পেটের যত অসুখ
অধ্যাপক মবিন খান
১৪ কোটি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ লোক গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন। যারা শহরে বাস করেন তাদেরও সিংহভাগ ভাসমান অবস্থায় চিলেকোঠায় কিংবা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকেন। শরীরের বিভিন্ন রোগ ব্যাধি লেগেই থাকে।
এইসব রোগ ব্যাধির মধ্যে বেশিারভাগ লোক যে রোগটিতে ভুলে থাকেন তা হলো পেটের পীড়া। আপনি ধনী হন কিংবা গরীব হন, কখনও পেটের পীড়া হয়নি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বাংলাদেশে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে পেটের পীড়ার প্রাদুর্ভাব বেশি পরিলড়্গিত হয়।
পেটের পীড়া বলতে সাধারণভাবে আমরা বুঝি আমাশয়, ডায়ারিয়া, পেটের ব্যথা কিংবা হজমের অসুবিধা।
পেটের পীড়া সমূহকে প্রধানতঃ দুভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথমতঃ খাদ্যনালী (পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, ড়্গুদ্রান্ত্র কিংবা বৃহদান্ত্রের রোগ)।
দ্বিতীয়তঃ লিভারের প্রদাহ।
খাদ্যনালী (পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, ড়্গুদ্রান্ত্র কিংবা বৃহদান্তô)-এর কারণ জনিত পেটের পীড়াকে দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
১। স্বল্প মেয়াদী পেটের পীড়া
২। দীর্ঘ মেয়াদী পেটের পীড়া
স্বল্প মেয়াদী পেটের পীড়ার কারণসমূহঃ
১। আমাশয় ২। রক্ত আমাশয় ৩। ডায়রিয়া
১। আমাশয়ঃ অ্যামিবিক ডিসেন্ট্রি স্বল্প মেয়াদী পেটের পীড়ার অন্যতম কারণ যা ঊজ্ঝ ঐরংঃড়ষুঃরপধ নামক জীবাণু দ্বারা সংক্রমিক হয়। এটি মূলতঃ পানিবাহিত রোগ। যারা যেখানে সেখানে খোলা বা বাসী খাবার খেয়ে থাকেন অথবা দূষিত পানি পান করেন তাদের এ রোগ হয়। শহর অঞ্চলে রাস্তôার ধারের খোলা খাবার খেলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে যারা যত্র তত্র মলমূত্র ত্যাগ করেন, কিংবা নদী ও পুকুরের পানি পান করেন তাদের এ রোগে আক্রান্তô হওয়াই স্বাভাবিক।
এ রোগের উপসর্গ হঠাৎ করে দেখা দেয়। যেমন, ঘন ঘন পেটে মোচড় দিয়ে পায়খানা হওয়া, পায়খানার সাতে রক্ত বা আম মিশ্রিত থাকতে পারে, পায়খানায় বসলে উঠতে ইচ্ছে হয় না বা উঠতে পারে না। ড়্গেত্র বিশেষ দিনে ২০/৩০ বার পর্যন্তô পায়খানা হতে পারে।
রক্ত আমাশয়ঃ রক্ত আমাশর প্রধান কারণ হলো এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যার নাম শিগেলা। এই শিগেলা নামক ব্যাকটেরিয়াও দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। রক্ত আমাশয়ের লড়্গণ হলোÌৈপটে তীব্র মোচড় দিয়ে ব্যথা হওয়া, অল্প অল্প করে বার বার পায়খানা, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া এবং মলদ্বারে তীব্র ব্যথা হওয়া।
ডায়রিয়াঃ ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ হল খাদ্যে নানা ধরনের পানিবাহিত ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ।
Ìৈছাট শিশুদের ডায়রিয়া সাধারণ রোটাভাইরাস নামকম ভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকে।
অৈার বড়দের ড়্গেত্রে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া দিয়ে যে ডায়রিয়া মহামারী আকারে দেখা যায় তার অন্যতম কারণ হলো কলেরা। আমাদের দেশে শীতকালে কলেরার প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।
পাতলা পায়খানা হলে যদি চাল ধোয়া পানির মতো হয় তবে সেটা কলেরার লড়্গণ। এর সাথে তলপেটে ব্যথা হওয়া, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, ঘন ঘন পায়খানায় যাওয়া এবং শরীর আস্তেô আস্তেô নিস্তেôজ হয়ে যাওয়া এ রোগের মারাত্মক উপসর্গ। এই সময়ে তাৎড়্গণিক ব্যবস্থা নেয়া অতি জরম্নরী। তাছাড়া পেটের পীড়ার অন্যান্য কারণ সমূহের মধ্যে রয়েছে পিত্তথলির প্রদাহ, পাকস্থলীর প্রদাহ, অগ্নাশয়ের প্রদান এবং অন্ত্রের প্রদাহ।
দৈীর্ঘমেয়াদী পেটের পীড়ার মধ্যে রয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়। এই দীর্ঘস্থায়ী আমাশয় মূলতঃ তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ
১। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম
২। খাদ্য হজম না হওয়া জনিত পেটের পীড়া
৩। বৃহদান্ত্রের প্রদানজনিত পেটের পীড়া
এই অসুখগুলো মূলতঃ ড়্গুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রের রোগ।
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (ওইঝ)ঃ অল্প বয়স্ক বা উঠতি বয়স্ক যারা বিশ্ববিদ্যালয় পড় য়া ছাত্র-ছাত্রী, কিংবা যারা নবীন চাকুরীজীবী তাদের মধ্যে ওইঝ রোগটি বেশি দেখা যায়। এই রোগের লড়্গণ হলো পেটে মোচড় দিয়ে ঘন ঘন পায়খানা হওয়া, যা সকালে নাস্তôার আগে ও পরে লড়্গণীয়। ওইঝ হলে অনেকের পায়খানা নরম বা অনেকের পায়খানা কঠিন হয়।
কঠিন বা নরম যাই হোক না কেন রোগীর পায়খানার সাথে বাতাস যায় এবং পেটে অস্বস্তিô ভাব কাজ করে। অনেকে বলেন, দুধ, পোলাও কোরমা, বিরিয়ানী খেলে এটি বেশি হয়। পেটের পীড়ার অন্যতম কারণ এই ওইঝ যাদের হয় তাদের স্বাস্থ্যহানী হওয়ার সম্ভাবনা কম।
খাদ্য হজম না হওয়া জনিত পেটের পীড়াঃ পেটের পীড়ার আরও একটি কারণ হল গধষধনংড়ৎঢ়ঃরড়হ ঝুহফৎড়সব। ড়্গুদ্রান্ত্র এবং অগ্নাশয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রদাহ থাকলে এ রোগটি হয়ে থাকে। প্রচুর পরিমাণে দুর্গন্ধযুক্ত, সাদা পায়খানা বের হওয়া, পায়খানার সাথে হজম না হওয়া খাদ্য কনার মিশ্রন এবং নির্গত মল পানির উপরে ভাসতে থাকা এ রোগের অন্যতম উপসর্গ। এর সাথে পেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা হওয়া, পেট ফুলে পাওয়া কিংবা ধীরে ধীরে শরীরের ওজন কমে যাওয়া এ রোগের লড়্গণ।
বৃহদান্ত্রের প্রদাহ জনিত পেটের পীড়াঃ এটি একটি মারাত্মক ব্যাধি। অবশ্য আমাদের দেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব কম, উন্নত বিশ্বে এই রোগ বেশি হয়। এ রোগের লড়্গণ হলো আম ও রক্তমিশ্রিত পায়খানা হওয়া, জ্বর কিংবা জ্বর জ্বর ভাব হওয়া এবং শরীর আস্তেô আস্তেô ভেঙ্গে যাওয়া।
সব বয়সের মানুষের এ রোগ হয়। ঈড়ষড়হড়ংপড়ঢ়ু নামক পরীড়্গার মাধ্যমে এ রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় এবং বিশেষ চিকিৎসা পেলে এ রোগ ভাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এছাড়া পিত্তথলির পাথর, পিত্তনালীর প্রদাহ, অগ্নাশয়ের প্রদাহ এবং পাকস্থলির ও ড়্গুদ্রান্ত্রের প্রদাহের কারণে পেটের পীড়া হতে পারে। এবার সে সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা যাকঃ
পিত্তথলির পাথর ও পিত্তনালীর প্রদাহ জনিত পেটের পীড়াঃ পিত্তথলির পাথর ও পিত্তনালির প্রদাহের ফলে যাদের পেটের পীড়া হয়, তাদের তীব্র পেট ব্যথা হতে পারে। কয়েকদিন পর পর ব্যথা উঠে এবং কয়েকদিন পর্যন্তô তা থাকে। ব্যথার সাথে বমি ও জ্বর হতে পারে। ব্যথাটা পেটের ডানপাশে উপরিভাগে অনুভূত হয়। ব্যথা তীব্র হলে রোগী কষ্টে কাতরাতে থাকেন।
অগ্নাশয়ের প্রদাহ জনিত পেটের পীড়াঃ ুপেটের পীড়ার আরও একটি কারণ হল অগ্নাশয়ের প্রদাহ বা চধহপৎবধঃরঃরং অগ্নাশয় একটি লম্বা অঙ্গ বা ঙৎমধহ যা পেটের ভিতরে পেছনে অবস্থিত। এই অগ্নাশয়ের কাজের উপর নির্ভর করে হজমের ড়্গমতা এবং রক্তে গস্নুকোজের পরিমাণ ঠিক রাখা। স্বল্পমেয়াদী অগ্নাশয়ের প্রদাহ হলে তাকে অপঁঃব চধহপৎবধঃরঃরং বলে, যার অন্যতম কারণঃ
১। ভূরিভোজ করা।
২। পিত্তনালী বা পিত্তথলিতে পাথর এবং
৩। অ্যালকোহল পানে আসক্তি
বেশিরভাগ ড়্গেত্রে মৃদু বা সহনীয় ব্যথা ভাল হয়ে যায়। তবে অনেক ড়্গেত্রে চিকিৎসায় বিলম্ব কিংবা অবহেলা করলে জটিল আকার ধারণ করতে পারে এমনকি প্রাণহানিও ঘটতে পারে।
পাকস্থলি ও ড়্গুদ্রান্ত্রের প্রদাহঃ উপরের পেটে দীর্ঘদিন বার বার ব্যথা হওয়া, চবঢ়ঃরপ টষপবৎ রোগের লড়্গণ যা পাকস্থলি (ঝঃড়সধপয বা ড়্গুদ্রান্ত্রের ( উঁড়ফবহঁস) এর প্রদাহের কারণে হয়। এই প্রদাহ দুরারোগ্য ব্যাধি। যাদের হয়, বার বার হয়। রোগীও সারে না, রোগও ছাড়ে না।
এই রোগকে পেটের পীড়ার অন্যতম কারণ হিসাবে বলা যায়। কেননা আমাদের দেশে ১২% লোক চবঢ়ঃরপ টষপবৎ -এ ভুগছেন। এছাড়া যারা অনিয়মিত খান, অতিরিক্ত ধূমপান করেন তাদের এ রোগ বেশি হয়।
লড়্গণের মধ্যে রয়েছে, খালি পেটে ব্যথা, শেষরাতে ব্যথা এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা। এ রোগ সেরেও সেরে উঠে না। এবারের শেষটায় এসে যে কথা বলতে চাইখৈাবারের প্রতি অনীহা, অরম্নচি, অস্বস্তিô, ওজন কমে যাওয়া ৈএসব কিছুরই অন্যতম কারণ দীর্ঘমেয়াদী লিভারের প্রদাহ। এ দীর্ঘমেয়াদী লিভারের প্রদাহ এমন আকার ধারণ করে যা কিনা দীর্ঘস্থায়ী জটিল লিভার সিরোসিসে রূপ নিতে পারে।
পেটের পীড়ার চিকিৎসাঃ স্বৈল্পমেয়াদী পেটের পীড়ায় আক্রান্তô রোগীর শরীর খুব তাড়াতাড়ি পানি শূন্য হয়ে যায়। তাই এ অবস্থা প্রতিরোধের জন্য রোগীরকে প্রচুর পরিমাণে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে এবং প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর খাবার স্যালাইন খাওয়ানো বাঞ্ছনীয়।
Ìৈরাগীর শরীরে জ্বর থাকলে এবং পেটে ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে রোগীকে প্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক প্রদান করতে হবে।
xৈশশুদের ড়্গেত্রে যেহেতু ভাইরাসজনিত কারণে পেটের পীড়া বেশি হয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোগীকে কোনো প্রকার ওষুধ না খাওয়ানোই শ্রেয়। তবে শিশুর শরীর যাতে পানি শূন্য না হয়, সেজন্য প্রতিবার পাতলা পায়খানা হলে শিশুকে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি শিশুকে তার সকল প্রকার খাদ্য প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। যদি শিশু মায়ের দুধ পান করে থাকে, তবে কোনো অবস্থাতেই তা বন্ধ করা যাবে না।
দৈীর্ঘমেয়াদী পেটের পীড়া যেহেতু পিত্তথলির পাথর, পিত্তনালীর প্রদাহ, অগ্নাশয়ের প্রদাহ, পাকস্থলির ও ড়্গুদ্রান্ত্রের প্রদাহ, বৃহদান্ত্রের প্রদাহ এবং দীর্ঘমেয়াদী লিভারের প্রদাহের কারণে হয় তাই এ সমস্তô ড়্গেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়াই শ্রেয়। অনেকে কবিরাজি, গাছ-গাছড়া বা ঝাড় ফুকের মাধ্যমে এ জাতীয় পেটের পীড়া থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে রোগীর ভেগান্তিôই কেবল বাড়ে এবং রোগও জটিল রূপ ধারণ করে।
পেটের পীড়া প্রতিরোধে করণীয়ঃ
১। পেটের পীড়ায় আক্রান্তô হলে ভীত না হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
২। খাদ্র গ্রহণের পূর্বে এবং মলত্যাগের পর নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। যে সমস্তô অভিভাবক শিশুকে খওয়ান, তারা শিশুকে খাবার প্রদানের পূর্বে এবং শিশুর মলত্যাগের পর একই নিয়মে হাত পরিষ্কার করবেন।
৩। পরিষ্কার পানিতে আহারের বাসনপত্র, গৃহস্থালী ও রান্নার জিনিস এবং কাপড়-চোপড় ধোয়া সম্পন্ন করতে হবে এবং প্রয়োজনে সাবান ব্যবহার করতে হবে।
৪। পায়খানার জন্যে সর্বদা স্যানেটারী ল্যাট্রিন ব্যবহার করতে হবে। ৫। রান্নাঘর ও বাথরম্নমের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে হবে।
৬। যারা গ্রামে বসবাস করেন, তাদের যেখানে সেখানে বা পুকুর নদীর ধারে মলত্যাগের অভ্যাস পরিহার করতে হবে।
৭। খালি পায়ে বাথরম্নমে বা মলত্যাগ করতে না গিয়ে সর্বদা স্যান্ডেল বা জুতা ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৮। খাবারের জন্য ফুটানো পানি ব্যবহার করতে হবে এবং পানি ফুটানোর ব্যবস্থা না থাকলে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করতে হবে।
৯। আহারের জন্য তৈরিকৃত খাদ্য সামগ্রী এবং পান করার জন্য নির্ধারিত পানি সর্বদা ঢেকে রাখতে হবে।
১০। পুরোনো, বাসী বা দুর্গন্ধযুক্ত খাবার কখনোই খাওয়া যাবে না।
মনে রাখবেন, পেটের পীড়া প্রতিরোধে সচেতনতাই সবচেয়ে বড় পন্থা। আপনি আপনার খাদ্যাভাস, পানি পান, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সর্বোপরি ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেতন হলে পেটের পীড়া থেকে মুক্ত হতে পারবেন।
লেখকঃ চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
কোষ্ঠ্যকাঠিন্যঃ
অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক
বৃহদন্ত ও পায়ুপথ সাজারি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বারঃ জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫ সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা। মোবাইলঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬
হেদায়েত সাহেবের বয়স চল্লিশের মতো, ভালো চাকরি করেন। হঠাৎ করে বেশ কিছু দিন যাবৎ তার শক্ত পায়খানা হচ্ছে, পায়খানায় দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরও মনে হচ্ছে পায়খানা ঠিক ক্লিয়ার হচ্ছে না, তাকে খুবই বিষণ্ন মনে হচ্ছে। দিন দিন কেমন যেন শুকিয়ে যাচ্ছেন, পায়খানার সাথে রক্ত যায় কি না তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন খেয়াল করিনি স্যার। তারপর তাকে পরীক্ষা করলাম, প্রোক্টোস্কোপি ও সিগময়ডোস্কোপি টেস্ট করলাম, তারপর দেখতে পেলাম তার কোলনে অর্থাৎ অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার।
হেদায়েত সাহেব যে উপসর্গগুলো নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন তা মূলত কোষ্ঠকাঠিন্যের। কিন্তু এ কোষ্ঠকাঠিন্য কী, কেন হয়? তা আমরা কিভাবে প্রতিরোধ করতে পারি এবং সময়মতো এর চিকিৎসা না করলে কী কী পরিণতি হতে পারে সে বিষয়েই এখন আমরা আলোচনা করব।
কেউ যদি প্রতি সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানায় যায়, পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার পরও, তখনই একে বলব কোষ্ঠকাঠিন্য।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণঃ আঁশজাতীয় খাবার এবং শাকসবজি ও ফলমূল কম খেলে
জ্ঝ পানি কম খেলে
জ্ঝ দুশ্চিন্তা করলে
জ্ঝ কায়িক পরিশ্রম, হাঁটা-চলা কিংবা ব্যায়াম একেবারেই না করলে
জ্ঝ অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার হলে
জ্ঝ ডায়াবেটিস হলে
জ্ঝ মস্তিষ্কে টিউমার হলে এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে
জ্ঝ অনেক দিন বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে বিছানায় শুয়ে থাকলে
জ্ঝ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন, যেমন
ক. ব্যথার ওষুধ
খ. উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ
গ. গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ
ঘ. খিঁচুনির ওষুধ এবং
ঙ. যেসব ওষুধের মধ্যে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম জাতীয় খনিজ পদার্থ থাকে। তাছাড়া স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোনের বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার জন্যও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এর মধ্যে কাঁপুনিজনিত অসুখ, স্নায়ু রজ্জু আঘাতপ্রাপ্ত হলে, কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা ও থাইরয়েডের সমস্যা উল্লেখযোগ্য।
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণঃ
জ্ঝ শক্ত পায়খানা হওয়া
জ্ঝ পায়খানা করতে অধিক সময় লাগা
জ্ঝ পায়খানা করতে অধিক চাপের দরকার হওয়া
জ্ঝ অধিক সময় ধরে পায়খানা করার পরও পূর্ণতা না আসা
জ্ঝ মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথা অনুভব করা এবং
জ্ঝ আঙুল কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে পায়খানা বের করা
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়
জ্ঝ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে
জ্ঝ বেশি করে পানি খেতে হবে
জ্ঝ দুশ্চিন্তা দূর করতে হবে
জ্ঝ যারা সারাদিন বসে বসে কাজ করেন তাদের নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং
জ্ঝ যেসব রোগের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তার চিকিৎসা করতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসা না করা হলে যে সমস্যা হতে পারেঃ পায়খানা ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে
জ্ঝ পাইলস
জ্ঝ এনাল ফিশার
জ্ঝ রেকটাল প্রোলাপস বা মলদ্বার বাইরে বের হয়ে যেতে পারে
জ্ঝ মানসিকভাবে রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে
জ্ঝ প্রস্রাব বন্ধ হতে পারে
জ্ঝ প্যাঁচ লেগে পেট ফুলে যেতে পারে
জ্ঝ খাদ্যনালীতে আলসার বা ছিদ্র হয়ে যেতে পারে এবং
জ্ঝ কোষ্ঠকাঠিন্য যদি কোলন ক্যান্সার এবং মস্তিষ্কে টিউমারের জন্য হয় এবং সময়মতো চিকিৎসা করা না হয় তবে অকাল মৃত্যুও হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অনেকে প্রতিনিয়ত পায়খানা নরম করার বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, সিরাপ এবং মলদ্বারের ভেতরে দেয়ার ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, যা মোটেও উচিত নয়। প্রতিনিয়ত পায়খানা নরম করার ওষুধ ব্যবহার করলে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় ফলে মলদ্বারে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা আর থাকে না। তাই বয়স্ক এবং যারা পরিশ্রমের কাজ করেন না, তাদের মধ্যে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাদের উচিত কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ নির্ণয় করে সে হিসেবে চিকিৎসা নেয়া। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য ইসুবগুলের ভুসি পানিতে ভিজিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেললে এবং গরু, খাসি ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার যেগুলো মল শক্ত করে তা থেকে দূরে থাকলে অনেকে উপকৃত হতে পারেন।
পিত্তপাথর
ডাজ্ঝ এস এম আবু জাফর
সহযোগী অধ্যাপক, বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট
পিত্তথলিতে পাথর খুব সহজেই আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়। উন্নত বিশ্বে ১০০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ২০ জনেরই পিত্তপাথর হয়। সবার আবার পাথর হলেই ব্যথা-বেদনা হয় না। ৮০ শতাংশ পাথরের রোগীর কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। এরা চুপচাপ থাকে; এদের লক্ষণবিহীন নীরব পাথর বলা হয়।
পিত্তথলির অবস্থান ও এর কাজ কী?
পিত্তথলি ওপর-পেটের ডান দিকে লিভারের নিচে থাকে। পিত্তথলি লিভার থেকে তৈরি পিত্ত জমা রাখে এবং চর্বিজাতীয় খাবার খেলে চর্বি হজমের জন্য ক্ষুদ্রান্ত্রে পাঠিয়ে দেয়।
পিত্তথলি না থাকলে চর্বি কীভাবে হজম হবে?
পিত্তথলি শুধু পিত্তরসকে কিছু সময়ের জন্য ধরে রাখে। পিত্তথলি পিত্তরস তৈরি করে না। পিত্তরস তৈরি হয় লিভারে। পিত্তথলি না থাকলে মানুষের কোনো অসুবিধা হয় না। কারণ এ ক্ষেত্রে লিভার থেকে পিত্তরস সরাসরি পিত্তনালির মাধ্যমে ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে।
পিত্তথলিতে কীভাবে পাথর হয়?
জ্ঝ পিত্ত একটি তরল পদার্থ, যার মধ্যে কিছু কঠিন পদার্থ থাকে। তরলের পরিমাণ কমে গেলে অথবা কঠিন পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে পাথর হয়।
জ্ঝ অন্য কোনো অসুখ থাকলে পিত্তে পাথর হতে পারে। যেমন-সিকল সেল অ্যানিমিয়া এবং অপারেশনের মাধ্যমে ক্ষুদ্রান্ত্রের কিছু অংশ কেটে ফেলা হলে। কোনো কারণে পিত্তথলি যদি তার সংকোচন এবং প্রসারণের ক্ষমতা হারায়, তাহলে পাথর হতে পারে।
জ্ঝ পিত্তথলিতে কাদের পাথর বেশি হতে পারে?
জ্ঝ যারা বেশি চর্বিজাতীয় খাবার খায়।
জ্ঝ ডায়াবেটিসের রোগী।
জ্ঝ লিভারের অসুখের রোগী।
জ্ঝ বারবার গর্ভবতী হলে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
কী লক্ষণ হবে পাথর হলে?
জ্ঝ শতাংশ রোগীর কোনো লক্ষণ থাকে না।
জ্ঝ চর্বিজাতীয় খাবার খেলে খারাপ লাগা।
জ্ঝ পেটে ব্যথা।
জ্ঝ জন্ডিস (অন্য অনেক কারণেও জন্ডিস হয়)।
পাথর থাকলে কী অসুবিধা হতে পারে?
জ্ঝ পাথর সারা জীবনে কোনো কষ্ট না দিতে পারে।
জ্ঝ পিত্তথলির প্রদাহ হয়ে পেটে ব্যথা হতে পারে।
জ্ঝ পিত্তনালিতে সরে গিয়ে জন্ডিস বা প্যানক্রিয়াটাইটিস হতে পারে।
জ্ঝ বহুদিন থাকার ফলে পিত্তথলির ক্যান্সার হতে পারে।
কীভাবে চিকিৎসা করাবেন?
জ্ঝ ওষুধ দিয়ে গলিয়ে ফেলাঃ এখন পর্যন্ত কোনো ভালো ওষুধ বের হয়নি।
জ্ঝ পাথর ভেঙে ফেলাঃ এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা এখনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কারণ পাথর ভেঙে ফেললেও কিছু থেকে যায় এবং আবার পাথর হতে পারে।
অপারেশনঃ
প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে এর চিকিৎসা সব থেকে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। কারণ এ পদ্ধতিতে পুরো পিত্তথলি পাথরসহ অপসারণ করা সম্ভব। রোগী এক থেকে দুই দিনের মধ্যে পুরা সুস্থ হয়ে ওঠে। পিত্তথলির পাথরের জন্য পেটে ব্যথা হলে এক থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে সার্জনের সঙ্গে দেখা করা উচিত। কারণ এ সময় ল্যাপারোস্কপির সাহায্যে এর চিকিৎসা করা সম্ভব।
জ্ঝ পিত্তনালির পাথর সাধারণত পিত্তথলি থেকে আসে এবং পাথর পিত্তনালিতে এলে এগুলো খুব বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে, যেমন কাঁপিয়ে জ্বর আসা। জন্ডিস ও প্যানক্রিয়াটাইটিস পিত্তনালির পাথরও অপারেশন ছাড়া এর মাধ্যমে অপসারণ করা সম্ভব।
জ্ঝ পিত্তপাথর না হওয়ার জন্য কী সাবধানতা অবলম্বন করবেন?
জ্ঝ উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের ওজন সঠিক রাখতে হবে। ওজন বেশি হলে পিত্তপাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
জ্ঝ খাবারের তালিকায় কোলেস্টেরল-জাতীয় খাবার যেমন-মগজ, চিংড়ি মাছ, চর্বি, ঘিজাতীয় খাবার না রাখাই ভালো। তবে এসব খাবার খেতে সম্পূর্ণ নিষেধ নেই, মাঝেমধ্যে খাওয়া যাবে।
জ্ঝ সারা দিনে যে খাবার খাবেন তাকে ভাগ করে চার থেকে ছয়বারে সেটা খাওয়া, বেশিবার খেতে বলার মানে বেশি খাওয়া নয়। কিন্তু বেশিবার খেলে পিত্তথলি বেশিবার সংকুচিত এবং প্রসারিত হবে। ফলে হয়তো পাথর হওয়ার প্রবণতা কমতে পারে।
জ্ঝ আঁশযুক্ত খাবার খাবেন, যেমন- শাকসবজি ও ফল। এসব খাবার খেলে পাথর হওয়ার প্রবণতা কম থাকে।
ল্যাপারোস্কপি ও ওপেন অপারেশনের মধ্যে পার্থক্য
ল্যাপারোস্কপির অর্থ হচ্ছে পেটের মধ্যে ক্যামেরা দিয়ে দেখা। ল্যাপারোস্কপি ও ওপেন অপারেশনের উদ্দেশ্য একই অর্থাৎ দুই অপারেশনেই সম্পূর্ণ পিত্তথলি পাথরসহ অপসারণ করা হয়। ল্যাপারোস্কপিতে ছোট ছোট ছিদ্র করে লম্বা সরু যন্ত্র দিয়ে কাজ করা হয়। ফলে অপারেশনের পর ব্যথা-বেদনা কম হয়। ওপেন অপারেশনে পেটকে বড় করে কাটা হয়। এতে অপারেশনের পর ব্যথা-বেদনা বেশি হয়, পেটে বড় দাগ থাকে। ল্যাপারোস্কপির পর পাথর থেকে যায়, এ কথা ঠিক নয়। কারণ এখানে পুরো পিত্তথলিকে বের করা হয়, যেমনটি ওপেন অপারেশনে করা হয়। পাথর থাকলে সেটা পিত্তনালিতে থেকে যেতে পারে, যেটা কিনা ওপেন অপারেশনের ক্ষেত্রেও হতে পারে। পিত্তনালির পাথরের চিকিৎসা ভিন্নভাবে করা হয়। ইআরসিপি-এর মাধ্যমে পিত্তনালির পাথর বের করা সম্ভব। ইআরসিপি-তে সম্ভব না হলে অপারেশন করতে হয়। অবশ্য বেশির ভাগ পিত্তনালির পাথর এখন ইআরসিপি-এর মাধ্যমেই অপসারণ করা যাচ্ছে।
রোগীর জন্য কিছু বিশেষ পরামর্শ
পেটে ব্যথা হলে এবং পিত্তথলির পাথর নির্ণয় হলে এক থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে চিকিৎসা করিয়ে নেবেন, দেরি হলে চিকিৎসাজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি হয়। পিত্তথলির অপারেশন শুধু অভিজ্ঞ সার্জন দিয়ে করাবেন, অনভিজ্ঞ সার্জন দিয়ে অপারেশন করালে অপারেশনজনিত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে।
অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করলে পিত্তপাথর গলে না। তাই কোনো ধরনের ওষুধ খেয়ে সময় নষ্ট না করাই ভালো। সবাই সুস্থ থাকুন।
পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগ
অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক
পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগের গ্যাস্টিক বা আলসার নামটির সাথে পরিচিত নন এমন লোক খুঁজে বের করা হয়তো খুব কঠিন হবে। সাধারণত লোকজন গ্যাস্টিক বা আলসার বলতে যা বুঝে থাকেন আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলি পেপটিক আলসার।
পেপটিক আলসার যে শুধু পাকস্থলীতেই হয়ে থাকে তা কিন্তু নয়; এটি পৌষ্টিকতন্ত্রের যেকোনো অংশেই হতে পারে। সাধারণত পৌষ্টিকতন্ত্রের যে যে অংশে পেপটিক আলসার দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে
১। অন্ননালীর নিচের প্রান্ত;
২। পাকস্থলী;
৩। ডিওডেনামের বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ এবং
৪। পৌষ্টিকতন্ত্রের অপারেশনের পর যে অংশে জোড়া লাগানো হয় সে অংশে।
পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশ তথা আমাদের এ উপমহাদেশে এ রোগীর সংখ্যা খুবই বেশি। ধনীদের চেয়ে গরিব লোকদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। তবে নারী-পুরুষ প্রায় সমানভাবে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
যেসব কারণে পেপটিক আলসার হতে পারে
বংশগতঃ কারো নিকটতম আত্মীয়স্বজন, যেমন মা, বাবা, চাচা, মামা, খালা, ফুফু যদি এ রোগে ভুগে থাকেন তবে তাদের পেপটিক আলসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের রক্তের গ্রুপ ‘ও’ তাদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি।
রোগ-জীবাণুঃ হেলিকো বেক্টারে পাইলোরি নামক একপ্রকার অনুজীব এ রোগের জন্য বহুলাংশে দায়ী।
ওষুধঃ যেসব ওষুধ সেবনে পেপটিক আলসার হতে পারে তার মধ্যে ব্যথানাশক ওষুধ বা ঘ ঝধরফং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ধূমপানঃ ধূমপায়ীদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি।
এ ছাড়াও কারো পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে যদি বেশি পরমাণে অ্যাসিড ও প্রোটিন পরিপাককারী একধরনের এনজাইম বা পেপসিন নামে পরিচিত তা নিঃসৃত হতে থাকে এবং জন্মগতভাবেই পৌষ্টিকতন্ত্রের গঠনতন্ত্রের গঠনগত কাঠামো দুর্বল থাকে তাহলেও পেপটিক আলসার হতে পারে।
তবে সাধারণত যে কথাটা প্রচলিত ভাজা-পোড়া কিংবা ঝালজাতীয় খাবার খেলে পেপটিক আলসার হয় এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ চিকিৎসা বিজ্ঞানে মেলেনি। তবে যারা নিয়মিত আহার গ্রহণ করেন না কিংবা দীর্ঘ সময় উপোস থাকেন, তাদের মধ্যে পেপটিক আলসার দেখা দিতে পারে।
উপসর্গগুলো
পেটব্যথাঃ সাধারণত পেটের উপরিভাগের মাঝখানে বক্ষ পিঞ্জরের ঠিক নিচে পেপটিক আলসারের ব্যথা অনুভব হয়। তবে কখনো কখনো ব্যথাটা পেছনের দিকেও যেতে পারে।
ক্ষুধার্ত থাকলে ব্যথাঃ এ জাতীয় রোগী ক্ষুধার্ত হলেই প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে এবং খাবার খেলে সাথে সাথে ব্যথা কমে যায়।
রাতে ব্যথাঃ অনেক সময় রাতের বেলা পেটে ব্যথার কারণে রোগী ঘুম থেকে জেগে ওঠে। কিছু খেলে ব্যথা কমে যায় এবং রোগী আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
মাঝে মধ্যে ব্যথাঃ পেপটিক আলসারের ব্যথা সাধারণত সবসময় থাকে না। একাধারে ব্যথাটা কয়েক সপ্তাহ চলতে থাকে। তারপর রোগী সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যায়, এ অবস্থা কয়েক মাস থাকে তারপর আবার কয়েক সপ্তাহ ধরে ঠিক আগের মতো ব্যথা অনুভব হয় ।
ব্যথা কমেঃ পেপটিক আলসার ব্যথা সাধারণ দুধ, অ্যান্টাসিড, খাবার খেলে কিংবা বমি করলে অথবা ঢেঁকুর তুললে ব্যথা কমে।
এ ছাড়াও পেপটিক আলসারের মধ্যে বুক জ্বালা, অরুচি, বমি বমি ভাব, ক্ষুধামন্দা, কিংবা হঠাৎ রক্ত বমি অথবা পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হতে পারে।
চিকিৎসা
শৃঙ্খলাঃ পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই ধূমপান বন্ধ করতে হবে। ব্যথানাশক ওষুধ অর্থাৎ এসপ্রিন জাতীয় ওষুধ সেবন থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে এবং নিয়মিত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
ওষুধঃ পেপটিক আলসারের রোগীরা সাধারণত অ্যান্টাসিড, রেনিটিডিন, ফেমোটিডিন, ওমি প্রাজল, লেনসো প্রাজল, পেনটো প্রাজল জাতীয় ওষুধ সেবনে উপকৃত হন ।
কারণভিত্তিক চিকিৎসাঃ জীবাণুজনিত কারণে যদি এ রোগ হয়ে থাকে তবে বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়, যা ট্রিপল থেকে থেরাপি নামে পরিচিত।
অপারেশনঃ পেপটিক আলসারের ক্ষেত্রে অপারেশন সাধারণত জরুরি নয়। তবে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবনের পরও যদি রোগী ভালো না হন, তবে কিছু খেলে যদি বমি হয়ে যায় অর্থাৎ পৌষ্টিক নালীর কোনো অংশ যদি সরু হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে অপারেশন করিয়ে রোগী উপকৃত হতে পারেন।
সময়মতো পেপটিক আলসারের চিকিৎসা না করলে রোগীর নিুলিখিত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। যেমন
১। পাকস্থলী ফুটা হয়ে যেতে পারে;
২। রক্ত বমি হতে পারে;
৩। কালো পায়খানা হতে পারে;
৪। রক্তশূন্যতা হতে পারে;
৫। ক্যান্সার হতে পারে (কদাচিৎ) এবং
৬। পৌষ্টিক নালীর পথ সরু হয়ে যেতে পারে এবং রোগীর বারবার বমি হতে পারে।
কাজেই যারা দীর্ঘমেয়াদি পেপটিক আলসারে ভুগছেন তাদের উচিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। পেপটিক আলসার-জনিত জটিলতা আগে থেকেই শনাক্ত করা এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়া। প্রয়োজনে অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা ধরে না রেখে সুস্থ-সুন্দর-স্বাভাবিক জীবনযাপন করা।
লেখকঃ বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বারঃ জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫, সাতমসজিদ রোড, (জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড) ধানমন্ডি, ঢাকা
ফোনঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬
ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি
পেট না কেটে অপারেশন
ডা. হামিদা বেগম
চিকিৎসা বিজ্ঞানী অ্যান্ডোস্কোপি সার্জারি বা মিনিম্যাল এক্সেস সার্জারি (এমএএস) যাকে ল্যাপারোস্কপি বলা হয় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। জার্মানির শ্যাম ও লিন্ডারম্যান, ফ্রান্সের ব্রুহাটও হ্যাময়, ইংল্যান্ডের স্যাটন এবং যুক্তরাষ্ট্রের রিচও গোল্ডরথে ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সালে অ্যান্ডোস্কোপি সার্জারিতে এক বৈপ্নবিক পরিবর্তন আনেন। শল্য চিকিৎসায় প্রথম পিত্ত থলি অপারেশন (ল্যাপকলি) হয় ১৯৮৫ সালে। ১৯৮৭ সাল থেকে এটি জনপ্রিয় হতে শুরু করে। আর বর্তমান সময়ে ল্যাপারোস্কপি শল্য চিকিৎসার এমন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েছে যে এটিকে চিকিৎসকের স্টেথোস্কোপ বা গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড
বলা হয়ে থাকে।
পদ্ধতিঃ নাভির নিচে ১ বা ১.৫ সেমি কেটে যন্ত্র ঢুকিয়ে পেটের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড প্রবেশ করিয়ে ন্যামোপেরিটানয়ম তৈরি করা হয়। এর ফলে পরিপাকতন্ত্র নিচে সরে যায়। এর ফলে অতি সহজে দেখে দেখে রোগ সনাক্ত করা যায়। এটি টিভি মনিটরিংয়ে ১০ থেকে ৪০ গুণ বড় করে দেখানোর ফলে রোগ সনাক্তে আরো সহজ হয়। প্রয়োজনে আরো ২-৩ টি ছোট ছিদ্র করেও যন্ত্র ঢুকিয়ে কাজ করা হয়। স্ত্রী রোগ চিকিৎসার জন্য নিচে ভ্যাজাইনা দিয়ে টেনেকুলাম দিয়ে উপরে-নিচে বা সামনে -পেছনে এনে (সহকারী) সার্জনকে উপর থেকে কাজ করতে সাহায্য করেন। ১৯৮৯ সালে হ্যারি রিচ প্রথমে ফাইব্রো অপটিকস অ্যান্ডোস্কোপ বা ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে জরায়ু অপারেশন (ল্যাপারোস্কপি অ্যাস্টিটেড ভ্যাজাইনাল হিস্টেরেক্টমি বা এলএভিএইচ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনেন যা এত দিন শুধু পেট কেটেই করা হতো। এখন পিত্তথলি, স্ত্রীরোগ চিকিৎসা ছাড়াও মুত্র থলি বিষয়ক এপিন্ডিসেক্টমি, শিশু জন্মগত পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা, হার্নিয়া অপারেশন, এপিআর (অ্যাবডোমিনু পেরিনেটাল রিসেকশান), মস্তিষ্কে টিউমার, থাইরয়েড গ্রন্থি টিউমার ইত্যাদি রোগে এ চিকিৎসা অভূতপূর্ব সাফল্য এনেছে।
যন্ত্রপাতি
ভেরেস নিডিলঃ পেটে ছোট ছিদ্র করে গ্যাস প্রবেশ করানোর জন্য উন্নত ধরনের ল্যান্স সিস্টেম বা টেলিস্কোপ, লাইট সোর্সঃ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন লাইট (জেনন বা হ্যালোজেন); মাইক্রোচিপ ভিডিও ক্যামেরা; অপারেশন কক্ষে ভিডিও মনিটরিং ও থ্রি ডাইমেনশনাল ইমেজ সিস্টেম। সর্বোপরি ইনসাফ্লেটর (যার মধ্যে বাতাস ভর্তি থাকে)।
স্ত্রী রোগ বিষয়ে চিকিৎসার জন্য অ্যান্ডোস্কোপিকে দুভাগে ভাগ করা যায়। ১) ল্যাপারোস্কপিতে রোগ সনাক্তকরণ ও চিকিৎসা দুইই সম্ভব। হিস্টেরোস্কোপিঃ এর মাধ্যমে জরায়ুর ভেতরে প্যানোরোমিক ভিউ বা পুরোটা সব দিক থেকে দেখা ও প্রয়োজন মতো অপারেশন সম্ভব। এ ক্ষেত্রে রোগীকে পুরোপুরি অজ্ঞান করারও প্রয়োজন নেই। শক্ত নল জরায়ুর ভেতরে ঢুকিয়ে নরমাল স্যালাইন দিয়ে প্রসারিত করে দেখা হয়।
এর ব্যবহার
মাসিক বন্ধ হবার আগে অথবা পরেও অনিয়মিত ঋতুস্রাব যা ওষুধে নিয়ন্ত্রণ আসেনি এমন; জরায়ুতে পলিপ, ছোট টিউমার অপসারণ; বারবার অন্যান্য কারণ ছাড়া গর্ভপাত হওয়া যেমন জরায়ুর গঠনগত সমস্যা, পর্দা থাকা; জরায়ুতে ফরেন বডি বা আইইউসিডি শক্ত হয়ে বসে থাকা; জরায়ু মুখ, জরায়ু ভেতর বা কোনায় লেগে থাকা; মাসিকের মাঝামাঝি সময়ে রক্ত যাওয়া বা সহবাসের পর রক্ত যায় জরায়ু মুখ স্বাভাবিক থাকার পরও।
ল্যাপারোস্কপির ব্যবহারঃ
সানক্তকরণ (ডায়গনোসিস)ঃ বন্ধ্যা নারীর জন্য টিউব বা ডিম্বনালী ঠিক আছে কি না, টিউবের পাশে অ্যাডেসান আছে কি না, ওভারি ঠিক আছে কি না, এতে ডিম ঠিকমতো পরিপক্ক ও বের হয় কি না (ওভোলেশন), পরিসিস্টিক ওভারি কি না দেখে সনাক্ত করা যায়।
পেলভিক পেইনের জন্যঃ অ্যান্ডোমেট্রিওসসিস, পিআইডি, টিউবে বাচ্চা ইত্যাদিতে।
মাসিক একেবারে (প্রাইমারি), বা পরে না হওয়া (সেকেন্ডারি অ্যামেনোরিয়া) জরায়ু না থাকা (এজেনেসিস), ওভারি বা ডিম্বাশয় না থাকা (স্ট্রিক গোনাড বা ডিসজেনেসিস)।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে (ট্রিটমেন্ট বা সার্জারি)ঃ অ্যাক্টোপিক বাচ্চা ফেটে যাবার আগে বা পরে, পেলভিক পেইনে, লেগে থাকা ছুটানো (অ্যাঢেসিওলাইসিস), পলিসিস্টিক ওভারির চিকিৎসা, ওভারিতে পানি ভর্তি টিউমার চিকিৎসা (ওভারিয়ান সিস্ট),
জরায়ু টিউমার অপসারণ (মাইওমেক্টমি)ঃ জরায়ু অপসারণ (এলএভিএইচ), টিউব বন্ধ বা লাইগেশন করাঃ ক্লিপ রিং দিয়ে বা ব্যান্ড দিয়ে।
কখন ল্যাপারোস্কপি করা যাবে নাঃ পেটের ভেতরে খারাপ প্রদাহ (সিভিয়র পেরিটোনিটিস), পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা (প্যারালাইটিক আইলিয়াস), খারাপ ধরনের রক্তক্ষরণ সমস্যা (বি্নডিং ডিসওর্ডার), পেটে আগে অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকলে, তল পেটে অনেক বড় টিউমার
ল্যাপারোস্কপির সুবিধাসমুহঃ কম রক্ত ক্ষরণ, কম ব্যথা ও কম ওষুধ, কম সময় হাসপাতালে থাকা, দ্রুত ভালো হওয়া ও কাজে যোগদান, পেটে কোনো বড় দাগ না থাকা
অসুবিধাসমূহঃ অর্থনৈতিক, এ চিকিৎসা গ্রহণের মানসিকতা, এজাতীয় চিকিৎসা ক্ষেত্রে তুলনামুলক ব্যয় একটু বেশি।
গাড়ির চালক বা পে্ননের পাইলট যেমন চোখ, কান অর্থাৎ পঞ্চইন্দ্রিয় এক করে সমগ্র মনোনিবেশ করেন তেমনি ল্যাপারোস্কপির মাধমে চিকিৎসার প্রয়োজন দক্ষ সার্জন যিনি এর যন্ত্র ও এদের ব্যবহার, থ্রি ডাইমেনশন এনাটমি সম্বন্ধে এবং কোনো সমস্যা হলে (রক্তক্ষরণ বা হঠাৎ জরুরি অংশ কেটে গেলে যিনি সামলে নিতে পারবেন শুধু তিনিই এ চিকিৎসায় সফল হবেন। এজন্য সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার ও সঠিক রোগ চিহ্নিত করা জরুরি।
লেখকঃ সহকারী অধ্যাপক, স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
ফোনঃ ০৮১৯২৪৩৬১৯
গ্রন্থনাঃ ডা. সানজিদা ইব্রাহিম
পেটে ব্যথায় সার্জারি
মাথা থাকলে যেমন মাথা ব্যথা হয় তেমনি পেট থাকলে পেটে ব্যাথাও হবে এটাই স্বাভাবিক। শিশু থেকে শুরম্ন করে যেকোন বয়সেই পেট ব্যথা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ পেট ব্যথাই ড়্গণস্থায়ী এবং ঔষধ খেয়েই ভাল হয়ে যায়। কখনো কখনো পেট ব্যথা এত তীব্র ও জীবন বিপন্ন করে তোলে যে শৈল্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয় এবং শৈল্য চিকিৎসারও প্রয়োজন পড়ে। এবার আমার পেট ব্যথার প্রধান কারণগুলো লড়্গ্য করি।
যেগুলোর জন্য আপনারা অবশ্যই শৈল্য
চিকিৎসকের সাহায্য নিবেন
১জ্ঝ এপেনডিসাইটিস। ২জ্ঝ কলিসিসটাইটিস অর্থাৎ পিত্তথলি বা গলবস্নাডার-এর প্রদাহ পাথরজনিত অথবা পাথরবিহীন। ৩জ্ঝ ইনটেসটিনাল অবস্ট্রাকশন/ খাদ্যনালীর পথরোধ হওয়া রোগ। ৪জ্ঝ পাকস্থলি বা খাদ্যনালী (ইনটেসটিন) ফুটো হয়ে যাওয়া। ৫জ্ঝ একিউট একজারবেসন অব পেপটিক আলসার।
৬জ্ঝ কিডনি, মূত্রনালী ও মূত্রথলীতে পাথর/ ইনফেকশন। ৭জ্ঝ পিত্তনালীর পাথর। ৮জ্ঝ অগ্নাশায় বা পেনক্রিয়াসের প্রদাহ/ বা পেনক্রিয়াটাইটিস/ পেনক্রিয়াসের পাথর। ৯জ্ঝ রাপচার একটোপিক প্রেগনেন্সি প্রধান।
পেট ব্যথার এ পর্যায়ে আমরা আজ সবচেয়ে কমন যে কারণটির জন্য আপনারা সার্জনের (চিকিৎসক) শরণাপন্ন হন তা নিয়ে আলোচনা করব।
পেট ব্যথা এবং এপেনডিসাইটিস
এপেনডিসাইটিস মানে এপেনডিকস নামক ড়্গুদ্র অঙ্গটির প্রদাহ। এই এপেনডিকস অঙ্গটি পেটের নাভির ডানদিকে অবস্থিত। এটা দেখতে অনেকটা ওয়ার্ম বা কৃমির মত এবং এটা খাদ্যনালীর বৃহদন্ত্রের অংশ। রোগ প্রতিরোধে এর ভূমিকা আছে বলে ধারণা করা হয়। তবে এই অঙ্গহানির ফলে শরীরের কোন ড়্গতি হয় না।
এপেনডিসাইটিস কেন হয়ঃ
বিভিন্ন কারণে এপেনডিসাইটিস হতে পারে যেমন-
১জ্ঝ ফিকুলিথ (শক্ত মলের নুড়ি) দ্বারা এপেনডিকসের প্রবেশমুখ বন্ধ হয়ে। ২জ্ঝ হজম না হওয়া খাদ্যের অংশ যেমন টমেটোর খোসা দ্বারা এপেনডিকসের প্রবেশমুখ বন্ধ হয়। ৩জ্ঝ গুঁড়া কৃমির দ্বারা এবং ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয়ে এপেনডিসাইটিস হতে পারে।
এপেনডিসাইটিস রোগের লড়্গণসমূহঃ
১জ্ঝ রোগী বলবে প্রথমে আমার ব্যথা নাভির চারপার্শ্বে অথবা পেটের উপরিভাগে শুরম্ন হয়েছিল এবং ২/৩ ঘণ্টা পর এ ব্যথা সরে এসে নাভির ডানপার্শ্বে অবস্থান নিয়েছে।
২জ্ঝ হাঁচি, কাশি দিলে নাভির ডানপার্শ্বে ব্যথা হয়।
৩জ্ঝ বমিভাব বা ১/২ বার বমি হতে পারে।
৪জ্ঝ ড়্গুধা নেই। ৫জ্ঝ হাল্কা জ্বর ভাব।
৬জ্ঝ কনস্টিপেশন এবং কিছু ড়্গেত্রে ডায়রিয়াও হতে পারে।
৭জ্ঝ পরীড়্গা করলে নাভির ডানদিকে চাপ দিলে ব্যথা অনুভব করবে বা ব্যথার জন্য ধরাই যাবে না।
রোগীর ইতিহাস ও লড়্গণগুলো থেকেই ৯০ ভাগ ড়্গেত্রে এই রোগ নিরূপণ করা হয়। সেইসাথে রক্ত, প্রস্রাব, এরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম (মেয়েদের ড়্গেত্রে) করে পেট ব্যথার অন্য কারণগুলো বাদ দিয়ে এপেনডিসাইটিস রোগ ডায়াগনোসিস কনফার্ম করা হয়।
মেয়েদের ড়্গেত্রে এ রোগ নির্ণয় ছেলেদের তুলনায় কঠিন হয়। কারণ নাভির ডানপাশে ব্যথা মেয়েলী কারণেও হতে পারে, যেমন ৈওভুলেশন পেইন, ডিম্বাশয়ের কারণে ব্যথা, টিউবাল প্রেগনেন্সির (জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ) জটিলতার কারণে ও প্রস্রাবে ইনফেকশন ইত্যাদির কারণে ব্যথা। এসব ড়্গেত্রে অবশ্যই রোগিনীর ভালভাবে পূর্ব ইতিহাস ও পরীড়্গা নিরীড়্গা করে নিতে হবে। প্রয়োজন হলে লেপারোস্কোপিক পদ্ধতির সাহায্য নিতে হবে।
চিকিৎসা
দ্রম্নত অপারেশনই এ রোগের সঠিক চিকিৎসা।
অপারেশন না করলে কি ড়্গতি হতে পারে?
১জ্ঝ চাকা (লাম্পা) হয়ে যেতে পারে। যা কিনা ভাল হতে ২/৩ সপ্তাহ লেগে যায় এবং খরচও অপারেশনের চেয়ে বেশি হয়।
২জ্ঝ ফোঁড়া বা এবসেস হয়ে যেতে পারে।
৩জ্ঝ গেংগ্রিন, ফুটো বা বার্স্ট হয়ে যেতে পারে এবং জীবন-মরণ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪জ্ঝ ভাল হয়ে আবার বারবার দেখা দিতে পারে।
অতএব, উপরের জটিলতাগুলো চিন্তôা করে যত দ্রম্নত সম্ভব অপারেশন করে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
বিরক্তিকর পেটের সমস্যা
পেটের কোনো সমস্যাই সুখকর নয়। তবে কিছু সমস্যা আছে যেগুলো খুবই বিরক্তিকর এবং কষ্টদায়ক। যেমন ঠিকমতো পায়খানা না হওয়া কিংবা বেশি বেশি পেট খারাপ হওয়া। চিকি[্ৗ২৫১০;]সকরা পেটের এ সমস্যার নাম দিয়েছেন আইবিএস বা ইরিট্যাবল বাওয়েল সিনড্র[্ৗ২৫০৭;]ম। কবিরাজ ভাই এবং তাদের অনুগতরা অবশ্য একে পুরনো আমাশয় বলে থাকেন। এ রোগটি থেকে মুক্তি পেতে আজকের লেখার সাহায্য নিতে পারবেন।
রোগের লক্ষণ
তলপেটে ব্যথা হয়। ব্যথা মোচড় দিয়ে শুরু হয় এবং পায়খানা করার পর ব্যথা কমে যায়।
পেটের মধ্যে সারা দিন বুদবুদ আওয়াজ হতে থাকে। মনে হয় পেটের মধ্যে গ্যাস ভরে আছে।
কখনো পাতলা পায়খানা, কখনো কষা পায়খানা (কনস্টিপেশন) হয়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে সব সময় পাতলা পায়খানা বা কষা পায়খানা হয়।
যাদের সব সময় পাতলা পায়খানা হয় তাদের ক্ষেত্রে প্রথমে পেটে ব্যথা হয় এবং পরে পাতলা পায়খানা হওয়ার পর তা কমে আসে। ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয় এবং প্রতিবার খুব অল পরিমাণে পায়খানা হয়।
ঘুমের মধ্যে সাধারণত কখনোই পায়খানার বেগ হয় না।
পায়খানার সময় প্রচুর পরিমাণে আম বা মিউকাস যায়। আম যায় বলে অনেকে অজ্ঞতাবশত একে আমাশয় বলে।
যাদের কষা পায়খানার প্রবণতা বেশি তারা পেটে ব্যথা নিয়ে টয়লেটে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেও অতৃপ্তি নিয়ে টয়লেট থেকে বের হতে হয়।
পায়খানা সমস্যা থাকলেও এসব রোগীর ওজন তেমন হ্রাস পায় না।
পায়খানার সমস্যার পাশাপাশি এসব রোগীর ক্ষুধামন্দা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, মাথা ব্যথা, পিট ব্যথা, অলতেই ক্ৗ৮৭২২;ান্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা থাকতে পারে।
রোগের কারণ
প্রায় ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে এ রোগটি মানসিক কারণে হয়ে থাকে। সকালে বাথরুম সেরে অফিসে যাওয়ার জন্য প্যান্ট-শার্ট পরেছেন অমনি দেখা যায়, তলপেট মোচড় দিয়ে ব্যথা ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে টয়লেটে দৌড়। দূরে কোথাও যাবেন তাই বাসে উঠেছেন। যখন মনে হবে বাসে তো বাথরুম করার সুযোগ নেই অমনি দেখবেন তলপেটে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। প্রস্রাব-পায়খানা যতোই পরীক্ষা করান না কেন এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা পাওয়া যাবে না। যারা সবসময় দুশ্চিন্তায় ভোগেন,ে স্ট্রস যাদের নিত্যদিনের সঙ্গী তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।
পুকুরে ঢিল ছুড়লে পানি যেমন তরঙ্গের আকারে পাড়ের দিকে এগিয়ে যায়, পেটের নাড়িভুড়িও তেমনি তরঙ্গের আকারে খাদ্যজাত বর্জø পদার্থ পায়খানার আকারে বের করে দেয়। অন্ত্রের সংকোচন প্রসারণের মাধ্যমে এ গতিময় তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। কোনো কারণে এ সংকোচন প্রসারণের পরিমাণ বেড়ে গেলে পাতলা পায়খানা এবং কমে গেলে কষা পায়খানা হতে পারে।
কিছু মানুষ আছে যারা সামান্য কথাতেই মুখ গোমড়া করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। তেমনিভাবে কোনো কারণে অন্ত্রের সংবেদনশীলতা বেড়ে গেলে ঘন ঘন পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অন্ত্রের প্রদাহের কারণে অনেকের ঘন ঘন পায়খানার সমস্যা হতে পারে। এছাড়া দুগজাত খাবারসহ অনেক খাবার আছে যেগুলো অনেকে হজম করতে পারে না। আইবিএস তাদের ক্ষেত্রেও হতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
লক্ষণ বা ধরন দেখেই এ রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো যেতে পারে। পায়খানা পরীক্ষা, রক্তের কিছু পরীক্ষা, সিগময়ডোস্কপি ইত্যাদি করানো যেতে পারে। এছাড়া যাদের প্রধানত পাতলা পায়খানা হয় তাদের ক্ষেত্রে টেস্ট করে দেখতে হবে তারা মাইক্র[্ৗ২৫০৭;]স্কপিক কোলাইটিস, ল্যাকটোজ ইনটল্যারেন, বাইল এসিড ম্যাল অ্যাবজরপশন ইত্যাদি রোগে ভুগছেন কি না। পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে কোলোনোস্কপি, ব্যারিয়ার এনেমা ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোনো ক্যানারের লক্ষণ আছে কি না।
চিকি[্ৗ২৫১০;]সা
এ রোগের চিকি[্ৗ২৫১০;]সায় প্রথম কথা হলো রোগীকে অভয় দেয়া, সাহস যোগানো। সাহস দেয়া মানে এই নয় যে, রোগীকে বোঝানো, ভাই টেনশন করবেন না, রোগটা ভালো হলে ঠিক হয়ে যাবে। রোগীকে বোঝাতে হবে এটা খুবই সাধারণ একটা সমস্যা। এতে ভয়ের কিছু নেই। টেনশনমুক্ত জীবনযাপন করলে, আত্মবিশ্বাস বাড়ালে এবং খাবারের বিষয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এ রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
যাদের পাতলা পায়খানা বেশি হয় তারা অবশ্য শাক-সবজি বা ফাইবার জাতীয় খাবার খুব কম খাবেন। এতে কাজ না হলে ডায়ারিয়া রোধী ওষুধ যেমন- লোপেরামাইড, কোডেইন ফসফেট, কোলেস্টাইরামিন ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। এতেও কাজ না হলে অ্যামিট্রিপটাইলিন (২৫ মিজ্ঝগ্রাজ্ঝ) প্রতি রাতে কমপক্ষে তিন মাস খেয়ে দেখতে পারেন। অন্যদিকে যাদের কষা পায়খানা বেশি হয় তাদের উচিত বেশি পরিমাণে শাক-
সবজি খাওয়া। এতেও কাজ না হলে ইসবগুলের ভুষি খাওয়া যেতে পারে। বাজারে টেগরোটোল গ্রুপের ওষুধ পাওয়া যায় যা সেবনে এ ধরনের রোগীরা বেশ ভালো ফল পেতে পারেন।
তলপেটে ব্যথা বা বুদবুদ আওয়াজ কমাতে মেবেভারিন গ্রম্নপের ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
সুখ ভোগে না ত্যাগে তা বোঝা যায় টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর। আপনি খুব বেশি তৃপ্ত হয়ে একমাত্র মেয়ের নাম তৃপ্তি রাখতেই পারেন। কিন্তু সেই তৃপ্তি আইবিএসের মতো বিরক্তিকর পায়খানার সমস্যায় ভুগলে সব সময় অতৃপ্ত মন নিয়ে তাকে টয়লেট থেকে বের হতে হবে। ফলে ছন্দায়িত জীবন গদ্যময় হয়ে যাবে। পেটের এ ধরনের সমস্যায় তাই অবশ্যই একজন মেডিসিন বা গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হবেন। ভালো কথা, আম যাওয়া মানেই কিন্তু আমাশয় নয়। পায়খানার রাস্তাকে মসৃণ রাখার জন্য বিধাতা গ্রিজের মতো করে সেখানে আমের নিঃসরণ ঘটান। তাই এ জাতীয় সমস্যায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন, ভোগে নয় ত্যাগেই সুখী হোন।
লেখকঃ ডাজ্ঝ সাকলায়েন রাসেল
উ[্ৗ২৫১০;]সঃ দৈনিক যায়যায়দিন, ২৮শে নভেম্বর ২০০৭
কোষ্ঠকাঠিন্যঃ কারণ ও প্রতিকার
অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক
হেদায়েত সাহেবের বয়স চল্লিশের মতো। ভালো চাকরি করেন। হঠাৎ করে বেশ কিছু দিন যাবৎ তার শক্ত পায়খানা হচ্ছে, পায়খানায় দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরও মনে হচ্ছে পায়খানা ঠিক ক্লিয়ার হচ্ছে না, তাকে খুবই বিষণ্ন মনে হচ্ছে, দিন দিন কেমন যেন শুকিয়ে যাচ্ছেন। পায়খানার সাথে রক্ত যায় কি না তাকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, খেয়াল করিনি, স্যার। তারপর তাকে পরীক্ষা করলাম, প্রোক্টোস্কোপি ও সিগময়ডোস্কোপি টেস্ট করলাম, তারপর দেখতে পেলাম তার কোলনে অর্থাৎ অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার।
হেদায়েত সাহেব যে উপসর্গগুলো নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন তা মূলত কোষ্ঠকাঠিন্যের। কিন্তু এ কোষ্ঠকাঠিন্য কী, কেন হয় তা আমরা কিভাবে প্রতিরোধ করতে পারি এবং সময়মতো এর চিকিৎসা না করলে কী কী পরিণতি হতে পারে সে বিষয়েই এখন আমরা আলোচনা করব।
কেউ যদি প্রতি সপ্তাহে তিন বারের কম পায়খানায় যায়, পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার পরও তখনই একে বলব কোষ্ঠকাঠিন্য।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ
১. আঁশজাতীয় খাবার এবং শাকসবজিও ফলমূল কম খেলে;
২. পানি কম খেলে;
৩. দুশ্চিন্তা করলে;
৪. কায়িক পরিশ্রম, হাঁটাচলা কিংবা ব্যায়াম একেবারেই না করলে;
৫. অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার হলে
৬. ডায়াবেটিস হলে
৭. মস্তিষ্কে টিউমার হলে এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে;
৮. অনেক দিন বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে বিছানায় শুয়ে থাকলে;
৯. বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন যেমন
ক. ব্যথার ওষুধ
খ. উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ
গ. গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ
ঘ. খিঁচুনির ওষুধ এবং
ঙ. যেসব ওষুধের মধ্যে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম জাতীয় খনিজ পদার্থ থাকে। তা ছাড়া স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোনের বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার জন্যও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এর মধ্যে কাঁপুনিজনিত অসুখ, স্নায়ু রুজ্জু আঘাতপ্রাপ্ত হলে, কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা ও থাইরয়েডের সমস্যা উল্লেখযোগ্য।
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ
১. শক্ত পায়খানা হওয়া;
২. পায়খানা করতে অধিক সময় লাগা;
৩. পায়খানা করতে অধিক চাপের দরকার হওয়া;
৪. অধিক সময় ধরে পায়খানা করার পরও পূর্ণতা না আসা;
৫. মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথার অনুভব করা এবং
৬. আঙুল কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে পায়খানা বের করা।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়
১. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে; ২. বেশি করে পানি খেতে হবে; ৩. দুশ্চিন্তা দূর করতে হবে; ৪. যারা সারাদিন বসে বসে কাজ করেন তাদের নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং ৫. যেসব রোগের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তার চিকিৎসা করতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসা না করা হলে যে সমস্যা হতে পারে
১. পায়খানা ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে; ২. পাইলস; ৩. এনাল ফিশার;
৪. রেকটাল প্রোলাপস বা মলদ্বার বাইরে বের হয়ে যেতে পারে; ৫. মানসিকভাবে রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে; ৬. প্রস্রাব বন্ধ হতে পারে; ৭. খাদ্যনালীতে প্যাঁচ লেগে পেট ফুলে যেতে পারে; ৮. খাদ্যনালীতে আলসার বা ছিদ্র হয়ে যেতে পারে এবং ৯. কোষ্ঠকাঠিন্য যদি কোলন ক্যান্সার এবং মস্তিষ্কে টিউমারের জন্য হয় এবং সময়মতো চিকিৎসা করা না হয় তবে অকাল মৃত্যুও হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অনেকে প্রতিনিয়ত পায়খানা নরম করার বিভিন্ন ধরনের ওষুধ; সিরাপ এবং মলদ্বারের ভেতরে দেয়ার ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, যা মোটেও উচিত নয়। প্রতিনিয়ত পায়খানা নরম করার ওষুধ ব্যবহার করলে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। ফলে মলদ্বারে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা আর থাকে না। তাই বয়স্ক এবং যারা পরিশ্রমের কাজ করেন না তাদের মধ্যে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাদের উচিত কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ নির্ণয় করে সে হিসেবে চিকিৎসা নেয়া। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য ইসুবগুলের ভূষি পানিতে ভিজিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেললে এবং গরু, খাসি ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার যেগুলো মল শক্ত করে তা থেকে দূরে থাকলে অনেকে উপকৃত হতে পারেন।
লেখকঃ বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ
চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বারঃ জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা। মোবাইলঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬
অ্যাপেনডিসাইটিস
অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক
তলপেটে হঠাৎ করে ব্যথা উঠলেই অনেকে মনে করে থাকেন অ্যাপেনডিসাইটিসের ব্যথা। জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন দরকার। আসলে কথাটা সঠিক নয়। পেটে ব্যথা অ্যাপেনডিসাইটিস ছাড়াও বহুবিধ কারণে হতে পারে। ওষুধের মাধ্যমেও পেটের ব্যথা থেকে নিরাময় হওয়া যায় অনেক ক্ষেত্রে।
অ্যাপেনন্ডিক্স হচ্ছে ছোট নলাকার একটি অঙ্গ যা বৃহদন্ত্রের সাথে সংযুক্ত থাকে। লম্বায় ২-২০ সে.মি.। কোনো কারণে অ্যাপেনন্ডিক্সের মধ্যে ইনফেকশন হলে এটি ফুলে যায়, প্রদাহ হয়, তখন একে বলা হয় অ্যাপেনডিসাইটিস।
উপসর্গগুলো
সাধারণত প্রথমে ব্যথা নাভির চারপাশে অনুভব হয় এবং কয়েক ঘণ্টা পর ব্যথাটা তলপেটের ডান পাশে চলে আসে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে পেটের অন্য অংশেও ব্যথা হতে পারে।
১. বমি বমি ভাব হতে পারে;
২. বমিও হতে পারে;
৩. অরুচি হতে পারে;
৪. পাতলা পায়খানা হতে পারে এবং
৫. জ্বর হতে পারে।
এ রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রোগীর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষাই বেশি জরুরি। আলট্রাসনোগ্রাম কিংবা রক্ত পরীক্ষা অ্যাপেনডিসাইটিস নির্ণয়ে সহায়ক হতে পারে। তবে এ রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসকের অভিজ্ঞতাই গুরুত্বপূর্ণ। পেটের ডান দিকে নিচের অংশে অনেক কারণে ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে। তাই এ রোগে অপারেশনের আগে চিকিৎসককে অবশ্যই অন্য কারণগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। তবে অ্যাপেনডিসাইটিস হলে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন। কারো অ্যাপেনডিসাইটিস হলে যদি অপারেশন করা না হয় তাহলে অ্যাপেনন্ডিক্স ছিদ্র হয়ে যেতে পারে, ইনফেকশন পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং জীবন বিপন্ন হতে পারে।
লেখকঃ বৃহদান্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি, বঙ্গবন্ধ ু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বারঃ জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫ সাত মসজিদ রোড (জিগাতলা বাস স্ট্যান্ড), ধানমন্ডি, ঢাকা।
ফোনঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬, ০১৭১৫০৮৭৬৬১।
ক্রনিক আমাশয় বা আইবিএস
অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক
এক তরুণের বয়স ২২। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বেশ কিছু দিন ধরে এক জটিল রোগে আক্রান্ত, যা তার পড়াশোনা ও জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে। ছয় মাস ধরে তিনি আমাশয়ে ভুগছেন। দিনে চার-পাঁচবার টয়লেটে যেতে হয়। তলপেটে ব্যথা হয়, পায়খানার সাথে মিউকাস বা আম যায়। টয়লেট থেকে আসার পরও মনে হয় পুরোপুরি পরিষ্কার হয়নি এবং মাঝে মাঝে পায়খানার সাথে রক্ত যায়। এসব সমস্যার জন্য নিজে নিজে অনেক ওষুধ খেয়েছেন এবং অনেক ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছেন। অনেক রক্ত পরীক্ষা ও অন্যান্য পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে তিনি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি ভাবতে থাকেন এ সমস্যার কি কোনো সমাধান নেই নাকি এটা পায়ুপথের কোনো জটিল সমস্যা, না ক্যান্সার? ওপরের বর্ণনা থেকে আপনারা অনেকেই হয়তো ভাবছেন এটা কী ধরনের রোগ? এর কি কোনো চিকিৎসা এ দেশে নেই?
এ রোগটির নাম ওড়ড়ময়থদলপ ইসাপল ঝীষনড়সশ (ওইঝ) বা সহজ বাংলায় যাকে বলে মানসিক অস্থিরতাজনিত আমাশয় রোগ। জেনারেল প্র্যাকটিশনার থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পরিপাকতন্ত্রের এই সমস্যা নিয়ে প্রচুর রোগী আসেন। পরিপাকতন্ত্রের এই বিশেষ রোগ নিয়ে গবেষণার কোনো অন্ত নেই। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই রোগের কোনো স্বীকৃত কারণ পাওয়া যায়নি। এ জন্য একে ঋৎষধয়মসষথল নমঢ়সড়নপড়ও বলা হয়।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯-১২ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত। পুরুষ বা মহিলা যে কেউই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। অনুপাত ১০ঃ১১। এই রোগের কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই। যেকোনো বয়সের যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
ওইঝ রোগের নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা না গেলেও বিজ্ঞানীরা বেশ ক’টি ব্যাপারকে এ রোগের জন্য দায়ী বলে মনে করেন। যেমন, মানসিক কারণ, পরিপাকতন্ত্রের পরিবর্তিত চলাচল, পরিপাকতন্ত্রের প্রসারণ সংক্রান্ত জটিলতা ইত্যাদি। এসব কারণের মধ্যে ৫০ শতাংশ রোগীই মানসিক সমস্যায় ভোগেন। যেমনঃ উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, অবসাদগ্রস্ততা, ভয় পাওয়া, মানসিক বিপর্যস্ততা ইত্যাদি। পরিপাকতন্ত্রের পরিবর্তিত আচরণ আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ।
এই রোগে যেসব উপসর্গ দেখা দেয় তাদের আমরা দু’টি ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি হলো পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, অন্যটি হলো অন্যান্য শারীরিক সমস্যা। পরিপাকতন্ত্রের সমস্যাগুলো হলো তলপেটে ব্যথা, যা টয়লেটে যাওয়ার পর কমে যায়, পেট ফুলে ওঠা। ওইঝ রোগীরা দুই ধরনের সমস্যা নিয়ে ডাক্তারদের কাছে আসতে পারেন। একধরনের রোগীরা আসেন ডায়রিয়াজনিত সমস্যা এবং অন্য ধরনের রোগীরা আসেন কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যা নিয়ে। আবার অনেক রোগী আসেন যাদের এই দুই ধরনের সমস্যাই থাকে। যেসব রোগী ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে আসেন তারা প্রায়ই ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়া, পরিষ্কারভাবে পায়খানা না হওয়া, আম যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গের কথা বলেন। আর যারা কোষ্ঠকাঠিন্য, পায়খানার রাস্তায় ব্যথা ও পেটে ব্যথা এসব সমস্যায় ভোগেন। ওইঝ-এর অনেক রোগী অনেক সময় মলদ্বারের বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগে থাকেন। ওইঝ-এর বেশিরভাগ মহিলা ও পুরুষ রোগী আবার এনাল ফিশার রোগে ভুগে থাকেন। অনেকে পাইলস রোগে আক্রান্ত হন। এনাল ফিশার বা পাইলস রোগে আক্রান্ত হলে পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত যেতে পারে। পায়খানার রাস্তা ফুলে উঠতে পারে, পায়খানার পর জ্বালা-যন্ত্রণা বা ব্যথা করতে পারে। অথবা পায়খানার রাস্তা বের হয়ে আসতে পারে। উপসর্গের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য যে, রোগীর বিশেষ ধরনের খাবার খাওয়ার পর রোগের উপসর্গ প্রকটভাবে দেখা দেয়। বেশ কিছু খাবার রয়েছে যেমনঃ গরুর দুধ, গোশত, চিংড়িমাছ, তৈল জাতীয় খাবার বা মসলাবহুল খাবার। এসব খাবার খেলে রোগীদের পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা দেখা দেয়।
ওইঝ রোগ নিরূপণের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। যেমন রক্ত পরীক্ষা, মলদ্বারে বিশেষ ধরনের যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা (কলোনস্কোপি, সিগময়ডোস্কপি), বিশেষ এক্স-রে করা যেতে পারে। কলোনস্কোপি, সিগময়ডোস্কপি অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে করানো উচিত। কারণ অনেক সময় মলদ্বার ও বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার রোগীরাও একই ধরনের উপসর্গ নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসতে পারেন। বিশেষ ধরনের পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা, মল পরীক্ষা, দুধ সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা ইত্যাদি।
ওইঝ রোগরে চিকিৎসার অন্যতম প্রধান ধাপ হলো রোগীকে আস্বস্ত করা। বেশিরভাগ রোগীই মনে করেন তাদের ক্যান্সার হয়েছে। এ ব্যাপারে তারা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ফলে তাদের রোগের উপসর্গ আরো প্রকট হয়ে ওঠে। প্রত্যেক রোগীকে অবশ্যই যথেষ্ট সময় দিতে হবে। ধৈর্যসহ তাদরে সব সমস্যার কথা শুনতে হবে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। তাদের বুঝতে হবে যে এটা দেহের কোনো অঙ্গের রোগ নয়, এটা অনেকটা মানসিক অস্থিরতা ও অন্ত্রের উল্টাপাল্টা আচরণের ফল। যেসব রোগী এসব উপদেশের পরও আশ্বস্ত না হন কেবল তাদের ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।
প্রত্যেক রোগীর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে ইতিহাস নিতে হবে। যেসব রোগী কোষ্ঠকাঠিন্য ধরনের ওইঝ রোগরে বর্ণণা দেবেন, তাদের ক্ষেত্রে খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণ আঁশাযুক্ত খাবার আছে কি না, নিয়মিত ব্যায়াম করেন কি না এবং টয়লেটে যথেষ্ট সময় দেন কি না এ ব্যাপারে ইতিহাস নিতে হবে। এসব রোগীকে খাদ্যে আঁশযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে বলতে হবে, যেন কোষ্ঠকাঠিন্য কমে আসে। অন্য দিকে যেসব রোগীর ডায়রিয়াজনিত ওইঝ থাকে তাদের খাদ্যের তালিকা থেকে অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার, ফল, চা ইত্যাদি কম করে খেতে বলতে হবে। এ ছাড়াও যেসব খাবার খেলে (যেমন দুধ, পোলাও ও চিংড়ি) যাদের সমস্যা হয়, তা খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, দুধ বা দুধজাতীয় খাবার বাদ দিলে তারা বেশ ভালো থাকেন।
যেসব রোগীকে তার রোগ সম্পর্কে পুরোপুরি বুঝিয়ে বলা এবং আশ্বস্ত করার পরও উপসর্গ পুরোপুরি না যায়, কেবল তাদের ক্ষেত্রে ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এসব ওষুধের বেশিরভাগই তল পেটের ব্যথানাশক এবং অবসাদ, হতাশা দূর করার ওষুধ।
যেসব রোগীর খুব ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয় বা পায়খানা এলে ধরে রাখতে পারেন না, কেবল তাদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া প্রতিরোধকারী ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য ধরনের ওইঝ রোগীদের ক্ষেত্রে আঁশজাতীয় খাবারের পাশাপাশি ইসবগুলের ভূসি খাবার জন্য উপদেশ দেয়া হয়।
অনেক রোগী, যার ওইঝ-এর পাশাপাশি মলদ্বারে বিভিন্ন সমস্যা যেমন এনাল ফিশার বা পাইলস বা মলদ্বার বের হয়ে আসা রোগে আক্রান্ত হয় তাদের অবশ্যই বৃহদন্ত্র ও মলদ্বারের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশই সব ধরনের উন্নত চিকিৎসার প্রচলন রয়েছে।
লেখকঃ বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ
চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল, ৫৫ সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোনঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬, ০১৭১৫০৮৭৬৬১
পিত্তপাথর ও ল্যাপারোস্কপি
পিত্তপাথর অতি বড় অসুখ। এই অসুখটি প্রায় প্রতিটি দেশের মানুষের মাঝে দেখা যায়। এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, অষ্ট্রেলিয়াসহ সর্বত্র এর বিস্তôার লড়্গণীয়। সর্বাধিক দেখা যায় সুইডেনে যেখানে শতকরা হার ৩৮ ভাগ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়াতে শতকরা ১৫ থেকে ২৫ ভাগ পাওয়া যায়। সর্বনিম্ন হার দেখা যায় আয়ারল্যান্ডে মাত্র শতকরা ৫ ভাগ।পুরম্নষের তুলনায় মহিলাদের এই রোগের হার দ্বিগুণ। যথাক্রমে শতকরা হার ৮৯ ভাগ থেকে ৭৩ ভাগ পর্যন্তô। আফ্রিকাতে এর হার খুবই কম যায় শতকরা হার ১ ভাগেরও কম।
পিত্তপাথরের প্রকারভেদঃ পিত্তপাথরের কারণকে দুইভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে যথা (১) পুরাতন-জনিত কারণঃ যেমন প্রদাহজনিত, মেটাবলিজমজনিত, স্থবিরতাজনিত।
(২) বর্তমান কারণ যথাক্রমে (ক) কোলেস্টরল পাথর (খ) কালো রঙের পাথর (গ) বাদামী রঙের পাথর।
(ক) কোলেস্টরল পাথরঃ শতকরা ৭৫ ভাগ পাথর এই শ্রেণীভুক্ত। সাধারণত সংখ্যায় অধিক। একটি মাত্র পাথর হলে তা বিরাট আকার ধারণ করে।
(খ) কালো রঙের পাথরঃ এই পাথর সংখ্যায় অনেক বেশী এবং ছোট আকারের হয়। সাধারণত রক্ত কণিকা ভেঙে গেলে এই রঙের পাথর দেখা দেয়। এর সাথে শতকরা ২০ ভাগ ইনফেকশন থাকে।
(গ) বাদামী রঙের পাথরঃ এই পাথর তৈরী হয় পিত্তনালীতে।
কখন পাথর হয়ঃ (১) বয়স বাড়ার সাথে এই রোগের প্রবণতা বাড়ে। (২) জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনে পাথরের হার বৃদ্ধি পায় কম বয়সী মহিলাদের ড়্গেত্রে।
রোগের লড়্গণ সমূহঃ
(১) পেটে ব্যথাঃ উপর পেটের মাঝখানে ও ডান পার্শ্বে ব্যথা থাকে। এই ব্যথা হালকাভাবে এবং কখনো তীব্রভাবে হয়ে থাকে। ব্যথার স্থায়ীত্ব ৩ ঘন্টা থেকে ৩ দিন পর্যন্তô থাকে। এরপর ২ সপ্তাহ থেকে ৬ মাস পর্যন্তô ভাল থাকে। অনেক সময় এই ব্যথা ডান পার্শ্বের ঘাড়ে চলে যায়। তীব্র ব্যথা হলে রোগী কোন অবস্থায় স্বস্তিô পায়না এবং এর সাথে বমি থাকে ও জ্বর হয়। পেট ফাঁপা থাকে।
(২) ড়্গুধামন্দাঃ একবার খাওয়ার পর আর সারাদিন খেতে ইচ্ছে হবে না। মনে হবে পেট ভরে আছে। কোন কিছুতেই রম্নচি আসবে না।
(৩) জন্ডিসঃ জন্ডিস কখনো কখনো দেখা দেয়।
(৪) জ্বরঃ কখনো মারাত্মক জ্বর হয়। শরীরে ঝাঁকুনি দিয়ে জ্বর আসে।
জটিলতাঃ
(১) পিত্তথলির পুজ যা এমপায়েমা নামে পরিচিত।
(২) পিত্তথলির ফুটা হয়ে যাওয়া।
(৩) পিত্তথলির গ্যাংগ্রিন।
(৪) ক্যান্সার
পরীড়্গাঃ নানাবিধ পরীড়্গা পদ্ধতি রোগ নির্ণয়কে সহজ করে ফেলেছে।
চিকিৎসাঃ চিকিৎসাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-মেডিসিন ও সার্জারী।
মেডিসিন চিকিৎসাঃ পিত্তপাথর রোগীরা প্রায়ই বলে থাকেন মেডিসিন দিয়ে পাথর বের করে দেন। আসলে মেডিসিনের কোন প্রকার ভূমিকা নেই পাথর সারাবার। তাই পাথর যেভাবে ধরা পড় ক না কেন অপারেশনই একমাত্র চিকিৎসা। আর সার্জারীই একমাত্র ভরসা। এক সময় প্রচলন ছিল পাথর নির্ণয় না হওয়ার কারণে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করতো বছরের পর বছর। এখন যুগের পরিবর্তন হয়েছে নানাবিধ পরীড়্গা পদ্ধতি চালু হয়েছে তাই পাথর চিকিৎসা আর কোন সমস্যা নয়। বাজারে একটা ওষুধ চালু আছে যা দিয়ে পাথর গলিয়ে ফেলা যায় বলে সেই কোম্পানী দাবী করেছেন। আমি সেই কোম্পানির দাবীকে অযৌক্তিক মনে করছি না, তবে সেখানে যে শর্ত দেয়া হয়েছে ওষুধ প্রয়োগের ড়্গেত্রে তা পূরণ কঠিন। তাই মেডিসিন চিকিৎসার প্রতি নিয়োজিত থেকে অযথা সময় ড়্গেপণ করবেন না।
সার্জারী চিকিৎসাঃ- অনেক প্রকার পদ্ধতি এখন প্রচলিত। (১) ল্যাপারোস্কপিক পদ্ধতি (২) পেট কাটা পদ্ধতি। যদি পিত্তথলির জটিলতা না থাকে তবে ল্যাপারোস্কপিক পদ্ধতি সেরা। তবে তা হতে হবে বিশেষজ্ঞের হাতে। আজকাল যত্রতত্র এই পদ্ধতি চালু হয়েছে। অনভিজ্ঞ, আধা-অভিজ্ঞ সার্জন এই চিকিৎসার আয়োজন করছে। তাতে জটিলতা প্রচুর বাড়ছে। যথেষ্ট অভিজ্ঞ না হয়ে এই মেশিন কখনোই ব্যবহার করবেন না। আর যথেষ্ট অভিজ্ঞতা না হলে তার কাছে সার্জারী করাবেন না। তাতে কষ্ট বাড়বে, পয়সা খরচ বেশী হবে, জটিলতা বাড়বে। ইদানিং প্রায়ই শোনা যাচ্ছে রোগীদের বক্তব্য ল্যাপারোস্কপিক করলে আবার পেট কাটা লাগে। কথাটা যথেষ্ট সত্য। আমাদের দেশের পরীড়্গা পদ্ধতি ক্রটিপূর্ণ। আলট্রাসাউন্ড রির্পোট নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। অভিজ্ঞ আলট্রাসাউন্ডদের হাতে সারা বিশ্বে সফলতার হার শতকরা ৭০ ভাগ। আমাদের দেশে এই হার আরো কম।
তাই প্রায়ই ভুল হয়। এই সেদিনও পিজি হাসপাতালে এক মহিলার আলট্রাসাউন্ড বিশ্বাস করে ল্যাপারোস্কপিক করতে যেয়ে ব্যর্থ হতে হলো। আলট্রাসাউন্ড বর্ণনার সাথে বাস্তôবতার কোন মিল নেই। সাথে সাথে পেট কাটা হলো এবং দেখা গেল পিত্তথলিতে তো পাথর আছে পাশাপাশি পিত্তনালীতেও পাথর আছে। যদি ঐ সময় পেট কাটা না হতো তাহলে এই রোগীও দ্বিতীয়বার সার্জারী লাগতো। তবে সঠিকভাবে শুধুমাত্র ল্যাপারোস্কপিক সার্জারী দ্বারা একমাত্র সার্জারী করা যাবে যদি রম্নটিনভাবে ইআরসিপি করে নেয়া যায়। এই প্রথা আমাদের দেশে আমি চালু করার পড়্গে অতিমাত্রায় সোচ্চার। এতে সময় বাঁচবে,পয়সা বাঁচবে রোগীদের দ্বিতীয়বার অপারেশনের ঝুঁকি থাকবে না। উন্নত বিশ্বের সব দেশে এই প্রথা চালু হয়েছে। পার্শ্ববর্তী ভারতে তারা এই প্রথার পরীড়্গা ছাড়া ল্যাপারোস্কপিক করে না। ইআরসিপির আরো একটি ভাল দিক আছে। যেমন পেরিএমপুলারী ক্যান্সার শুরম্নতেই নির্ণয় করা যায়।
পিত্তথলিতে াজ জমে আছে, পিত্তথলির আয়তন বড় হচ্ছে, ডান পার্শ্বের হাতে চাকা লাগছে, সামান্য ব্যথা অনুভব হচ্ছে। ল্যাপারোস্কপিকের সাহায্যে অথবা পেট কেটে পিত্তপাথর অপারেশন করা হয়েছে রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ীতে গিয়েছে। ১-২ মাস পর পুনরায় জন্ডিস নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন। এবার পরীড়্গা করে ধরা পড়ল প্যানক্রিয়াসে ক্যান্সার। লিভার ও অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে। কি নির্মম, অথচ ইআরসিপি করা হলে শুরম্নতেই ঐ রোগ ধরা পড়ত। আসল চিকিৎসা সম্ভব হতো। রোগীর অকাল মৃত্যু হতো না। সুতরাং সাবধান যত্রতত্র অপারেশন পরিত্যাগ করম্নন, বিশেষজ্ঞদের কাছে সঠিক উপদেশ নিন ও সঠিক চিকিৎসা করম্নন।
০ প্রফেসর ডাঃ মোঃ সহিদুর রহমান
বিভাগীয় প্রধান
হেপাটোবিলিয়ারী, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপস্নান্ট সার্জারী বিভাগ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ,ঢাকা।
গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার
ভূমিকাঃ সমগ্র পৃথিবীতে পাকস্থলীল ক্যান্সারে মৃত্যুর হার অধিক। সৌভাগ্যের বিষয় হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের মৃত্যুর হার কমতে শুরম্ন করেছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সমগ্র পৃথিবীতে প্রতি বছর ৬ লাখ ২৮ হাজার লোক গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে।
বিশ্বে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের হার জাপানীদের ড়্গেত্রে অনেক বেশী। কোরিয়া, রাশিয়া, উত্তর আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকায় এই রোগ দেখা যায়। তবে এটি এমন একটি মারাত্মক ব্যাধি যা বিশ্বের সকল মানুষের মাঝে দেখা যায়। কোন কোন জাতির মধ্যে এই রোগ অধিক, কোন কোন জাতির মধ্যে এই রোগের হার খুবই কম।
রোগের কারণঃ
১· ধূমপানঃ ধূমপায়ীদের মাঝে এই রোগ দেখা যায়।
২· লবণঃ- খাদ্যে যারা প্রচুর লবণ গ্রহণ করে তারা ও এই রোগে আক্রান্তô হতে পারে।
৩· ফলমূল ও সবজি-যারা ফলমূল ও সবজি কম গ্রহণ করে থাকে তাদের মাঝে এই রোগ বেশী হয়।
৪· যারা প্রচুর মদ পান করে।
৫· যারা দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে।
৬· যাদের পাকস্থলীতে একবার অপারেশন করা হয়েছে।
৭·পাকস্থলীতে পলিপ থাকলে।
৮· পাকস্থলীতে ঘা থাকলে।
৯· প্রথম ডিগ্রী আত্মীয়-স্বজন যাদের ক্যান্সার হয়েছে। যেমন- বাবা, মা।
১০· হেলিকো ব্যকটোর পাইলোরী দিয়ে ইনফেকসন হলে।
রোগের লড়্গণঃ
এই রোগ দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রাথমিক ক্যান্সার ও এডভান্স ক্যান্সার। প্রাথমিক ক্যান্সার শতকরা ৮০ ভাগ লোকের কোন লড়্গণ থাকে না। এই অবস্থায় চিকিৎসার সফলতা অনেক বেশী। এডভান্স হলে নানান ধরনের রোগের লড়্গণ নিয়ে আবির্ভাব হয়। যথাঃ পেটে ব্যাথা, খাওয়ার অরম্নচি, বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া, অল্প আহারে মনে হবে পেট ভরে গেছে, রক্ত পায়খানা, রক্ত বমি, খাবার গিলতে কষ্ট হয়, শরীরের শক্তি কমতে থাকে, পায়ে পানি আসে, শরীর শুকাতে থাকে, লিভার ফুসফুস, হাড়, মগজ, কিডনি, চর্ম, হার্ট, থাইরয়েড, পেরিটানিয়াম আক্রান্তô হয়ে যায়। পায়ের শিরা আক্রান্তô হয়ে যায়।
পরীড়্গাঃ
নানাবিধ পরীড়্গা দ্বারা এই রোগ নির্ণয় করা যায়। এন্ডোসকপি, বায়োপসি, সিটিস্ক্যান, বেরিয়াম মিল এক্সরে, লিভার, এনজাইম। উদ্দেশ্য হল, শুরম্নতেই রোগ নির্ণয় করা ও চিকিৎসা দেয়া। যদি শুরম্নতেই রোগ নির্ণয় করা যায় তবে রোগীর আয়ু দীর্ঘায়িত হবে। এন্ডোসকপি, বায়োপসি এখন প্রায়ই মেডিকেল কলেজগুলোতে চালু হয়েছে যা রোগ নির্ণয়ের ড়্গেত্রে বিশেষভাবে সহায়ক। গ্যাস্ট্রিক মনে করে দীর্ঘদিন ঔষধ খাচ্ছেন। নিজ ইচ্ছায় ঔষধের দোকানে গিয়ে ওমেপ্রাজম খাচ্ছেন আর তা কিছুটা হলেও উপসম করছে। এতে অধিকাংশ ড়্গেত্রে রোগ আলসার বা এসিটিটি থেকে ক্যান্সারে রূপ নিচ্ছে। তাই সন্দেহ হওয়া মাত্রই চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হবেন। চিকিৎসক প্রয়োজন বোধে আপনার এন্ডোসকপি করাবেন এবং দুশ্চিন্তôামুক্ত করাবেন।
চিকিৎসাঃ
নানা সফল চিকিৎসা শুরম্ন হয়েছে। তবে সার্জারী একমাত্র চিকিৎসা। এ ছাড়া রয়েছে রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি। সার্জারীর সাহায্যে পাকস্থলীর আংশিক বা পূর্ণ অংশ কেটে ফেলা হয়। যার নাম র্যাডিক্যাল গ্রাস্ট্রেকটমী। এর সঙ্গে পাকস্থলীর পাশের অংশ যথা লিমফ গ্রন্থি, পেরিটোরিয়াম কেটে ফেলা হয়। এর দ্বারা র্যাডিক্যাল সার্জারী সম্ভব।
এরপর কেমোথেরাপি দিলে শরীরের যদি কোথাও ক্যান্সার কোষ থাকে তা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ক্যান্সারের বিস্তôৃতি নির্মূল হয়ে যায় মানুষের আয়ু বাড়ে।
আজকে একটি কেস নিয়ে আলোচন করব। নাম সৈয়দ আলী আসরাফ। বয়স ৬৮ বছর। বাসা ঢাকা কলাবাগানে। দেখলে মনে হবে বয়স্ককালে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে যথেষ্ট স্বাস্থ্যহানি ঘটেছে।
পেটে ব্যথা ও খাওয়ার প্রতি অরম্নচি দিয়েই অসুখের যাত্রা শুরম্ন। প্রথম প্রথম ভেবেছিলেন এ আর এমন কি? সামান্যতেই ভাল হয়ে যাবে। নিজে ঔষধের দোকানে যেয়ে গ্যাষ্ট্রিকের বড়ি খাওয়া শুরম্ন করলেন। ঔষধ প্রথম দিকে খেয়ে ৭-৮ দিন ভাল থাকতেন। এভাবে প্রায়ই তিন মাস চলল। গ্যাষ্ট্রিকের বড়ি খেলে এখন আর ধরে না। মনে বেশ ভয় পেয়ে গেলেন। মাঝে মাঝে বমি হওয়া শুরম্ন হয়েছে। পেটের ব্যথাও বেশ বেড়েছে। একবার খেলে সারাদিন খেতে আর মন চায়না। সারাদিন পেট ভরা ভরা থাকে। শরীরের ওজন কমাতে শুরম্ন করেছে। পায়খানা কষা। কখনো কখনো ২/৩ দিন পরপর পায়খানা হয়। এই উপসর্গসমূহ নিয়ে ভারতে চলে গেলেন। নামকরা হাসপাতাল এপোলো। সেখানে গিয়ে হাজির । তারা সকল প্রকার পরীড়্গা-নিরীড়্গা শুরম্ন করলেন। এন্ডোসকপি করালেন। এন্ডোসকপি করে দেখলেন পাকস্থলীতে বিরাট আলসার, খাবারের প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বায়েতপসি নিলেন দেখলেন ক্যান্সার।
এরপরে সেখানে আর কোন চিকিৎসা করালেন না। ফিরে এলেন দেশে, আমার চেম্বারে। আমরা সিদ্ধান্তô নিলাম দ্রম্নত সার্জারী করতে হবে। পাকস্থলীর দুই তৃতীয়াংশ বাদ দিতে হবে। সাথে লিমফ অন্যান্য অঙ্গ পতঙ্গ ফেলতে হবে। ৪/৫ ঘন্টার সার্জারী। খুবই ঝঁকিপূর্ণ অপারেশন। তবে সঠিক ভাবে করতে পারলে রোগী রোগ মুক্ত হবে। আমরা সফল সার্জারী করলাআট দিনের মাথায় রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরেছে। ক্রমান্বয়ে স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে। এক সাইকেল কেমোথেরাপি দেয়ার সিদ্ধান্তô নেয়া হলো। জাপানে পাকস্থলীতে ক্যান্সারের হার খুবই বেশী। সেখানে তারা উন্নত পদ্ধতিতে সার্জারী করে। র্যাডিকেল সার্জারীই এদের মূল লড়্গ্য। এতে রোগী অনেক দিন বেঁচে থাকে। জাপানে প্রশিড়্গণ গ্রহণকালে তাদের আধুনিক পদ্ধতি রপ্ত করেছি। যা বিশ্বের সেরা পদ্ধতি হিসাবে খ্যাত।
প্রফেসর ডাঃ মোঃ সহিদুর রহমান
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
বি·এস·এম·এম· ইউ।
লিভার, গ্যাষ্ট্রিক, জেনারেল হাসপাতাল ও রির্সাচ ইন্সস্টিটিউট।
বাড়ি নং-১০০/১, রোড নং-১১/এ, ধানমণ্ডি আ/এ, সাতমসজিদ রোড।
(ষ্টার কাবাবের বিপরীতে) ঢাকা-১২০