Tuesday, June 10, 2008

Cancer (ক্যান্সার)

ক্যান্সার প্রতিরোধে কেমন খাদ্য চাই

ক্যান্সার, বস্নাড ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ নিয়মিত ফলমূল, শাক-সবজি ও তরিতরকারী গ্রহণের মাধ্যমে বহুলাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। অন্যদিকে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত চতুষ্পদ জন্তুর মাংস, ভাজা-পোড়া দ্রব্য, পুরাতন বা বাসি খাদ্য ভড়্গণ, নেশা জাতীয় পানীয় পান বা ধূমপান উলেস্নখিত রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞের গবেষণায় জানা যায়, শুরম্নতে ক্যান্সার রোগ সৃষ্টির জন্য যে সকল রাসায়নিক পদার্থের প্রয়োজন হয়, বিশেষ বিশেষ খাদ্যসমূহ সেগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। যেমনঃ

কাঁচা রসুন ও পেঁয়াজঃ বিশেষজ্ঞের মতে, ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কারসিনোজেনসমূহকে রসুন, পেঁয়াজের রাসায়নিক পদার্থ সহজেই ধ্বংস করে দেয়। রসুন দেহে রোগ প্রতিরোধ ড়্গমতাকে বহু গুণে বৃদ্ধি করে এবং ক্যান্সারসহ নানা রোগের বিস্তôার প্রতিরোধ করে। লোমা লিন্ডার ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষণা রিপোর্টে জানা গেছে যে, রসুনের উপাদানসমূহ ক্যান্সার কোষের জন্য ভয়ানক বিষাক্ত। এটা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং টিউমার সেলকে ধ্বংস করে দেয়। হার্ভার্ডের বিজ্ঞানীরা কিছু সংখ্যক ক্যান্সার প্রতিরোধ করেছেন খাদ্যের সাথে কাঁচা পেঁয়াজ যোগ করে দিয়ে।

ফলমূল শাক-সবজি ও তরিতরকারীঃ পালং শাক, পুঁই শাক, কচু শাক, লাল শাক, ডাটা শাকসহ সর্ববিধ শাক-সবজি, টমেটো, গাজর, মিষ্টি আলু, কুমড়া, সীম, শালগম, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা প্রভৃতি তরি-তরকারী, আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, কলা, পেয়ারা, পেঁপেসহ নানা ফল-ফলাদি এবং জাম্বুরা, কমলালেবু, কদবেল, বাতাবি-কাগজিলেবু, কামরাঙ্গা, জলপাই, আমড়া, কুলসহ সর্ববিধ টক জাতীয় খাদ্যসমূহে রয়েছে প্রচুর ক্যান্সার বিরোধী উপাদান। এতে রয়েছে এন্টি-অিডেন্ট, ফোলেট, লিউটিন, লাইকোপিন, বিটা-ক্যারোটিন এবং আরো নানা দারম্নণ উপকারী উপাদান, যা টিউমার কোষের জন্য বিষাক্ত। টক ফল বা টক জাতীয় খাদ্যে অন্য খাদ্যদ্রব্যের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে ক্যান্সার বিরোধী রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা দেহে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ড়্গমতা গড়ে তোলে। টাফট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা হতে জানা যায় যে, উলেস্নখিত খাদ্যসমূহ দেহাভ্যন্তôরে রেটিনোয়িক এসিডে রূপান্তôরিত হয়, যা ম্যালিগন্যান্ট সেলকে (ক্যান্সার কোষ) সহজেই ধ্বংস করে দেয়। এছাড়া এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এসিই, যা ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ প্রতিরোধ করে। যেমনঃ ফাইটোক্যামিকেলের সাহায্যে ক্যান্সার থেকে নিষ্কৃতি লাভ হয় আইটোক্যামিকেলে কুমারিক এবং ক্লোরোজনিক এসিড থাকে, যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ গঠনে বাধাদান করে। বলাবাহুল্য, উলেস্নখিত খাদ্যসমূহের নির্যাসে প্রচুর ফাইটোক্যামিকেল আছে। খাদ্য হজমের সময় নাইট্রিক এসিড ও অ্যামিনো এসিডের বিক্রিয়া নাইট্রাস অ্যামিন গঠিত হয়। নাইট্রাস অ্যামিন পরবর্তীতে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ বা কারসিনোজেন গঠন করে।

তবে আনন্দের বিষয় হলো, উলেস্নখিত খাদ্য রসের ফাইটোক্যামিকেল উক্ত নাইট্র্রাস অ্যামিন গঠনে বাধা দেয়। যার ফলে কারসিনোজেন গঠিত হতে পারে না। ফলে ক্যান্সার সৃষ্টির সম্ভাবনাও দূরীভূত হয়ে যায়। শাক-সবজি-তরি-তরকারী বেশি সিদ্ধ হলে তার ক্যান্সার বিরোধী উপাদানসমূহ অনেক কমে যায়। এজন্য তা অর্ধ সিদ্ধ করে খাওয়া উচিত। তবে যেসব খাদ্য কাঁচা খাওয়া সম্ভব, সেগুলো ভালভাবে ধুয়ে কাঁচাই খেতে হবে। কেননা এর দ্বারা পরিপূর্ণ উপকৃত হবেন। স্বাস্থ্যই সুখের মূল। এর জন্য দরকার সুস্থ ও নিরোগ দেহ। আর তা পেতে হলে আমাদের প্রত্যেকের সব বয়সের জন্য দরকার প্রতিদিন পরিমিত টক ও মিষ্টি ফল-ফলাদি ও টাটকা শাকসবজি, তরি-তরকারী আহার করা, যাতে মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ হতে নিশ্চিত নিরাপদ থাকা যাবে।


প্রোস্টেট ক্যান্সারঃ
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা

পুরুষদের ক্যান্সারের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সার রয়েছে শীর্ষস্থানে। এই ক্যান্সারের পেছনে কারণ খোঁজা হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। এ সম্বন্ধে নতুন একটি ধারণা এসেছে ইদানীং। আমেরিকায় কালোদের মধ্যে এই ক্যান্সারের হার খুব বেশি। এর সঙ্গে জিনগত অনেক উপাদানের একটি সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। গবেষণার ফলাফল বেরিয়েছে এ বছর এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে।
সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেক স্কুল অব মেডিসিনের ডিন এবং অন্যতম গবেষক ডাজ্ঝ ব্রায়ান হেন্ডারসন ও তাঁর সহকর্মীরা এমন একটি সম্পর্কের কথা প্রকাশ করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রোগটির অন্তর্গত কারণ সম্বন্ধে একটি ধারণা পাওয়া গেল এবং সেই সঙ্গে এ ব্যাপারে করণীয় কী সে সম্বন্ধেও ভাবনার অবকাশ এল।
গবেষকেরা সাতটি জিনগত ঝুঁকির কথা বর্ণনা করেছেন-কিছু কিছু লোকের মধ্যে রয়েছে বিশেষ ডিএনএ অণুক্রম, যা অন্যদের মধ্যে থাকে না। মানব ক্রোমোজোম নম্বর ৮-এর ছোট্ট একটি অঞ্চলে থাকে এই ত্রুটি। এই ত্রুটি থেকে আমরা একজনের প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা সম্বন্ধে জানতে পারি।
পাঁচটি অণুক্রম নব আবিষ্কৃত, বাকি দুটি আগেই আবিষ্কৃত হয়েছিল। আখরোট ফলের আকৃতি ও আয়তন, প্রোস্টেট গ্রন্থি রয়েছে পুরুষের মূত্রথলির নিচে। প্রোস্টেট গ্রন্থিরস এসে যুক্ত হয় বীর্যরসে। আমেরিকার ক্যান্সার সোসাইটির ঘোষণা অনুযায়ী পুরুষের ঘাতক ক্যান্সার হিসেবে ফুসফুসের ক্যান্সারের পর রয়েছে প্রোস্টেট ক্যান্সারের স্থান।
জিনগত এসব ঝুঁকি-উপাদান শনাক্ত করা গেলে আরেকটি কারণ অনুসন্ধান শেষ হবে। আমেরিকায় সাদা চামড়ার লোকের কালোদের মধ্যে এই ক্যান্সারের হার কেন বেশি এ সম্বন্ধে কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। কালোদের এ ক্যান্সারে মৃত্যুর আশঙ্কাও দ্বিগুণ, প্রায় সব ঝুঁকি-উপাদানই এদের মধ্যে দেখা যায়। ডাজ্ঝ
হেন্ডারসনের বক্তব্য-কালোদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার হার বেশি হওয়ায় জিনগত প্রবণতার ভিত্তি আরও দৃঢ় হয়েছে।
গবেষকেরা বলেন, একজন লোকের মধ্যে জিনগত কোনো উপাদান রয়েছে-এমন সন্ধান পেলে কাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি তা জানা যাবে, আগাম রোগ নির্ণয় সম্ভব হবে।
প্রোস্টেট ক্যান্সারে ইতিমধ্যে মৃত্যুহার কমে আসছে, কারণ স্ক্রিনিং এমন সময় করা হচ্ছে, যখন রোগের সূচনাকাল; আর সে সময় চিকিৎসা হলে নিরাময় সহজ।

জিনগত ভিত্তি
ইউএসসি প্রিভেনটিভ মেডিসিন প্রফেসর ক্রিস্টোফার হেইম্যান বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস এর একটি জিনগত ভিত্তি রয়েছে। তবে সবকিছুই যে জিনগত তা কিন্তু নয়। জীবনযাপনের উপাদান, পরিবেশগত উপাদানের অবদানও কম নয়।’
তবে এ গবেষণায় আমাদের ফলাফল দেখে বলা যায়, আফ্রিকান, আমেরিকান ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে বড় রকমের এই তারতম্যের মূলে রয়েছে সেই অঞ্চলে জিনগত বৈচিত্র্য তো বটেই। হেইম্যানের বক্তব্য। যেসব রোগ ধরা পড়ছে তার দুই-তৃতীয়াংশ হলো ৬৫-ঊর্ধ্ব পুরুষ। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির বক্তব্য-যেসব পুরুষ প্রচুর লাল মাংস খায় এবং চর্বিবহুল খাবার খায় তাদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি খুব বেশি।

তিন দল গবেষক-হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী, ডিকোড জেনেটিকস ইনক এক বিজ্ঞানী এবং ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নেচার জেনেটিকস জার্নালে তাঁদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন। তবে ফলাফলগুলো এখনো শুরুতেই রয়েছে, কোনো সিদ্ধান্ত পৌঁছানো যাচ্ছে না এখনো।

ক্যান্সার নিরাময়ে লতাগুল্ম
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
খুবই পরিচিত লতাগুল্ম। ত্রিফলা।

এরই হিতকরী গুণ পরীক্ষা করে দেখেছিল পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের একটি গবেষক দল। তারা দেখেছিল, ইঁদুরের দেহে মানব-অগ্ন্যাশয় টিউমার গ্রাফ্‌ট করার পর সেগুলোকে ত্রিফলার রস খাওয়ানোয় সেই টিউমারের বাড়ন অনেক ধীর করে নিয়ে এল। ২০০৭ সালের এপ্রিলে আমেরিকার অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যান্সার রিসার্চের বার্ষিক সভায় এই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে আশা প্রকাশ করা হলো যে একদিন এ দিয়ে একটি চিকিৎসা উদ্ভাবন সম্ভব হবে।
তবে বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী হলো, গবেষণাটি এখনো সূচনা পর্যায়ে; ভারতবর্ষের সনাতন আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ত্রিফলার ব্যবহার সর্বজনবিদিত। এতে রয়েছে তিনটি গাছের ফলের শুষ্ক চূর্ণ। পেটের অসুখ আরাম করতে, হজমের সহায়ক হিসেবে, যকৃতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এর ব্যবহার চলে আসছে।

ক্যান্সাররোধী গুণাগুণ
আগের গবেষণা থেকে দেখা গেছে, সেল কালচারে পাওয়া যায় ত্রিফলার ক্যান্সাররোধী গুণাগুণ। ইদানীং গবেষণায় ইঁদুরকে লতাগুল্ম খাইয়ে ক্যান্সার-কোষের বাড়ন কমানো গেছে, তবে সুস্থ অগ্ন্যাশয় কোষ এতে নষ্ট হয়নি।
মানব-অগ্ন্যাশয় টিউমার ইঁদুরের মধ্যে গ্রাফ্‌ট করে গবেষণা দল সেই ইঁদুরগুলোকে সপ্তাহে পাঁচ দিন ত্রিফলা দ্রবণ পান করায়।
চার সপ্তাহ পর তারা টিউমারগুলোর আয়তন এবং অন্তর্গত প্রোটিন তুলনা করে আরেক দল ইঁদুরের সঙ্গে, যেগুলোকে ত্রিফলার রস পান করানো হয়নি।
দেখা গেল, যেসব ইঁদুর ত্রিফলা পান করেনি সেগুলোর তুলনায় ত্রিফলা পান করেছে এমন ইঁদুরগুলোর টিউমারের আয়তন অর্ধেক হয়ে গেছে।
আরও দেখা গেল, যেসব ইঁদুর ত্রিফলা পান করেছে সেগুলোর টিউমার-কোষের প্রোটিন বেড়ে গেছে। কোন প্রোটিনগুলোর মান বেড়েছে? যে প্রোটিনগুলো ‘এপোপটসিস’ নামের একটি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সেগুলোর মান বেড়েছে। এপোপটসিস মানে তাহলে কী? এপোপটসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর স্বাভাবিকভাবে বিনষ্ট, জরাগ্রস্ত, অবাঞ্ছিত কোষ বের করে দেয়। ক্যান্সার-কোষগুলোর মধ্যে অনেক সময় এপোপটসিস প্রক্রিয়াটি ত্রুটিপূর্ণ থাকে, তখন কোষের মৃত্যু ঘটে না, টিউমার-কোষ দ্রুত বাড়তেই থাকে।
এ গবেষণার মুখ্য ভূমিকা পালনকারী অধ্যাপক সনজয় কে শ্রীবাস্তব বলেন, ‘ত্রিফলা ক্যান্সার-কোষগুলোকে মরে যেতে উদ্দীপ্ত করে এবং কোষও বিষক্রিয়া না ঘটিয়েই টিউমারের আয়তন তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমিয়ে আনে।’
আরও গবেষণা করে দেখা গেল, ত্রিফলা টিউমার-অবদমক জিনগুলোকে উদ্দীপ্ত করে, তবে স্বাভাবিক অগ্ন্যাশয়-কোষগুলোর ওপর নেতিবাচক কোনো প্রভাব ফেলে না।
অধ্যাপক শ্রীবাস্তবের ভাষ্য, ‘অগ্ন্যাশয়-টিউমার প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় একে একটি নির্দোষ এজেন্ট হিসেবে দেখার সম্ভাবনা দেখছি।’
প্রয়োজন নতুন চিকিৎসা
আমাদের দেশে অগ্ন্যাশয়-ক্যান্সারের হার জানা নেই, তবে বিলেতে ক্যান্সারে মৃত্যুর কারণ হিসেবে অগ্ন্যাশয়-ক্যান্সার ষষ্ঠ স্থানে। প্রতিবছর এ রোগে মারা যায় সাত হাজার ব্যক্তি। এর চিকিৎসা খুব কঠিন এবং বেঁচে ওঠাও বেশ কষ্টকর। এর হার বেশ কম। সবশেষ তথ্য থেকে জানা গেছে, রোগ নির্ণয় ও মৃত্যুর মধ্যে ফারাক হলো মাত্র ছয় মাস।
বিশেষজ্ঞেরা বলেন, অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারে নতুন চিকিৎসা সন্ধান করা গুরুত্বপূর্ণ, বর্তমান গবেষণা রয়েছে মাত্র সূচনা পর্যায়ে।
বিলেতের ক্যান্সার রিসার্চের কর্তাব্যক্তি ডাজ্ঝ এলিসন রস বলেন, অগ্ন্যাশয়-টিউমার চিকিৎসা কঠিন, তাই একে মোকাবিলা করার নতুন পথ সন্ধান করা গুরুত্বপূর্ণ। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখন শুরুর পর্যায়ে রয়েছে।
ত্রিফলা মানব-টিউমারে কার্যকর হয় কি না এ ব্যাপারে আরও অনেক কাজ করার আছে।
যুক্তরাজ্যে চারটি অগ্ন্যাশয়-ক্যান্সারের প্রতিষ্ঠাতা সুয়ে বালার্ড বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে যেকোনো অগ্রগতিকে আমরা অভিনন্দন জানাব। কারণ অগ্ন্যাশয়-ক্যান্সারের জন্য নতুন নতুন চিকিৎসা খুঁজে বের করতে আরও অনেক চেষ্টার প্রয়োজন।’


কীভাবে ক্যান্সারমুক্ত থাকবেন
ডজ্ঝ জাকিয়া বেগম
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন
(লেখকঃ রেডিওলজি, রেডিওথেরাপি ও পারমাণবিক চিকিৎসা বিষয়ের শিক্ষক)
সূত্রঃ ফুডস ফর ক্যান্সার প্রিভেনশন অ্যান্ড সারভাইভালু


যেকোনো ধরনের ক্যান্সারই জীবননাশী ও খুব কষ্টদায়ক। তাই ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করাই ক্যান্সারমুক্ত থাকার উপায় এবং এ জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলার বিকল্প নেই।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সারকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। তাই ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে খাদ্য গ্রহণের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের সঠিক ওজন ধরে রাখতে হবে। জীবনের কোনো ধাপেই অতিরিক্ত শীর্ণকায় অথবা স্থূল হওয়া ঠিক নয়। প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্যালরি খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়, তার শতকরা ২০ ভাগের বেশি চর্বিজাতীয় হওয়া উচিত নয়।
এক গ্রাম চর্বিজাতীয় খাদ্যে ক্যালরির পরিমাণ ৯। তাই দুই হাজার ক্যালরি গ্রহণকারীর প্রতিদিনের খাবারে চর্বিজাতীয় উপাদান ৪০০ ক্যালরির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। যতটুকু সম্ভব প্রাণিজ চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে। যে পরিমাণ চর্বিজাতীয় খাবার আমরা খাই, তার বেশির ভাগই হওয়া দরকার উদ্ভিদজাতীয় ও কম আনহাইড্রোজেনেটেড। চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাতীয় খাদ্য, যেমন-ড্রেসিং করা সালাদ, মারজারিন, পনির ইত্যাদির পরিমাণও কম হওয়া দরকার।
দিনে তিন আউন্সের বেশি রেড মিট (গরু, খাসি, ভেড়া ইত্যাদির মাংস) খাওয়া ঠিক নয়। ১৯৯৪ সালে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রেড মিট শুধু যে ক্ষতিকর চর্বিযুক্তই তা নয়, বরং এগুলোতে ডায়-অক্সিন নামের এক ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য আছে, যা অনেক ধরনের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। মাছ ও পোলট্রিজাতীয় খাবার এসবের তুলনায় অনেক নিরাপদ। প্রচুর তেলে বেশি সময় ধরে ভাজা যেকোনো খাবার খাবেন না। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আলু-চিপস্‌জাতীয় খাবারে অ্যাকরিলামাইড রাসায়নিক পদার্থ বেশি পরিমাণে জমা হয়, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ফাস্টফুডে ব্যবহৃত বেশির ভাগ উপাদানই স্থূলতা তথা ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়ায়। তাই এগুলো যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। লবণজাতীয় খাবার কম খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
খাবার থেকেই শরীরের চাহিদামাফিক সোডিয়াম পাওয়া যায়। তাই কাঁচা লবণ খাওয়া যাবে না এবং রান্নায়ও লবণের পরিমাণ কমাতে হবে। পোড়ানো ও ঝলসানো মাংস খাওয়া একেবারে কমাতে হবে। সম্ভব হলে না খাওয়াই ভালো। প্রক্রিয়াজাত খাবার (জাঙ্ক ফুড) ও শোধিত শর্করা ও চিনিজাতীয় খাদ্যও যতটুকু সম্ভব খাওয়ার তালিকা থেকে বাদ দিন।
কিছু শাকসবজি ও ফলমূল ক্যান্সার-প্রতিরোধী। সালফোরাফেল ও ইনডোলেকারবিনলজাতীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ, যা শরীরের মধ্যস্থ কোষ ধ্বংসকারী মুক্ত রেডিকেলগুলো ধ্বংস করতে সাহায্য করে। মুক্ত রেডিকেল হচ্ছে অক্সিজেনভিত্তিক কতগুলো অণু, যা কোষকলা ধ্বংস করে ক্যান্সার ঘটাতে পারে।
তাই প্রতিদিন ১৩-১৫ আউন্স শাকসবজি ও ফলমূল, ২০-৩০ আউন্স বিভিন্ন রকম শস্যদানা, ডালজাতীয় শস্য (মটরশুঁটি, শিমের বিচি ইত্যাদি), গাছের মূল, লতা ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খাওয়া দরকার। বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন, প্রতিদিন পাঁচ ধরনের বিভিন্ন ফল ও শাকসবজি খেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসে। সবুজ চা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ, যা ক্যান্সার কোষের সংখ্যা ও আয়তন কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।
দিনে ১০ থেকে ১৫ কাপ ক্যাফিনমুক্ত সবুজ চা, আগে ধূমপানে আসক্ত ছিলেন, এমন লোকদের ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিসির বীজ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। সয়াবীজ এবং অন্যান্য সয়াসমৃদ্ধ খাবারে থাকা আইসোফ্লেভনস্‌ পরিপাকতন্ত্রের, বিশেষ করে কোলন ও মলদ্বারের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমায়।
এ ছাড়া সয়াসমৃদ্ধ খাবার বেশি গ্রহণ করে থাকে এমন মেয়েদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। টমেটোর মধ্যে থাকা লাইকোপেন নামের ক্যান্সারবিরোধী এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকর। এটি বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। রান্না করা টমেটো বেশি উপকারী। কারণ রান্নার সময় টমেটোর কোষকলা থেকে বেশি পরিমাণে লাইকোপেন বের হয়ে আসে।

ধূমপান
তামাকের মধ্যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অনেক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যার মধ্যে আবার অনেকই ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। তাই অনেক ক্যান্সারের প্রধানতম ঝুঁকির কারণ হচ্ছে ধূমপান বা তামাক সেবন। মদ্যপান ও ধূমপান একই সঙ্গে যুক্ত হলে তা আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে। তাই ধূমপান, মদ্যপান অথবা অন্য যেকোনো ধরনের তামাকজাতীয় দ্রব্য সম্পূর্ণ ত্যাগ করা দরকার।
ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে যেসব ভিটামিন
ভিটামিন-সিঃ পেয়ারা, আমলকীসহ বেশির ভাগ টকজাতীয় ফল ও মরিচে ভিটামিন-সি পাওয়া যায়, যা কোষগুলোকে ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং রোগ-প্রতিরোধক্ষমতার ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
ক্যালসিয়ামঃ ক্যালসিয়াম কোলন ক্যান্সারের পূর্বলক্ষণ কলোরেকটাল পলিপস্‌ হওয়ার ঝুঁকি কমায়। কাঁটাসহ ছোট মাছ, কোনো কোনো সামুদ্রিক মাছ, দুধের তৈরি খাবার ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের চর্বিমুক্ত দুগ্ধজাত খাবার খাওয়াটা ভালো।

ভিটামিন-ইঃ ভিটামিন-ই বিষক্রিয়া কমিয়ে মুক্ত রেডিকেলগুলোকে নিষ্ত্র্নিয় করে তুলতে সহায়তা করে। ভিটামিন-ই আমন্ড বাদাম, চিনাবাদাম, শালগম ও ওলকপির পাতা এবং গমবীজ দিয়ে তৈরি তেলে পাওয়া যায়।

ভিটামিন-ডিঃ শক্তিবর্ধক খাবার, যেমন-দুধে ভিটামিন-ডি রয়েছে। তা ছাড়া সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের সংস্পর্শে এলে ভিটামিন-ডি তৈরি হয়। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি একসঙ্গে সেবন করলে কোলন ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

ফলিক এসিডঃ কোলোরেকটাল ক্যান্সার ও ধূমপায়ী নারীদের স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে এটি কাজ করে।
সেলেনিয়ামঃ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদানের একটি হচ্ছে সেলেনিয়াম, যার অল্প পরিমাণ উপস্থিতি কোলন ক্যান্সার ও ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য দায়ী কোষকলা ধ্বংস করে। এ উপাদানটি আখরোট ও অন্যান্য বাদামজাতীয় জিনিসের মধ্যে পাওয়া যায়।
যৌনতা ও প্রজননঃ অসৎ সংসর্গ, বহুগামিতা, অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণ, বহু সন্তানের জ্নদান, গর্ভপাত ইত্যাদি কারণে প্রজনন অঙ্গের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
শরীরচর্চাঃ অলসতাপূর্ণ জীবন যাপন কোনো কোনো ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। নিয়মিত শরীরচর্চা রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে মধ্যম প্রকৃতির ব্যায়ামের পর শরীরে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কোষের সংখ্যা বাড়ে। ব্যায়াম অন্ত্র থেকে কারসিনোজেনসহ (যা ক্যান্সার বিস্তারে সহায়ক) বর্জø পদার্থ বের হয়ে যাওয়া পদ্ধতিকে ত্বরান্বিত করে শরীরকে বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি থেকে রক্ষা করে। সর্বোপরি নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখার এবং সতেজ ও সুন্দর থাকার চেষ্টা করা দরকার। এতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে।


মলদ্বার না কেটে রেকটাম ক্যান্সার অপারেশন

অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক
লেখকঃ বৃহদান্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ
চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বারঃ জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা।
ফোনঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬, ০১৭১৫০৮৭৬৬১

রেকটাম বা মলাশয় ক্যান্সার হলে প্রচলিত অপারেশন হচ্ছে রেকটাম বা মলাশয় ও মলদ্বার কেটে ফেলে পেটে ঈসলসঢ়য়সশী বা কৃত্রিম মলদ্বার বানিয়ে সেখানে ব্যাগ লাগিয়ে দেয়া, যার মধ্যে সব সময় মল জমা হবে এবং রোগী মাঝে মধ্যে এটি পরিষ্কার করে নেবেন। তার স্বাভাবিক মলদ্বার থাকবে না এবং সারা জীবন ওই পথে আর পায়খানা হবে না। কিন্তু অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ফলে এখন স্বাভাবিক মলদ্বার রেখেই ক্যান্সারটি অপসারণ করা যায়। রোগী স্বাভাবিক পথেই পায়খানা করতে পারবেন। এ প্রযুক্তির ফলে ৭০-৮০% রেকটাম ক্যান্সার রোগী উপকৃত হবেন।
লক্ষণ কী?
মলদ্বারের দৈর্ঘø ৪ সেমি। মলদ্বারের ওপরের ১২ সেমি অংশের নাম রেকটাম। মলদ্বারে রক্ত যাওয়া এ রোগের প্রধান লক্ষণ। এ লক্ষণটিকে রোগীরা আমল দেন না। রোগী যদি এই রক্ত যাওয়ার কারণ ডাক্তার দিয়ে পুরোপুরি তদন্ত না করেই সিদ্ধান্ত নেন, এটি পাইলস থেকে হচ্ছে­ সবচেয়ে বড় বিপদটি তখনই ঘটে। এরপর মাসের পর মাস কেটে যায় পাইলস মনে করে। ইত্যবসরে ক্যান্সার তার ডালপালা বিস্তার করতে থাকে। পেটে ব্যথা হতে থাকে, মল আটকে গিয়ে পেট ফুলে উঠতে পারে। তখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে বিশেষ ধরনের পরীক্ষায় এ রোগ ধরা পড়ে। ততক্ষণে এ রোগটি সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
প্রথম দিকে রোগীর মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন আসে। মলত্যাগের বেগ হলে রোগী টয়লেটে যান এবং শুধু রক্ত ও মিউকাস যেতে দেখেন। এটি সাধারণত ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথে হয়। রোগীরা এটিকে রক্ত আমাশয় বলে ধারণা করেন। ক্যান্সার যখন মলদ্বারের দিকে সম্প্রসারিত হয় তখন মলত্যাগের পর ব্যথা শুরু হয়ে দীর্ঘক্ষণ চলতে পারে। রোগীদের যখন বলা হয় আপনাকে বিশেষ ধরনের পরীক্ষা করে দেখতে হবে, কোনো ক্যান্সার আছে কি না। তখন তারা বলেন, স্যার আমি জানি এটি পাইলস। অনেক বছর ধরে চলছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে যে এখানে ক্যান্সার শুরু হতে পারে তা তারা খতিয়ে দেখতে চান না। সবচেয়ে অসুবিধা হলো পাইলস, ক্যান্সার, এনালফিশার­ সব রোগে রক্ত যাওয়াই প্রধান লক্ষণ। আসলে কোন রোগটি হয়েছে তা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে একজন অভিজ্ঞ সার্জনই কেবল বলতে পারেন। এই ক্যান্সার যদি মূত্রথলি অথবা মূত্রনালী আক্রমণ করে তখন রোগী প্রস্রাবের কষ্টে ভোগেন এবং বারবার প্রস্রাব হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ক্যান্সার যৌনপথে ছড়িয়ে পড়ার কারণে ওই পথ দিয়ে রক্ত ও মিউকাস এমনকি মলও বেরিয়ে আসতে পারে।
বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা
মলের সুপ্ত রক্ত পরীক্ষা, মলদ্বারের ভেতর আঙুল দিয়ে পরীক্ষা, প্রকটসিগময়ডোস্কপি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কোলোনস্কপি, বেরিয়াম এনেমা, সি-ই-এ (কার্সিনো এম্রাইওনিক এন্টিজেন), আল্ট্রাসনোগ্রাম অব লিভার, আইভিইউ এক্স-রে, পেটের সিটি স্ক্যান
প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা
অপারেশনই এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা। এ রোগে ঐতিহ্যবাহী অপারেশন হচ্ছে রেকটাম বা মলাশয় ও মলদ্বার কেটে ফেলে পেটে নাভীর বাম দিকে কলোস্টমি বা কৃত্রিম মলদ্বার তৈরি করে দেয়া। যেখানে একটি ব্যাগ লাগানো থাকে, যার ভেতর মল জমা হতে থাকে। যখন রোগীকে এ জাতীয় অপারেশনের ধারণা দেয়া হয় তখন অনেক রোগীই বলেন, স্যার মরে যাব তবুও এমন অপারেশন করাব না। এসব রোগী এরপর হাতুড়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন অপারেশন ছাড়াই চিকিৎসার জন্য। কিছু দিন চিকিৎসার পর হতাশ হয়ে যখন ফিরে আসেন তখন সম্পূর্ণরূপে সারিয়ে তোলার অবস্থা আর থাকে না। তখন রোগী মিনতি করে বলেন, স্যার ভুল হয়ে গেছে এখন কিছু একটা করুন।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন আমরা ৭০-৮০% রেকটাম ক্যান্সার রোগীর মলদ্বার না কেটেই অপারেশন করতে পারি। যার ফলে স্বাভাবিক পথেই পায়খানা করতে পারবেন। এ প্রযুক্তিটির নাম হচ্ছে­ ঝয়থহলমষব ঞপধভষমক্ষৎপ (উমঢ়হসঢ়থদলপ ঈমড়ধৎলথড় ঝয়থহলপড়, চড়সমিশথয়প ওখঝ, চড়সমিশথয়প খমষপথড় ঝয়থহলপড় ও জসয়মধৎলথয়সড়)। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ আমি দেশের ঐতিহ্যবাহী হাসপাতাল হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে এ রকম একটি জটিল অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সফল অপারেশন করেছি। অপারেশনটি করতে আমাকে আমন্ত্রণ জানান দেশের প্রখ্যাত সার্জন ও আমাদের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব ডা. জিয়াউল হক। রোগীর বয়স ৫০। বাংলাদেশ বিমানের অফিসার। অনেক দিন মলদ্বারে রক্ত যাচ্ছিল। হঠাৎ পেট ফুলে যাওয়ায় তাকে জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করে এই ক্যান্সারটি শনাক্ত করেন ডা. জিয়াউল হক। এ অপারেশনের জন্য একবার ব্যবহারযোগ্য দু’টি যন্ত্র আমরা সিঙ্গাপুর থেকে এনেছিলাম আগেভাগেই। যন্ত্রটি কিছুটা ব্যয়বহুল। অপারেশনের সময় আমরা বৃহদান্ত্র ও রেকটামের নির্ধারিত অংশটুকু কেটে ফেলে এই যন্ত্রের সাহায্যে বৃহদান্ত্র ও রেকটামের অবশিষ্টাংশ সংযুক্ত করে দিই। তলপেটের গঠনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে এই যন্ত্র ছাড়া এ জাতীয় অপারেশন করা প্রায় অসম্ভব। বিগত নয় বছর আমরা এ জাতীয় অত্যাধুনিক অপারেশন অনেক করেছি। এ অপারেশনের পর সাধারণত পেটে অস্থায়ী ভিত্তিতে দু-তিন মাসের জন্য একটি ব্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয়। তিন মাস পর ওই ব্যাগটি (কলোস্টমি বা আইলিওস্টমি) আবার অপারেশন করে বন্ধ করে দিতে হয়। তখন রোগী স্বাভাবিক মলদ্বার দিয়ে মলত্যাগ করতে পারেন। যখন রেকটামের ক্যান্সার খুবই গভীর থাকে তখন হাত দিয়ে সেলাই করে খাদ্যনালী জোড়া লাগানো যায় বলে এই যন্ত্র ব্যবহার প্রয়োজন হয় না।
রেকটাম ক্যান্সার কেন হয়?
ধনী লোকদের এ রোগ বেশি হয়। মদ্যপান ও ধূমপান এর সম্ভাবনা বাড়ায়। খাবারে যথেষ্ট আঁশ জাতীয় উপাদান থাকলে, যেমন­ সবজি, ফলমূল এ রোগের সম্ভাবনা কমায়। ৪০ বছর বয়সের পর এই সম্ভাবনা বাড়তে থাকে।

প্রোস্টেট ক্যান্সার নির্ণয়ে নতুন পরীড়্গা
অধ্যাপক ডাঃ শুভনেত চৌধুরী
ডাইরেকটার, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস
বারডেম, ঢাকা

স্ত্র্নিনিং টেস্ট করে প্রোস্টেট ক্যান্সার আগাম নির্ণয় করা একিট জরম্নরি বিষয়। যারা চিকিৎসা করেন, যারা এ রোগে আক্রান্তô হন দুইপড়্গের জন্যই এটি গুরম্নত্বপূর্ণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এ লড়্গ্যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, সন্দেহ নাই। আর এ কোন আগাম সটিক নিরূপন করা আরো বেশি গুরম্নত্বপূর্ণ। উদ্দেশ্যে যেসব প্রচেষ্টা হচ্ছে, এতে কিচু আশার আলো দেখা যাচ্ছে ইদানীং, তবে এতে উলস্নসিত হওয়ার কিছু নাই।

২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক জর্নাল ‘ইউরোলজিতে’ একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে যাতে রক্তে একটি নতুন প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রোটিন ‘ইপিসিএ-২’ এর সন্ধান পাওয়া গেছে, বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে প্রোস্টেট ক্যান্সার চিকিৎসা ও গবেষণা সম্বন্ধে বিশ্বের একটি প্রখ্যাত কেন্দ্র বাল্টিমোরের জন হপকিনস্‌এ। এতে দেখানো হয়েছেঃ প্রোস্টেট ক্যান্সারের বর্তমানে প্রচলিত পিএসএ টেস্টের তুলনায় রোগ নির্ণয়ে নতুন সূচক বা গধৎশবৎ অনেক সংবেদনশীর ও নির্দিষ্ট। কিন্তু তবু প্রশ্ন তেকে যায়, প্রোস্টেট ক্যান্সারের স্ত্র্নিনিং ও নির্ণয়ের ব্যাপারে এই টেস্টটি বড় রকমের অগ্রগতি হলো কিনা?

পিএসএ টেস্ট নিয়ে সমস্যা তাহলে কি? ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে এই টেস্টটি রোগ নিরূপন পরীড়্গা হিসেবে প্রচলিত। এই টেস্ট দিয়ে সহজ ও রম্নটিন পরীড়্গায় প্রোস্টেট ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে বটে তবে এই ক্যান্সারের জন্য এই টেস্টটি সুনির্দিষ্ট কিনা এ ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে।

এর মানে হলোঃ প্রোস্টেটের নির্দোষ বৃদ্ধি ইবহরমহ বহষধৎমবসবহঃ) হলেও অনেকসময় চঝঅ রক্তে বেড়ে যেতে পরে। তখন রোগ নির্ণয়টি জটিলতার মধ্যে পড়ে।

আর একটিঃ পিএসএ টেস্ট মান রক্তে যা নিরূপন করা হলো এইমান কোন্‌টি স্বাভাবিক এবং কোন্‌টি অস্বাভাবিক এ ব্যাপারেও মতানৈক্য রয়েছে। বলা হয়, পিএসএ মান চারের নিচে হলে ঠিক আছে। অথচ সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে পিএসএ মান চার এর নিচে থাকা সত্ত্বেও ক্যান্সার চিহ্নিত হয়েছে। তাই ‘পিএসএ মান স্বাভাবিক’ ৈএ ব্যাারে সিদ্ধান্তô নেয়ার সময় রোগীর বয়স এবং কালক্রমে পিএসএ মানের পরিবর্তন লড়্গ্য করা ও গুরম্নত্বপূর্ণ। তাই একজন তরম্নণের পিএসএ ২ হলে যদি স্বাভাবিক না ধরা হয় তাহলে আশি ঊর্ধ্ব ব্যশির পিএসএ চার এর সামান্য বেশি হলে এটি উদ্বেগের কারণ নাও হতে পারে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আরো একটি সহজ পরীড়্গা হাতে থাকলে ভালো হত। সহায়ক পরীড়্গা আরো আছে। তবে সেগুলো ব্যয়বহুল। যেমন রেক্‌টাল আলট্রাসাইন্ড, বায়োপসি। পরীড়্গায় অস্বস্তিôত্ত হয়, এছাড়া সঠিকস্থানের টিস্যুর বায়োপসি নাহলে নির্ণয় সটিক নাও হতে পারে।

সাম্প্রতিক গবেষনা থেকে জানা যায়, এই নতুন পরীড়্গা প্রোস্টেট ক্যান্সার নির্ণয়ে আরো নির্ভুল, আর এ পরীআয় বোঝা যায় ক্যান্সারটি তখনো সুচনা পর্যায়ে রয়েছে কিনা, প্রোস্টেটগস্নান্ডেই সীমাবদ্ধ রয়েছে কিনা। আর ওই ক্যান্সার অগ্রসর হলেও এটি প্রোস্টেটের চারপাশের আবরণ ভেদ করেছে কিনা। এতসব প্রশ্নের উত্তর এই পরীড়্গা থেকে পাওযা যায়।

০ রোগ নির্ণয়ের নতুন সম্ভাবনা?

তবে পরীড়্গাকে যত নির্ভুল মনে হচ্ছে তা কি ঠিক? একেকি বড় রকমের অগ্রগতি বলা যাবে? কখনই বা এই টেস্ট বাজারে আসবে?

প্রথম প্রশ্নের উত্তর হলোঃ আশা করছি সাবই, সঠিক নির্ণয় সম্ভব হোক এর সাহায্যে। দ্বিতীয়টির উত্তর হলোঃ আমরা এখনো জানিনা। অবশ্য গবেষকরাও বলছেন এটি নিতান্তেôই সূচনা পর্যায়ের একটি অভিজ্ঞতা, একে আরো মূল্যায়নের জন্য সময় প্রয়োজন। তাই আরো দীর্ঘসময় পরীড়্গা করে আরো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করে যদি একে পিএসএ টেস্টের চেয়ে উন্নত ও নির্ভুল মনে হয়, তখনই একে বড় অগ্রগতি, বলা যাবে।

০ রোগ নির্ণয়ের জন্য আরো আরো টেস্ট উদ্‌ভাবনের চেষ্টা চলছেঃ

রক্ত পরীড়্গা করে ক্যান্সার নির্ণয় করার জন্য প্রচেষ্টা চলছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে।

পিএসএ টেস্ট ছাড়াও আরো কিছু টেস্ট রয়েছে ক্যান্সার রোগী মনিটর করার জন্য। ঊচঈঅ টেস্ট সন্মন্ধে বলা হলো। তবে এটিই একমাত্র নতুন টেস্ট নয়। অনেক গবেষকই রক্তে ‘প্রোটিন সূচকের’ (গধৎশবৎং) সন্ধান করছেন যেগুলো আগাম স্ত্র্নিনিং ও নির্ণয় করতে পারে ক্যান্সারকে। বিশিস্ট বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামী দশ বছরে এমনসব পদ্ধতি উদ্‌ভাবিত হবে যেগুলোতে ব্যবহৃত হবে ‘ন্যানোটেকলোলজি’ঃ শরীর এক ফোঁটা রক্ত নিয়ে, একটি চিপের উপর একে রেখে, পাঠানো হবে ল্যাবে এবং চিকিৎসক প্রচরিত টেস্ট দিয়ে একে নির্ণয় করার অনেক আগে, রোগ তাকলে, নির্ণয় হয়ে যাবে। অন্যান্য বিজ্ঞানীরা আর একটি ক্যান্সার সূচক প্রোটিন ঠঊএঋ মানবেতর প্রাণীতে মনিটর করেছেন এবং ক্যান্সার টিউমার ক্লিনিক্যাল দেখার আগে আগাম চিকিৎাসও দিতে পেরেছেন বলে দাবি করছেন। মনে হয়, নতুন এই ক্যান্সার প্রোটিন ঋউেই সম্বন্ধে রিপোর্টটি এমন এক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিলো যা দ্বারা ভবিষ্যতের চিকিৎসা পরিচর্যা হবে প্রভাবিত। গবেষনাপত্রটি প্রকাশের পর সংশিস্নষ্ট বিজ্ঞানীরা ক্লিনিক্যাল ট্রায়েলে যাচ্ছেন এবং এর ফলাফল ইতিবাচক হলে যেসব ব্যক্তির প্রোস্টেট ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা মনে হয়, এদের দিকে আরো নির্দিষ্ট নজর দেয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে প্রচলিত সাধারণ পিএসএ টেস্টের মাধ্যমে অনর্দিষ্টবাবে রোগ সন্ধানও মোকাবেলা করার ইতি হলে ভালো কথা। কিনউত সার্বিকভাবে প্রোস্টেট ক্যান্সারে প্রাণহানির প্রেড়্গাপট বিবেচনা করলে পিএসএ টেস্টের মূল্য খাটো করে দেখা যাবে না। আরো পুরোনা পিএসএ টেস্টের তুলনায় নতুন টেস্ট যে আরো ভালো একে পরড়্গিা করাও সময় সাপেড়্গ। বিজ্ঞানে নতুন সব অগ্রগতি হচ্ছে ক্রমাগত, এই নতুন পরীড়্গাটি প্রোস্টেট ক্যান্সার নির্ণয়ে আরো সফল ও নির্দিষ্ট হোক, এইতো চাই। তবে সে গন্তôব্যে পৌঁছার দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে।

জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে পরীক্ষা করুন
প্যাপ ্নিয়ার
ডাজ্ঝ মালিহা হোসেন
সহযোগী অধ্যাপক, প্যাথলজি বিভাগ
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা
ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি হলেও কিছু ক্যান্সার আছে, যা প্রতিরোধযোগ্য। তেমনই একটি হলো জরায়ুমুখের ক্যান্সার। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মেয়েদের ক্যান্সারের মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের হার সবচেয়ে বেশি।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ২০০৫ সালে নিবন্ধিত নারী রোগীদের মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (২৪জ্ঝ৬%)। জরায়ুমুখের ক্যান্সারের কারণ হিসেবে হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) নামের অতি সূক্ষ্ম জীবাণুকে দায়ী করা হয়। এই ভাইরাসটি নারী বা পুরুষের প্রজনন অঙ্গে অবস্থান করে এবং যৌনমিলনের মাধ্যমে তা অন্যকে সংক্রমিত করে।
এইচপিভি ভাইরাসের বিশেষ কতগুলো ধরন (স্ট্রেইন) জরায়ুমুখের কোষকে সংক্রমিত করে কিছু ক্যান্সারপূর্ব পরিবর্তন করে, যা পরে পূর্ণ ক্যান্সার রূপে প্রকাশ পায়। এই পরিবর্তিত কোষগুলো যখন তাদের অবস্থান থেকে ঝরে পড়ে, তখন জরায়ুমুখে বা যোনিপথে নির্গত তরলে সেগুলো পাওয়া যায়। কাচের ্লাইডে এই রস সংগ্রহ করে এবং বিশেষ রঙের মাধ্যমে রঞ্জিত করে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে পরীক্ষা করার নাম প্যাপ ্নিয়ার পরীক্ষা।
এই পরীক্ষাটির মাধ্যমে জরায়ুমুখের কোষের ক্যান্সার ও ক্যান্সারপূর্ব পরিবর্তন চিহ্নিত করা যায়।
ক্যান্সারপূর্ব অবস্থায় জরায়ুমুখের ক্যান্সার ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে রক্ষা করা যায়। মেয়েদের ২১ বছরের পর থেকে অথবা বিয়ের তিন বছর পর থেকে (যেটা আগে শুরু) বার্ষিক প্যাপ ্নিয়ার পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এইচপিভি আক্রান্ত রোগীর জরায়ুমুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি, তাই উন্নত বিশ্বে এর চেয়েও উপযোগী পিসিআর পরীক্ষা করা হয়। অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় এগুলো আমাদের দেশের জন্য উপযোগী নয়। এখনো অনেক দেশেই জরায়ুমুখের ক্যান্সারের জন্য প্যাপ ্নিয়ার পরীক্ষাকেই একটি প্রাথমিক স্ক্রিনিং টেস্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যথেষ্ট পরিমাণ বিশেষজ্ঞ প্যাথলজিস্ট না থাকার কারণে অধিকাংশ দেশে গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা নমুনা সংগ্রহ এবং তার প্রাথমিক পরীক্ষা করেন। পরে সন্দেহজনক বা পজিটিভ ্লাইডগুলো বিশেষজ্ঞ প্যাথলজিস্টরা দেখেন।
প্যাপ ্নিয়ার পরীক্ষাটির সঙ্গে আমাদের দেশের চিকিৎসকেরাও পরিচিত, তবে তা শুধু রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রায় সব মেডিকেল কলেজ ও বিভাগীয় শহরে বিশেষজ্ঞ প্যাথলজিস্টরা এ পরীক্ষাটি করছেন।
কিন্তু সামগ্রিকভাবে জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের স্ক্রিনিংয়ের জন্য তা ব্যবহৃত হচ্ছে না বা এ মুহূর্তে সরকারের কোনো প্রকল্পও নেই। জরায়ুমুখের ক্যান্সারের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্ত নারীদের নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।
আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে বর্তমান স্বাস্থ্যব্যবস্থায় প্যাপ ্নিয়ারকে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের স্ক্রিনিং টেস্ট হিসেবে চালু করার জন্য যে সব প্রস্তাব করা যায়ঃ
১জ্ঝ পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র বা থানা স্বাস্থ্য প্রকল্পের মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট বা পরিবারকল্যাণ সহকারী অথবা পরিদর্শকদের দুই দিনের ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে প্যাপ ্নিয়ারের নমুনা সংগ্রহ শেখানো সম্ভব।
এর ফলে এসব কেন্দ্রে প্যাপ ্নিয়ারের নমুনা সংগ্রহ করে থানা স্বাস্থ্য প্রকল্পে বা জেলা হাসপাতালে স্টেইনিংয়ের জন্য পাঠানো যাবে। একজন বা দুজন বিশেষজ্ঞ প্যাথলজিস্ট থানা-জেলায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহের প্রশিক্ষণ দেবেন। এ ব্যাপারে প্যাথলজি সোসাইটির সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।
২জ্ঝ জেলা ও থানা স্বাস্থ্য প্রকল্পের টেকনোলজিস্টদের চার-পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে ্লাইড স্টেইনিং শেখানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষক হিসেবে বিশেষজ্ঞ প্যাথলজিস্ট এবং অভিজ্ঞ মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা সহায়তা প্রদান করতে পারবেন। এর ফলে থানা, জেলা ও বড় হাসপাতালগুলোতে ্লাইড স্টেইন করা সম্ভব হবে।
৩জ্ঝ প্রতি থানা স্বাস্থ্য প্রকল্প এবং জেলা হাসপাতালের একজন বা দুজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে দু-তিন মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রাথমিক স্ক্রিনারের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
থানা বা জেলা হাসপাতাল থেকে পজিটিভ ্লাইডগুলো রোগীর ঠিকানাসহ জেলা হাসপাতালে বা মেডিকেল কলেজে পাঠাতে হবে বিশেষজ্ঞ প্যাথলজিস্টের কাছে।
৪জ্ঝ থানা বা জেলা হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজগুলো থেকে রিপোর্ট সরাসরি যে কেন্দ্রে নমুনা সংগৃহীত হয়েছে সেখানে পাঠাতে হবে। প্রয়োজনে রোগীর কাছ থেকে ডাকমাশুল বাবদ পাঁচ টাকার দুটি ডাকটিকিটসহ খাম নেওয়া যেতে পারে।
ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা যে দেশে অধিকাংশ লোকের আওতার বাইরে, সেখানে ক্যান্সার প্রতিরোধকেই গুরুত্ব দিতে হবে। জরায়ুমুখের ক্যান্সার যেহেতু প্রতিরোধযোগ্য এবং আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী, তাই এ ব্যাপারে আশু বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এখন থেকে শুরু করলে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিটি পরিবারকল্যাণ, ইউনিয়ন ও থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং জেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোয় প্যাপ ্নিয়ারের নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা তৈরি হবে। একই সঙ্গে থানা ও জেলা হাসপাতালে স্টেইনিংসহ প্রাথমিক স্ক্রিনিং সম্ভব হবে।
আর ৬০ মাসে আরও অন্তত ৪০ জন বিশেষজ্ঞ প্যাথলজিস্ট পাস করে বের হবে। সরকার যদি প্রতি থানায় মাইক্রোস্কোপ থাকার নিশ্চয়তা প্রদান করে, তবে হাসপাতালের যাবতীয় খরচের সঙ্গে জরায়ুমুখের ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের এ খরচ খুব বেশি হবে না।
উন্নত বিশ্বে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের প্রতিরোধক টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে এবং তা বাজারজাতের অপেক্ষায়। অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় তা আমাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নাগালের বাইরেই থাকবে।
অতএব এখন পর্যন্ত মানসম্পন্ন প্যাপ ্নিয়ার পরীক্ষাটিই শুধু আমাদের অবলম্বন হতে পারে। যে দেশে অর্ধেকের বেশি নারী, আসুন আমরা তাদের কথা ভাবি এবং জরায়ুমুখের ক্যান্সারের মতো প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ থেকে তাদের রক্ষায় সচেষ্ট হই।



পাকস্থলীর ক্যান্সার কারণ ও চিকিৎসা

হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরী নামক একটি ব্যাকটেরিয়া মানুষের পাকস্থলী ও ডুওডেনামে আলসারের সৃষ্টি করে। জীবানুটি পাকস্থলীতে প্রাথমিক পর্যায়ে ড়্গণস্থায়ী প্রদাহের সৃষ্টি করে। ড়্গণস্থায়ী প্রদাহ থেকে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের সৃষ্টি হয়। আর দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ থেকে অবশেষে পাকস্থলীতে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়।

পাকস্থলীর ক্যান্সার একটি ঘাতকব্যাধি। উন্নত বিশ্ব যেমন আমেরিকা ও বৃটেনে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দিন দিন কমতে শুরম্ন করলেও এশিয়ার চীন, জাপান এবং দড়্গিণ এশিয়াতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব এখনও আশংকজনক। এ রোগে মহিলাদের চেয়ে পুরম্নষেরা বেশি ভোগে থাকেন। নিম্নবিত্ত সমাজের লোকেরা উচ্চবিত্ত সমাজের লোকদের চেয়ে অধিকহারে আক্রান্তô হন। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এ রোগে আক্রান্তô হবার ঝুকি বাড়তে থাকে। ৩০ বছর বয়সের আগে এ রোগে আক্রান্তô হবার সম্ভাবনা খুবই ড়্গীণ।

রোগের কারণঃ হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরী নামক একটি ব্যাকটেরিয়া মানুষের পাকস্থলী ও ডুওডেনামে আলসারের সৃষ্টি করে। জীবানুটি পাকস্থলীতে প্রাথমিক পর্যায়ে ড়্গণস্থায়ী প্রদাহের সৃষ্টি করে। ড়্গণস্থায়ী প্রদাহ থেকে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের সৃষ্টি হয়। আর দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ থেকে অবশেষে পাকস্থলীতে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়।

একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে পাকস্থলীর আলসার থেকে ক্যান্সার হয় না যদি না আলসারটি হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরী দ্বারা আক্রান্তô হয়। ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য বিশেষভাবে দায়ি হলেও পাকস্থলীতে ক্যান্সার সৃষ্টিতে এর ভূমিকা প্রমাণিত হয়েছে। ধূমপায়ীরা অধিকহারে পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্তô হয়ে থাকেন। তাছাড়া অধিক লবণ ও ধোঁয়াযুক্ত খাবার, লবণে সংরড়্গিত খাবার, নাইট্রাইট ও নাইট্রেট সমৃদ্ধ খাবারকে উলেস্নখযোগ্য ঝুকিপূর্ণ খাবার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একাধিক গবেষনায় প্রমাণিত হয়েছে অধিক পরিমাণে শাকসবজি, ফলমুল এবং অল্প পরিমাণে লবণযুক্ত খাবার খেলে পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুকি অনেকাংশে হ্রাস পায়। ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবারও পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুকি হ্রাস করে। যাদের রক্তের গ্রম্নপ এ তারা অন্যান্য রক্তের গ্রম্নপধারীদের চেয়ে অধিকহারে পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্তô হয়ে থাকেন। বংশগত কারণকেও আজকাল উলেস্নখযোগ্য কারণ হিসেবে উলেস্নখ করা হয়।

উপসর্গঃ পাকস্থলীর ক্যান্সার দ্বারা আক্রান্তô ব্যক্তির শরীরে প্রাথমিক পর্যায়ে কোন উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে। পরবর্তী পর্যায়ে শরীরের ওজন কমে যাওয়া, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, রক্তবমি, কালরক্তযুক্ত পায়খানা প্রভৃতি লড়্গণ দেখা দিতে পারে। অধিকাংশ ড়্গেত্রেই রোগীর উপরের পেটে চাকা থাকে। অনেকে জন্ডিস দ্বারা আক্রান্তô হতে পারেন। পাকস্থলীর ক্যান্সারের রোগী জন্ডিস দ্বারা আক্রান্তô হলে বুঝতে হবে ক্যান্সারটি লিভারে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকের পেটে পানি আসতে পারে। কোন কোন ড়্গেত্রে ক্যান্সারটি ঘাড়ের লসিকা গ্রন্থিতে ছড়াতে পারে। মহিলাদের ড়্গেত্রে ডিম্বাশয়ে ছড়ানোর ঘটনাও বিরল নয়। যে সমস্তô অঙ্গে পাকস্থলীর ক্যান্সার সহজেই ছড়ায় সেগুলো হল লিবার, ফুসফুস, হাড় এবং পেরিটোনিয়াম।

পরীড়্গা নিরীড়্গাঃ এন্ডোস্কোপি করে পাকস্থলীর প্রাচীর থেকে কোষ এনে সেটিকে অনুবীড়্গণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীড়্গা করে পাকস্থলীর ক্যান্সার রোগ নির্ণয় করা যায়। বেরিয়াম মিল এরে, করে পাকস্থলীর ক্যান্সার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। অনেক সময় পাকস্থলীর ক্যান্সার শরীরে কতটুকু ছড়িয়েছে সে সম্পর্কে ধারণা পাবার জন্যে সিটিস্ক্যান করা হয়।

চিকিৎসাঃ প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার ধরা পড়লে অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা সম্ভব। কিন্তু বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সারের চিকিৎসা অপারেশনের মাধ্যমে করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন অঙ্গে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে এরকম রোগীরা অল্পদিনের ব্যবধানে মৃত্যু মুখে পতিত হতে পারেন।


ব্রেস্ট বা স্তôন ক্যান্সার


ব্রেস্ট মা ও মেয়েদের মাতৃত্ব ও সৌন্দর্যের প্রতীক শৈশব থেকে নারীত্ব এই সময়ের মধ্যে পূর্ণতা লাভ করে। নারী এই ক্যান্সার মরণব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে যেকোনো সময় এবং সচেতন না হলে কেড়ে নিতে পারে আপনার মহামূল্যবান প্রাণ। সারা বিশ্বে ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা অনেক। এখন প্রতি বছরই বেড়ে চলছে।

ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয়?

নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো জানা যায়নি। তাই একাধিক কারণকে স্তôন ক্যান্সারের জন্য দায়ী করা হয়ঃ

জেনিটি ফ্যাক্টরঃ যেমন- মা খালা এদের থাকলে সন্তôানদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ৈঅবিবাহিতা বা সন্তôানহীনা মহিলাদের মধ্যে স্তôন ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি।

ৈএকই রকমভাবে যারা সন্তôানকে কখনো স্তôন্য পান করাননি তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি হয়।

ৈ৩০ বছরের পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন তাদের স্তôন ক্যান্সারের প্রবণতা একজন কমবয়সী মা হওয়া মহিলাদের থেকে অনেক বেশি।

ৈবয়স যত বাড়ে স্তôন ক্যান্সার এর ঝুঁকি তত বৃদ্ধি পায়।

ৈঅল্প বয়সে বাচ্চা নিলে, দেরিতে মাসিক শুরম্ন হলে তাড়াতাড়ি মাসিক বন্ধ হলে স্তôন ক্যান্সার বেড়ে যায়।

ৈএকাধারে অনেক দিন জন্ম নিরোধক বড়ি খেলে ও স্তôান ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। উপরোক্ত কারণগুলো ব্রেস্ট ক্যান্সারের সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে এগুলো একমাত্র কারণ নয়।

কি করে স্তôন ক্যান্সার বুঝবেনঃ

১। সাধারণত ৩০ বছর এর পূর্বে এই রোগ কম হয়।

২। বেশিরভাগ রোগী বুকে চাকা নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়।

৩। বুকে চাকা সেই সথে কিছু রোগী ব্যথার কথাও বলে থাকে।

৪। কখনো কখনো বুকে চাকা এবং বগলেও চাকা নিয়ে রোগ আসতে পারে।

৫। নিপল ডিসচার্জ এবং নিপল ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়াও এ রোগের লড়্গণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।

৬। কিছু কিছু রোগী বুকে ফুলকপির মতো ঘা দিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে।

৭। অনেক সময় যে বুকে ব্যথা সেদিকের হাত ফোলা নিয়ে আসতে পারে।

৮। এগুলো ছাড় ব্রেস্ট ক্যান্সার দূরবর্তী কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে এমন উপসর্গ নিয়ে আসে যেমনঃ হাড়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও জন্ডিস ইত্যাদি।

ব্রেস্ট ক্যান্সারে কি কি চিকিৎসা আছেঃ

সম্ভব হলে সার্জারি করাই উত্তমা তা ছাড়া কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপি, হরমোন থেরাপি ইত্যাদি।

কিভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ধরা যায়ঃ

১। ৩০ বছর এর বেশি বয়স হলে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীড়্গা করতে হবে। কোনো চাকা পাওয়া যায় কি না। চাকা পাওয়া গেলে সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

২। বয়স ৫০ এর উপরে হলে বছরে ১ বার মেমোগ্রাম করতে হবে।

৩। কোনো প্রকার সন্দেহ হলে ডাক্তারের কাছে দেখা করতে হবে।

০ ডাজ্ঝ এমএ হাসেম ভূঞা

সহযোগী অধ্যাপক সার্জারি বিভাগ

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা।

ক্যান্সারের ইতিবৃত্ত
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
ক্যান্সার শব্দ কী করে এল
ক্যান্সার, এ শব্দটির জন্য আমরা ঋণী গ্রিক চিকিৎসক হেপোক্রিতেসের কাছে, যাঁকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। তিনি টিউমার শব্দটি বর্ণনার জন্য গ্রিক শব্দ কার্সিনোস এবং কার্সিনোসা ব্যবহার করেছিলেন। ক্যান্সারকে গ্রিক শব্দে বলা হতো çকধৎ শরহড়ং্থ। এই শব্দের অর্থ হলো ‘কর্কট’ এবং হেপোক্রিতেসের ধারণা ছিল ক্যান্সার দেখতে কাঁকড়া বা কর্কটের অবয়বের মতো। হেপোক্রিতেস ক্যান্সার শব্দটি নামকরণ করে থাকলেও সম্ভবত তিনি এই রোগ প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন, তা কিন্তু নয়। এর ইতিহাস অনেক পুরোনো।

প্রথম ক্যান্সারের বিবরণ
যত দূর জানা যায়, ক্যান্সার রোগের সবচেয়ে পুরোনো নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল প্রাচীন মিসরে, খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সালে। এর বি্নৃত বর্ণনা ছিল প্যাপিরাস নামের একটি কাগজে, স্তনের আটটি ক্যান্সার বিবরণ ছিল এতে। ‘কটারাইজেশন’ বা ‘তাপদগ্ধকরণ’ প্রক্রিয়ায় এদের চিকিৎসা হয়েছিল। ‘ফায়ার ড্রিল’ নামে উত্তপ্ত শলাকা দিয়ে কোষকলাকে ধ্বংস করা হতো এই পদ্ধতিতে। এও জানা গিয়েছিল যে এ রোগের কোনো নিরাময় ছিল না, রোগ প্রশমন করাই কেবল সম্ভব ছিল।
এমনও তথ্য-প্রমাণ আছে যে প্রাচীন মিসরীয়রা নির্দোষ ও প্রাণসংহারী টিউমারগুলোর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ে সমর্থ ছিল। কাগজে ও শিলালিপিতে উৎকীর্ণ লিপি উদ্ধার করে জানা যায়, ত্বকের ওপর সৃষ্ট টিউমারগুলোকে এখনকার মতোই অস্ত্রোপচার করে অপসারণ করা হতো।

ক্যান্সারের কারণ সম্পর্কে প্রাচীন যুগের চিকিৎসকদের ধারণা
আমরা মানবশরীর সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি এখন; কিন্তু প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসকেরা এত সৌভাগ্যবান ছিলেন না। ধারণা ও অনুমাননির্ভর ছিল সিদ্ধান্ত। হেপোক্রিতেস মনে করতেন, শরীর চারটি তরল পদার্থ নিয়ে গঠিত ছিল। বুক, শ্লে্না, হলুদ পিত্ত ও কৃষ্ণ পিত্ত। তাঁর ধারণা ছিল, দেহের কোনো স্থানে কৃষ্ণ পিত্তের আধিক্য দেখা দিলে ঘটত ক্যান্সার। এরপর এক হাজার ৪০০ বছর পর্যন্ত ক্যান্সারের কারণ সম্পর্কে এমন ধারণাই ছিল। প্রাচীন মিসরে এমন ধারণা ছিল, ক্যান্সার হয় দেব-দেবতার কোপের কারণে।

শব ব্যবচ্ছেদ করে রোগ নির্ণয়
১৬২৮ সালে বিজ্ঞানী হার্ভে শব ব্যবচ্ছেদ করে রোগ নির্ণয় করার যে রীতি চালু করেন, এতে মানবশরীরতত্ত্ব ও শারীরবৃত্ত সম্পর্কে অনেক জানা গেল। রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়াও আবিষ্কৃত হলো এবং এতে রোগ সম্পর্কে আরও গবেষণার দ্বার উ্নুক্ত হলো। অবশ্য ১৭৬১ সালে প্রথম অটোপসি বা শব ব্যবচ্ছেদ করে রোগগ্রস্ত মৃত লোকের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের কাজ শুরু হলো। পাদুয়ার জিওভানি মরগাগনি প্রথম এ ধরনের অটোপসি করা শুরু করলেন।

রেনেসাঁর পর ইতিবৃত্ত আবার ক্যান্সারের কারণ নিয়ে আরও তথ্য
হেপোক্রিতেসের কৃষ্ণ পিত্ত তত্ত্বের বদলে সতেরো শতকে এল ক্যান্সারের কারণ হিসেবে নতুন তত্ত্ব ‘লসিকা-রস তত্ত্ব’। লসিকা-নালি আবিষ্কারের পর ক্যান্সারের কারণ সম্পর্কে নতুন কিছু জানা গেল। ধারণা করা হলো, লসিকা-নালিতে অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে তবেই ক্যান্সার হয়।
ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে বিজ্ঞানী রুডল্‌ফ ভার্কো বলেন, কোষগুলো, এমনকি ক্যান্সার কোষও আসে অন্যান্য কোষ থেকে।
আরও তত্ত্ব এল সেই সঙ্গে। মনে করলেন কেউ কেউ ক্যান্সারের পেছনে আঘাত বা ক্ষত, পরজীবী-এসব কারণ থাকতে পারে। মনে করা হতো, ক্যান্সার ছড়ায় ‘তরল পদার্থের’ মতো। আর সিদ্ধান্ত হলো, জার্মান সার্জন কার্ল থিয়াসের মতে ক্যান্সার ছড়ায় সংহারী কোষগুলোর মাধ্যমে। মজার কথা, ১৯২৬ সালে পাকস্থলী ক্যান্সারের কারণ হিসেবে ‘পোকা বা কীট’ এমন তত্ত্বের আবিষ্কারের জন্য ভুলক্রমে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলো একজন বিজ্ঞানীকে। এই তত্ত্ব যে কতটা ভুল, তা সাধারণ মানুষও এখন বুঝতে পারে। বিংশ শতকে ক্যান্সার গবেষণায় এল বড় রকমের অগ্রগতি।
গবেষণায় দেখা গেল, এর পেছনে রয়েছে ক্যান্সারজনক তন্তু বা ‘কার্সিনোজেন’। এল চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি। রোগ নির্ণয়ের অনেক উন্নত পদ্ধতি আবিষ্কৃত হলো। এখন আগাম ধরা পড়লে অনেক ক্যান্সার নিরাময় হয়, চলছে আরও গবেষণা। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং গবেষণা চলছে নিরাময়সূত্র আবিষ্কারের জন্য, প্রতিরোধের সঠিক পথ আবিষ্কারের জন্য।

কলোন ক্যান্সার থেকে সুরড়্গা

উন্নয়নশীল দেশে কলোন ক্যান্সারে মৃত্যু বড় কারণ না হলেও উন্নত দেশে বিশেষ করে আমেরিকায় ক্যান্সারের মৃত্যুর কারণ হিসেবে এর স্থান দ্বিতীয়। অথব কলোরেকটাল ক্যান্সার বা মলান্দ্র-মলাশয় ক্যন্সারের স্ত্র্নিনিং টেস্ট করে নিরাময়ের জন্য আগাম সনাক্ত করা গেলেও মৃত্যুর কারণ হিসেবে এর অবস্থান ততটা নিচে নামেনি।

একটি কথা অবশ্য আছে। সম্প্রতিকালে এ ধরণের ক্যান্সারের হার কমছে, বছরে ২% হারে। বেশি বেশি স্ত্র্নিনিং হওয়ার জন্য তো বটেই। তবু যাদের স্ত্র্নিনিং হওয়ার উচিত, এদের মধ্যে অর্ধেকের কিছুকম লোক স্ত্র্নিনিং করাতে অনীহা প্রকাশ করেন। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলেন, এরা যদি যথাসময়ে স্ত্র্নিনিং করাতেন তাহলে মৃত্যুহার অর্ধেক কমে যেত।

এই ক্যান্সারকে সহজে প্রতিরোধ করা বা নিরাময় করার একটি কারণ হলো, বেশিরভাগ সময় এটি অন্ত্রের আস্তôরণে একটি পলিপ হিসেবে সূচিত হয়, ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়। ক্রমে সংহারী হয়ে উঠেন কখনও কখনও।

যে সব টেস্ট মলান্ত্রকে পরীড়্গা করে, যে সব টেস্টে ধরা পড়ে পলিপ, আর এগুলো ক্যান্সার হয়ে উঠার আগেই ডাক্তাররা এই পলিপ টুক্‌ করে কেটে যদি বাদ দিতে পারেন। আবার টেস্টে আগাম টিউমার ধরা পড়ে যা সহজে অপসারণ করা যায়।

তবে মলাশয় মলান্ত্রের ক্যান্সার এর টেস্টগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠে নাই। অধিকাংশ প্রাপ্ত বয়ষ্ক মানুষ ৫০ বছর বয়স থেকে স্ত্র্নিনিং শুরম্ন করা উচিত ( তবে পারিবারিক ইতিহাস, কিছু কিছু পেটের অসুখ বা জীন মিউটেশনের কারণে যাদের ঝুঁকি উঁচুতে, এদের স্ত্র্নিনিং শুরম্ন কথা উচিত রোগীরা মলের নমুনা নিয়ে যেতে দ্বিধা বোধ করেন, মলাশয়ে যন্ত্র ঢোকাতে কেউ কেউ বিব্রত বোধ করেন।

যারা সময়মত স্ত্র্নিনিং করার জন্য পরামর্শ দেন তাদের যুক্তি হলো একটি অত্যন্তô বেদনার, ভয়ংকর রোগ এড়াতে স্ত্র্নিনিং এর জন্য অসুবিধা ও অস্বস্তিô হয় তা তেমন কিছুই নয়।

কলোনোস্কোপি করার সময় টেস্ট তেমন অসুবিধা করে না। অনেকে বলেন এর জন্য প্রস্তুতিটি একটু কষ্টের, সামান্যই-অন্ত্রকে খোলাসা করার জন্য একদিন লেেটিভ নেওয়া-এই মাত্র।

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ডাইরেক্টর অব স্ত্র্নিনিং ডাঃ রবার্ট স্মিথ বলেন, “উপাত্ত-তথ্য থেকে বোঝা যায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার জন্য নির্ধারিত চিকিৎসকের কাছ থেকে স্ত্র্নিনিং এর জন্য জোরালো তাগিদ না পাওয়ার জন্য মানুষ স্ত্র্নিনিং করাতে কিছুটা অনীহা দেখান।” ডাক্তররা ভাবেন রোগীরা স্ত্র্নিনিং করাবেন না, তাই সে জন্য তাগিদ ও দেন না। অনেক সময় দ্বিধায় থাকেন কোন টেস্টটি করাতে বলবেন। কোনও কোনও রোগী রেফারেল পান, ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে এর শিডিউল পাওয়া এতো জটিল ও কঠিন হয় যে আসলে টেস্টই করানো হয় না।

সবাই চান ঠিক জিনিষটা করাতে, কিন্তু ব্যাপারটি ঘটেনা।”

যাদের মলাশয়-মলান্ত্রের ক্যান্সার হওয়ার গড়পড়তা ঝুঁকি রয়েছে, আমেরিকান ক্যান্সার-সোসাইটি পরামর্শ তাদের জন্য, স্ত্র্নিনিং শুরম্ন হওয়া উচিত পঞ্চাশ বয়স বয়স থেকেই, নিচের পাঁচটি টেস্টের যে কোন একটি দিয়ে শুরম্নঃ-

০ বছরে একবার মলের সুপ্তরক্তের উপস্থিতি পরীড়্গা, এর আরও আধুনিক রূপ হলো মলের ‘ইমুনোকেমিক্যাল টেস্ট’ যা দিয়ে মলে রক্তের উপস্থিতি সনাক্ত করা যায়। ০ প্রতি পাঁচ বছরে একবার ‘নমনীয় সিগময়েডোস্কোপি’, একটি বীড়্গণী দিয়ে মলান্ত্রের নিম্নের অংশ পরীড়্গা করা। ০ বছরে একবার মল পরীড়্গা এবং প্রতি পাঁচ বছরে একবার সিগময়োডোস্কোপি। ০ প্রতি পাঁচ বছরে বেরিয়াম এনেমা ও এরে। ০ প্রতি দশ বছরে একবার কলোনোস্কোপি, মলাশয়ে একটি বীড়্গণী প্রবেশ করিয়া পুরো বৃহদান্ত্র পরীড়্গা করা।

প্রথম চারটি টেস্টের যে কোনও একটিতে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া গেলে আরও কিছু চেক করার জন্য প্রয়োজন হতে পারে কলোনোস্কোপি।

প্রথম টেস্টে মলে সুপ্ত রক্তের উপস্থিতি পরীড়্গা করার জন্য দরকার হয় রোগীরা এর কয়েকদিন আগে থেকে লালা গোস্তô বা কাঁচা শাক-সবজি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন, যাতে টেস্টে ফলস পজিটিভ না হয়। তবে নতুন উদ্‌ভাবিত ইমুনোকেমিক্যাল টেস্টের আগে তেমন প্রস্তুতি প্রয়োজন হয় না। ডাঃ স্মিথ বলেন, “টেস্টটি করা সহজ, তবে এর খরচ বেশি।”

০ প্রকৃত ক্যান্সারের তুলনায় পলিপ হলে রক্তড়্গরণের সম্ভাবনা অনেক অনেক কম, তাই রক্তে সুপ্ত রক্তের উপস্থিতি পলিপ সনাক্ত করার চেয়ে বরং ক্যান্সার নির্ণয়ে অধিক সহায়ক। ০ সিগময়েডোস্কোপি করলে মলান্ত্রের কেবল নিম্নাংশই পরীড়্গা হয়, তাই উপরের অংশে পলিপ বা ক্যান্সার থাকলে অধরা থেকে যায়। ০ বেরিয়াম ৈএনেমা টেস্ট দিয়ে ছোট ছোট পলিপ কম ধরা পড়ে।

তবে কলোনোস্কোপি করওে অনেস সময় পলিপ নাও চিহ্নিত হতে পারে। বিশেষ করে টেস্টটি যদি তড়িঘড়ি করা হয়। তবে ডাঃ স্মিথ বলেন, তবুও এখনও এটি শ্রেষ্ঠ টেস্ট, কারণ যত্ন-সহকারে টেস্টটি করলে ছোট পলিপ সনাক্ত করা যায়। তখন এগুলো অপসারণও করা যায়। বেশিরভাগ লোকের জন্যই টেস্টটি ১০ বছরে একবারের বেশি করানো প্রয়োজন হয় না। উন্নত দেশে কলোনোস্কোপি করানোর জন্য এপয়েন্টমেন্ট পাওয়া সমস্যা, অনেক সময় ৮-৯ মাস অপেড়্গা করতে হয়। সে তুলনায় বাংলাদেশে এ সমস্যা একেবারেই নেই। এ টেস্টের শিডিউল পাওয়া সহজ ও দ্রম্নতই পাওয়া যায়, খরচাও অনেক অনেক কম।

অনেক কিছু বিবেচনা করলে এবং সার্বিকভাবে উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশে চিকিৎসা সুবিধা অনেক সুলভ, সহজ ও সস্তôা, গুণগতমানও সার্বিকভাবে ভালো।

ডাঃ স্মিথ বলেন, কলোনোস্কোপির জন্য ১০ বছর অপেড়্গার মধ্যবর্তী সময়ে মলে রক্তের উপস্থিতি পরীড়্গা করে দেখেন ডাক্তার, তবে এটি যুক্তিযুক্ত নয়।

আর রয়েছে ভার্চুয়াল কলোনোস্কোপি’। অনেকের পড়্গে এটি কম ক্লেশকর। এই পরীড়্গার জন্য বীড়্গণী বা ংপড়ঢ়ব -এর বদলে প্রয়োজন হয় সিটি স্ক্যান এবং এতে চেতনানাশ করা প্রয়োজন হয় না। কলোনোস্ত্র্নোপির মত একই প্রস্তুতি প্রয়োজন হয়, মলাশয়ে একটি নল ঢুকিয়ে মলান্ত্র ফোলানো হয় গ্যাস দিয়ে, যাতে স্বচ্ছ প্রতিছবি পাওয়া যায়।

এই পদ্ধতিতে পলিপ অপসারণ করা সম্ভব হয় না, তাই পলিপ দেখা গেলো রোগীকে আবার কলোনোস্কোপি করাতে হয়।

ভার্চুয়াল কলোনোস্কোপি অনেক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বাজারে আনলেও আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি এবং অন্যান্য গ্রম্নপ খুব এর পড়্গে নন। বলেন, এজন্য আরও পরীড়্গা-নিরীড়্গা প্রয়োজন।

এখনও কলোনোস্কোপি চূড়ান্তô ও শ্রেষ্ঠ পরীড়্গা মনে হয়।

স্তন ক্যান্সার
মেয়েদের জানা প্রয়োজন
স্তôন ক্যান্সার বা টিউমার সাধারণত রম্নগীর দ্বারাই প্রথম সনাক্ত হয়। রম্নগীরা অনেক সময় রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ সার্জনের শরানাপন্ন হন কখনো বা দেরিতে। স্তôন ক্যান্সার হলে রম্নগীরা যা বলেন


১) স্তôনে চাকা বা টিউমার- এটাই রম্নগীর প্রথম এবং মূল সমস্যা। স্তôনের যে-কোন যায়গায় হতে পারে তবে দেখা গেছে স্তôনে ঔপর ও বাহিরের অংশে সবচেয়ে বেশি (৬০%) হয়। চাকাটি সাধারণত শক্ত ও অমসৃণ হয় এবং তাড়াতাড়ি বড় হতে থাকে তবে কোন ব্যথা থাকে না। প্রথম দিকে চাকাটি বিভিন্ন দিকে নাড়ানো যেতে পারলেও ধীরে ধীরে চারদিকে সম্প্রসারিত হয়ে আশপাশের চামড়া, মাংস বা বড়্গ পিঞ্জরের সাথে লেগে যায় এবং নড়াচড়া কমে যায়। ২) স্তôনের চামড়ার পরিবর্তন- প্রথম দিকে টিউমারের সামনের চামড়া টিউমার থেকে মুক্ত থাকে, পরে টিউমারের ক্রম সম্প্রসারণের ফলে চামড়া টিউমারের সাথে লেগে যেতে পারে (স্কিন ফিঙ্শেন), চামড়া বসে যেতে পারে। (স্কিন টিদারিং) এমনকি চামড়ায় ঘাঁ হয়ে যেতে পারে, অথবা চর্মস্থিত লসিকা নালী বন্ধ হয়ে চামড়া ফুলে গিয়ে লালচে বর্ণ ধারণ করে এবং কমলার খোসা বা ছোবড়ার মত দেখাতে পারে যাকে বলে প’ডি অরেঞ্জ। ৩) নিপ্‌ল বা বোঁটার পরিবর্তন-নিপ্‌ল বসে যেতে পারে (নিপ্‌ল রিট্রাকসন), নিপলে একজিমার মত ঘাঁ হতে পারে এমনকি নিপ্‌ল আংশিক বা সম্পূর্ণ ড়্গয়ে যেতে পারে। (পেজেটস্‌ ডিজিজ)। ৪) নিপ্‌ল দিয়ে ঝরা বা ডিসচার্জ- নিপ্‌ল দিয়ে রক্ত ঝরতে পারে। ৫) ব্যথা- স্তôন ক্যান্সারে সাধারণত ব্যথা থাকে না তবে বড়্গপিঞ্জর বা স্নায়ু, ক্যান্সার দ্বারা আক্রান্তô হলে ব্যথা হতে পারে। ৬) স্তôন্যের বাহিরের উপসর্গ- এ গুলো সাধারণত ক্যান্সার অন্যত্র (আশপাশে বা দূরে লসিকা বা রক্তের মাধ্যমে) ছড়ায়ে পরার জন্য হয় যেমন-

ক) বগলে ফোলা-স্তôন ক্যান্সারের কোষ দ্বারা বগলের লসিকা গ্রন্থি আক্রান্তô হলে বগলে চাকা হয়। খ) পিছনের মেরম্নদেণ্ডে ব্যথা- মেরম্নদণ্ডে ক্যান্সার ছড়ালে মেরম্নদন্ডে ব্যথা হতে পারে। গ) কাশির সাথে রক্ত যাওয়া- ফুসফুসে ক্যান্সার ছড়ালে কফের সাথে রক্ত যেতে পারে। ঘ) মাথাব্যথা, বমি, অজ্ঞান হওয়া, খিচুনি ইত্যাদি- মস্তিôষ্কে ক্যান্সার ছড়ালে এ সব হতে পারে। ঙ) অন্যান্য- খাবারে অরম্নচি, শীরর দুর্বল, রক্ত শূন্যতা, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি।

রোগ নির্ণয়ঃ

নিম্নলিখিত উপায়ে রোগ নির্ণয় করা যায়-

১) রোগের বিস্তôারিত ইতিহাস শুনে যেমন- টিউমারের বয়স, বৃদ্ধির গতি, ব্যথা আছে কিনা, বগলে ফুলা আছে কিনা ইত্যাদি।

২) সরাসরি পরীড়্গা করে যেমন- আকার, নাড়ানো যায় কিনা, ঘাঁ আছে কিনা, বগলে ফুলা আছে কিনা ইত্যাদি।

৩) ইনভেস্টিগেশন বা পরীড়্গা করে যেমন-

ক) ইনডাইরেক্ট পরীড়্গা বা ইমেজিং।

০ আল্ট্রাসনোগ্রাফী- টিউমার না সিস্ট বুঝার জন্য।

০ মোমোগ্রাফী- ক্যান্সারের আলামত আসার আগেই ক্যান্সারের ধারণা।

০ এমআরআই- আল্ট্রাসনোগ্রাফী বা মোমোগ্রাফীর চেয়ে অধিক সঠিক ধারণা দিতে পারে।

০ এ-রে (বুকের, হাঁড়ের)- ফুসফুসে বা হাঁড়ে ক্যান্সার ছড়িযে পড়েছে কিনা দেখার জন্য।

০ সিটি স্ক্যান- ক্যান্সার অন্য জায়গায় যেমন মস্তিôষ্ক, ফুসফুস, লিভার ইত্যাদিতে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা দেখার জন্য।

০ বোন্‌ স্ক্যান- হাঁড়ে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে কিনা দেখার জন্য। ইহা এ-রে থেকে উত্তম।

০ পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফী (পিইটি)- হাঁড় ও অন্যান্য জায়গায় ক্যান্সার বিস্তôারের ধারণা দিতে পারে।

খ) ডাইরেক্ট পরীড়্গা বা সরাসরি রোগ নির্ণয়-

০ নিপ্‌ল বা বোঁটার ডিসচার্জ পরীড়্গা- ক্যান্সার কোষের উপস্থিতির ধারণা দিতে পারে।

০ এফএনএসি- টিউমার থেকে বা বগলের ফুলা থেকে রস নিয়ে পরীড়্গা করলে ক্যান্সার কোষের উপস্থিতি এবং ধরন সম্বন্ধে ধারণা দিতে পারে।

০ কোর নিড্‌ল বায়পসি- টিউমার থেকে সামান্য কলা বা টিস্যু নিয়ে পরীড়্গা করলে ক্যান্সারের ধরন সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। ইহা এফএনসি থেকে উত্তম।

০ ইনসি্‌সনাল বায়পসি- টিউমার থেকে কিছু অংশ কেটে নিয়ে পরীড়্গা। ইহা কোর নিড্‌ল বায়পসি থেকে উত্তম।

০ এ্যাঙ্সিনাল বায়পসি- অপারেশন করে সমস্তô টিউমার অপসারণ করে টিউমার নিয়ে পরীড়্গা। ইহা রোগ নির্ণয়ে সর্বোৎকৃষ্ট পরীড়্গা।

গ) ল্যাবরেটরী পরীড়্গা বা বায়ক্যামিকাল পরীড়্গাঃ

০ সেরাম এ্যালক্যালাইন ফসফ্যাটেজ- লিভার অথবা হাঁড়ে স্তôন ক্যান্সার ছড়ালে বেড়ে যেতে পারে।

০ সেরাম ক্যালসিয়াম-হাঁড়ে স্তôন ক্যান্সার ছড়ালে বেড়ে যেতে পারে।

০ রক্তে ক্যারসিনো এ্যামব্রায়নিক এন্টিজেন (সিইএ), সিএ ১৫-৩ বা সিএ ২৭-২৯ দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসাঃ চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের আকার ও বিস্তôারের উপরে। আকার ও বিস্তôারের উপরে নির্ভর করে স্তôন ক্যান্সারকে চারটি স্টেজে বা পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে, ইহাকে টিএনএম স্টেজিং বলে-

স্টেজ-১-ক্যান্সারের আকার ২ সেঃমিঃ এর কম এবং বগলের লসিকা গ্রন্থিতে বিস্তôার লাভ করেনি।

স্টেজ-২-ক্যান্সারের আকার ২-৫ সেঃমিঃ, বগলের লসিকা গ্রন্থিতে বিস্তôার লাভ করিয়াছে কিন্তু লসিকা গ্রন্থি নড়ে বা আলাদা।

স্টেজ-৩-ক্যান্সারের আকার ৫ সেঃমিঃ এর বড়, বগলের লসিকা গ্রন্থিতে বিস্তôার লাভ করিয়াছে এবং লসিকা গ্রন্থি নড়ে না।

স্টেজ-৪-ক্যান্সারের আকার যাই হউক না কেন উহা চর্ম বা বড়্গ পিঞ্জরে লেগে গেছে এবং বগলের লসিকা গ্রন্থিতে বিস্তôার লাভ ছাড়াও অন্যত্র (যেমন লিভার, ফুসফুস ইত্যাদি) ছড়াইয়াছে।

স্টেজ-১ এবং স্টেজ-২ কে সাধারণত প্রাথমিক বা আর্লি স্টেজ বলে আর স্টেজ-৩ এবং স্টেজ-৪ কে এ্যাডভানস্‌ড বা লেট স্টেজ বলা হয়।

আলিং স্টেজে চিকিৎসাঃ

অপারেশন- টিউমার অপসারণ (লামপেকটমী) বা সম্পূর্ণ স্তôন অপসারণ (ম্যাসটেকটমী)।

রেডিওথেরাপী-অপারেশনের সাথে দেয়া যেতে পারে।

সিস্টেমিক থেরাপী- ক্যামো থেরাপী বা হরমোন থেরাপী (যদি টিউমার স্তôনের বাহিরে বিস্তôার লাভ করে থাকে)।

এ্যাডভানস্‌ড বা লেট স্টেজে চিকিৎসাঃ

এই পর্যায়ে অপারেশনের ভূমিকা খুবই কম। কোন কোন ড়্গেত্রে সীমিত পরিমাণে অপারেশন করা চলে। তবে সিস্টেমিক থেরাপীর ভূমিকাই বেশি।

উপসংহারঃ স্তôন ক্যান্সার নির্ণয়ে রোগীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি আর চিকিৎসার ফলাফল বহুলাংশে নির্ভর করে রোগী কোন স্টেজে বা পর্যায়ে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়েছেন তার উপরে। এখানে সার্জনেরও ভূমিকা আছে তা হলো দ্রম্নত সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে রোগীকে উপযুক্ত চিকিৎসার নির্দেশনা দেয়া। তাই রোগীদের উচিত সচেতন হওয়া, স্তôনে টিউমার সনাক্ত বা অস্বাভাবিক যে কোন অবস্থা পরিলড়্গিত হইলে কাল বিলম্ব না করে বিশেষজ্ঞ সার্জনের স্মরণাপন্ন হওয়া।

০ ডাঃ এসএম নজরম্নল ইসলাম

জুঃ কনসালটেন্ট-সার্জারী

শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল।

চেম্বার-১৩৪ সদর রোড বরিশাল।

কণ্ঠনালীর ক্যান্সার

একজন রোগী মোঃ রহমান কঙ্বাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সমুদ্রে স্নান করার কয়েকদিন পর তার গলার স্বর পরিবর্তন হয়। তারপর তিনি আমাদের কাছে আসেন। আমরা পরীড়্গা করে দেখলাম, তার জ্বর আছে, বিশেষ করে কণ্ঠনালিতে প্রদাহ আছে এবং লাল হয়ে গেছে, যাকে বলা হয় একিউট ল্যারিনজাইটিস। আমরা কিছু ওষুধ ব্যবস্থাপত্র দিলাম এবং কয়েকদিন কথা কম বলার উপদেশ দিলাম। সাতদিন পর পরবর্তী ভিজিটে দেখা গেল তিনি অনেক ভালো হয়ে গেছেন। কণ্ঠনালীর প্রদাহ অনেক কমে গেছে এবং কথা বলতে পারছেন।

স্বর পরিবর্তনের

অন্যান্য কারণ

ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে কণ্ঠনালীর প্রদাহ হতে পারে যা রহমানের হয়েছে। আরো অন্য অনেক কারণে কণ্ঠনালীর স্বর পরিবর্তন হয়। যেমনÌৈভাকাল কর্ড পলিপ, ভোকাল কর্ড নডিউল, ভোকাল কর্ড টিউমার বা ক্যান্সার, থাইরয়েড হরমোন যদি কমে যায় (হাইপোথাইরয়ডিজম), কণ্ঠনালীর নার্ভ (রিকারেন্ট ল্যারিনজিয়াল নার্ভ) প্যারালাইসিস হলে এবং আরো অন্য কারণে স্বর পরিবর্তন হয়। অনেকদিন ধরে উচ্চস্বরে কথা বলা বা যাদের বেশি কথা বলতে হয় যেমনহৈকার, রাজনীতিবিদ, শিড়্গক, অনেক সন্তôানের মা এবং শিল্পীদেরও স্বর পরিবর্তন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি মানসিক কারণেও কথা বলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। গলার স্বর যদি বসে যায় এবং তা যদি ১৫ দিনের চিকিৎসায় ভালো না হয়, তাহলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই গলার স্বর পরিবর্তন হলে নিকটবর্তী নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া অত্যন্তô জরম্নরি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা নিলে ভোকাল কর্ড ক্যান্সার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।

০ প্রফেসর ডাজ্ঝ এম আলমগীর চৌধুরী

নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন

অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি

মেডিক্যাল কলেজ ফর উইমেন এন্ড হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা।

পায়ুপথের ক্যান্সার অপারেশনে ডাবল স্টেপলিং পদ্ধতি
অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক

পরিপাকতন্ত্রের শেষ অঞ্চলকে আমরা বলি বৃহদন্ত্র। রেকটাম (পায়ুপথ) ও মলদ্বার। সার্জারির যে শাখাটি এই অঙ্গগুলোর সমস্যা সমাধানে নিবেদিত তাকে বলে কলোরেকটাল সার্জারি। পায়ুপথের বিভিন্ন রোগের ভেতর ক্যান্সার হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক রোগ। এই ক্যান্সারের বিভিন্ন উপসর্গের মধ্যে রয়েছে মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন, খুব সকালে পায়খানার বেগ হওয়া, মলত্যাগের পরও মল রয়ে গেছে এরূপ অনুভূতি হওয়া, পায়খানার সাথে রক্ত ও মিউকাস (আম, শ্লেষ্মা, ল্যালপা) যাওয়া, পেটে ব্যথা, মলদ্বারে ব্যথা হওয়া ইত্যাদি। এ রোগ শনাক্ত করতে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে পাইলস সংক্রান্ত বিভ্রান্তি। রেকটাস ও মলদ্বারের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর বেশিরভাগই ‘আপনার কী সমস্যা?’ জিজ্ঞাসার জবাবে বলবেন­ তার পাইলস হয়েছে। এদের কেউই এনালফিশার, ফিস্টুলা বা ক্যান্সার হয়েছে বললে সহজে মানতে চান না। পায়ুপথের ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য কোলনস্কোপি, সিগময়েভোস্কপি ও বেরিয়াম এনেমা এক্স-রে করা প্রয়োজন। যত তাড়াতাড়ি এ রোগ ধরা পড়ে চিকিৎসা তত কার্যকর ও সহজ হয়। এ রোগের প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন। অনেক শিক্ষিত লোকের ধারণা ক্যান্সার অপারেশন না করাই ভালো। অপারেশন করলে আরো ছড়িয়ে যায়। এ ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক। এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে বিভিন্ন অঙ্গের ক্যান্সারের প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন। বিভিন্ন অঙ্গের ক্যান্সার হলে অপারেশনের সময় কতটুকু কাটতে হবে এবং কী কী টিস্যু এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে তার নীতিমালা নির্ধারণ করা আছে। অপারেশনের পর ক্ষেত্র ভেদে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেয়ার প্রয়োজন হয়।
রেকটাম ক্যান্সারের প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন। এমনকি যদি মনে হয় যে অনেক দিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং রোগী আর মাত্র কয়েক মাস বাঁচবেন তাহলেও অপারেশন করা উচিত। এতে জীবনধারণের গুণগত মানের উন্নতি হয় এবং রোগী প্রশান্তি লাভ করেন।
এই ক্যান্সার চিকিৎসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত বিষয়টি হলো এই যে, এই অপারেশনের পর রোগী তার স্বাভাবিক পথে মলত্যাগ করতে পারবেন নাকি পেটে মলত্যাগের ব্যাগ (কলোস্টমি) লাগাতে হবে? মলদ্বারের গভীরে ক্যান্সার হলে সাধারণত পেটে ব্যাগ লাগাতে হয় না। কিন্তু ক্যান্সার মলদ্বারের কাছাকাছি হলে পেটে ব্যাগ লাগানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং কখনো কখনো অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। যে ক্ষেত্রে ক্যান্সার অপারেশনের পর হাত দিয়ে সেলাই করে রেকটাম জোড়া দেয়া যায় না সে ক্ষেত্রে কৌশলগত সমস্যাকে অতিক্রম করার জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের স্টেপলিং যন্ত্র বানিয়েছেন। এসব যন্ত্রের সাহায্যে হাত দিয়ে সেলাই করা সম্ভব নয়। এমন সব ক্ষেত্রে বৃহদান্ত্র ও বেকটাম জোড়া লাগিয়ে দেয়া যায়। যার কারণে পেটে কলেস্টমি না করে পারা যায় অর্থাৎ রোগী স্বাভাবিক পথে মলত্যাগ করতে পারবেন। এ যন্ত্রগুলো আমেরিকার দু’টি কোম্পানি বানিয়ে থাকে। বিভিন্ন আকৃতির এগুলো হয়ে থাকে, যেমন­ সাকুêলার স্টেপলার, লিনিয়ার স্টেপলার ও রোটিকুলেটর। যন্ত্রগুলো কিছুটা ব্যয়বহুল। উন্নত দেশে এ যন্ত্রের সাহায্যে রেকটাম ক্যান্সারের বেশিরভাগ অপারেশন হয়ে থাকে। কারণ আর্থিক খরচের ব্যাপারটি তাদের কাছে অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইতোমধ্যে দেশেও এ পদ্ধতিতে অপারেশন হচ্ছে। এতে রোগীর মলদ্বার কেটে ফেলতে হয়নি।
আমাদের দেশে পায়ুপথ ক্যান্সার উন্নত দেশ অপেক্ষা অনেক কম হয়। মলদ্বারে রক্ত গেলেই পাইলস হয়েছে এ ধারণা ত্যাগ করতে হবে। এ রক্ত যাওয়ার কারণ অনেক হতে পারে, যেমন­ পাইলস, এনালফিশার, পলিপ, ক্যান্সার, ফিস্টুলা, আলসারেটিভ কোলাইটিস ইত্যাদি। মলদ্বারে রক্ত যায় এমন প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি সিগময়েডোস্কপি পরীক্ষা করা হয় তাহলে বেশিরভাগ ক্যান্সার আগে ধরা পড়বে এবং চিকিৎসা সহজ ও কার্যকর হবে। সাধারণত দেখা যায় মলদ্বারে রক্ত গেলে পাইলস ভেবে এর ভুল চিকিৎসায় দীর্ঘ দিন কাটিয়ে দেন রোগীরা। অবস্থা যখন বেগতিক দেখেন তখনই তারা ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে রাজি হন। ততক্ষণে ক্যান্সার বিস্তৃতি লাভ করে যায়।
লেখকঃ বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বারঃ জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫, সাতমসজিদ রোড, (জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড) ধানমন্ডি, ঢাকা
ফোনঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬

মোটা মহিলাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির জার্নাল ’ঈধহপবৎ’ পত্রিকায় স্থূলতার সাথে মহিলাদের ওভারিয়ান ক্যান্সারের সম্পর্কিত এক গবেষণা তথ্য প্রকাশিত হয়। এতে উলেস্নখ করা হয় মোটা বা স্থূলকায় মহিলাদের ওভারিয়ান ক্যান্সার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। স্থূলকায় মহিলাদের ওভারিয়ান ক্যান্সার থেকে আরোগ্যের সম্ভাবনাও স্বাভাবিক ওজনের মহিলাদের চেয়ে কম। স্থূলকায় মহিলাদের ফ্যাট সেলের গঠনও তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক ওজনের মহিলাদের ফ্যাট সেল থেকে ভিন্ন।

সমীড়্গায় গবেষকরা অভিমত দেন যে ফ্যাট কোষ এমন ধরনের হরমোন বা প্রোটিন তৈরি করে যা ওভারিয়ান ক্যান্সারগ্রস্তô রোগীর ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। (উৎজ্ঝ খর)। উলেস্নখ্য, আমেরিকা ও উত্তর ইউরোপে ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্তô রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

বিজ্ঞানীরা স্থূলতার (ঙনবংব) সাথে ক্যান্সারের জৈবিক যোগসূত্র খুঁজতে তৎপর এবং এ ব্যাপারে কোষের মলিকিউলার পর্যায়ে গবেষণা অব্যাহত রয়েছে।


ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার

ডা.এম এ হাসেম ভূঞা
ব্রেস্ট মা ও মেয়েদের মাতৃত্ব ও সৌন্দর্যের প্রতীক শৈশব থেকে নারীত্ব এই সময়ের মধ্যে পূর্ণতা লাভ করে। নারী এই ক্যান্সার মরণব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে যেকোনো সময় এবং সচেতন না হলে কেড়ে নিতে পারে আপনার মহামূল্যবান প্রাণ। সারা বিশ্বে ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা অনেক। এখন প্রতি বছরই বেড়ে চলছে।
ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয় ?
নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো জানা যায়নি। তাই একাধিক কারণকে স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী করা হয়ঃ
জেনিটিক ফ্যাক্টরঃ যেমনন্ধ মা-খালা এদের থাকলে সন্তানদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ষ অবিবাহিতা বা সন্তানহীনা মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি।
ষ একই রকমভাবে যারা সন্তানকে কখনো স্তন্য পান করাননি তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি হয়।
ষ ৩০ বছরের পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন তাদের স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা একজন কমবয়সী মা হওয়া মহিলাদের থেকে অনেক বেশি।
ষ বয়স যত বাড়ে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি তত বৃদ্ধি পায়।
ষ অল্প বয়সে সন্তান নিলে, দেরিতে মাসিক শুরু হলে, তাড়াতাড়ি মাসিক বন্ধ হলে স্তন ক্যান্সার বেড়ে যায়।
ষ একাধারে অনেক দিন জন্ম নিরোধক বড়ি খেলেও স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। উপরোক্ত কারণগুলো ব্রেস্ট ক্যান্সারের সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে এগুলো একমাত্র কারণ নয়।
কি করে স্তন ক্যান্সার বুঝবেনঃ
১। সাধারণত ৩০ বছরের পূর্বে এই রোগ কম হয়।
২। বেশিরভাগ রোগী বুকে চাকা নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়।
৩। বুকে চাকা সেই সাথে কিছু কিছু রোগী ব্যথার কথাও বলে থাকে।
৪। কখনো কখনো বুকে চাকা এবং বগলেও চাকা নিয়ে রোগ আসতে পারে।
৫। নিপল ডিসচার্জ এবং নিপল ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়াও এ রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
৬। কিছু কিছু রোগী বুকে ফুলকপির মতো ঘা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে।
৭। অনেক সময় যে বুকে ব্যথা সেদিকের হাত ফোলা নিয়ে আসতে পারে।
৮। এগুলো ছাড়া ব্রেস্ট ক্যান্সার দূরবর্তী কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে এমন উপসর্গ নিয়ে আসে, যেমনঃ হাড়ে ব্যথা, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও জন্ডিস ইত্যাদি।
কিভাবে রোগ নির্ণয় করা যাবেঃ
১। মেমোগ্রাম বা স্তনের বিশেষ ধরনের ঢ-ৎধু
২। স্তনের আলট্রাসনোগ্রাম
৩। চাকা বা টিউমার থেকে রস নিয়ে পরীক্ষা করলে এই রোগ ধরা পড়বে।
ব্রেস্ট ক্যান্সারে কী কী চিকিৎসা আছেঃ
সম্ভব হলে সার্জারি করাই উত্তম। তা ছাড়া কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপি, হরমোন থেরাপি ইত্যাদি।
কিভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ধরা যায়ঃ
১। ৩০ বছরের বেশি বয়স হলে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করতে হবে কোনো চাকা পাওয়া যায় কি না। চাকা পাওয়া গেলে সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
২। বয়স ৫০-এর উপরে হলে বছরে এক বার মেমোগ্রাম করতে হবে।
৩। কোনো প্রকার সন্দেহ হলে ডাক্তারের কাছে দেখা করতে হবে।
এই রোগ এড়ানোর উপায় কী?
যেহেতু রোগটির নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। তাই এই রোগ এড়ানোর জন্য কয়েকটি নিয়ম মেনে চলার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়ঃ
১। ৩০ বছর বয়স থেকে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করুন।
২। রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলে সে ক্ষেত্রে মেমোগ্রাফি করুন। যেমনঃ ফ্যামিলিতে ব্রেস্ট ক্যান্সার থাকলে।
৩। ৩০ বছর বয়সের মধ্যে প্রথম সন্তান জন্ম দেয়ার চেষ্টা করুন।
৪। সন্তানকে বুকের দুধ পান করান।
৫। টাটকা শাকসবজি ও ফল খান এবং ধূমপান ত্যাগ করুন।
৬। সন্দেহ হলে ক্যান্সার সার্জনের শরণাপন্ন হন।
উপসংহারঃ মনে রাখবেন প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নিরূপণ করলে এবং চিকিৎসা করলে আপনি অনেক দিন সুস্থ থাকবেন। সার্জারি করার সময় টিউমারটি বগলে লসিকাগ্রন্থিসহ অপসারণ করলে এই রোগ আবার দেখা দেয়ার সম্ভাবনা খুব কম। অসম্পূর্ণভাবে টিউমার অপসারণ করলে এই রোগ আবার হতে পারে। বর্তমানে অপারেশন টেকনোলজি অনেক উন্নতি লাভ করছে, যার ফলে এই রোগের চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই সম্ভব। তা ছাড়া অ্যাডভান্স ব্রেস্ট ক্যান্সারে এখন টিউমার ফেলে দিয়ে ব্রেস্ট এরিয়া রিকন্সট্রাকশনও করা হচ্ছে।
লেখকঃ সহযোগী অধ্যাপক সার্জারি বিভাগ
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৭১১৫৩৩৩৭৩

কণ্ঠনালীর ক্যান্সার

প্রফেসর ডা. এম আলমগীর চৌধুরী
একজন রোগী মোঃ রহমান কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সমুদ্রে স্নান করার কয়েক দিন পর তার গলার স্বর পরিবর্তন হয়। তারপর তিনি আমাদের কাছে আসেন। আমরা পরীক্ষা করে দেখলাম, তার জ্বর আছে, বিশেষ করে কণ্ঠনালিতে প্রদাহ আছে এবং লাল হয়ে গেছে, যাকে বলা হয় একিউট ল্যারিনজাইটিস। আমরা কিছু ওষুধ ব্যবস্থাপত্র দিলাম এবং কয়েক দিন কথা কম বলার উপদেশ দিলাম। সাতদিন পর পরবর্তী ভিজিটে দেখা গেল তিনি অনেক ভালো হয়ে গেছেন। কণ্ঠনালীর প্রদাহ অনেক কমে গেছে এবং কথা বলতে পারছেন।
স্বর পরিবর্তনের অন্যান্য কারণ
ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে কণ্ঠনালীর প্রদাহ হতে পারে যা রহমানের হয়েছে। আরো অন্য অনেক কারণে কণ্ঠনালীর স্বর পরিবর্তন হয়। যেমনন্ধ ভোকাল কর্ড পলিপ, ভোকাল কর্ড নডিউল, ভোকাল কর্ড টিউমার বা ক্যান্সার, থাইরয়েড হরমোন যদি কমে যায় (হাইপোথাইরয়ডিজম), কণ্ঠনালীর নার্ভ (রিকারেন্ট ল্যারিনজিয়াল নার্ভ) প্যারালাইসিস হলে এবং আরো অন্য কারণে স্বর পরিবর্তন হয়।
অনেকদিন ধরে উচ্চস্বরে কথা বলা বা যাদের বেশি কথা বলতে হয় যেমনন্ধ হকার, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, অনেক সন্তানের মা এবং শিল্পীদেরও স্বর পরিবর্তন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি মানসিক কারণেও কথা বলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
গলার স্বর যদি বসে যায় এবং তা যদি ১৫ দিনের চিকিৎসায় ভালো না হয়, তাহলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই গলার স্বর পরিবর্তন হলে নিকটবর্তী নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা নিলে ভোকাল কর্ড ক্যান্সার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।
লেখকঃ নাক কাল গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, মেডিক্যাল কলেজ ফর উইমেন অ্যান্ড হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৭১৫৫৩৮৬১৯
গ্রন্থনাঃ ডা. তামান্না জামান


ক্যান্সার পুরম্নষের যা জানা দরকার

বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার সম্পর্কে জানা থাকলে এবং কি করলে তা প্রতিরোধ করা বা প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা যায় তার উপায় জানা থাকলে, আপনি আপনার জীবন বাঁচাতে পারেন। ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আগেই যদি সনাক্ত করা যায়, তাহলে ক্যান্সারের বিরম্নদ্ধে অল্প বিস্তôর কিছু করার সুযোগ পাওয়া যায়।

১। ফুসফুসের ক্যান্সারঃ

কাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশী?

ধূমপায়ী পুরম্নষরা ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্তô হওয়ার ড়্গেত্রে সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। তাঁদের তামাক সংশিস্নষ্ট অন্যান্য রোগ যেমন- হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং শ্বাসকষ্ট ইত্যাদিতে আক্রান্তô হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে। ফুসফুসের ক্যান্সারের শতকরা ৮০ ভাগেরই কারণ ধূমপান। ‘এসবেটস’ নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্তô হবার সম্ভাবনা বিদ্যমান।

সুরড়্গার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থাঃ প্রতিরোধ

যদি ধূমপায়ী হন তাহলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে দ্রম্নত ধূমপান ত্যাগ করম্নন। যদি অধূমপায়ী হন তাহলে কখনো ধূমপান শুরম্ন করবেন না।

২। মুখের ক্যান্সারঃ

কাদের হবার সম্ভাবনা বেশী?

যারা বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা অথবা খৈনি খান; পানের সাথে জর্দা, দোক্তা বা তামাক পাতা অথবা ফিমাম খান বা গুল ব্যবহার করেন, তাঁদের মুখের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা খুব বেশী। অপরদিকে যাদের দাঁতের গড়ন ত্রম্নটিযুক্ত অথবা দাঁত কোনো কারণে ভেঙ্গে যায় কিন্তু ভাঙ্গা অংশ ভালোভাবে মসৃন করা হয় না তাদেরও মুখের ক্যান্সার হতে পারে।

সুরড়্গার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থাঃ প্রতিরোধ

ধূমপানসহ তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যাদির সব ধরনের ব্যবহার বর্জন করলে মুখের ক্যান্সার থেকে রড়্গা পাওয়া সম্ভব। প্রতিদিনই নিয়ম করে আয়না দেখে নিজেই নিজের মুখ পরীড়্গা করা দরকার। যদি মুখের মধ্যে কোনো জায়গায় লাল অথবা সাদা ছোপ ছোপ দেখা যায় তবে যত শীঘ্র সম্ভব ডাক্তার দেখাতে হবে। দাঁত ত্রম্নটিপূর্ণ হলে অথবা ভেঙ্গে গেলে তা মুখের ভেতরে ড়্গত সৃষ্টি করতে পারে এর যথাবিহীত চিকিৎসা নিতে হবে।

৩। স্বরযন্ত্রের ক্যান্সারঃ

স্বরযন্ত্রের অধিকাংশ ক্যান্সারই কারসিনোমা, অন্য জাতের (সারকোমা) ক্যান্সার স্বরযন্ত্রকে আক্রমণ প্রায় করে না বললেই চলে। স্বরযন্ত্রের মধ্যস্থিত ভোকাল কর্ডে ক্যান্সার ধরা পড়ে যায় সবচেয়ে তাড়াতাড়ি। এমন রোগে প্রথমেই গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যায়, যাকে আমরা অনেক সময় বলি গলা ভেঙ্গে যাওয়া। যা কোনো ওষুধেই সারে না। তাই কারও স্বরভঙ্গা তিন সপ্তাহেও না সারলে তাঁর উচিত কোনও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা। এই ক্যান্সার সময়ে ধরা পড়লে সেরে উঠার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। কারণ ভোকাল কর্ডের ক্যান্সার স্বরযন্ত্র থেকে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে অনেক সময় নেয়। স্বরযন্ত্রের অন্যত্র কোথাও ক্যান্সার হলে তা সাধারণত ধরা পড়ে অনেক দেরীতে, কারণ তাতে না থাকে যন্ত্রণা; গলা ধরা, কাশি বা অন্য কোনও লড়্গণ। স্বরযন্ত্রের ক্যান্সারের কারণে গলার আশেপাশের গ্রন্থি ফুলতে পারে অথবা কানে ব্যথাও হতে পারে। বয়স্কদের তাই গলায় কাঁটা ফোটার মতো অনুভূতি, একনাগাড়ে গলা খুসখুস করা কাশি, গিলতে কষ্ট, গলায় বা কানে ব্যথা এবং সর্বোপরি স্বরভঙ্গ হলেই উচিত প্রথমেই কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা।

৪। খাদ্যনালীর ক্যান্সারঃ

পুরম্নষদের মধ্যে এই ক্যান্সার বেশী দেখা যায়। সাধারণত যাদের বয়স ৬০-এর কোঠায় তাঁদের মধ্যেই ত্রম্নটি দেখা যায়। কেন হয়?? বেশী মদ্যপান, ধূমপান, নিয়মিত বেশী ঝাল মসলা বা বেশী গরম খাদ্য ভড়্গণ, দীর্ঘকাল এ্যাসিডিটিতে ভোগা ইত্যাদি কারণে। স্বরযন্ত্রের মতো খাদ্য নালীতে কারসিনোমা বেশী হয়।

প্রধান লড়্গণ খাদ্য গ্রহণে কষ্ট, প্রথম প্রথম সেই কষ্ট সীমিত থাকে কেবল শক্ত খাবার-দাবার গ্রহণের, পরে রোগী যে কোন তরল খাদ্য গ্রহণেও অসমর্থ হয়ে পড়ে। এন্ডোস্কোপী (ঊহফড়ংপড়ঢ়ু) করে এই রোগ ধরা যায় খুব সহজেই। রোগ নির্ণয় সহজ হলেও খাদ্য নালীর ক্যান্সারের চিকিৎসা বেশ জটিল, সার্জারী (সম্ভাব্যড়্গেত্রে), কেমোথেরাপী ও রেডিওথেরাপীর মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।

৫। প্রস্টেট ক্যান্সারঃ

কাদের হবার সম্ভাবনা বেশী?

৫০ বা তার বেশী বয়সী সকল পুরম্নষই প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্তô হবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। অবশ্য শতকরা ৭০ ভাগ ড়্গেত্রে এ রোগ ৬৫ বছরের বেশী বয়সীদের মধ্যেই দেখা যায়। কোনো পুরম্নষের নিকট আত্মীয়ের মধ্যে এক বা একাধিক ব্যক্তির প্রস্টেট ক্যান্সার হবার ইতিহাস থাকলে তার এই ক্যান্সারে আক্রান্তô হবার ঝুঁকি থাকে। আবার যাঁরা বেশী পরিমাণে প্রাণীজ চর্বি খান তাদেরও প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।

সুরড়্গার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থাঃ সূচনায় সনাক্তকরণ

রক্তে “প্রস্টেট স্পেসিফিক এন্টিজেন”- এর মাত্রা (চঝঅ) পরীড়্গা এবং আঙ্গুল দিয়ে মলাশয় পরীড়্গা (উজঊ)-এর মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়েই প্রস্টেট ক্যান্সার সনাক্ত করা যায়। এ ব্যাপারে আপনাকে কি করতে হবে সে বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করম্নন।

৬। বৃহদন্ত্রের ক্যান্সারঃ

কাদের হবার সম্ভাবনা বেশী?

বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার সাধারণত ৫০ বছরের বেশী বয়সীদের মাঝেই দেখা যায়। যাদের এই রোগের ব্যক্তিগত বা পারিবারিকভাবে ইতিহাস আছে এবং মলাশয় বা মলদ্বারে ‘পলিপ’ আছে অন্যদের তুলনায় তাদের এই রোগে আক্রান্তô হবার সম্ভাবনা বেশী। যাঁরা বেশী পরিমাণে চর্বিযুক্ত খাবার খান, যাঁদের দেহের ওজন বেশী, যারা ধূমপান করেন এবং যারা শরীরিক পরিশ্রম করেন না বা সচরাচর নিষ্ত্র্নিয় থাকেন তাঁদের ড়্গেত্রে বৃহদন্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্তô হবার সম্ভাবনা সমধিক।

সুরড়্গার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থাঃ প্রতিরোধ এবং সূচনায় রোগ নির্ণয়

বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার প্রায় সব ড়্গেত্রেই “পলিপ” বা ‘গেজ’-এর মাধ্যমে শুরম্ন হয়। ক্যান্সার হওয়ার পূর্বেই পরীড়্গার মাধ্যমে ‘পলিপ’ সনাক্ত করা গেলে এ রোগ থেকে রড়্গা পাওয়া যায়। যদি ক্যান্সারে পরিণত হওয়ার পূর্বেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ‘পলিপ’ অপসারণ করা যায় তাহলে এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। অল্প চর্বিযুক্ত খাবার এবং বেশী ফল ও শাক-সবজি গ্রহণ এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। ৫০ বছর বয়সের শুরম্ন থেকে সবার জন্য নিচের পরীড়্গাগুলো করতে হবেঃ

০ প্রতিবছর ‘মলে রক্তের উপস্থিতি পরীড়্গা’ (ঋঙইঞ)

০ প্রতি পাঁচ বছর অন্তôর “সিগমোইডোস্কোপের সাহায্যে বৃহদন্ত্র পরীড়্গা”

০ প্রতি পাঁচবছর অন্তôর “ডবল কনট্রাষ্ট বেরিয়াম এনিমা”

০ প্রতি দশ বছর অন্তôর “বৃহদন্ত্রের পরীড়্গা” (ঈড়ষড়যড়ংপড়ঢ়ু)


ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করবেন কিভাবে

ব্রেস্ট বা ও মেয়েদের মাতৃত্ব ও সৌন্দর্যের প্রতীক শৈশব থেকে নারীত্ব এই সময়ের মধ্যে পূর্ণতা লাভ করে। নারীর এই স্তôন ক্যান্সার মরণব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে যে কোন সময় এবং সচেতন না হলে কেড়ে নিতে পারে আপনার মহামূল্যবান প্রাণ।

ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয়?

নির্দিষ্ট কোন কারণ এখনো জানা যায়নি তাই একাধিক কারণে স্তôন ক্যান্সার এর জন্য দায়ী করা হয়ঃ

০ মা-খালা এদের থাকলে সন্তôানদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

০ অবিবাহিতা বা সন্তôানহীনা মহিলাদের মধ্যে স্তôন ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি।

০ একইরকমভাবে যারা সন্তôানকে কখনো স্তôন্য পান করাননি তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি হয়।

০ ৩০ বছরের পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন তাদের স্তôন ক্যান্সারের প্রবণতা একজন কমবয়সী মা হওয়া মহিলাদের থেকে অনেক বেশি।

০ বয়স যত বাড়ে স্তôন ক্যান্সার এর ঝুঁকি তত বৃদ্ধি পায়।

০ অল্প বয়সে বাচ্চা নিলে, দেরীতে মাসিক শুরম্ন হলে, তাড়াতাড়ি মাসিক বন্ধ হয়ে স্তôন ক্যান্সার প্রকোপ বেড়ে যায়।

০ একাধারে অনেক দিন জন্ম নিরোধ বড়ি খেলে ও স্তôন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

উপরোক্ত কারণগুলো ব্রেস্ট ক্যান্সারের সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে এগুলোই একমাত্র কারণ নয়।

কি করে স্তôন ক্যান্সার বুঝবেনঃ

১। সাধারণত ৩০ বছর-এর পূর্বে এই রোগ কম হয়।

২। বেশিরভাগ রোগী বুকে চাকা নিয়ে ডাক্তার-এর শরণাপন্ন হয়।

৩। বুকে চাকা সেই সাথে কিছু কিছু রোগী ব্যথার কথাও বলে থাকে।

৪। কখনো কখনো বুকে চাকা বগলেও চাকা নিয়ে রোগী আসতে পারে।

৫। নিপল ডিসচার্জ এবং নিপল ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়াও এ রোগের লড়্গণ হিসাবে দেখা দিতে পারে।

৬। কিছু কিছু রোগী বুকে ফুলকপির মত ঘা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে।

৭। অনেক সময় যে বুকে ব্যথা সেদিকের হাত ফোলা নিয়েও আসতে পারে।

৮। এগুলো ছাড়া ব্রেস্ট ক্যান্সার দূরবর্তী কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে এমন উপসর্গ নিয়ে আসে যেমনহৈাড়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও জন্ডিস ইত্যাদি।

কিভাবে রোগ নির্ণয় করা যাবেঃ

১। মেমোগ্রাম বা স্তôনের বিশেষ ধরনের এরে।

২। স্তôনের আলট্রাসনোগ্রাম

৩। চাকা বা টিউমার থেকে রস (ঋঘঅঈ) নিয়ে পরীড়্গা করলে এই রোগ ধরা পড়বে।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের কি কি চিকিৎসা আছে

সম্ভব হলে সার্জারি করাই উত্তম। তাছাড়া কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপি, হরমোন থেরাপি ইত্যাদি।

কিভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ধরা যায়

১। ৩০ বছরের বেশি বয়স হলে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীড়্গা করতে হবে। কোন চাকা পাওয়া যায় কিনা। চাকা পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

২। বয়স ৫০-এর উপরে হলে বছরে ১বার মেমোগ্রাম করতে হবে।

৩। কোন প্রকার সন্দেহ হলে ডাক্তার-এর কাছে দেখা করতে হবে।

এই রোগ এড়ানোর উপায় কি?

যেহেতু রোগটির নির্দিষ্ট কোন কারণ জানা যায়নি। তাই এই রোগ এড়ানোর জন্য কয়েকটি নিয়ম মেনে চলার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়ঃ

১। ৩০ বছর বয়স থেকে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীড়্গা করম্নন।

২। রি ফ্যাক্টর থাকলে সে ড়্গেত্রে মেমোগ্রাফি করম্নন। যেমনফ্যৈামিলিতে ব্রেস্ট ক্যান্সার থাকলে।

৩। ৩০ বছর বয়সের মধ্যে ১ম সন্তôান জন্ম দেয়ার চেষ্টা করম্নন।

৪। সন্তôানকে বুকের দুধ পান করান।

৫। টাটকা শাক-সবজি ও ফল খান।

৬। সন্দেহ হলে ক্যান্সার সার্জনের শরণাপন্ন হন।

৭। ধূমপান ও এলকোহল পরিহার করম্নন।

উপসংহারঃ

মনে রাখবেন প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নিরূপণ করলে এবং চিকিৎসা করলে আপনি অনেকদিন সুস্থ থাকবেন। সার্জারি করার সময় টিউমারটি বগলে লসিকা গ্রন্থিসহ অপসারণ করলে এই রোগ পুনর্বার দেখা দেয়ার সম্ভাবনা খুব কম। অসম্পূর্ণভাবে টিউমার অপসারণ করলে এই রোগ আবার হতে পারে। বর্তমানে অপারেশন টেকনোলজি অনেক উন্নতি লাভ করেছে যার ফলে এই রোগের চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই সম্ভব। তাছাড়া এডভান্স ব্রেস্ট ক্যান্সারে এখন টিউমার ফেলে দিয়ে ব্রেস্ট এরিয়া রিকস্ট্রাকশনও করা হচ্ছে।

০ ডাঃ এম এ হাসেম ভুঁইয়া
জেনারেল ও কলোরেক্টাল সার্জন, সহযোগী অধ্যাপক, সার্জারি,
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।


রেকটাম ক্যান্সারের চিকিৎসা

অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক

আমাদের পরিপাকতন্ত্রের শেষ অংশটুকুকে আমরা বলি রেকটাম বা মলাশয় ও মলদ্বার। এখানে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়, এর উপসর্গগুলো প্রায় এক রকম। রোগীর কথা শুনে কখনো রোগ নির্ণয় করা যায় না। যেমন­ মলদ্বারে রক্ত যায় যেসব রোগে তার মধ্যে রয়েছে পাইলস, এনাল ফিশার, রেকটাম ক্যান্সার, ফিস্টুলা, পলিপ, আলসারেটিব কোলাইটিস, ডাইভার্টিকুলোসিস, কোলাইটিস, রক্ত আমাশয় ইত্যাদি। বিশেষ ধরনের এন্ডোসকোপিক পরীক্ষা ছাড়া কোনো ডাক্তারের পক্ষে এগুলো শনাক্ত করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশে বছরে ১২-১৪ হাজার লোক বৃহদন্ত্র ও রেকটাম ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। উন্নত দেশে এর হার সাত গুণ বেশি। রেকটাম ক্যান্সারের উপসর্গই হচ্ছে পায়খানায় রক্ত যাওয়া, মাঝে মাঝে ডায়রিয়া আবার কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া, খুব সকালে মলত্যাগের বেগ হয়, পেটে ব্যথা হয় এবং পেট ফাঁপ দিয়ে ফুল উঠতে পারে। দীর্ঘ দিন থাকলে মলদ্বারে ব্যথা এবং প্রস্রাবে অসুবিধা হতে পারে। মলের সাথে আম ও মিউকাস যায় কোনো কোনো সময়। এ ক্যান্সার চিকিৎসার প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো এটিকে পাইলস বা আমাশয় মনে করা, গ্রাম্য ডাক্তার, কবিরাজ ও হোমিও চিকিৎসায় গ্যারান্টি সহকারে ক্যান্সার নির্মূলের আশ্বাস, মহিলারা এজাতীয় সমস্যা কাউকে বলতে বিব্রতবোধ করেন, অপারেশন ভীতি এবং পেটে কলোস্টমি করে ব্যাগ লাগাতে হবে এ ভয়ে।
রেকটাম ক্যান্সার রোগীদের জন্য সুখবর এবং অত্যন্ত আশার কথা এই, যে কারণে আগে রোগীরা অপারেশন করতে রাজি হতেন না তা হলো,পেটে স্থায়ী কলোস্টমি করা। কিন্তু আমরা ইতোমধ্যেই দেশে অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে কলোস্টমি ছাড়া এই অপারেশন সফলভাবে সম্পাদন করেছি। এ প্রযুক্তিতে দু’টি যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়, যা কিছুটা ব্যয়বহুল এবং একবার ব্যবহার করে ফেলে দিতে হয়। এ ধরনের অপারেশন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে আমরা নিয়মিত করেছি। আমরা আশা করি, এ যন্ত্র ব্যবহারের ফলে এখন ৭০-৮০% রেকটাম ক্যান্সার রোগী উপকৃত হবেন। রোগীরা যদি সচেতন হন এবং খুব আগেভাগে আসেন তা হলে খুব কমসংখ্যক রোগীর কলোস্টমি করতে হবে। ইতোমধ্যে বহু ক্যান্সার রোগী দেখেছি যারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছেন। শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ডা. মোস্তফা সিরাজুদ্দৌলা একজন রোগী পাঠিয়েছেন। রোগীর বয়স ৫৫। বাড়ি নওগাঁ। ক্যান্সার বেড়ে গিয়ে মলদ্বারে বড় বড় গোটা হয়েছে। রক্ত মাত্র ২৮%। তার স্ত্রী জানালেন, গত তিন বছর ধরে বসে ভাত খেতে পারেন না। তার পরও কত বললাম অপারেশন করতে; কিন্তু তিনি ভয়ে রাজি না। বলেন যে, কবিরাজ বলেছে ভালো হয়ে যাবে। যা হোক, অপারেশনের পর এখন তিনি বসে ভাত খেতে পারছেন। হয়েছেন সম্পূর্ণ সুস্থ।
অন্য একজন অল্পবয়সী রোগী এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে। আত্মীয়স্বজন তাকে কাঁধে করে নিয়ে এসেছেন। গায়ে রক্ত নেই, অসম্ভব শুকিয়ে গেছে, সারা শরীরে হাড্ডি ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। কিছু দিন আগে শুধু কলোস্টমি করা হয়েছে। আসল ক্যান্সার রয়ে গেছে। মলদ্বারে তিনটি ফিস্টুলা দিয়ে অনবরত ময়লা পড়ছে। কলোস্টমির মুখটি বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু মুখে দিলেই পেট ফুলে যায়। আমাকে অপারেশন করতে অনুরোধ করলেন। বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখলাম, অপারেশনের সম্পূর্ণ অযোগ্য। অতঃপর বিভিন্ন ধরনের ব্যয়বহুল চিকিৎসা করে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে রোগীর বিশেষ অনুরোধে অপারেশন করে ক্যান্সারটি অপসারণ করি। এ ক্ষেত্রে তাকে অজ্ঞান না করেই অপারেশন করি, তবে পেট ও নিচের অংশ অবশ করা হয়। অপারেশনের পর রোগী ভালোভাবে খেতে পারছেন। ক্যান্সারটি অপসারণ করায় তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয় এবং রোগী বেশি খুশি হন। পুরনো ক্যান্সারে রোগী সাধারণত কয়েক বছরের বেশি বাঁচেন না। কিন্তু অপারেশনের পর যত দিন বাঁচেন তত দিন অনেকটা আরামে থাকেন।
অপারেশন করে ক্যান্সারটি অপসারণ না করলে রোগী
বিভিন্ন জটিলতায় ভোগেন, যেমন গভীর রক্তশূন্যতা এমনকি হঠাৎ বেশি রক্তরক্ষণ হয়ে মারা যেতে পারেন। মলদ্বার, কোমর ও পায়ে অনবরত ব্যথা, প্রস্রাবের অসুবিধা, মহিলাদের যোনিপথ দিয়ে রক্ত ও মল বের হওয়া, খেতে না পেরে শুকিয়ে হাড্ডিসার হয়ে যাওয়া, পেট ফুলে ওঠা, পায়খানা করতে না পারা, কিডনি অকেজো হওয়া, লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি। রেকটাম ও মলদ্বারের বিশেষজ্ঞদের মতে, রেকটাম ক্যান্সার যত পুরনোই হোক অপারেশন করতে হবে। এমনকি যদি ক্যান্সার লিভারে ছড়িয়ে গিয়ে থাকে অথবা যদি এমন মনে হয় যে, রোগী কয়েক মাসের বেশি বাঁচবেন না তবুও অপারেশন করতে হবে। তাতে রোগী যত দিন বেঁচে থাকেন আরামে থাকবেন এবং বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পাবেন। অপারেশনের পর রোগী কত দিন বেঁচে থাকবেন এ ব্যাপারটি আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেয়াই ভালো। তবে ক্যান্সার লিভারে ছড়িয়ে গেলে তারপর অপারেশন করলেও অনেক রোগী তিন-চার বছর বেঁচে থাকেন। অন্য দিকে যখন ক্যান্সার শুধু রেকটামে সীমাবদ্ধ থাকে তখন অপারেশন করলে ৯৩ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।
ইতোমধ্যে দু’জন অল্প বয়সী মহিলা রোগী দেখেছি। বয়স ২০-২২ বছর। আড়াই বছর ধরে মলদ্বারের সমস্যা। কিন্তু লজ্জায় পরিবারের কাউকে বলেননি। এখন প্রচণ্ড ব্যথা হওয়ায় সমস্যার কথা জানাতে বাধ্য হয়েছেন। পরীক্ষা করে এদের ক্যান্সার পাওয়া গেছে। কিন্তু রোগীদের ধারণা ছিল তাদের পাইলস হয়েছে।
একজন পুলিশ অফিসারের স্ত্রীও পার্শ্ববর্তী দেশে যান এ চিকিৎসার জন্য। রোগীর ভাষ্য অনুযায়ী ওখানকার ডাক্তাররা তাকে আমার কাছে এসে চিকিৎসা করতে বলেছেন।
শেষ কথাঃ রেকটাম ক্যান্সার শুরুতে ধরা পড়লে অপারেশনের ফলাফল খুবই ভালো। দেরিতে ধরা পড়লে অপারেশনের পর ক্ষেত্রভেদে রেডিও থেরাপি বা কেমোথেরাপি দেয়া যায়। আমি রোগীদের অনুরোধ করতে চাই, সব কিছুকে পাইলস মনে করে বসে থাকবেন না। রেকটাম ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় অপারেশন করলে ৯৩ শতাংশ রোগী আরোগ্য লাভ করেন এবং বেশিরভাগ রোগীর পেটে ব্যাগ লাগানো বা কলোস্টমি করা প্রয়োজন হয় না।
লেখকঃ বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, চেয়ারম্যান, কলোরেক্টাল সার্জারি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বারঃ জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ৫৫, সাতমসজিদ রোড ধানমন্ডি , ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৭২৬৭০৩১১৬, ০১৭১৫০৮৭৬৬১