Saturday, June 14, 2008

Piles (পাইলস্)

পাইলস অপারেশনের বিস্ময়কর প্রযুক্তি লংগো অপারেশন
অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক

জীবনে কম-বেশি পাইলসের সমস্যায় ভোগেননি এরূপ লোকের সংখ্যা খুব কম। পাইলস বলতে আমরা বোঝাই মলদ্বারে রক্ত যাওয়া, ব্যথা হওয়া, ফুলে ওঠা, মলদ্বারের বাইরে কিছু অংশ ঝুলে পড়া আবার ভেতরে ঢুকে যাওয়া ইত্যাদি। এর চিকিৎসা হিসেবে আদিকাল থেকে বিভিন্ন পদ্ধতি চলে এসেছে। যেমন­ ইনজেকশন পদ্ধতি, রিংলাইগেশন পদ্ধতি ও অপারেশন। ইনজেকশন পদ্ধতি ১৮৬৯ সালে আমেরিকায় শুরু হয়। এ পদ্ধতিটি প্রাথমিক এবং ছোট পাইলসে ভালো ফল দেয় কিন্তু সুফল দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এরপর ১৯৬২ সালে ইংল্যান্ডে রিংলাইগেশন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়। রিংলাইগেশন পদ্ধতির ফলাফল খুব ভালো। ৮০-৯০ ভাগ পাইলস রোগী এ পদ্ধতিতে ভালো হন। কিন্তু শতকরা ১০-২০ ভাগ রোগীর অপারেশন প্রয়োজন। বিশেষ করে যাদের পাইলস বড় হয়েছে এবং বাইরে বেরিয়ে আসে। এ অবস্থায় প্রচলিত আধুনিক পদ্ধতিতে আমরা অপারেশন করে থাকি। এ অপারেশনে মলদ্বারের চতুর্দিকে তিন জায়গায় বেশ কিছু জায়গা কেটে ফেলে দিতে হয়। যার ফলে অপারেশনের পর প্রচুর ব্যথা হয়, মলত্যাগের পর ব্যথা বেড়ে যায়, অনবরত সামান্য রক্ত ও পুঁজের মতো নিঃসরণ হয়। যার ফলে ক্ষতস্থান শুকাতে এক-দুই মাস সময় লাগে। অফিস থেকে কমপক্ষে এক মাস ছুটি নিতে হয়, অপারেশনের পর ক্ষেত্রভেদে মলদ্বার সঙ্কুচিত হয়ে জীবন দুর্বিষহ করে তোলে আবার পায়খানা আটকিয়ে রাখার ক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে। এরূপ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রোগীকে এক থেকে দেড় মাস কাটাতে হতে পারে। মলদ্বারের চতুর্দিকের মাংস কাটার জন্য মলদ্বারের ভেতরের অনুভূতি কমে যায়। যার জন্য মল আটকে রাখার ক্ষমতার তারতম্য হতে পারে।
এমন প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক ডা. এন্টনিও লংগো, অধ্যাপক সার্জারি, ইউনিভার্সিটি অব প্যালেরমো, ইতালি ১৯৯৩ সালে একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যার নামখসষবস ঙহপড়থয়মসষ বা ঝয়থহলপন ঐথপশসড়ড়ভসমনপধয়সশী। অর্থাৎ অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে মলদ্বার না কেটে পাইলস অপারেশন। এ পদ্ধতির ঈসষধপহয় বা চিকিৎসার দর্শন- যুক্তি সম্পূর্ণ আলাদা। এ ক্ষেত্রে পাইলসটিকে একটি ঝুলে পড়া মাংসপিণ্ড হিসেবে মনে করা হয়। এই ঝুলে পড়া মাংসপিণ্ডের ভেতর অসংখ্য শিরা মলত্যাগের সময় প্রচণ্ড চাপে রক্তপাত ঘটায়। বিশেষ ধরনের যন্ত্রের (ঐপশসড়ড়ভসমনথল ধমড়ধৎলথড় ঢ়য়থহলপড়, ঊলয়ভমধসষপ ঊষনসঢ়ৎড়বপড়ী, টঝঅ) সাহায্যে অপারেশনের ফলে ঝুলে পড়া পাইলস ভেতরে ঢুকে যাবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ পদ্ধতিতে আসলে পাইলসের স্থানে বা মলদ্বারে কোনো কাটা-ছেঁড়া হয় না। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে কাটা-ছেঁড়া হয়, তবে তা মলদ্বারের অনেক গভীরে। এই যন্ত্রটি রেকটামের ভেতর একটি চক্রাকার মাংসপিণ্ড কেটে নিয়ে আসে। কাটা-ছেঁড়া করে ওই যন্ত্রটিই আবার সেলাইও সেরে দেয়। যার কারণে কোনো ক্ষতস্থান থাকে না। আর ক্ষতস্থান থাকে না বলে শুকানোর প্রশ্ন আসে না। মলদ্বারের অনেক গভীরে যে স্থানটির নাম রেকটাম সেখানে কোনো ব্যথার অনুভূতি নেই। তাই এই অপারেশনের পর কোনোরূপ ব্যথা হয় না। তবে মলদ্বারে কিছু নাড়াচাড়া করা হয়, যার ফলে অপারেশনের পর অল্প ব্যথা হতে পারে। এ পদ্ধতিতে পাইলসের উৎপত্তিস্থল অর্থাৎ রেকটামের ভেতর অপারেশনের ফলে পাইলসের রক্ত সরবরাহের শিরাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এ পদ্ধতিতে গঠনগত দিক থেকে মলদ্বার সম্পূর্ণ অক্ষত থাকে। মলদ্বারে সামান্যতম কোনো কাটা-ছেঁড়া নেই। এটিই এই অপারেশনের নতুন দিক। যার কারণে অপারেশনের পর প্রচণ্ড ব্যথা নেই। রক্ত বা পুঁজ পড়ার সমস্যা নেই। ক্ষতস্থান শুকানোর জন্য দেড়মাস সময় দরকার নেই। মলদ্বার সরু হয়ে যাওয়ার সমস্যা নেই। দীর্ঘদিন ব্যথার ওষুধ ও এন্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন নেই। দীর্ঘদিন বিশ্রাম বা ছুটি নেয়ার প্রয়োজন নেই। পায়খানা আটকে রাখার ক্ষমতা ব্যাহত হওয়ার ভয় নেই। সর্বোপরি আবার পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা অতি সামান্য অর্থাৎ শতকরা দুই ভাগ। এ অপারেশনে অজ্ঞান করা হয় না, তবে কোমরের নিচের দিক অবশ করা হয়। অপারেশনের জন্য রোগীকে দুই-তিন দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। একটি অত্যাধুনিক বিশেষ ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করতে হয় যেটি কিছুটা ব্যয়বহুল অর্থাৎ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু এ পদ্ধতির সুবিধাগুলো পর্যালোচনা করলে প্রায় সব রোগীই এতটুকু ত্যাগ স্বীকারে রাজি হবেন। ৫-১০ দিনের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবেন। অন্য দিকে সাধারণ অপারেশন হলে রোগীকে এক থেকে দেড় মাস ছুটি নেয়া লাগতে পারে।
৮ জুন ২০০৩-এ আমি প্রথম এই অত্যাধুনিক অপারেশন সাফল্যের সাথে বাংলাদেশে সম্পাদন করি। এরপর বিগত চার বছরে আমরা এ জাতীয় ৫২০টি অপারেশন করে খুবই ভালো ফলাফল পেয়েছি। অল্প কিছু রোগীর সামান্য সমস্যা হয়েছে। জনৈক রোগী অপারেশনের পর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, স্যার, ২০ বছর ভয়ে অপারেশন করলাম না। এখন মনে হচ্ছে এটি কোনো অপারেশনই না। আত্মীয়স্বজন বলেন, তোমার কি আসলেই অপারেশন হয়েছে? কোনো ব্যথা নেই, রক্ত পড়া নেই, গরম পানির সেঁক দেয়া নেই ইত্যাদি। বিদেশে যেখানে এজাতীয় অপারেশনে কয়েক লাখ টাকা খরচ হবে সে তুলনায় আমাদের দেশে খরচ অত্যন্ত সীমিত। আমি মনে করি, সব মধ্যবিত্তের আওতায় থাকবে। রোগীরা পাইলস অপারেশন করতে চান না কয়েকটি কারণে। যেমন অপারেশনের পর মলত্যাগে ব্যথা হওয়া, ঘা শুকাতে দীর্ঘদিন লাগা, দীর্ঘদিন বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন, পায়খানা আটকে রাখার ক্ষমতা ব্যাহত হওয়ার ভয়, মলদ্বার সরু হয়ে যাওয়ার ভয় এবং পাইলস আবার হওয়ার ভয় ইত্যাদি। এ পদ্ধতিতে এজাতীয় সব সমস্যার পূর্ণ সমাধান রয়েছে।
দুই পদ্ধতির তুলনামূলক সুবিধা-অসুবিধা
ক্রমিক নং বিবরণ লংগো অপারেশন প্রচলিত পদ্ধতি ১। মলদ্বার কাটা-ছেঁড়া নেই কাটা-ছেঁড়া করতে হবে ২। ব্যথা সামান্য, ব্যথা প্রচুর ৩। মলত্যাগের পর ব্যথা সামান্য ব্যথা প্রচুর ৪। নিঃসরণ, রক্ত বা পঁূজ পড়া নেই এক থেকে দেড় মাস ৫। রক্ত পড়া নেই মাঝে মধ্যে ৬। অপারেশনের সময় কিছুটা কম কিছুটা বেশি ৭। গরম পানির সেঁক দেয়া প্রয়োজন নেই, বহু দিন দিতে হয় ৮। ব্যথার ওষুধ অল্প প্রয়োজন, বহু দিন খেতে হবে ৯। এন্টিবায়োটিক দরকার ১০। ছুটি নিতে হবে ৭-১০ দিন কম-বেশি ৩০ দিন ১১। হাসপাতালে থাকতে হবে ২-৩ দিন, ৩-৫ দিন ১২। অপারেশনের পর সেরে ওঠা দ্রুত দীর্ঘদিন লাগে ১৩। মলদ্বার সরু হয়ে যাওয়া হয় না মাঝে মধ্যে হয় ১৪। ভবিষ্যতে আবার পাইলস হওয়া হয় না ৩% ১৫। মলদ্বারের আকৃতি স্বাভাবিক থাকে, স্বাভাবিক থাকে না ১৬। আলিশ বা পায়ুপথ বের হয়ে আসা এ পদ্ধতিতে আলিশ রোগের চিকিৎসা সম্ভব, সম্ভব নয় ১৭। খরচ বেশি (একবার ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রের কারণে) আগের মতো, কম ১৮। রোগীর সন্তুষ্টি অনেক বেশি, কম ১৯। পায়খানা ধরে রাখার ক্ষমতা স্বাভাবিক ব্যাহত হতে পারে
লেখকঃ চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধ ু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বারঃ জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫, সাতমসজিদ রোড, (জিগাতলা বাস স্যান্ড) ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোনঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬, ০১৭১৫০৮৭৬৬১।


পাইলস চিকিৎসায় ওষুধ ও পথ্য

অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক

মানুষের রোগব্যাধির মধ্যে মলদ্বারের রোগেই সবচেয়ে বেশি স্বচিকিৎসা এবং হাতুড়ে চিকিৎসা হয়। কিছুটা ভয় এবং বিব্রতকর অনুভূতির জন্য এজাতীয় রোগ হলে রোগীরা ডাক্তার দেখাতে চান না। রোগীরা নিজে নিজে অথবা সস্তায় পাওয়া হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে যান বেশি। বিভিন্ন কুসংস্কার এবং মলদ্বারের সব রোগই পাইলস এই ভ্রান্ত ধারণার কারণে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করেন যা কখনো কখনো ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে। হয় রোগটি শুরু থেকেই ক্যান্সার অথবা অবহেলার কারণে ইতোমধ্যে সেখানে ক্যান্সার হয়ে গেছে।
পাইলসের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে টয়লেটে রক্ত যাওয়া, মাংসপিণ্ড ঝুলে পড়া ও ব্যথা হওয়া। পাইলস যখন বাইরে ঝুলে পড়ে তখন শুধু ওষুধের মাধ্যমে এর চিকিৎসা সম্ভব নয়। যদি মাংসপিণ্ডটি ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া যায় তাহলে বিনা অপারেশনে রিং লাইগেশন পদ্ধতিতে এর চিকিৎসা সম্ভব। আর যদি মাংসপিণ্ড ভেতরে ঢোকানো না যায় তাহলে অপারেশন করতে হবে। আবার পাইলসে ব্যথা হলে তার কারণ হচ্ছে থ্রম্বসিস, পচনধরা (গ্যাংগ্রিন) বা ঘা হয়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে শুধু অপারেশনই যথাযথ চিকিৎসা।
যখন টয়লেটে টাটকা লাল রক্ত যায় এবং বাইরে কোনো বড় ধরনের মাংসপিণ্ড ঝুলে না থাকে সে ক্ষেত্রে ওষুধ ও পথ্যের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যেতে পারে। তবে চিকিৎসককে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে, কী কারণে রক্ত যাচ্ছে। বিশেষ করে পায়ুপথের ভেতর কোনোরূপ ক্যান্সার আছে কি না।
যে রোগীরা পাইলসে ভোগেন তাদের সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়াজাতীয় সমস্যা থাকে। অনেক রোগী আছেন যাদের পেটে গ্যাস হয়। পায়খানার সাথে মিউকাস বা আম যায়। পায়খানা করার পর মনে হয় ক্লিয়ার হয়নি। দুধ, পোলাও, ঝাল, গরুর গোশত ইত্যাদি খেলে হজমে গোলমাল হয়। টয়লেটে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। অনেকে মলদ্বারের ভেতর আঙুল দিয়ে মলত্যাগ করেন। রোগীরা এ সমস্যাগুলোকে গ্যাস্ট্রিক বা ক্রনিক আমাশয় হিসেবে মনে করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে আমরা বলি ‘ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রাম’ বা ‘আইবিএস’। এজাতীয় রোগীদের দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, পোলাও, ঝাল, বিরিয়ানি খাওয়া নিষেধ।
উপসর্গঃ পাইলসে যে দু’টি রোগ সবচেয়ে বেশি সমস্যা করে তা হলো কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া। বেশিরভাগ রোগীর খাদ্যাভ্যাসে ত্রুটি থাকে এবং মলদ্বার ভালোভাবে পরিষ্কার রাখেন না। যদি রোগীর নরম পায়খানা, চুলকানি ও সামান্য রক্ত যায় তাহলে তাকে আঁশজাতীয় খাবার দেয়া যেতে পারে। ডায়রিয়া হয় এমন খাবার পরিহার করতে হবে। মলত্যাগের পর মলদ্বার ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
মলত্যাগের কুঅভ্যাস ত্যাগ
পাইলস রোগীদের তিনটি কুঅভ্যাস দেখা যায়। (১) যেভাবেই হোক প্রতিদিন অন্তত একবার পায়খানা করতে হবেই। এটি না হলে তারা সারাদিন শারীরিক ও মানসিক টেনশনে ভোগেন। (২) সকালবেলা প্রথমবার যখন মলত্যাগের বেগ হয় তখন তাতে সাড়া দেন না। (৩) পায়খানা ক্লিয়ার হয়নি ভেবে টয়লেটে অনেকক্ষণ বসে থাকেন এবং কোথ দেন যেন রেকটাম থেকে পায়খানা সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যায়। তাদের বিশ্বাস, যদি সামান্য মল ভেতরে থেকে যায় তাহলে সারাদিন অস্বস্তিতে কাটাতে হবে।
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন
আমরা প্রচুর রোগী পাই বিশেষ করে শিশুদের সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে পায়ুপথের বিভিন্ন রোগ হয়। পায়খানার পরিমাণ বাড়ে এমন খাবার খাওয়া উচিত। যেমন শাক, সবজি, সালাদ, ফল, ইসবগুলের ভুসি, গমের ভুসি ইত্যাদি। দৈনিক পরিমিত পানীয় খেতে হবে। একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের জন্য ৬-৮ গ্লাস পানি প্রতিদিন পান করতে হবে। অনেক রোগীকে এসব উপদেশ দিলে তারা ক’দিন পরে ভুলে যান অথবা আবার ওই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার ক’দিন আগে আবার খান যাতে তাকে বলতে পারেন, হ্যাঁ আমি ভুসি বা সালাদ খেয়েছি। ইসবগুলের ভুসি দোকানে পাওয়া যায় আবার ওষুধ কোম্পানিও বানায়। এ ছাড়া আঁশ হিসেবে মিথাইল সেলুলেজ ট্যাবলেটও পাওয়া যায়। বিভিন্ন বিজ্ঞানী আঁশ জাতীয় খাবারের কার্যকারিতা সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ডা. ওয়েবস্টার (ইংল্যান্ড) ও ডা. মোয়েসগার্ড (ডেনমার্ক)।
পাইলসের ওষুধ
পাইলসের রক্ত বন্ধের জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার হয়ে আসছে। যেমন­ ট্রানেক্স ক্যাপসুল ১টি করে ২ বার ৫ দিন অথবা এনারক্সিল ১টি করে তিনবার ৫ দিন। সর্বশেষ যে ওষুধটি বাজারে এসেছে তার নাম ফ্লাভোনয়িক এসিড। এটির কার্যকারিতা নিয়ে এখনো বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। প্রাথমিক পাইলসে এটি ভালো কাজ দেবে বলে আশা করা যায়। এটির সেবন মাত্র ১-২টি বড়ি দিনে ২-৩ বার। তবে ইতোমধ্যে দেখেছি ক্যান্সার রোগীও এটি খাচ্ছেন পাইলস মনে করে। সম্মানিত রোগীদের প্রতি অনুরোধ, দয়া করে কোনো চিকিৎসাই নিজে নিজে করবেন না।
মলদ্বারে ব্যবহৃত ওষুধ
পাইলসের সমস্যা এত বেশি যে, বেশিরভাগ রোগীই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বা মলম লাগিয়ে থাকেন। এমনকি বাসার অন্য কারো কোনো কারণে একটি অয়েন্টমেন্ট দেয়া হয়েছিল সেটিই নিজে নিজে লাগাতে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের অয়েন্টমেন্ট ক্রিম, সাপোজিটরি, জেল বাজারে পাওয়া যায়। এসব ওষুধের ভেতর বিভিন্ন ধরনের ওষুধের সংমিশ্রণ থাকে। যেমন­ অবশকারী ওষুধ, স্টেরয়েড ও এন্টিসেপ্টিক। এসব ওষুধের ভেতর অবশকারী ওষুধটি ব্যথা ও চুলকানি কমাতে পারে কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চামড়ায় এলার্জি হতে পারে। লোকাল এনোস্থেটিক ও স্টেরয়েড ওষুধের সংমিশ্রণ মলদ্বারের কষ্ট কমাতে কোনো বাড়তি ভূমিকা রাখে না। আমাদের দেশে যেসব অয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায় যেমনঃ ইরিয়ান, এনুস্ট্যাট, নুপারকেইনাল ও হেডেনসা এবং রিলিচ রেকটাল অয়েন্টমেন্ট। এগুলো মলদ্বারের সামান্য ভেতরে দিনে ২-৩ বার লাগাতে হয় ৭-১৪ দিন।
সিজ বাথ বা গরমপানির সেঁক
সিজ বাথ, হিপ বাথ বা গরম পানির সেঁক দেয়ার নিয়ম হচ্ছে একটি গামলায় গরম পানি (৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) দিয়ে তার ভেতর চা চামচের ২ চামচ লবণ দিয়ে নিতম্ব ডুবিয়ে বসে থাকতে হবে ১০ মিনিট, দিনে ২-৩ বার। এতে মলদ্বারের ব্যথা কমে। ডা. দোদি গবেষণা করে দেখিয়েছেন, গরম সেঁকের কারণে মলদ্বারের ভেতরের চাপ কমে যায় যার জন্য ব্যথাও কমে যায়।

লেখকঃ বৃহদান্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বারঃ জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোনঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬, ০১৭৫০৮৭৬৬১।


মলদ্বার না কেটে রেকটাম ক্যান্সার অপারেশন

অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি
অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক

রেকটাম বা মলাশয় ক্যান্সার হলে প্রচলিত অপারেশন হচ্ছে রেকটাম বা মলাশয় ও মলদ্বার কেটে ফেলে পেটে ঈসলসঢ়য়সশী বা কৃত্রিম মলদ্বার বানিয়ে সেখানে ব্যাগ লাগিয়ে দেয়া যার মধ্যে সবসময় মল জমা হবে এবং রোগী মাঝে মাঝে এটি পরিষ্কার করে নেবেন। তার স্বাভাবিক মলদ্বার থাকবে না এবং সারা জীবন ওই পথে আর পায়খানা হবে না কিন্তু অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ফলে এখন স্বাভাবিক মলদ্বার রেখেই ক্যান্সারটি অপসারণ করা যায়। রোগী স্বাভাবিক পথেই পায়খানা করতে পারবেন। এ প্রযুক্তির ফলে ৭০-৮০ শতাংশ রেকটাম ক্যান্সার রোগী উপকৃত হবেন।
লক্ষণ কী ?
মলদ্বারের দৈর্ঘø ৪ সেমি। মলদ্বারের ওপরের ১২ সেমি অংশের নাম রেকটাম। মলদ্বারে রক্ত যাওয়া এ রোগের প্রধান লক্ষণ। এ লক্ষণটিকে রোগীরা আমল দেন না। রোগী যদি এই রক্ত যাওয়ার কারণ ডাক্তার দিয়ে পুরোপুরি তদন্ত না করেই সিদ্ধান্ত নেন যে, এটি পাইলস থেকে হচ্ছে­ সবচেয়ে বিপদটি তখনই ঘটে। এরপর মাসের পর মাস কেটে যায় পাইলস মনে করে। ইত্যবসরে ক্যান্সার তার ডালপালা বিস্তার করতে থাকে। পেটে ব্যথা হতে থাকে, মল আটকে গিয়ে পেট ফুলে উঠতে পারে। তখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে বিশেষ ধরনের পরীক্ষায় এ রোগ ধরা পড়ে। ততক্ষণে এ রোগটি সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলার সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে যায়।
প্রথম দিকে রোগীর মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন আসে। মলত্যাগের বেগ হলে রোগী টয়লেটে যান এবং শুধু রক্ত ও মিউকাস যেতে দেখেন। এটি সাধারণত ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথে হয়। রোগীরা এটিকে রক্ত আমাশয় বলে ধারণা করেন। ক্যান্সার যখন মলদ্বারের দিকে সম্প্রসারিত হয় তখন মলত্যাগের পর ব্যথা শুরু হয়ে দীর্ঘক্ষণ চলতে পারে। রোগীদের যখন বলা হয় আপনাকে বিশেষ ধরনের পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, কোনো ক্যান্সার আছে কি না। তখন তারা বলেন, স্যার, আমি জানি এটি পাইলস। অনেক বছর ধরে চলছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে যে এখানে ক্যান্সার শুরু হতে পারে তা তারা খতিয়ে দেখতে চান না। সবচেয়ে অসুবিধা হলো পাইলস, ক্যান্সার, এনাল ফিশার সব রোগেই রক্ত যাওয়াই প্রধান লক্ষণ। আসলে কোন রোগটি হয়েছে তা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে একজন অভিজ্ঞ সার্জনই শুধু বলতে পারেন। এই ক্যান্সার যদি মূত্রথলি অথবা মূত্রনালী আক্রমণ করে তখন রোগী প্রস্রাবের কষ্টে ভোগেন এবং বারবার প্রস্রাব হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে এ ক্যান্সার যৌনপথে ছড়িয়ে পড়ার কারণে ওই পথ দিয়ে রক্ত ও মিউকাস এমনকি মলও বেরিয়ে আসতে পারে।
বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা
মলের সুপ্ত রক্ত পরীক্ষা; মলদ্বারের ভেতর আঙুল দিয়ে পরীক্ষা; প্রকটসিগময়ডোস্কপি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ; কোলোনসকপি; বেরিয়াম এনেমা; সি-ই-এ (কার্সিনোএম্রাইওনিক এন্টিজেন) ; আল্ট্রাসনোগ্রাম অব লিভার; আইভিইউ এক্স-রে; পেটের সিটি স্ক্যান।
প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা
অপারেশনই এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা। এ রোগে ঐতিহ্যবাহী অপারেশন হচ্ছে রেকটাম বা মলাশয় ও মলদ্বার কেটে ফেলে পেটে নাভির বাম দিকে কলোস্টমি বা কৃত্রিম মলদ্বার তৈরি করে দেয়া। যেখানে একটি ব্যাগ লাগানো থাকে যার, ভেতর মল জমা হতে থাকে। যখন রোগীকে এজাতীয় অপারেশনের ধারণা দেয়া হয় তখন অনেক রোগীই বলেন, স্যার, মরে যাবো তবু এমন অপারেশন করাব না। এসব রোগী এরপর হাতুড়ে চিকিৎকের শরণাপন্ন হন অপারেশন ছাড়াই চিকিৎসার জন্য। কিছু দিন চিকিৎসার পর হতাশ হয়ে যখন ফিরে আসেন তখন সম্পূর্ণরূপে সারিয়ে তোলার অবস্থা আর থাকে না। তখন রোগী মিনতি করে বলেন, স্যার, ভুল হয়ে গেছে, এখন কিছু একটা করুন।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন আমরা ৭০-৮০ শতাংশ রেকটাম ক্যান্সার রোগীর মলদ্বার না কেটেই অপারেশন করতে পারি। যার ফলে স্বাভাবিক পথেই পায়খানা করতে পারবেন। এ প্রযুক্তির নাম হচ্ছে ঝয়থহলমষব ঞপধভষমক্ষৎপ (উমঢ়হসঢ়দলপ ঈমড়ধৎলথড় ঝয়থহলপড়, চড়সমিশথয়প ওখঝ, চড়সমিশথয়প খমষপথড় ঝয়থহলপড় এবং জসয়মধৎলথয়সড়) ইতোমধ্যে ১৯৯৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আমি দেশের ঐতিহ্যবাহী হাসপাতাল হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে এরূপ একটি জটিল অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সফল অপারেশন করেছি। অপারেশনটি করতে আমাকে আমন্ত্রণ জানান, দেশের প্রখ্যাত সার্জন ও আমাদের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব ডা. জিয়াউল হক। রোগীর বয়স ৫০। বাংলাদেশ বিমানের অফিসার। অনেক দিন মলদ্বারে রক্ত যাচ্ছিল। হঠাৎ পেট ফুলে যাওয়ায় তাকে জরুরিভিত্তিতে অপারেশন করে এই ক্যান্সারটি শনাক্ত করেন ডা. জিয়াউল হক। এ অপারেশনের জন্য একবার ব্যবহারযোগ্য দু’টি যন্ত্র আমরা সিঙ্গাপুর থেকে এনেছিলাম আগেই। যন্ত্রটি কিছুটা ব্যয়বহুল। অপারেশনের সময় আমরা বৃহদান্ত্র ও রেকটামের নির্ধারিত অংশটুকু কেটে ফেলে দিই এবং এই যন্ত্রের সাহায্যে বৃহদান্ত্র ও রেকটামে অবশিষ্টাংশ সংযুক্ত করে দিই। তলপেটের গঠনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে এই যন্ত্র ছাড়া এ জাতীয় অপারেশন করা প্রায় অসম্ভব। বিগত ৯ বছর আমরা এ জাতীয় অত্যাধুনিক অপারেশন অনেক করেছি। এ অপারেশনের পর সাধারণত পেটে অস্থায়ী ভিত্তিতে ২-৩ মাসের জন্য একটি ব্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয়। তিনমাস পর ওই ব্যাগটি (কলোস্টমি বা আইলিওস্টমি) আবার অপারেশন করে বৗঅ করে দিতে হয়। তখন রোগী স্বাভাবিক মলদ্বার দিয়ে মলত্যাগ করতে পারেন। যখন রেকটামের ক্যান্সার খুবই গভীরে থাকে তখন হাত দিয়ে সেলাই করে খাদ্যনালী জোড়া লাগানো যায় বলে এই যন্ত্র ব্যবহার প্রয়োজন হয় না।
রেকটাম ক্যান্সার কেন হয়?
ধনী লোকদের এ রোগ বেশি হয়। মদপান ও ধূমপানের সম্ভাবনা বাড়ায়। খাবারে যথেষ্ট আঁশজাতীয় উপাদান থাকলে, যেমন- সবজি, ফলমূল এ রোগের সম্ভাবনা কমায়। চল্লিশ বছর বয়সের পরে এই সম্ভাবনা বাড়তে থাকে।

লেখকঃ চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবৗঅু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বারঃ জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫, সাতমসজিদ রোড, (জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড) ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোনঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬, ০১৭১৫০৮৭৬৬১

শিশুর পাইলস সমস্যা

অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক

পাইলস শিশুদেরও হয়। তবে প্রকৃত পাইলস শিশুদের কম হয়। প্রথমেই আমরা আলোচনা করব পাইলস রোগটি আসলে কী? কারণ এটি নিয়ে বিস্তর বিভ্রান্তি রয়েছে। ঢাকা শহরের আবাসিক এবং অফিস এলাকায় খুব কমসংখ্যক লাইটপোস্ট আছে যেখানে হাতুড়ে ডাক্তরদের পাইলসের সাইনবোর্ড নেই। মলদ্বারের যেকোনো সমস্যাকে সবাই পাইলস হয়েছে বলে ধরে নেন। পাইলস বলতে বোঝায় মলদ্বারে ফুলে ওঠা মাংসপিণ্ড বা গ্যাজ। অসংখ্য শিরা মিউকাস ঝিল্লির তলায় ফুলে ওঠার কারণে মাংসপিণ্ড ফুলে ওঠে এবং কখনো কখনো রক্ত যায়। পাইলসের চিকিৎসা বিজ্ঞানে নাম হলো হেমোরয়েড। হেমোরয়েড অর্থ হলো টয়লেটে রক্ত যাওয়া। অভ্যন্তরীণ পাইলসে মাংসপিণ্ড না থাকলেও প্রচুর রক্ত যেতে পারে। আবার অনেক বড় গ্যাজ আছে কিন্তু রক্ত নাও যেতে পারে। এ রক্ত যাওয়ার আবার তারতম্য আছে। তবে সাধারণত কয়েকদিন থেকে কয়েক মাস পরপর রক্ত যায়। শিশুদের পাইলস হলে বড়দের চেয়ে বেশি রক্ত যায়। গত নয় বছরে মলদ্বারে সমস্যায় আক্রান্ত ২৯ হাজার ৬৩৫ জন রোগীর ভেতর ছয়টি শিশুর পাইলস দেখেছি। এক শিশু পাঁচ মাস বয়স থেকে অন্য শিশু তিন বছর বয়স থেকে রক্ত যেতে যেতে মূর্ছা যেত। এরপর রক্ত দিলে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠত। এ দু’জনকে বিনা অপারেশনে রিংলাইগেশন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করায় সম্পূর্ণ ভালো হয়েছে। তবে অভিভাবকরা শিশুদের যে পাইলসের সমস্যা অর্থাৎ টয়লেটে রক্ত গেলে চিকিৎসকের কাছে আসেন তাদের বেশিরভাগই পাইলস নয়। শিশুদের টয়লেটে রক্ত যাওয়ার প্রধান কারণ রেকটাল পলিপ। এটি একধরনের আঙ্গুর ফলের মতো টিউমার, যা ক্যান্সার নয়। এ টিউমার থেকে প্রচুর রক্ত যায়। এগুলো এক বা একাধিক হতে পারে এবং এরূপ শত শত পলিপ থাকতে পারে যা থেকে সাধারণত রক্ত ও মিউকাস বা আম যায়। রোগীর অভিভাবকরা মনে করেন যে এটি রক্ত আমাশয় এবং ওষুধ দিয়ে ভালো করা যাবে। রেকটাল পলিপ রোগের চিকিৎসা হচ্ছে এটিকে কেটে ফেলে দেয়া। রোগীকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে এটি করতে হয়। অভিভাবকদের ভয় ছোট শিশুকে অজ্ঞান করলে তার ক্ষতি হবে। কিন্তু বহু দিন রক্ত যাওয়ায় শিশুটি যে রক্তশূন্যতায় ভুগছে সেদিকে তাদের লক্ষ্য থাকে না। সবচেয়ে অসুবিধা হচ্ছে দাদী-নানীরা অপারেশনের কথা শুনলেই একেবারে বেঁকে বসেন। তাদের ধারণা এতটুকুন শিশুকে কখনো অজ্ঞান করা উচিত নয়। তারপর অনন্যোপায় হয়ে আধুনিক তরুণ বাবা-মা বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে ধরনা দেন চিকিসায় এ রোগ ভালো করার জন্য। কিন্তু সেটি কোনো ডাক্তারের পক্ষেই সম্ভব নয়।
রেকটাল পলিপ অপারেশনের জন্য একটি শিশুকে কয়েক ঘণ্টা হাসপাতালে রাখলেই চলে। রোগীর পেট খালি করার জন্য আগের দিন কিছু ওষুধ দেয়া হয় যাতে পায়খানা ক্লিয়ার হয়। খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে অপারেশন করাই ভালো। এ জন্য রোগীকে ঘুম পাড়ানোর ইনজেকশন দিতে হয়। একটি বিশেষ ধরনের যন্ত্রের সাহায্যে টিউমারটি (পলিপ) কেটে আনা হয়। যেহেতু এ অপারেশনে মলদ্বারে কোনো কাটাছেঁড়া করা হয় না তাই অপারেশনের পর ব্যথা হওয়ার প্রশ্নই আসে না। অপারেশনের দু-তিন ঘণ্টা পর রোগী স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করতে পারে এবং সরাসরি বাসায় চলে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বহির্বিভাগে রোগী হিসেবে পরক্ষণেই চলে যেতে পারে।
শিশুদের জন্য একটি সমস্যা হয়। এতে পায়খানা শক্ত হলে মলদ্বার ফেটে যায় এবং ব্যথা হয়। কিছুটা রক্তও যেতে পারে। কিছু দিন পর মলদ্বারে একটি গ্যাজ দেখা যায়। শিশু টয়লেটে যেতে ভয় পায় ব্যথার কারণে। এ রোগটির নাম এনার ফিশার। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক মল নরম করার জন্য ওষুধ দেন। পানি, সবজি, সালাদ খেলে উপকার পাওয়া যায়। পায়ুপথে মলম লাগানো যেতে পারে। চুলকানি হলে কৃমির ওষুধ দিতে হবে। জন্মের পরপরই যেকোনো সময় এ রোগ হতে পারে। সর্বকনিষ্ঠ এক মাস ১০ দিনের শিশুকে দেখেছি এ রোগে আক্রান্ত হতে। উপরোক্ত পদ্ধতি ও ওষুধ প্রয়োগেও ভালো না হলে অপারেশন করতে হয়।
মলদ্বারের প্রতিটি রোগের বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা রয়েছে এবং এর প্রতিটিতেই সঠিক চিকিৎসায় সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা যায়। বড়দের যে রোগটি সবচেয়ে বেশি হয় সেটি হলো পাইলস। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন ৮০-৯০ শতাংশ পাইলস রোগী বিনা অপারেশনে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেন। এ পদ্ধতির নাম হচ্ছে রিং লাইগেশন পদ্ধতি। কোনোরূপ অবশ, অজ্ঞান না করে চেম্বারেই এর চিকিৎসা করা হয়। যে ক্ষেত্রে অপারেশন দরকার সে ক্ষেত্রেও দু-তিন দিন মাত্র হাসপাতালে থাকতে হয়। অপারেশনের পর পাইলস আবার হয় এ ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক। তবে ২ শতাংশ ক্ষেত্রে আবার হতে পারে। পেটে কৃমি থাকলে তার অবশ্যই চিকিৎসা করা উচিত। তবে কৃমির বাসা থেকে এ রোগের উৎপত্তি এ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত।
লেখকঃ চেয়ারম্যান, কলোরেকট্যাল সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বারঃ জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা
ফোনঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬


পায়ুপথ থেকে রক্তক্ষরণ

ডা. এস.এম. আবু জাফর

পায়ুপথ থেকে বিভিন্ন কারণে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এর অন্যতম কারণ হলোঃ ১) পাইলস বা হেমোরইডস। ২) এনাল ফিশার বা পায়ুপথে ক্ষত হওয়া। ৩) রেকটাল ও কলোনিক পলিপ। ৪) রেকটাল বা কলোনিক ক্যান্সার ইত্যাদি।
১ স্বাভাবিক অবস্থায় স্ফীত আকারের শিরা পায়ুপথ বন্ধ রেখেছে
২+৩) স্ফীত আকারের শিরা বড় হয়ে পায়ুপথ দিয়ে বের হয়ে এসেছে, এই অবস্থাকে পাইলস বলা হয়।
কী করবেন?
১। পাইলসের রক্তক্ষরণে সাধারণত ব্যথা-বেদনা হয় না এবং শক্ত মল নির্গত হওয়ার পর তাজা রক্তক্ষরণ হয়। এ ধরনের রক্তক্ষরণ হলে আপনার বেশ কিছু পরীক্ষা করা দরকার। যেমনঃ পায়ুপথের ভেতর যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা, এর ফলে বোঝা যাবে পায়ুপথে পাইলস ছাড়া অন্য কোনো অসুখ যেমনঃ রেকটাল ও কলোনিক পলিপ বা রেকটাল ও কলোনিক আলসার বা টিউমার আছে কি না। এ ছাড়া রক্ত পরীক্ষা করে বোঝা যাবে আপনার লিভারের কোনো সমস্যা আছে কি না। এ সব পরীক্ষার পর যদি প্রতীয়মান হয় যে আপনার পাইলস ছাড়া অন্য কোনো অসুখ নেই সে ক্ষেত্রেই শুধু পাইলসের চিকিৎসা দেয়া হবে। পাইলসের চিকিৎসার জন্য আপনার খাবারে প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার যেমনঃ শাকসবজি, ডাল ইত্যাদি রাখবেন। এতে নিরাময় না হলে ওষুধপত্র দিয়ে চিকিৎসা করা যায় এবং এতেও নিরাময় না হলে ইনজেকশন, ব্যান্ড বা অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।

পাইলস চিকিৎসার অত্যাধুনিক অপারেশনের নাম হচ্ছে স্টাপেল্ড হেমোরইডেকটমি (ঝয়থহলপন ভথপশসড়ড়ভসমনপধয়সশী) বা লংগো অপারেশন। মেশিনের সাহায্যে এই অপারেশন করা হয় এবং অপারেশনে ব্যথা-বেদনা হয় না এবং অপারেশনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রোগী বাসায় যেতে পারেন।
২। এনাল ফিশার বা পায়ুপথে ক্ষত হলে মলত্যাগের পর পায়ুপথ ভীষণ ব্যথা হবে ও রক্তক্ষরণ হয়। সাধারণত শক্ত মলের আঘাতে পায়ুপথের একাংশে ক্ষত হয়। এ ধরনের সমস্যা হলে পায়ুপথ পরীক্ষা করলেই এ রোগ নির্ণয় করা যায়। সাধারণত ছোট অপারেশন করলেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। এই অপারেশন অত্যন্ত ছোট এবং অপারেশনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রোগীকে ছুটি দেয়া যায়। এই অপারেশনের পর সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, যাতে পরে কোষ্ঠকাঠিন্য না হয়। এর জন্য খাবারে প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার রাখবেন।
এনাল ফিশার বা পায়ুপথের ক্ষত
৩। রেকটাল বা কলোনিক পলিপ হচ্ছে ছোট ছোট টিউমার যা রেকটাম ও কলোনের ভিতরের অংশ থেকে জন্ম নেয়। এই পলিপ শিশুদেরও হতে পারে। যদি কারো পায়ুপথ দিয়ে ব্যথা-বেদনাহীন রক্তক্ষরণ হয় তাহলে পায়ুপথ দিয়ে কলোনস্কোপি করানো দরকার। কলোনোস্কপির মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় এবং এর অপসারণও সম্ভব। রেকটাল বা কলোনিক পলিপ বেশি দিন থাকলে এটা ক্যান্সারে রূপ নেয়। এ জন্য এর দ্রুত অপসারণ করা প্রয়োজন। প্রাথমিক অবস্থায় অপসারণ করলে বিনা অপারেশনে কলোনোস্কোপিক পলিপেকটমির মাধ্যমে এই রোগমুক্তি সম্ভব এবং ভবিষ্যতে ক্যান্সার রেকটাম বা ক্যান্সার কলোন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রেকটাল ও কলোনিক পলিপ
৪। রেকটাল ও কলোনিক ক্যান্সার হলে সাধারণত মলত্যাগের সাধারণ অভ্যাসের পরিবর্তন হয় যেমন মাঝে মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য ও মাঝে মধ্যে পাতলা মলত্যাগ হওয়া। মলের সাথে মিউকাস থাকে এবং কখনো কখনো মলের সাথে রক্ত মিশানো থাকে। এসব সমস্যা হলে অথবা কারো যদি ডিসেন্ট্রি অনেক দিন ধরে থাকে তাহলে তাকে কলোনস্কোপি পরীক্ষা করাতে হবে। রেকটাল বা কলোন ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসা করে পুরো সুস্থ করে তোলা সম্ভব। এই ক্যান্সার দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং দেরিতে এই রোগ নির্ণয় হলে ভালো চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না।
লেখকঃ সহযোগী অধ্যাপক, বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহীম মেডিক্যাল কলেজ।
চেম্বারঃ গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল অ্যান্ড রিচার্স ইনস্টিটিউট লিমিটেড, ৬৯/ডি, গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা।

ব্যথা ও এ্যানাল ফিশার
মলদ্বারে ফিশারের প্রধান লড়্গণ হলোব্যৈথা ও রক্তড়্গরণ। এ ধরনের ব্যথা সাধারণত মলত্যাগের অব্যবহিত পরে হয় এবং কয়েক মিনিট থেকে বহু ঘন্টা ধরে ব্যথা চলতে পারে।

মলদ্বারের ব্যথায় অনেক লোক ভুগে থাকেন। ফিশার মানে মলদ্বারে ঘা অথবা ফেটে যাওয়া। এটি দুই ধরনের হয়। তীব্র (একিউট) ফিশার হলে রোগীর মলদ্বারে অসম্ভব ব্যথা হয়। দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) ফিশারে ব্যথার তারতম্য হয়। এটি যে কোন বয়সে হতে পারে। তবে তরম্নণ ও যুবকদের বেশি হয়। পুরম্নষ অথবা নারী উভয়েই এটি সমানভাবে হয়ে থাকে।

কারণ এবং কি করে ঘটে?

এটি হওয়ার জন্য সাধারণত দায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা মলত্যাগের সময় কোত দেয়া। এছাড়া শক্ত মল বের হওয়ার সময় মলদ্বার ফেটে যার বলে মনে করা হয়। যারা আঁশযুক্ত খাবার খান তাদের এ সমস্যাটি কম হয় বলে মনে করা হয়। আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে শাক-সবজি, কাঁচা ফলমূল, আলুর ছোলা, ইসবগুলের ভূসি ইত্যাদি। চা-কফি বা মদ খাওয়ার সাথে এগুলোর কোন সম্পর্ক নেই। ঘন ঘন মলত্যাগ বা ডায়রিয়া হলে ফিশার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিজ্ঞানীরা মলদ্বারের ভেতরের চাপ মেপে দেখেছেন। ফিশারে চাপ তেমন একটা বাড়ে না যদিও আঙ্গুল দিয়ে পরীড়্গা করলে মলদ্বার অতিরিক্ত সংকুচিত বলে মনে হয়।

উপসর্গঃ

মলদ্বারে ফিশারের প্রধান লড়্গণ হলোব্যৈথা ও রক্তড়্গরণ। এ ধরনের ব্যথা সাধারণত মলত্যাগের অব্যবহিত পরে হয় এবং কয়েক মিনিট থেকে বহু ঘন্টা ধরে ব্যথা চলতে পারে। ‘প্রকটালজিয়া ফুগাঙ্ম্ব নামক এক ধরনের রোগেও মলদ্বারে ব্যথা হয়, কিন্তু সে ব্যথা মলত্যাগের সাথে সংশিস্নষ্ট থাকে না। রক্তজমাট বাধা পাইলসেও ব্যথা হয়, কিন্তু তখন রোগী মলদ্বারে চাকা আছে বলে অভিযোগ করে।

এই রোগে রক্তড়্গরণের পরিমাণ সাধারণত কম। কিন্তু কারো কারো অতিরিক্ত রক্ত যেতে পারে। আমি অল্পবয়সী এক অফিসারকে এরূপ উপসর্গসহ চিকিৎসা করেছি তার অতিরিক্ত রক্তড়্গরণে তীব্র রক্তশূন্যতা হয়েছিল।

দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) এনাল ফিশারের রোগী একটু ভিন্ন ধরনের উপসর্গের কথা বলে। তারা কখনো কখনো তাদের মলদ্বারে অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড, পুঁজ পড়া, চুলকানি অথবা এসব একত্রে হয়েছে বলে অভিযোগ করে। এ ড়্গেত্রে রক্তড়্গরণ থাকতে পারে অথবা নাও থাকতে পারে। ব্যথা সাধারণত তীব্র হয় না অথবা অনেক সময় ব্যথা থাকেই না।

ফিশারের রোগীরা অনেক সময় প্রস্রাবের সমস্যায় ভোগেন এবং মহিলারা কখনো কখনো যৌনমিলনে বেদনা অনুভব করেন; যদিও রোগীরা বুঝতে পারেন কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণেই এমন হয়েছে তবুও যখন ব্যথা শুরম্ন হয় তখন রোগী ভয়ে টয়লেটে যেতে চান না এবং মলত্যাগের বেগ হলে তাতে ব্যথার ভয়ে সাড়া দিতে চান না।

তীব্র ব্যথা সম্পন্ন ঘা (একিউট ফিশার)

এ সময় মলদ্বার পরীড়্গা করলে দেখা যায় সেটা খুবই সংকুচিত অবস্থায় আছে। তীব্র ব্যথার কারণে মলদ্বারের ভেতরের ঘা-টি দেখা দুঃসাধ্য। কোন যন্ত্রও প্রবেশ করানো যায় না। অবশ্য সরম্ন যন্ত্র দিয়ে পরীড়্গা করা যায়।

দীর্ঘস্থায়ী ব্যথাসম্পন্ন ঘা (ক্রনিক ফিশার)

ক্রনিক ফিশার বলা হয় যখন একটি সঠিকভাবে চিহ্নিত সীমানার মধ্যে ঘা দেখা যায়। এড়্গেত্রে একটি মাংসপিন্ড বা ‘গেজম্ব দেখা যায়। মলদ্বারের ভেতরেও একটি মাংসপিন্ড (ঐুঢ়বৎঃৎড়ঢ়যরবফ ধহধষ ঢ়ধঢ়রষষধ) দেখা যেতে পারে যাকে অনেকে টিউমার বলে ভুল করে। এ ড়্গেত্রে পায়ুপথের ভেতর যন্ত্র দিয়ে পরীড়্গা করা উচিত যাতে টিউমার বা প্রদাহজনিত কারণ চিহ্নিত করা যায়। এ ফিশার সংক্রমিত হয়ে কখনো কখনো ফোঁড়া দেখা দিতে পারে এবং তা থেকে ফিস্টুলা (ভগন্দর) হয়ে পুঁজ পড়তে পারে।

প্রতিরোধ

কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করা উচিত এবং বেশি শক্তি প্রয়োগ করে মলত্যাগ করা উচিত নয়। বারে বারে মলত্যাগের অভ্যাস ত্যাগ করা এবং ডায়রিয়ায় দ্রম্নত চিকিৎসা করা উচিত।

চিকিৎসাঃ

রড়্গণশীল চিকিৎসা

একিউট ফিশার শুরম্নর অল্পদিনের মধ্যেই চিকিৎসা শুরম্ন করা হলে বিনা অপারেশনে ভাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মল নরম করার, মলের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য আঁশযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া উচিত এবং ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। সিজ বাথ নিলে উপকার হয়। এটির নিয়ম হচ্ছে আধ গামলা লবণ মিশ্রিত হালকা গরম পানির মধ্যে নিতম্ব ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হয়। স্থানিক অবশকারী মলম ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়। এতে যদি পুরোপুরি না সারে এবং রোগটি যদি বেশি দিন চলতে থাকে তাহলে অপারেশন ছাড়া ভাল হবার সম্ভাবনা কমতে থাকে।

সার্জিকাল চিকিৎসাঃ

মলদ্বারের মাংসপেশীর সম্প্রসারণ করা (এনাল ডাইলেটেশন) এ পদ্ধতিটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য বেশিরভাগ সার্জন এটির বিপড়্গে। এ পদ্ধতির জন্য কোন কোন রোগীর মল আটকে রাখার ড়্গমতা ব্যাহত হতে পারে।

মলদ্বারের স্ফিংটারে অপারেশনঃ

এই অপারেশনে মলদ্বারের অভ্যন্তôরীণ স্ফিংটার মাংসপেশীতে একটি সূড়্গ্ন অপারেশন করতে হয়। অজ্ঞান করার প্রয়োজন নেই। দুই দিনের মধ্যেই রোগী বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। অপারেশনের তিন দিন পর স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের রোগীরা অনেক দেরি করে অপারেশন করান। যার কারণে অনেক বেশি কাটাছেঁড়া করার কারণে তাড়াতাড়ি কাজে ফিরে যেতে পারেন না।

মতামতঃ

বিগত ৯ বছরে মলদ্বারের সমস্যায় আক্রান্তô ২৯,৬৩৫ জন রোগীর ওপর গবেষণা করে দেখেছি যে, ৩৫জ্ঝ০% রোগী এনাল ফিশারে আক্রান্তô। আমার দেখা এনাল ফিশার রোগীদের ৭৬জ্ঝ৫৭% বিনা অপারেশনে বিভিন্ন ওষুধ ও উপদেশের সাহায্যে ভাল হয়েছে এবং ২৩জ্ঝ৪৩% রোগীদের অপারেশন করেছি। এ রোগীদের ৯৭% সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করেছেন। বাকি ৩% কম-বেশি উপকার পেয়েছেন কিন্তু কারো কারো সামান্য অসুবিধা মাঝে-মধ্যে দেখা দিয়েছে। এ অপারেশনে আমরা রোগীকে অজ্ঞান না করে শরীরের নিচের দিক অবশ করে অপারেশন করেছি। রোগী সম্পূর্ণ সজাগ থেকেছেন। যারা অজ্ঞান হতে চেয়েছেন তাদের অজ্ঞান করা হয়েছে। এ অপারেশনের জন্য রোগীদের ২-৩ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। অপারেশনের পর রোগীদের মলত্যাগ করতে সবাই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন। অপারেশনের কিছুদিন পর ঘা শুকানোর পর শক্ত পায়খানা হলেও কেউ মলত্যাগের পর ব্যথা অনুভব করেননি। এই অপারেশনের পর কারো মল আটকে রাখতে অসুবিধা হয়নি। তবে সঠিক পদ্ধতিতে অপারেশন করতে ব্যর্থ হলে মল ধরে রাখতে অসুবিধা হতে পারে। এনাল ডাইলেটেশন করলে পায়খানা আটকে রাখার ড়্গমতা ব্যাহত হতে পারে এবং রোগটি আবার দেখা দিতে পারে। সে কারণে আমি কখনোই অহধষ ফরষধঃধঃরড়হ বা ঝঃৎবঃপযরহম করি না।

গর্ভবতী মায়ের পাইলস চিকিৎসা

অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক

গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য পরিচর্যা একটি গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়। এ অবস্থায় কিছু বিশেষ বিশেষ সমস্যা দেখা দেয়। যেগুলো অত্যন্তô সতর্কতার সাথে বিশেষ অবস্থার কথা বিবেচনায় রেখে চিকিৎসা করা উচিত। অন্যথায় মা ও শিশুর স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। এরূপ একটি সমস্যা হচ্ছে গর্ভাবস্থায় মায়ের পাইলসে আক্রান্তô হওয়া।
গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে মায়েদের পাইলসে আক্রান্তô হওয়া একটি সাধারণ ঘটনা, অনেকের হয়। এ সমস্যা আগে থেকে ছিল, কিন্তু এখন এটির তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার গর্ভাবস্থার কারণে অনেকের এ সমস্যা নতুন করে শুরম্ন হতে পারে। এ অবস্থায় পাইলস হওয়ার উলে্নখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কোষ্ঠকাঠিন্য, হরমোনের পরিবর্তন, জরায়ুর স্ফীতির জন্য পেটের ভিতরের চাপ বৃদ্ধি পাওয়া, যার কারণে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়।
এমতাবস্থায় বেশিরভাগ ড়্গেত্রে পাইলস বিনা অপারেশনে রড়্গণশীল চিকিৎসায় ভালো করা সম্ভব। প্রথমত আমরা আসছি কোষ্ঠ ব্যবস্থাপনায়। মল যাতে শক্ত না হয় এবং মলত্যাগে কষ্ট না হয় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য বেছে খাবার খেতে হবে, যাতে কোষ্ঠকাঠিন্য না হয়। আঁশ বা ঋমদপড় জাতীয় খাবার খেতে হবে যেমন শাকসবজি, ফলমুল, ইসুপগুলের ভুসি। গরম্ন ও খাসির গোশত কম খাওয়া ভালো।
এ ছাড়া প্রয়োজনে জুলাফ বা মল নরম করার ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এর যথেচ্ছ ব্যবহার ড়্গতিকর। এ ওষুধগুলো সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক মেয়াদে ব্যবহার করা উচিত। অন্যথায় অভ্যাসে পরিণত হবে। সিজ বাথ অর্থাৎ গরম পানির ছ্যাঁক দেয়ায় উপকার পাওয়া যায়। এটির নিয়ম হচ্ছে আধগামলা গরম পানিতে লবণ দিয়ে নিতম্ব ডুবিয়ে ১০ মিনিট, দিনে ২-৩ বার বসে থাকতে হবে।
এতে যদি রোগীর উন্নতি না হয় তাহলে আমরা ইনজেকশন অথবা আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে বিনা অপারেশনে এবং বিনা ব্যথায় এর চিকিৎসা করতে পারি। যেহেতু ইনজেকশনের সফলতা আশাব্যঞ্জক ও দীর্ঘস্থায়ী হয় না তাই পাইলসের চিকিৎসায় নতুন দিগন্তেôর উন্মোচন করে এমন ব্যবস্থা যেমন, রিংলাইগেশন পদ্ধতি অত্যন্তô ফলপ্রসূ হতে পারে।
রিংলাইগেশন পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে একটি ছোট্ট যন্ত্রের সাহায্যে পাইলসের চিকিৎসা করা হয়। এটি ডাক্তারের চেম্বারেই সম্ভব। কোনোরূপ অবশ বা অজ্ঞান করার প্রয়োজন নেই। চিকিৎসা-পরবর্তী কিছু দিনের ভেতর পাইলসটি আপনাআপনি কেটে পড়ে যায়। পদ্ধতিটি প্রয়োগের সময় রোগী কোনোরূপ ব্যথা অনুভব করেন না। আমাদের শরীরে যেহেতু তিনটি পাইলস রয়েছে অতএব কিছু দিন পরপর এটি ২-৩ বার করা প্রয়োজন হতে পারে। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত আমেরিকান পাইলস বিশেষজ্ঞ ডা. মারভিন এল করম্যান বলেন যে, এ পদ্ধতিতে চিকিৎসার সাফল্য এত চমৎকার যে ৮০ শতাংশ পাইলস রোগী এ চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় হয়েছেন।
পদ্ধতিটি প্রয়োগের পর কিছু বিশেষ বিশেষ ওষুধ ও উপদেশ দেয়া হয়। এ জন্য কোনোরূপ কর্মবিরতি বা ছুটি নেয়ার প্রয়োজন নেই। চিকিৎসার পর রোগী রিকশা বা গাড়িতে অনায়াসে কিছুড়্গণ পরই বাসায় ফিরে যেতে পারেন।
এটি অত্যন্তô লাভজনক; কারণ এটি সময়, ঝুঁকি ও অর্থের সাশ্রয় করে। এটি আন্তôর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে এটি অপারেশনের একটি যুক্তিসঙ্গত সফল বিকল্প পদ্ধতি। এতে অপারেশনের ঝুঁকিগুলো একেবারেই নেই।
অপারেশন
অন্তôঃসত্ত্বা অবস্থায় আমরা সাধারণত পাইলসের অপারেশন এড়িয়ে থাকি। তবে পাইলসের জটিলতা যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, অপারেশন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই তখন অপারেশন করাই শ্রেয়। বিশিষ্ট পাইলস বিশেষজ্ঞ ডা. সালিবী ২৫ জন অন্তôঃসত্ত্বা মায়ের পাইলস অপারেশন করে এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, ওই গর্ভবতী মায়েদের বা তাদের সন্তôানদের কোনোরূপ অসুবিধা হয়নি। তিনজন বাদে এ ২৫ জনের সবাই গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে ছিলেন। এদের একজনের শুধু অপারেশন-পরবর্তী রক্তপাত হয়েছিল। এ থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তেô আসতে পারি যে, গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় ড়্গেত্রে পাইলস অপারেশনের কোনো অতিরিক্ত ঝুঁকি নেই।
লেখকঃ বৃহদান্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বারঃ জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোনঃ ০১৭২৬-৭০৩১১৬

পাইলস বা অর্শ রহস্যাবৃত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা

অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক

পাইলস রোগটির সাথে আমরা হাজার বছর ধরে পরিচিত। কিন্তু এখনো পুরো বিষয়টি আমাদের কাছে অস্বচ্ছ, ভ্রান্তô ধারণায় পূর্ণ এবং সংস্কারের ঘেরাটোপে বন্দী।
পাইলসের সংজ্ঞাঃ পাইলসের কোনো সঠিক সংজ্ঞা এখনো পর্যন্তô চিকিৎসকদের জানা নেই। কারণ এ রোগটির আসল প্রকৃতি এখনো পর্যন্তô পুরোপুরি বোধগম্য নয়। পাইলস বলতে আমরা বুঝি মলদ্বারের ভেতরে ফুলে ওঠা রক্তের শিরার একটি মাংসপিণ্ড। এ শিরাগুলোর উৎপত্তির ব্যাপারে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। এরূপ রক্তের শিরার মাংসপিণ্ড বা ‘কুশন’ সব মানুষেরই রয়েছে। তাই প্রকৃত অর্থে পাইলস বা ‘হেমোরয়েড’ আমরা তখনই বলি যখন এটি কোনোরূপ উপসর্গ সৃষ্টি করেছে। যেমন মলদ্বারের বাইরে ঝুলে পড়া মাংসপিণ্ড অথবা রক্ত যাওয়া। প্রতিটি মানুষের তিনটি পাইলস বা ‘কুশন’ আছে। বড় পাইলসের মাঝখানে ছোট ছোট পাইলসও থাকতে পারে। পায়খানা করার সময় শিরাগুলো কিছুটা ঝুলে পড়ে এবং রক্ত ভর্তি হয়ে ফুলে ওঠে তারপর ফেটে গিয়ে রক্ত বের হয়।
বয়সঃ ৩০-৬০ বছর বয়সের ভেতর এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। ২০ বছর বয়সের নিচে পাইলস খুব একটা দেখা যায় না। পাইলস শনাক্ত করা খুব সহজ কাজ নয়। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক কেবল যন্ত্রের সাহায্যে পরীড়্গা করে পাইলস শনাক্ত করতে পারেন। কখনো কখনো টয়লেটে বসিয়ে কোঁত দিয়ে দেখতে হয়। আমাদের কাছে বিভিন্ন চিকিৎসক রোগী পাঠান পাইলস আছে বলে; কিন্তু পরীড়্গা করে আমরা হয়তো পাই এনালফিশার, পলিপ অথবা ফিস্টুলা। অর্থাৎ মলদ্বারের যে কোনো রোগকে সবাই পাইলস হিসেবে জানেন। কিন্তু এখানে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়। এ রোগ মহিলাদের চেয়ে পুরম্নষের কিছুটা বেশি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ কোনো না কোনো সময় পাইলসের সমস্যায় ভোগেন।
কারণঃ কয়েক শতাব্দীর গবেষণা সত্ত্বেও পাইলসের প্রকৃত কারণ উদঘাটিত হয়নি। তবে কিছু কিছু রোগ পাইলস হওয়াকে ত্বরান্বিত করে যেমন­ মলত্যাগে অতিরিক্ত কোঁত দেয়া, অনিয়মিত পায়খানার অভ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া ইত্যাদি। অন্য কিছু কিছু কারণ আছে যার জন্য পাইলস হতে পারে যেমন­ বংশগত, অনেকড়্গণ দাঁড়িয়ে থাকা, অনেকড়্গণ গরমে থাকা, ভারী ওজন তোলা, গর্ভাবস্থা, আঁটসাঁট পোশাক পরা, হরমোনের প্রভাব, আঁশজাতীয় খাবারের অভাব ইত্যাদি।
উপসর্গঃ পাইলসের শ্রেণীবিন্যাসঃ পাইলস দুই প্রকার।
বহিঃস্থিত পাইলসঃ এ ড়্গেত্রে মলদ্বারের বাইরে ফোলা থাকে এবং কিছুটা ব্যথা বা অস্বস্তিô হতে পারে।
অভ্যন্তôরীণ পাইলসঃ এ ড়্গেত্রে টয়লেটে টাটকা লাল রক্ত দেখা যায়। কোনোরূপ ব্যথা থাকে না। মলত্যাগের শেষে রক্ত যায়। রক্ত ফোঁটায় ফোঁটায় যায় আবার কখনো তীরের বেগে যায়। রক্ত যাওয়ার পর যদি বেশি ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হয় তাহলে এনালফিশার বা ক্যান্সার হতে পারে। রক্ত যেতে যেতে রোগী গভীর রক্তশূন্যতায় ভুগতে পারেন। মলদ্বারের বাইরে পাইলসটি ঝুলে পড়তে পারে। সে ড়্গেত্রে মলত্যাগের শেষে পাইলসটি আপনাআপনি ভেতরে ঢুকে যেতে পারে অথবা রোগী হাত দিয়ে চাপ দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে পারেন। যখন এটিকে চাপ দিয়ে ঢুকানো যায় না তখন একে চতুর্থ ডিগ্রি পাইলস বলে। রক্ত যাওয়া কখনো একটানা চলে না। প্রথমত, বছরে একবার বা দু’বার যায় এরপর দু’মাস পরপর যায়। তারপর প্রতি মাসে যায়। শেষে ঘন ঘন রক্ত যায় এবং রক্ত যাওয়ার পরিমাণও বেড়ে যায়। যখন মরা রক্ত যায় বা আমমিশ্রিত রক্ত যায় এবং পায়খানার শুরম্নতেই রক্ত যায় তখন আমরা ক্যান্সার বলে সন্দেহ করি। তবে পায়ুপথ বা বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার টাটকা লাল রক্ত যেতে পারে।
পাইলসে সাধারণত ব্যথা হয় না। থ্রম্বোসিস হলে বা পাইলস বাইরে অতিরিক্ত ঝুলে থাকলে ব্যথা হতে পারে। রোগীদের ধারণা শুধু পাইলস হলেই রক্ত যায়। কিন্তু সঠিক তথ্য হচ্ছে, পায়ুপথের অসংখ্য রোগের প্রধান লড়্গণ টয়লেটে রক্ত যাওয়া। যেসব রোগে টয়লেটে রক্ত যায় তার মধ্যে রয়েছে পাইলস, এনালফিশার, পলিপ, ক্যান্সার, ফিস্টুলা, আলসারেটিভ কোলাইটিস, রেকটাল প্রোলোপস। গত নয় বছর আমি বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথের সমস্যায় ভুগছেন এমন ২৯ হাজার ৬৩৫ জন রোগীর ওপর গবেষণা করে দেখেছি, এদের মধ্যে ১৮ শতাংশ পাইলস, ২ শতাংশ থ্রম্বোসড পাইলস, ৩৫ শতাংশ এনালফিশার, ২.২ শতাংশ পাইলস, ফিস্টুলা, এনালফিশার একত্রে, ১৫ শতাংশ ফিস্টুলা, ২.৫৫ শতাংশ পায়ুপথ ক্যান্সার, ৩.৫ শতাংশ রেকটাল পলিপ, ২ শতাংশ মলদ্বারে ফোঁড়া, ১.৮৪ শতাংশ অজানা কারণে মলদ্বারে ব্যথা, ৬ শতাংশ ক্রনিক আমাশয় (আইবিএস), ০.৫ শতাংশ অজানা কারণে রক্ত যাওয়া, ০.২৫ শতাংশ অজানা কারণে মলদ্বারে চুলকানি রোগে ভুগছেন। এ গবেষণার ফলে আমরা দেখতে পাই মলদ্বারে শুধু পাইলস রোগই হয় না আরো অনেক রোগ হয় যার ২০ শতাংশ রোগী পাইলসে আক্রান্তô।
পরীড়্গা-নিরীড়্গাঃ প্রকটস্কপি ও সিগময়ডস্কপি পরীড়্গা করা অত্যন্তô জরম্নরি। মলদ্বারের ভেতর এন্ডোস্কপি যন্ত্র দিয়ে এ পরীড়্গা ছাড়া কখনো সঠিক রোগ নির্ণয় সম্ভব নয়। আমরা বেশকিছু রোগী পেয়েছি যাদের ফিস্টুল অপারেশন হয়েছে। রোগীর কখনো রক্ত যায় না। অথচ এ পরীড়্গায় ক্যান্সার ধরা পড়েছে। আবার এমনও দেখেছি, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইলস অপারেশন করে এসেছেন কিন্তু পাইলস সারছে না। পরীড়্গা করে দেখেছি ভেতরে ক্যান্সার আছে। রোগীর কোনোই উপসর্গ নেই অথচ ক্যান্সার থাকতে পারে। কিছু দিন আগে একজন রোগী সিঙ্গাপুর থেকে ফিস্টুল অপারেশন করে এসেছেন। তিনি ভালো হননি তাই দেখাতে এসেছেন। তার কোনো রক্ত যাওয়ার সমস্যা নেই। আমরা রম্নটিন চেকআপ হিসেবে সিগময়ডস্কপি পরীড়্গা করে তার ক্যান্সার শনাক্ত করেছি।
প্রতিরোধের উপায়ঃ এ রোগ প্রতিরোধের উপায় হচ্ছে, সময়মতো কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার চিকিৎসা করা, টয়লেটে বসে বসে পেপার/বই না পড়া, খাবারের সাথে আঁশজাতীয় জিনিস যেমন­ ফল, সবজি, সালাদ পরিমাণমতো খাওয়া, দৈনিক ৬-৮ গ্নাস পানি পান করা, ভারী ওজন না তোলা, অতিরিক্ত গরমে বেশিড়্গণ না থাকা ইত্যাদি।
লেখকঃ বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বারঃ জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। চেম্বারঃ ৫৫ সাতমসজিদ রোড (জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড), ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোনঃ ০১৭১৫০৮৭৬৬১, ০১৭২৬৭০৩১১৬

মলদ্বার ও কোলনের প্রধান কয়েকটি রোগের উপসর্গ

অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক

পাইলসঃ রক্তপড়া (তাজা এবং অনেক সময় ফিনকি দিয়ে বের হয়ে আসা) মাঝে মধ্যে রক্তপড়া, সাধারণত ব্যথা থাকে না, মাংসপিণ্ড ঝুলে পড়া, অনেক সময় শুধু মাংস ঝুলে পড়ে এবং চুলকানি হয়।
এনালফিশারঃ মলত্যাগে প্রচণ্ড ব্যথা, জ্বালাযন্ত্রণা, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া বা টিস্যু পেপারে রক্ত দেখা এবং হাতে গেজের মতো লাগা।
ফিস্টুলাঃ মাঝে মধ্যে ব্যথা হওয়া, ফুলে যাওয়া, পুঁজ-রক্ত পড়া, হাতের মধ্যে শক্ত কিছু একটা লাগা।
ক্যান্সারঃ কোলনের ডানপাশে ক্যান্সার­ পেটের ডানপাশে ও নিচে সাধারণত চাকা নিয়ে রোগীরা আসে। শারীরিক দুর্বলতা বেশি থাকে।
? কোলনের বামপাশে­ হঠাৎ খাদ্যনালী বন্ধ হয়ে পেট ফোলা নিয়ে এই রোগীরা সাধারণত আসে। বামপাশের নিচের দিকে হলে পায়খানার সাথে মেশানো রক্ত নিয়ে রোগীরা আসতে পারে। অনিয়মিত পায়খানা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি উপসর্গ নিয়েও রোগীরা আসে।
? রেকটাম ক্যান্সারঃ মলত্যাগের সময় রক্তপড়া (পায়খানার সাথে মেশানো) মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন, ঘন ঘন মলত্যাগ, সব সময় মল ত্যাগের ইচ্ছা এবং মলদ্বার খালি না হওয়া ইত্যাদি উপসর্গই প্রধান। তবে পুরনো হলে মলদ্বারে ব্যথা, মাজার ব্যথা, পায়ে ব্যথা নিয়েও আসতে পারে।
? ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সারঃ পেটে পানি, পেটে চাকা, জন্ডিস, শ্বাসকষ্ট, কাশি, হাতে-পায়ে ব্যথা, মাজার ব্যথা ও ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি।
লেখকঃ বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বারঃ জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫, সাতমসজিদ রোড, (জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড) ধানমন্ডি, ঢাকা
ফোনঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬

লিভার সিরোসিস ও হার্টের রোগীর পাইলস
অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক


লিভার সিরোসিসের রোগীদের কি পাইলস বেশি হয়?
লিভার সিরোসিসে সাধারণত রক্তবমি হয়। পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ার সমস্যা কম। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই রোগের কারণে রোগীদের পাইলস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে না। অবশ্য এ ড়্গেত্রে পায়ুপথে অতিরিক্ত ফুলে ওঠা শিরার (জবপঃধষ াধৎরপবং) দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু এটিকে পাইলসের পর্যায়ে ফেলা যায় না। পাইলস ও রেকটাল ভ্যারিসেস সম্পূর্ণ আলাদা রোগ। ডা. হসকিং ১০০ জন সিরোসিস রোগীর ওপর গবেষণা করে দেখেছেন যে শতকরা ৪৪ জনের পায়ুপথে ভ্যারিসেস (অহড়ৎবপঃধষ ঠধৎরপবং) রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো এই রোগীদের শতকরা ৪১ জনের পাইলস বা হেমোরয়েড রয়েছে। এখানে উলে্নখ্য, সর্বসাধারণের অর্থাৎ যাদের লিভার সিরোসিস হয়নি তাদের ও শতকরা ৪১% জনের পরীড়্গা করলে পাইলস পাওয়া যাবে।
চিকিৎসাঃ এ রোগে পায়ুপথে রক্ত গেলে পোর্টাল হাইপারটেনশনের চিকিৎসা করতে হবে এবং পায়ুপথে অপারেশন করে রক্ত বন্ধ করতে হবে, তবে এ অপারেশন পাইলসের অপারেশন নয়।
হার্টের রোগীর পাইলস
অনেকে আছেন পাইলসকে অবহেলা করেন। যদি পাইলস থাকা অবস্থায় কেউ হৃদরোগে আক্রান্তô হন তাহলে হৃদরোগের চিকিৎসার আগে পাইলস অপারেশন করে আসা প্রয়োজন। কারণ হৃদরোগ অপারেশনের পর রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধক ওষুধ খেতে হবে বহু দিন। তখন পাইলসের রক্ত যাওয়ার পরিমাণ বিপজ্জনক-ভাবে বেড়ে যাবে। রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধকারী ওষুধের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এসপ্রিন, ডিসপ্রিন ও ইকোসপ্রিন। অনেক উচ্চ রক্তচাপের রোগীও এসপ্রিন, ডিসপ্রিন ও ইকোসপ্রিন জাতীয় ওষুধ নিয়মিত খাচ্ছেন। এগুলো দেয়া হয় হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য। ওষুধটি রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। এমতাবস্থায় পাইলসের রক্তড়্গণ বন্ধ করা খুবই কষ্টকর। অতএব অবহেলা না করে সময় থাকতে পাইলসের চিকিৎসা করে নেয়া জরম্নরি।
লেখকঃ বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বারঃ জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডেশিপ হাসপাতাল, ৫৫, সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোনঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬, ০১৭১৫০৮৭৬৬১


ফিস্টুলা নিয়ে কিছু কথা

অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক

কোনো কোনো সার্জনের ভুল ধারণা রয়েছে যে, জটিল ফিস্টুলা অপারেশন করতে পেটে কৃত্রিম মলদ্বার (ঈসলসঢ়য়সশী) করতে হবে। আমি মনে করি কোনো জটিল ফিস্টুলার অপারেশনে (ঈসলসঢ়য়সশী) করার প্রয়োজন নেই। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে আমি কয়েকটি রোগীর অপারেশন করেছি যাদের ইতোমধ্যে ১ বা ৩ বার অপারেশন হয়েছিল এবং এর মধ্যে দু-একবার (ঈসলসঢ়য়সশী) করেও অপারেশন করা হয়েছিল; কিন্তু অপারেশন ব্যর্থ হয়েছে। এদেরকে আমি (ঈসলসঢ়য়সশী) না করেই অপারেশন করেছি এবং তারা ভালো হয়েছেন। তবে ব্যতিক্রমী কিছু ফিস্টুলা আছে যার জন্য কলোস্টমি করতে হয় যার সংখ্যা অত্যন্ত কম। গত নয় বছরে এরূপ কয়েকটি ফিস্টুলার জন্য আমি কলোস্টমি করেছি।
জটিল ফিস্টুলা অপারেশন সিটন প্রযুক্তি?
আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে হিপোক্রেটিস এই প্রযুক্তির ধারণার জন্মদাতা। এ প্রযুক্তিতে মলদ্বারের মাংসপেশিকে অত্যন্ত ধীরে ধীরে কাটার ব্যবস্থা করা হয়। ২-৩ সপ্তাহে কাটা সম্পন্ন হয়। রাবার ব্যান্ড অথবা পেনরোজ ড্রেইন টিউবের সাহায্যে মাংসপেশিকে বেঁধে দেয়া হয়।
এ প্রযুক্তির কারণে স্থানীয়ভাবে প্রদাহের সৃষ্টি হয় যার কারণে মাংসপেশি দূরে সরে যায় না। এটি কত দিন পরপর ব্যবহার করতে হবে এবং কী কৌশল অবলম্বন করতে হবে তা বেশ বৈচিত্র্যময়। এটি নির্ভর করছে যে সার্জন অপারেশন করবেন তার ওপর। ইতোমধ্যে আমি চট্টগ্রামের একজন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের অত্যন্ত জটিল একটি ফিস্টুলা অপারেশন করেছি। এর আগে তিনি ১৯৯৪ সালে একজন অভিজ্ঞ সার্জন দ্বারা অপারেশন করান; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সফল হননি। এরপর তিনি অপারেশনের জন্য আমেরিকা যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। পরে সিদ্ধান্ত পাল্টিয়ে আমাকে দিয়ে অপারেশন করান। তার তিনটি ফিস্টুলার মধ্যে দু’টি অত্যন্ত জটিল ছিল। প্রথম দিন অপারেশনে আমি সিটন প্রয়োগ করি। ৭ দিন পর এটি অপসারণ করে অন্যটিতে সিটন প্রয়োগ করি এবং এর ১৪ দিন পর দ্বিতীয় সিটনটি অপসারণ করে আবার প্রয়োগ করি যা ৭ দিন পর আবার অপসারণ করি। তিনি সম্পূর্ণ ভালো হয়েছেন।
অপারেশনের সাফল্য
অপারেশনের কথা শুনলে রোগীরা বলেন ­ স্যার, শুনেছি অপারেশন করলে আবার হয় তাই অপারেশন করে আর লাভ কী? কিন্তু আমি বলব, অপারেশনের সাফল্য চমৎকার। কিন্তু এক কথায় এর উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। কারণ ফিস্টুলার প্রকার ভেদের কারণে এর সাফল্য তুলনা করা কষ্টসাধ্য। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন সার্জনের বিভিন্ন অপারেশন কৌশল। কী কারণে ফিস্টুলা হয়েছিল তার ওপরও ফলাফল নির্ভর করে। সাফল্য ও ব্যর্থতার মাপকাঠি হচ্ছে তিনটিঃ
(ক) পুনরায় ফিস্টুলা হওয়া; (খ) ক্ষত শুকাতে অতিরিক্ত দেরি হওয়া; (গ) মল ও বায়ু ধরে রাখার অক্ষমতা।
অপারেশনের ব্যর্থতার মূল কারণ হচ্ছে যদি সার্জন ফিস্টুলার ভেতরের মুখটি শনাক্ত করতে ব্যর্থ হন এবং এটি সম্পূর্ণ কেটে ফেলতে না পারেন। আমি এটি শনাক্ত করার চেষ্টা করি যখন রোগী আমাকে চেম্বারে দেখায় তখনই। এবং অপারেশনের সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আমি এটিকে শনাক্ত করতে চেষ্টা করি। তবে জটিল ফিস্টুলা আবার হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণতঃ ৭-১৫ শতাংশ।
কম জটিল ফিস্টুলার অপারেশন
অপারেশনের পর ৪-৯ শতাংশ আবার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ক্ষত শুকাতে দেরি হয়ঃ ৭ শতাংশ ক্ষেত্রে। বায়ু এবং মল নিয়ন্ত্রণের সামান্য অক্ষমতা ৭-১২ শতাংশ।
লেখকঃ বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বারঃ জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোনঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬।


মলদ্বারের ব্যথা ও এনাল ফিসারের চিকিৎসার অভিজ্ঞতা


অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক

মলদ্বারের ব্যথায় অনেক লোক ভুগে থাকেন। যে রোগে মলদ্বারে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হয় তার নাম এনাল ফিসার। সাধারণত শক্ত মল হলে বা ঘন ঘন মলত্যাগের কারণে মলদ্বার ফেটে ঘা হয়ে যায়। সমস্যা হলো এই যে, এই ঘা শুকাতে চায় না সহজে। আবার কিছু কিছু রেগীর এই ঘা শুকিয়ে গেলেও কিছু দিন পর মল শক্ত হলে একই সমস্যা আবার দেখা দেয়। এই রোগ একজন রোগীর বছরের পর বছর এমনকি ৩০-৪০ বছর থাকতে দেখেছি। এ রোগের উপসর্গেরও বেশ তারতম্য হয়। কোনো কোনো রোগীর মলত্যাগের পর সামান্য জ্বালাপোড়া হয় এবং তা ৫ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত চলে। আবার কখনো কখনো ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করে এবং কয়েক ঘণ্টা এমনকি সারাদিন চলতে থাকে। কারো কারো মাথা ধরে যায়। আবার দীর্ঘস্থায়ী এনাল ফিসারে মাঝে মধ্যে মোটেই ব্যথা থাকে না। আমার ব্যক্তিগত মতে মলদ্বারে রোগের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশি হয়। জনসাধারণ এ রোগটিকে সাধারণত পাইলস হয়েছে বলে মনে করে থাকেন। এটি যেকোনো বয়সে হতে পারে। আমি দেড় মাসের শিশুকে এ রোগ হতে দেখেছি। তবে তরুণ ও যুবাদের বেশি হয়। পুরুষ অথবা নারী উভয়ের এ রোগটি সমানভাবে হয়ে থাকে।
কারণ এবং কী করে ঘটে?
এটি হওয়ার জন্য সাধারণত দায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা মলত্যাগের সময় কোঁত দেয়া। শক্ত মল বের হওয়ার সময় মলদ্বার ফেটে যায় বলে মনে করা হয়। যারা আঁশযুক্ত খাবার খান তাদের এ রোগ কম হয়। আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে শাকশবজি, কাঁচা ফলমূল, আলু, ইসুপগুলের ভুসি ইত্যাদি। চা কফি বা মদ খাওয়ার সাথে এগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। ঘন ঘন মলত্যাগ বা ডায়রিয়া হলে ফিসার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যদিও আঙুল দিয়ে পরীক্ষা করলে মলদ্বার অতিরিক্ত সঙ্কুচিত বলে মনে হয়। মলদ্বারের ভেতর সাপোজিটর-জাতীয় ওষুধ দেয়ার সময় অনেকের মলদ্বারে যে ঘা হয় তা থেকেও অনেক রোগীর বিশেষ করে মহিলাদের এজাতীয় রোগ হতে দেখেছি।
উপসর্গ ও লক্ষণ
মলদ্বারে ফিসারের প্রধান লক্ষণ হলো ব্যথা, জ্বালাপোড়া ও রক্তক্ষরণ। এ ধরনের ব্যথা সাধারণত মলত্যাগের অব্যবহিত পরে হয় এবং কয়েক মিনিট থেকে বহু ঘণ্টা এমনকি সারাদিনও চলতে পারে। প্রকটালজিয়া ফিউগাক্স নামক একধরনের রোগেও মলদ্বারে ব্যথা হয় কিন্তু তা মলত্যাগের অব্যবহিত পরেই হয় না, দিনের যেকোনো সময় হতে পারে। পাইলসের জটিলতা যেমন রক্ত জমাট বাঁধা, আলসার বা গ্যাংগ্রিন হলেও মলদ্বারে প্রচুর ব্যথা হয়; কিন্তু তখন রোগী মলদ্বারে বড় একটি মাংসপিণ্ড আছে বলে অভিযোগ করেন। মলদ্বারে সংক্রমণ হয়ে ফোঁড়া হলে, ফিস্টুলা বা ভগন্দর এবং দুরারোগ্য ক্যান্সারেও ব্যথা হয়। এসব ক্ষেত্রে রোগের ইতিহাস ও রোগীকে ফিজিক্যাল পরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত করতে হয়।
এই রোগে রক্তক্ষরণের পরিমাণ সাধারণত কম। তবে আমি অনেক রোগী দেখেছি যারা বলেন মুরগি জবাই করলে যেরূপ রক্ত পড়ে তেমন রক্ত যায়। কিছু দিন আগে অল্পবয়সী এক অফিসারকে চিকিৎসা করেছি যার তীব্র রক্তশূন্যতা হয়েছিল। দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) মলদ্বারের ফিসারের রোগী একটু ভিন্ন ধরনের উপসর্গের কথা বলেন। তাদের অভিযোগের মধ্যে থাকে মলদ্বারে অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড, পুঁজ পড়া, চুলকানি ইত্যাদি। এসব উপসর্গ একত্রে অথবা আলাদা আলাদাভাবে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ থাকতে পারে আবার না-ও থাকতে পারে। ব্যথা সাধারণত তীব্র হয় না আবার অনেক সময় ব্যথা একেবারেই থাকে না।
ফিসারের রোগীরা অনেক সময় প্রস্রাবের সমস্যায় ভোগেন। অনেকে বহুদিন ধরে প্রস্রাব করতে কষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। জয়পুরহাটের একজন ডাক্তার দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে যাবৎ ফিসারে ভুগছিলেন। তিনি মলত্যাগের পাশাপাশি প্রস্রাবেও কষ্ট পাচ্ছিলেন। অভিজ্ঞ সার্জন দ্বারা মূত্রনালীর অপারেশন করিয়েছেন। খুব উপকার হয়নি। ইন্ডিয়া গিয়ে দেখিয়েছেন। সম্পূর্ণ ভালো হননি। আমি এনাল ফিশারের অপারেশন করার পর প্রস্রাব করতে সমস্যা হচ্ছে না বলে জানান। এরূপ আরো অনেক রোগী রয়েছেন।
এ রোগে মহিলারা কখনো কখনো যৌন মিলনে ব্যথা অনুভব করেন। যদিও রোগীরা বুঝতে পারেন যে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে এ সমস্যাটির উদ্ভব হয়েছে তবু ব্যথার ভয়ে রোগীরা টয়লেটে যেতে চান না। এভাবে কোনো কোনো রোগী ৫-১০ দিন পর একবার টয়লেটে যান। আবার এরূপ রোগী পেয়েছি যাদের অতিরিক্ত মল আটকে রাখার কারণে মলত্যাগ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে এবং মল চুইয়ে পড়ে কাপড় নষ্ট হয়। তখন রোগী বলেন, আমি মল ধরে রাখতে পারছি না। আসলে সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা করালে এমনটি হওয়ার কথা নয়।
তীব্র ব্যথাসম্পন্ন ঘা
এ অবস্থায় রোগীরা ভীষণ ব্যথায় ভোগেন। কয়েক ঘণ্টা থেকে বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে থাকেন। এ সময় মলদ্বার পরীক্ষা করলে দেখা যায় যে সেটি খুবই সঙ্কুচিত অবস্থায় আছে। তীব্র ব্যথার কারণে ভেতরের ঘা দেখা দুঃসাধ্য। কোনো যন্ত্রও প্রবেশ করানো যায় না। অনেক রোগী তীব্র ব্যথার জন্য মলদ্বার স্পর্শ করতে দিতে চান না।
দীর্ঘস্থায়ী মলদ্বারের ঘা
ক্রনিক ফিসার বলা হয় যখন একটি সঠিকভাবে চিহ্নিত সীমার মধ্যে ঘা দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে একটি বাড়ন্ত মাংসপিণ্ড বা গেজ দেখা যায়। এটিকে বলা হয় সেন্টিনেল পাইলস। মলদ্বারের ভেতরেও একটি টিউমারের মতো মাংসপিণ্ড দেখা যায় তাকে বলা হয় ঐীহপড়য়ড়সহভমপন থষথল হথহমললথ. এটি কোনো ক্যান্সার বা টিউমার নয়। এ ক্ষেত্রে পায়ুপথের ভেতর যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা উচিত যাতে টিউমার বা প্রদাহজনিত কারণ চিহ্নিত করা যায়। এই ফিসার সংক্রমিত হয়ে কখনো কখনো ফোঁড়া দেখা দিতে পারে এবং তা থেকে ফিস্টুলা (ভগন্দর) হয়ে পুঁজ পড়তে পারে। এ ঘা থেকে সব সময় কিছু রস নিঃসরণ হওয়ায় চুলকানি দেখা দিতে পারে।
প্রতিরোধ
কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করা উচিত এবং বেশি শক্তি প্রয়োগে মলত্যাগ করা উচিত নয়। বারবার মলত্যাগের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে এবং ডায়রিয়া হলে দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে।
চিকিৎসা
সীমিত চিকিৎসা
রোগটি শুরুর অল্প দিনের ভেতরে চিকিৎসা শুরু করা হলে বিনা অপারেশনে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে প্রথম প্রথম সামান্য জ্বালাপোড়া এবং একটু রক্তক্ষরণ ছাড়া তেমন সমস্যা থাকে না তাই কেউ ডাক্তারের কাছে যান না। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি রোগটি যখন বারবার হচ্ছে এবং ব্যথা কিছুটা তীব্র হচ্ছে তখনই ডাক্তারের কাছে আসেন। ততক্ষণে রোগটি ক্রনিক হয়ে গেছে। এর পরেও আমি ওষুধ দিয়ে ১ মাস সেবন করতে বলি। যদি ভালো হয়ে যান তাহলে বিশেষ ধরনের খাবারের উপদেশ দিয়ে বলি যদি কোনো দিন অসুবিধা হয় তাহলে আসবেন। কিন্তু ১ মাস বা দু’মাসের ওষুধেও যদি ভালো না হয় তখন অপারেশন করতে উপদেশ দিই।
ওষুধের মধ্যে রয়েছে মল নরম করার এবং মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করার ওষুধ। আঁশজাতীয় খাবার যেমন সবজি, টাটকা ফলমূল, ইসুপগুলের ভুসি খাওয়া যেতে পারে। ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। সিজ বাথ (ঝময়্‌ দথয়ভ) নিলে উপকার পাওয়া যায়। এটির নিয়ম হচ্ছে আধ গামলা লবণ মিশ্রিত গরম পানিতে নিতম্ব ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। মলদ্বারের ব্যথানাশক মলম ব্যহার করতে হয়। এতে যদি পুরোপুরি উপকার না পাওয়া যায় এবং রোগটি যদি বেশি দিন চলতে থাকে তাহলে অপারেশন করিয়ে নেয়া ছাড়া ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকে।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা বা অপারেশন
এ রোগের জন্য অপারেশন করতে হতে পারে এ কথা শুনলেই রোগীদের আত্মা শুকিয়ে যায়। রোগীরা বলেন, স্যার, এমনিতেই এত ব্যথা টয়লেটে যেতে পারি না; তার ওপর অপারেশন করলে টয়লেট করব কী করে? আবার এই রোগীরাই যখন অপারেশনে রাজি হন তখন অপারেশনের পর বলেন, স্যার, গত ১৫ বছর পর এই প্রথম আরাম করে পায়খানা করলাম। অনেকে বলেন, স্যার, টয়লেটে এখন এত আরাম পাচ্ছি যে, তখনই আপনার জন্য দোয়া করি। আসলে মলদ্বারের এই ফিসার বা ঘা না শুকানো পর্যন্ত রোগীর সমস্যা চলতে থাকে। টয়লেটে গেলে মল বেরিয়ে আসতে চায় না। অনেক সময় নষ্ট করে এবং নানা কসরত করে রোগীকে মলত্যাগ করতে হয় এমনকি বায়ু বের করতেও কষ্ট হয়। ওষুধে না সারলে অপারেশনই এই ঘা শুকাবার একমাত্র পথ এবং তার পরই সব সমস্যার সমাধান হবে। অপারেশনের অব্যবহিত পরই রোগী আরামে মলত্যাগ করতে পারবেন কিন্তু অপারেশনের ঘা শুকাতে ২-৪ সপ্তাহ লাগতে পারে। তবে রোগী ৫-১০ দিনের মধ্যে কাজে যোগদান করতে পারেন। অপারেশনের জন্য হাসপাতালে মাত্র ২-৩ দিন থাকতে হয়।
সবচেয়ে দুঃখজনক যে প্রশ্নটি সর্বদা শুনতে হয় তা হলো, রোগীরা বলেন, স্যার, শুনেছি এই রোগ অপারেশন করলেও বারে বারে হয় তাই আর অপারেশন করিয়েই বা লাভ কী? আমি জানি না কোথা থেকে বেশিরভাগ রোগী এমনকি বিদেশে ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন এমন রোগীও একই ধারণা পোষণ করেন। এ কথা বলার সময় অনেক রোগী কোনো কোনো ডাক্তারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে, তিনি বলেছেন, আপনাকে সারাজীবন এ সমস্যা নিয়েই চলতে হবে। যা ওষুধ দিয়েছি এগুলো এবং বেলের শরবত খাবেন। মল নরম রাখবেন। এভাবে যত দিন চলতে পারেন। অপারেশন করিয়ে লাভ নেই আবার এটি হতে পারে।
এর উত্তরে আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, এ রোগের অপারেশনের সাফল্য আন্তর্জাতিকভাবে ৯৫-৯৯ শতাংশ এবং আবার হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বিগত ৯ বছরে আমি এ ধরনের শত শত অপারেশন করেছি এবং ৯৭ শতাংশ রোগী ভালো হয়েছেন সম্পূর্ণরূপে।
অপারেশন পদ্ধতি
ক) মলদ্বারের মাংসপেশির সম্প্রসারণ (অষথল নমলথয়থয়মসষ)-এ পদ্ধতিটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সাফল্য খুবই সামান্য বলে বেশিরভাগ সার্জন এর বিপক্ষে।
খ) মলদ্বারের অভ্যন্তরীণ বৃত্তাকার মাংসপেশি কেটে দেয়া (খথয়পড়থল ওষয়পড়ষথল ঝহভমষধয়পড়সয়সশী) এই অপারেশনে মলদ্বারের অভ্যন্তরীণ স্ফিংটারে (ঝহভমষধয়পড়) একটি সূক্ষ্ম অপারেশন করতে হয়। এটির কৌশলগত হেরফের হলে মল নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। অজ্ঞান না করে অপারেশন করা যায়। ১-২ দিন পর রোগী বাড়ি ফিরে যেতে পারে। তবে কাজে যোগদান করতে ৫-১০ দিন লাগতে পারে। বিদেশে রোগ জটিল হওয়ার আগেই অপারেশন করা হয়। ফলে তারা অল্প সময় পরে স্বাভাবিক কাজ করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে যাদের চিকিৎসা করি তারা শুধু এনাল ফিসার নিয়েই আসেন না, এর যে জটিলতা আছে অর্থাৎ ফোঁড়া, ফিস্টুলা ঐীহপড়য়ড়সহভমপন থষথল হথহমললথ এসব নিয়ে আসেন ফলে এর অপারেশনে বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্য কাটাছেঁড়া করার কারণে সুস্থ হতে অনেক বেশি সময় লাগে।
আমি অপারেশনের তিন ঘণ্টা পর তরল খাবার এবং ছয় ঘণ্টা পর স্বাভাবিক খাবার খেতে দিই। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ফলে বেশিক্ষণ না খাইয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। অপারেশনের ১-২ দিন পর রোগী চলে যেতে পারে। এরপর ৭ দিন অন্তর একবার চেকআপের জন্য আসতে হয়। না এলে কোনো জটিলতা হলে শনাক্ত করতে অসুবিধা হয়।
লেখকঃ বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বারঃ জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোনঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬, ০১৭১৫০৮৭৬৬১

এনাল ফিশার অধ্যাপক ডাজ্ঝ এ কে এম ফজলুল হক বৃহদান্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মলদ্বারের ব্যথায় অনেক লোক ভুগে থাকে। ফিশার মানে মলদ্বারে ঘা অথবা ফেটে যাওয়া। এটি দুই ধরনের হয়। তীব্র মাত্রায় ফিশার হলে রোগীর মলদ্বারে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। দীর্ঘস্থায়ী ফিশারে অবশ্য ব্যথার তারতম্য হয়। এটি যেকোনো বয়সে হতে পারে। তবে তরুণ বয়সেই বেশি হয়। নারী-পুরুষ উভয়ই এতে সমানভাবে আক্রান্ত হতে পারে। কারণঃ ফিশার হওয়ার জন্য সাধারণত দায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা মলত্যাগের সময় চাপ দেওয়া। এ ছাড়া শক্ত মল বের হওয়ার সময় মলদ্বার ফেটে যায় বলে ধারণা করা হয়। যারা আঁশযুক্ত খাবার খায়, তাদের এ সমস্যাটি কম হয় আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে শাকসবজি, কাঁচা ফলমূল, আলুর খোসা, ইসবগুলের ভুসি ইত্যাদি। চা-কফি বা মদ্যপানের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ঘন ঘন মলত্যাগ বা ডায়রিয়া হলে ফিশার হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। বিজ্ঞানীরা মলদ্বারের ভেতরের চাপ মেপে দেখেছেন। ফিশারে চাপ তেমন একটা বাড়ে না, যদিও আঙ্গুল দিয়ে পরীক্ষা করলে মলদ্বার অতিরিক্ত সংকুচিত বলে মনে হয়। উপসর্গঃ ফিশারের প্রধান লক্ষণ হলো-ব্যথা ও রক্তক্ষরণ। ব্যথা সাধারণত মলত্যাগের পরে হয় এবং কয়েক মিনিট থেকে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে ব্যথা থাকতে পারে। প্রকটালজিয়া ফুগাক্স নামে একধরনের রোগেও মলদ্বারে ব্যথা হয়। তবে এ ব্যথা মলত্যাগের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। রক্ত জমাট বাঁধা পাইলসেও ব্যথা হয়, তখন মলদ্বারে চাকা থাকে বলে মনে করা হয়। এ রোগে রক্তক্ষরণের পরিমাণ সাধারণত কম, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতেই পারে। দীর্ঘস্থায়ী এনাল ফিশারের রোগীদের একটু ভিন্ন ধরনের উপসর্গ হয়ে থাকে। কখনো কখনো মলদ্বারে অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড, পুঁজ পড়া, চুলকানি-এগুলো একসঙ্গেও হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ থাকতে পারে বা না-ও থাকতে পারে। ব্যথা সাধারণত তীব্র হয় না; অবশ্য অনেক সময় ব্যথাই থাকে না। ফিশারের রোগীরা অনেক সময় প্রস্রাবের সমস্যায় ভোগেন। মেয়েরা কখনো কখনো মিলনে ব্যথা অনুভব করে। যদিও রোগী বুঝতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণেই এমন হয়েছে; তবু যখন ব্যথা শুরু হয় তখন অনেকেই ভয়ে টয়লেটে যেতে চায় না এবং মলত্যাগের বেগ হলে তাতে ব্যথার ভয়ে সাড়া দিতে চায় না। তীব্র ব্যথাযুক্ত ঘা বা একিউট ফিশারঃ এ সময় মলদ্বার পরীক্ষা করলে দেখা যায়, সেটা খুবই সংকুচিত অবস্থায় আছে। তীব্র ব্যথার কারণে মলদ্বারের ভেতরের ঘা পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। অবশ্য সরু যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা যায়। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথাযুক্ত ঘা বা ক্রনিক ফিশারঃ ক্রনিক ফিশার বলা হয় যখন একটি সঠিকভাবে চিহ্নিত সীমানার মধ্যে ঘা দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে একটি মাংসপিণ্ড বা গেজ দেখা যায়। মলদ্বারের ভেতরেও একটি মাংসপিণ্ড দেখা যেতে পারে, যাকে অনেক সময় টিউমার বলে ভুল হয়। এ ক্ষেত্রে পায়ুপথের ভেতর যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে, যাতে টিউমার বা প্রদাহজনিত কারণ চিহ্নিত করা যায়। এ ফিশার সংক্রমিত হয়ে কখনো কখনো ফোঁড়া দেখা দিতে পারে এবং তা থেকে ফিস্টুলা (ভগন্দর) হয়ে পুঁজ পড়তে পারে। প্রতিরোধঃ কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে; বেশি শক্তি প্রয়োগ করে মলত্যাগ করা যাবে না। বারবার মলত্যাগের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। ডায়রিয়া হলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। চিকিৎসা রক্ষণশীল চিকিৎসাঃ একিউট ফিশারের শুরুতেই চিকিৎসা নিলে বিনা অপারেশনে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ সময় মল নরম করার, মলের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আঁশযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া উচিত। ব্যথানাশক ওষুধও ব্যবহার করা যেতে পারে। সিজ বাথ নিলে উপকার হয়। সিজ বাথ হচ্ছে আধ গামলা লবণ মিশ্রিত হালকা গরম পানির মধ্যে নিতম্ব ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখা। স্থানিক অবশকারী মলমও ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে যদি পুরোপুরি না সারে এবং রোগটি যদি বেশি দিন চলতে থাকে, তাহলে অপারেশন ছাড়া ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। সার্জিক্যাল চিকিৎসাঃ এনাল ডাইলেটেশন বা মলদ্বারের মাংসপেশির সম্প্রসারণ পদ্ধতির মাধ্যমে এ রোগের উপশম সম্ভব। তবে পদ্ধতিটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য বেশির ভাগ সার্জনই এটির বিপক্ষে। কারণ এতে কোনো কোনো রোগীর মল আটকে রাখার ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা থাকে। মলদ্বারের স্কিংটারে অপারেশনঃ এ অপারেশনে মলদ্বারের অভ্যন্তরীণ স্কিংটার মাংসপেশিতে একটি সূক্ষ্ম অপারেশন করতে হয়। এতে অজ্ঞান করার প্রয়োজন নেই। দুই দিনের মধ্যেই রোগী বাড়ি ফিরে যেতে পারে। অপারেশনের তিন দিন পর স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের রোগীরা অনেক দেরি করে অপারেশন করায়। যে কারণে অনেক বেশি কাটাছেঁড়া করতে হয়। ফলে রোগী দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে না। ফিস্টুলাঃ অপারেশনের পর কি আবার হয়?অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হকলেখকঃ বৃহদান্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বারঃ জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫, সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোনঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬, ০১৭১৫০৮৭৬৬১ এটি পায়ুপথের একটি বিশেষ রোগ যার অপর নাম ভগন্দর বা নালী। পায়ুপথের ভেতরের গ্রন্থিতে সংক্রমণের কারণে মলদ্বারের পাশে ফুলে ওঠে ও ব্যথা হয়। সংক্রমণ যদি মলদ্বারের গভীরে প্রবেশ করে তখন ফোলা থাকে না কিন্তু প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং জ্বরও হতে পারে। এ সংক্রমণের জন্য কিছু বিশেষ কারণ দেখেছি। যেমন­ মাছের বড় কাঁটা পেয়েছি পুঁজের মধ্যে। আবার পায়ুপথ ক্যান্সারের কারণেও সংক্রমণ ও পুঁজ হয়ে ফুলে উঠতে পারে। অতি নামকরা একটি রাজনৈতিক পরিবারের একজন সদস্য সিঙ্গাপুরে মলদ্বারের ফোঁড়ার অপারেশন করে আসেন। কিন্তু ফিস্টুলা বা নালীটি শুকায় না। আমি যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে তার ক্যান্সার শনাক্ত করেছি। ক্যান্সারের কারণেই ফোঁড়া ও ফিস্টুলা হয়েছিল। এ ফোঁড়াটি ফুলে গিয়ে একসময় ফেটে যায় এবং প্রচুর পুঁজ ও রক্ত বের হয়ে গেলে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়। এর কিছু দিন পর আবার ফুলে উঠে ব্যথা হয় এবং ফেটে গিয়ে পুঁজ বের হয়। তারপর রোগী আরাম বোধ করেন। এভাবে বার বার চলতে থাকে। এ ক্ষেত্রে মলদ্বারের দূরে (আধা থেকে ৪ ইঞ্চি) একটি ছোট মুখ থাকে, যা দিয়ে পুঁজ ও রক্ত বের হয়। এই মুখটি অণ্ডকোষের ভেতর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। কৃমির বাসা থেকে এ রোগের উৎপত্তি হয়, এ ধারণা ভুল। কারো কারো এ মুখটি এত ছোট যে, দেখা যায় না। তারা বলেন, মলদ্বারে একটু ভেজা ভেজা লাগে বা আঁঠাল পদার্থ বের হয়। মলদ্বারের গভীরে পুঁজ জমা হলে এটি জটিল ফিস্টুলায় রূপান্তরিত হয়। এ রোগীদের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। যেমন­ প্রকটসকপি ও সিগময়ডসকপি যন্ত্র দিয়ে মলদ্বারের গভীরে পরীক্ষা করে দেখতে হয় যে, কোনোরূপ ক্যান্সার বা প্রদাহজনিত কোনো রোগ আছে কি না। ক্ষেত্রবিশেষে ফিস্টুলোগ্রাম করতে হয়। ফিস্টুলা কত প্রকার? এটিকে আমরা সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করি। ১। সাধারণ; ২। মাঝারি জটিল; ৩। বেশি জটিল ফিস্টুলা। সাধারণ ফিস্টুলা মলদ্বারের বেশি গভীরে ঢোক না বলে এর চিকিৎসা সহজ। জটিল ফিস্টুলার নালীটি মলদ্বারের গভীরে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে মলদ্বারের গভীরে প্রবেশ করে। এ রোগের অপারেশনের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো সঠিকভাবে অপারেশন করতে ব্যর্থ হলে এবং মলদ্বারের পাশের মাংস অধিক পরিমাণে কেটে ফেললে রোগীর পায়খানা আটকে রাখার ক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে। এ জন্য জটিল ফিস্টুলা রোগীদের আমরা একটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপারেশন করে থাকি যার নাম সিটন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে একজন রোগীকে দুই থেকে চার ধাপে অপারেশন সম্পাদন করতে হয়। উদ্দেশ্য হলো যাতে রোগীর মল আটকে রাখার ক্ষমতা ব্যাহত না হয়। আমরা সব সময় সম্মানিত রোগীদের একটি বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীন হই। আর তা হলো রোগীরা জিজ্ঞাসা করেন যে, এ রোগটি অপারেশন করলে ভালো হবে কি না? এক কথায় এর উত্তর দেয়া সম্ভব না। ফিস্টুলা অপারেশনের আরেকটি সমস্যা হলো এর নালীটি মাংসপেশির কতটা গভীরে প্রবেশ করেছে এবং কতটা আঁকাবাঁকা পথে মলদ্বারের ভেতর প্রবেশ করেছে­ এই পথ পরিক্রমা সঠিকভাবে চিহ্নিত করা। এই কাজটি বেশ দুরূহ বলে অপারেশনের পরেও আবার ফিস্টুলা দেখা দিতে পারে। লেখক বিগত নয় বছর ৫ হাজার ১০০ জন ফিস্টুলা রোগীর ওপর গবেষণা করে দেখেছেন যে, আবার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। পায়ুপথ সার্জারিতে বিশেষ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা এ অপারেশনে সাফল্য অর্জনে বিশেষ অবদান রাখে। এ প্রসঙ্গে আমরা একজন ফিস্টুলা রোগীর কেস হিস্ট্রি উপস্থাপন করতে চাই। বয়সে তরুণ, ৩৫ বছর। পেশায় চিকিৎসক। উত্তরবঙ্গের একটি হাসপাতালের হাড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ কনসালট্যান্ট। হঠাৎ করে মলদ্বারে ব্যথায় আক্রান্ত হন। ধরা পড়ে মলদ্বারে ফোঁড়া হয়েছে। অপারেশন করালেন ঢাকার একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে। কয়েক মাস পর আবার ফুলে উঠে ব্যথা হয় পুঁজ পড়ে। এবারো অপারেশন করা হলো। কিছু দিন ভালো থাকলেন আবার যথারীতি ব্যথা ও পুঁজ যাওয়া। এবার অন্য একজন সার্জনকে দেখালেন এবং অপারেশন হলো। কয়েক মাস পরে আবার সেই একই সমস্যা। এবার আরো সিনিয়র বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করলেন এবং অপারেশন করা হলো। কিন্তু কয়েক মাস পর আবারো একই অবস্থা। এ অবস্থায় বার বার সমস্যা দেখা দেয়ায় আরো তিনবার অপারেশন করা হলো কিন্তু সমস্যা যাচ্ছে না। মোট সাতবার অপারেশন করেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। মলদ্বারের পাশের মুখ দিয়ে ফুলে উঠে ব্যথা হয় এবং পুঁজ যায়। রোগী (যিনি নিজেই ডাক্তার) হতাশায় ভেঙে পড়লেন। একজন বিশেষজ্ঞ সার্জনের পরামর্শে রোগী লেখককে দেখান। লেখক তাকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অপারেশনের কথা বললেন। যেহেতু এটি জটিল ধরনের ফিস্টুলা (ভগন্দর) তাই রোগীকে তিন ধাপে সিটন পদ্ধতিতে অপারেশন করতে হবে বলে উপদেশ দিলেন। তিন ধাপে ওই রোগীকে সিটন প্রয়োগ করে অপারেশন করা হলো। নিয়মিত ড্রেসিং করা হলো। ডাক্তার রোগীর স্ত্রীও একজন এমবিবিএস ডাক্তার। তাই ড্রেসিংয়ে তিনি প্রচুর সাহায্য করলেন। আল্লাহর রহমতে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হলেন। ফিস্টুলা রোগ অপারেশন করলে আবার হতে পারে এটিই প্রচলিত ধারণা এমনকি চিকিৎসকদের মাঝেও। সার্জারি বইয়ের ভাষায়­ ‘ফিস্টুলা রোগটি নিয়ে চিকিৎসকরা বিগত ২০০০ বছর ধরে বড়ই বিপাকে আছে। ফিস্টুলা অপারেশনের পর চিকিৎসকদের যত বদনাম হয়েছে অন্য কোনো অপারেশনে ততটা হয়নি।’ মলদ্বারের রোগের এই জটিলতার কারণে ১৮৩৫ সালে লন্ডনে একটি আলাদা হাসপাতাল হয় যার নাম সেন্ট মার্কস হাসপাতাল ফর দ্য ডিজিজেস অব কোলন অ্যান্ড রেকটাম। অর্থাৎ বৃহদান্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারির জন্য আলাদা হাসপাতাল। আজ থেকে ১৭০ বছর আগে চিকিৎসকরা এ জাতীয় রোগের বিশেষত্ব বুঝে আলাদা হাসপাতাল করেছেন যা এখন লন্ডনে রয়েছে। পৃথিবীর সব উন্নত দেশে বৃহদান্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারির জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞ বিভাগ হিসেবে স্বীকৃত। লেখক বিগত পাঁচ বছরে মলদ্বারের সমস্যায় আক্রান্ত ৮ হাজার ৪৮২ জন রোগীর ওপর গবেষণা করে দেখেছেন। এদের ৩৫ শতাংশ এনালফিশার, ১৮ শতাংশ পাইলস, ১৫ শতাংশ ফিস্টুলা, ২.৬৫ শতাংশ ক্যান্সারে আক্রান্ত। এই গবেষণায় দেখা যায়, ফিস্টুলা রোগীদের ৮৪ শতাংশ সাধারণ ফিস্টুলা এবং ১৬ শতাংশ জটিল ফিস্টুলা। লেখকের দেখা ফিস্টুলা রোগীদের ১৭ শতাংশ বার বার অপারেশনে ব্যর্থ হওয়া রোগী, যার মধ্যে বিদেশে একাধিকবার অপারেশন করে ব্যর্থ হওয়া রোগীও আছেন। অল্পসংখ্যক রোগী পাওয়া গেছে, যাদের ক্যান্সারের কারণে ফিস্টুলা হয়েছে। ‘রেকটাম ও মলদ্বার মানবদেহের একটি জটিল অঙ্গ। এ বিষয়ে বিশেষভাবে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন সার্জন অপারেশন করলে ফিস্টুলা রোগটি বার বার হওয়ার সম্ভাবনা সর্বনিু পর্যায়ে রাখা যায়। লেখক এ বিষয়ে তার গবেষণা প্রবন্ধের জন্য জুন ২০০০-এ যুক্তরাষ্ট্র কতৃêক ইন্টারন্যাশনাল স্কলার সম্মাননা লাভ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্বখ্যাত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন প্রবন্ধে। গবেষণা প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল­ ‘অস্ত্রোপচার সত্ত্বেও বার বার ফিস্টুলা হওয়া কি রোগটির ধর্ম নাকি পূর্ববর্তী অস্ত্রোপচারের ত্রুটি।’