Wednesday, June 11, 2008

Kidney (কিডনী)

কিডনীর পাথর

মিশরের আল হামরা সমাধি ড়্গেত্র থেকে উদ্ধারকৃত ৭০০০ বৎসরের পুরাতন মমির মূত্র থলিতে পাথর পাওয়া গেছে। এই মমিটাই এখন পর্যন্তô আবিস্কৃত সবচেয়ে পুরাতন পাথুরে রোগে আক্রান্তô মানুষ। সেই প্রাচীন মিশরে পাথুরে রোগে আক্রান্তô ব্যক্তির উপর শল্য চিকিৎসা প্রয়োগের কোন পদ্ধতি জানা ছিল না বলে প্রতিয়মান হয়। প্রাচীন ভারত বর্ষে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মূত্র তন্ত্রের পাথুরে রোগ সম্পর্কে জানা যায়। চারাকা ছিলেন রাজা সাথিয়া (ঝপুঃযরধ)-র ব্যক্তিগত চিকিৎসক। সাথিয়া সেই সময় মূত্রনালি পাথর হুক দিয়ে টেনে বের করার পরামর্শ দিয়ে ছিলেন। প্রাচীন গ্রীসের চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নত ছিল। হিপোক্রেটিসের বর্ণনা কিডনী ও মূত্রতন্ত্রের পাথর ও তার চিকিৎসা পদ্ধতি পাওয়া যায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন বিবর্তনের মধ্য দিয়ে কিডনী ও মূত্রতন্তেôর পাথর চিকিৎসা বর্তমান আধুনিক অবস্থায় এসেছে। কিডনীতে পাথর তৈয়ার হওয়ার কারণগুলো জটিল, মালটি ফ্যাকটোরিয়াল এবং এখনও বেশ স্পষ্ট নয়। ইউনারি স্টোনের উপাদান হচ্ছে কৃষ্টালয়েড ও অরগানিক ম্যাট্রিঙ্। মূলত ইউরিন সুপার সেজুরেটেট হলে পাথর তৈয়ার প্রক্রিয়া শুরম্ন হতে পারে। এই সুপার সেজুরেসন নির্ভর করে ইউরিনের চঐ , আয়নিক ষ্ট্রেন্থ এবং সলুউটের ঘনত্বের উপর। ইউরিনে কিছু স্টোন ইনহিবিটর থাকে যাদের উপস্থিতির হেরফেরের কারণে পাথর হতে পারে। সাধারণত কিডনী বা মূত্র তন্তেôর পাথর হলে ৭৫% রোগীর ড়্গেত্রে ব্যথা নিয়ে আসতে পারে। তীব্র ব্যথা হঠাৎ করে আরম্ভ হয় এবং এই ব্যথা মেরম্নদন্ডের পাশে বড়্গ খাচার নীচে অনুভূত হয়। এই ব্যথা পেটের সামনের দিকেই অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা পাথরের অবস্থানের তারতম্যের জন্য অনুভবের স্থানেরও তারতম্য হয়। পাথর উপর বা মধ্য ইউরেটারে থাকলে ব্যাথা কিডনী বরাবর জায়গা থেকে শুরম্ন হয়ে পেটের নীচের দিকে অনুভূত হতে থাকে। বা বাকা ব্যন্ডের মত বিতৃত হতে পারে। পাথর ইউরেটারের নীচের দিকে থাকলে ব্যথা অনুভূত হয় এবং এই ব্যথা পুরম্নষের ড়্গেত্রে টেস্টিস বা অন্ডোকোষে এবং স্ত্রীলোকের ড়্গেত্রে ল্যাবিয়া মোজোরাতে অনুভূত হয়। পাথর ইউরেটার ও ইউরিনারি বস্নাডারের অন্তôবর্তি স্থানে হলে ব্যথা অনেক সময় প্রোস্টাটাইটিস, সিসটাইটিস বা ইউরেথ্রাইটিস হিসেবে ভুল হতে পারে। কিডনীতে পাথর থাকার অন্য লড়্গণ হল রক্ত বর্ণ প্রস্রাব, প্রস্রাবের সাথে এই রক্ত যাওয়া কখনও কখনও খালি চোখে দেখা না যেতে পারে। ঘন ঘন প্রস্রাব, জ্বর বা প্রস্রাবের জ্বালা যন্ত্রনা নিয়ে অনেকে আসতে পারেন। প্রস্রাব পরীড়্গা, এরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীড়্গায় সাহায্যে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। কিডনীর পাথর চিকিৎসায় পাথরের আকার, আকৃতি ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে শরীরের বাইরের থেকে শকওয়েভ (ঊঝডখ) দিয়ে ভেঙ্গে বের করে আনা যায় (চঈঘখ) কিংবা অস্ত্রপচার করে পাথর বের করা যায়। মধ্য ও নিম্ন ইউরেটারের পাথর আকার ও আকৃতির উপর নির্ভর করে প্রস্রাবের রাচ্চার ভিতর দিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে ভেঙ্গে বের করে আনা যায় (টজঝ ্‌ ওঈচখ) বা অপারেশন করে বের করে আনা যায়। পাথর মূত্র থলিতে থাকলে আকার অনুযায়ী এটাকে যন্ত্রের সাহায্যে ভেঙ্গে মূত্রনালীর ভিতর দিয়ে বের করে আনা যায় অথবা অপারেশন করা যায়। কিডনীর পাথর চিকিৎসায় ব্যবহৃত উন্নমানের প্রায় সকল চিকিৎসা পদ্ধতি বাংলাদেশ বিদ্যমান রয়েছে এবং বাংলাদেশের কৃতি ইউরোলজিস্টরা সাফল্যজনকভাবে এই সব চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগ করছেন। ঊীঃৎধ পড়ৎঢ়ড়ৎবধষ ংযড়পশ ধিাব ষরঃযড়ঃৎরঢ়ংু এমন একটা পদ্ধতি যা দ্বারা শরীরের বাহির থেকে যন্ত্রের সাহায্যে সক ওয়েভ পাঠিয়ে পাথর ভেঙ্গে ফেলা হয়। ঊঝডখ করে পাথর ভাঙ্গার জন্য যে বিষয়গুলো গুরম্নত্ব দেয়া হয় তা হলো পাথরের উপাদান, আকার, অবস্থান ও ইউরেটারের পেটেন্সি। সাধারণত যে সমচ্চ পাথরের আকৃতি ২ সেন্টি মিটারের কম নন ইমপেকটেড আপার ইউরেটারিক স্টোন বা ২ সেন্টি মিটারের কম টৎরহধৎু বস্নাডার স্টোন ঊঝডখ দ্বারা ভাঙ্গা যায়, যদি অনিয়ন্ত্রিত রক্তপাতজনিত রোগ থাকে বা গর্ভবতী মায়েদের ড়্গেত্রে ঊঝডখ ব্যবহার করা যায় না, এ ছাড়াও ইউরিনারি ট্রাক ইনফকেশন, পাথরের নীচের দিকে ইউরেটার বন্ধ, কার্ডিয়াক পেসমেকার, রেনাল ফেইরিয়র বা সিসটিন স্টোনের ড়্গেত্রে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে ঊহফড়ংপড়ঢ়রপ যন্ত্রের সাহায্যে ছোট একটি ফুটো করে কিডনীর পাথর ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে বের করে নিয়ে আসা হয়। বড় পাথর, সিসটিন পাথর কিংবা যাদের ঋওঘী করা যাচ্ছে না সেসব ড়্গেত্রে এ পদ্ধতিতে রোগীর পিছনের দিক দেয় উ-টরব মেশিনের সাহায্যে কিডনীতে ফুটো করে একটি টিউব বসিয়ে দেয়া হয। এই টিউবের মধ্যে দিয়ে নেফ্রোসকোপ মেশিন ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এরপর মনিটরের পর্দায় পাথরটি দেখে লিথোট্রিপটর নামক অন্য একটি মেশিনের সাহায্যে পাথর ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে যন্ত্রের সাহায্যে বের করে আনা হয়। টজঝ বা টৎবঃবৎড় জবহড়ংপড়ঢ়ু হচ্ছে আরেকটি আধুনিক পদ্ধতি যার সাহয্যে মূত্রনালীর ভিতর দিয়ে ইউরেটার এবং রেনাল পেলভিস সরাসরি দেখা যায়। এ যন্ত্রের বহুবিধ প্রয়োগ রয়েছে। এখানে এ যন্ত্রের সাথে ওহঃৎরপড়ৎঢ়ড়ৎবধষ চহবঁসধঃরপ খরঃযড়ঃৎুঢ়ংু মেশিনের সাহায্যে ইউরেটারে পাথরের যে চিকিৎসা করা হয় তাই আলোচনা করব। প্রস্রাবের রাস্তôা দিয়ে ইউরেটারে পৌছে সরাসরি মনিটরের পর্দায় ইউরেটারে পাথর দেখে তা অউyে যন্ত্রের সাহায্যে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে বের করে নিয়ে আসা হয়। এ পদ্ধতিটি মিড এবং লোয়ার ইউরেটারিক ষ্টোনের ড়্গেত্রে বেশি কার্যকর। আপার ইউরেটারিক স্টোনকে ঠেলে কিডনীতে পাঠিয়ে দিয়ে পরে ঊঝডখ করা যায়। অনেক সময় লোয়ার বা মিড ইউরেটারিক স্টোন ভাঙ্গার সময় কিডনীতে চলে যেতে পারে, সেড়্গেত্রে পরে ঊঝডখ করে নিতে হয়। কিডনীতে একবার পাথর হলে তা বার বার হতে পারে। তাই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে এর পুনরাবৃত্তির হার কমিয়ে আনা যায়। সাধারণত যে সব এলাকায গরম বেশি সে সব জায়গায় লোকদের মধ্যে কিডনী পাথর বেশি দেখা যায়। এর কারণ হচ্ছে প্রধানত অতিরিক্ত গরমের ফলে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়, ফলে প্রসাবের পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে শরীর বৃত্তির কার্যকারণে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই এসবËেড়্গত্রে পানি বেশি খেতে হবে। পানি খাবার পারিমাণ খাদ্য গ্রহণের ৩ ঘন্টার মধ্যে বেশি হতে হবে, যখন প্রচুর পরিশ্রম করা হয় তখনও পানি বেশি খেতে হবে, পানির পরিমাণ এমন হতে হবে যাতে ২৪ ঘন্টার প্রস্রাবের পরিমাণ ৩ লিটার বা তা র বেশি হয়। পুন পৌনিকভাবে যাদের কিডনীতে পাথর হয় তাদের ড়্গেত্রে েদেখা গেছে খাদ্যভাস একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে। প্রোটিন কিডনী দিয়ে ক্যালসিয়াম, অালেট ও ইউরিক এসিডের নিঃসরণ বাড়ায়। এই এসিড কিডনী থেকে ক্যালসিয়াম অ্যাবজরসন কমায়। এসব বিপাক ক্রিয়ার ফলে কিডনীতে পাথরের সম্ভবানা বেড়ে যায়। যাদের কিডনীতে বার বার পাথর হয় তাদেরকে দৈনিক প্রোটিন গ্রহণ বেশি না করা শ্রেয়। ডায়েটরি ফাইবারে ফাইটিক এসিড থাকে যা অন্ত্রের ক্যালসিয়ামের সাথে যুক্ত হয়ে ক্যালসিয়ামের অ্যাবজরসন কমিয়ে দেয়। ফাইবার যুক্ত খাদ্য যেমন গম, সয়া, চাউলের ভূসি স্টোন রিকারেন্স কমায়। যেসব খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও অালেট বেশি আছে যেমন দুধ, পানির ইত্যাদি রিকারেন্ট স্টোনের রোগীদের কম খাওয়া উচিৎ। অধিক লবণযুক্ত খাদ্য কিডনীতে পাথরের ঝুঁকি বাগড়ায় তাই যাদের কিডনীতে বার বার পাথর হয় তাদের অধিক লবণযুক্ত খাদ্য কম খাওয়া ভাল। এছাড়াও যাদের কিডনীতে বার বার পাথর হয় তাদেরকে পাথর এনালাইসিস করে স্পেসিফিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ০ ডঃ মুহাম্মদ হোসেন সহকারী অধ্যাপক, ইউরোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় চেম্বারঃ ঢাকা রেনাল সেন্টার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল ৫, গ্রীণ কর্ণার, গ্রীণ রোড, ঢাকা। ফোন- ৮৬২১৮৪২-৩

মূত্রপথের সংক্রমণ ও কিডনি রোগ
ডাঃ মিজানুর রহমান কলেস্নাল
চেম্বারঃ কমপ্যাথ লিমিটেড
১৩৬, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।

কিডনীর পাথর

ইউটিআই বা মূত্রপথের সংক্রমণের প্রত্যেকেরই রোগের উপসর্গ থাকে না। তবে অধিকাংশ লোকের কিছু উপসর্গ বা লড়্গণ থাকে। এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে ঘনঘন প্রস্রাব করার তাড়া এবং প্রস্রাব করার সময় মূত্রথলি বা মূত্রনালি এলাকায় ব্যথা ও জ্বালাপোড়া অনুভব করা। এক পর্যায়ে দেখা যায় আপনি প্রস্রাব করছেন না অথচ ক্লান্তô, বিচলিত হয়ে পড়েছেন এবং ব্যথা অনুভব করছেন। সচরাচর মহিলারা তলপেটে অস্বস্তিôকর চাপ অনুভব করেন এবং কিছু পুরম্নষ মলনালি পায়খানায় ভরে ওঠার অভিজ্ঞতা লাভ করেন। মূত্রপথের সংক্রমণের অনেক রোগী অভিযোগ করেন যে তাদের ঘনঘন প্রস্রাবের পরিবর্তে খুব সামান্য পরিমাণ প্রস্রাব হচ্ছে। প্রস্রাব দুধের মতো অথবা ঘোলা হতে পারে। এমনকি লালচে হতে পারে যদি প্রস্রাবে রক্ত থাকে। যদি জ্বর থাকে তাহলে বুঝতে হবে সংক্রমণ কিডনিতে ছড়িয়েছে। কিডনির অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে পিট ব্যথা অথবা পাঁজরের নিচের দুই পাশে ব্যথা, বমিবমি ভাব, অথবা বমি।

শিশুদের ড়্গেত্রে মূত্রপথের সংক্রমণকে অধিকাংশ মা-বাবাই উপেড়্গা করেন অথবা এটাকে অন্য সমস্যা বলে মনে করেন। যদি শিশু খিটখিটে হয়ে যায়, স্বাভাবিকভাবে খেতে না চায়, দীর্ঘদিন জ্বর থাকে, পাতলা পায়া না হয় কিংবা স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার মূত্রপথে সংক্রমণ হয়েছে।

এড়্গেত্রে অবশ্যই চিকিৎসককে দেখাতে হবে। যদি শিশুর প্রস্রাবের ধরনে কোন পরিবর্তন লড়্গ্য করেন, তাহলেও অবশ্যই চিকিৎসককে দেখাবেন।

ঘন ঘন প্রস্রাব ও দীর্ঘ স্থায়ী কিডনি রোগ

মূত্র পথের সংক্রমণের কারণে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হতে পারে। আমরা জানি যে, অধিকাংশ মূত্রপথের সংক্রমণে ঘনঘন প্রস্রাব হয়। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগেও ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। অবশ্য এটা সাধারণতঃ হয় রাতের বেলা। এছাড়া এ রোগে ড়্গুধামন্দা, বমিবমি ভাব, অল্পতে ক্লান্তô হওয়া, গায়ের রঙ কালচে হওয়া, চোখের পাতা ও পা ফুলে যাওয়া প্রভৃতি লড়্গণ দেখা দেয়। সাধারণতঃ কিডনির প্রদাহ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস শতকরা ৮০ ভাগ ড়্গেত্রে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের জন্য দায়ী। এ ড়্গেত্রে পরবর্তীকালে কিডনি বিকল হয়ে যায়। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা যায় এবং সঠিক চিকিৎসা প্রদান করা যায় তাহলে কিডনি বিকল বিলম্বিত করা সম্ভব। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো যারা এ রোগে ভুগছেন, তারা হার্টস্ট্রোক ও ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্তô হতে পারেন। এদের মৃত্যুর হার সাধারণ মানুষের চেয়ে ১০-১০০ গুণ বেশি।

যদি আপনি ৫০ বছরের কম বয়সী পুরুষ হন তাহলে আপনার প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম। এ ক্ষেত্রে সাধারণত এক কোর্স অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। কখনো কখনো মূত্রথলি, প্রোস্টেট কিংবা কিডনি দেখার জন্য পরীক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হয়, বিশেষ করে তিন মাসের মধ্যে যদি দু’বার বা তার বেশি বার ইনফেকশন হয়, অথবা যদি কিডনি সংক্রমিক হয়।
এই লেখাটিতে আমি শুধু পুরুষদের প্রস্রাবে ইনফেকশনের কথা উল্লেখ করছি। যেসব যৌনবাহিত রোগে যেমন ক্লামাইডিয়ার কারণে মূত্রনালী সংক্রমিত হয় এবং যার কারণে একই ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়­ সেসব এখানে আমি উল্লেখ করছি।

প্রস্রাব বা মূত্রপথ সম্পর্কে ধারণা
পেটের দু’পাশে দুটো কিডনি থাকে। এরা প্রস্রাব তৈরি করে। এই প্রস্রাব কিডনি বা বৃক্কনালী দিয়ে নেমে মূত্রথলিতে যায়। প্রস্রাব মূত্রথলিতে জমা থাকে এবং আমরা যখন টয়লেটে যাই তখন প্রস্রাব মূত্রথলি থেকে মূত্রনালী পথে বের হয়ে আসে।

প্রস্রাবে ইনফেকশন কী এবং তার কারণগুলো কী?
বেশির ভাগ প্রস্রাবে ইনফেকশন ঘটায় ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু। এই ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুগুলো আসে আপনার নিজস্ব অন্ত্র থেকে। অন্ত্রে এগুলো কোনো ক্ষতি করে না, কিন্তু শরীরের অন্য কোনো অঙ্গে এরা গেলে তখন ক্ষতি করে। কিছু ব্যাকটেরিয়া আপনার পায়ুপথে অবস্থান করে (মলত্যাগের পর এটা হয়)। এসব ব্যাকটেরিয়া কখনো কখনো আপনার মূত্রনালী দিয়ে মূত্রথলিতে প্রবেশ করে। কিছু ব্যাকটেরিয়া প্রস্রাবের মধ্যে বলিষ্ঠ হয় এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটিয়ে ইনফেকশন ঘটায়।
ঘন ঘন ইনফেকশন হয় মূত্রথলিতে। একে বলে সিস্টাইটিস বা মূত্রথলির প্রদাহ। কখনো কখনো এই ইনফেকশন একটি বা দুটো কিডনিতেই ছড়িয়ে যায়। প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে চিকিৎসকরা সচরাচর তাকে বলেন ‘মূত্রপথের সংক্রমণ বা ইউটিআই’।
প্রস্রাবে ইনফেকশন কাদের বেশি হয়?
৫০ বছরের কম বয়সী পুরুষদের প্রস্রাবে ইনফেকশন খুব কম হয়। অধিক বয়সী পুরুষদের এটা অতি সাধারণ। ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৩ জনের এবং ৮০ বছর বয়সী পুরুষদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ১ জনের প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়। (প্রস্রাবে ইনফেকশন সবচেয়ে বেশি হয় মহিলাদের। এর কারণ হলো মহিলাদের মূত্রনালী অনেক ছোট এবং তা মলদ্বারের কাছে থাকে)।
কেন কিছু পুরুষের প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়?
অনেক ক্ষেত্রে প্রস্রাবে ইনফেকশনের সুস্পষ্ট কারণ পাওয়া যায় না। মূত্রথলি, কিডনি, প্রোস্টেট কিংবা শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থারও কোনো সমস্যা পাওয়া যায় না। এটা স্রেফ ‘উপরোক্ত বিষয়গুলোর একটি’। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিচের যেকোনো একটি সমস্যা প্রস্রাবে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। সমস্যাগুলো হচ্ছেঃ

প্রোস্টেট বড় হওয়া
এটা মূত্রথলি ঠিকমতো খালি হতে বাধা দেয়। তখন কিছু প্রস্রাব মূত্রথলিতে থেকে যেতে পারে। এই জমা থাকা প্রস্রাবে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এবং ইনফেকশন ঘটায়। ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে বড় প্রোস্টেট একটি সাধারণ সমস্যা।

মূত্রথলি বা কিডনির সমস্যা
মূত্রথলি ও কিডনির সমস্যাগুলো আরো বেশি ইনফেকশন ঘটাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিডনিতে পাথর হলে প্রস্রাব ঠিকমতো বের হতে পারে না।

অরক্ষিত পায়ুসঙ্গম
এটা খুবই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস। যারা এটা করে তাদের ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।

দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
যাদের শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল, তাদের যেকোনো ইনফেকশনের ঝুঁকি বেশি থাকে, এর মধ্যে প্রস্রাবের ইনফেকশনও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার এইডস থাকে কিংবা কেমোথেরাপি নেন তাহলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কী?

মূত্রথলিতে ইনফেকশন (সিস্টাইটিস)
এ ক্ষেত্রে সাধারণত প্রস্রাব করার সময় ব্যথা করে। ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। আপনার তলপেটে ব্যথা হতে পারে, প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে এবং জ্বর থাকতে পারে।

কিডনিতে ইনফেকশন
এ ক্ষেত্রে কোমরের পশ্চাদ্ভাগে (কিডনির উপরে পেটের পাশে) ব্যথা হতে পারে। বমি বমি ভাব, বমি, পাতলা পায়খানা হতে পারে, সার্বিকভাবে আপনি অসুস্থ বোধ করতে পারেন।
কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে কি?
প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করা যেতে পারে এবং ইনফেকশন ঘটানোর জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করা যেতে পারে। যদি আপনার অন্য কোনো সমস্যা সন্দেহ করা হয় (যেমন প্রোস্টেট বড় হওয়া কিংবা কিডনি সমস্যা) তাহলে চিকিৎসক আপনার কিডনি, প্রোস্টেট বা মূত্রথলি পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন। যদি অ্যান্টিবায়োটিকে ইনফেকশন না সেরে যায় অথবা যদি আপনার নিচের সমস্যাগুলো থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন রয়েছে­
­ যদি আপনার কিডনি সংক্রমিত হওয়ার লক্ষণগুলো থাকে।
­ যদি আপনার বারবার প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়। (উদাহরণস্বরূপ তিন মাসে দু’বার কিংবা তার বেশি)।
­ যদি অতীতে আপনার কিডনির সমস্যা থাকে। (যেমন­ কিডনিতে পাথর অথবা কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া)।
­ যদি প্রস্রাবের প্রবাহপথে কোনো প্রতিবন্ধকতার লক্ষণ থাকে।
এসব পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে আপনার কিডনি বা মূত্রথলির স্ক্যান করা এবং বিশেষ টেলিস্কোপের সাহায্যে আপনার মূত্রথলির ভেতরটা দেখা­ যাকে বলে সিস্টোস্কপি।

পুরুষের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের ইনফেকশনের চিকিৎসা
প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে প্রথমেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। আমাদের অনেকেই প্রস্রাবের ইনফেকশন হলে নিজের ইচ্ছেমতো ফার্মেসিতে গিয়ে যত্রতত্র ওষুধ কিনে এনে খান­ যা পরে তার অবস্থাকে আরো জটিল করে তোলে।

অ্যান্টিবায়োটিক
এক কোর্স অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত প্রস্রাবের ইনফেকশন দূর করে। কিন্তু আপনি কোন অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করবেন সেটা নির্ধারণ করে দেবেন আপনার চিকিৎসক। যদি অ্যান্টিবায়োটিকে আপনার উপসর্গগুলো চলে না যায় তাহলে চিকিৎসককে জানান। কিছু ব্যাকটেরিয়া কিছু অ্যান্টিবায়োটিককে প্রতিরোধ করতে সক্ষম। সেগুলোকে প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত করা যাবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়।

প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রফেন
সাধারণত এলো ব্যথা, অস্বস্তি বা জ্বর কমিয়ে থাকে।

অতিরিক্ত তরল গ্রহণ
যদি আপনার সিস্টাইটিস থাকে তাহলে অনেকেই উপদেশ দেন যে, আপনাকে মূত্রথলি ধৌত করার জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে। অবশ্য এটা যে উপকারী তার কোনো প্রমাণ নেই। অনেক চিকিৎসক মনে করেন, এতে কোনো উপকার হয় না, বরং বেশি পানি পান করলে ঘন ঘন টয়লেটে যেতে হয়, যা আরো যন্ত্রণাদায়ক। সুতরাং এটা বলা মুশকিল যে, আপনার সিস্টাইটিস হলে বেশি পানি পান করবেন নাকি স্বাভাবিক যেটুকু পান করছেন তাই পান করবেন।

কারণ অনুসন্ধান
আপনার প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করতে হবে।

মূত্রথলির প্রদাহ
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল

মূত্রথলির প্রদাহকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে সিস্টাইটিস। সাধারণত সংক্রমণ বা ইনফেকশনের কারণে এটা ঘটে। অনেক সময় এটা কোনো উপসর্গ সৃষ্টি করতে নাও পারে, আবার অনেক সময় প্রস্রাব করতে গিয়ে এটা ব্যথা কিংবা জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে।
ষ অল্প বয়স্ক পুরুষদের সত্যিকারের মূত্রথলির প্রদাহ খুব বিরল। সত্যিকারের মূত্রথলির প্রদাহ বলতে বোঝায়, মূত্রতন্ত্রে কোনো অস্বাভাবিকতা যা ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রে মূত্রথলিতে যে অস্বাভাবিকতা হতে পারে তা হচ্ছে মূত্রথলির দেয়ালে পকেটের আকারের থলি অথবা মূত্রথলিতে পাথর।
ষ অল্প বয়স্ক পুরুষদের প্রস্রাবে যন্ত্রণা হলে মাঝে মাঝে তারা ভাবে যে তাদের বুঝি সিস্টাইটিস রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর কারণ হচ্ছে মূত্রনালীতে প্রদাহ। মূত্রনালী হচ্ছে একটা নল যা মূত্রথলি থেকে পুরুষাঙ্গের মধ্য দিয়ে পুরুষাঙ্গের মাথার ছিদ্র পর্যন্ত চলে যায়। মূত্রনালীতে প্রদাহ হলে তাকে বলে ইউরেথ্রাইটিস। সচরাচর যৌনবাহিত সংক্রমণ যেমন ক্ল্যামাইডিয়া দ্বারা এটা ঘটে।
ষ বয়স্ক পুরুষদের মূত্রথলিতে প্রদাহ অল্প বয়স্ক পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি হয়। সাধারণত ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সে এ ধরনের সমস্যা বেশি হয়। এর কারণ হচ্ছে মধ্যবয়স থেকে সচরাচর প্রোস্টেটগ্রন্থি বড় হতে শুরু করে। বড় প্রোস্টেট গ্রন্থি মূত্রথলিতে সম্পূর্ণ খালি হতে বাধা দেয়। এর ফলে মূত্রথলিতে থেকে যাওয়া প্রস্রাবে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় এর বংশ বৃদ্ধি করে।
কী করবেন
ষ যদি প্রস্রাব করার সময় আপনি ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি হলো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। কারণ আপনার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে এবং চিকিৎসকই সেটা ভালো বুঝবেন। আপনার যৌনবাহিত সংক্রমণ যেমন ক্ল্যামাইডিয়া ও গনোরিয়া আছে কি না চিকিৎসক তাও পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। উল্লেখ্য, ক্ল্যামাইডিয়া ও গনোরিয়া মূত্রনালীতে প্রদাহ ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। আপনার সত্যিকারের সিস্টাইটিস বা মূত্রথলির ইনফেকশন আছে কি না তা দেখার জন্য প্রস্রাব পরীক্ষারও প্রয়োজন হয়।
ষ যদি আপনার প্রস্রাবে সংক্রমণ থাকে, তাহলে আপনার মূত্রতন্ত্রে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি না তা দেখার জন্য আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রযোজন হয়। এ ক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসক আপনাকে এক্স-রে, আল্ট্রাসাউন্ড অথবা আইভিইউ (ইনট্রাভেনাস ইউরোগ্রাম) করতে দেবেন।
চেম্বারঃ কমপ্যাথ লিমিটেড, ১৩৬ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা। সোম, মঙ্গল, বুধবার)। যুবক মেডিকেল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ পুরাতন ২৮, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা। (শনি, রবি, বৃহস্পতি) মোবাইলঃ ০১৫৫২৩৪৫৭৫৪, ০১৭১৬২৮৮৮৫৫

কিডনি রোগ প্রতিরোধ করম্নন

কিডনি রোগের প্রকোপ অত্যন্তô ব্যাপক কিন্তু গোপনে বাড়তে থাকে এই রোগ। বলা যেতে পারে নীরব ঘাতক, এবং এটি একটি সমস্যাও বটে। এর লড়্গন গুলো স্পষ্টভাবে আগে রোগীরা বুঝে উঠতে পারে না।

সচেতন হলে যে কেহ আগে জেনে নিতে পারেন যে তিনি ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্তô হতে যাচ্ছেন কিনা। শুধুমাত্র প্রস্রাব রম্নটিন পরীড়্গা এবং রক্তের কিছু পরীড়্গা তাকে মারাত্মক কিডনী রোগের পরিনতি থেকে বাঁচাতে পারে। অর্থাৎ বাঁচাতে পারে তার জীবন। কিডনি এমন একটি অঙ্গ যা অতিরিক্ত কাজের চাপ নিয়েও কর্মড়্গম থাকতে চেষ্টা করে। আর সে কারনেই ৭৫-৮০ ভাগ কিডনী নষ্ট না হলে বুঝতেই পারে না যে সে এমন একটি ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্তô হয়েছে। ঐ অবস্থায় যখন বোঝে তখন কিডনি বিকল ঠেকানো সম্ভব হযে ওঠে না, চেষ্টা করা হয় আরও কিছু সময় টিকিয়ে রাখা।

প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকা এ্যসোসিয়েশন অফ নেফরোলজী এন্ড ট্রান্সপ্রন্টটেশন (ঝখঅঘঞ) এই উপলদ্ধি থেকে গত ফেব্রম্নয়ারী মাসে বিশ্ব কিডনি দিবসে বিপুল আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে, যাতে করে সাধারণ মানুষ এই রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।

বিশ্ব ব্যপি কিডনি রোগী সংখ্যা এবং এর কারণে মৃত্যুর সংখ্যা সঠিক ভাবে গননা করা হয়ে ওঠে না। কারণ একজন হৃদরোগে মারা গেলেন ফলে তারিকায় মৃত্যুর কারণ হৃদ রোগ উলেস্নখ করা হলো। অথচ ঐ রম্নগীর কিডনি রোগ ছিলো এবং কিডনি রোগ মূলতঃ মৃত্যুর জন্য দায়ী। কেননা দেখাগেছে ক্রনিক কিডনি ডিজিজে যারা ভোগছে তাদের যতভাগ রম্নগী কিডনি ফেইলুর হয়ে মারা যায় তার চেয়ে দশগুণ মারা যায় হৃদরোগে আক্রান্তô হয়ে। পরীসংখ্যানে দেখা গেছে কিডনি রোগের শেষ ধাপে পৌঁছে গিয়ে কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যু বরন করে তাদের নামই শুধু লিপিবদ্ধ করা হয় যে কিডনি রোগে মৃত্যুর কারণ। কিডনি বিকল পর্যায়ের রম্নগীকে ডায়ালাইসিস এবং পরবর্তিতে কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বাচিয়ে রাখা হয়। ডায়ালাইসিস এবং প্রতিস্থাপন এতো ব্যায় বহুল যে এদেশের ৯৫% ভাগ মানুষের পড়্গেই এই চিকিৎসা গ্রহন করা সম্ভব হয় না। শুধু মাত্র ডায়ালাইসিস (যন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত পরিশুদ্ধ করা) বছরে একজন রম্নগীর প্রায় ৪,০০,০০০ টাকা খরচ হয়। এবং কিডনি পাওয়া সাপেড়্গে কিডনি প্রতিস্থাপনে খরচ কম বেশী পাঁচ লড়্গ টাকা, এছাড়া ঔষধের খরচ বাকী জীবনে চালিয়ে যেতে হবে। একজন ডায়ালাইসিস পর্যায়ের রম্নগীর চিকিৎসা এবং প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি পর্বে শুধু মাত্র যে প্রচুর খরচই পরিবাকে বহন করতে হয় তাই নয় সেই সাথে একটি পুরো পরিবারের মানসিক বিপর্যয়, সময় ব্যায়, স্কুলগামী সন্তôানদের পড়াশুনার বিঘ্নতা সহ পুরো পরিবারের জীবন যাত্রা বিশৃঙ্খল হয়ে পরে। অথচ অতিসাধারণ ইউরিন অর্থাৎ প্রশ্রাব পরীড়্গার মাধ্যমে এলবুমিনের উপস্থিতি, আরও সুনিশ্চিত রোগ নির্ণয়ে সুড়্গ পরীড়্গার মাধ্যমে মাইক্রো এলবুমিনের উপস্থিতি, অথবা রক্ত পরীড়্গায় সিরাম ক্রিয়েটিনিন নির্নয়ের মাধ্যমে কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায় করা সম্ভব, ফলে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে রোগ নিরাময়ের দ্রম্নত পদড়্গেপ নেয়া সম্ভব।

রোগ সৃষ্টির প্রদান কারণ কি কি

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং নেফ্রাইটিস সবচেয়ে বেশী কিডনি রোগ সৃষ্টির কারণ, এছাড়াও রয়েছে ইনফেকশন, প্রশ্রাব নিঃস্কাষনে বাঁধা, বংশগত কারণ প্রভৃতি।

প্রাথামিক অবস্থায় রোগ নিরাময়ের উপায়ঃ

জীবন যাপন, পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বিএম আই এবং ওয়েষ্ট এন্ড হীপ রেশিও আদর্শ পর্যায় নিয়ে আসা, নিয়মিত পরিমিত ব্যায়ম, ধূমপান, এলকোহল পানকে ‘না’ বলা প্রভৃতি পদড়্গেপ গ্রহন করা।

উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস অবশ্যই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার জন্য নিয়মাবলী কঠোরভাবে মেনে চলা। বিশ্ব স্বাস্থ্য (ডঐঙ) ইতিমধ্যে সতর্ক বাণী ঘোষণা করেছে ২০২৫ সালের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস সেই সাথে হৃদ রোগ এবং কিডনি রোগ মারাত্মক গানিতিক সংখ্যায় পৌঁছাবে।

ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেমিনারও আলোচনায় আমরা বলেছি বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোন না কোন কিডনী রোগে ভুগছে। দূষিত ও ভেজাল যুক্ত খাদ্য গ্রহনে এ সংখ্যা আরও দ্রম্নত বাড়ছে। রোগ নির্ণয়, পরামর্শ, চিকিৎসা সহ বিভিন্ন কার্যক্রমে বিভিন্ন অর্গানাইজেশন ক্রমান্বয়ে কিডনী রম্নগীদের জন্য এগিয়ে আসছে।

সম্প্রতি ক্যাম্পস (কিডনি এ্যায়ারনেস মনিটনিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটি) প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্নয় এবং পরামর্শ এবং এ সংক্রান্তô বিভিন্ন শিড়্গা মূলক লিফলেট, নির্দেশনা পত্র, প্রদানের উদ্দেশে সেবা কেন্দ্র চালু করেছে। ঢাকায় মগবাজারস্থ ওয়ারলেস মোড়,, ‘রাশমনো হাসপাতাল’ সংলগ্ন ক্যাম্পস কার্যালয়ে, ফোনঃ ৮৩৫৮৬২২ যোগাযোগ করা যেতে পারে।

এ কথা অবশ্যই সবাইকে মনে রাখতে হবে রোগ নিরাময় চিকিৎসার চাইতে রোগ প্রতিরোধ চেষ্টা উত্তম। প্রাথামি অবস্থায় রোগ নির্নয় করা গেলে রোগ নিরাময় দ্রম্নত সহজ হয়। স্বাস্থ্য সচেতনতাই স্বাস্থ্য সুরড়্গার চাবি কাঠি।

০ প্রফেসর (ডাঃ) এমজ্ঝ এজ্ঝ সামাদ

চিফ কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান

ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও

চেয়ারম্যান, ক্যম্পস


কিডনির রোগ ও যত্ন-আত্তি
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা

শিমের বিচির মতো দেখতে আমাদের দুটি কিডনি। হাতের মুঠি যে পরিমাণ, সে পরিমাণ আয়তন এর। পিঠের মধ্যস্থলের কাছাকাছি এর অবস্থান, পাঁজরের খাঁচার ঠিক নিচে।
কিডনি দুটি রক্ত পরিস্রবণ করে। কিডনি কাজ করে ছাঁকনি বা পরিস্রাবকের মতো। এই পরিস্রবণের কাজ চলে কিডনির খুব সূক্ষ্ম অসংখ্য এককের মধ্যে। এই এককগুলোর নাম হলো নেফ্রোন। একটি কিডনির মধ্যে রয়েছে ১০ লাখ নেফ্রোন।
দেহের বর্জø ও বাড়তি পানি এরা সরিয়ে ফেলে, যা মূত্র হিসেবে নির্গত হয়। মূত্র প্রবাহিত হয় মূত্রনালি দিয়ে, জমা হয় মূত্রথলিতে।
কিডনি দুটিতে রক্ত চলাচল হয় অনেক। প্রতি মিনিটে প্রায় এক হাজার ২০০ মিলিলিটার রক্ত কিডনি দুটি দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ থেকে ১২০-১২৫ মিলিলিটার প্রতি মিনিটে পরিস্রুত হয় কিডনি দিয়ে, এই হারকে বলে গ্লুমেরুলার ফিলট্রেশন রেট বা জিএফআর।
নেফ্রোনের মধ্যে সূক্ষ্ম রক্তনালি বা কৈশিকার জাল হলো গ্লুমেরুলাস। এই অসংখ্য সূক্ষ্ম কৈশিকার জাল দিয়ে পরিশ্রুত তরল হলো গ্লমেরুলার ফিলট্রেট।
স্বাভাবিক জিএফআর (১২০ থেকে ১২৫ মিলিলিটার/মিনিট) থাকলে পূর্ণবয়স্ক লোকের গ্লুমেরুলার ফিলট্রেট প্রতিদিন তৈরি হয় ১৭৫ থেকে ১৮০ লিটার, এর মধ্য থেকে এক দশমিক পাঁচ লিটার বেরিয়ে যায় মূত্র হিসেবে।
দেহের কোষকলার ভাঙন এবং খাদ্য বিপাকের ফলে যে বর্জø তৈরি হয়, তা আসে রক্তে।
খাদ্য থেকে যা প্রয়োজন তা শরীর গ্রহণ করার পর বর্জø চলে আসে রক্তে। কিডনি এই বর্জø সরিয়ে নিতে না পারলে তা জমা হতে থাকে শরীরে, ক্ষতি হয় শরীরের।
কিডনির ভেতরে সূক্ষ্ম যে এককগুলো, রক্তকে পরিশোধন করা যাদের কাজ, এগুলোর ক্ষতি হলে কিডনির রোগ শুরু হয়ে থাকে। দেখা যায়, বছরের পর বছর ধরে আস্তে আস্তে এই ক্ষতি হতে থাকে।
দুটি কিডনিই ক্ষতিগ্রস্ত হয় কখনো। অনেক সময় উপসর্গও থাকে না, তাই রোগী বুঝতেও পারেন না যে কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তিনি।
কিডনি নিষ্ত্র্নিয় হয়ে যাওয়া বা ‘কিডনি ফেইলিওর’ ব্যাপারটি ঘটে কেন? বলা হয়েছিল নেফ্রোনের কথা, এর ওপরই আঘাত আসে। নেফ্রোনের ক্ষতি হঠাৎই হতে পারে, হয়তো আঘাতের জন্য বা বিষক্রিয়ার জন্য।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নেফ্রোনগুলো নষ্ট হতে থাকে ধীরে ও নীরবে। হয়তো বেশ কয়েক বছর পর ক্ষতিটি বুঝতে পারেন রোগী, এর মধ্যে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
কিডনি রোগের পেছনে প্রধান দুটি কারণ হলো ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। আর পরিবারে কারও যদি কিডনির রোগ থাকে, তাহলে এটিও বড় ঝুঁকি।
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস হলে শরীর গ্লুকোজকে ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে না। গ্লুকোজ বিপাক হওয়ার বদলে থেকে যায় রক্তে, আর জমতে থাকে। এ রকম চলতে থাকলে একসময় নেফ্রোনগুলো নষ্ট হতে থাকে। একে বলা হয় ‘ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি’। তাই ডায়াবেটিস থাকলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রেখে ঠেকানো যায় কিডনির রোগ।
উচ্চ রক্তচাপ
উচ্চ রক্তচাপ হলে কিডনির ছোট ছোট রক্তনালির ক্ষতি হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালি রক্ত থেকে বর্জø ছেঁকে ফেলতে পারে না। চিকিৎসক রক্তচাপ কমানোর ওষুধ দিতে পারেন। হতে পারে তা এসিই ইনহিবিটার বা এআরবি-এ রকম ওষুধ।
রক্তচাপ কমায় আবার কিডনিকে সুরক্ষা দেয়-এ রকম ওষুধই পছন্দ করেন চিকিৎসকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের এইএইচবিএলের মত হলোঃ যাদের ডায়াবেটিস আছে বা কিডনির কাজকর্ম হ্রাস পেয়েছে, তাদের রক্তচাপ থাকা উচিত ১৩০/৮০-এর নিচে।
বংশগতি
কিডনির কিছু রোগ হয় উত্তরাধিকার সূত্রে, হতে পারে পরিবার-পরম্পরায়ও। পরিবারের কারও যদি যেকোনো ধরনের কিডনির সমস্যার থেকে থাকে, তাহলে কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।
সুস্থ কিডনি অপরিহার্য কেন
* কিডনি দুটি রক্ত থেকে ছেঁকে নেয় বর্জø ও বাড়তি পানি এবং মূত্র হিসেবে সেগুলো বেরিয়ে যায়।
* রক্তের ইলেকট্রোলাহা ও পানি এগুলোর ভারসাম্য রক্ষা করে।
* রক্তের পিএইচ বজায় রাখে।
* উৎপন্ন করে ইরিথ্রোপয়টিন নামে একটি হরমোন, যার একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো রক্তমজ্জাকে উদ্দীপ্ত করে লোহিত কণিকা তৈরি করা।
* তৈরি করে রেনিন; এই হরমোনের কাজ হলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
* উৎপন্ন করে ক্যালসিট্রাজোল; এই হরমোনের কাজ হলো রক্তের ক্যালসিয়াম নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা।

কিডনি রোগের ঝুঁকি কীভাবে জানা যাবে
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে, মা-বাবা, ভাইবোন কারও কখনো কিডনি নিষ্ত্র্নিয় হয়ে থাকলে আপনিও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কিডনির রোগ আগাম প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তা জীবন বাঁচাতে ভুমিকা রাখবে নিঃসন্দেহে।
কিডনির রোগ আছে তা চিকিৎসক কীভাবে বুঝবেন
কিডনির রোগের প্রাক-অবস্থা থাকে সুপ্ত। উচ্চ রক্তচাপ যেমন থাকে নীরবে, কোনো উপসর্গ নেই। রোগ থাকতে পারে, কিন্তু জানা গেল না-কারণ শরীর অসুস্থও মনে হয় না।
কিছু টেস্ট করুন
* রক্তের ক্রিয়েটিনিন মান পরীক্ষা করিয়ে নিন। এ থেকে গ্লুমেরুলার ফিলট্রেশনের হার বের করা যায়।
* মূত্রে প্রোটিনের উপস্থিতি ও পরিমাণ নির্ণয় করান। প্রোটিন বেশি থাকলে বুঝতে হবে, কিডনি ভালো কাজ করছে না।
* সঠিকভাবে রক্তচাপ পরীক্ষা করান।
প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসার
কিডনির রোগ অনেক সময় সম্পূর্ণ ভালো হয় না। তবে কিডনির রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে এবং তখন ুকিছু পদক্ষেপ নিলে কিডনি দুটি দীর্ঘদিন সজীব রাখাও সম্ভব। এটিও নিশ্চিত হতে হবে যে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো গেছে, কারণ কিডনির রোগীর এ ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
* ডায়াবেটিস থাকলে রক্তের গ্লুকোজ মেপে দেখতে হবে বারবার, যাতে এটি নিয়ন্ত্রণে থাকে। চিকিৎসার সর্বশেষ অগ্রগতি জানবেন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে। তারপর প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিন।
* যাদের কিডনির কাজকর্ম দুর্বল, তাদের রক্তচাপ থাকা দরকার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। এসিই ইনহিবিটার বা এআরবি হতে পারে অন্যতম ওষুধ। রক্তচাপ ১৩০/১৮০-এর নিচে অবশ্যই রাখতে হবে।
কিডনি যদি নিষ্ত্র্নিয় হয়ে যায়
কিডনি যদি পুরোপুরি নিষ্ত্র্নিয় হয়ে যায়, একে যদি খণ্ডন না করা যায় তাকে বলে এন্ড-স্টেজ রেনাল ডিজিজ (ইএসআরডি)। কিডনির কাজকর্ম যদি প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, শরীরে তখন জমবে বাড়তি পানি ও বর্জø। একে বলা হয় ‘ইউরিমিয়া’, বর্জø ইউরিয়া অনেক বেড়ে যাবে রক্তে। হাত-পা ফুলে যাবে। রক্ত দূষণমুক্ত হতে চায়; কিন্তু এ সময় তা পারে না। রোগীর শরীর-মন হয় দুর্বল, অবসন্ন। রক্তের ইউরিয়া মান খুব বেড়ে গেলে এর চিকিৎসা যদি না হয়, তাহলে সংজ্ঞা লোপ পাবে, মৃত্যুও হতে পারে। কিডনি নিষ্ত্র্নিয় হলে প্রয়োজন হয় ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপনের।
ডায়ালাইসিস
দুই ধরনের ডায়ালাইসিস আছে।
* হেমোডায়ালাইসিস
এ ধরনের ডায়ালাইসিসে রক্ত পাঠানো হয় এমন এক মেশিনের মধ্য দিয়ে, যা ছেঁকে নেয় বর্জø। পরিষ্কার রক্ত ফিরে আসে শরীরে। হেমোডায়ালাইসিস করা হয় ডায়ালাইসিস সেন্টারে সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন, তিন-চার ঘণ্টা করে।
* পেরিটনিয়াল ডায়ালাইসিস
উদরে পাঠানো হয় তরল পদার্থ। এই তরল পদার্থ হলো ‘ডায়ালাইসেট’, রক্ত থেকে ধরে আনে বর্জø পদার্থ। কয়েক ঘণ্টা পর শরীরের বর্জøপূর্ণ ডায়ালাইসেট নিষ্কাশিত হয়ে যায়। তখন ডায়ালাইসেটের একটি নতুন ব্যাগ উদরের ভেতরে স্থাপন করতে হবে। শিখে নিলে রোগী নিজেই পেরিটনিয়াল ডায়ালাইসিস (ঈঅচউ) ব্যবহার করতে পারেন। ডায়ালাইসেট দিনে বদলাতে হয় চারবার।
কিডনি প্রতিস্থাপন করা
দান করা কিডনি আসতে পারে বেনামি দাতার কাছ থেকে বা সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে এমন কারও কাছ থেকে। এমনকি জীবিত ব্যক্তি, কোনো আত্মীয়র কাছ থেকেও। যে কিডনি নেওয়া হবে তার গ্রহীতার শরীরে লাগসই হতে হবে।
নতুন দান করা কিডনিটি গ্রহীতার শরীরের সঙ্গে যত বেশি খাপ খেয়ে যাবে, শরীর থেকে তা প্রত্যাখ্যানের আশঙ্কা তত কমে যাবে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সামাল দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধও প্রয়োজন হতে পারে।
জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, ডায়ালাইসিস ইউনিট ও নেফ্রোলজি ইউনিট বারডেম, নেফ্রোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এবং আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে কিডনির বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হয়।

শিশুর কিডনির সমস্যা
ডাজ্ঝ প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম
শিশুদের সাধারণত দুই ধরনের কিডনির রোগ বেশি হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে নেফ্রোটিক সিনড্রোম ও অ্যাকিউট নেফ্রাইটিস।

নেফ্রোটিক সিনড্রোম লক্ষণ
সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুর হয়ে থাকে। ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশি হয়। প্রথম দিকে দুই চোখের পাতা ফুলে যায় ও মুখে ফোলা ভাব দেখা যায়। পরে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পেটে, হাতে ও পায়ে পানি জমে এবং সারা শরীর ফুলে যায়। শিশুর অণ্ডকোষে পানি জমতে পারে। এর সঙ্গে কখনো বা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, রং সাধারণত স্বাভাবিক থাকে। শিশুর রক্তচাপ সচরাচর স্বাভাবিক থাকে। প্রস্রাব জ্বাল দিলে প্রোটিনের পুরু স্তর পাওয়া যায়।
রোগ নির্ণয়
* প্রস্রাবে খুব বেশি পরিমাণে প্রোটিন বেরিয়ে যায় (৪০ মিলিগ্রাম)। প্রতি স্কয়ার মিটার সারফেস এরিয়া বা প্রতি ঘণ্টায় প্রস্রাবের বেশি।
* রক্তে অ্যালবুমিনের নি্নমান, ২ গ্রামের কম।
* সিরাম লিপিডে উচ্চ মাত্রা, ২২০ গ্রামের বেশি।
* শিশুর সারা শরীর ফুলে যায়।
প্রথমত দুটি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যকীয়।
চিকিৎসা
* প্রথম অ্যাটাকে ও বিভিন্ন জটিলতাপূর্ণ নেফ্রোটিক সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করান।
* প্রথম দু-এক সপ্তাহ শিশুর পূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন। এতে কিডনিতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। শিশু প্রোটিনসমৃদ্ধ স্বাভাবিক খাবার খাবে। তবে খাবারে অতিরিক্ত লবণ মেশাবেন না।
* এসাইটিস, বিভিন্ন ইনফেকশন ইত্যাদি জটিল বিষয়ে বিশেষ চিকিৎসা।
* সুনির্দিষ্ট ওষুধ-শিশুদের নেফ্রোটিক সিনড্রোমে স্টেরয়েড খুব কার্যকর ওষুধ, সঠিক ডোজ ও সিডিউল মেনে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী তা সেবন করান।
পরামর্শ
* আক্রান্ত শিশুর মা-বাবা, অভিভাবককে রোগের পুরো কার্যকারণ ও ভবিষ্যৎ ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে।
* বাড়িতে প্রোটিন জ্বাল দেওয়া শেখাতে হবে।
* শিশুকে অপ্রয়োজনীয় বিধিনিষেধে রাখবেন না, স্বাভাবিক খাবার, খেলাধুলায় অংশ নেওয়ায় উৎসাহ দিন।
* শিশু বয়সের নেফ্রোটিক সিনড্রোম মূলত প্রাথমিক ধরনের। ফলে বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি। ৯৩ শতাংশ শিশুর বারবার ফোলা দেখা দিলেও স্টেরয়েডের সঠিক চিকিৎসায় ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সে প্রায় ক্ষেত্রেই সুস্থ হয়ে ওঠে।
অ্যাকিউট নেফ্রাইটিস
লক্ষণ
প্রধানত স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের মধ্যে এ রোগ হয়ে থাকে। শিশুর শরীরে খোসপাঁচড়া বা গলা ব্যথা অসুখের ১০ থেকে ২১ দিন পরে সাধারণভাবে এ রোগ প্রকাশ পায়। স্টেপটোকক্কাই নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এ জন্য দায়ী।
উপসর্গ
* হঠাৎ করে চোখ-মুখ, সারা শরীর ফুলে যেতে পারে।
* প্রস্রাব হয় বন্ধ কিংবা পরিমাণে খুব অল্প হতে পারে। বেশির ভাগ সময় প্রস্রাবের রং লাল থাকে।
* কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ থেকে ২১ দিন আগে গলা ব্যথা হয়ে থাকে। কখনো ত্বকে খোসপাঁচড়াজাতীয় চিহ্ন থাকে।
* শিশুর রক্তচাপ বেশি থাকতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
* প্রস্রাব পরীক্ষায় কিছুটা প্রোটিনের সঙ্গে আরবিসি কাস্ট পাওয়া যায়।
* কিডনির কার্যক্ষমতা বোঝার জন্য ব্লাড ইউরিয়া, সিরাম ক্রিয়েটিনিন মাত্রা দেখা যায়। সিরাম পটাশিয়ামের উচ্চমাত্রা ইসিজির সাহায্যেও বোঝা যেতে পারে।
চিকিৎসা
* প্রথম দু-এক সপ্তাহ শিশুকে বিশ্রামে রাখতে হবে। ছোটাছুটি করলে রক্তচাপ বৃদ্ধি ও হার্ট ফেইলিওর হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সামান্য ধরনের অসুখ বাড়িতে সামলানো গেলেও উচ্চ রক্তচাপ ও প্রস্রাব কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে হবে।
* শিশুর খাবারে লবণ বাদ করতে হবে। পটাশিয়ামযুক্ত খাবার ও ওষুধ বাদ দিতে হবে। যেমন-ডাব, কলা, ফলের জুস ইত্যাদি। আমিষজাতীয় খাবার যেমন-ডিম, মাছ, মাংস সাময়িকভাবে খাওয়া বাদ দিতে হবে। তবে খাবারের মধ্যে আলু, ভাত, চিঁড়া, দুধভাত, মুড়ি, মাখন, পাউরুটি ও চিনি খেতে পারবে।
* প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কেবল ৪০০ মিলি বা সারফেস স্কয়ার মিটার বা প্রতিদিন এর সঙ্গে তার আগের দিনের প্রস্রাবের সমপরিমাণ যোগ করে মোট জলীয় পদার্থ শিশুকে পান করানো, এর বেশি নয়।
* শিশুকে বেনজামিন পেনিসিলিন এক ডোজ মাংসপেশিতে (শিশুর ওজন ২৭ কেজির নিচে হলে ছয় লাখ ইউনিট এবং তার বেশি হলে ১২ লাখ ইউনিট) দিতে হবে অথবা বিকল্প হিসেবে সাত থেকে ১০ দিনের জন্য পেনিসিলিন সিরাপ বা ট্যাবলেট ছয় ঘণ্টা অন্তর খাওয়ানো, যদি দেহে পাঁচড়া বা গলা সংক্রমণের অস্তিত্ব থাকে।
* শিশুর যদি স্ক্যাবিস থাকে, তার চিকিৎসা করান।
* উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ পটাশিয়াম মাত্রা, শ্বাসকষ্ট, চোখে ঝাপসা দেখা, মাথাব্যথা, খিঁচুনি, বমি, খুব কম প্রস্রাব-এসব জটিলতায় দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পরামর্শ
* বাচ্চার খোসপাঁচড়া বা গলাব্যথা অসুখে সময়মতো চিকিৎসা করান।
* ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ অ্যাকিউট নেফ্রাইটিসের শিশু সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। তবে সময় নষ্ট না করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিন।

প্রস্রাবে ইনফেকশন
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল

প্রতি বছর কয়েক লাখ পুরুষ প্রস্রাবের ইনফেকশনে ভোগেন। যদিও পুরুষের প্রস্রাবের ইনফেকশনের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত অল্প বয়স্ক ছেলেরা মহিলাদের তুলনায় পিছিয়ে আছে, তবু উপসর্গ দেখা দেয়ামাত্র চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করাতে হবে। মূত্রতন্ত্রের (কিডনি, কিডনি নালী, মূত্রথলি ও মূত্রনালী) ইনফেকশন খুব বিপজ্জনক হতে পারে­ এমনকি জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
মূত্রতন্ত্রের কাজ
মূত্রতন্ত্রের কাজ হলো শরীরের তরল বর্জø বের করে দিয়ে বিভিন্ন উপাদান ও লবণের স্বাস্থ্যকর সমতা বজায় রাখা এবং রক্তের লোহিত কণিকা তৈরিতে সাহায্যকারী হরমোন উৎপাদন করা। প্রস্রাবের প্রবাহ ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ সাহায্যটি করে ইনফেকশনকে ধুয়ে বের করে দেয়ার মাধ্যমে। প্রোস্টেট গ্রন্থিও রস উৎপাদন করে, যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে মন্থর করে।
প্রস্রাবের ইনফেকশনের কারণ
স্বাভাবিকভাবে প্রস্রাব জীবাণুমুক্ত থাকে, তবে বিশেষ কিছু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সচরাচর ই.কলাই নামক জীবাণু, যা অন্ত্রে বাস করে, মূত্রনালীতে ঢুকে ইনফেকশন বা সংক্রমণ ঘটায়। একে ইউরেথ্রাইটিস বা মূত্রনালীর প্রদাহ বলে। এই ইনফেকশন মূত্রথলিতে ছড়াতে পারে, একে বলে সিস্টাইটিস। ইনফেকশন কিডনিতেও ছড়াতে পারে। একে বলে পাইলো নেফ্রাইটিস।
­ক্ল্যামাইডিয়া এবং মাইকোপ্লাজমা নামক ক্ষুদ্র জীবাণু দুটো যৌন সংসর্গের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হতে পারে। যদি এমন ঘটে তাহলে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই ইনফেকশনের চিকিৎসা করতে হবে।
­যেসব পুরুষের মূত্রপথে কোনো অস্বাভাবিকতা (যেমন কিডনিতে পাথর অথবা প্রোস্টেট বড় হওয়া) থাকে তাদের প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা থাকে।
­যেসব পুরুষের মূত্রথলিতে ক্যাথেটার বা নল পরানো থাকে, তাদের ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
­যেসব পুরুষের ডায়াবেটিস রয়েছে কিংবা এমন রোগ রয়েছে যার কারণে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তাদের প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
একটি মজার তথ্য
গবেষণায় দেখা গেছে যেসব মহিলার স্বামীরা কনডোমের সাথে শুক্রনাশক ফোম ব্যবহার করেন সেসব মহিলার যোনিতে ই.কলাই ব্যাকটেরিয়া থাকে।
চেম্বারঃ কমপ্যাথ লিমিটেড, ১৩৬ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা (সোম, মঙ্গল, বুধবার)। যুবক মেডিকেল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ পুরাতন ২৮, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা (শনি, রবি, বৃহস্পতি)। মোবাইলঃ ০১৫৫২৩৪৫৭৫৪, ০১৭১৬২৮৮৮৫৫


মূত্রথলির পাথর
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল

বিভিন্ন কারণে মূত্রথলিতে পাথর হতে পারে। কিডনি থেকে মূত্রথলি পর্যন্ত যেকোনো স্থানে জীবাণু দ্বারা সংক্রমণ হলে পাথর হতে পারে। দেখা গেছে অনেক কারণের সমন্বয়ে পাথর সৃষ্টি হয়। তবে মূল কথা হলো, শরীরের বিভিন্ন অসুখে এবং খাবারের উপাদানের তারতম্যে রক্তের গঠনের মাঝে পরিবর্তন আসে। এর ফলে প্রস্রাবের নিষ্কাশিত বা বেরিয়ে যাওয়া পদার্থেরও তারতম্য হয়। পরিবর্তনের ফলে ধীরে ধীরে প্রস্রাবের বেরিয়ে যাওয়া অতিরিক্ত উপাদানের দানা তৈরি হয়, আর সেই দানা এক সময় পাথরে রূপান্তরিত হয়।
মূত্রথলির পাথরকে দুইভাগে ভাগ করা হয়­ ১. প্রাইমারি, ২. সেকেন্ডারি।
মূত্রথলির প্রাইমারি পাথর বলতে সেই পাথরকে বোঝায় যা জীবাণুমুক্ত প্রস্রাবে তৈরি হয়। এটা সচরাচর কিডনিতে উৎপন্ন হয় এবং বৃক্কনালি পথে মূত্রথলিতে চলে এসে সেখানেই আকারে বৃদ্ধি পায়।
মূত্রথলির সেকেন্ডারি পাথর বিভিন্ন কারণে ঘটে। যেমন­ সংক্রমণ, মূত্রথলিতে প্রতিবন্ধকতা, মূত্রথলি খালি হতে বাধা অথবা মূত্রথলিতে বাইরের কোনো বস্তুর উপস্থিতি, যেমন­ গলে যায় না এমন সুতা, ধাতব তার অথবা ক্যাথেটারের টুকরা।
পাথরের উপাদান
বিভিন্ন ধরনের পদার্থ দিয়ে পাথর উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে রয়েছে অক্সালেট, ইউরিক এসিড ও ইউরেট, সিসটিন, অ্যামোনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম ফসফেট ইত্যাদি।
উপসর্গ
মহিলাদের চেয়ে পুরুষরা আট গুণ বেশি আক্রান্ত হন। এটা উপসর্গবিহীন থাকতে পারে। অন্য কোনো কারণে সিস্টোসকপি বা তলপেটের এক্স-রে অথবা আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর সময় হঠাৎ করে ধরা পড়তে পারে। তবে মূত্রথলির পাথরে বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন­ দিনের বেলা ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া। মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি না হওয়ার অনুভূতি হওয়া।
সাধারণত প্রস্রাবের শেষে ব্যথা অনুভূত হওয়া। নড়াচড়া করলে ব্যথা বেড়ে যাওয়া।
প্রস্রাবের সাথে অথবা প্রস্রাবের শেষে ফোঁটা ফোঁটা তাজা রক্ত পড়া।
প্রস্রাব করার সময় প্রস্রাবের ধারা মাঝে মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া।
হঠাৎ করে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া।
পরীক্ষা নিরীক্ষা
প্রস্রাব পরীক্ষা।
এক্স-রে কেইউবি।
সিস্টোস্কপি।
চিকিৎসা
অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে পাথর হওয়ার প্রকৃত কারণ বের করে তারপর চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। রোগীর মূত্রথলিতে প্রতিবন্ধকতা এবং সেই সাথে সংক্রমণ আছে কি না তা দেখতে হবে। রোগীর মূত্রথলিতে স্নায়ুজনিত অস্বাভাবিকতা রয়েছে কি না তাও দেখতে হবে।
মূত্রথলির পাথর অপারেশনের মাধ্যমে বের করে আনা হয় এবং যে কারণে পাথর হয়েছিল তার চিকিৎসা দেয়া হয়। এই অপারেশনকে সিস্টোলিথোটমি বলে। বর্তমানে বেশিরভাগ রোগীকে এনডোস্কপির মাধ্যমে পাথর বের করে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়াও যন্ত্রের সাহায্যে পাথর ভেঙে বের করার পদ্ধতিও রয়েছে যেমন লিথোলাপ্যাক্সি।
চেম্বারঃ কমপ্যাথ লিমিটেড, ১৩৬ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা (সোম, মঙ্গল, বুধবার)। যুবক মেডিকেল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরান), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা (শনি, রবি, বৃহস্পতি)। মোবাইলঃ ০১৫৫২৩৪৫৭৫৪, ০১৭১৬২৮৮৮৫৫


প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ

প্রোস্টেটাইটিসের অর্থ হলো প্রোস্টেটগ্রন্থির প্রদাহ। এটি একমাত্র পুরম্নষদেরই থাকে, যার কাজ হলো প্রোস্টেট রস নিঃসৃত করা। কোনো অবস্থায় যদি এ রসের উপাদানে পরিবর্তন ঘটে কিংবা এর ড়্গরণ প্রতিহত হয় তাহলে পুরম্নষের বন্ধ্যাত্ব ঘটতে পারে। প্রোস্টেট নামক গ্রন্থটি থাকে পুরম্নষদের মূত্রাশয়ের নিচে। কাঠ বাদামের সমান আকৃতি এর। প্রোস্টেটে অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। এ রোগসমূহের একটি হলো প্রোস্টেটাইটিস। সাধারণত ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

প্রোস্টেটাইটিস দুই ধরনের হতে পারেঃ একজ্ঝ তাৎড়্গণিক (একিউট) ও দুইজ্ঝ দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক)। তাৎড়্গণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রোস্টেটাইটিসউৈভয় ড়্গেত্রেই শুক্রনালি সংক্রমিত হয়। মূত্রনালীও সংক্রমণের হাত থেকে রেহাই পায় না।

ব্যাকটেরিয়াজনিত অ্যাকিউট প্রোস্টেটাইটিস

কী কী উপসর্গ দেখা দেয়

একজ্ঝ হঠাৎ করেই রোগীর দেহে জ্বর আসে। রোগী কাঁপতে থাকে। তাপমাত্রা বেড়ে যায় অনেক।

দুইজ্ঝ পিঠের নিচে এবং তলপেটে ব্যথা করে।

তিনজ্ঝ ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।

চারজ্ঝ প্রস্রাবে তীব্র ইচ্ছা থাকে।

পাঁচজ্ঝ প্রস্রাব করতে কষ্ট হয়, জ্বালাপোড়া করে।

ছয়জ্ঝ রোগী অবসাদগ্রস্তô হয়ে পড়ে।

প্রস্রাবের সময় রোগী এত ব্যথা অনুভব করে যে, ভয়ে প্রস্রাবই করতে চায় না। রোগীর কাছে তলপেট ভারী মনে হয়। মলাশয়ে খোঁচা অনুভব করে, পায়খানার সময় ব্যথা লাগে তার। পায়ুপথে আঙুল দিয়ে পরীড়্গা করলে প্রোস্টেটগ্রন্থির স্ফীতি এবং তার অমসৃণতা পাওয়া যায়।

রোগের কারণ

প্রোস্টেটগ্রন্থির নিঃসরণ বিপুলসংখ্যক শ্বেতকণিকা ও চর্বিসমৃদ্ধ ম্যাক্রোফেজ থাকে। নিঃসরণ কালচার করলে নির্ভরযোগ্য জীবাণু চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। যেহেতু ব্যাকটেরিয়াজনিত মূত্রাশয়ের প্রদাহও উপস্থিত থাকে, তাই প্রস্রাব কালচার করে রোগের কারণ চিহ্নিত করা যেতে পারে। অ্যাকিউট প্রোস্টেটাইটিসের জন্য সচরাচর দায়ী ব্যাকটেরিয়াটির নাম ই কলাই। ক্লেবসিয়েলা, এন্টারোব্যাকটার, সিউডোমোনাস, সেরাশিয়া নামক প্রভৃতি গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকরেটিয়াও সংক্রমণ বা ইনফেকশন ঘটাতে পারে।

প্রোস্টেটগ্রন্থির বেশিরভাগ সংক্রমণ ঘটে একটিমাত্র জীবাণু দ্বারা। কখনো কখনো একাধিক জীবাণু মিলিতভাবেও সংক্রমণ ঘটায়। ব্যাকটেরিয়া সাধারণত প্রোস্টেটগ্রন্থিতে প্রবেশ করে তিনটি উপায়ে


একজ্ঝ মূত্রনালীর উপরিভাগের সংক্রমণের মাধ্যমে, দুইজ্ঝ প্রোস্টেটনালীতে সংক্রমিত প্রস্রাবের মাধ্যমে ও তিনজ্ঝ মলনালীর ব্যাকটেরিয়া সচরাচর লসিকানালী বা রক্তের মাধ্যমে অনধিকার প্রবেশ করলে।

চিকিৎসা

কালচারের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট জীবাণুবিরোধী ওষুধ প্রদান করা হয়। চিকিৎসা ড়্গেত্রে দেরি করলে নানা জটিলতা দেখা দেয়। এপিডিডাইমিস এবং অন্ডকোষে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়তে পারে। চিকিৎসা ড়্গেত্রে যে ওষুধটি বেশি ব্যবহৃত হয় তাহলো ট্রাইমেথোপ্রিম ও সালফামেথোাজলের মিশ্রণ। অবশ্য বর্তমানে সিফ্রোফ্লোাসিন বিপুল ব্যবহৃত হয়। রোগীকে অন্তôত ছয় সপ্তাহের জন্য অ্যালকোহল ও যৌনকাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ব্যথা ও জ্বরনাশক ওষুধও দেয়া হয়। ইনফেকশনের জন্য যেসব রোগীর প্রস্রাব আটকে যায়, তাদের তলপেটের নিচে একটি নালী করে দেয়া হয়। মূত্রনালী পথে ক্যাথেটার প্রয়োগ মোটেই উচিত নয়।

ব্যাকটেরিয়াজনিত ক্রনিক প্রোস্টেটাইটিস

উপসর্গঃ দীর্ঘমেয়াদি প্রোস্টেটগ্রন্থির প্রদাহ অধিকাংশ রোগীর অসাবধানতার ফসল, যদিও অনেকের তাৎড়্গণিক প্রদাহজনিত ব্যথার ইতিহাস থাকে না। রোগ নির্ণয় দৈবাৎ ঘটে। অধিকাংশ রোগীর প্রস্রাবে তীব্র আকাঙড়্গা, ঘন ঘন প্রস্রাব, রাতের বেলা প্রস্রাব ইত্যাদি লড়্গণের অভিজ্ঞতা ঘটে। সে সঙ্গে তলপেটে ও পিঠের নিচে ব্যথা হয়। ক্রনিক প্রোস্টেটাইটিসে কাঁপুনি এবং জ্বর সচরাচর দেখা যায় না। বীর্যপাতের সময় ব্যথা অনুভূত হয়। বীর্যরসে রক্তের উপস্থিতি থাকতে পারে। প্রোস্টেটগ্রন্থিতে প্রদাহের কারণে কখনো তাড়াতাড়ি বীর্যপাত, অস্বাভাবিক প্রোস্টেট রস নিঃসরণ এবং পুরম্নষত্বহীনতা দেখা দিতে পারে।

রোগের কারণঃ এড়্গেত্রে মূত্রনালীতে একই জীবাণু কতৃêক পুনঃ সংক্রমণের ইতিহাস থাকে। প্রস্রাব কিংবা প্রোস্টেট রস কালচার করা জরম্নরী। যদিও অ্যান্টিবায়োটিক চলাকালে প্রস্রাব জাবাণুমুক্ত এবং রোগের উপসর্গসমূহ নিয়ন্ত্রিত হতে পারে; কিন্তু প্রস্রাব থেকে কিংবা প্রোস্টেট নিঃসরণ থেকে জীবাণু সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হতে পারে কেবল ওষুধ থেরাপি পুরোপুরি প্রয়োগ করার পর। অ্যাকিউট প্রোস্টেটাইটিসের চিকিৎসাকালে রোগীকে যে ওষুধ প্রদান করা হয়, খামখেয়ালিবশত কিংবা ইচ্ছাকৃত রোগী ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ না করলে অসম্পূর্ণ চিকিৎসার ফল হিসেবে ক্রনিক প্রোস্টেটাইটিস বা দীর্ঘস্থায়ী প্রোস্টেটের প্রদাহ দেখা দেয়।

প্রোস্টেটগ্রন্থির নিঃসরণে বিপুল পরিমাণ শ্বেতকণিকা ও চর্বিসমৃদ্ধ ম্যাক্রোফেজ থাকে। কিছু কিছু ড়্গেত্রে পস্নাজমাকোষ এবং ম্যাক্রোফেজের অনুপ্রবেশ ঘটে। অধিকাংশ রোগীর প্রোস্টেটগ্রন্থিতে পাথর দেখা যায়। স্বাভাবিক পুরম্নষদের ড়্গেত্রে এ পাথর সাধারণত ছোট থাকে। তবে তা গুচ্ছ আকারে। ব্যাকটেরিয়াজনিত দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণে সাধারণত একাধিক বড় পাথর দেখা যায়। এসব পাথর সংক্রমিত হয় এবং পরে তা মূত্রপথকে সংক্রমিত করে।

চিকিৎসাঃ অল্প কিছু ওষুধ ব্যাকটেরিয়াজনিত ক্রনিক প্রোস্টেটাইটিসকে সম্পূর্ণরূপে সাফল্যজনক নিয়ন্ত্রণে রাখে। ট্রাইমেথোপ্রিম-সালফামেথোাজল চমৎকার কাজ করে। চার থেকে ১৬ সপ্তাহ চিকিৎসা চালিয়ে রোগমুক্তির হার দেখা গেছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। সংক্রমিত প্রোস্টেটের পাথরের রোগীদের কেবল মেডিক্যাল থেরাপিতে কাজ হয় না, অপারেশনের প্রয়োজন হয়। যদিও জীবাণুবিরোধী ওষুধ রোগের উপশম নিয়ন্ত্রণ ও প্রস্রাব জীবাণুমুক্ত করতে পারে। কিন্তু কেবল অপারেশনের মাধ্যমে সব সংক্রমিত পাথর ও আক্রান্তô প্রোস্টেট টিস্যু অপসারণ করে রোগীকে স্থায়ীভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব।

০ ডাজ্ঝ মিজানুর রহমান কলেস্নাল

চেম্বারঃ কমপ্যাথ লিমিটেড

১৩৬, এলিফেন্ট রোড, ঢাকা।