজন স্বাভাবিক চটপটে তৎপর শিশু যদি হঠাৎ শান্তô, নীরব হয়ে যায় তাহলে তারও রক্তের সুগার মেপে দেখা উচিত।

টালস্নাহাসি মেমোরিয়েল হাসপাতালের ডায়েবেটিক কেন্দ্রের মেডিকেল ডিরেক্টার ডাঃ ল্যারি ডিব বলেন, “রক্তের সুগারের নিচুমান সনাক্ত করা সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ।” “আচরণে যেকোনও পরিবর্তনই গুরম্নত্বপূর্ণ। রক্তের সুগার নেমে এলেঃ চিন্তôা করার ড়্গমতা লোপ পেতে থাকেঃ একে রোধ না করা হলে এ থেকে সঙ্কালোপ পর্যন্তô ঘটতে পারে।”

তবে এ উপসর্গ মৃদু হতে পারে, হতে পারে রোগী বিহ্বল “তিনি ব্যাখ্যা করেন,”ঃ একজন খুব ভালো ছাত্র হঠাৎ বোকার মত উত্তর দিয়ে ফেললো। কিছু কিছু বাচ্চা খুব বদমেজাজি হয়ে যায়, রেগে যায়, খুব বাজে ব্যবহার করেঃ। দেখেছি তারা অনেক সময় নিজেদের গুটিয়ে নেয়, কখনও ঘুমিয়ে পড়েঃ”

তথ্য বিনিময় করা, জানা এসব হলো গুরম্নত্বপূর্ণঃ

স্কুলে ডায়েবেটিস ব্যবস্থাপনা সফল করতে হলে শিড়্গককে এ ব্যাপারে অবহিত করতে হবে, ডায়েবেটিস সম্বন্ধে জ্ঞানদান করতে হবে, স্কুল নার্স থাকলে তাকেও এ-ব্যাপারে প্রশিড়্গণ দেয়া যায়।

আজকাল, শিড়্গকদেরকে ক্লাসভর্তি ছেলে-মেয়েদের পড়াতে হয়, তাই একটি বিশেষ ছাত্রের আচরণের নজরদারি করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। ডাঃ গারম্যাকের পরামর্শ হলঃ স্কুলে ভর্তির সময় বাচ্চার সমস্যা, আচরণ এসব, প্রতি শিড়্গককে জানানো উচিত যাতে তারা তার মধ্যে কি নজরদারি করবেন তা বুঝতে পারেন। যেকোনও সময় কোনও শিশু অস্বাভাবিক চাপা বা শান্তô হয়ে যায় বা খুব বদমেজাজি হয়ে যায়, তাহলে তার রক্তের সুগার মান মেপে দেখা উচিত। শিশুর রক্তের সুগার মানের সঙ্গে তার আচরণ কি হয় সে সম্বন্ধে শিড়্গক পরিচিত হলে তাহলে সতর্ক সংকেতগুলো সম্বন্ধে শিড়্গক ওয়াকেবহাল থাকবেন। পেডিয়াট্রিক এনডোক্রিনোলজিতে বিশেষ প্রশিড়্গণ নিচ্ছেন এমন একজন ব্যক্তি গেস্নারিয়া ইয়ং শিশুদের শিড়্গকদের সঙ্গে যোগাযোগের উপর গুরম্নত্ব আরোপ করেন। বাচ্চার অস্বাভাবিক রক্ত সুগার মানের সঙ্গে আচরণের যে পরিবর্তন হতে পারে এ ব্যাপারটি সনাক্ত করতে বা উপলব্ধি করতে শিড়্গকদের অনীহার জন্য যে দ্বন্দ্ব হতে পারে সেগুলো সমাধানের জন্য বাচ্চার মা-বাবাকে স্কুলের প্রিন্সিপাল, শিড়্গক ও স্কুল নার্সের সঙ্গে সভা করার জন্য উৎসাহিত করছেন গেস্নারিয়া ইয়ং। তিনি একজন ডায়েবেটিস এডুকেটারও বটে।

টিনএজ বাচ্চাদের জন্য এটি আরও কঠিনঃ

রক্তের গস্নুকোজমান শিশুদের মন মেজাজ-এর উপর বয়ঃসন্ধিকালে যে প্রভাব ফেলে এটি অনুধাবন করা জরম্নরি। হরমোনমানের বৃদ্ধি এ চিত্রকে আরও জটিল করে ফেলে, কেবল তাই খাওয়া-দাওয়া নজরদারি করে এর তারতম্য পূর্বাহ্নে আঁচ করা কঠিন, এর উপর টিনএজ ছেলে-মেয়েদের সে সময়কালে আচরণ পরিবর্তন চিত্রটিকে আরও বেশি জটিল করে তোলে। যেমন একজন টিনএজার হতবুদ্ধি বা বিহ্বল হয়েছেএৈটি ড্রাগ বা এলকোহল বেশি পান করা বলে ভ্রম হতে পারে। তাই বাচ্চাদের জুনিয়ার ও সিনিয়ার স্কুল টিচারদেরকে এ ব্যাপারে প্রশিড়্গিত করে তোলা কঠিন তবে এতে সুফল আসে নিঃসন্দেহে।

এসব সমস্যা কি করে পরিহার করা যায়ঃ

নিজেকে এ-ব্যাপারে শিড়্গিত করে তোলা

নিজের বাচ্চার শারীরিক অবস্থা বোঝা মা-বাবার জন্য গুরম্নত্বপূর্ণ, কারণ মা-বাবারাই শিশুর নিরাপত্তার জন্য দায়ী। এছাড়া যে সব চিকিৎসক বা চিকিৎসাকর্মী যারা সাধারণত টাইপ-১ ডায়েবেটিস চিকিৎসা করেন না। এরা ভালো ওয়াকিবহাল না হলে অনেক সময় ভুলও করতে পারেন।

শিড়্গকদেরও এ-ব্যাপারে শিড়্গিত করে তুলতে হবেঃ

প্রতি বছরই বাচ্চার নতুন শিড়্গকের জন্য একটি তথ্য পঞ্জিকা তৈরি করা ভালো। মাঝে-মাঝে সভা করা উচিত। ফিল্ড ট্রিপে বাচ্চার ক্লাসে সঙ্গে যাওয়া এবং অভিভাবক-শিশু সংগঠনগুলোতে সক্রিয় হওয়া উচিত। বাচ্চাদের বন্ধুদেরও চেনাজানা উচিত এবং তাদেরকে একটু জানিয়ে রাখা ভালো যে তাদের বন্ধুর

বন্ধু তৈরি করম্ননঃ অন্যান্য শিশু যাদের ডায়েবেটিস রয়েছে তাদের সঙ্গে নিজের বাচ্চার বন্ধুত্ব করিয়ে নেয়া, কোনও ক্যাম্প থাকলে এতে যোগ দেয়ানো এগুলো করা যেতে পারে।

অসুখকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেড়্গণ করা উচিতঃ শিশুর রক্তের গস্নুকোজমান ও আহার ভালো করে নজরদারি করা উচিত।

সময়জ্ঞান থাকতে হবেঃ ডায়েবেটিস হয়ে প্রতিক্রিয়া হয়ে গেলে সে পরিস্থিতিতে বাচ্চার সঙ্গে আলোচনার সময় নয়। রক্তে শর্করা কমে গেলে স্পষ্ট চিন্তôা করতে পারে না বাচ্চা। এখনও পর্যন্তô টাইপ ১ ডায়েবেটিসের কোন নিরাময় নেই। অবশ্য গবেষণা চলছে সে লড়্গ্যে। এটি জীবনভর একটি অসুখ, কিন্তু ঠিকমত ব্যবস্থাপনা হলে উপভোগ করা যায় সুস্থ ও সুখী জীবন। শিশুর বাড়ন্তô বয়স খুব গুরম্নত্বপূর্ণ, তাই সে সময় শিশু যাতে রোগকে গ্রহণ করতে এবং এর নিয়ন্ত্রণ শিখতে পারে, সেরকম শিড়্গা দেয়া উচিত।


নবজাতকের প্রয়োজনীয় যত্ন
ইমনুল ইসলাম
লেখকঃ এফসিপিএস, এমডি (শিশু স্বাস্থ্য), শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কনসালটেন্ট, চাইল্ড এইড, মিরপুর, ঢাকা

একটি শিশু জন্মের ২৮ দিন পর্যন্ত সময়কালকে নবজাতক হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৫০ হাজার শিশু নবজাতক হিসেবে মৃত্যুবরণ করে। পাশাপাশি মায়ের গর্ভাবস্থার শেষে মায়ের পেটেই মারা যায় আরো লক্ষাধিক শিশু। জীবিত নবজাতকের মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৪২ জন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও নবজাতকের মৃত্যুর হার কমানোর জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি এবং সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।

নবজাতকের মৃত্যুর প্রধান কারণ
স্বল্প ওজনের শিশু জন্মগ্রহণের ফলে জটিলতা
জন্মের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পারা
সংক্রমণ যেমন­ সেপসিস, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, ধনুষ্টঙ্কার
প্রসবজনিত জটিলতা
অপরিণত সময়ে প্রসব হওয়ার জটিলতা
সামান্য সচেতনতাই যথেষ্ট আমাদের নবজাতকদের জীবন রক্ষা করতে। প্রয়োজন নেই এর জন্য কোনো উচ্চ মানব প্রযুক্তি। নেই কোনো ব্যাপক খরচের ঝামেলা। সহজসাধ্য যত্ন ও কিছু পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েই আমরা আয়োজন করতে পারি নবজাতকদের নিশ্চিত জীবন।
নবজাতকের জীবন রক্ষায় প্রয়োজনীয় সহজসাধ্য করণীয়
প্রসব-পূর্ব যত্নঃ ষ নিয়মিত বিরতি দিয়ে সন্তান গ্রহণ
সময়মতো টিটি টিকা নিশ্চিত করা
প্রয়োজনীয় পুষ্টি, বিশ্রাম ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা
প্রসবের সময় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া
গর্ভজনিত সময়ে বিপদচিহ্নের সচেতনতা এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ
বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য সচেতনতা এবং পরামর্শ প্রদান
প্রসবকালীন যত্নঃ ষ হাসপাতালে প্রসবের জন্য মা ও পারিবারের সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা
দক্ষ/ প্রশিক্ষিত কর্মী দ্বারা প্রসব করানো নিশ্চিত করা
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন প্রসব নিশ্চিত করা
গর্ভজনিত বিপদ চিহ্নের সচেতনতা এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করা
নবজাতকের তাৎক্ষণিক যত্ন
নবজাতকের নাক-মুখ পরিষ্কার করে দেয়া
শুষ্ক ও উদ্দীপ্ত রাখা
জন্মানোর পরপরই শাল দুধ এবং বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করা
গরম রাখার জন্য নবজাতককে মায়ের কাছাকাছি রাখা
প্রসব পরবর্তী নবজাতক ও মায়ের যত্ন
শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করা
নাভী শুষ্ক ও খোলা রাখা। কোনো কিছু না লাগানো নিশ্চিত করা
নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রা খেয়াল রাখা
প্রসব-পরবর্তী মাকে আবার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে চেকআপের ব্যবস্থা করা
গর্ভজনিত বিপদচিহ্নের সচেতনতা এবং ব্যবস্থা গ্রহণ
মায়ের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও বিশ্রাম নিশ্চিত করা
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে নবজাতকদের স্বাস্থ্য রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ২০১৫ সালের মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার অর্ধেকে কমিয়ে আনতে সঙ্কল্পবদ্ধ। পাঁচ বছর বয়সের নিচের শিশুদের মধ্যে অর্ধেকেরই বেশি নবজাতক (প্রথম ২৮ দিন) অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। তাই নবজাতক মৃত্যুর হার কমাতে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া আশু প্রয়োজন।

শিশুদের ঠাণ্ডাজণিত সমস্যা
ময়মনসিংহ, ত্রিশাল থেকে লিখেছেন রিজিয়া (২৫)। আপনার একমাত্র মেয়ের বয়স ৫ বছর। প্রত্যেক শীতে মেয়ে ডালিয়ার ঠান্ডা লাগে, গলায় ব্যথা হয়, কাশি হয়। উত্তরঃ শীতকালে আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ঠান্ডা থেকে শিশুদের গলায় ব্যথা, ঠান্ডা, নাক দিয়ে পানি পড়া, কাশি ইত্যাদি হতে পারে। তবে গলায় ব্যথা বারবার হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক ড়্গেত্রে জীবাণুর সংক্রমণের ফলে গলায় ব্যথা থেকে শিশুদের বাতজ্বর হতে পারে। এছাড়া শীতে শীতে শিশুদের কাশি, গলায় ব্যথা থেকে রড়্গার জন্য গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। সকালে ও রাতে যাতে ঠান্ডা না লাগে তা দেখতে হবে। কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়লে বয়স অনুযায়ী এন্টিহিস্টামিন জাতীয় সিরাপ অথবা ট্যাবলেট সেবন করতে হতে পারে। এছাড়া কাশির ধরনও তীব্রতা অনুযায়ী অনেক ড়্গেত্রে এন্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন হতে পারে।


শিশুর জন্য টিকা
ডাঃ মুহাম্মদ কামরম্নজ্জামান খান
জনস্বাস্থ্য ও প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
প্রভাষক, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ

শিশুরা আগামীদিনে জাতির কর্ণধার। দেশকে দড়্গ জনসম্পদে সমৃদ্ধ করতে হলে শিশুর সুষ্ঠু বৃদ্ধি ও সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা সহজেই বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্তô হয়ে থাকে। ধনুষ্টংকার, ডিফথেরিয়া, হুপিং কাশি, যক্ষ্মা, পেলিও, হাম, হেপাটাইটিস-বি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া প্রভৃতি সংক্রামক ব্যাধিতে আমাদের দেশে হাজার হাজার শিশু মৃত্যুবরণ করে। সময়মত টিকা প্রদানের মাধ্যমে এসব মারাত্মক রোগ সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। চলমান টিকাদান কর্মসূচির ফলস্বরূপ আমাদের দেশে শিশু মৃত্যুর হার অনেকটা কমে আসলেও শতভাগ লড়্গ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তাই শিশুকে সময়মত টিকা দেয়ার ব্যাপারে সকলের সচেতনতা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা জরম্নরি।

আমাদের দেশে শিশুকে ধনুষ্টংকার, ডিফথেরিয়া, হুপিং কাশি, যক্ষ্মা, পোলিও, হাম এবং হেপাাইটিস-বি নামক সাতটি মারাত্মক রোগের হাত থেকে বাঁচাতে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঁচ ধরনের টিকা প্রদান করা হয়ে থাকে। শিশুকে সবগুলো টিকা দেবার জন্য জন্মের এক বছর বয়সের মধ্যে মোট চারবার সরকারি বা বেসরকারি টিকাদান কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। প্রথমবার শিশুদের মাস বয়সে যক্ষ্মা প্রতিরোধক বিসিজি টিকা এবং ডিপিটি, পোলিও এবং হেপাটাইটিস-বি টিকার প্রথম ডোজ দিতে হবে। দ্বিতীয় বার শিশুর আড়াই মাস বয়সে ডিপিটি, পোলিও এবং হেপাটাইটিস-বি টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। তৃতীয় বার শিশুর সাড়ে তিন মাস বয়সে ডিপিটি, পোলিও এবং হেপাটাইটিস-বি টিকার তৃতীয় ডোজ প্রদান করতে হবে। চতুর্থ বার শিশুর বয়স নয় মাস পূর্ণ হলে পোলিও টিকার চতুর্থ ডোজ এবং হামের টিকা দিতে হবে। এ সময় শিশুকে একটি ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলও খাওয়ানো হয়ে থাকে। অনেকে এটিকে ষষ্ঠ টিকা হিসেবে গণ্য করে থাকেন।

শিশুরা একটি জাতির সর্বাধিক গুরম্নত্বপূর্ণ সম্পদ। আজ যারা শিশু তাদেরকে যদি আমরা যত্ন সহকারে, সুস্থ-সুন্দর পরিবেশে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দিতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে তারা এ দেশের এক একজন আদর্শ, দড়্গ ও সুযোগ্য নাগরিকে পরিণত হবে। তারাই অসাধারণ দড়্গতার পরিচয় দিয়ে দেশকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাবে। শিশুদের চাহিদা এবং তাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। পূর্বে উলেস্নখিত টিকা প্রদানের মাধ্যমে শিশুদেরকে সাতটি মারাত্মক রোগের হাত থেকে রড়্গা করা সম্ভব। তাই শিশুদেরকে যথাসময়ে প্রচলিত সাতটি রোগের টিকা প্রদান করতে হবে এবং অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রয়োজনীয় সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।



শিশুর বিশুদ্ধ খাবার ও পানি
ডাজ্ঝ প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম
অনেক সময় বিভিন্ন রোগজীবাণু খাবারের মাধ্যমে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে। এতে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই যখনই শিশুকে খাবার খেতে দেবেন, খেয়াল রাখতে হবে, তা মানসম্মত কি না। খাবার বাসি ও নষ্ট নয়, শিশুর জন্য তা ভালো খাবার-এসব নিশ্চিত হয়েই শিশুকে খাওয়ানো উচিত।
শিশুকে দেওয়া খাবার নিরাপদ রাখার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন-
নিশ্চিত হতে হবে শিশুর খাবার বেশ ভালোভাবে রান্না করা হয়েছে কি না। বিশেষত মাংস ও পোলট্রিজাত খাবার।
রান্নার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তা খেতে দেওয়া, যেন অনেকক্ষণ ফেলে রাখার জন্য তা নষ্ট হওয়া বা জীবাণুদূষণ ঘটার সময় না পায়।
যে খাবার তৈরির পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত রেখে দিতে হচ্ছে, তা অবশ্যই গরম করে বা ফ্রিজে রেখে দিতে হবে।
রান্না করা যে উদ্বৃত্ত খাবার পরে শিশুকে খাওয়ানোর জন্য নেওয়া হয়, তা আবার খাওয়ানোর আগে গরম করে নিন।
যেকোনো কাঁচা মাংসেই জীবাণু থাকতে পারে। তাই কোনোভাবেই এসব যেন রান্না করা খাবারের সঙ্গে মেশানো না হয়। কাঁচা মাংস রাখার বাসনপত্রও ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিন।
যেসব স্থানে খাবার তৈরি হয়, সে স্থান সব সময় পরিষ্কার রাখুন।
শিশুর খাবার সব সময় ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন, যেন তা পোকামাকড়, ইঁদুর-বিড়াল বা অন্য কিছুর সংস্পর্শে না আসে।
পানির যথাযথ ব্যবহার জানলে শিশুরা পানিবাহিত রোগে কম অসুস্থ হয়।
ঘরে নিরাপদ পানির যথেষ্ট ব্যবস্থা থাকলে শিশুর অসুখ-বিসুখ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।
কুয়োর পানি ব্যবহার করলে কুয়ো ভালোভাবে ঢেকে রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
রান্না, খাওয়া, গোসল ও হাত ধোয়ার পানি কোনোভাবেই যেন মলমূত্র বা আবর্জনাদূষিত পানির সংস্পর্শে না আসে, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
পানি সংরক্ষণের পাত্র, যেমন বালতি, জার ইত্যাদি যতটুকু সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেমন-বালতি মাটিতে না রেখে তা দড়ি থেকে উপুড় করে ঝুলিয়ে রাখা ভালো।
খাওয়ার পানি সব সময় পোষা প্রাণীর সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে।
সংরক্ষিত পানি নিরাপদ রাখার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
পানি অবশ্যই পরিষ্কার ঢাকনা দেওয়া পাত্রে রাখতে হবে।
যেকোনো পাত্র থেকে পানি নেওয়ার সময় পরিষ্কার মগ ব্যবহার করতে হবে।
পানিভর্তি পাত্রে হাত ডুবিয়ে দেওয়া বা এ থেকে সরাসরি পানি পান করতে দেবেন না।


শিশুর যখন কানে ব্যথা
ডাজ্ঝ মোজ্ঝ মুজিবুর রহমান
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট
কেস স্টাডিঃ শিশুর বয়স ১৫ মাস। হঠাৎ একদিন রাতে চিৎকার শুরু করল। কিছুতেই কান্না থামানো যাচ্ছে না। মা-বাবা চেষ্টা করেও শান্ত করতে পারছেন না। অস্থির হয়ে কোলে নিয়ে পায়চারি, কোল-বদল-নাহ্‌, কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। সোনামণির কী হলো? জ্বর নেই, সুস্থ বাচ্চা। দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। মধ্যরাতে কী হলো বাবুর? এত রাতে ওষুধ কোথায় পাবেন? নিকটস্থ ক্লিনিকে নিয়ে গেলেন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ভালোমতো পরীক্ষা করে দেখলেন, কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। ভাবলেন কোথাও ব্যথা হচ্ছে হয়তো। ক্লিনিকে ভর্তি করালেন। ব্যথার ওষুধ, শান্ত করার জন্য ঘুমের ওষুধ দিলেন। পরদিন সকালে দেখা গেল, সোনামণি হাসছে, খেলছে, ব্যথা নেই। কিন্তু কান দুটো পরীক্ষা করতেই দেখা গেল, রক্ত ঝরছে একটা কান দিয়ে।
কানের ব্যথা শিশুদের একটা মারাত্মক সমস্যা। ঠিকমতো চিকিৎসা না করালে এ অবস্থা থেকে মস্তিষ্কের ইনফেকশনও হতে পারে। বিভিন্ন কারণে কানে ব্যথা হতে পারে; যেমন টনসিলের সংক্রমণ। টনসিলে ইনফেকশন হয়ে যখন ব্যথা হয়, তা স্মায়ুর মাধ্যমে কানে চলে যায় এবং কানে ব্যথা হয়।
ঠিকমতো চিকিৎসা না করালে কানে ইনফেকশন হয়ে মস্তিষ্কে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। আবার টনসিল অপারেশনের পর কিছুদিন কানে ব্যথা থাকতে পারে। শিশুদের কানে ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অ্যাকিউট অটাইটিম মিডিয়া।
কী করে বুঝবেন
কানে প্রচণ্ড ব্যথা, যা শিশুকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলবে।
উচ্চ তাপমাত্রা শিশুকে দুর্বল করে তুলবে।
ঠান্ডা কাশি হতে পারে। কয়েক দিন ধরে শ্বাসনালির প্রদাহে ভুগবে।
কানের পর্দার রং পরিবর্তন হবে, লাল ও ইনফেকটেড দেখা যাবে।
কানের পর্দা ফুলে যাবে।
পর্দা বা টেম্পেনিক মেমব্রেন ছিঁড়ে বা ফুটো হয়ে যায়।
হলুদ পুঁজ বা রক্ত পড়বে।
কান দিয়ে পুঁজ বা রক্ত পড়ার পর ব্যথা কমে যাবে। শিশুকে দেখলে বোঝা যাবে না যে সে অসুস্থ ছিল।
চিকিৎসাঃ কানের পানি পরীক্ষা করলে যেসব জীবাণু পাওয়া যায়-
হেমোলাইটি স্ট্রেপটো কক্কাস।
স্টাফাইলো কক্কাস পায়োজেনস।
নিউমোকক্কাস
হেমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জি।
অ্যান্টিবায়োটিকঃ পেনিসিলিন দিতে হবে। ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে। নাক বন্ধ থাকলে নাকের ড্রপ দিতে হবে। কান পরিষ্কার করতে হবে। ওষুধ খেতে না পারলে ইনজেকশন দিতে হবে। প্রয়োজনে অপারেশন করতে হতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। তাই অভিভাবকেরা শিশুর কানে এ ধরনের ব্যথা হলে দেরি না করে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।


নবজাতকের ডায়রিয়া
অধ্যাপক তাহমীনা বেগম
শিশু বিভাগ, বারডেম
নবজাতক, বয়স ১০ দিন। বারবার পাতলা পায়খানা করছে। সে শুধু মায়ের দুধ খাচ্ছে। মা-বাবা উদ্বিগ্ন, মায়ের দুধ খাওয়া সত্ত্বেও শিশুর কেন ডায়রিয়া? যে শিশু শুধু মায়ের দুধ খায় তাদের অনেকেরই এ রকম সমস্যা দেখা দেয়। মায়ের দুধই শিশুর সেরা খাবার, এটা আমরা সবাই জানি।
মায়ের দুধ শিশুকে অনেকভাবে ভালো রাখে। তবে তার পাশাপাশি মায়ের দুধে এমন কিছু আছে, যা খেলে শিশুর বারবার পাতলা পায়খানা হতে পারে। কখনো পানি বেশি থাকে, কখনো সবুজ বা ফেনা ফেনা পায়খানা হয়। এমনকি দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ বারও পায়খানা হতে পারে। শিশুর ডায়রিয়া হচ্ছে ভেবে অনেক মা-বাবাই নিজে নিজে মায়ের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন অথবা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের অনেক চিকিৎসকও এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেন। শিশুর পায়খানা পরীক্ষা করান এবং রিপোর্টে গ্লুকোজ যাচ্ছে কি না দেখেন। মায়ের দুধের গ্লুকোজ বা শর্করাজাতীয় খাদ্য শিশুর সহ্য হচ্ছে না-এ কথা বলে বুকের দুধ খাওয়ানোয় মাকে নিষেধ করেন বা নিরুৎসাহিত করেন এবং গুঁড়ো দুধ খাওয়ানোর জন্য লিখে দেন।
এ ক্ষেত্রে মাকে বলছি, এ নিয়ে আপনি উদ্বিগ্ন হবেন না। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে থাকুন, আস্তে আস্তে এ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।
তবে যদি পাতলা পায়খানার পাশাপাশি পানিশূন্যতা থাকে, শিশু নিস্তেজ বা দুর্বল হয়ে যায় বা জ্বর থাকে, তাহলে চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে নিয়ে যান। আবারও বলছি, মায়ের দুধই শিশুকে ভালো রাখবে। ভালো থাকুন আপনি, ভালো থাকুক আপনার শিশু-সব সময়।


শিশুর বিভিন্ন রকম কাশি
ডাজ্ঝ গোবিন্দ চন্দ্র দাস
সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান
অ্যালার্জি ও অ্যাজমা রোগ বিশেষজ্ঞ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা
শ্বাসতন্ত্র থেকে শ্লে্না, অস্বস্তিকর পদার্থ ও সংক্রামক জীবাণু বের করে দিয়ে কাশি আসলে শরীরের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। ফলে শ্বাসতন্ত্রে শ্লে্না ও অন্যান্য তরল জমতে পারে না। শ্বাসতন্ত্রের যত উপসর্গের জন্য আমরা চিকিৎসকের কাছে যাই, তার মধ্যে কাশি হচ্ছে প্রধান সমস্যা।
কাশি হওয়া মানেই যে আপনার সন্তান অসুস্থ, এ কথা সব সময় ঠিক নয়। স্বাভাবিক শিশুরা দিনে এক থেকে ৩৪ বার পর্যন্ত কাশতে পরে এবং এই কাশির পালা চলতে পারে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে রাতে ঘুমের মধ্যে কাশি হলে সেটা সব সময়ই অস্বাভাবিক মনে করতে হবে। তখন দরকার চিকিৎসকের পরামর্শ।
শিশু ও বড়দের কাশি এবং চিকিৎসার মধ্যে যেমন কিছু মিল আছে, তেমনই কিছু অমিলও রয়েছে। শিশুদের কাশি দুই রকম হতে পারে। একিউট কাশি (মেয়াদকাল এক থেকে দুই সপ্তাহ) এবং ক্রনিক কাশি (মেয়াদকাল চার সপ্তাহের বেশি)।
শিশুর একিউট কাশি
এ ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হচ্ছে শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস এই কাশির জন্য দায়ী হতে পারে। প্রাক-স্কুল বয়সের সুস্বাস্থ্যের অধিকারী শিশু বছরে ছয় থেকে আটবার ভাইরাসজনিত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে। এগুলো সচরাচর প্রত্যক্ষ বায়ুবাহিত ভাইরাসের সংক্রমণ।
ক্রনিক কাশি
ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী কাশি (চার সপ্তাহের অধিক সময়ব্যাপী) শিশুদের মধ্যে খুব বেশি পরিমাণে দেখা যায়। এ ধরনের কাশির কারণ হচ্ছে-
হাঁপানির উপসর্গ হিসেবে কাশি
অ্যাজমায় আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে কাশি হচ্ছে প্রধান উপসর্গ (থেকে থেকে বুকের মধ্যে শাঁ শাঁ শব্দ এবং ছোট ছোট শ্বাস)। কোনো কোনো শিশুর ক্ষেত্রে উপসর্গ হিসেবে শুধু কাশিকেই খেয়াল করতে হবে। অ্যাজমাজনিত কাশির প্রকোপ বেড়ে যায় ভাইরাস সংক্রমণের কারণে, বিশেষ করে রাতে। খেলাধুলা ও ঠান্ডা বাতাস কাশিকে আরও বাড়িয়ে দেয়। অ্যাজমাজনিত এ কাশির চিকিৎসায় শিশুদের ক্ষেত্রেও বড়দের মতোই ইনহেলার ও মুখে খাওয়ার ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
নাক ও সাইনাসের অসুখের কারণে কাশি
রাইনাইটিস (নাকের প্রদাহ) ও সাইনুসাইটিস (সাইনাসের প্রদাহ) শিশুদের পোস্টনাজাল ড্রিপের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। ফলে দীর্ঘস্থায়ী কাশি হতে পারে। নাক বন্ধ হয়ে যায় বা সর্দি ঝরা থাকলেও এ ক্ষেত্রে মূল উপসর্গ হিসেবে খুঁজে পাওয়া যায় কাশি।
এ রোগের আরেকটি কারণ হচ্ছে, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস (ই-ফিভার)। এটি মৌসুমি হতে পারে, হতে পারে সারা বছরও। এ ক্ষেত্রে অ্যালার্জি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। সাইনাসের সংক্রমণের কারণে যে কাশি হয়, তা সপ্তাহের পর সপ্তাহ, এমনকি এক মাসের বেশি সময় ধরেও চলতে পারে। সাইনাসের এক্স-রে বা সিটিস্ক্যানের প্রয়োজন হতে পারে রোগ নির্ণয়ের জন্য।
পাকস্থলী ও খাদ্যনালির রোগজনিত কাশি
কিছু শিশুর ক্ষেত্রে ক্রনিক কাশির কারণ হিসেবে পাকস্থলী ও খাদ্যনালির সংক্রমণকে খুঁজে পাওয়া যায়। গ্যাস্ট্রো-ইসোফেসিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিস হচ্ছে সবচেয়ে সাধারণ। এ অসুখের সঙ্গে বুকজ্বলা থাকে। তবে শিশুরা বুকজ্বলার কথা তেমন বলে না।
সম্ভবত তারা বুঝতে পারে না যে এটি একটি রোগের লক্ষণ। এমনও হতে পারে যে তারা এই কষ্টের অনুভূতিকে ঠিকমতো ব্যক্ত করতেও শেখেনি। তবে অনেক শিশুর ক্ষেত্রে এর সঙ্গে বুকজ্বলা থাকে না। কারও কারও গলার স্বর কর্কশ হয়ে যায়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি ট্রায়াল হিসেবে চিকিৎসক শিশুকে ওষুধও দিতে পারেন। মনে রাখা দরকার, খেতে বসে ঢেকুর তোলা বা খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়ার কারণে কাশির উদ্রেক হওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক নয়।
দীর্ঘস্থায়ী কাশির অন্যান্য কারণ
ভাইরাস সংক্রমণ-পরবর্তী কাশি, ভাইরাসের কারণে শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি হলে কয়েক সপ্তাহব্যাপী কাশি হতে পারে। শিশুর অ্যাজমা, অ্যালার্জি বা সাইনুসাইটিস না থাকলেও এমনটি ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। অনেক সময় এমনিতেই কাশি সেরে যায়। কফ সিরাপ ব্যবহার করলে অনেক সময় ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
নাকে কোনো কিছু প্রবেশ করা
প্লাস্টিকের খেলনার ক্ষুদ্র অংশ, বাদাম, হটডগ বা শক্ত চকোলেটের অংশ দুই থেকে চার বছরের শিশুদের নাকে-গলায় আটকে যাওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। অনেক সময় এক্স-রেতেও এসব জিনিস ধরা পড়ে না। এগুলো অপসারণ না করা পর্যন্ত শিশুর কাশি ভালো হয় না।
অভ্যাসজনিত কাশি
এ ধরনের দীর্ঘস্থায়ী কাশির কোনো সুনির্দিষ্ট শারীরিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। শিশু-কিশোর ও সদ্য তরুণদের মধ্যে এ ধরনের কাশি দেখা যায়।
শুরু হয় সচরাচর ভাইরাসের সংক্রমণ দিয়ে। কাশির ধরন শুকনো ও নির্দিষ্ট বিরতিতে কাশি হওয়া। আক্রান্ত শিশু থেকে তাদের অভিভাবক বা শিক্ষকেরাই কাশির ঠা ঠা শব্দ শুনে আতঙ্কিত হয়ে থাকেন। ঘুমের মধ্যে কখনোই কাশি থাকে না।
অস্বস্তিকর কফ
অনেক সময় আশপাশে কেউ ধূমপান করলে ধোঁয়ার কারণে কাশি হতে পারে। এ ছাড়া বায়ুদূষণ, গাড়ির ধোঁয়া, আগুন প্রভৃতি কারণেও কাশি হতে পারে। অ্যাজমা ও অ্যালার্জিতে আক্রান্ত শিশুদের এসব অস্বস্তিকর পরিবেশ থেকে দূরে রাখতে হবে।
চিকিৎসা
ভাইরাসজনিত কাশির ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে এমনিতেই এ কাশি সেরে যায়।
দীর্ঘস্থায়ী কাশির ক্ষেত্রে প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে কাশির কারণ। অ্যাজমা, রাইনাইটিস, সাইনুসাইটিস, অন্ত্রের সমস্যা-এগুলোর যেকোনোটি কাশির কারণ হতে পারে। গুয়াইফেনেসিন-জাতীয় কফ সিরাপ প্রয়োগে তেমন ফল পাওয়া যায় না।
বড় ডেক্সট্রোমেথরফেন-জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে এতেও খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। যেসব সিরাপের মধ্যে কোডেইন থাকে, সেগুলো বেশ কার্যকর। তবে এ-জাতীয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব বেশি। তাই বেশি দিন ধরে এ ওষুধ খাওয়ানো ঠিক নয়।
দীর্ঘস্থায়ী কাশির মূল কারণ খুঁজে বের করে তার চিকিৎসা করতে হবে।
যদি কাশির ধরন পরিবর্তিত হতে থাকে, ওষুধে কোনো ফল না হয়, যদি কাশির সঙ্গে রক্ত আসতে থাকে অথবা কাশির কারণে ঘুম ও কাজকর্মের ব্যাঘাত ঘটতে থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কখন অ্যাজমা বা অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে?
তিন-চার সপ্তাহ বা তার চেয়ে বেশি সময় কাশি থাকলে।
কাশির সঙ্গে যদি হাঁপানির টান থাকে।
দীর্ঘস্থায়ী কাশির সঙ্গে যদি নাক ও সাইনাসের রোগ থাকে।
দীর্ঘস্থায়ী কাশির সঙ্গে ধূমপান বা অন্য উত্তেজক পদার্থের উপস্থিতি থাকলে।


শিশুর কিডনি সমস্যা

ডা. ওয়ানাইজা

শিশুর কিডনিতে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। প্রস্রাবে সংক্রমণের প্রধান উপসর্গ প্রস্রাবে জ্বালা, জ্বর ও তলপেটে ব্যথা। কিছু শিশুর ক্ষেত্রে বমিও হতে পারে। এ ছাড়া প্রস্রাবের ধারা চিকন বা পাতলা ও প্রস্রাবের সময় ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া প্রস্রাবের সাথে রক্তও যেতে পারে।
শিশু ঘন ঘন প্রস্রাব করলে কিংবা বিছানা ভিজালে কিডনির অসুখ হয়েছে তা মনে করবেন না। অসুস্থ বা ক্লান্ত শিশু আচমকা বিছানা ভিজাতে পারে। পরিবারের অশান্তি ও টেনশনে এরকম হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকগুণ। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসুখের জন্য শিশু বিছানা ভিজায়।
শিশু যাতে বিছানা না ভিজায় তার জন্য করণীয়
­ ঘুমানোর দুই ঘণ্টা আগে থেকে পানীয় পান বৗঅ রাখুন।
­ শোয়ানোর আগে প্রস্রাব করাবেন।
­ রাতে ঘুমের মাঝে উঠিয়ে এক বা দু’বার প্রস্রাব করাবেন।
­ বিছানা না ভিজালে তার প্রশংসা করবেন।
­ কাউন্সেলিংয়ে বেশিরভাগ সময় সমস্যা মিটে যায়। কিছু ক্ষেত্রে বড় শিশুদের ওষুধ দিতে হয়।
একিউট গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস
শিশুর স্ক্যাবিস বা চুলকানি এবং টনসিলের প্রদাহের পরেই একিউট গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস হতে পারে। এ রোগ হলে কিডনি ভালোভাবে কাজ করতে পারে না ও শরীরে বিভিন্ন বর্জø জমা হতে থাকে। শিশুর প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়। হাত-পা, চোখ-মুখ ফুলে যায়। শিশুর রক্তচাপ বেড়ে যায়। সঠিক চিকিৎসায় শতকরা ৯০ ভাগ শিশু ভালো হয়ে ওঠে।
নেফ্রোটিক সিনড্রোম
এ রোগে প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন বেরিয়ে যায়। দেহে পানি জমে ও রক্তে চর্বির পরিমাণ বাড়ে। পানি জমে শিশুর ওজন বেড়ে যায় ও পেটে ব্যথা হয়। শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। নেফ্রোটিক সিনড্রোম রোগটি একবার হলে পুনরাক্রমণ হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন।
পাইলো নেফ্রাইটিস
প্রস্রাবের সংক্রমণে কিডনির ক্ষতি হলে প্রস্রাবে রক্ত দেখা দেয়। এর নাম পাইলো নেফ্রাইটিস। এতে জ্বর ও প্রস্রাব করতে ব্যথা ও কষ্ট হয়। শিশুর প্রস্রাবের পরিমাণ কম হতে পারে।
কিডনিতে পাথর
কোমরে, তলপেটে ব্যথা ও প্রস্রাব করার সময় কষ্ট হওয়া এর লক্ষণ। পেট ফুলেও যেতে পারে। প্রস্রাব পরীক্ষায় পরিবর্তন লক্ষ করা যেতে পারে।
ভাসকুলাইটিস
কিডনির যেসব অসুখে প্রস্রাবে রক্ত দেখা যায় তার একটি ভাসকুলাইটিস। এতে জ্বরে, গাঁটে ব্যথা, ত্বকে র‌্যাশ বা ঘা দেখা যায়।
হিমোলাইটিক ইউরেমিক সিনড্রোম
পাতলা পায়খানা দিয়ে শুরু হয়ে শিশুর রক্তস্বল্পতা দেখা যায়। শিশু দুর্বল ও ফ্যাকাশে হয়ে যায়। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে বা বৗঅ হয়ে যেয়ে কিডনি ফেলিইওর দেখা যায়।
অ্যালপোট সিনড্রোম ও পলিসিসটিক কিডনি
এ দু’টো বংশগত রোগ। এতে ক্রনিক রেনাল ফেইলিওর হতে পারে। অ্যালপোট সিনড্রোমে দেখার ও শোনার অসুবিধে হতে পারে।
পলিসিসটিক কিডনিতে প্রস্রাবের সংক্রমণ ও উচ্চরক্তচাপ হয়। পলিসিসটিক কিডনি বড় হয়ে বিশাল এক থোকা আঙুরের মতো হয় ও পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা থাকলে শরীরের অন্যান্য অংশেও রক্তক্ষণ হতে পারে।
শিশুর কিডনি রোগের সতর্কতা
শিশুর মুখ, শরীর হঠাৎ করে ফুলে যাচ্ছে কি না লক্ষ করুন।
চুলকানি ও টনসিলাইটিসের চিকিৎসা সঠিকভাবে করান।
শিশুর রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
শিশুকে যথেষ্ট পানি পান করান।
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
জ্বর ও প্রস্রাবের সময় কাঁদলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্রস্রাবের ধারা পাতলা কি না তা লক্ষ করুন। এ ছাড়া থেমে থেমে প্রস্রাব করলে চিকিৎসকের কাছে যাবেন।

চেম্বারঃ যুবক মেডিকেল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ পুরাতন ২৮, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা। ফোনঃ ৯১১৮৯০৭, ০১৯১১৫৬৬৮৪২। (শনি, রবি, বৃহস্পতি)

রোটা ভাইরাসে শিশুর ডায়রিয়া

ডাজ্ঝ মোজ্ঝ মিজানুর রহমান
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
শিশুরা বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ রোগে অনেক শিশুকে অকালেই মৃত্যুবরণ করতে হয়। রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া বিশ্বের একটি অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১১১ মিলিয়ন শিশু রোটা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিল। তাদের মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ছয় লাখ শিশুর মৃত্যু হয়।
এদের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে শিশুমৃত্যুর হার শতকরা ৮২ ভাগ। উন্নত দেশে মৃত্যুর হার অবশ্য অনেক কম। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় বিলম্ব এবং পুষ্টির অভাবই শিশুমৃত্যুর হার বেশি হওয়ার কারণ।
রোটা ভাইরাস কী
চারপাশে বিভিন্ন ধরনের রোগ-জীবাণু ও ভাইরাস বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এগুলো সংক্রমিত হলে রোগাক্রান্ত হয়ে থাকে।
রোটা ভাইরাস হচ্ছে রিওভাইরাইড পরিবারের একটি ভাইরাস। দেখতে চাকার মতো। ‘রোটা’ লাতিন শব্দ, অর্থ হচ্ছে ‘চাকা’।
পরিসংখ্যান
শতকরা ৯৫ ভাগ শিশুর তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে ডায়রিয়া হয় রোটাভাইরাসে। আক্রান্ত শিশুরা মারাত্মক পানিশূন্যতায় ভোগে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম এমন শিশু, যারা ডায়ারিয়ার আক্রান্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ ছিল রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত।
কীভাবে সংক্রমিত হয়
রোটা ভাইরাস মল ও মুখগহ্বর দিয়ে খাদ্যনালিতে প্রবেশ করে। এই ভাইরাস আমাদের চারপাশেই ছড়িয়ে আছে এবং একজনের কাছ থেকে অন্যজনের শরীরে প্রবেশ করে। সংক্রমিত পানি, খাবার, খেলনা ও আসবাবপত্রের মাধ্যমেও এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। রোটা ভাইরাসে সংক্রামিত হওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মানুষের শরীরে এর প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।
কী হয়
প্রথমে শুরু হয় বমি। এরপর আস্তে আস্তে পানির মতো পাতলা পায়খানা। খুব কম সময়ের মধ্যে ডায়রিয়া তীব্র আকার ধারণ করে এবং পানিশূন্যতা এত বেশি হয় যে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া না গেলে জীবননাশের আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে।
এ ছাড়া জ্বর ও পেটব্যথাও থাকতে পারে। নয় দিন পর্যন্ত থাকতে পারে বমি ও জ্বর। ডায়রিয়া থাকতে পারে ২১ দিন।
রোটা ভাইরাস বোঝার উপায়
সংক্রামিত মল পরীক্ষা করলে এ ভাইরাস দেখা যায়। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করলে এটি দেখা যায়। এর আকৃতি চাকার মতো।
চিকিৎসা
পানিশূন্যতা পূরণ করার জন্য ঘন ঘন খাওয়ার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। পানিশূন্যতা বেশি হলে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে স্যালাইন দিয়ে পানিশূন্যতা পূরণ করতে হবে। ইলেকট্রলাইট বা রক্তে খনিজ লবণ কমে গেলে তা পূরণ করতে হবে।
কোনো অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন নেই। রোটা ভাইরাসের জন্য কোনো অ্যান্টিভাইরাস ওষুধ নেই।
প্রতিষেধক
রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য দুভাবে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। প্রথমত, যেসব স্থানে রোটা ভাইরাস অবস্থান করে, সেগুলো পরিষ্কার করা।
যেমন ডায়েপার, খেলনা, মল; যেসব জায়গায় ডায়েপার বদলি করা হয় (বাসায় বা ডে-কেয়ার সেন্টারে), হাত পরিষ্কার করার স্থানে, এমনকি খাবার তৈরি করার স্থানেও এই ভাইরাস পাওয়া যায়।
এটি অনেক দিন বেঁচে থাকে। এসব স্থান ও খেলনা প্রতিদিন অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। অ্যান্টিসেপটিক সাবান দিয়ে হাত ও মলদ্বার পরিষ্কার করা দরকার।
দ্বিতীয়ত, টিকা দিয়ে রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া থেকে দূরে থাকা যায়। প্রতিষেধক হিসেবে রোটা ভাইরাসের টিকাও রয়েছে।
কখন রোটা ভাইরাসের টিকা দিতে হবে
শিশুর দেড় থেকে ছয় মাস বয়সের মধ্যে। এই টিকা মুখে খাওয়ানো হয়। প্রথম ডোজ দেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ এক মাস পর দিতে হয়। টিকা দিলে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হবে না। তাই শিশুকে রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া থেকে মুক্ত রাখতে সময়মতো টিকা দিতে ভুলবেন না।

শিশুর জ্বরের কারণ ও প্রতিকার

জ্বর কোনও রোগ নয়, বিভিন্ন রোগের উপসর্গ মাত্র। জ্বর হলে প্রথম কাজ হবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া। চিকিৎসক জ্বরের কারণ খুঁজে বের করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। কিছু ড়্গেত্রে বিভিন্ন লড়্গণ থেকে মূল কারণ জানা খুব কষ্টকর হয় না। আবার কোনও কোনও ড়্গেত্রে স্বল্প মেয়াদী জ্বর আপনা থেকেই সেরে যায়। তবে আপনা থেকেই সেরে যাবে না ভেবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। চিকিৎসক যে ব্যবস্থাপত্র ও উপেদশ দেন, তা আমাদের মেনে চলতে হবে। তাছাড়া রোগীর সেবা, যত্ন, পথ্য ইত্যাদি বিষয়েও অবহিত হতে হবে। অধিকাংশ মা-বাবার ধারণা শিশুর জ্বর হলে তাকে সাবধানে রাখতে হবে, তাই তাকে গরমের মধ্য তারা রাখেন। কিন্তু এর ফল মোটেই ভালো হয় না। অতিরিক্ত জামা-কাপড় শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্যতো করেই না; বরং এতে শরীরের তাপ আরও বেড়ে যায়। অতিরিক্ত জামা-কাপড়ের জন্য শিশু অস্বস্তিô রোধ করবে এবং ঘামতে শুরম্ন করবে। এই ঘাম থেকে শেষ পর্যন্তô শিশুর ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। তাই আবহাওয়া খুব ঠান্ডা না হলে ঘরের জানালা-দরজা বন্ধ রাখার প্রয়োজন নেই। বরং শিশু যাতে আরামে থাকতে পারে তারই ব্যবস্থা করা উচিত।

শিশুর জ্বর কমানোর জন্য জামা-কাপড় খুলে নিতে হবে। জ্বর কমাতে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করা অথবা ইলেকট্রিক ফ্যানের নিচে তাকে রাখা যেতে পারে। জ্বর বেশি হলে পানি দিয়ে সারা শরীর স্পঞ্জ করে দিতে হবে।

আবার কোনও কোনও মা-বাবা আছেন যারা শিশুর শরীর স্পঞ্জ না করে শুধু মাথায় পানি দিয়ে থাকেন। এতে জ্বর কমে কিন্তু অনেক সময় লাগে। তাই শরীর স্পঞ্জ করার পাশাপাশি মাথায় পানি দিলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তবে মাথায় পানি ঢালার পর শুকনো তোয়ালে বা গামছা দিয়ে ভাল করে মাথা মুছে দিতে হবে। তা না হলে চুল ভেজা থাকার কারণে শিশুর ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। অপরদিকে মাথায় পানি দেয়ার সময় লড়্গ্য রাখতে হবে যেন কানে পানি না যায়।

জ্বর কমানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ শিশুকে দেয়া যায়। প্রয়োজনে এ ওষুধ ৩ থেকে ৪ ঘন্টা অন্তôর দেয়া যেতে পারে। একবার ওষুধ খাওয়ানোর তিন থেকে ৪ ঘন্টা পরও যদি জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফাঃ-এর বেশি থাকে তাহলে পুনরায় ওষুধ খাওয়ানো যাবে। তবে ওষুধের মাত্রা অবশ্যই শিশুর বয়স এবং ওজন অনুযায়ী হতে হবে এবং দৈনিক ৪ থেকে ৫ বারের বেশি ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।

জ্বর হলে শিশুরা সাধারণত খেতে চায় না। এমনকি পানিও। তবে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে জ্বর হলে শরীরে পানির চাহিদা বাড়ে। তাই তাকে বার বার পানি খাওয়াতে হবে। এ সময়ে তাকে তার ছন্দমত খাবার দেয়া উচিত। তবে এমন খাবার দিতে হবে যাতে সহজে হজম হয়। সাধারণত তরল বা আধা তরল জাতীয় খাবার সহজেই হজম হয়।

জ্বর কমে যাওয়ার অল্প দিনের মধ্যেই তাদের খিদে ফিরে আসে এবং আগের মতোই আবার খেলাধুলায় মত্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু বেশিদিন ভুগলে শিশু একদিকে যেমন দুর্বল হয় তেমনি তার মেজাজটা খিটখিটে হয়ে যায়। ফলে বাবা-মায়ের কাছে তার বায়নার পরিমাণও বেড়ে যায়। এ সময়ে যতদূর সম্ভব তাকে খুশি রাখার চেষ্টা করতে হবে। সুস্থ হয়ে ওঠার পরও কোনও কোনও ড়্গেত্রে শিশুর খিটখিটে মেজাজ লড়্গ্য করা যায়। এড়্গেত্রে ধৈর্যø ধরে তাদের বদমেজাজকে উপেড়্গা করতে হবে। কোনও মতেই শিশুকে বুঝতে দেয়া উচিত নয় যে তার মেজাজে আপনাদের খারাপ লাগছে। তাহলে সে সেই সুযোগটা নিতে পারে। তাই এ সময়ে বাবা-মাকে স্বাভাবিক থাকতে হবে। শিশুকে খাবারের জন্য সাধাসাধি না করে লোভনীয় কিছু খাবার তাকে দিতে অথবা তার সামনে রাখতে হবে। অসুস্থতার দিনগুলোতে তাকে কিছু খেলনা বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে ভুলিয়ে রাখতে হবে যাতে করে সে নিজের অসুস্থতা সম্পর্কে বিশেষ কিছু ভাবনার অবকাশ না পায়। এ সময় তাকে যত বিছানায় রাখা যাবে ততই তার জন্য ভাল।

জ্বর ও খিঁচুনিঃ জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে তা ভালো করার সহজ উপায় হলো জ্বর কমানো। কারণ জ্বর কমে গেলে খিঁচুনি বন্ধ হয়ে যায়। তাই জ্বর কমানোর জন্য তাৎড়্গণিক ব্যবস্থা নেবেন এবং খিঁচুনি যাতে বেশিড়্গণ স্থায়ী না হতে পারে সেজন্য নিকটতম চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। জ্বর কমানোর জন্য তোয়ালে বা গামছা পানিতে ভিজিয়ে শিশুর দেহ, হাত-পা বার বার স্পঞ্জ করবেন। একই সঙ্গে জ্বরের প্যারাসিটামল ওষুধ খাওয়াতে হবে। খিঁচুনি চলাকালীন শিশুকে একদিকে কাৎ করে শুইয়ে দিতে হবে ৈযাতে মুখের লালা গাল দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় মাথার নিচে বালিশ দেবেন না এবং চিৎ করে শিশুকে শোয়াবেন না। কারণ, এতে মুখের লালা না বের হয়ে শ্বাস-নালিতে ঢুকে যেতে পারে। যার ফলে শিশুর শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

খিঁচুনির সময় দাঁতে দাঁত লেগে গেলে অনেকে শিশুর মুখে চামচ বা অন্য কোন শক্ত জিনিস দিয়ে দাঁত খোলার চেষ্টার করেন। তাতে শিশুর মুখে বা চোয়ালে আঘাত লাগতে পারে। তাই চামচ বা শক্ত কিছু দেবেন না, বরং প্রয়োজনবোধে কাপড় বা এ জাতীয় অন্য কিছু মুখে দেয়া যেতে পারে যাতে দাঁত লেগে জিহ্বা কেটে না যায়।

আবার কোনও কোনও শিশুর জ্বর ছাড়াও খিঁচুনি হয়। কারও কারও ড়্গেত্রে খিঁচুনির সঙ্গে ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। তবে খিঁচুনি যে কারণেই হোক না কেন, সময় নষ্ট না করে শিশুকে অবশ্যই নিকটতম চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

০ ডাজ্ঝ ওয়ানাইজা

চেম্বারঃ যুবক মেডিকেল সার্ভিসেস লিজ্ঝ

রোড নং-২৮, বাড়ি নং-১৬, ধানমন্ডি আ/এ, ঢাকা।

শিশুর ডায়াবেটিস
ডাজ্ঝ গৌতম দাশগুপ্ত
মেডিকেল অফিসার
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
শিশুদের মূলত দুই ধরনের ডায়াবেটিস হতে পারে। ‘টাইপ ওয়ান’ ও ‘টাইপ টু’। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে রোগী পুরোপুরি ইনসুলিনের ওপর নির্ভরশীল থাকে। কারণ এ ক্ষেত্রে তার প্যানক্রিয়াস গ্রন্থিতে কোনো ইনসুলিন থাকে না। অন্যদিকে টাইপ টু ডায়াবেটিসে ইনসুলিন ছাড়াও চিকিৎসা সম্ভব। কারণ এ ধরনের ডায়াবেটিসে শরীরে ইনসুলিন কিছু মাত্রায় থাকে; তবে তা ঠিকমতো রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
হঠাৎ কেন এই বৃদ্ধি
টাইপ টু ডায়াবেটিসে জিনের যেমন প্রভাব আছে, তেমনই স্থূলত্বও একটি বড় কারণ। বাচ্চাদের খাদ্যাভ্যাস বদলেছে। প্রধানত ফাস্টফুড খাওয়া ও খেলাধুলার অভাবে শিশুদের মোটা হওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। ফলে তাদের মধ্যে টাইপ টু ডায়াবেটিস বেড়ে যাচ্ছে।
কীভাবে বুঝবেন শিশুর ডায়াবেটিস হয়েছে
টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে শিশুর ওজন সাধারণত হঠাৎ করে কমতে থাকে। বারবার প্রস্রাব হয় এবং খুব বেশি পরিমাণে পানি পান করতে থাকে। এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে এসব বাচ্চা ‘ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস’ বলে একটি মারাত্মক সমস্যায় আক্রান্ত হয়। পেটে ব্যথা, ঘন ঘন বমি, ঝিমিয়ে পড়া এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অত্যন্ত বেশি হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তার চিকিৎসা শুরু হওয়া দরকার। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে এ অবস্থা থেকে মৃত্যুও হতে পারে।
অন্যদিকে টাইপ টু ডায়াবেটিসে বেশি পানি পান করার প্রবণতা থাকতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ ছাড়াই এ ধরনের ডায়াবেটিসে শিশু আক্রান্ত হতে পারে। স্থূলকায় বাচ্চাদেরই এ ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
কী করবেন
শিশুর ১০ বছরের বেশি বয়স এবং খুব বেশি মোটা হলে বা পরিবারে ডায়াবেটিস রোগী থাকলে, তাদের উচিত প্রতি দুই বছর অন্তর একবার খালি-পেটে রক্ত পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া বাচ্চার ডায়াবেটিস হলো কি না।
একটি শিশুর যখন ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, সব সময় চিকিৎসকের পক্ষে সহজেই বোঝা সম্ভব হয় না এই ডায়াবেটিস টাইপ ওয়ান, না টাইপ টু ধরনের। অথচ এটি নির্ণয় করা জরুরি। কারণ টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস হলে ইনসুলিনই একমাত্র ওষুধ। এ ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার ওষুধে কাজ তো হবেই না, বরং শিশুর ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস হতে পারে। অন্যদিকে টাইপ টু ডায়াবেটিসে পরিমিত খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম ও কিছু ক্ষেত্রে সেবন করার ওষুধ দিয়েও চিকিৎসা সম্ভব। যখন আপাতদৃষ্টিতে বোঝা যায় না এই ডায়াবেটিস কোন ধরনের, তখন কিছু রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এটি নির্ণয় করা সম্ভব। তবে এ ধরনের পরীক্ষা ব্যয়সাপেক্ষ। এটি আমাদের দেশে সব লোকের সামর্থেøর মধ্যেও নয়। সে ক্ষেত্রে ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা চালানোই ভালো। কারণ যদি টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস হয়ে থাকে, তাহলে এ ক্ষেত্রে সেটিই সঠিক চিকিৎসা। অন্যদিকে টাইপ টু ডায়াবেটিস হলে ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা চালালে কোনো অসুবিধা নেই।
কীভাবে মোকাবিলা করবেন
সাধারণভাবে শিশুদের ডায়াবেটিস মোকাবিলা করা বড়দের চেয়ে কঠিন। কারণ শিশুদের ক্ষেত্রে খাওয়া-দাওয়ার ধরাবাঁধা নিয়ম করা অনেক ক্ষেত্রেই খুব কঠিন। আসলে হঠাৎ করে একটি শিশুকে নিয়মের মধ্যে বেঁধে ফেলা খুব সহজ ব্যাপার নয়। এ ক্ষেত্রে মা-বাবা, চিকিৎসক, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব-সবারই একটা দায়িত্ব থেকে যায়। দেখা গেছে, বিশেষ করে যাদের বয়স সাত বছরের কম, তাদের পক্ষে এই হাইপোগ্লাইসিমিয়ার (রক্তে শর্করা কমে যাওয়া) হওয়া মস্তিষ্কের গঠনের ক্ষেত্রে খুব ক্ষতিকর। তাই শিশুর ডায়াবেটিস চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হওয়া দরকার রক্তে চিনির মাত্রার হেরফেরজনিত কোনো লক্ষণ না হওয়া এবং দৈহিক বিকাশ ঠিকঠাক হওয়া নিশ্চিত করা।
শিশুর রোটা ভাইরাস সংক্রমণ

উন্নত ও অনুন্নত বিশ্বে শিশুরা বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্তô হয়। ফলে এ কারণে অনেক শিশুকে অকারণেই মৃত্যুবরণ করতে হয়। অনেক কারণের মধ্যে রোটা ভাইরাস ডায়রিয়ার একটি প্রধান কারণ যা উন্নত ও অনুন্নত বিশ্বের একটি অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা।

রোটা ভাইরাস কি?

আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের রোগের জীবাণু এবং ভাইরাস বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যা সংক্রমিত বা ইনফেকটেড হলে আমরা এবং শিশুরা রোগাক্রান্তô হয়ে পড়ি। রোটা ভাইরাস হচ্ছে, রিওভাইরাইড পরিবারের একটি ভাইরাস। যা দেখতে চাকার মত। রোটা লেটিন শব্দ অর্থ হচ্ছে চাকা বা ঘদণণফ।

কিভাবে আক্রান্তô হয়ঃ

রোটা ভাইরাস মল ও মুখ গহ্বর দিয়ে খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে। এই ভাইরাস আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে এবং একজনের কাছ থেকে অন্যজনের দেহে প্রবেশ করে। সংক্রমিত পানি, খাবার এবং খেলনা বিভিন্ন আসবাবপত্র থেকেও আক্রান্তô হতে পারে। ইনফিউবেশন প্রিয়ড ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা অর্থাৎ রোটা ভাইরাস এ সংক্রমণ হওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরম্ন হয়।

কি হয়ঃ

প্রথমে শুরম্ন হবে বমি এরপর ধীরে ধীরে পানির মত পাতলা পায়খানা। খুব কম সময়ের মধ্যে ডায়রিয়া তীব্র আকার ধারণ করে এবং পানি শূন্যতা এত বেশি হয় যা জীবন-মরণ সমস্যা দেখা দেয়। পানিশূন্যতা এত বেশি হয় যা মৃত্যু পর্যন্তô ঘটতে পারে। যদি ঠিকমত বা সময়মত চিকিৎসা করা না হয়। এছাড়া জ্বর এবং পেটের ব্যথাও থাকতে পারে। বমি এবং জ্বর ৯দিন পর্যন্তô থাকতে পারে এবং ডায়রিয়া থাকবে ২১ দিন পর্যন্তô।

রোটা ভাইরাস বোঝার উপায়ঃ সংক্রমিত মল পরীড়্গা করলে এই ভাইরাস দেখা যায়। ইলেকট্রন মাইক্রোসকোষের সাহায্যে দেখা যাবে। এর আকৃতি চাকার মত। এছাড়া ইমিউনোএসেস করলেও পাওয়া যাবে।

চিকিৎসাঃ পানিশূন্যতা পূরণ করার জন্য ঘন ঘন খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। পানিশূন্যতা বেশি হলে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে ভর্তি করে স্যালাইন দিয়ে পানিশূন্যতা পূরণ করতে হবে। ইলেকট্রলাইট বা রক্তে খনিজ লবণ কমে গেলে তা পূরণ করতে হবে। কোন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই। রোটা ভাইরাসের জন্য কোন অ্যান্টিভাইরাস ওষুধ তৈরি হয় নাই।

প্রতিষেধকঃ

রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য দুইভাবে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। প্রথমত যে সমস্তô স্থানে বা পদার্থে রোটা ভাইরাস অবস্থান করে সেগুলো পরিষ্কার করা যেমন ৈডায়েপার, খেলনা, মল (পায়খানা), যে সমস্তô জায়গায় ডায়েপার বদলি করা হয় বাসায় বা ডে-কেয়ার সেন্টার, হাত পরিষ্কার করার স্থানে এমনকি খাবার তৈরি করার স্থানেও এই ভাইরাস পাওয়া যায় এবং অনেক দিন পর্যন্তô বেঁচে থাকে। এ সমস্তô স্থান ও খেলনাগুলো প্রতিদিন এন্টিসেপ্টিক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। এন্টিসেপ্টিক সাবান দ্বারা হাত এবং মলদ্বার পরিষ্কার করা উচিত।

দ্বিতীয়তঃ টিকা দ্বারা রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া থেকে দূরে থাকা যায়। বর্তমানে প্রতিষেধক হিসাবে রোটা ভাইরাস-এর টিকা আবিষ্কার হয়েছে।

কখন দিবেনঃ

রোটা ভাইরাসের টিকা দিতে হবে ১ত(১,২) মাস থেকে ৬ মাসের মধ্যে। এই টিকা মুখে খাওয়ানো হয়। প্রথম ডোজ দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ ১ মাস পর দিতে হয়। এই টিকা দিলে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হবে না। শিশু ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যু থেকে রড়্গা পাবে এবং পেটে ড়্গুদ্রাতন্ত্রের অবস্ট্রাকশন অর্ভল্র্রল্রডণর্যধমভ থেকে মুক্ত থাকবে। যা শিশুদের জীবন হুমকির মুখে পতিত হয়। সুতরাং সোনামণিদের জীবন রড়্গার্থে তাদের পরিচর্যা করি। রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে সময়মত টিকা দিয়ে আপনার আমার আদরের সন্তôানকে ডায়রিয়া থেকে রড়্গা করি। অকালে যেন হারাতে না হয় সোনামণিকে।

০ ডাঃ মোঃ মুজিবুর রহমান মামুন,

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও কনসালটেন্ট

নিবেদিতা শিশু হাসপাতাল লিঃ

ওয়ারী, ঢাকা।

শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি
আমি আমরার ডাক্তারী জীবনে যে শব্দ দুইটি মা-বাবার কাছ থেকে বেশি শুনেছি তাহলোডৈাক্তার সাহেব, আমার বাচ্চাটি খেতে চায় না আর আমার বাচ্চাটির স্বাস্থ্য দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু মা-বাবা আমাকে প্রায়শই প্রশ্ন করেনডৈাক্তার সাহেব আমার বাচ্চাটির ওজন কি ঠিক আছে? মা-বাবারা মনে করেন একই সাথে জন্ম তারপরও পাশের বাড়ির বাচ্চাটিকে বড় দেখায় কেন? তাহলে কি আমার সন্তôানের যত্নে কোন ত্রম্নটি হচ্ছে কিনা! আর এইরূপ হাজার প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে প্রতিনিয়ত মা-বাবারা সুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে দৌড়াচ্ছেন ডাক্তারের চেম্বারে। এটা সন্তôানকে নিয়ে মা-বাবার উদ্বিগ্নতা ছাড়া আর কিছুই না।

সন্তôানকে নিয়ে উদ্বিগ্ন এমন মা-বাবাকে আমি বলবো, আপনারা কি নিচের বিষয়গুলো খেয়াল করেছেন?

শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ও কর্মদড়্গতা কি কি বিষয়ের উপর নির্ভর করে?

(১) জীনগত বিষয়ঃ লম্বা মা-বাবার সন্তôান দ্রম্নত লম্বা হয়, এটা জীনগত কারণেই হয়।

(২) পুষ্টিগত কারণঃ পুষ্টির অভাবে যেমনি শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, তেমনি অতিরিক্ত পুষ্টি শিশুকে মেদবহুল করে।

(৩) আর্থ-সামাজিক কারণঃ দারিদ্র্য আর্থ-সামাজিক অবস্থা শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ও কর্মদড়্গতা দুটোই ব্যাহত করে।

(৪) পারিপার্শ্বিকতাঃ উন্নত সামাজিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিকতা শিশুদের কর্মদড়্গতা ও দৈনিক বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে।

(৫) অসুস্থতাঃ দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থতায় ভুগলে সেই শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ দুটোই বিলম্বিত হয়।

(৬) মানসিক আঘাতঃ পরিবেশ, সমাজ ও পরিবার থেকে যে কোনভাবে মানসিক আঘাত পেলে বা চাপে থাকলে সেই শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাঘাত ঘটে।

(৭) অন্তôর্জগতঃ মায়ের পেটে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হলে, জন্মের পর সেই শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি খুব ধীরগতিতে হয়।

কিভাবে বুঝবেন আপনার শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক হচ্ছে কিনা? নিচের বিষয়গুলো একটু খেয়াল করম্নন তো


(ক) উচ্চতাঃ কোন বয়সে বাচ্চার উচ্চতা কতটুকু হবে?

জন্মের সময়৫ৈ০ সেজ্ঝমিজ্ঝ

১ বছর বয়সে৭ৈ৫ সেজ্ঝমিজ্ঝ

২ বছর বয়সে৮ৈ৩ সেজ্ঝমিজ্ঝ

৩ বছর বা তদোধিক বয়সেপ্রৈতি বছর ৫ সেজ্ঝমিজ্ঝ করে বাড়বে।

(খ) ওজনঃ

জন্মের সময় স্বাভাবিক ওজন২ৈজ্ঝ৫-৪ কেজি

৬ মাস পরxৈদ্বগুণ হবে

১ বছর পর৩ৈ গুণ হবে

২ বছর বয়সে ওজন হবে জন্মের ৪ গুণ

(গ) বাহুর মধ্যঅংশের বেড়ঃ পাঁচ বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের পুষ্টির অভাব আছে কিনা, তা পরিমাপ করা হয় বাচ্চার বাহুর মধ্যঅংশের বেড় দেখে।

যৈদি বাহুর মধ্যঅংশের বেড় ১৩জ্ঝ৫ সেজ্ঝমিজ্ঝ এর উপরে হয় তবে বুঝতে হবে শিশুটির দেহে পুষ্টির অভাব নেই।

বৈাহুর মধ্যঅংশের বেড় ১২জ্ঝ৫ সেজ্ঝমিজ্ঝ হইতে ১৩জ্ঝ৫ সেজ্ঝমিজ্ঝ এর মাঝে হলে বুঝতে হবে শিশুটি কিছুটা অপুষ্টিতে ভুগছে।

বৈাহুর মধ্যঅংশের বেড় ১২জ্ঝ৫ সেজ্ঝমিজ্ঝ এর নিচে হলে বুঝতে হবে শিশুটি মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।

শিশুর মানসিক বিকাশ ও কর্মদড়্গতা

শুধুমাত্র শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির দিকে খেয়াল রাখলেই চলবে না। খেয়াল রাখতে হবে শিশুটির কর্মদড়্গতা ও মানসিক বিকাশ স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে কিনা। শিশুর কর্মদড়্গতা ও মানসিক বৃদ্ধির মাপকাঠিগুলো লড়্গ্য করম্ননঃ

(ক) স্নায়ুবিক বৃদ্ধিঃ ৩ মাস বয়সে শিশু ঘাড় সোজা করতে, ৬ মাস বয়সে বসতে আর ১ বৎসর বয়সে হাঁটতে পারে।

(খ) দৃষ্টিশক্তির বিকাশঃ ৩ মাস বয়স হলে শিশু উজ্জ্বল কিছু দেখলে তার দিকে খেয়াল করে, ৬ মাস বয়সে ছোট বস্তুও দেখতে পারে। ৬ মাস বয়সে শিশুর হাতের তালুতে কোন কিছু ধরলে তা চেপে ধরে আর ১০ মাস বয়সে শিশু ভালভাবে কোন কিছু ধরতে পারে।

(গ) শ্রম্নতিশক্তির বিকাশঃ শিশুর বয়স যখন ৬ মাস হয় তখন তার কাছে কোন শব্দ করলে মাথা ঘুরায় আর ৯ মাস বয়সে কোথায় শব্দ হচ্ছে সেটা বুঝতে পারে।

(ঘ) কথা বলার ড়্গমতাঃ শিশুর বয়স ৬ মাস হলে ব্যা-ব্যা, চ্যা-চ্যা, ম্যা-ম্যা ইত্যাদি কিছু অর্থহীন শব্দ করে আর বয়স এক বৎসর পূর্ণ হলে প্রথম অর্থপূর্ণ শব্দ যেমন মা, বাবা, দাদু ইত্যাদি বলতে শেখে।

উপরের সবগুলো বিষয় মিলিয়ে দেখুন তাহলে নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার শিশুর বৃদ্ধি স্বাভাবিক হচ্ছে কিনা। তবে মনে রাখতে হবে দৈহিক ও মানসিক বিকাশের এই মাপকাঠি স্থির নয়। তাই বাবা-মাকে বলছি আপনার সন্তôানকে নিয়ে ভাবুন, চিন্তôা করম্নন, কিন্তু দুঃচিন্তôা কখনোই করবেন না।

ডায়রিয়া প্রতিরোধেশিশুকে টিকা দিন
ডা· প্রণব কুমার চৌধুরীশিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

রোটা ভাইরাস ডায়রিয়াইনফ্যান্ট ও অল্পবয়সী শিশুর মারাত্মক ডায়রিয়ার প্রধান কারণ রোটা ভাইরাস জীবাণু। জীবনের প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে বলতে গেলে প্রতিটি শিশুই এ জীবাণু সংক্রমণের শিকার হয়। রোটা ভাইরাসজনিত আন্ত্রিক রোগে আক্রান্ত হয়ে এক বছরের কমবয়সী উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু মৃত্যুবরণ করে। বলা বাহুল্য, এ মৃত্যুর প্রায় ৮২ শতাংশ হয় উন্নয়নশীল দেশে, বিশেষত এই উপমহাদেশে।রোগের প্রকাশঃ রোটা ভাইরাস জীবাণু শিশুর শরীরে প্রবেশের সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগের উপসর্গ সৃষ্টি করে। মৃদু বা মাঝারি মাত্রার জ্বর, বমি-তার পরই শুরু হয়ে যায় বারবার তরল পায়খানা। বমি, জ্বর সাধারণভাবে দ্বিতীয় দিনে বন্ধ হয়ে যায়, তবে ডায়রিয়া পাঁচ-সাত দিন ধরে চলতে থাকে। মলে রক্ত থাকে না। শিশু পানিস্বল্পতায় ভোগে, বিশেষত ইনফ্যান্ট শিশু মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। আইসোটনিক ডিহাইড্রেশন ও এসিডোসিস জটিলতা হয়ে দাঁড়ায়। এর প্রধান চিকিৎসা হলো পানিস্বল্পতা রোধ করা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করা। প্রতিরোধ* শিশুকে বুকের দুধ পান করান।* যথাযথভাবে হাত ধোয়া, বিশেষত শিশুর খাবার তৈরি ও পরিবেশনায় পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করে চলুন।* হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভর্তি করা শিশুর পরিচর্যায় এমন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, যাতে পাশে থাকা অন্য শিশুতে তা ছড়িয়ে না পড়তে পারে।ভ্যাকসিন বা টিকাঃ রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া প্রতিরোধে খাওয়ার ভ্যাকসিন (রোটারিক্স) এখন পাওয়া যাচ্ছে। কিছুটা দামি হলেও এ টিকা বেশ কার্যকর ও নিরাপদ।শিশুর ১০ সপ্তাহ বয়স থেকে এ টিকা খাওয়ানো যায়। চার সপ্তাহ বিরতিতে পরপর দুই ডোজ। তবে ২৪ সপ্তাহ (ছয় মাস) বয়সের আগে এ টিকা খাওয়াতে হবে। শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে শিশুর অন্যান্য স্বাভাবিক টিকাদানের রুটিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রোটা ভাইরাস জীবাণু প্রতিরোধক এই ভ্যাকসিন শিশু ডায়রিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।কলেরাকলেরা সাধারণভাবে দুই থেকে ১৫ বছরের শিশুর তীব্র ডায়রিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। শিশু ডি· কলেরিই ব্যাকটেরিয়া জীবাণু সংক্রমিত হওয়ার ছয় ঘণ্টা থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ডায়রিয়া বমি উপসর্গে পরিণত হয়। এ ডায়রিয়ার অন্য নাম ‘রাইস ওয়াটার’ ডায়রিয়া। অল্পক্ষণের মধ্যে শিশু পানিস্বল্পতার শিকার হয়। প্রচণ্ড পিপাসার্ত, দ্রুত হৃদস্পন্দন, দ্রুত শ্বাসহার, অস্থিরতা, মাথার চাঁদি বসে যাওয়া, ঢিলে ত্বক এবং মারাত্মক পানিস্বল্পতায় পড়ে শিশু কোলাপস, কিডনি বিকল, খিঁচুনি, অচৈতন্য অবস্থা, পেরালাইটিক আইলিয়াস প্রভৃতি জীবন মারাত্মক জটিলতায় পড়তে পারে।চিকিৎসাকলেরা-আক্রান্ত শিশুর প্রধান চিকিৎসা হলো পানিস্বল্পতা প্রতিরোধে বারবার শিশুকে খাওয়ার স্যালাইন খেতে দেওয়া। প্রয়োজনে শিরায় স্যালাইন দেওয়ার সাহায্যে পানিস্বল্পতার সমস্যা থেকে রক্ষা করা।প্রতিরোধ* কলেরা প্রতিরোধে মূল ভূমিকা পালন করে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো। ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধপান ও যত দিন সম্ভব তা চালিয়ে যাওয়া।* শিশুর জন্য নিরাপদ খাবার, পানীয় ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশন পদ্ধতির ব্যবহার।ভ্যাকসিন বা টিকাশিশু ডায়রিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ডি· কলেরিই ও এনটেরোটক্সিজেনিক ই· কোলাই-ব্যাকটেরিয়া দুটোর প্রতিষেধক টিকা (ডুকোরেল) এখন বাংলাদেশে পাওয়া যায়। দাম অবশ্য কিছুটা বেশি। তবু ডায়রিয়াজনিত ঝুঁকির তুলনায় শিশুকে প্রতিরোধক টিকা দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া ভালো নয় কি? শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো দুই থেকে ছয় বছরের শিশুকে তিন মাত্রার প্রাথমিক ডোজ ও ছয় বছরের বেশি বয়সী শিশুকে দুই মাত্রার প্রাথমিক ডোজ টিকা দেওয়া হয়। সুবিধা হলো, এটা মুখে খাওয়ানোর টিকা। তাই প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে শিশুকে অবশ্যই ডায়রিয়া-প্রতিরোধক টিকা দিন।