Wednesday, June 11, 2008

Hair (চুল)

সুন্দর চুলের জন্য
ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড, বাড়ি-১৬, রোড-১৫ (নতুন), ২৮ (পুরাতন), ধানমন্ডি আবাসকি এলাকা, ঢাকা। মোবাইলঃ ০১১৯৯০৪১৬১৬, ০১৯১১৫৬৬৮৪২

চুল কেরাটিন নামের একরকম প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়। চুলে ৯৭ ভাগ প্রোটিন ও ৩ ভাগ পানি রয়েছে। চুলের যেটুকু আমরা দেখি সেটি মৃত কোষ। কারণ এতে অনুভূতিশীল কোনো কোষ নেই। একজন সুস্থ মানুষের মাথায় গড়ে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ চুল থাকে। প্রতিদিন ১০০টি পর্যন্ত চুল ঝড়ে পড়া স্বাভাবিক। এর থেকে বেশি চুল পড়লে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালে চুল দ্রুত বড় হয় কিন্তু শীতকালে কম বড় হয়। একটি চুলের গড় আয়ু দুই-আট বছর। সুতরাং চুল কিছু না কিছু প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবেই ঝড়ে যায়।
চুলের কিউটিকন নষ্ট হয়ে গিয়ে চুলের কটেক্সের আঁশগুলো খুলে গেলে চুলের আগা ফেটে যায়। এতে চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে ওঠে। মাথার তালুর সঠিক মাত্রায় রক্ত সঞ্চালনের জন্য চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ দরকার। নানারকম শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও সঠিক পরিচর্যার অভাবে চুলের স্বাস্থ্যও খারাপ হতে পারে। আপনার সুস্থতা প্রকাশ পায় আপনার শারীরিক স্বাস্থ্য এবং চুলের স্বাস্থ্যের ভেতর দিয়ে। তাই সঠিক ডায়েট, প্রচুর ফলমূল, সঠিক পরিমাণে পানি পান করা, পর্যাপ্ত ব্যায়াম ও চিন্তামুক্ত ঘুম প্রয়োজন। এসব নিয়ম মেনে চললে চুলের সমস্যা সমাধান হওয়া উচিত। তবে খুশকি ও অন্যান্য সমস্যা যেমন চুল পড়া ও চুলের ডগা ফেটে যাওয়া রোধ করতে প্রয়োজন চুল ও তালু পরীক্ষা করা ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা।
চুলের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা প্রয়োজন। অনেক শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণ চুল পড়া। তাই অবহেলা না করে এর সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। চুল খুব হালকা বা টাক হওয়ার আগেই চুল পড়া প্রতিরোধ করুন। সচেতন হোন।
চুল অতিরিক্ত পার্ম করা, অপর্যাপ্ত কন্ডিশনিং কিংবা অতিরিক্ত ব্রাশিংয়ের কারণে চুল ফেটে যেতে পারে। এ ছাড়া নিুমানের চিরুনি বা ব্রাশ ব্যবহার এবং সঠিকভাবে চুল না আচড়ানোর জন্যও এই সমস্যায় পড়তে পারেন। এ ছাড়া চুল শুকাতে যেয়েও হেয়ার ড্রায়ারের কারণে চুলের আগা ফাটতে পারে।
খুশকির কারণেও চুল শুষ্ক হয়ে ওঠে এবং চুলের আগা ফেটে যায়। চুলের আগা ফেটে গেলে খুবই অস্বাস্থ্যকর দেখায় এবং চুল বড় হয় না। এ ক্ষেত্রে খুশকির সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন।
কিছু ব্যক্তিগত কারণ যেমন হরমোনের তারতম্য, খারাপ স্বাস্থ্য, বিশ্রামের অভাব ইত্যাদির প্রভাবও চুলের ওপর পড়তে পারে। টেনশন, মানসিক যন্ত্রণা ঘুম না হওয়া বা কম হওয়া ইত্যাদির কারণেও চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে।
এ ছাড়া হেয়ার স্প্রে, জেল, মুজ ইত্যাদির অতি ব্যবহার এবং কৃত্রিম রঙ চুলের ক্ষতি করে।


স্বাস্থ্যসম্মত চুলের যত্ন

ডা. ওয়ানাইজা

এক-একজনের চুল এক-এক ধরনের। চুলের ধরন বুঝে যত্ন নিতে হয়।
তৈলাক্ত চুলের যত্নঃ তৈলাক্ত চুল নানা কারণে হতে পারে।
জন্মগত বা বংশগত কারণে। ঢ় অতিমাত্রায় হরমোনের কারণে।
খুব বেশি চুল আঁচড়ানোর ফলে সেবাশিয়াস গ্রন্থি সক্রিয় হয়ে উঠলে।
চুল খুব কম পরিষ্কার করলে।
যত্ন
ব্রাশের বদলে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াবেন। ঢ় তৈলাক্ত চুলের জন্য উপযোগী শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোবেন ও কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।
চুল ধোয়ার সময় শেষবার লেবুর রস মিশ্রিত পানি দিয়ে চুল ধোবেন।
মাথায় স্কার্ফ ব্যবহার প্রয়োজন না হলে করবেন না।
সুষম খাদ্য গ্রহণে সচেষ্ট হবেন।
মিশ্র চুলের যত্ন
কিছু চুল আছে যার গোড়ায় তেলতেলে কিন্তু চুলের আগা রুক্ষ।
রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে চুলের স্টাইল যেমন পার্মিং ইত্যাদি করতে গিয়ে এমনটা হতে পারে।
যত্নঃ ঢ় তৈলাক্ত চুলের মত ব্রাশের বদলে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান।
শুষ্ক ও তৈলাক্ত দুই ধরনের শ্যাম্পু এক দিন অন্তর অন্তর ব্যবহার করবেন। ঢ় শুধু চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।
রাসায়নিকদ্রব্য চুলে ব্যবহার করবেন না।
স্বাভাবিক চুলের যত্ন
স্বাভাবিক চুল খুবই ভাগ্যের ব্যাপার।
বংশগত কারণে চুল স্বাভাবিক সুন্দর হতে পারে।
চুলের সঠিক যত্নের কারণেও চুল স্বাভাবিক থাকে।
নির্দিষ্ট সময় পরপর চুলের আগা কাটতে হবে।
সঠিক কন্ডিশনার ও শ্যাম্পু ব্যবহার প্রয়োজন।
রাসায়নিক উপাদান পরিহার করতে হবে।
সপ্তাহে এক দিন ম্যাসাজ করা ভালো।
চুল খুব টেনে বাঁধবেন না, দিনে দু থেকে তিনবার চুল আঁচড়াবেন।
ভেজা চুল কখনো বাঁধবেন না।
চুলে শ্যাম্পু করাঃ চুলের যত্নে চুল পরিষ্কার রাখার জন্য শ্যাম্পু অপরিহার্য উপাদান। হিন্দি শব্দ চ্যাম্পু থেকে শ্যাম্পু এসেছে। এর অর্থ মালিশ বা ম্যাসাজ। এর মানে বোঝা যায় শ্যাম্পু করার সময় আপনার মাথা ম্যাসাজ বা ঘষতে হবে।
চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু বেছে নিতে হবে। তৈলাক্ত চুলে যেমন প্রায় প্রতিদিন শ্যাম্পু করা প্রয়োজন আবার শুষ্ক চুলে তা নয়। হেয়ার স্টাইল, জীবনযাত্রার মান, পরিবেশ দূষণ, আবহাওয়া এগুলোর ওপরে নির্ভর করে আপনি সপ্তাহে কতবার শ্যাম্পু করবেন।
তৈলাক্ত চুল, প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম, দূষণ, প্রতিদিন বাইরে যাওয়া এমনটা যদি হয় আপনার জীবনযাত্রা তবে প্রতিদিন শ্যাম্পু করতে হবে। কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে সপ্তাহে দু’দিন শ্যাম্পু ব্যবহার যথেষ্ট। চুলে ময়লা ভাব, মাথা চুলকাচ্ছে এমন হলে সাথে সাথে শ্যাম্পু করবেন। প্রতিদিন প্রয়োজনে শ্যাম্পু করলে চুল পড়ে এটা ভুল ধারণা। তবে অপ্রয়োজনে শ্যাম্পু করলে চুল শুষ্ক হয়ে ওঠে ও চুল ভেঙে যায়।
এছাড়া সূর্যতাপ, লবণ পানি, ক্লোরিনযুক্ত পানি চুলের ক্ষতি করে। এরকম হলে যথাযথ শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুলের লবণ ভাব, ক্লোরিন ইত্যাদি দূর করতে হবে।
শ্যাম্পু করার পদ্ধতিঃ ঢ় হালকা গরম পানিতে সম্পূর্ণ চুল ভিজিয়ে নিন।
হাতে শ্যাম্পু ঢেলে নিন এবং দু’হাতে ঘষে নিয়ে তারপর পুরো মাথায় লাগান। ঢ় আঙুলের ডগা দিয়ে ম্যাসাজ করে শ্যাম্পু লাগান।
প্রয়োজনে চুল লম্বা হলে আবার শ্যাম্পু নিয়ে হাতে ঘষে তারপর চুলে লাগান। ঢ় এভাবে কিছুক্ষণ হালকাভাবে ঘষার পরে চুল প্রচুর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ঢ় প্রয়োজনে পুনরায় শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন।
চুল পরিষ্কার হয়েছে কি না, তৈলাক্ত ভাব কেটেছে কি না, আপনি হাত দিয়েই তা বুঝবেন।
শ্যাম্পু পরিষ্কার করার জন্য প্রচুর পানি দিয়ে ধোবেন যাতে শ্যাম্পুর অবশিষ্ট অংশ চুলে লেগে না থাকে।
শ্যাম্পু করার পর চুল খুব বেশি ঘষাঘষি না করে নরম তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে রাখবেন।
মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে হালকাভবে চুল আঁচড়ে রাখবেন। ব্রাশ ব্যবহার করবেন না।
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা। ফোনঃ ৯১১৮৯০৭, ০১৯১১৫৬৬৮৪২

সন্তান জন্মের পর মায়ের চুল পড়া ও প্রতিকার

ডা. ওয়ানাইজা

সাধারণত সন্তান জন্মদানের পরে মায়েদের প্রচুর চুল পড়ে।
কেন এ সময় চুল ওঠে?
গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের মাত্রা থাকে অনেক বেশি। ডিম্বাশয় প্লাসেন্টা এগুলো থেকে অনেক হরমোন বের হয়। সন্তানের জন্মের পর এ হরমোনের মাত্রা একেবারে হঠাৎ করে কমে যায়, তার ফলস্বরূপ চুল ওঠে।
ব্রেস্টফিডিংয়ের সাথে চুল ওঠার সম্পর্ক আছে কি?
ব্রেস্টফিডিংয়ের সাথে চুল ওঠার কোনো সম্পর্ক নেই। ব্রেস্টফিডিং মা ও শিশুর মধ্যে এক সুন্দর মেলবন্ধন ঘটায়, ফলে মায়ের মনে থাকে এক প্রশান্তি, তাতে চুলের স্বাস্থ্য ভালো হওয়ারই কথা।
নরমাল ডেলিভারি ও সিজারিয়ান কোনটিতে বেশি চুল পড়ার আশঙ্কা থাকে?
নরমাল ডেলিভারি একটি স্বাভাবিক ঘটনা, তাই হরমোনের মাত্রা কমে স্বাভাবিকভাবে আর সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনের পর হরমোনের মাত্রা হঠাৎ করে কমে যায়। তাই সিজারের পর চুল পড়ার সম্ভাবনা বেশি।
মায়ের অনিদ্রা কি চুল পড়ার কারণ?
অবশ্যই। শিশুকে ফিডিং করাতে রাতে বারবার মাকে উঠতে হয়, সারা দিনেও শিশু সামলাতে মা হিমশিম খায়, নিজের দিকে খেয়ালই নেই, আমাদের দেশের বেশিরভাগ পরিবারেই সদ্যপ্রসূতির তেমন যত্ন ও খাওয়াদাওয়া হয় না।
এ চুল গজাবার কোনো ওষুধ আছে কি?
ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসক মাথায় স্টেরয়েড ড্রপ ম্যাসাজ করতে বলেন। তাতে খানিকটা কাজ হয়। তা ছাড়া মাথায় ভালোভাবে ম্যাসাজের জন্য রক্তসঞ্চালন বাড়ে­ তাতে চুল হয়।
সন্তান হওয়ার কত দিন পর পর্যন্ত চুল পড়ে?
সাধারণত দুই থেকে তিন মাস। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া যত্ন পেলে এই চুল আবার স্বাভাবিকভাবে গজিয়ে যায়।
চুলের জন্য এ সময় কী কী বিশেষ যত্নের দরকার?
সন্তান পেটে থাকাকালীন এই যত্ন শুরু হওয়া দরকার। গর্ভাবস্থা ও বুকের দুধ খাওয়ানো­ এ দুই অবস্থাতেই মেয়েদের স্বাভাবিক প্রয়োজনীয় ক্যালরির ওপরে আরো ৩০০ থেকে ৫০০ ক্যালরি অতিরিক্ত প্রয়োজন হয়। তাই প্রোটিন, কার্বনাইড্রেট, ফ্যাট সবই ঠিকমতো খেতে হবে। একবারে না পারলে বারে বারে অল্প অল্প করে খাওয়া দরকার। ফল, দুধ খেতে হবে পর্যাপ্ত। আমাদের দেশে সন্তান হওয়ার পর দুধসাবু খাওয়ার যে প্রথা প্রচলিত আছে তা ক্যালরির জোগান দেয়।
খুব বেশি তেলমসলা দেয়া খাবার বা অতিরিক্ত ভাজাভুজিও না খাওয়াই যুক্তিযুক্ত।
অ্যানিমিয়া একটি বড় সমস্যা। আমাদের দেশের ৮০ শতাংশ মায়ের হিমোগ্লোবিন ১০ গ্রাম শতাংশের নিচে। এর চিকিৎসা অবশ্যই ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী করতে হবে। চিকিৎসা মানে ইচ্ছেমতো আয়রন বড়ি বা ক্যাপসুল খাওয়া নয়। কোন ওষুধ কার ক্ষেত্রে কার্যকর তা একমাত্র চিকিৎসই বলতে পারবেন।
এ ছাড়া দেয়া হয় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট।
দুপুরের দিকে শিশুকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে যদি বাড়ির অন্য কোনো আত্মীয়া বা পরিচারিকার কাছে রেখে মা নিজে অন্তত দু-তিন ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়। দরকার হলে এই সময় শিশুকে খাওয়ানোর জন্য ব্রেস্টমিল্ক বার করে সঞ্চয় করে রেখে দেয়া যেতে পারে।
সপ্তাহে দু’দিন ননমেডিকেটেড শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ঘষে ফেলুন। রাতে শোয়ার আগে মাথায় লাইট হেয়ার অয়েল তুলোয় ভিজিয়ে নিয়ে ম্যাসাজ করুন অন্তত পাঁচ মিনিট।
সন্তান জন্মদানের পরে মায়ের শরীর-স্বাস্থ্যের সাথে চুল ও ত্বকের পূর্ণাঙ্গ পরিচর্যা খুবই দরকার। অনেক সময় সন্তান জন্মদানের পরে মা তার স্বাভাবিক জৌলুশ হারিয়ে ফেলেন। চুলের প্রকৃত যত্ন না নেয়ার ফলে মায়ের মাথায় টাক পর্যন্ত দেখা যেতে পারে। তাই চুল পড়াকে অবহেলা না করে চিকিৎকের শরণাপন্ন হোন ও চিকিৎসা নিন।
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা। ফোনঃ ৯১১৮৯০৭, ০১৯১১৫৬৬৮৪২

চুলপড়া নানা সমস্যা

ত্বকের সাথে সাথে নিয়মিত চুলের যত্ন নেয়া জরম্নরী। দৈনিক কিছু চুল স্বাভাবিকভাবে পড়ে যায়, বদলে গজায় কিছু কিন্তু চুল পড়া ও চুল গজানোর হারের সমতা যাকে না যখন তখনই চুল পাতলা হতে শুরম্ন করে, দিনে ১০০ টা চুল পড়লে তা স্বাভাবিক। অনেক রকম ইনফেকশন, বিভিন্ন রোগ, ওষুধের ব্যবহার এবং খাদ্যের বিভিন্নতা কারণে সাধারণ চুল পড়ে যায়। তবে ৯৫ ভাগ চুল পড়ার কারণ জিনগত বা বংশগত। এই অবস্থাকে বলা হয় অ্যানড্রেজেনিক অ্যালো ও পেসিয়া এবং অ্যানড্রোজেন অর্থাৎ পুরম্নষ রেমোন এই সমস্যার জন্য দায়ী।

চুল পড়ার জন্য ডিএইচটি রেমোন দায়ী। পুুরম্নষদের চুল সামনের দিকে পড়ে টাকে পরিণত হয় এবং মহিলাদের পুরো মাথার চুলই একক ভাবে পড়ে এবং পাতলা হয়ে যায়। চুল পড়ার রাসায়নিক কারণ খুবই জটিল।

চুল পড়ার অন্যান্য কারণসমূহ

ইনফেকশনজনিত যেমনঃব্যাকটেরিয়াঃ পায়োজেনিক , টিউবারকুলসিস ,ফ্যাঙ্গাসঃ কেরিতন।

ভাইরাসঃ হারপিস ইনফেকশন।

প্রোটোজোয়ারঃ লিশমেনিয়া

শারিরীক ইনজুরিঃ কেমিক্যাল পুড়ে যাওয়া।

মাথার ত্বকের রোগ যেমন লুপার ইরায়থমেটাস

লাইকেন পস্নানাস

এছাড়া যেসর পরিবারে অ্যাজমা, থাইরয়েড রোগ, শ্বেতী, রিউমাটয়েড আথ্রাটিস, প্যারনেসিয়াস অ্যানিমিয়া রোগ আক্রান্তô সেসব পরিবারের লোকজনের এ রোগ দেখা দিতে পারে।

বিভিন্ন রকম ওষুধ যেমন প্রেসারের ওষুধ ক্যনসারের ওষুধ, জন্মনিয়ন্ত্রিন পিল ইত্যাদি , মানসিক দুঃশ্চিন্তôা

নানা উপায়ে চুলপড়া রোধ করা যায় যেমনঃ

চুুলের যত্ন প্রতি একদিন অন্তôর অন্তôর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলা দরকার, ঘন ঘন শ্যাম্পু করার ফলে চুলের গোড়ার জমে থাকা সাবান ও তৈলাক্ত পদার্থ থাকে, যাতে ডিএইচটি ধুয়ে যায়। এই ডিএইচটি চুল ঝরে পড়াকে ত্বরানিত করে থাকে। চুুলের স্বাস্থ্যের সাথে শরীর ও মনের স্বাস্থ্য এবং অনেকাংশে জড়িত। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমাণমত শাকসবজি, ফল যথেষ্ট পরিমাণে অর্থাৎ ভিটামিন ও মিনারেল সমুদ্ধ খারার গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া অতিরিক্ত ডায়েট কন্টোÝল চুল পড়ার কারণ হতে পারে। এছাড়া যে সকল ওষুধ গ্রহণের ফলে চুল ঝরে যেতে পারে সেদিকে লড়্গ্য রেখে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।

০ ডাঃ মোহাম্মদ শওকত হায়দার
চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ
এবং লেজার ও কসমেটিক সার্জন কুইনস হাসপাতাল, যশোর

মাথায় টাক সমস্যা
ডা. দিদারুল আহসান

মাথায় গোল টাক বলতে যা বোঝায় তাকে বলা হয় অলসহপধমথ অড়পথয়থ. নামটাই যেন বলে দিচ্ছে টাকটা কোন ধরনের। এলোপেসিয়া মানে আমরা অনেকেই জানি যেকোনো টাককে বলা হয় এলোপেসিয়া। বাকি রইল এরিয়েটা। এরিয়া থেকে হয়েছে এরিয়েটা অর্থাৎ একটি জায়গা বা একটি এরিয়াতে একটি বিশেষ ধরনের টাককে বলা হয়েছে এলোপেসিয়া এরিয়েটা। সাধারণভাবে টাক পড়া মাথা বললে বোঝায় এমন একটি টাক যে টাক বয়সের সাথে সাথে একটু একটু করে দেখা যায়। যার মূল কারণই হচ্ছে বংশগত। খুশকির কারণে চুল পাতলা হয়ে আস্তে আস্তে টাকের সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু এই টাক সেই টাক নয়। এ ক্ষেত্রে হঠাৎই এ টাক দেখা দিয়ে থাকে এবং মাথায় একটি অথবা কয়েকটি অংশে বা জায়গায় চুল না থাকলে মাথার অন্য সব স্থানের চুলই একদম স্বাভাবিক থাকবে।
অনেক ক্ষেত্রেই রাতে হয়তো একদম স্বাভাবিক থাকবে। হয়তো ভালোভাবে ঘুমিয়েছিল সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে চুল আঁচড়াতে গিয়ে লক্ষ্য করল যে, তার মাথায় একটি স্থানের চুল নেই অথবা সে হয়তো খেয়ালই করেনি। হঠাৎ একজন বলে উঠল, কী রে, তোর মাথার চুলের কী হলো? কিংবা হয়তো কেউ কেউ মন্তব্য করল নিশ্চয়ই মাথার চুল ঘুমের মধ্যে ইঁদুরে কেটেছে কিংবা কেউ বলবেন, না না ইঁদুর নয়, খেয়েছে তেলাপোকায়। আসলে কিছুতেই খায়নি এ চুল। এ চুল পড়ে গেছে। এ চুল ঝরে গেছে। ঝরে যাওয়া চুল বাতাসের সাথে দূরে কোথাও উড়ে গেছে। এ হচ্ছে এ টাকের বিশেষত্ব। তবে এই টাক যে শুধু মাথায় হবে তা কিন্তু নয়। এ ধরনের টাক হতে পারে মাথায়, হতে পারে দাড়ি ও গোঁফে কিংবা ভ্রূতে। প্রথম দিকে এ টাক একটি বা দু’টিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও কিছু দিনের মধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গায় এমনটি হয়ে থাকতে পারে। আবার একাধিক জায়গায় নাও হতে পারে। এ ধরনের চুল পড়ার একটি বিশেষত্ব হচ্ছে যে, আক্রান্ত স্থানে চুলের কোনো গোড়া খুঁজে পাওয়া যায় না। চকচকে পিচ্ছিল মনে হবে স্থানটি, তবে কখনোও কখনো দু-একটি চুল বা চুলের গোড়া বিদ্যমান থাকতেও পারে এবং আক্রান্ত স্থানের ত্বক দেখলে মনে হতে পারে যেন স্থানটির ত্বক একটু দেবে গেছে। আবার এ রকম দেখা নাও যেতে পারে।
কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে এ টাক ক্রমান্বয়ে বেড়ে যেতে পারে। একের পর এক এ ধরনের টাক পড়তে পড়তে পুরো মাথাটাই টাক হয়ে যেতে পারে অর্থাৎ মাথার সব চুলই পড়ে যাবে। এ অবস্থায় টাককে বলা হয় এলোপেসিয়া টোটালিস। অর্থাৎ টোটাল মাথাটিই একটি টাকযুক্ত মাথা। এর থেকেও ক্রমান্বয়ে বিস্তার ঘটতে ঘটতে পুরো দেহের চুলগুলোই পড়ে যেতে পারে। আর যদি এমনটি হয় তবে সেই অবস্থাকে বলা হয় এলোপেসিয়া এরিয়েটা।
এলোপেসিয়া এরিয়েটা হওয়ার কারণ কিন্তু এখনো অজ্ঞাত। কিছু কিছু কারণের উল্লেখ থাকলেও তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। কেউ কেউ মনে করেন, এ রোগ বুঝি কোনো জীবাণুর আক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। আসলে এ ধারণা একেবারেই সঠিক নয়। তবে বংশগত একটা ব্যাপার এ ক্ষেত্রে থাকতে পারে। মানসিক চাপও একটি কারণ হিসেবে ধরা যেতে পারে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ধরনের টাক আপনা আপনি সেরে যায় বা চুল গজায়। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই যদি এ ধরনের টাক হয় দেখা যায় তবে ভালো হওয়ার বা আপনা থেকে চুল গজানোর সম্ভাবনা বেশ কম থাকে। যদি খুব বড় একটি স্থান জুড়ে এই টাক হয় কিংবা এ ধরনের সমস্যা যদি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে হয়ে থাকে তবে সে ক্ষেত্রেও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
মাথার ছত্রাক থেকেও টাক হতে পারে। তবে সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রেই মাথার ফাংগাস বা ছত্রাক হয়। সিফিলিস থেকেও এ ধরনের টাক হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় লুপাস এরিথেমাটোসিস থেকেও এ রকম টাক হতে দেখা যায়। আবার কেউ কেউ নিজের অজ্ঞাতসারে চুল টেনে টেনে তুলে ফেলে এ রকম টাক সৃষ্টি করতে পারেন বা করে থাকেন। কাজেই এর সবগুলোই মাথায় রেখে এ রোগ বা টাকের ডায়াগনোসিস নিশ্চিত করতে হবে।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই টাক আপনা আপনি ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে সব ক্ষেত্রে এমনটি নাও হতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে তার বিপরীতও হতে পারে। যেমন আকারে বাড়তে পারে কিংবা নতুন করে বিভিন্ন স্থানে দেখা দিতে পারে। তাই অবহেলা না করে বরং যত দ্রুত সম্ভব একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
লেখকঃ চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আলরাজি হাসপাতাল লিমিটেড ১২, ফার্মগেট, ঢাকা।
মোবাইল-০১৮১৯২১৮৩৭৮


স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য

ডা. ওয়ানাইজা
চুল নিয়ে আজকাল অনেকেরই ভাবনার অন্ত নেই। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর চুল সবারই কাম্য। আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত সমান ভারী চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল বলা যায়। এ ছাড়া চকচকে কালো চুল ও মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকতে হবে।
ষ স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্য। সঠিক পরিমাণে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে প্রচুর শাকসবজি, ফল ও সালাদ। খনিজ পদার্থ ও ভিটামিনের অভাবে চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়, চুল ঝরে পড়ে।
ষ সঠিক পরিমাণে পানি পান করলে শরীর থেকে বর্জø পদার্থ বেরিয়ে যায়।
ষ নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
ষ মাথার ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার রাখাও প্রয়োজন।
প্রোটিন এবং আপনার চুল
প্রোটিনের অভাবে চুলের রঙ প্রথমে নষ্ট হয়ে যায়। চুল লালচে বাদামি হতে থাকে। পরে চুল ঝরে যায় এবং চুলের আগা ফাটতে থাকে। কেরাটিনের অভাবে চুল ফেটে যায়। খাদ্য তালিকায় মাছ, গোশত, ডিম, দুধ, ডাল, দই, পনির ইত্যাদি থাকা জরুরি। এতে কেরাটিন তৈরিতে সহায়তা হয়।
ভিটামিন এবং আপনার চুল
ভিটামিন ‘এ’র অভাবে চুল রুক্ষ ও প্রাণহীন হয়ে ওঠে। আবার অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’র জন্য চুল ঝরে পড়তে পারে। অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’র জন্য অল্প অল্প করে চুল জায়গায় জায়গায় উঠে গিয়ে টাক পড়ে যায়। খাদ্য তালিকায় দুধ, গাজর, মুলা, সবুজ শাকসবজি থাকা প্রয়োজন। ভিটামিন ‘সি’র অভাবে চুল খসখসে শুষ্ক হয়ে ওঠে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় তাই লেবুজাতীয় ফল, কমলালেবু, মোসম্বী ইত্যাদি থাকা প্রয়োজন।
ভিটামিন ‘বি’ চুলকে চকচকে ও ঘন করে তোলে। শস্যদানা, দুধ, ডিম, কলা, বাদাম, কলিজা ও ডালে রয়েছে ভিটামিন ‘বি’। প্রতিদিন ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হবে এবং চুল ঝরবে না।
স্নেহপদার্থ এবং আপনার চুল
চুল তৈলাক্ত হলে প্রাণীজ চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করুন। উদ্ভিজ্জ তেল খেতে পারেন। সম্পৃক্ত চর্বি গরু, খাসির গোশত কম খাবেন। দুধ বা ননী তোলা দুধ, পনির ও দই খেতে পারেন।
স্বাস্থ্যহীন চুলের কারণ
ষ সুষম খাবার না খাওয়া স্বাস্থ্যহীন চুলের প্রধান কারণ। খাদ্য তালিকা সঠিক না হওয়ার কারণে চুল ঝরে পড়তে পারে। এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খাওয়া ও ভিটামিন গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ষ দীর্ঘ সময় হেলমেট, টুপি ইত্যাদি পরে থাকা,
ষ চুলে নানা কেমিক্যাল ডাই ব্যবহার করা,
ষ সঠিকভাবে চুল পরিষ্কার না করা,
ষ খুশকি ও অন্যান্য রোগ,
ষ অতিরিক্ত রোদে বের হওয়া এবং চুল ভেজা থাকা,
ষ শারীরিক অসুখ-বিসুখ, মানসিক চাপ,
ষ ঘুম না হওয়া এবং হরমোনের তারতম্যজনিত কারণ,
চুল স্বাস্থ্যহীন হয়ে পড়লে এবং চুল ঝরে পড়লে এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। সুষম আহার, চুলের সঠিক পরিচর্যা এবং প্রয়োজনে কিছু ওষুধের ব্যবহারে চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।
চেম্বারঃ যুবক মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড, বাড়ি-১৬, রোড-১৫ (নতুন), ২৮ (পুরাতন), ধানমন্ডি আবাসকি এলাকা, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১১৯৯০৪১৬১৬

পুরুষের চুল পড়া সমস্যা

ডা. ওয়ানাইজা
চুলপড়া একটি স্পর্শকাতর সমস্যা। ছেলেদের চুল পড়ে যাওয়া বা টাক সমস্যা নিয়ে অনেকেই বিব্রত বা বিরক্ত। চুলপড়ার কারণ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে বা হচ্ছে। চিকিৎসাশাস্ত্রে বলা হয়, চুলপড়ার কারণ বংশগত বা হরমোনজনিত। ছেলেদের চুলপড়া বা এনড্রোজেনিক এলোপিসিয়ার মূল কারণ ডাইহাইড্রক্সি টেস্টোসটেরন বা ডিএইচটি। ডিএইচটি একটি পুরুষ হরমোন। পুরুষ হরমোন টেস্টোসটেরন থেকে আলফারিজাকটেজ এনজাইমের সাহায্যে তৈরি হয় ডিএইচটি। ডিএইচটি চুলের ফলিকলের গোড়ায় গিয়ে তাদের বৃদ্ধি রোধ করে এবং রক্ত সঞ্চালন কমিয়ে দেয়। এভাবেই চুল পড়তে শুরু করে। সুতরাং ডিএইচটি বেড়ে গেলে চুল পড়তে শুরু করে এবং একপর্যায়ে টাকের সৃষ্টি হয়।
চুল বৃদ্ধি বা গজানোর জন্য একটি চক্র বা চুলের জীবনচক্র রয়েছে। এই চক্রের তিনটি পর্যায় রয়েছে। বৃদ্ধির সময়কে বলে এনাজেন। এনাজেন ২ থেকে ৬ বছর স্থায়ী হয়। মাথার ৯০ শতাংশ চুল এনাজেন বা বৃদ্ধি হতে থাকে। দ্বিতীয় পর্যায় ক্যাটাজেন। এটি একটি অস্থায়ী পর্যায়। এটি কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয়। সর্বশেষ পর্যায় টেলোজেন। টেলোজেন ২ থেকে ৪ মাস স্থায়ী হয়। এ সময় কিছু চুল পড়ে যায় এবং ওইসব ফসিকল থেকে নতুন চুল গজায়। টেলোজেন পর্যায় দীর্ঘতর হলে চুল বেশি পড়ে যায়। এ ছাড়া চুলের ফসিকল শুকিয়ে গেলে নতুন চুল নাও গজাতে পারে।
ডিএইচটিকে বাধা দেয় এমন ওষুধ ব্যবহারে চুলপড়া রোধ করা যেতে পারে। শরীরের ডিএইচটির মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হলে চুল পড়া কমবে। বর্তমানে এ ধরনের ওষুধ ব্যবহারে চুল পড়ার চিকিৎসা চলছে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এসব ওষুধ ব্যবহার করা উচিত।
নারীদের চুলপড়া
নারীদের চুলপড়া একটি অস্বস্তিকর সমস্যা। পুরুষের যেভাবে টাক পড়ে সেভাবে চুল না ঝরে পড়লেও নারীদের চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। আমাদের সমাজে সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল না হলে নারীদের সুন্দরী বা সুশ্রী বলা মুশকিল। অল্প বয়সে চুল না ঝরে পড়লেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুল পড়ে যাওয়ার সম্মুখীন হন নারীরা। নানা কারণে মেয়েদের চুল পড়তে পারে।
হরমোন
হরমোনের তারতম্যের কারণে চুলপড়া একটি প্রধান সমস্যা। থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যের কারণে চুল পড়ে। এ ছাড়া ইস্ট্রোজেনের কারণেও চুল পড়তে পারে। তবে হরমোনজনিত সমস্যার চিকিৎসা করালে চুলপড়া বন্ধ হয়।
সন্তান জন্মদান
সন্তান জন্মদানের পরবর্তী ৩ মাস নারীদের প্রচুর চুল পড়তে পারে। এটিও হরমোনের কারণেই হয়ে থাকে। প্রাকৃতিকভাবেই হরমোন সঠিক মাত্রায় চলে আসার পর চুলপড়া বন্ধ হয়ে যায়। তবে খুব বেশি চুল পড়ে পাতলা হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
রজঃ নিবৃত্তি
মাসিক বন্ধ হওয়ার পর মহিলারা চুলের সমস্যা নিয়ে বেশি ভোগেন। এ সময় ৩৭ শতাংশ মহিলার চুল বেশিমাত্রায় ঝরে পড়ে। এ ছাড়া হরমোন থেরাপি নেয়ার কারণেও চুল পড়তে পারে।
নানা ধরনের অসুস্থতা বা অসুস্থতার পরও চুল ঝরে পড়া সমস্যা হতে পারে। তবে যে কারণেই চুল ঝরে পড়ুক তার চিকিৎসা করা প্রয়োজন। কেননা এতে সৌন্দর্যহানি ঘটে, যা খুবই বিরক্তিকর। মহিলাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় চুলের নানা ফ্যাশন যেমনন্ধ রিবন্ডিং, স্টেইট, পার্ম, ডাই, ব্লোয়ার ড্রাই ইত্যাদি করার কারণে চুল ঝরে পড়তে পারে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া অনেকে নিজে থেকে ওজন কমানোর জন্য কম খান কিংবা পুষ্টিকর খাবার খান না। এতে করেও চুলের ক্ষতি হয়। ওজন কমাতে নিজে নিজে খাওয়া বন্ধ না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চুলপড়া শুরু হলে অবশ্যই এর কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

চেম্বারঃ যুবক মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড, বাড়ি-১৬, রোড-১৫ (নতুন), ২৮ (পুরাতন), ধানমন্ডি আবাসকি এলাকা, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৯১১৫৬৬৮৪২


ছেলে ও মেয়েদের চুল পড়া
ডা. ওয়ানাইজা

মেয়েদের চুল পড়ে যাওয়াকে ডাক্তারি ভাষায় অ্যানড্রোজেনেটিক অ্যালোপিসিয়া বলে। মেয়েদের মাথার উপরিভাগের চুল ও দু’পাশের চুল পাতলা হয়ে যায়। এক-তৃতীয়াংশ মহিলার এই সমস্যা হয়। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২৫টি চুল পড়ে স্বাভাবিকভাবেই। চুল পড়ে যাওয়া তখনই সমস্যা যখন দিনে ১২৫টির বেশি চুল পড়ে এবং সেই চুল গজায় না। পরিবারে চুল পড়ার সমস্যা থাকলে চুল পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।
চুল পড়ে যাওয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। অ্যানাজেন ইফফ্লুভিয়াম ও টেলোজেন ইফফ্লুভিয়াম। নানারকম ওষুধ ও কেমোথেরাপির জন্য যখন চুল পড়ে তাকে অ্যানাজেন ইফফ্লুভিয়াম বলে। আর চুলের ফলিকল যখন রেস্টিং স্টেজে যায় তখন তাকে টেলোজেন ইফফ্লুভিয়াম বলে। চুলের ফলিকল রেস্টিং স্টেজে যাওয়া মানে চুল আর বড় না হওয়া এবং এক সময় চুল ঝরে যাওয়া। এর কারণন্ধ
শারীরিক অসুস্থতান্ধ যেকোনো অপারেশনের পর, রক্তস্বল্পতা, ওজন কমে যাওয়া, হজমের সমস্যা।
মানসিক চাপন্ধ অতি কর্মব্যস্ততা, পরিবারের কারো মৃত্যু।
থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা
ডায়াবেটিস পলিসিস্‌টিক ওভারি।
মূত্রনালীর প্রদাহ।
গর্ভাবস্থা, পরিবার পরিকল্পনার জন্য পিল খাওয়া।
মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
অতি মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণ।
ডায়েটিং এবং চুল পড়া
আপনারা ডায়েটিং এবং চুল পড়ার সম্পর্ক লক্ষ্য করেছেন, ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত ডায়েটিং অনেক সময় চুল পড়ার কারণ। অবশ্যই ডায়েটিসিয়ান, নিউট্রশনিস্ট কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার তালিকা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট ডায়েটের সাথে ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট খাওয়া প্রয়োজন। আবার অতিরিক্ত ভিটামিন এ গ্রহণে চুল পড়ে। সুতরাং ডায়েট করলে বা ওজন কমাতে চাইলে নিজের মনমতো তা না করে ডায়েটিশিয়ান, নিউট্রশনিস্ট, চিকিৎসক ও ত্বক বিশেষজ্ঞের মতামত নেবেন।
শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ ও চুল পড়া
শারীরিক অসুস্থতা, অপারেশন হওয়া ও মানসিক চাপ চুল পড়ার অন্যতম কারণ। এ সময় নতুন চুল গজায় না এবং চুল বাড়ে না। শরীর সারাতে ব্যস্ত থাকে সব শক্তি এবং অনাদরে পড়ে যায় চুল। এসব ক্ষেত্রে চুল পড়তে থাকে তিন মাস এবং আবার চুল গজাতে সময় লাগে তিন মাস। অর্থাৎ ছয় মাস সময় লাগে চুল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে। তবে শারীরিক ও মানসিক চাপ খুব বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চুল পড়তে পারে। রক্তস্বল্পতা এবং থাইরয়েডের সমস্যায় চুল পড়ে। সুতরাং খুব বেশি চুল পড়লে রক্ত পরীক্ষা করা এবং রোগ নির্ণয় করা প্রয়োজন।
হরমোনের পরিবর্তন ও চুল পড়া
হরমোনের পরিবর্তনের সাথে মহিলাদের চুল পড়ার সম্পর্ক আছে। গর্ভাবস্থায় কিংবা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া বন্ধ করলে চুল পড়তে পারে। হরমোনের পরিবর্তনের তিন মাসের মধ্যে এই পরিবর্তন লক্ষ্য করা সম্ভব। আবার সঠিক যত্নে তিন মাসের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। রজঃনিবৃত্তি বা মাসিক বন্ধ হওয়ার পরও মহিলাদের চুল পড়ে।
চুল পড়া নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা
বেশি শ্যাম্পু করলে চুল পড়ে।
টুপি পড়লে বা মাথায় কাপড় দিলে চুল পড়ে।
প্রতিদিন ১০০ বার চুলে চিরুনি চালানো প্রয়োজন।
মাথা ন্যাড়া বারবার করলে ঘন চুল ওঠে।
খুশকি চুলের স্থায়ী ক্ষতি করে।
তেল না ব্যবহার করলে চুল পড়ে।
মানসিক চাপ চুলের স্থায়ী ক্ষতি করে।
অল্প বয়সে চুল পড়ে না।
জ্ঞানীদের চুল পড়ে যায়।
চুল পড়া নিয়ে এসব ধারণা রোগীদের কাছ থেকে হরহামেশাই শুনে থাকেন ত্বকবিশেষজ্ঞরা অথচ এসব কথা প্রায় অসত্য এবং ভ্রান্ত ধারণা। কিংবা আংশিক সত্য। আপনার চুল আদৌ পড়ছে কি না তা অবশ্যই চিকিৎসকের মাধ্যমে নির্ণয় করা প্রয়োজন। আর চুল পড়ার কারণ নির্ণয় করাও জরুরি।
চুল পড়ার চিকিৎসা
ত্বকবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন এবং পরামর্শ নিন।
চুলের সঠিক যত্ন ও চুল পড়ার কারণ নির্ণয় করুন।
কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করুন।
মানসিক চাপ পরিহার করুন।
মিনক্রিডিল ব্যবহার করতে পারেন তবে চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী।
সুষম খাদ্য খাবেন। খাদ্য তালিকা তৈরিতে নিউট্রশনিস্টের পরামর্শ নিন।
ছেলেদের চুল পড়ে যাওয়া
ছেলেদের চুল পড়া খুব স্বাভাবিক এবং বেশি বয়সে টাক পড়া কোনো ব্যাপার না। তবু যেন টাক পুরুষের আতঙ্কের কারণ। জুলিয়াস সিজার কিংবা নেপোলিয়ান সবার এই সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তারা চুল লম্বা রেখে তারপর টেনে সামনে আঁচড়াতেন টাক ঢাকার জন্য।
অ্যানড্রোজেনিস অ্যালোপিসিয়া
অ্যানড্রোজেন একধরনের হরমোন। এই হরমোন পুরুষালি স্বভাবের জন্য দায়ী। আর জেনেটিক অর্থ হচ্ছে বাবা কিংবা মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। চুলের ফলিকলে ফাইভ আলফা রিডাকটেজ নামের অ্যানজাইম থাকে। আর চুলের ফলিকলে থাকা অ্যাড্রোজেন তখন ফাইভ আলফা রিডাকটেজের সাথে বিক্রিয়া ডাইহাইড্রোটেসটেসটেরন তৈরি করে। হেয়ার ফলিকল ডাইহাইড্রোটেসটেসটেরনের প্রতি সংবেদনশীল। আর তাই তখন চুল পড়ে যায়।
অ্যালোপিসিয়া অর্থ চুল পড়ে যাওয়া। পুরুষের চুল পড়ে যাওয়া মহিলাদের থেকেও বড় সমস্যা, মহিলাদের পুনঃচুল গজানোর সম্ভাবনা বেশি। পুুরুষের বয়স, হরমোন ও জেনেটিক কারণে চুল পড়ে। চুল পড়ার কারণ ও রোধের উপায় নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে।
হেয়ার রিপ্লেসমেন্ট, নানা ধরনের সার্জারিও এখন টাক আড়াল করার কাজ করছে।
চুল পড়ছে এমন ধারণা হলে বা সন্দেহ হলে
ত্বকবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে চুল পড়ার ধরন, কারণ ও নির্ণয়ের পরে সুচিকিৎসা প্রয়োজন।
চুল পড়ার অন্যান্য কারণ
অ্যালোনিসিয়া এরিয়েটা সাধারণত অটোইমিউন রোগে এমন হয়। মাথার জায়গায় জায়গায় গোল হয়ে সম্পূর্ণ চুল পড়ে যায়।
অ্যালোপিসিয়া টোটানিস
সম্পূর্ণ মাথার চুল পড়ে যায়, অ্যালোপিসিয়ার পরবর্তী ধারা এটি।
অ্যালোপিসিয়া ইউনিভার্সালিস
সমস্ত শরীরের চুল পড়ে যাওয়া।
ট্রাকশন অ্যালোপিসিয়ান্ধ
অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা চুল খুব বেশি টেনে বাঁধলে, টানাটানির কারণে চুল পড়ে যেতে পারে।
টেলোজেন ইফফ্লুডিয়ামন্ধ
এটি সাময়িক। শারীরিক ও মানসিক চাপ, ওষুধ, হরমোনজনিত সমস্যার কারণে হয়।
অ্যানাজেন ইফফ্লুভিয়ামন্ধ
কেমোথেরাপির কারণে যখন চুল পড়ে।
উপরোল্লিখিত কারণে মাত্র পাঁচ ভাগ পুরুষের চুল পড়ে। বাকি ৯৫ ভাগ চুল পড়ে অ্যানড্রোজেনিক অ্যালোপিসিয়ার কারণে।
অ্যানড্রোজেনিক অ্যালোপিসিয়ার চিকিৎসা
চুল পড়াকে বড় সমস্যা না মনে করে টাক মাথা মেনে নিতে চেষ্টা করা।
টাক আড়াল করার জন্য নানা রকম পদ্ধতির ব্যবহার। চুলের ছাঁটকাটের ধরন পাল্টে ফেলুন।
ত্বকবিশেষজ্ঞের পরামর্শানুযায়ী মিনক্রিডিল ব্যবহার করুন।
সুষম খাবার খাবেন।
হেয়ার রিপ্লেসমেন্ট করতে পারেন।
চেম্বারঃ যুবক মেডিকেল সার্ভিসেস, লিমিটেড, বাড়ি-১৬, রোড-১৫ (নতুন), ২৮ (পুরাতন), ধানমন্ডি আবাসকি এলাকা, ঢাকা। মোবাইলঃ ০১৯১১৫৬৬৮৪২


যে সব কারণে চুল পড়ে
ডা. ওয়ানাইজা

দিন দিন মাথার চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে। ঝরে যাচ্ছে চুল, টাক পড়ে যাচ্ছে এমন লোকের সংখ্যা অনেক। অনেক সময় শুধু সামনের দিকের চুল পড়ে । আবার অনেক সময় পুরো মাথার চুলই হালকা হয়ে যায়। প্রতিদিন যদি ১০০টি চুল পড়ে তখন মাথা ফাঁকা হতে শুরু করে। চুল ঝরে পড়ার নানা কারণ রয়েছে। প্রচলিত ধারণা আছে, চুল টেনে বাঁধলে চুল দ্রুত লম্বা হয়। এটি ভুল ধারণা। এতে চুল ঝরে পড়ে দ্রুত। প্রসব পরবর্তী দুই-পাঁচ মাস পর্যন্ত চুল বেশি ঝরতে পারে। তবে এ ব্যাপারে চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। জ্বর বা অন্যান্য অসুখের সময়ও চুল পড়ে যায়। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কিছু দিন পর এ চুল আবার গজিয়ে থাকে।
দীর্ঘ দিন মানসিক দুশ্চিন্তা ও বিষাদগ্রস্ত থাকলে চুল পড়তে শুরু করে। দুশ্চিন্তা বেশি দিন থাকলে মাথা ফাকা হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
কিছু কিছু ওষুধের কারণে চুল বেশি পড়তে পরে। যেমন ইডোমেথাসিন, জেন্টামাইসিন ইত্যাদি। আবার ক্যানসারের ওষুধে চুল খুব বেশি ঝরে যায়।
কম খাওয়া-দাওয়া বা পুষ্টিহীনতাও চুল পড়ার কারণ। ওজন কমানোর জন্য কম খেতে শুরু করার পর অনেকেরই চুল পড়ে যায়।
খুশকি চুলের একটি বড় শত্রু। চুল পাতলা হওয়ার অন্যতম কারণ খুশকি। মাথা চুলকালে গুঁড়া গুঁড়া খোসা দেখা যাওয়াটাকেই খুশকি বলে। খুশকি দমিয়ে রাখতে পারলে মাথায় যে চুল আছে তা অন্তত ১৫-২০ বছর টিকিয়ে রাখা যাবে। আবার অনেকের মাথার ত্বক তেলতেলে ভাব থাকে। এগুলোর চিকিৎসা প্রয়োজন। পুরুষ হরমোনের প্রভাবেও চুল পড়ে। তাই টাক পড়ার আগেই চুল ঝরার কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা নিন।
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা (শনি, রবি ও বৃহস্পতিবার)। মোবাইলঃ ০১৯১১৫৬৬৮৪২


চুলের যত্নে কন্ডিশনার

ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৯১১৫৬৬৮৪২

চুলের যত্নে কন্ডিশনারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কন্ডিশনার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন­

১। ইনস্ট্যান্ট কন্ডিশনারঃ এটি শ্যাম্পু করার পর ভেজা চুলে লাগাতে হয় এবং ২-৩ মিনিট রেখে আলতো করে ধুতে হয়। হালকা ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য উপকারী ইনস্ট্যান্ট কন্ডিশনার।

২। ডিপ/গভীর কন্ডিশনারঃ এটিও একই নিয়মে ব্যবহার করতে হয় কিন্তু ৫-১০ মিনিট চুলে রেখে দিতে হয়। রাসায়নিক উপাদানে ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য ডিপ কন্ডিশনার প্রয়োজন।
৩। লিভ ইন কন্ডিশনারঃ চুল শ্যাম্পু করার পর তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুছে তারপর সেই চুলে লিভ ইন কন্ডিশনার লাগাতে হয়। লিভ ইন কন্ডিশনার ধুয়ে ফেলতে হয় না।

খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য লিভ ইন কন্ডিশনার উপযুক্ত।
স চুলে তেল দেয়াঃ চুলে তেল দেয়া এক ধরনের কন্ডিশনার। সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হলেও বিশেষজ্ঞরা বলেন, তেল চুল গজাতে বা চুলে পুষ্টি জোগাতে সহায়তা করে না। তবে তেল ম্যাসাজ করলে স্ক্যালেন্ড রক্ত সঞ্চালন হয় এবং চুল বাহ্যিকভাবে চকচকে, মসৃণ হয়।
স হালকা গরম করে যেকোনো তেল মাথায় সপ্তাহে দু’দিন ম্যাসাজ করা যেতে পারে।
স শ্যাম্পু করার ১-২ ঘণ্টা আগেও তেল মাথায় লাগানো যেতে পারে।
স সুগন্ধি তেল পরিহার করাই ভালো।
স চুল স্বাভাবিকভাবেই তৈলাক্ত হলে তেল না লাগানোই ভালো। কেননা এতে খুশকি হতে পারে।
শুষ্ক স্ক্যাল্পে অলিভ, নারিকেল, সানফ্লাওয়ার, বাদাম তেল যেকোনোটাই লাগাতে পারেন।
চুলের জন্য ব্যবহৃত কিছু সামগ্রীঃ শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, তেল ছাড়াও চুলে বর্তমানে আরো কিছু উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো আসলে চুলের স্টাইলের কারণে ব্যবহার করা হয়।

হেয়ার স্প্রেঃ এটি এমন এক ধরনের সলিউশন যা চুল বাঁধার পরে বা স্টাইল করার পরে চুলে স্প্রে করলে চুল স্টাইলমতো থাকে। চুলের হেরফের হয় না। তবে স্প্রে চুলতে শক্ত করে দেয়। নিয়মিত ব্যবহারে চুলের জন্য ক্ষতিকরও বটে। তবে প্রয়োজনে হেয়ার স্টাইল বজায় রাখতে হেয়ার স্প্রে’র জুড়ি নেই। স্প্রে ব্যবহারের পরে চুল ভালো করে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনিং করবেন।

হেয়ার জেলঃ তরুণ প্রজন্মের কাছে জেল খুব জনপ্রিয়। জেল দিয়ে নানাভাবে চুল আঁচড়ানো এবং বাঁধা আজকাল হাল ফ্যাশান। তবে নিয়মিত ব্যবহারে এটিও ক্ষতিকর।

মুজঃ এটি ফোমের মতো এবং চুলকে শক্ত করে না। ফোমের মতো হাতে নিয়ে চুলে মেখে তারপর চুল ব্লো ড্রাই বা অন্য স্টাইল করা হয়।


স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য
চুল নিয়ে আজকাল অনেকেরই ভাবনার অন্তô নেই। বলা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর চুল সবারই কাম্য। আগা থেকে গোড়া পর্যন্তô সমান ভারী চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল যায়। এ ছাড়া চকচকে কালো চুল ও মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকতে হবে।

স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্য। সঠিক পরিমাণে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে প্রচুর শাকসবজি, ফল ও সালাদ। খনিজ পদার্থ ও ভিটামিনের অভাবে চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়, চুল ঝরে পড়ে।

সঠিক পরিমাণে পানি পান করলে শরীর থেকে বর্জø পদার্থ বেরিয়ে যায়।

নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।

মাথায় ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার রাখাও প্রয়োজন।

প্রেটিন এবং আপনার চুুল

প্রেটিনের অভাবে চুলের রঙ প্রথমে নষ্ট হয়ে যায়। চুল লালচে বাদামি হতে থাকে। পরে চুল ঝরে যায় এবং চুলের আগা ফাটতে থাকে। কেরাটিনের অভাবে চুল ফেটে যায়। খাদ্য তালিকায় মাছ, গোশত, ডিম, দুধ, ডাল, দই, পনির ইত্যাদি থাকা জরম্নরি। এতে কেরাটিন তৈরিতে সহায়তা হয়। ভিটামিন এবং আপনার চুল

ভিটামিন ‘এ’র অভাবে চুল রম্নড়্গ ও প্রাণহীন হয়ে ওঠে। আবার অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’র জন্য চুল ঝরে পড়তে পারে। অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’র জন্য অল্প অল্প করে চুল জায়গায় জায়গায় উঠে গিয়ে টাক পড়ে যায়। খাদ্য তালিকায় দুধ, গাজর, মুলা, সবুজ শাকসবজি থাকা প্রয়োজন। ভিটামিন ‘সি’র অভাবে চুল খসখসে শুষ্ক হয়ে ওঠে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় তাই লেবুজাতীয় ফল, কমলালেবু, মোসম্বী ইত্যাদি থাকা প্রয়োজন। ভিটামিন ‘বি’ চুুলকে চকচকে ও ঘন করে তোলে। শস্যদানা, দুধ, ডিম, কলা, বাদাম, কলিজা ও ডালে রয়েছে ভিটামিন ‘বি’। প্রতিদিন ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হবে এবং চুল ঝরেবে না।

স্নেহপদার্থ এবং আপনার চুল

চুল তৈলাক্ত হলে প্রাণীজ জাতীয় খাবার পরিহার করম্নন। উদি্‌ভজ্জ তেল খেতে পারেন। সম্পৃক্ত চর্বি গরম্ন-খাসির গোশত কম খাবেন। দুধ বা ননী তোলা দুধ, পনির ও দই খেতে পারেন।

স্বাস্থ্যহীন চুলের কারণঃ সুষম খাবার না খাওয়া স্বাস্থ্যহীন চুুলের প্রধান করাণ। খাদ্য তালিকা সঠিক না হওয়ার কারণে চুল ঝরে পড়তে পারে। এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার ও ভিটামিন গ্রহণ করা প্রয়োজন। দীর্ঘ সময় হেলমেট, টুপি ইত্যাদি পরে থাকা, চুলে নানা কেমিক্যাল ডাই ব্যবহার করা, সঠিকভাবে চুল পরিষ্কার না করা, খুশকি ও অন্যান্য রোগ, অতিরিক্ত রোদে বের হওয়া এবং চুল ভেজা থাকা, শারীরিক অসুখ-বিসুখ, মানসিক চাপ, ঘুম না হওয়া এবং হরমোনের তারতম্যজনিত কারণ, স্বাস্থ্যহীন হয়ে পড়লে এবং চুল ঝরে পড়লে এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। সুষম আহার চুলের সঠিক পরিচর্যা এবং প্রয়োজনে কিছু ঔষধের ব্যবহারে চুর স্বাস্থ্যেজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।


ভিন্ন ধরনের চুল পড়া এলোপিসিয়া এরিয়েটা
ডা. ওয়ানাইজা

এলোপিসিয়া এরিয়েটা একটি ভিন্ন ধরনের চুল পড়ার অসুখ। এ ক্ষেত্রে এক বা একাধিক স্থানে গোলাকৃতি হয়ে চুল ওঠে বা পড়ে যায়। এই চুল ওঠা সাধারণত মাথায়, চোখের ভ্রূ, গোঁফ বা দাড়িতে দেখা যেতে পারে।
এই রোগ প্রাপ্ত বয়স্ক ও শিশু সবারই হতে পারে। যেসব পরিবারে অ্যাজমা, থাইরয়েডের অসুখ, শ্বেতী বা ভিটিলিগো, লুপাস ইরাইথমেটাস, রিউমাইয়েড আর্থ্রারাইটিস, পারনিসিয়াস এনিমিয়া ইত্যাদি রোগ রয়েছে সেসব পরিবারের লোকজনের এলোপিসিয়া এরিয়েটা দেখা দিতে পারে।
এলোপিসিয়া এরিয়েটা হলে আমাদের দেশে তেলাপোকা বা অন্য কোনো পোকা চুল খেয়ে ফেলেছে এমনটা ধারণা করা হয়ে থাকে। এ রকম ভ্রান্ত ধারণা দূর হওয়া প্রয়োজন।
এ ক্ষেত্রে নানা রকম পরীক্ষা করে অন্যান্য রোগের সাথে পার্থক্য করা প্রয়োজন, যেমন এন্টিনিউক্লিয়ার এন্টিবডি পরীক্ষা লুকাস ইরাইথমেটাসের জন্য, ফাঙ্গাস পরীক্ষা ইত্যাদি।
এলোপিসিয়া এরিয়েটা অনেক সময় এমনিতেই ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে ভালো না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। অবহেলা না করে এই রোগের চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।
চেম্বারঃ যুবক মেডিকেল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ পুরাতন ২৮, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা। ফোনঃ ৯১১৮৯০৭, ০১৯১১৫৬৬৮৪২। (শনি, রবি, বৃহস্পতি)

খুশকি সমস্যা
ডা. দিদারুল আহসান

মাথা থেকে আঁশের মতো মরা চামড়া ওঠাকে খুশকি বলে। সাধারণত এই রোগটি বয়ঃসন্ধিকালে বা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে হয়। এ ক্ষেত্রে মাথার চামড়া থেকে ছোট ছোট আঁইশের মতো মরা চামড়া উঠতে থাকে। ফলে মাথার চামড়া চুলকায় এবং চিরুনি দিয়ে চুলকালে ভালো লাগে এবং চিরুনির সাথে খুশকিগুলো বেরিয়ে আসতে থাকে। তবে মাথায় যদি যৎসামান্য খুশকি হয় তা কিন্তু একটি সাধারণ ব্যাপার। এই খুশকি যদি খুব বেশি হয় তবে তাকে সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের বহিঃপ্রকাশ বলে ধরে নিতে হবে। কিন্তু খুশকির সাথে সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের পার্থক্য হলো এই যে, খুশকিতে মাথা থেকে আঁশযুক্ত মরা চামড়া উঠবে তবে মাথায় কোনো প্রদাহ থাকবে না। আর যদি মাথায় খুশকি অর্থাৎ মরা আঁশের মতো চামড়া ওঠে, সেই সাথে মাথার প্রদাহও থাকে তবে তখন আমরা তাকে খুশকি নয় বরং সেবোরিক ডার্মাটইটিস বলে চিহ্নিত করব। তবে মনে রাখতে হবে খুশকিকে সবসময় নির্মূল করা সম্ভব হয় না। কতগুলো খুশকিকে নিবারক শ্যাম্পু দিয়ে একে দমিয়ে রাখা যায়। আর তাই দমিয়ে রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, একে দমিয়ে না রাখলে এর থেকে মাথার চুল ঝরে যেতে থাকবে। অনেকে আবার মনে করেন খুশকি হলে মাথায় বেশি করে তেল দিতে হবে। ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ এই তেল দেয়ার কারণে মাথা সময় সময় তৈলাক্ত ও ভেজা থাকে ফলে মাথায় একশ্রেণীর ছত্রাকের আক্রমণ হতে থাকে এবং এ রোগ ক্রমান্বয়ে আরো বাড়তে থাকে। আবার একশ্রেণীর রোগী এই খুশকি দমাতে মাথায় খৈল ব্যবহার করে। খৈল আর কিছুই নয়, সরিষা থেকে তেল বানাতে বর্জø হিসাবে এই খৈল পাওয়া যায়। এটাও একটা ভুল ধারণা। খৈল ব্যবহারে খুশকি দূর হয় বলে কোনো কথা নেই। খৈল ব্যবহারের ফলে খুশকিগুলো ভিজে মাথার ত্বকে লেগে থাকে। ফলে অনেকেরই হয়তো মনে হতে পারে যে খুশকি দূর হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ধারণাটা সম্পূর্ণই ভুল। যাদের মাথায় খুশকি হয় তারা মাথা ভেজা রাখবেন না বরং মাথা যেন সব সময় পরিষ্কার থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ভেজা অবস্থায় মাথার চুল বাঁধাও উচিত নয়। তাতে চুলের নিচে পানি আটকা পড়ে ত্বক ভেজা থাকে যা কিনা এই রোগ বাড়াতে সাহায্য করে। আর একটি কথা, যাদের খুশকি আছে তাদের ব্যবহার করা চিরুনি থেকে অন্যের মাথায় চলে যেতে পারে। অনেক সময় সেবোরিক ডার্মাটাইটিসকে আমরা সাধারণ খুশকি বলে মনে করি। তাই মনে রাখতে হবে দেহের তেল গ্রন্থিযুক্ত স্থান যেমন মাথার ত্বক, বুকের মধ্যখান, কানের পিছনের দিক, বগল ইত্যাদি লোমযুক্ত স্থানে যদি খোসাযুক্ত লালচে দাগ দেখা যায় সে ক্ষেত্রে আমরা সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বলে ধরে নেবো। ভ্রূ, নাক, নাকের পাশের খাঁজ, ঠোঁট, কান, কানের পেছনে, কানের ভেতরের অংশ ইত্যাদি সব স্থানেও এই রোগের প্রকাশ পেতে পারে। চোখের পাতাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যাকে বলা হয় ব্লেফাবাইটিস। এতে চোখের পাতা লালচে হয় এবং ছোট ছোট সাদা আঁশের মতো মরা চামড়া উঠতে দেখা যায়। দাড়ি, গোফ ইত্যাদি অংশও এতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আবার অনেক সময় সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের ওপর আবার বাইরের জীবাণুর আক্রমণ ঘটে সে ক্ষেত্রে দেখতে কিছুটা একজিমার মতো মনে হয়। আর একটি রোগে প্রায়ই আঁশ উঠতে দেখা যায় যেটি হলো সোরিয়াসিস। মাথার সোরিয়াসিসে যখন আঁশ ওঠে তখন অনেকেই মনে করেন, মাথায় খুব বেশি পরিমাণে খুশকি হয়েছে। তবে এই দু’টো আঁইশের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের আঁশগুলো তৈলাক্ত কিন্তু সোরিয়াসিসের আঁশগুলো শুকনো ও সিলভারি রঙয়ের এবং বাইরে আরো একটা বিশেষভাবে লক্ষ্য করলে দু’টোর প্রভেদ বোঝা যায়; যেমন, মাথার সোরিয়াসিসে চুলের সামনের সীমানা বরাবর একটা স্পষ্ট দাগ লক্ষ্য করা যায় কিন্তু খুশকি বা সেবোরিক ডার্মাটইটিসে তেমন কোনো দাগ দেখা যায় না।
চিকিৎসাঃ খুশকি আর সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের চিকিৎসকরা প্রায় একই রকম। খুশকি নিবারক শ্যাম্পু যেমন জিঙ্ক পাইরিথিওন, সেলেনিয়াম সালফাইড অথবা কেটোকোনাজল শ্যাম্পু ব্যবহারে খুশকি দমন করা সম্ভব। তবে যদি বেশি পরিমাণ প্রদাহের লক্ষণ উপস্থিত থাকে তবে এর পাশাপাশি কম শক্তিশালী কর্টিসোন লোশন বা জেল ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
লেখকঃ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৮১৯২১৮৩৭৮

ভিন্ন ধরনের চুল পড়া

এলোপিসিয়া এরিয়েটা একটি ভিন্ন ধরনের চুল পড়ার অসুখ। এড়্গেত্রে এক বা একাধিক স্থানে গোলাকৃতি হয়ে চুল উঠে বা পড়ে যায়। এই চুল ওঠা সাধারণত মাথায়, চোখের ভ্রম্ন, গোঁফ বা দাড়িতে দেখা যেতে পারে।

এই রোগ প্রাপ্ত বয়স্ক ও শিশু সবারই হতে পারে। যেসব পরিবারে অ্যাজমা, থাইরয়েডের অসুখ, শ্বেতী বা ভিটিলিগো, লুপাস ইরাইথমেটাস, রিউমাইয়েড আর্থারাইটিস, পারনিসিয়াস এনিমিয়া ইত্যাদি রোগ রয়েছে সেসব পরিবারের লোকজনের এলোপিসিয়া এরিয়েটা দেখা দিতে পারে। এলোপিসিয়া এরিয়েটা হলে আমাদের দেশে তেলাপোকা বা অন্য কোনো পোকা চুল খেয়ে ফেলেছে এমনটা ধারণা করা হয়ে থাকে। এরকম ভ্রান্তô ধারণা দূর হওয়া প্রয়োজন। এড়্গেত্রে নানারকম পরীড়্গা করে অন্যান্য রোগের সাথে পার্থক্য করা প্রয়োজন, যেমনএৈন্টিনিউকিয়ার এন্টিবডি পরীড়্গা লুকাস ইরাইথমেটাসের জন্য, ফাঙ্গাস পরীড়্গা ইত্যাদি। এলোপিসিয়া এরিয়েটা অনেক সময় এমনিতেই ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে ভালো না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। অবহেলা না করে এই রোগের চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।


চুল পাকা রোগ

ডা. ওয়ানাইজা

অনাদিকাল থেকে মানুষ চুলের পরিচর্যা করে আসছে। সুন্দর চুলের জন্য মানুষের প্রচেষ্টার বিরাম নেই। কিন্তু অনেক সময় তাকে হতাশ করে দিয়ে সুন্দর চুলগুলো পাকতে শুরম্ন করে। প্রকৃতির নিয়মে একটি নির্দিষ্ট বয়সে মানুষের চুল পাকে, কিন্তু কখনো কখনো অল্প বয়সেও কারো কারো চুল পাকতে দেখা যায়। তখন দুঃশ্চিন্তôার অন্তô থাকে না। সমীড়্গায় দেখা গেছে ২৪ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ২৫ জনের চুলে পাক ধরে। পরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুল পাকার সংখ্যা আরো বেড়ে পঞ্চাশে দাঁড়ায়। এই অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যাটি দেখা দেয়ার কারণ কী?
আমাদের ত্বকে মেলানোসাইট নামক একধরনের কোষ থাকে যা মেলানিন উৎপাদন করে। যাদের কম মেলানিন উৎপাদন হয় তাদের রঙ সাদা হয় এবং বেশি উৎপাদন হলে রঙ কালো হয়। চুলের ড়্গেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যদি কোনো কারণে চুলের গোড়ার মেলানোসাইট কোষ নিষ্ত্র্নিয় হয়ে যায় তাহলে বন্ধ হয়ে যায় মেলানিনের উৎপাদন। ফলে চুলের রঙ সাদা হয়ে যায় এবং আমরা সেটাকে চুল পাকা বলি। যেকোনো বয়সেই এটা ঘটতে পারে। মেলানোসাইট কোষ কেন নিষ্ত্র্নিয় হচ্ছে এ ব্যাপারে অনেক গবেষণা হয়েছে। দেখা গেছে বংশগত কারণে অনেকের মধ্যে এ সমস্যাটি ঘটছে। অল্প বয়সে যাদের চুল পাকে তাদের কারো কারো মধ্যে অটোইমিউন ডিজিজে’র কারণে মেলানোসাইট কোষ নিষ্ত্র্নিয় হয়ে যাচ্ছে। ফলে চুলে মেলানিন না পৌঁছানোর কারণে চুল পেকে যাচ্ছে। এই অটোইমিউন ডিজিজে ত্বকের মেলানোসাইটের বিরম্নদ্ধে তৈরি হয় এন্টি মেলানোসাইট এন্টিবডি যা মেলানোসাইট কোষকে ধ্বংস করে দেয়। এ ছাড়া গবেষকরা খুব বেশি জ্বর, দীর্ঘমেয়াদি কোনো অসুখ এবং মানসিক দুঃশ্চিন্তôাকে অল্পবয়সে চুল পাকার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
অল্প বয়সে কিংবা বেশি বয়সে চুল পাকার ব্যাপারটি হঠাৎ করে ঘটে না। প্রথমে কয়েকটি চুল পাকতে শুরম্ন করে­ পরে ধীরে ধীরে অন্যান্য চুল পাকে।
বংশজাত কারণ ছাড়া আর সেসব কারণে চুল পাকে­ চুলের প্রধান পুষ্টি প্রোটিন ও ভিটামিন। এই পুষ্টির অভাবে চুল পাকতে পারে। শরীরে যখনই প্রোটিন কিংবা ভিটামিনের তীব্র অভাব ঘটে তখনই চুলের পরিবর্তন চোখে পড়ে। প্রোটিনের অভাবে চুল শুষ্ক, পাতলা, ভঙ্গুর ও বিবর্ণ হয়।
শিশুদের ড়্গেত্রে ম্যারাসমাস ও কোয়াশিওরকর নামক দু’টি রোগে চুল পাকা দেখা দেয়। হৃদরোগীদের চুল খুব দ্রম্নত পেকে যায়, বিশেষ করে যারা উচ্চরক্তচাপ কিংবা করোনারি হার্টডিজিজে ভুগছেন তাদের চুল পেকে যাওয়ার ঘটনা বেশি। এ ছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থিতে সমস্যা দেখা দিলে চুল পাকে। প্রোজেরিয়া নামক রোগে ১২ বছরের আগেই শিশুর চুল পাকতে শুরম্ন করে।
রথম্যান থমসন সিনড্রোম এবং ডিসট্রফিক মায়েরাটোনিয়া রোগেও চুল খুব তাড়াতাড়ি পেকে যায়। শরীরে ভিটামিন ‘বি’ ১২-এর অভাবেও চুল পাকে।
এ ছাড়া বিভিন্ন চর্মরোগে বিশেষ করে সোরিয়াসিস ও শ্বেতীরোগে চুল পাকতে পারে।
চুল পাকলে কী করণীয়?
অনেকের ধারণা চুলে নিয়মিত তেল না মাখলে চুল পেকে যায়। কিন্তু ধারণাটি ভ্রান্তô। চুল পাকার সাথে চুলে তেল দেয়া না দেয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। সত্যিকার অর্থে পাকা চুল কালো করার স্থায়ী কোনো উপায় নেই। একমাত্র কলপ ব্যবহার করে বাস্তôবতাকে মেনে নিতে হবে। তবে যেসব রোগের জন্য চুল পেকে যায়­ যদি রোগটি নির্ণয় করা সম্ভব হয় এবং রোগের চিকিৎসা করা যায় তাহলে কিছু কিছু ড়্গেত্রে পাকা চুল কালো হয়ে ওঠে। এ ছাড়া পাকা চুল কালো করার কোনো ওষুধ আজ পর্যন্তô আবিষ্কৃত হয়নি। কলপ মাখার ড়্গেত্রে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারো কারো ড়্গেত্রে কলপে এলার্জি হতে পারে। সেজন্য কলপ মাখার আগে ত্বকে একটু ঘষে নিয়ে, কিছুড়্গণ অপেড়্গা করে যদি এলার্জি না দেখা দেয়, তবে চুলে মাখা যেতে পারে। কিছু কিছু কোম্পানি চুল কালো করার তেল বা ওষুধের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপড়্গে তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ওই সব তেল বা ওষুধ চুলে মাখলে চুলে কালো একটি ড়্গণস্থায়ী প্রলেপ পড়ে, কিন্তু তা স্থায়ী কোনো সমাধান দিতে পারে না। বরং ওই সব তেল বা ওষুধ চুলে মাখার কারণে মাথার ত্বকে অনেক সময় এলার্জিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। তাই চুলে পাক ধরলে প্রথমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়ে চুল পাকার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা উচিত।
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা। ফোনঃ ৯১১৮৯০৭, ০১৯১১৫৬৬৮৪২

চুলের গঠন ও অল্প বয়সে চুল পড়া
ডা. ওয়ানাইজা

চুল ত্বকেরই অঙ্গ। ত্বকের উপরিতলের কোষ বা এপিডারমাল সেল থেকে চুলের উৎপত্তি। হেয়ার ফলিকল তৈরি হয় এপিডারমাল সেল থেকে। হেয়ার ফলিকলের একেবারে গভীরতর অংশ বা হেয়ার বালবের বিভাজনে তৈরি হয় নতুন নতুন কোষ। এই নবীন কোষগুলোতে বিশেষ ধরনের প্রোটিন জমতে থাকে, যা ত্বকের সাধারণ প্রোটিন থেকে কিছুটা আলাদা ও শক্ত। হেয়ার বালবের মধ্যের মেলানোসাইট চুলের রঙ সরবরাহ করে। চুলের পুষ্টি আসে হেয়ার বালবের শিরা-উপশিরা থেকে। হেয়ার বালব থেকে তৈরি হওয়া কোষগুলো একত্রে একটি দন্তের মতো উপরিতলের দিকে বাড়তে থাকে। জীবন্ত কোষগুলো ক্রমেই মৃত্যুর দিকে এগোয়, জমে ওঠা শক্ত কেরাটিনের একটি টালিতে পরিণত হয়। চুলের এই দন্ডের চারপাশে হেয়ার ফলিকলের দেয়াল লেপটে থাকে। ত্বকের উপরিভাগের কাছে এসে হেয়ার শ্যাফট তার চার পাশের দেয়াল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি মোটা কালো সুতার মতো ত্বকের উপরিভাগ থেকে বেরিয়ে আসে। তাই চুলের পুষ্টি সঞ্চালন করতে হলে হেয়ার ফলিকলের নিচে, ত্বকের গভীরে হেয়ার বাল্বে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে হবে এবং সেই রক্তে চুল তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদান ঠিকভাবে থাকতে হবে। আগাগোড়া হেয়ার ফলিকল বা চুল তৈরির কারখানাটিও ঠিক থাকা দরকার।
ত্বকের গভীরে যেখানে হেয়ার বাল্বের কোষগুলো রয়েছে যেখান থেকে ক্রমাগত নতুন কোষ সৃষ্টি হয়ে চুলের দণ্ডের গোড়ার দিকে যুক্ত হচ্ছে এবং দণ্ডটিকে ক্রমাগত উপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জীবন্ত কোষগুলো উপরের দিকে ওঠার সময় কেরাটিন সঞ্চয় করছে, শক্ত হচ্ছে, মৃত কোষে পরিণত হচ্ছে। এই মৃত কোষের সমষ্টিই চুল হিসেবে ত্বকের উপরিভাগে ক্রমাগত এগিয়ে এসে অবশেষে ত্বকের বাইরে চুল হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
অল্প বয়সে টাক পড়া
অল্প বয়সে টাক পড়ার নানা কারণ রয়েছে। পুরুষদের জন্য এন্ড্রোজেনিক এলোপেসিয়া শুরু হয় কপালের দু’পাশে রগের কাছে। তারপর ক্রমেই বাড়তে বাড়তে সামনে ও চাঁদিতে ছড়িয়ে পড়ে। এটা পুরুষ সেক্স হরমোন টেস্টোস্টেরন ও জেনেটিক প্রভাবের কারণে হয়। চুলের বৃদ্ধি অনেকাংশে টেস্টোস্টেরনের ওপর নির্ভরশীল। চুলের গোড়ায় কিছু রিসেপ্টর থাকে যারা এই হরমোনের উপস্থিতিতে চুলের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে একই মাত্রায় হরমোন থাকা সত্ত্বেও চুলের তারতম্য হয়। এজন্যই পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালে সামনের চুল সরে যেতে থাকে। অবশ্য চুল পড়ার জন্য থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখ, রক্তস্বল্পতা, ওভারির অসুখ, বা অন্য কোনো এন্ডোক্রাইন অসুখও হতে পারে। বর্তমানে চুল পড়া বা টাকের আধুনিক চিকিৎসা এসেছে। বাজারে প্রচলিত শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপনে মোহিত না হয়ে অল্প বয়সে চুল পড়া শুরু হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। রূপচর্চার নামে নানা অপ্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহারে ত্বক ও চুলের ক্ষতি হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ, বিভিন্ন কেমিক্যাল ক্ষার ও ইনসেকটিসাইড ব্যবহার, পানি দূষণ, বায়ু দূষণ ইত্যাদিও পরোক্ষভাবে চুল পড়ার জন্য দায়ী।
আধুনিক জীবনযাত্রা স্বাভাবিক সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য আমার কথা এই যে, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর প্রতিকার আছে।
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা। ফোনঃ ৯১১৮৯০৭, ০১৯১১৫৬৬৮৪২

চুলপড়ার যত সমস্যা

চুল কেন পড়ে? এ প্রশ্ন আজ আমাদের প্রায় সবার। এই চুলপড়া রোধে সারা বিশ্বে বছরে প্রায় ১ বিলিয়নেরও বেশি ডলার খরচ হয়। নানা উপায়ে আমরা চুলপড়া রোধ করতে চাই। অনেক রকমের ইনফেকশন, বিভিন্ন রোগ, ওষুধের ব্যবহার এবং খাদ্যের ভিন্নতর কারণে সাধারণত চুল পড়ে যায়। কিন্তু গবেষকরা গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন যে, ৯৫ ভাগ চুল পড়ার কারণ জিনগত। বাবা কিংবা মা অথবা দু’জনের কাছ থেকে আগত জিনই নির্ধারণ করে দেয় কখন আমাদের চুল পড়বে। এই অবস্থাকে বলা হয় অ্যানড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া এবং অ্যানড্রোজেন অর্থাৎ পুরম্নষদের হরমোন এই সমস্যার জন্য দায়ী।

গবেষকরা বিশ্বাস করেন, চুল পড়ার জন্য চুলের গোড়ার বা ফলিকলে একটি এনজাইম তৈরি হয়, যার নাম ফাইভ আলফা রিডাকটেজ। এই এনজাইম রক্তে অতিবাহিত হরমোন টেস্টস্টেরনকে ডাই হাইপ্রোটেস্টস্টেরনে পরিণত করে। যার আরেক নাম ডিএইচটি। ডিএইচটি চুলের গোড়ায় আক্রমণ চালায় এবং চুল দুর্বল করে ঝরে পড়তে সাহায্য করে। পুরম্নষদের চুল সাধারণত সামনের দিকে পড়ে এবং টাকে পরিণত হয়। আর মহিলাদের পুরো মাথার চুলই এককভাবে পড়ে এবং পাতলা হয়ে যায়। মহিলাদের শরীরে অ্যারোমাটেজ নামে এক প্রকার এনজাইম তৈরি হয় যা ডিএইচটিকে ইস্ট্রোজেনে পরিণত করে। এতে কিছু হলেও মহিলাদের চুর রড়্গা পায়। চুল পড়ার রাসায়নিক কারণ খুবই জটিল।

চুলপড়া রোধে এবং নতুন চুল গজানোর জন্য মাথায় অনেক সময় নানারকম ভিটামিন ও ভেষজ নির্যাসযুক্ত তেল দেয়া হয়। এ ছাড়া ড্রাকোনিয়ান পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে চুলের গোড়ায় মৃদু ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়। এতে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করা হয়। কিছু কিছু শ্যাম্পু ও জেল ব্যবহারে চুল ঘন দেখায়। নানা ভেষজ গুণসম্পন্ন এসব দ্রব্য চুলের গোড়ায় পুষ্টি সরবরাহ করে। তাছাড়া চুলের জৌলুস বাড়িয়ে দেখতে ভালো দেখায়।

চুলের জন্য ব্যয়বহুল চিকিৎসা গ্রহণের আগেই আমরা চুলের কিছু নিজস্ব যত্ন নিয়ে দেখতে পারি।

প্রতি একদিন অন্তôর অন্তôর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলা দরকার। অবশ্যই সেই শ্যাম্পু দিয়ে, যা আপনার চুলের জন্য উপযোগী। বন্ধু-বান্ধবের কথায় বা চটকদার বিজ্ঞাপনে মুগ্ধ না হয়ে নিজের উপযোগী শ্যাম্পু নিজের পছন্দ করাই ভালো। গবেষকরা জানান, ঘন ঘন শ্যাম্পু করার ফলে চুলের গোড়ায় জমে থাকা সাবান ও তৈলাক্ত পদার্থ থাকে, যাতে ডিএইচটি তা ধুয়ে যায়। আগেই বলা হয়েছে, ডিএইচটি চুল ঝরে পড়াকে ত্বরান্বিত করে থাকে। আবার এভাবে চুল ধোয়ার পর প্রথম দিকে আপনার মনে হতে পারে, চুল বোধহয় আগের তুলনায় বেশি ঝরে যাচ্ছে। কিন্তু না, শুধুমাত্র সেই চুলগুলো ঝরে যাচ্ছে, যার গোড়া আলগা হয়ে আছে এবং দু-একদিনের মধ্যেই ঝরে পড়তো। ভেজা চুল বেশি আঁচড়ানোর কারণে এবং ঘষাঘষির কারণেও চুল বেশি পড়তে পারে। এ ব্যাপারে সাবধান হওয়া দরকার। চুলের স্বাস্থ্যের সাথে শরীর ও মনের স্বাস্থ্যও অনেকাংশে জড়িত। আপনি কেমন খাবার গ্রহণ করছেন, তার ওপরে আপনার চুলের স্বাস্থ্য নির্ভর করে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমাণগত শাক-সবজি, ফল যথেষ্ট পরিমাণে অর্থাৎ ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া অতিরিক্ত ডায়েট কন্ট্রোল চুল পড়ার কারণ হতে পারে। এ ড়্গেত্রে নিউট্রশনিষ্ট কিংবা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। এ ছাড়া মানসিক চাপ এবং অন্যান্য ওষুধ গ্রহণের ফলে চুল ঝরে যাচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে লড়্গ্য রেখে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।


মাথার চুল পড়ে যাওয়া
ডা. ওয়ানাইজা

মাথার চুল পড়ে যাওয়া এক অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা। দিন দিন মাথার চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ ঝরে যাচ্ছে বা টাক পড়ে যাচ্ছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা অনেক। চুল ঝরে যাওয়া বা টাক পড়া দু’ভাবে হয়ে থাকেঃ
এক. পুরো মাথার চুল পড়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে মাথার তালু বা চামড়া অতি সহজেই দেখা যায়।
দুই. মাথার কিছু কিছু অংশে গোল গোল আকারে চুল পড়ে যাওয়া।
সার্বিকভাবে পুরো মাথার চুল যেসব কারণে ঝরতে পারে
চুলে টান লাগাঃ প্রচলিত একটি ধারণা আছে, রাতে শোয়ার আগে টান টান করে বেণী বেঁধে ঘুমালে চুল তাড়াতাড়ি লম্বা হয়। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। চুল কতটুকু লম্বা হবে তা নির্ভর করে জেনেটিক, হরমোন ও পুষ্টির ওপর। বরং উল্টো ক্ষতিই হয়ে থাকে। যে চুলগুলো আরো কিছু দিন মাথায় থেকে তারপর ঝরে যাওয়ার কথা, তা আগেই ঝরে যায় অতিরিক্ত টান লাগার কারণে।
প্রসব পরবর্তীঃ সন্তান প্রসবের দুই থেকে পাঁচ মাস পর হঠাৎ চুল পড়ে যেতে থাকে। মাথা প্রায় খালিই হয়ে যায়। ২ থেকে ৬ মাস ধরে এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। তবে আশার বিষয়, এ চুল আবার সম্পূর্ণ গজিয়ে থাকে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকুন।
নবজাত অবস্থায়ঃ নবজাতকের মাথার চুল জন্মের পর থেকে ৪ মাসের ভেতর অনেকটা ঝরে যায়। এতে মা-বাবা ভয় পেয়ে যান, আমার সন্তানের মাথার চুল কি কম হবে? না, এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ৬ মাস বয়সের সময় আবার চুল গজায়। কখনো কখনো পুষ্টিহীনতার কারণে চুল গজাতে একটু দেরি হতে পারে।
জ্বরের পরঃ কঠিন কোনো জ্বর যেমন­ নিউমোনিয়া, টাইফয়েড হওয়ার ২ থেকে ৪ মাস পর হঠাৎ চুল ঝরতে শুরু করে এবং প্রায় পাতলা হয়ে যায়। কিন্তু কিছু দিন পর এ চুল আবার গজিয়ে থাকে।
মানসিক কারণেঃ মানসিক রোগ বা দুশ্চিন্তা যদি বেশি থাকে তবে চুল পড়ে যায়।
ওষুধেঃ কিছু কিছু ওষুধে যেমন ক্যান্সারের ওষুধ, যে চুলগুলো মাত্র গজাচ্ছে, সেগুলোও ঝরিয়ে দেয়।
অনাহারঃ ওজন বা মেদ কমানোর জন্য অনেকে হঠাৎ খাওয়া-দাওয়া, একেবারেই ছেড়ে দেয়। এই হঠাৎ খাওয়া কমানো চুল পড়ার কারণ হতে পারে, যেমনটি হয় অপুষ্টিজনিত কারণে।
অ্যানড্রোজেন হরমোনঃ পুরুষ হরমোনের প্রভাবে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সে পুরুষের কপালের দুই দিকে এবং মাথার মধ্য অংশে টাক পড়ে। যাকে বংশগত টাকও বলা হয়।
এজাতীয় বংশগত টাক ঠেকাতে এবং টাক পড়া স্থানে কিছু চুল গজাতে সক্ষম এমন ওষুধ এখন বাজারে পাওয়া যায়। যার বৈজ্ঞানিক নাম ফিনাস্টেরয়েড। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে এ জাতীয় ওষুধ শুধু ছেলেদের জন্য। মেয়েরা খেতে পারবে না। মাথার চুলের আনুমানিক সংখ্যা প্রায় ১ লাখ, এর মধ্যে ৭০ থেকে ১০০টি চুল প্রতিদিন ঝরে যায়। অর্থাৎ প্রতিদিন ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু যখন এই ১০০টির বেশি চুল পড়ে তখনই মাথার তালু খালি হয়ে যেতে থাকে।
মাথার চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে খুশকি। মাথা চুলকালে গুঁড়ো গুঁড়ো খোসা দেখা যাওয়াটাকে খুশকি বলে। তবে কখনো কখনও খোসা দেখা যায় না, মাথায় শুধু তেলতেলে ভাব থাকে। এই খুশকি যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তবে মাথার চুল আছে তাকে হয়তো আরো ১০ থেকে ২০ বছর টিকিয়ে রাখা যাবে। অন্যথায় ৫ মাস থেকে এক বছরে মাথায় টাক পড়ে যাবে। তবে একটি বিষয় জেনে রাখা ভালো খুশকি বা তেলতেলে ভাব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হরমোন (এনড্রোজেন)-এর প্রভাবে হয়ে থাকে। সুতরাং এমতাবস্থায় খুশকিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, আর খুশকি হবে না এটা সম্ভব নয়। যেহেতু এনড্রোজেন হরমোন কমানো উচিত নয়। অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহারে খোসা খোসা ভাব খুশকি খুব দ্রুত নির্মূল হয়ে যায়। কিন্তু তেলতেলে ভাব তো প্রতিদিনই হয়। অন্য দিকে অ্যান্টিডেনড্রাফ শ্যাম্পু প্রতিদিন ব্যবহার করা যায় না, তাতে চুলের ক্ষতি হয়। তা হলে যা দাঁড়াল তা হচ্ছে­ খোসা খোসা ভাব খুশকি দূর করা সম্ভব হচ্ছে, চুল পড়া রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় প্রয়োজন প্রতিদিন এমন কিছু দিয়ে মাথা ধুতে হবে যাতে চুলের ক্ষতি না হয়। এ সিস্টেমে খুশকি হয়তো ভালো হবে না তবে খুশকি ও তেলতেলে ভাব নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং চুলও কম ঝরবে।
মাথার গোল টাকঃ এ অবস্থায় রোগী কোনো এক দিন ঘুম থেকে উঠে দেখে যে মাথায় কিছু কিছু অংশে গোলাকার টাক পড়েছে। আক্রান্ত স্থানের ত্বক মসৃণ, কোনো চুলকানি বা লালা ভাব নেই, কোনো খোসাও নেই। প্রচলিত ধারণা হচ্ছে তেলাপোকা চুল খেয়ে ফেলেছে। না, এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এ অবস্থা বেড়ে গিয়ে সম্পূর্ণ মাথায় এমনকি শরীরের লোমও ঝরে যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত স্থানে স্টেরয়েড ইনজেকশন দিয়ে আকারে বেড়ে যাওয়াটাকে রোধ করা যায় এবং নতুন চুল গজাতে থাকে। প্রতি মাসে একবার ইনজেকশন দিতে হয়।
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা (শনি, রবি ও বৃহস্পতিবার)। মোবাইলঃ ০১৯১১৫৬৬৮৪২


সুন্দর চুলের জন্য
ডা. ওয়ানাইজা

চুল কেরাটিন নামের এক রকম প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়। চুলে ৯৭ ভাগ প্রোটিন ও ৩ ভাগ পানি রয়েছে। চুলের যেটুকু আমরা দেখি সেটি মৃত কোষ। কারণ এতে অনুভূতিশীল কোনো কোষ নেই। একজন সুস্থ মানুষের মাথায় গড়ে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ চুল থাকে। প্রতিদিন ১০০টি পর্যন্ত চুল ঝরে পড়া স্বাভাবিক। এর থেকে বেশি চুল পড়লে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালে চুল দ্রুত বড় হয় কিন্তু শীতকালে কম বড় হয়। একটি চুলের গড় আয়ু দুই-আট বছর। সুতরাং চুল কিছু না কিছু প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবেই ঝরে যায়।
চুলের কিউটিকন নষ্ট হয়ে গিয়ে চুলের কটেক্সের আঁশগুলো খুলে গেলে চুলের আগ ফেটে যায়। এতে চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে ওঠে। মাথার তালুর সঠিক মাত্রায় রক্ত সঞ্চালনের জন্য চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ দরকার। নানারকম শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও সঠিক পরিচর্যার অভাবে চুলের স্বাস্থ্যও খারাপ হতে পারে। আপনার সুস্থতা প্রকাশ পায় আপনার শারীরিক স্বাস্থ্য এবং চুলের স্বাস্থ্যের ভেতর দিয়ে। তাই সঠিক ডায়েট, প্রচুর ফলমূল, সঠিক পরিমাণে পানি পান করা, পর্যাপ্ত ব্যায়াম ও চিন্তামুক্ত ঘুম প্রয়োজন। এসব নিয়ম মেনে চললে চুলের সমস্যা সমাধান হওয়া উচিত। তবে খুশকি ও অন্যান্য সমস্যা যেমন চুল পড়া ও চুলের ডগা ফেটে যাওয়া রোধ করতে প্রয়োজন চুল ও তালু পরীক্ষা করা ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা।
চুলের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা প্রয়োজন। অনেক শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণ চুল পড়া। তাই অবহেলা না করে এর সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। চুল খুব হালকা বা টাক হওয়ার আগেই চুল পড়া প্রতিরোধ করুন। সচেতন হোন।
চুল অতিরিক্ত পার্ম করা, অপর্যাপ্ত কন্ডিশনিং কিংবা অতিরিক্ত ব্রাশিংয়ের কারণে চুল ফেটে যেতে পারে। এ ছাড়া নিুমানের চিরুনি বা ব্রাশ ব্যবহার এবং সঠিকভাবে চুল না আঁচড়ানোর জন্যও এই সমস্যায় পড়তে পারেন। এ ছাড়া চুল শুকাতে গিয়েও হেয়ার ড্রায়ারের কারণে চুলের আগা ফাটতে পারে।
খুশকির কারণেও চুল শুষ্ক হয়ে ওঠে এবং চুলের আগা ফেটে যায়। চুলের আগা ফেটে গেলে খুবই অস্বাস্থ্যকর দেখায় এবং চুল বড় হয় না। এ ক্ষেত্রে খুশকির সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন। কিছু ব্যক্তিগত কারণ, যেমন­হরমোনের তারতম্য, খারাপ স্বাস্থ্য, বিশ্রামের অভাব ইত্যাদির প্রভাবও চুলের ওপর পড়তে পারে। টেনশন, মানসিক যন্ত্রণা, ঘুম না হওয়া বা কম হওয়া ইত্যাদির কারণেও চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। এ ছাড়া হেয়ার স্প্রে, জেল, মুজ ইত্যাদির অতি ব্যবহার এবং কৃত্রিম রঙ চুলের ক্ষতি করে।
মাথার তালুর দিকে বা ছেলেদের সামনের দিকে চুল পড়ে ফাঁকা হয়ে গেলে অবহেলা না করে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। বর্তমানে টাক চিকিৎসায় নতুন নতুন ওষুধ সংযোজন হয়েছে। টাকের কারণ ও ধরন নির্ণয় করে সাধারণত এসব ওষুধ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। কিছুটা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা হলেও তা ফলপ্রসূ। সুতরাং চুলপড়া নিয়ে অকারণ দুশ্চিন্তা না করে সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। নানাবিধ চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট না হয়ে সঠিক বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার মাধ্যমে চুল পড়ার চিকিৎসা করলে রোগী সুফল পাবেন।
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা (শনি, রবি ও বৃহস্পতিবার)। ফোনঃ ০১৯১১৫৬৬৮৪২