Wednesday, June 11, 2008

Heart (হৃৎরোগ)

কসমেটিক কার্ডিয়াক সার্জারি

ডা. এম আখতার হোসেন
লেখকঃ কনসাল্ট্যান্ট-কার্ডিয়াক সার্জন, স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।

হার্টের অপারেশন! সে তো বাঁচা-মরার অপারেশন; নাম শুনলেই চোখের সামনে একটা ভয়ঙ্কর ছবি ভেসে ওঠে। যেখানে রোগী ভালো হওয়াটাই আসল কথা সেখানে সৌন্দর্য বা কস্‌মেটিক বিষয়টি ভাববার সুযোগ কোথায়? না, এই ধারণা এখন আর সত্যি নয়। যুগ এগিয়েছে, দক্ষতা বেড়েছে এবং হার্টের প্রায় সমস্ত অপারেশনই এখন অনেক সাফল্যের সাথে করা হচ্ছে। কাজেই এই মুহূর্তে আপনিও ভাবতে পারেন যদি একই অপারেশন সাফল্যের সাথে রোগীর সৌন্দর্য রক্ষা করে করা যায় তবে তা করবো না কেন? কারণ একজন কিশোরী বা যুবতী মহিলা অথবা কম বয়সী ছেলে বা মেয়ে তার ওপেন হার্ট অপারেশন দরকার; সেই ক্ষেত্রে কসমেটিক বিষযটিকে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে। স্বাভাবিকভাবে ওপেন হার্ট অপারেশন বুকের মাঝ বরাবর লম্বা করে কেটে করা হয়। তার ফলে বুকের মাঝখানে লম্বা একটা দাগ কখনো উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে।
দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে কিছু কিছু অপারেশন খপঢ়ঢ় ওষংথঢ়মংপ পদ্ধতিতে ভিন্ন প্রয়োগের মাধ্যমে আরো ছোট করে কেটে করা যায়। কিছু অপারেশন যেমন হার্টের ছিদ্র (অঝউ & ঠঝউ), গময়ড়থলংথলংপ অপারেশন বুকের মাঝ দিয়ে না কেটে বুকের ডান পাশে ব্রেস্ট এর নিচে দিয়ে কেটে করা যায়। ফলে অপারেশনের দাগ ঢাকা পড়ে যায়। তেমন দৃষ্টিগোচর হয় না। আবার কিছু অপারেশন যেমন অঝউ, ঠঝউ এবং ঠথলংপ এবং বাইপাস অপারেশন বুকের মাঝখান দিয়ে মাত্র ৩-৪ ইঞ্চি কেটে করা যায়। তার ফলে ১০-১২ ইঞ্চি লম্বা দাগের পরিবর্তে ৩-৪ ইঞ্চি দাগ অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে হবে এবং তা ঢেকে রাখাও সহজ হয়। এই খপঢ়ঢ় ওষংথঢ়মংপ পদ্ধতি যে শুধু সৌন্দর্যই রক্ষা করে তা নয়, বরং রোগীর আরো কিছু উপকার করে। এই পদ্ধতিতে অপারেশন পরবর্তী উপসর্গ, জটিলতাও তুলনামূলক কম হয়। কিছু কিছু বাইপাস (ঈঅইএ) অপারেশন বুকের বাম পাশ দিয়ে ৪-৫ ইঞ্চি কেটে করা যায়। এই সিদ্ধান্ত সার্জনকেই নিতে হয়, কোন রোগীকে এই পদ্ধতিতে করা যাবে।
এই পদ্ধতির সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও আছে। তবে অসুবিধাগুলো মূলত সার্জনের। ছোট জায়গায় সুন্দরভাবে কাজ করতে হয়। এ জন্য সার্জনকে অধিকতর দক্ষ হতে হয়।
স্কয়ার হস্‌পিটালে আমরা কিছু অপারেশন এই পদ্ধতিতে সফলভাবে করেছি। ছবিতে একজন সাত বছর বয়সের শিশু রোগীর অঝউ অপারেশন বুকের ডান পাশ দিয়ে ৪ ইঞ্চি কেটে করেছি, যার ফলে বুকের মাঝখানের শক্ত হাড় অক্ষত রয়েছে এবং অপারেশন পরবর্তী চলাফেরা সহজতর হয়েছে। ছোট কাটা দাগ বুকের পাশে থাকার কারণে কম দৃষ্টিগোচর হয়। ছবিতে আরেকজন রোগীর বয়স ২২ বছর। ঠঝউ অপারেশন বুকের মাঝখানের নিচের অংশে সাড়ে ৩ ইঞ্চি কেটে অর্থাৎ অর্ধেক হাড় কেটে করা হয়েছে। ফলে উপরের অর্ধেক ঝয়পড়ষৎশঅক্ষত রয়েছে এবং ছোট দাগ পোশাক দ্বারা ঢেকে রাখাও সহজ। অপারেশনজনিত ক্ষত কম হওয়ার কারণে আরোগ্য লাভও কিছুটা দ্রুত হয়।
আরেকজন রোগী বয়স ৩৮ বৎসর, বাইপাস অপারেশন বুকের বামপাশে ৪ ইঞ্চি কেটে করা হয়েছে। এই পদ্ধতিকে গওউঈঅই বলে। ফলে তার ঝয়পড়ষৎশ অক্ষত রয়েছে এবং আরোগ্য লাভ অনেক দ্রুত হয়েছে।
মনে রাখবেন, সকলের জন্য না হলেও কম বয়সী ছেলে বা মেয়ে, কিশোর-কিশোরী বা সৌন্দর্যসচেতন মহিলাদের ওপেন হার্ট সার্জারি অনেকটা সৌন্দর্য রক্ষা করে ঈসঢ়শপয়মধ অহহড়সথধভ এর মাধ্যমে করা যেতে পারে। এর ফলে অন্যান্য সুবিধার পাশপাশি রোগীর মানসিক প্রশান্তিও বৃদ্ধি পাবে।

সঠিক খাবার, সুস্থ হৃদযন্ত্র
ডাজ্ঝ এস কে অপু
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
ময়মনসিংহ চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়
বেশি বেশি চর্বি খেলেন, শাকসবজি মোটেই পছন্দ করেন না, আর ফাস্টফুড খেয়ে বেড়াচ্ছেন। চিকিৎসকের কাছে এসে বলছেন-হার্ট অ্যাটাক থেকে মুক্ত থাকার ওষুধ দিন। কিন্তু তাতে হার্ট অ্যাটাক এড়াতে পারবেন না। হার্ট অসুস্থ হবেই। তাই হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও খাদ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া। কিছু কিছু খাবার যা হার্টের রোগ হওয়ার ঝুঁকি যেমন বাড়ায় তেমনি কিছু খাবার হার্টের জন্য উপকারী, দরকারিও বটে।
প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি খান। হার্ট সুস্থ থাকবে। কারণ, ফলমূল ও শাকসবজিতে প্রচুর পটাশিয়াম থাকায় উচ্চরক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। উচ্চরক্তচাপ না হলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও কমে যায়। সুস্থ থাকবে হার্ট।
মাছের ডিম, মগজ, পনির, ডিমের কুসুম, মাখন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। যদি প্রয়োজন না হয় পাতে বাড়তি লবণ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। দুধ খাবেন। কিন্তু ননি তোলা দুধ ও দই খান। হার্ট সুস্থ থাকবে।
মগজ বাদ দিয়ে বেশি বেশি মাছ খান। সামুদ্রিক মাছ আরও ভালো। কারণ, মাছের তেলে আছে ‘ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড’, যা হার্টের সুস্থতার জন্য বেশি প্রয়োজন। তাই বেশি মাছ খান। মাংস না খাওয়াই ভালো।
তবে সম্পূর্ণ নিষেধ নেই। সপ্তাহে একবার কম পরিমাণে খান, অর্থাৎ যতটুকু অভ্যস্ত তার অর্ধেকের চেয়ে কম খান। চর্বি সঙ্গে থাকলে তা ফেলে দিন। কখনোই মুরগির চামড়া খাবেন না। তাহলে হার্টে ও দেহে চর্বিও জমবে না। হবেন সুন্দর দেহের অধিকারী, আকর্ষণীয়।
গাঢ় সবুজ শাকসবজি, মাছ, শালগম, সয়াবিন, শুকনা শিমের বিচি বেশি খাবেন। এগুলোতে আছে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম। এই ম্যাগনেসিয়াম হার্টের সুস্থতা বাড়ায়।
যদি এই খনিজ পদার্থটির অভাব হয় তখন হার্টের রক্তনালি করোনারি ধমনি সংকুচিত হয়ে পড়ে হার্ট অ্যাটাক ত্বরান্বিত করে। যারা বেশি মানসিক চাপে থাকেন ও অতিরিক্ত পরিশ্রম করে, তাদের দেহ থেকে ম্যাগনেসিয়াম বেশি বের হয়ে যায় ও শরীরকে নিস্তেজ করে। তাই এই খনিজ পদার্থযুক্ত খাবার খেলে হার্টের সুস্থতা বাড়বে।
শিমের বিচি ও মটরশুঁটিতে থাকে ‘নিয়াসিন’ নামের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, যা কোলস্টেরল কমিয়ে আনে অর্থাৎ মন্দ চর্বি অল্প ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল) হ্রাস পায়। তাই বেশি করে খান। আবার বেশি ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল) দেহের জন্য উপকারী। ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার যেমন লেবু, আমলকী, কাঁচামরিচ, পেয়ারা, সবুজ শাকসবজি বেশি খেলে এইচডিএল বাড়ে।
হার্ট অ্যাটাক কমায়। তেমনি আঁশযুক্ত খাবার, ফল, সবজি, শস্যখাবার রক্তের চর্বি কমিয়ে আনে। অল্প-স্বল্প বাদাম খেতে পারেন। এটি অসম্পৃক্ত চর্বি। ভালো সয়াবিন তেল খান। কিন্তু টিনজাত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলো বিপজ্জনক। টাটকা খাবার খান। দেহের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। যতটুকু সম্ভব হাসুন। দুশ্চিন্তা বা উত্তেজনা নয়। সবার সঙ্গে গল্প করুন। গান গাইতে পারেন মনের আনন্দে। মজার বই পড়ুন। সঙ্গে পরিশ্রমও করুন। ভালো থাকবে দেহ। ভালো থাকবে মন।


হার্টের ভাল্ব সার্জারি বিভ্রান্তি ও বাস্তবতা

ডা. এম. আখতার হোসেন
লেখকঃ কনসালট্যান্ট-কার্ডিয়াক সার্জন, স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা

হার্টের ভাল্ব সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা পরিষ্কার নয়। অনেকে মনে করেন ভাল্ব হার্টের শক্তির উৎস, এটা হার্টকে শক্তি জোগায়। কাজেই ভাল্ব দুর্বল হলে তা পরিবর্তন করে নিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আসলে হার্টের ভাল্ব ব্যাটারি বা আলো জাতীয় কিছু নয়, এগুলো অনেকটা একমুখী দরজার মতো যা এক দিকে খোলে এবং বিপরীত দিকে বন্ধ হয়। আপনারা পানির লাইনে ভাল্ব দেখেছেন যা পানির চলার দিক নিয়ন্ত্রণ করে। এই ভাল্বগুলো পানি চলতে সাহায্য করে কিন্তু ফিরে আসতে বাধা দেয়। হার্টের ভাল্বগুলো ঠিক একইভাবে হার্টের ভেতরে রক্ত চলার দিক নিয়ন্ত্রণ করে।
হার্টের ৪টি ভাল্ব

হার্টে ৪টি ভাল্ব বা দরজা থাকে এবং এর ২টি ভাল্ব বেশির ভাগ সময় অসুস্থ হয়। ভাল্বে সাধারনত দুুই ধরণের অসুস্থতা দেখা যায়- (১) ভাল্ব সরু হওয়ার- ফলে সরু দরজা দিয়ে রক্তের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং প্রয়ে্‌্‌াজনীয় পরিমাণ রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। (২) ভাল্ব ষবধশ করা- কিছু রক্ত পেছনের দিকে চলে যায় এবং সন্মুখ দিকের রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এই দুই ধরনের অসুখই সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় পরিমাণ রক্তপ্রবাহের ক্ষমতা হ্রাস করে এবং হার্ট অতিরিক্ত কাজের মাধ্যমে শরীরের চাহিদা মোতাবেক রক্তপ্রবাহের চেষ্টা করে। এই অতিরিক্ত কাজ করতে করতে এক সময় হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সমস্ত শরীরের সঠিক রক্তপ্রবাহ বিঘ্নিত হয়। এ অবস্থায় রোগীর শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে, বুক ধড়ফড় করা, কাশি, বুকে ব্যথা, শরীরে পানি জমাসহ নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়।

এখন প্রশ্ন হলো কেন ভাল্ব অসুস্থ হয়? অনেক কারণে এই রোগ হতে পারে তবে আমাদের দেশে প্রধানতঃ
বাত জ্বরের জটিলতা থেকে এই রোগ বেশি হয়। বাত জ্বর যদি প্রাথমিক অবস্থায় সঠিকভাবে চিহ্নিত না হয় অথবা চিহ্নিত হওয়ার পরেও যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা করা না হয় তখন অনেক দিন পরে হার্ট ভাল্বের অসুখ শুরু হয়। অথচ সঠিকভাবে বাত জ্বরের চিকিৎসা করা হলে ভাল্বের অসুখ পুরোপুরি ফেরানো সম্ভব। সুখবর হলো মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন হয়েছে এবং ভাল্বের অসুখ আগের চেয়ে অনেকাংশে কমে এসেছে।
জন্মগত ত্রুটির কারণে কখনো ভাল্বের অসুখ হতে পারে। এই্‌ ক্ষেত্রে পূর্বসতর্কতা রোগ প্রতিরোধে তেমন সহায়ক হয় না বরং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থতা রক্ষা করাই মুখ্য উদ্দেশ্য।
বেশি বয়সে ভাল্বে ক্যালসিয়াম জমে কখনো কখনো ভাল্ব শক্ত হয়ে যায় তখন ভাল্বের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়। এই ক্ষেত্রেও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে রোগী সুস্থ থাকতে পারেন কিন্তু পূর্বসতর্কতা রোগ প্রতিরোধে তেমন কার্যকরী হয় না।

ভাল্বের অসুখ হলে একজন ভালো হার্টের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আপনার রোগের গুরুত্ব অনুসারে সঠিক এবং সময়োপযোগী চিকিৎসা নির্ধারণ করবেন। ভাল্বের অসুখ শুনেই ভীত হবেন না, বর্তমানে এই রোগের অত্যন্ত কার্যকরী, গ্রহণযোগ্য সুচিকিৎসা আছে, যার মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব। অযথা বিভ্রান্ত হবেন না, হার্টের অসুখ মনে হলে একজন দক্ষ হার্টের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


ডায়াবেটিস রোগির হার্ট অ্যাটাক


ডায়াবেটিস মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো হার্ট অ্যাটাক। ডায়াবেটিস মানব দেহের প্রাচীনতম রোগগুলির মধ্যে অন্যতম। আরোটিয়াস ১৫০ খৃৃষ্টাব্দে এ রোগের নাম দেন ডায়াবেটিস, যার অর্থ সাইফন। তার মতে এ রোগে রোগীর ওজন কমে যায় ও পচনশীল ঘা হয়। ১৯০৯ সালে ডি মেয়ার অগ্ন্যাশয়ের হরমোনকে ইনসুলিন নামকরণ করেন। ডায়াবেটিস হলে ইনসুলিন তৈরি করার ড়্গমতা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় অথবা পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন তৈরিতে ব্যর্থ হয় নতুবা পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হলেও ইনসুলিন তার কাজ করতে পারে না। ১৯৮৬ সালে মাকুêনে ঈষ্ট থেকে জৈব সংশেস্নষণ করে হিউমেন ইনসুলিন তৈরী করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। চলতি শতাব্দীর গোড়ার দিক পর্যন্তô বহু লোক মৃত্যুবরণ করেছেন এই নীরব ঘাতক ব্যাধির আক্রমণে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে যথেষ্ট তথ্য ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে, ফলে ডায়াবেটিসে মৃত্যুর হার অনেক কমে গিয়েছে।

ডায়াবেটিস কিঃ গস্নুকোজ আমাদের শরীরের শক্তির মূল উৎস। শরীর ইনসুলিন নামের একটি হরমোন তৈরী করে। ইনসুলিন রক্ত থেকে অতিরিক্ত গস্নুকোজ বের করে নিয়ে শরীরের কাজে লাগাতে সাহায্য করে এবং রক্তে গস্নুকোজের মাত্রা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখে।

আমাদের রক্তে গস্নুকোজের মাত্রা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে থাকার কথা। যখন রক্তের গস্নুকোজের মাত্রা সার্বড়্গণিকভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি থাকে তখন সে অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে।

আমাদের অগ্ন্যাশয়ের মধ্যে বিটা সেল নামের বিশেষ ধরনের কোষ থাকে। এই বিটা সেল থেকে ইনসুলিন নামক হরমোন তৈরী হয়। ইনসুলিন আমাদের রক্তের গস্নুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ইনসুলিন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং কোষকে, রক্ত থেকে গস্নুকোজ নিতে সাহায্য করে। এর ফলে রক্তে গস্নুকোজের মাত্রা সব সময়ই একটি সহনশীল মাত্রায় থাকে। এমনকি খাবার খাওয়ার পরপরই রক্তে হঠাৎ করে যে গস্নুকোজ বেড়ে যায় তাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ডায়বেটিস প্রধানত দু’ধরনের। টাইপ-১ ও টাইপ-২। বেশিরভাগ মানুষ টাইপ -২ ডায়াবেটিসে ভুগে থাকে।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসে শরীরের ইনসুলিন তৈরি করার ড়্গমতা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন তৈরিতে ব্যর্থ হয় নতুবা পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হলেও ইনসুলিন তার কাজ করতে পারে না।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসঃ টাইপ-১ ডায়াবেটিসে শরীরের ইনসুলিন তৈরি করার ড়্গমতা একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে রোগীর রক্তে গস্নুকোজের পরিমাণ নির্ধারিত পরিমাণ থেকে অনেক বেড়ে যায়। টাইপ -১ ডায়াবেটিস সাধারণত শিশু অবস্থায় অথবা বাল্যকালেই দেখা দেয়। ডায়াবেটিস রোগীর শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ টাইপ ১-ডায়াবেটিসে ভুগে থাকে। এ ধরনের রোগীদের ইনসুলিন ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়। এটিকে ইনসুলিন নির্ভরশীল ডায়াবেটিস বলা হয়। এটি সাধারণত ৪০ বছরের কম বয়সের লোকদের হয়ে থাকে। এদের কিটোএসিডোসিস নামক এক প্রকার জটিলতা হতে পারে। যার সঠিক চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হতে পারে।

টাইপ-২ ডায়াবেটিসঃ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন তৈরিতে ব্যর্থ হয় নতুবা পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরী হলেও ইনসুলিন তার কাজ করতে পারে না। ডায়াবেটিস রোগীর শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ভুগে থাকে। ২০২৫ সালে নাগাদ টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি। অনেক সময় ডায়াবেটিসের লড়্গণ মৃদু হয়ে থাকে যার ফলে এটি ধরা পড়তে অনেক সময় লাগে। এটি মধ্য বয়সে অথবা তারও পরে ধরা পড়ে। টাইপ -২ ডায়াবেটিস এটি প্রধানত বংশগত রোগ। এটিকে ইনসুলিন অনির্ভরশীল ডায়াবেটিস বলে। সাধারণত ৪০ বছরের বেশি বয়সের লোকদের এটা হয়ে থাকে। যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, শারীরিক প্ররিশ্রমের কাজ করেন না, নিকট-আত্নীয়দের ডায়াবেটিস আছে-তাদের এ ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। ইনসুলিন অনির্ভরশীল ডায়াবেটিস চিকিৎসায় সাধারণত ইনসুলিনের প্রয়োজন হয় না। এড়্গেত্রে খাদ্য অভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন, ব্যায়াম বা হাঁটাহাটি ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণে বেশি ভূমিকা রাখে। ড়্গেত্রবিশেষে খাবার ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

হার্ট এ্যাটাক কিঃ

হৃদপিন্ডের রক্তনালীতে চর্বি জমে রক্তচলাচলে বাধা সৃষ্টি করে যে রোগের উৎপত্তি হয় তাকে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বলে। হার্টএ্যাটাক বা মায়োককার্ডিয়াল ইনফ্রাকশান এই রোগের একটি বহিঃপ্রাকাশ। হৃদপিন্ডের রক্তনালীতে চর্বি জমে ও রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত চলাচল একেবারে বন্ধ হলে হৃদপিন্ডের পেশীর কার্যড়্গমতা নষ্ট হয়ে যায়, একে মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশান বলা হয় । মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো এই রোগটি। যুক্তরাজ্যে এক সমীড়্গ্যায় দেখা যায় ১/৩ ভাগ পুরম্নষ এবং ১/৪ ভাগ মহিলা ইসকেমিক হার্ট ডিজিজে মারা যায়। ইসকেমিক হার্ট ডিজিজে হার্টএ্যাটক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশান ছাড়া ক্রনিক স্ট্যাবল এনজিনা ও আনস্ট্যাবল এনজিনা হতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীর হার্ট অ্যাটাকঃ হার্ট আøাটাকের একটি প্রধান উপসর্গ বুকের মাঝখানে তীব্র ব্যাথা হওয়া । কিন্তôু অনেক সময় ডায়াবেটিস রোগীর হাট অ্যাটার্ক হলেও বুকে ব্যথা অনুভব হয় না। শতকরা ২৫% ডায়াবেটিস রোগীর ব্যথাহীন বা নিরব হার্ট অ্যটাক হয়। রোগী অনেক সময় বুঝতেও পারে না সে কখন হার্ট অ্যাটক করেছেন, ফলে হঠাৎ মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। ডায়াবেটিস রোগীর নীরব মৃত্যু তাহলে হার্ট অ্যাটাক থেকে হতে পারে। তবে কিছু উপসর্গ থেকে ধারণা করা যায়। হঠাৎ করে প্রচুর ঘেমে যাওয়া, শরীর দুর্বল লাগা, শ্বাস কষ্ট হওয়া অথবা রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া ডায়াবেটিসের জটিলতায়ও এধরনের সমস্যা হতে পারে। ইসিজি করলেই হার্ট অ্যাটাকে বুঝা যায়। ব্যথাহীন হার্ট অ্যাটাকের রোগীরা অনেক পরে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসা শুরম্ন হতে বিলম্ব হয়।

ডায়াবেটিস হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান কারণঃ হার্ট অ্যাটাকের পাঁচটি প্রধান কারণ হলো ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য ও পজেটিভ ফেমিলি হিসট্রি। ডায়াবেটিস রোগীর ৩ থেকে ৫গুণ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা বেশী থাকে। ডায়াবেটিস থাকলে মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের প্রিমেনুপোজার প্রোটেকশান থাকে না। ডায়াবেটিসের ফলে রক্তনালীতে চর্বি জমে রক্তনালী সরম্ন করে, যার জন্যে হার্টের রক্ত চলাচলে বাধাসৃষ্টি হয়। অনেক দিনের ডায়াবেটিস, বয়সে বেশী, সিস্টোলিক উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার ইনসুলিনিমিয়া, রক্তে ট্রাইগিস্নসারাইডের পরিমাণ বেশি আর এইচডিএল বা ভাল কোলেস্টেরেলের পরিমান কম থাকলে, প্রোটিনিউরিয়া ইত্যাদি থাকলে ডায়াবেটিস রোগিদের হার্ট অ্যটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। রক্তে সুগারের পরিমাণ বেশী থাকলে তাদের রক্তে অণুচক্রিকা খুব তাড়াতাড়ি রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। এর ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের করোনারী রক্তনালী বন্ধজনিত হৃদরোগ বেশী হয়।

৭৫% ডায়াবেটিস রোগির হার্ট অ্যাটাকের সময় বুুকে ব্যথা হয়। শেষ রাত ও সকাল ৯টার আগ পর্যন্তô হার্ট অ্যাটাকের হার অনেক বেশী। তাই শেষ রাতে বা ভোরের সময়কার বুকে ব্যথাকে অবহেলা করা ঠিক নয়।

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায়ঃ হার্ট অ্যাটাকের জন্য কিছু কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা দায়ী। এগুলো এড়িয়ে চলতে পারলে হার্ট অ্যাটাক অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়। যেমনঃ ১· ধূমপান সম্পূর্ণ বর্জন করম্নন। সাদা পাতা, জর্দা, নস্যি ইত্যাদি পরিহার করম্নন। যারা ধূমপান করেন, ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করা যায় না। নিজের ইচ্ছা শক্তিকে প্রবল করম্নন এবং এখনই ধূমপান একেবারে ছেড়ে দিন। ২· যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, নিয়মিত ওষুধ সেবন করম্নন ও রক্তচাপ পরীড়্গা করাবেন। অনেকে উচ্চ রক্তচাপ কমে গেলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করেন। পুনরায় রক্তচাপ বেড়ে গেলে ওষুধ খেয়ে থাকেন। এ ধরনের অনিয়মিত ওষুধ সেবন ও রক্তচাপ উঠানামা হার্ট অ্যাটাক হতে সহায়তা করে্‌। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রেণে রাখবেন। ৩· যাদের ডায়াবেটিস আছে, নিয়মিত ওষুধ সেবন করবেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। যাদের বয়স ৪০-এর বেশি এবং জানেন না ডায়াবেটিস আছে কিনা, তারা রক্ত পরীড়্গা করে জেনে নিন ডায়াবেটিস আছে কিনা। ৪· হাইপারলিপিডেমিয়া বা রক্তে ড়্গতিকারক কোলেস্টেরলের আধিক্য থাকলে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চর্বি যাতীয় খাবার কম খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন কমানো এবং ড়্গেত্রবিশেষে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রক্তের কোলেস্টেরল স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসতে হবে। ু৫· মদ্যপান হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় তাই মদ্যপান পরিহার করতে হবে। ৬· জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি হার্ট অ্যাটাকের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি ড়্গেত্রবিশেষে পরিহার করে অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। ৭· ওজন ঠিকা রাখা। বাড়তি ওজন অবশ্যই কমাতে হবে। ওজন কমানোর জন্য মিষ্টি খাবার ও চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিয়ে খাবার গ্রহণ করতে হবে। শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখার মাত্রা হলো বিএমআই ১৮·৫-২৪·৯ কেজি/মি২ মধ্যে রাখা। আর কোমরের ব্যাস পুরম্নষের ড়্গেত্রে ৪০ ইঞ্চি বা তার কম এবং মহিলাদের ড়্গেত্রে ৩৫ ইঞ্চি বা তার কম রাখতে হবে। ৮· পরিমিত ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। কমপড়্গে দৈনিক ৩০ থেকে ৬০ মিনিট করে সপ্তাহে ৩-৪ বার হাটা, জগিং, সাইকেল চালানো অথবা অন্যান্য মুক্ত বাতাসে ব্যায়াম করা যেতে পারে। উত্তম হলো সপ্তাহে প্রতিদিন এ পরিমাণ ব্যায়াম করা।

৯· হাইরিক্স গ্রম্নপ রোগীদের নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করা। ১০· হার্টের জন্য সহনীয় খাবার খাওয়া যেমন- লবণ কম খাওয়া, চর্বি জাতীয় খাবার কম খাওয়া, শাক-সবজি ও ফলমূল বেশী খাওয়া। ১১· নিয়মিত ঘুমানো, মানসিক দুঃচিন্তôা না করা, হঠাৎ উত্তেজিত না হওয়া। ১২· দুশ্চিন্তôামুক্ত, সুন্দর ও সাধারণ জীবন যাপন করম্নন। এতে হার্ট অ্যাটাকের হাত থেকে অনেকাংশে রড়্গা পাওয়া যাবে।

ম ডাঃ মোহাম্মদ শফিকুর রহমান পাটওয়ারী
মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ,
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।
আল-হেলাল হার্ট হসপিটাল লিঃ
১৫০ রোকেয়া সরণী, সেনপাড়া পর্বতা, মিরপুর-১০, ঢাকা।


হার্ট অ্যাটাকের বয়স
ডাজ্ঝ এস কে অপু
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
ময়মনসিংহ চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়
বেশির ভাগ লোকের ধারণা, পুরুষেরা বেশি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। মেয়েদের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার পরিসংখ্যান কম। কিন্তু করোনারি কেয়ার ইউনিটে গেলে দেখা যায়, সেখানে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যাই বেশি। সবার বয়সই পঞ্চাশের ওপরে। এ কথা মিথ্যা নয়, সার্বিকভাবে পুরুষের হার্ট অ্যাটাক নারীর চেয়ে বেশি হয়। আসলে এ ক্ষেত্রে পুরুষ বা নারী বলে কথা নেই। উভয়ই সমান ঝুঁকিতে আছে। হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অনেক কারণ আছে; কিছু কারণ পরিবর্তনযোগ্য। অর্থাৎ যে কারণে হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে, তা দূর করলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকবে না। আবার কিছু অপরিবর্তনযোগ্য কারণ আছে। যেমন-বয়স। বয়স তো হৃদরোগের অন্যতম কারণ। বয়স তো আর ফেরানো যাচ্ছে না। ছেলেবেলায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। তবে আজকাল বিভিন্ন কারণে ৩০ বছরের ওপরেই হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। কিন্তু ৩০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে দেখা যায়, নারীর চেয়ে পুরুষেরাই বেশি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। দেখা গেছে, আনুপাতিকভাবে দুজন পুরুষ ও একজন নারী আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে ৪৫ বছর বয়স আর নারীর ক্ষেত্রে ৫৫ বছর বয়সের পর হৃদরোগের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। সঙ্গে নারীদের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও পুরুষের সমান হয়। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে অনুপাত ১ঃ ১। নারীর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রথম জীবনে পুরুষের চেয়ে কম হলেও তা সারা জীবনের জন্য নয়।
বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, মেনোপজ হওয়ার আগ পর্যন্ত মেয়েদের হৃদরোগের ঝুঁকি কম থাকে; কিন্তু এর পর থেকেই ঝুঁকি ক্রমেই বাড়তে থাকে। যতই বয়স বাড়ে, ততই ঝুঁকি বাড়ে। ঠিক পুরুষের মতোই। বর্তমান গবেষণায় বলা হচ্ছে, নারীর মৃত্যু ও ভোগান্তির বড় কারণ হচ্ছে পুরুষের মতোই হার্ট অ্যাটাক।
বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, নারীকে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত হার্ট অ্যাটাক থেকে রক্ষা করে প্রাকৃতিক কিছু উপাদান। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইসট্রোজেন হরমোন। মেনোপজ হওয়ার আগ পর্যন্ত এ হরমোন মেয়েদের রক্তে উচ্চমাত্রায় থাকে। তাতে হার্টের করোনারি ধমনিতে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় না বা এসব ক্ষতিকর পদার্থের চলাচল সীমিত রাখে। ধমনিগুলো প্রসারিত রাখে। রক্ত জমাট বাঁধে না, তাই চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে না। হার্টে রক্ত প্রবাহিত হয় অবিরাম। কিন্তু মেনোপজের পর রক্তে ইসট্রোজেন হরমোন কমে যায়। রক্তের প্রাকৃতিক নিরাপত্তার অভাব ঘটে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বাড়ে।
৫৫ বছর বয়সের পর তাই নারী-পুরুষ সমানভাবেই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারে।


কোলেস্টেরল নিয়ে যত কথা
ডায়াবেটিসের প্রধান জটিলতা হল হৃদরোগ। এমন অনেকে আছে যাদের ঝুঁকিগুলো সীমা ছুঁই ছুঁই অর্থাৎ নড়ৎফবৎষরহব, এদেরকে কি চিকিৎসা করা উচিত। বেশির ভাগ লোকের কোনও লড়্গণ উপসর্গ থাকে না। আমরা যদি চিকিৎসা আগাম শুরম্ন করতে পারি এবং এরকম লোকের চিকিৎসা করতে পারি, কেবল মধ্যম ঝুঁকি বা উচ্চঝুঁকিই নয়, তাহলে অনেক ভালো হয়, অনেক ঘটনা এড়ানো যায়।

রক্তের কোলেস্টেরোল বেড়ে গেলে যে ভবিষ্যতে করোনারি হৃদরোগের সম্ভাবনা থাকে এ ব্যাপারটি বহুদিন থেকে জানা। এও পরে জানা গেছে রক্তে কোলেস্টেরোর-এর দুটো রকমও আছে। একধরনের কোলেস্টেরোল খুব ড়্গতিকর শরীরের জন্য এই মন্দ কোলেস্টেরোলের নাম হলো এলডিএল (খউখ) এ ধরনের কোলেস্টেরোল রক্তে বেড়ে গেলে হৃদরোগেরসমূহ সম্ভাবনা। তাই একে কমাবার জন্য নানান উপায় খুঁজেছেন বিজ্ঞানী। পথ্য, ব্যায়াম, ওষুধ সবকিছু চেষ্টা করা হয়েছে। হচ্ছেও। আবার আর একধরনের কোলেস্টেরোল আছে যেটি হৃদপিণ্ডের জন্য হিতকরী। এর নাম এইচডিএল (ঐউখ) কোলেস্টেরোল। এটি রক্তে বাড়লে হৃদপিণ্ড থাকে সুরড়্গিত। তাই ডাক্তাররা যখন কোলেস্টেরোলের জন্য চিকিৎসা দেন তখন তাদের উদ্দেশ্য থাকে, রক্তে খউখ বেশি থাকলে তা কমানো এবং ঐউখ কম থাকলে তা বাড়ানো।

একসময় ছিলো যখন কোলেস্টেরোল ও খউখ কমানোর প্রধান উপায় হিসেবে ভাবা হত খাদ্যে পরিবর্তন আনা এবং জীবনযাপন বদলানো। ওষুধকে তত গুরম্নত্ব দেয়া হতো না। আমি আশির দশকের শুরম্নতে কোলেস্টেরোল নিয়ে গবেষণা করছিলাম লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে অধ্যাপক বেরিলুই-এর তত্ত্বাবধানে তখন আমরা কোলেস্টেরোল কমাবার একটি নতুন পথ্যবিধিও উদ্‌ভাবন করেছিলাম। এই গবেষণাপত্রটি পশ্চিম বার্লিনে আন্তôর্জাতিক হৃদরোগ কংগ্রেসে পেশ করার সময় দেখা হয়েছিলো অনেক বড় বড় বিজ্ঞানীদের সঙ্গে ডাঃ জোসেফ গোল্ডস্টাইন ও রাউনের সঙ্গে (নোবেল বিজয়ী) এবং আর একজন বড় মাপের বিজ্ঞানী ডাঃ এনটোনিও গোটোর সঙ্গে এনটোনিও গোটো দীর্ঘ চলিস্নশ বছর ধরে এ বিষয়ে গবেষণা করে আসছেন এবং এখন তিনি আছেন উইল কর্নেল মেডিক্যাল কলেজের ডীন হিসেবে। সম্প্রতি কোলেস্টেরোল নিয়ন্ত্রণের নানা উপায় নিয়ে তিনি প্রশ্নোত্তরে মুখোমুখি হয়েছেন শ্রোতা-পাঠকদের। চোখে পড়লো। একে আশ্রয় করেই আজকের এ নিবন্ধ।

হৃদরোগের ঝুঁকিগুলো কমানোর ব্যাপারে বিবেচনা করলে ‘মন্দ কোলেস্টেরোল’ বা এলডিএল কোলেস্টেরোল কমানোর বিষয়টি বেশ গুরম্নত্বপূর্ণ। বিবেচনায় প্রথমে তো বটেই। এলডিএল হ্রাস করার সুফল অনেক। এলডিএল কমানোর ওষুধ হিসেবে স্ট্যাটিন ওষুধ এখন ব্যাপকভাবে প্রচলিত, এ ওষুধের প্রথম কাজ হলো এলডিএল মান হ্রাস করা। এর সুফল লড়্গ্য করলে দেখা যায়, এতে এথাবোক্লোরোসিস সমস্যার অগ্রগতি রোধ হয়, করোনারী সমস্যা সমাধান হয়, এনজিওপস্নাস্টির মত অপারেশন অনেকটাই এড়ানো যায়। যাদের ইতিমধ্যে করোনারী হৃদরোগ হয়েছে এদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি, হৃদরোগে মৃত্যু এবং সার্বিক মৃত্যুহার অনেকটা বোধ করা সম্ভব।

স্ট্যাটিন বাজারে আসার আগেও এলডিএল কমাবার জন্য পরামর্শ দিতেন ডাক্তাররা। তবে এ উদ্দেশ্যে স্ট্যাটিনকে উৎসাহিত করার আগে ক্লিনিশিয়ানরা বেশকিছু গবেষণাপত্র বিবেচনায় নিলেন। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত জগদ্বিখ্যাত একটি ট্রায়াল ((৪ঝঃৎরধষ, ঝপধহফরহধারধহ ংরসাধংঃধঃরহ ঝঁৎারাধষ ংঃঁফু) এতে কোলেস্টেরোল হ্রাস সুফলে বিস্তôৃত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো। দেখা গেলো স্ট্যাটিন ব্যবহার করলে করোনারী হৃদরোগে আক্রান্তô লোকদের আয়ু বাড়ানো সম্ভব হয়। এখান থেকে শুরম্ন হলো নতুন অভিযাত্রা।

এলডিএল হ্রাসের জন্য পথ্যও কম গুরম্নত্বপূর্ণ নয়। ঠিকমত খাবার খেয়ে এলডিএল কমানো সম্ভব ৫-১০%। বেশকিছুকাল ঠিকমত খাবার খেলে, খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। আর কোলেস্টেরোল কমাবার জন্য স্ট্যাটিন ওষুধ ব্যবহার করার সঙ্গে পথ্য পরামর্শও না মানলে স্ট্যাটিনের সুফল ঠিকমত পাওয়া যায় না। জাপানে লোকজনের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়ার চল থাকায় এদের স্ট্যাটিনের মাত্রা লাগে কম।

রক্তের কোলেস্টেরোল প্রবলভাবে হ্রাস করার একটি ব্যাপার আছে। এলডিএলকে খুব নিচে নামিয়ে আনা। যাদের ঝুঁকি বেশি, অর্থাৎ ইতিমধ্যে যাদের করোনারী হৃদরোগ হয়েছে, আর যাদের ঝুঁকি খুব বেশি অর্থাৎ যাদের হার্টএটাক হয়ে গিয়েছে এবং ডায়েবেটিস বা অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপও আছে সেসঙ্গে, এদের এলডিএল অনেক নিচে নামিয়ে আনা উচিত। পরামর্শ হল, যাদের ঝুঁকি বেশি, এদের এলডিএল ১০০-এর নিচে আনা উচিত, আর যাদের ঝুঁকি খুব বেশি, এদের এলডিএল ৭০ মিলিগ্রামের নিচে আনা উচিত।

এটি কি অর্জন করা সম্ভব, এ ও প্রশ্ন অনেকের?

অর্জন করা সম্ভব তবে অনেকের জন্য তা তেমন সহজ নয়। এলডিএল মান প্রথমে কত ছিলো এও একটি ব্যাপার। ওষুধ ছাড়াও সঙ্গে পথ্য ও ব্যায়াম একত্রে হলে তবে অর্জন হয় সূচিত। স্ট্যাটিনও তথ্য দিয়ে যদি লড়্গ্যে পৌঁছানো না যায় তাহলে অন্যান্য ওষুধ সেসঙ্গে যোগ করা যায়। এখন প্রশ্ন হতে পারে, এলডিএল মান এত নিচে নামালে লাভ কি?

সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পুরম্নষের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে কোলেস্টেরোল অনেক নিচে নামিয়ে আনা সফল হয় না। একটি ব্যাখ্যা এমন হতে পারে মেয়েদের চিকিৎসা করার সময় আমরা তত জোর দেই না। মনে করি যে এদের করোনারীর ঝুঁকি কম। আর এক ধরনের লোকদের চিকিৎসা কম হয় যেমন ডায়েবেটিক রোগী। ডায়েবেটিসের জন্য যেমন তারা ওষুধ খান তেমনি খাওয়া উচিত কোলেস্টেরোল কমাবার ওষুধও। ডায়েবেটিসের জন্য যেমন তারা ওষুধ খান তেমনি খাওয়া উচিত কোলেস্টেরোল কমাবার ওষুধও। ডায়েবেটিসের প্রধান জটিলতা হল হৃদরোগ। এমন অনেকে আছে যাদের ঝুঁকিগুলো সীমা ছুঁই ছুঁই অর্থাৎ নড়ৎফবৎষরহব, এদেরকে কি চিকিৎসা করা উচিত। বেশির ভাগ লোকের কোনও লড়্গণ উপসর্গ থাকে না। আমরা যদি চিকিৎসা আগাম শুরম্ন করতে পারি এবং এরকম লোকের চিকিৎসা করতে পারি, কেবল মধ্যম ঝুঁকি বা উচ্চঝুঁকিই নয়, তাহলে অনেক ভালো হয়, অনেক ঘটনা এড়ানো যায়।

রোগীদেরকে কি সারাজবিন স্ট্যাটিনের উপর থাকতে হয়?

নিশ্চয়। পুরো ফল পেতে হলে প্রথমে ওষুধ নিতে হয় দুই থেকে তিনবছর। একবার শুরম্ন করলে সারাজীবন এটি গ্রহণ করতে হয়।

অবশ্য অনেক স্ট্যাটিন ছেড়ে দেন। ভুল ধারণার জন্য অনেকের ধারণা রক্তের কোলেস্টেরোল একবার কমিয়ে আন্‌তে পারলে, আর ওষুধ খেতে হবে না। এটি সত্য নয়। গবেষণায় দেখা গেছে ওষুধ বন্ধ করে দিলে সুফল সামান্যকাল পাওয়া গেলেও কয়েকবছর পর তা আর থাকে না। আবার এমন হয় সুপথ্য খেয়ে, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরও কিছু লোকের এলডিএল বাড়ে। অনেকের বাড়ে বুড়ো হওয়ার জন্য, তখন রক্ত থেকে কোলেস্টেরোল পরিষ্কার করে আনার ড়্গমতা কমে যায় শরীরের। কিছু লোকের শরীরে এলডিএল তৈরি হয় বেশি অথচ নিষ্ত্র্নান্তô হতে পারে না সেজন্য প্রয়োজন হবে ওষুধ। স্ট্যাটিন ওষুধ খুব প্রয়োজনীয় এজন্য যে লড়্গ্যে পৌঁছানোর জন্য যারা প্রাণপণ চেস্টা করছে অথচ তখনও পারেনি তাদের জন্য এটি বড় সম্বল বটে।

এবার প্রসঙ্গ এইচডিএল নিয়ে। হিতকরী কোলেস্টেরোল এইচডিএল শরীর থেকে, রক্তনালী থেকে মন্দ কোলেস্টেরোল বের করে দেয়। ইদানীং টর্সেট্রাপিব নামে পরীড়্গামূলক একটি ওষুধ বেরিয়েছে, যার উপর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা উচ্চ আশা পোষণ করছেন যে এটি রক্তে এইচডিএল মান বাড়াবে তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে এই ওষুধ যারা গ্রহণ করেছেন তাদের করোনারী হচ্ছে বেশি। এজন্য এই ওষুধটি তেমন পরীড়্গিত হচ্ছে না।

তাহলে এইচডিএল কম হলে চিকিৎসা কি?

যেসব রোগীর এইচডিএল মান কম, এদেরকে স্ট্যাটিন দিলে লাভ হয়, এতে এইচডিএল বাড়ে ৫-১৫%। খুব বেশি না বাড়লেও মন্দ নয়, এছাড়া সে সঙ্গে এলডিএল কমাও যুক্ত হচ্ছে। আর একটি কার্যকর ওষুধ হলো নিয়াসিন, যা গ্রহণ করলে এইচডিএল বাড়ে ২০-২৫%। এ ওষুধ নিলে মুখে ও শরীরে উষ্ণতাবোধ হয়, সেজন্য এর ব্যাপক ব্যবহার নেই।

এইচডিএল বাড়াবার জন্য কোনও পর্থøনির্দেশ কি আছে?

আমরা জানি যে উচ্চ শর্করা খাদ্য এইচডিএল মান কমায়। এইচডিএল মান বাড়াতে ব্যায়াম খুব গুরম্নত্বপূর্ণ, ওজন হ্রাস করাও ট্রাইগিস্নসাবাইড কমাতেও ব্যায়াম উপকারী। এলডিএল কমাবার চেয়ে এইচডিএল বাড়াতে বরং ব্যায়াম বেশি উপকারী।

কোলেস্টেরোল সম্বন্ধে কি জানা উচিত আমাদের?

নিজের রক্তে মোট কোলেস্টেরোল, এলডিএল এ এইচডিএল মান জানা উচিত। আর সামগ্রিক ঝুঁকি কতটুকুঃ পারিবারিক ইতিহাস, ধূমপান, রক্তচাপ, ডায়বেটিস সবই ঝুঁকি নির্ধারণে সহায়ক।

ম অধ্যাপক ডাঃ শুভাগত চৌধুরী

পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস

বারডেম, ঢাকা।


হার্ট ফেইলিওর
শিশুদেরও হতে পারে হৃদরোগ
ডাজ্ঝ মোজ্ঝ মুজিবুর রহমান
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট
হৃৎপিণ্ড যেকোনো কারণে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলতে পারে। বড়দের যেমন হার্ট ফেইলিওর হয়, তেমনি জ্নের পর থেকে শিশুদেরও যেকোনো সময় হার্ট ফেইলিওর হতে পারে, কিংবা শিশুর হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা বিভিন্ন কারণে কমে যেতে পারে।
যেসব কারণে শিশুদের হার্ট ফেইলিওর হতে পারে
শিশুদের হার্ট ফেইলিওর বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন বয়সে হয়ে থাকে।
ায়োকার্ডাইটিসঃ এক থেকে তিন বছর বয়সে হয়ে থাকে।
* ট্রিওভেন্টিকুলার ক্যানাল ডিফেক্টঃ এটা ডাউন সিনড্রম; শিশুদের হয়ে থাকে।
* ভন্টিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট হার্ট ফেইলিওরঃ জ্নের দুই মাস পর হয়ে থাকে।
* ্যাটেন্ট ডাকটাস আর্টারিওসাস হার্ট ফেইলিওরঃ জ্নের দুই মাস পর হয়ে থাকে।
* ন্ডোকার্ডিয়াল ফাইব্রোইলামটোসিসঃ এক বছরের শিশুদের মধ্যে হার্ট ফেইলিওর দেখা দেয়।
* ুপ্রাভেন্টিকুলার টেকিকার্ডিয়াঃ এক বছরের নিচের শিশুদের হৃৎপিণ্ডের চলার গতি যদি মিনিটে ২২০ বারের বেশি হয়।
* টাটাল অ্যানোমেলাস পালমোনারিম ভেনাস ড্রেনেজ।
* রাংকাস আর্টারিওসাসঃ জ্নের প্রথম সপ্তাহে হয়ে থাকে।
* কায়ার্কটেশন অব অ্যাওরটা।
* ইপোপ্লাস্টিক লেফট হার্ট সিনড্রমঃ জ্নের প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে তীব্র মাত্রায় দেখা দিতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন শিশুর হৃৎপিণ্ড কাজ করছে না
* বাসকষ্ট হবে এবং কোনো কিছু করলে, যেমন-দুধ খাওয়ার সময় কান্না করলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাবে।
* বশি সময় নিয়ে দুধ খাবে, অর্থাৎ দুধ খেতে সময় লাগবে।
* শশু বাড়বে কম; ওজন কম হবে, শুকনো হবে।
* কানো কিছু করলেই হাঁপিয়ে যাবে এবং ঘামবে।
* পটে ব্যথা করবে; লিভার বেঁকে যাওয়ার কারণে।
* ্নের সাত দিনের মধ্যে হাত-পা ঠান্ডা হবে এবং অজ্ঞান হয়ে যাবে।
* মটাবলিক এসিডোসিস হবে; রক্তে এসিডের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
শিশুটিকে ঠিকমতো পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, অতিরিক্ত শ্বাসকষ্টের কারণে বুকের খাঁচার নিচে অসামঞ্জস্য দেখা যাচ্ছে। একে বলে হেরিসন্‌ম সালছি। জিংকের রং নীল হবে (সেন্ট্রাল সায়ানোসিস), যা অক্সিজেন দিলে আর থাকবে না। হৃৎপিণ্ডের চলার গতি প্রতি মিনিটে ২২০ বারের বেশি হলে বুঝতে হবে হার্ট ফেইলিওর হয়েছে। এক্স-রে করালে হৃৎপিণ্ডের আকার বেড়ে যাওয়া ধরা পড়বে।
হার্ট ফেইলিওরের কারণ
* শিশুদের বয়স দেখেঃ যেসব শিশুর হাইপোপ্লাস্টিক লেফ্‌ট হার্ট সিনড্রম হয়, তাদের জ্নের দুই সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। আবার অনেক শিশু আছে, যাদের ভিএসডি (ভেন্টিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট) ধরা পড়েছে, জ্নের দুই মাস আগেও তাদের হার্ট ফেইলিওর হয় না।
* হৃূৎপিণ্ডের চলার গতি ও শব্দ শুনেঃ অনেক সময় হৃৎপিণ্ডের চলার গতি ও শব্দ শুনে এবং মারমার (এক ধরনের শব্দ) আছে কি না বুঝে বলা যায়, কী সম্পর্ক আছে এবং হার্ট ফেইলিওর হয়েছে কি না। মনে রাখতে হবে, কিছু হার্ট ডিফেক্ট আছে, যেখানে কোনো মারমার শব্দ পাওয়া যায় না, যেমন-হাইপোপ্লাস্টিক লেফ্‌ট হার্ট সিনড্রম, কোয়ার্কটেশন, টোটাল অ্যানোম্যালাস পালমোনারিম ভেনাস ড্রেনেজ, মায়োকার্ডাইটিস ও ইন্ডোকার্ডিয়াল ফাইব্রোইলামটোসিস। ইসিজি করালে অনেক কিছু বোঝা যাবে।
চিকিৎসাঃ দুইভাবে শিশুদের হার্ট ফেইলিওরের চিকিৎসা করা হয়-ড্রাগ থেরাপি বা ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা এবং সাপোর্টিং থেরাপি বা অসুস্থ অবস্থায় শিশুর সেবাযত্ন।
ড্রাগ থেরাপি বা ওষুধ দিয়ে চিকিৎসাঃ ইনোট্রপিক এজেন্টঃ মারাত্মক হার্ট ফেইলিওর হলে শিরার মধ্যে ডোপাসিন ইনজেকশন (পাঁচ মিলিগ্রাম/কেজি/মিনিট) দিতে হবে, যা হার্টের আউটপুট বাড়াবে। কম মারাত্মক হলে ডিগক্সিন দিতে হবে হার্টের অবস্থা বুঝে।
কীভাবে ডিজিটালাইজেশন করা হয়
মুখে দিলে ৪০ মাইক্রোগ্রাম/কেজি/ডে তিনবার আট ঘণ্টা পরপর প্রথম ২৪ ঘণ্টায়। আইভি ইনজেকশন দিলে ৩০ মাইক্রোগ্রাম/কেজি/ডে আট ঘণ্টা পরপর প্রতিবার ১৫ মিনিট ধরে দিতে হবে প্রথম ২৪ ঘণ্টায়।
এরপর মেইনটেক্রো ১০ মাইক্রোগ্রাম/কেজি/ডে ১২ ঘণ্টা পরপর মুখে ডিগক্সিন খাওয়াতে হবে।
ডাইয়ুরেটিক্সঃ ক্রুসেমাইড দুই মিলিগ্রাম/কেজি/ডে দিনে দুইবার দিতে হবে এবং এর সঙ্গে পটাশিয়াম দুই মিলিমোল/কেজি/ডে দিনে দুইবার অথবা পটাশিয়াম রক্ষাকারী ডাইয়ুরেটিক্স, যেমন-স্পাইরনোল্যাকটোস দুই মিলিগ্রাম/কেজি/ডে দিনে দুইবার দেওয়া যাবে।
ভেসোডাইলেটরঃ সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। শিশুকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
সাপোর্টিভ থেরাপিঃ হার্ট ফেইলিওর রোগীরা সাধারণত আধশোয়া অবস্থায় অথবা বসা অবস্থায় স্বস্তি বোধ করে।
শরীরের জন্য খাবার বা ক্যালরির পরিমাণের সমতা রক্ষা হবে। নাকে নল দিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এদের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যালরিযুক্ত খাবার দিতে হবে। সার্জারির প্রয়োজন হলে হৃদরোগ হাসপাতালে পাঠাতে হবে এবং দ্রুত সার্জারি করাতে হবে।
তাই সোনামণিদের জ্নের পর দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, শ্বাসকষ্ট, নীল হয়ে যাওয়া দেখলেই অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


অতিরিক্ত লবণে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়

খাবারের স্বাদ মুখরোচক করার অন্যতম উপাদান হচ্ছে লবণ। আর এ লবণই ড়্গেত্রবিশেষে স্বাস্থ্যহানি এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের মতে সুস্থ দেহের জন্য খাবারের সঙ্গে সহযোগী লবণ গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে আনা উচিত। কারণ খাদ্যে অতিরিক্ত লবণ উচ্চরক্তচাপের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। শুধু তাই নয় অতিমাত্রায় খাবারে লবণ গ্রহণ হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি পর্যন্তô বাড়িয়ে দেয়। এরই পরিপ্রেড়্গিতে ব্রিটিশ সরকারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফুড স্ট্যান্ডার্ডস এজেন্সি তাই ২০০৬ সালে সেদেশে খাদ্য তৈরিতে খাবার লবণ ব্যবহারের মাত্রা কমিয়ে আনার লড়্গ্যমাত্রা ঘোষণা করে।

লবণের প্রয়োজনীয়তা

যে লবণ নিয়ে এত মাতামাতি এবার তার আদ্যপান্তô জানা যাক। খাবার লবণ একটি খনিজ পদার্থ। যার কারিগরি নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড। বস্তুত প্রাণী দেহের জন্য এর সোডিয়াম অংশ অতি গুরম্নত্বপূর্ণ। শরীরকে যথাযথভাবে কর্মড়্গম রাখার জন্যই নির্দিষ্ট পরিমাণ সোডিয়াম গ্রহণ করা দরকার। কারণ শরীরের জলীয় পদার্থের পরিমাণ সঠিক মাত্রায় রেখে শরীরে একাগ্রতা বজায় রাখতে সোডিয়াম সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। আরো সুস্পষ্ট করে বললে বলা চলে স্নায়ুতন্ত্র সচল রাখতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে সোডিয়াম। এছাড়া কোষের পুষ্টি গ্রহণেও সোডিয়াম সহায়তা করে থাকে।

অতিরিক্ত লবণ ড়্গতিকর

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে পূর্ণবয়স্ক নারী-পুরম্নষ অতিমাত্রায় সোডিয়াম গ্রহণ করলে শরীরে বাড়তি পানি ও জলীয় পদার্থ জমে। ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। চিকিৎসকদের মতে মস্তিôষ্কের মাধ্যমে অতিরিক্ত জলীয় পদার্থ চলাচলের ফলে মস্তিôষ্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। একই কারণে রক্ত উপস্থিতির হারও বেড়ে যায়। একপর্যায়ে রক্ত সংবহনতন্ত্র বা সূড়্গ্নজালিকা ফেটে যায়। যা স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। একইভাবে হৃৎপিণ্ডের মাধ্যমে অতিমাত্রায় জলীয় পদার্থ চলাচলের ফলে এটির (হৃৎপিন্ড) ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। সে কারণেই বেড়ে যায় হৃদরোগের ঝুঁকি। অবশ্য উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগের বেলায় সোডিয়াম আদতেই উলেস্নখযোগ্য ভূমিকা পালন করে কিনা সে ব্যাপারে কিছু চিকিৎসকের দ্বিমত রয়েছে। তবে সকলেই একমত যে, পূর্ণবয়স্করা কিডনির মাধ্যমে মূত্রের সঙ্গে শরীরের অতিরিক্ত সোডিয়াম বের করতে সড়্গম। অথচ কিডনি পরিপক্ব না হওয়ায় ছোট শিশুরা এর মাধ্যমে শরীরে জমা হওয়া অতিরিক্ত সোডিয়াম বের করতে পারে না।

বয়স অন্তôত চার মাস হওয়ার আগেই বেশিমাত্রা লবণে তৈরি পূর্ণবয়স্কদের খাবার শিশুদের দেয়া হলে বাড়তি সোডিয়াম শরীরই গ্রহণ করে থাকে। ফলে কিডনি, লিভার ও ব্রেন ড়্গতিগ্রস্তô এমনকি ড়্গেত্রবিশেষে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা এ বয়সের শিশুদের কেবলমাত্র মায়ের বুকের দুধ; তা সম্ভব না হলে বিশেষ ফর্মুলায় তৈরি গুঁড়ো দুধ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে শিশুখাদ্যে কমমাত্রা লবণ ব্যবহার এবং একান্তôই যদি তাদের বয়স্ক লোকের খাবার দিতে হয় সেড়্গেত্রে লবণবিহীন অপ্রক্রিয়াজাত খাবার দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

কি পরিমাণ লবণ খাওয়া উচিত?

বিশেষজ্ঞরা পূর্ণবয়স্কদের দিনে ৬ গ্রাম লবণ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অথচ হিসাব কষে দেখা গেছে পূর্ণ বয়স্ক নারী-পুরম্নষ দিনে গড়ে ৯ থেকে ১০ গ্রাম লবণ গ্রহণ করে থাকে। আর এটি গ্রহণ করা হয় প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে, রান্নার সময় লবণ ব্যবহার ছাড়াও কাঁচা লবণ পাতে খাওয়ার মাধ্যমে। বিশেষজ্ঞদের মতে লোকজন যে পরিমাণ লবণ গ্রহণ করে থাকে তার ৭৫ ভাগই আসে প্রক্রিয়াজাত খাবারের মাধ্যমে। বিশেষ করে পাউরম্নটি হচ্ছে অতিরিক্ত লবণ যোগানদানের অন্যতম উপাদান। কারণ পাউরম্নটি ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাবার দীর্ঘ সময় সংরড়্গণ ও স্বাদ বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জনপ্রতি লবণের ব্যবহার কমিয়ে দিনে বড়জোর ৬ গ্রাম পরিমাণ গ্রহণের মাধ্যমে বছরে কেবলমাত্র ব্রিটেনেই ৭০ হাজার হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঘটনা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

ব্রিটেনের কনসেন্সাস এ্যাকশন অন সল্ট এন্ড হেলথ-এর বিশেষজ্ঞ প্রফেসর গ্রাহাম ম্যাকগ্রেগর জানান, অতিমাত্রা লবণ গ্রহণের ফলে ব্রিটেনে বছরে ৩০ হাজার বাড়তি স্ট্রোক ও হৃদরোগ আক্রান্তেôর ঘটনা ঘটে থাকে। যার মধ্যে ১৫ হাজার মারাত্মক পর্যায়ের।

করণীয়

ব্রিটিশ নিউট্রিশন ফাউন্ডেশনের পুষ্টি বিজ্ঞানী ডজ্ঝ উইনি চেন বলেন, খাদ্যের সঙ্গে প্রত্যেকের উচিত লবণ গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে আনা। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপে সংবেদনশীলদের জন্য লবণ কম খাওয়া একান্তôই জরম্নরী। তাই বলে লবণ একেবারে পরিত্যাগ করা কারো পড়্গেই উচিত নয়। লবণ গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে আনতে চারটি পন্থা অবলম্বন করা উচিত।

একঃ পাতে কাঁচা লবণ ব্যবহার একদম বন্ধ করতে হবে।

দুইঃ সোডিয়ামের মাত্রা কম আছে এমন খাবার বেছে নেয়া।

তিনঃ প্রক্রিয়াজাত খাবারের লবণের মাত্রা সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেড়্গণ করা এবং

চারঃ পর্যাপ্ত পরিমাণ ফলমূল ও শাক-সবজি গ্রহণ। কারণ এসবে পটাসিয়াম থাকে প্রচুর পরিমাণ। যা শরীরের জমা হওয়া লবণ কার্যকর ও সুষম পর্যায়ে রাখতে সহায়তা করে।

[ওয়েবসাইট অবলম্বনেঃ জাকিরম্নল ইসলাম]


স্ট্রোক চিকিৎসায় নতুন ওষুধ


ভ্যাম্পায়ার বাদুড়ের লালা থেকে তৈরি ডেসমোটিপেস্নজ নামক পস্নাজমিনোজেন এ্যাকটিভেটর, ইসকেমিক স্ট্রোক-এর চিকিৎসায় অধিক বেশি কার্যকর বলে গবেষকগণ জানিয়েছেন। এই ওষুধের সবচেয়ে বেশি সুবিধা হলো এটা স্ট্রোকে আক্রান্তô রম্নগীর উপসর্গ দেখা দেবার ৯ ঘন্টার মধ্যে প্রয়োগ করেও সুফল পাওয়া সম্ভব। ইসকেমিক স্ট্রোক-এর চিকিৎসায় বর্তমানে স্বীকৃত একমাত্র ওষুধ হলো টিস্যু পস্নাজমিনোজেন এ্যাকটিভেটর (ঞচঅ) যা লড়্গণ শুরম্ন হবার ৩ ঘন্টার মধ্যে প্রয়োগ করতে হয়। অধিকাংশ স্ট্রোকে আক্রান্তô রম্নগীকে চিকিৎসা শুরম্নর সময়সীমা পার হবার পর হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসার ফলে টিপিএ সহযোËিগ চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয় না। নতুন উদ্‌ভাবিত ওষুধে এই সময়সীমা বেড়ে যাবার কারণে অধিক সংখ্যক রম্নগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হবে।

উওঅঝ২ (ফবংসড়ঃবঢ়ষধংব রহ ধপঁঃব রংপযধসরপ ংঃৎড়ফব) নামে অভিহিত ফেজ ২বি/৩ ট্রায়াল ১৫০ জন রম্নগীর উপর পরিচালনা করে পূর্বের ২টি ট্রায়ালের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হয়। ইতোপূর্বে পরিচালিত গবেষণার ফলাফল আমেরিকার নিউ অরলিয়ান্স-এ ২০০৫ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রোক কনফারেন্সে উপস্থাপন করা হয়। গবেষণার ফলাফলে মস্তিôষ্কে ড়্গতিগ্রস্তô এলাকায় রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি এবং আক্রান্তô হবার ৯০ দিনের মধ্যে ক্লিনিক্যাল অগ্রগতি পরিলড়্গিত হয়। ডেসমোডাস রোটানডাস নামে ভ্যাম্পায়ার বাদুড়ের লালায় পাওয়া ক্লটবাস্টিং উপাদান-এর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে পরিবর্তিত রূপই হলো ডেসমোটিপেস্নজ। এই উপাদান শরীরের রক্ত জমাট বাঁধার পদ্ধতিকে কোনরূপ প্রভাবিত না করেই স্থানীয়ভাবে আক্রান্তô স্থানের ক্লট ভেঙ্গে দিতে সড়্গম। আর এই সুবিধার কারণে মস্তিôষ্ক অভ্যন্তôরে রক্তপাতের ঝুঁকিও কমে যায়। চধরড়হ এসনঐ (জার্মানিঃ xিজ্ঝিঢ়ধরড়হজ্ঝফব) এ ওষুধ প্রস্তুতির জন্য ঋড়ৎবংঃ খধনড়ৎধঃড়ৎরবং (নিউইয়র্ক, আমেরিকা) কে লাইসেন্স প্রদান করেছে। ঋড়ৎবংঃ খধনড়ৎধঃড়ৎরবং আমেরিকা ও কানাডায় ওষুধের বিক্রয় ও বিপণনের দায়িত্ব পালন করবে। পড়্গান্তôরে ঢ়ধরড়হ-এর ব্যবসায়িক স্বত্ব রয়েছে ইউরোপ, জাপান এবং পৃথিবীর অন্যান্য অংশে। পূর্বে পরিচালিত দুইটি পরিপূর্ণ গবেষণায় ইসকেমিক স্ট্রোক-এর চিকিৎসায় ডেসমোটিপেস্নজ-এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এর ব্যাপক প্রয়োগের মাধ্যমে স্ট্রোক পরবর্তী জটিলতা বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন গবেষণাকর্মে নিয়োজিত ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক ফাউন্ডেশন (আমেরিকা)-এর মেডিক্যাল ডিরেক্টর এ্যান্থনি ফারলন এমডি।

হৃদরোগের কারণ অনেক
ডাজ্ঝ এস কে অপু
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
ময়মনসিংহ চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়

কেস স্টাডি
অস্বাভাবিক মোটা শরীর নিয়ে তিনি ৪০-এ পা রেখেছেন। ২১ বছরেই বসেছিলেন বিয়ের পিঁড়িতে। তারপর দুই সন্তানের মা। একটানা খেয়ে যান জ্ননিয়ন্ত্রণের বড়ি। তারপর হঠাৎ মোটা হতে শুরু করেন।
দুই বছর ধরে বুকে চাপ চাপ অনুভব করছেন। গোপন করেন বুকের ব্যথা। মাঝেমধ্যে ব্যথার তীব্রতায় ঘেমে যান। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তার পরও স্বামীর কাছে গোপন রাখেন। কদিন আগে হৃদরোগে হয়েছেন শয্যাশায়ী। এখন নীরবে কাঁদেন তিনি।
চিকিৎসকদের মতে, তাঁর হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের বড় কারণ হচ্ছে একটানা দেড় যুগ জ্ননিয়ন্ত্রণের বড়ি সেবন করা, যা তাঁর হার্ট অ্যাটাকের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এসব বড়ি ক্ষেত্রবিশেষে বাদ দিয়ে অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করলে হার্ট অ্যাটাকের মাত্রা কমানো যেতে পারত।
হৃদরোগ হওয়ার অনেক ঝুঁকি আছে। বয়সের কথাই ধরা যাক। ৪০ বছর পার হলে পুরুষের আর ৫০ পার হলে মেয়েদের হৃদরোগের ঝুঁকি এমনিতেই বেড়ে যায়। ৫০-এর আগে পুরুষের হৃদরোগের ঝুঁকি মেয়েদের প্রায় দ্বিগুণ থাকে।
বিজ্ঞানীদের মতে, মেয়েদের সে সময় হরমোন নিঃসরণের কারণেই হৃদরোগ তুলনামূলকভাবে কম হয়। আজকাল বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, যারা ছোটবেলা থেকেই অপুষ্টিতে ভোগে; কিংবা যারা দরিদ্র তাদের মধ্যেও হৃদরোগের আশঙ্কা বেশি।
এ রকম অনেক পরিবারের সদস্যের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের হার বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এ জন্য দায়ী ক্রোমোজমের ভেতরকার এক ধরনের জিন।
উচ্চ রক্তচাপের কথা আমরা সবাই কম-বেশি জানি। যার কারণে হৃদরোগে বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যু হতে পারে। তাই উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। নিশ্চয়ই শুনেছেন রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের কথা। এটি রক্তে বেশি হলে তাকে হাইপারলিপিডেমিয়া বলা হয়। রক্তে বেশি চর্বি হলে রক্তনালি ক্রমশ বন্ধ হয়ে যায়।
ফলে রক্ত চলাচল না হলে হার্টের সে স্থানের কোষগুলো মরে যায়। এতে হার্ট অ্যাটাক ঘটে। তাই চিকিৎসকেরা বারবার বলে থাকেন, চর্বিজাতীয় খাবার কম খান, ওজন কমান, নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
প্রয়োজনে চর্বি কমানোর ওষুধ খান চিকিৎসকের পরামর্শে। কমে যাবে খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল। কমবে হার্ট অ্যাটাক ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি।
ধূমপান হৃদরোগের বড় কারণ। ধূমপান করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়বেই।
মেয়েরা, যাঁরা জ্ননিয়ন্ত্রণ বড়ি খান আর ধূমপানও করেন, তাঁদের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও অনেক বেশি।
আর ডায়াবেটিস থাকা মানেই তো অনেক রোগের ঝুঁকি একসঙ্গে বহন করা। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ব্যথাহীন হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ে। বয়স ৪০ পেরোলেই রক্তের সুগার পরীক্ষা করে জেনে নিন ডায়াবেটিস আছে কি না।
আবার ডায়াবেটিসের সঙ্গে মেদস্থূল হলে, অলস জীবন যাপন করলে, ইনসুলিন নিতে নিতে ইনসুলিনের মাত্রা কেবল বাড়তে থাকলে অর্থাৎ ইনসুলিন রেজিসট্যান্স হলে কিংবা ডায়াবেটিক মেয়েরা ধূপমান করলে হৃদরোগের ঝুঁকি যেমন বাড়ে, তেমনি দেহের রক্তনালিগুলো বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। মিষ্টিজাতীয় খাবার যতটুকু সম্ভব বাদ দিন।
শরীরের অতিরিক্ত ওজন মানেই এক সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া। দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে-বিএমআই ১৮জ্ঝ৫ থেকে ২৪জ্ঝ৯-এর মধ্যে রেখে। কোমরের ব্যাস পুরুষের ক্ষেত্রে ৪০ ইঞ্চির নিচে আর মহিলার ক্ষেত্রে ৩৫ ইঞ্চির নিচে রাখতে হবে।
এতেই হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে। বাদ দিতে হবে মিষ্টি ও চর্বিযুক্ত খাবার। না হলে মোটাসোটা দেহ থেকে হবে উচ্চ রক্তচাপ, তারপর ডায়াবেটিস। পরে হার্ট অ্যাটাক।
মদ্যপানে রক্তচাপ বাড়বেই। তাই এটির অভ্যাস থাকলে ছেড়ে দিন। যাঁরা অলস; সারা দিন বসে-শুয়ে সময় কাটান, তাঁদের হৃদরোগের ঝুঁকি কয়েক গুণ। বেশি হাঁটুন, জগিং করুন, সাইকেল চালান। মুক্ত বাতাসে ইচ্ছামতো ব্যায়াম করুন। দৈনিক কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে তিন-চার দিন কায়িক পরিশ্রম করুন।
দেখবেন রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়বে। রক্তচাপ বাড়বে না। রক্ত সহজ গতিতেই চলবে পুরো শরীরে। ফলে হৃদরোগ কমবে। কারণ, রক্তের কোষ অনুচক্রিকার কাজ বেড়ে গেলে, রক্তের ফাইব্রিনোজেন ও ফ্যাক্টর আট বেড়ে গেলে কিংবা রক্তের প্রোটিন-সি, প্রোটিন-এস ও ফ্যাক্টর-৫ কমে গেলে হার্ট অ্যাটাক বেড়ে যায়।
তাই শারীরিক পরিশ্রম খুবই প্রয়োজন।
হোমোসিস্টিনের কথা হয়তো অনেকেই জানেন না। রক্তের এ উপাদান বাড়লে রক্তনালিতে চর্বি দ্রুত জমে। ফলাফল হার্ট অ্যাটাক। যদি রক্তে ভিটামিন বি৬, বি১২ ও ফলিক এসিড কমে যায়, তাহলে মন্দ উপাদান হোমোসিস্টিন বেড়ে যায়। এ ছাড়া পুরুষের বয়স বেশি হলে এবং যাঁরা বেশি বেশি কফি, ধূমপান ও মদ্যপান করেন; মেয়েরা যাঁরা জ্ননিয়ন্ত্রণ বড়ি খান বা নিয়াসিন ও সাইক্লোসপোরিন এবং মেটফরমিন-জাতীয় ওষুধ বেশি সেবন করেন, তাঁদের রক্তে হোমোসিস্টিন বেড়ে যায়।
এগুলো রক্তনালির আবরণ ও দেয়ালকে শক্ত করে। রক্ত জমাট বাঁধায়। ফলাফল হৃদরোগ। তাই আজকাল হৃদযন্ত্রের এনজিওপ্লাস্টি করা বা রিং পরা রোগীদেরও ভিটামিন-বি দেওয়া হচ্ছে, যাতে হোমোসিস্টিন রক্তে না বাড়ে। খাবার তালিকায় টাটকা ফল ও সবজি রাখুন। অসম্পৃক্ত চর্বি খেলে, ভিটামিন সি, ই ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, চাওয়া-পাওয়ায় অসামঞ্জস্য ও উচ্চাভিলাষী চিন্তাচেতনা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বাড়ায়।
এমনকি বিরূপ পরিবেশ, কর্মক্ষেত্রের অসুস্থ পরিবেশ, সমাজে সহযোগিতার অভাব ও মানসিক অবসন্নতায় হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে। তাই আসুন, হৃদরোগ হওয়ার এসব উপাদান সবার মিলিত প্রচেষ্টায় দূর করতে সচেষ্ট হই।

স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে স্ট্রোকের (ঝঃৎড়শব) ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যসচেতনতা খুবই জরম্নরী। উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস এবং মেদবহুলতা স্ট্রোকে আক্রান্তô হবার ঝুঁকি বাড়ায়। অনেকেই স্ট্রোকের উপসর্গ না জানার কারণে মিনিস্ট্রোকে আক্রান্তô হবার ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ থাকেন। একবার মিনিস্ট্রোকে আক্রান্তô হলে পরবর্তীতে পূর্ণ স্ট্রোকে আক্রান্তেôর ঝুঁকি বেড়ে যায়। মিনিস্ট্রোকের বেলায় ধমনী বা রক্তনালীতে সাময়িক রক্ত জমাট বেঁধে মস্তিôষ্কে সাময়িকভাবে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। মিনিস্ট্রোকে সাধারণত মস্তিôষ্কের স্থায়ী ড়্গতি হয় না তবে এড়্গেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ জরম্নরী। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যথার্থভাবে রোগ নির্ণয় করতে পারেন যেমন ঘাড়ের ক্যারোটিড ধমনীর গতিপথ শুকিয়ে যাওয়া (ক্যারোটিড স্টেনোসিস) ইত্যাদি বিষয়ে আগাম সতর্কতা বলে দিতে পারেন।

বাল্টিমার মেরিল্যান্ড স্কুল অব মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডজ্ঝ পামেলা পিকী স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে কয়েকটি পরামর্শের উলেস্নখ করেছেন।

এগুলো হচ্ছেঃ

একজ্ঝ উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ রাখা।

দুইজ্ঝ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ সেবন করা। অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে তবে তা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা উচিত নয়। তিনজ্ঝ রঙ্গীন ফলমূল এবং শাক-সবজি গ্রহণ করা। এসব ফলমূল এবং শাক-সবজি দিনে কমপড়্গে পাঁচবার খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি শতকরা ৩০ ভাগ কমে। বিভিন্ন ধরনের লেবুজাতীয় ফল, ব্রকলী, সবুজ এবং রঙ্গীন শাক-সবজি খুবই উপকারী। চারজ্ঝ ব্যায়াম, হাঁটা-চলা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিদিন দেহকে সক্রিয় এবং কর্মব্যস্তô রাখা। সর্বোপরি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। পাঁচজ্ঝ শরীরের কোনো অংশ অবশ বোধ করলে, চোখে ঝাপসা দেখলে হঠাৎ করে কথা বলতে বা কথা বুঝতে অসুবিধা হলে, হাঁটতে অসুবিধা, প্রচণ্ড মাথাব্যথাসহ অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। মনে রাখতে হবে স্ট্রোকে আক্রান্তেôর পরবর্তী তিন ঘন্টার মধ্যে অব্যাহত জরম্নরী চিকিৎসা খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে জীবন পদ্ধতি স্বাস্থ্যসম্মত করে তোলার পাশাপাশি সতর্কতা অবলম্বন স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

হার্ট অ্যাটাক রোধে করণীয়
হার্টের উপরিভাগে লেপ্টে থাকে করোনারি আর্টারি বা ধমনী, যার মাধ্যমে হার্ট পুষ্টি এবং অিজেন পায়। যখন করোনারি ধমনীতে চর্বি জমে এবং রক্ত জমাট বেঁধে (শতকরা ১০০ ভাগ) রক্তনালীর রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তখন উক্ত রক্তনালীর মাধ্যমে হার্টের যে অংশটুকু পুষ্টি এবং অিজেন পেত সেই মাংসপেশিটুকুতে নানারকম পরিবর্তন সাধিত হয়, যাকে আমরা হার্টঅ্যাটাক বলি। মেডিকেল পরিভাষায় বলা হয় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন। যদিও হার্টঅ্যাটাক হঠাৎ করেই হয় কিন্তু এটি দীর্ঘদিন ধরে করোনারি ধমনীতে অ্যাথেরোসক্লেরোটিক পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি চলমান রোগ প্রক্রিয়ারই বহিঃপ্রকাশ। তাই মারাত্মক এই রোগটিকে কখনো কখনো নিঃশব্দ আততায়ী বলা হয়। তবে সময়মত রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসায় রোগী ফিরে পেতে পারে নতুন জীবন।

হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকিসমূহ

হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকিসমূহের মধ্যে কিছু ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। আবার কিছু ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যেমন- পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাস।

ঝুঁকিসমূহ

০ করোনারি ধমনীতে চর্বির আধিক্য

০ ডায়াবেটিস মেলাইটাস

০ উচ্চ রক্তচাপ ০ ধূমপান

০ শারীরিক ওজন বৃদ্ধি

০ পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাস

০ কায়িক পরিশ্রমহীনতা ০ স্ট্রেস

০ মহিলাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি ইত্যাদি।

ধূমপান এবং হার্টঅ্যাটাক

ধূমপানে করোনারি ধমনীতে মাইক্রোইনজুরি হয়, যার ফলে রক্ত জমাট পদ্ধতি ত্বরান্বিত হয়। এছাড়া ধূমপানে রক্তে কোলেস্টেরল অর্থাৎ যে কোলেস্টেরল হার্টের জন্য ভালো‘ৈএইচডিএল’ কমে যায়। ‘এইচডিএল’ কমে গেলে খারাপ কোলেস্টেরল ‘এলডিএল’ বেড়ে যায়। অর্থাৎ ধীরে ধীরে হার্টঅ্যাটাকের দিকে ধাবিত হয়।

হার্টঅ্যাটাকের উপসর্গ

০ বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হওয়া। কখনো কখনো ঘাড়, চোয়াল, পিঠ বা হাতেও ব্যথা হতে পারে।

০ বুকে ব্যথা এমনভাবে রোগীরা বর্ণনা করেন যেন কোনো ব্যান্ড বুকের ওপর চাপ দিয়ে আছে। তবে ডায়াবেটিস রোগীরা কখনো কখনো হার্টঅ্যাটাকে এ ধরনের ব্যথার কথা নাও বলতে পারেন।

০ বুকের ব্যথার সঙ্গে প্রচণ্ড ঘাম হতে পারে। এটি অত্যন্তô গুরম্নত্বপূর্ণ একটি উপসর্গ, যার ্বদ্বারা বোঝা যায় হার্টঅ্যাটাকের প্রক্রিয়া চলছে।

হার্টঅ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয়

হৃদরোগ প্রতিরোধযোগ্য এবং হৃদরোগের প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ঘুরিয়ে দেয়া সম্ভব শুধু নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মাধ্যমে। যে কোনো ধরনের স্ট্রেস এড়িয়ে চলুন। কর্মজীবনের সব ব্যস্তôতার মধ্যেও মানসিক প্রশান্তিôর কিছু উপায় বের করে নিতে হবে। পরিমিত কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করুন এবং কম চর্বিযুক্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।

ধূমপান ত্যাগ করা অত্যন্তô জরুরি। শুধু ধূমপান ত্যাগের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং নিয়মিত মনিটরিং করুন। রক্তের গস্নুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি অত্যন্তô গুরম্নত্বপূর্ণ। নিয়মিত সজীবভাবে হাঁটার অভ্যাস করুন। কমপড়্গে ৪৫ মিনিট প্রত্যহ হাঁটাহাঁটি করুন। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ক্যালরির পরিমাণ কমিয়ে দিন। এ জন্য বেশি করে শাকসবজি, কাঁচা ফলমূল গ্রহণ করুন। চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন।

হার্টঅ্যাটাকের চিকিৎসায় ওষুধ

হার্টঅ্যাটাকের চিকিৎসায় জরুরিভাবে কিছু ওষুধ দেয়া হয়। রোগী প্রাথমিকভাবে বিপদমুক্ত হওয়ার পর আরো কিছু ওষুধ দেয়া হয়। হার্টঅ্যাটাকের পর যে ওষুধ দেয়া হয় তা দুইভাবে কাজ করেঃ ১জ্ঝ হার্টঅ্যাটাকে যে ড়্গতি হয় তা পুষিয়ে নিতে ওষুধ সাহায্য করে। ২জ্ঝ হার্টঅ্যাটাক-পরবর্তী জটিলতা প্রতিরোধে ওষুধ সাহায্য করে।

হার্টঅ্যাটাক-পরবর্তী জটিলতা এবং রোগের উপসর্গ কমাতে নিম্নলিখিত ওষুধ ব্যবহার করা হয়ঃ

০ নাইট্রেটঃ বুকে ব্যথা বা অ্যানজাইনা কমাতে সাহায্য করে। এ ওষুধটি করোনারি ধমনীকে প্রসারিত করে এবং রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিতে অিজেন সরবরাহ বৃব্দি করে।

০ বিটা বস্নকারঃ এ ওষুধটি হার্টের গতি স্পন্দনকে পরিমিত রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। হার্টের নিজস্ব কাজের বোঝাকে সহজ করে দেয়। তাই যেমন অ্যানজাইনা কমাতে সাহায্য করে তেমনি হার্টঅ্যাটাক-পরবর্তী জটিলতা কমাতে সাহায্য করে।

০ অ্যাসপিরিন এবং ক্লোপিডোগেস্নরলঃ এ দুটি ওষুধ এন্টিপস্নাটিলেট হিসেবে কাজ করে এবং রক্তকে পাতলা রাখে। রক্তকে জমাট বাঁধতে বাধা দেয় বলে এ ওষুধ হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

০ স্টাটিনঃ রক্তের কোলেল্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া আরো কিছু কাজ করে যা হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। ভবিষ্যতে হার্টঅ্যাটাক প্রতিরোধে লিপিড প্রোফাইল নিম্নরূপ থাকা বাঞ্ছণীয় ৈ

কোলেল্টেরল < ২০০ মিগ্রা/ডিএল এলডিএল কোলেল্টেরল < ৭০ ডিএল এইচডিএল > ৪০ ডিএল

ট্রাইগিস্নসেরাইড < ১৫০ ডিএল উপরোক্ত কোলেল্টেরল মাত্রা অর্জন স্টাটিন ছাড়াও প্রয়োজন ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং প্রয়োজনে ওষুধের সঠিক ব্যবহারে গস্নুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখা। হার্ট এ্যাটাকের চিকিৎসা কী কী পরীড়্গা করা উচিত হার্টঅ্যাটাকের পর রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী নিয়মিত ইসিজি ফলোআপ, ইকোকার্ডিওগ্রাফি এবং ইটিটি করানো উচিত। প্রয়োজনবোধে ক্টে এমপিআই বা থ্যালিয়াম স্টড়্গ্যানিং করানো যেতে পারে। উপরোক্ত পরীড়্গার আলোকে কখনো কখনো করোনারি অ্যানজিওগ্রামও করা হয়ে থাকে। করোনারি অ্যানজিওগ্রাম কী করোনারি ধমনীর রোগ বা বস্নকেজ হয়েছে কিনা তা নির্ণয়ের জন্য করোনারি অ্যানজিওগ্রামকে গোল্ড ল্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়। এটি কোনো সার্জিক্যাল অপারেশন নয়, লোকাল অ্যানেস্থেসিয়ার মাধ্যমে রোগীর পায়ের কুঁচকি বা হাতের ধমনীর মাধ্যমে ক্যাথেটার (সরু পস্নাস্টিক টিউব) প্রবেশ করানো হয়। তারপর অল্প পরিমাণ কন্ট্রাস্ট মিডিয়া বা ডাই প্রবেশ করিয়ে বুকের এরে ছবি নেয়া হয়। এর মাধ্যমেই করোনারি ধমনীতে শতকরা কত ভাগ বস্নকেজ হয়েছে তা জানা যায়। হার্টঅ্যাটাকের পর কখন রোগী স্বাভাবিক কাজ করতে পারেন হার্টঅ্যাটাকের কতদিন পর রোগী স্বাভাবিক কাজকর্ম বা কাজে যোগদান করতে পারেন তা নির্ভর করে কাজের মানের ওপর অর্থাৎ কতটা স্ট্রেসফুল কাজ। এছাড়া হার্টঅ্যাটাক যেটা হয়েছিল তা কতটা ভয়াবহ ছিল তার ওপর। দেখা গেছে, হার্টঅ্যাটাকের পর কারো কারো জীবনের প্রতি ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়। কারো কারো আরেকটি হার্টঅ্যাটাকের ভয় পেয়ে বসে। তবে একথা সত্য, হার্টঅ্যাটাকের রোগীদের শতকরা দশ ভাগ এক বছরের মধ্যে আরেকটি অ্যাটাকের সম্মুখীন হন। তবে রোগী যদি ভালোভাবে চিকিৎসকের ফলোআপে থাকেন, এই ঝুঁকি বছরে তিন থেকে চার ভাগ কমানো সম্ভব। পরবর্তী হার্টঅ্যাটাক প্রতিরোধে সঠিক রিহ্যাবিলিটেশন পরিকল্কপ্পনা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে শরীর এবং মনের যম্নম্ন নেয়া সল্ফট্টব। সাধারণত হার্টঅ্যাটাকের পর যদি কোনো জটিলতা না হয় তবে রোগীকে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। আস্তেô আস্তেô ছোটখাটো কাজের মাধ্যমে হার্টকে প্রস্টৗুত করা হয়। অধিকতর জটিল হার্টঅ্যাটাক নয়, এমন রোগীর ড়্গেত্রে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক কাজকর্মে যোগদান করতে পারেন। তবে স্ট্রেস হয় এমন কাজ করা উচিত নয়। যেমন গাড়ি চালানো এ সময়টাতে না করাই উত্তম। করোনারি অ্যানজিওপস্নাস্টি এটি একটি মেডিকেল পব্দতি, যার মাধ্যমে সরু রক্তনালীকে প্রশস্তô করা হয়। যে পথে অ্যানজিওগ্রাম করা হয়েছিল, সেই একই পথে ক্যাথেটারের সঙ্গে বেলুন প্রবেশ করানো হয়। বেলুন ফুলিয়ে করোনারি ধমনীর সরু অংশটুকু প্রশস্তô করা হয়। এতে করে ধমনীর ভেতর রক্তের প্রবাহ স্বাভাবিক হয়ে যায়। ধমনীর এই প্রশস্টৗতাকে ধরে রাখতে স্টেন্ট (ংঃবহঃ) বা রিং বসানো হয়। বিভিন্ন ধরনের স্টেন্ট ব্যবহৃত হয়। ইধৎব গবঃধষ ংঃবহঃ এবং উৎঁম বষঁঃরহম ংঃবহঃ (উঊঝ) ড্রাগ কোটেড স্টেন্ট অপেড়্গাকৃত ব্যয়সাপেড়্গ তবে বেশি কার্যকর বলে পরীড়্গিত। অ্যান্টিপ্ট্বাটেলেট ড্রাগ বল্পব্দ করবেন না আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিপস্নাটেলেট ড্রাগ (ইষড়ড়ফঃযরহহবৎ)বন্ধ করবেন না। বেয়ার মেটাল স্টেন্টের ড়্গেত্রে কমপড়্গে ছয় মাস এবং ড্রাগ কোটেড স্টেন্টের ড়্গেত্রে কমপড়্গে এক বছর অ্যাসপিরিন এবং ক্লোপিডোগ্রেল ওষুধ চালিয়ে যাবেন। শুধু তাই নয়, জটিল অ্যানজিওপস্নাস্টির ড়্গেত্রে কখনো কখনো ক্লোপিডোগ্রেল ওষুধটি ২/৩ বছরও চালাতে হয়। নতুবা স্টেট থ্রম্বোসিস হয়ে ধমনী পুনরায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সমস্যা দেখা দেয় রোগীর শরীরে অন্যান্য অপারেশনের প্রয়োজন হলে। অনেক সার্জন অপারেশনের পাঁচদিন আগে থেকেই এ ওষুধ দুটো বল্পব্দ করে দেন কারণ বস্নাড থিনার ওষুধের উপস্থিতিতে অপারেশনের সময় বেশি রক্তপাত হয়। কিন্তôৗু এতে করে মারাত্মক স্টেন্ট থ্রম্বোসিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এড়্গেত্রে যদি অপারেশন জরুরি না হয়ে থাকে তবে নহৃøনতম ছয় মাস বা এক বছর পর অপারেশন করা উচিত। ইমার্জেন্সি হলে কমপড়্গে একটি ওষুধ অর্থাৎ অ্যাসপিরিন বা ক্লোপিডোগ্রেল চালিয়ে যেতে হবে। ডাঃ এস এম মোস্তôফা জামান সহকারী অধ্যাপক, হৃদরোগ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। করোনারি হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধে মেডিটেশন

ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস

হার্ট অ্যাটাক এমন এক হৃদয় সমস্যা যা যেকোনো সময় এতটুকু পূর্বাভাস না দিয়ে, একটুও সময় না দিয়ে কেড়ে নিতে পারে যেকোনো মানুষের জীবন।
বাংলাদেশে প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের হার্টের সমস্যা আছে এবং প্রতি ১ হাজার জনের একজন হার্টের সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট ১৮ মার্চ ঢাকায় এক বিবৃতিতে একথা জানায়। সাম্প্রতিক এক জরিপের উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, হার্টের সমস্যা ধীরে ধীরে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। ফলে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ লোক উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যার অর্ধেকই মারা যায় হার্টের রোগে ও স্ট্রোকে।
গত তিন দশকে এ দেশে করোনারি হৃদরোগের প্রকোপ যত বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা, বেড়েছে আকস্মিক হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু। হার্ট অ্যাটাক হয়েও বেঁচে থাকার নানা মাত্রার অক্ষমতা আর তীব্র মৃত্যু ভয় নিয়ে দিন কাটানোর বিড়ম্বিত জীবন কাটানোর ঘটনাও স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক ব্যাপার হলো, এ দেশে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছেন ৫০ পার করা তো বটেই, আক্রান্ত হচ্ছেন ৪০ পার করা অসংখ্য মানুষ। ৩০ পার করে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছেন, বিশেষ করে দেশের বড় শহরগুলোতে এমন সংখ্যাও আজ আর খুব বিরল নয়। করোনারি হৃদরোগ আর হার্ট অ্যাটাক পুরোপুরি না হলেও অনেকটাই প্রতিরোধযোগ্য। করোনারি হৃদরোগ আক্রান্ত হলেও নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন মেনে চললে আর যোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধপত্র খেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমিয়ে আনা যায় উল্লেখযোগ্যভাবে।
বিশ্বের ১ নম্বর মরণব্যাধি হচ্ছে হৃদরোগ। করোনারি আর্টারি রোগের কারণে এক-তৃতীয়াংশ রোগী মারা যায়। লাখ লাখ হার্ট অ্যাটাক হয় প্রতি বছর। ২৫ শতাংশ লোক হাসপাতালে আসার আগেই মারা যায়। যদিও বাংলাদেশে বেশ কিছু সেন্টারে এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস করা হচ্ছে তা কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সচ্ছল রোগীরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হৃদরোগের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলছে এবং এভাবে বেড়ে চললে আগামীতে হৃদরোগের চিকিৎসার হাসপাতাল ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কয়েকগুণ প্রয়োজন হবে। কিন্তু রাতারাতি হৃদরোগের ডাক্তারের সংখ্যা ও বেড বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই এর চিকিৎসার পাশাপাশি প্রতিরোধের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।
হৃদরোগের কারণঃ এর অন্যতম কারণ এ দেশের মানুষের জীবনযাত্রায় দ্রুতলয়ে পশ্চিমী ধাঁচের পরিবর্তন। ফাস্টফুডের রমরমার সাথে তাল মিলিয়ে বেড়েছে গাদাগুছের ফ্যাট খাওয়ার প্রবণতা, কমেছে যথেষ্ট শাকসবজি আর ফলফলাদি খাওয়ার অভ্যাস, কমেছে টাটকা খাবার খাওয়ার ঝোঁক, কমেছে পরিশ্রম।
জীবনের গতি বাড়তে বাড়তে জেটগতির জীবনের অভ্যস্ত হতে শুরু করেছেন একশ্রেণীর মানুষ। দ্রুতগতির জীবনে ইঁদুর দৌড় দৌড়াতে হলে মনের ওপর চাপ বাড়বেই। বাড়বে টেনশন, চাপ সইতে না পেরে বিক্ষত, বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা করোনারি হৃদরোগ বেড়ে চলার এও একটি অন্যতম কারণ।
অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে গেছে ধূমপান, বিশেষ করে কম বয়সে ধূমপান রপ্ত হওয়ার অভ্যাস। অতীতে বাঙালি জীবনে নানা ধরনের শারীরিক পরিশ্রম ছিল বেঁচে থাকার আবশ্যিক এক প্রয়োজন। কর্মমুখর, পরিশ্রমনির্ভর সেই জীবনযাপনের পদ্ধতি থেকে সরে এসেছেন দেশের এক বড় অংশের মানুষ। গ্রামের একশ্রেণীর মানুষ এখন মোটরসাইকেলে চড়েন বেশি, সাইকেলে চড়েন কম, হাঁটেন আরো কম। শহরাঞ্চলে লাফ দিয়ে দিয়ে বাড়ছে পরিশ্রমবিমুখ গাড়িচড়া আর বসে কাজ করার আয়েশি জীবন কাটানোর প্রবণতা। কমছে শরীরের ব্যায়াম, বাড়ছে হুলত্ব। এ দেশে করোনারি হৃদরোগ বাড়ানোর জন্য এরকম পরিশ্রমহীন বিলাসবহুল জীবনযাপন অনেকটা দায়ী।
ধমনীর ভেতরকার দেয়ালে চর্বির স্তর জমে কমতে থাকে রক্তের সঞ্চালন। ধমনীর ভেতর চর্বি জমে ধমনীর গহ্বর ধীরলয়ে সরু হতে থাকে যেকোনো মানুষের ২০-২২ বছর বয়স থেকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে চর্বি জমার হারও বাড়ে, ধমনীর গহ্বর সরু হয় আরো। ধমনীতে চর্বির স্তর জমে ধমনীর দেয়াল মোটা আর গহ্বর সরু হতে থাকা, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় আথোরোস্কোলোরোসিস, পরিণামে অ্যানজিনা প্যাকটোরিস এবং মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটনা ঘটে, সোজা কথায় হার্ট অ্যাটাক।
অনেকে করোনারি আর্টারি ব্লকের সমস্যাকে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বলে মনে করে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খান এবং এ রোগের ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলে। যখন তীব্র লক্ষণ দেখা দেয় তখন হাসপাতালে যাওয়ার আগে বা পরে অনেকেরই মৃত্যু পর্যন্ত বরণ করতে হয়।
প্রচলিত চিকিৎসাঃ প্রচলিত চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই করোনারি হার্ট ডিজিসের জন্য অ্যানজিওপ্লাস্টি বা বাইপাস সার্জারি করা হয়। উভয় পদ্ধতিতেই খচর অনেক বেশি এবং তা-ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত নয় এবং কয়েক বছরের মধ্যেই আবারো ব্লক দেখা দেয়। সার্জারির পর একজন মানুষের জীবনীশক্তি কার্যত অর্ধেকে এসে দাঁড়ায়।
ওষুধ ও অস্ত্রোপচার ছাড়া চিকিৎসাঃ ওষুধ ও অস্ত্রোপচার ছাড়াই হৃদরোগের নিরাময় লাভ করা সম্ভব এবং এ পদ্ধতির প্রবর্তক হচ্ছেন ক্যালিফোনিয়ার বিজ্ঞানী ডা. ডিন অরনিস। ১৯৮৭ সালে এই পদ্ধতি প্রবর্তনের পর থেকে এর সফলতা সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। জীবনযাপন পরিবর্তনই হচ্ছে এ পদ্ধতির ভিত্তি। ওষুধ ছাড়াই হৃদরোগ চিকিৎসা ডা. অরনিশের সাফল্যের কথা বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পারে ১৯৮৮ সালে। করোনারি আর্টারি রোগী অথচ বাইপাস সার্জারি করতে রাজি ছিলেন না এমন রোগীকে তিনি দু’ভাগে ভাগ করে চিকিৎসা শুরু করলেন। প্রথম গ্রুপের রোগীদের কম ফ্যাট ও বেশি আঁশযুক্ত খাবার, স্টেসমুক্ত থাকার পদ্ধতি, প্রাণায়াম যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন করার উপদেশ ওেয়া হলো। আর দ্বিতীয় দলের রোগীদের হৃদরোগের সচরাচর ওষুধ দেয়া হলো।
দু’গ্রুপের লোকজনকেই বিশেষ তত্ত্বাবধানে রাখা হলো। রোগের অবস্থা আবার আগাগোড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলো কিছু দিন পরপর, পাওয়া গেল অদ্ভুত ফল। ডা. অরনিশের কার্যসূচি যারা অনুসরণ করেছিলেন তাদের ধমনীতে জমে থাকা চর্বি বা কোলেস্টেরল পরিষ্কার হয়ে রক্ত চলাচল বেড়ে যাওয়ায় তারা ভীতিকর বুকব্যথা থেকে মুক্তি পান এবং তাদের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমে আসে। অপর দিকে দ্বিতীয় দলের রোগীরা আগের অবস্থায়ই থেকে গেল অর্থাৎ তাদের অবস্থার কোনো উন্নতি হলো না বরং কারো কারো ক্ষেত্রে আগের তুলনায় আরো খারাপ হলো।
ভারতের গবেষণাঃ ভারতের রাজস্থানের মাউন্ট আবুতে অবস্থিত গ্লোবান হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে ডা. সতিশ গোপ্তার নেতৃত্বে করোনারি আর্টারি ডিজিস রিগ্রেশনের এক গবেষণা করা হয়। এতে ভারতের অন্যতম হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে প্রফেসর অনিল কুমার, ভাইস প্রেসিডেন্ট, এশিয়া প্যাসিফিক সোসাইটি অব কার্ডিওলোজি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট, ইন্ডিয়ান কার্ডিওলোজি সোসাইটি, ডা. এইচ কে চোপড়া (দিল্লি), সেক্রেটারি, কার্ডিওলোজি সোসাইটি অব ইন্ডিয়া, ডা. নরেশ তেহবান, এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর, এসকট হার্ট ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারসহ অনেক কার্ডিওলোজিস্ট ও অন্য বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেন।
তারা ১ হাজার ২০০ রোগীর ওপর গবেষণা চালিয়ে যান। ৭ দিন পর থেকেই রোগীরা অনেকটা সুস্থবোধ করতে থাকেন এবং তাদের ওষুধ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা কমে যায়। স্ট্রেস হরমোন লেভেল কমে যায় সেই সাথে কমে ওজন, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা এবং কোলেস্টেরল এবং বেড়েছে ইটিটি, ইজেকশন ফোর্স ও ট্রেডমিল টেস্টের ক্ষমতা। তারা ভারতের প্রেসিডেন্টের কাছে এই গবেষণার রিপোর্ট পেশ করেন। তাতে দেখা যায় প্রায় সব রোগীরই উন্নতি হয়েছে এবং সুস্থতা ফিরে পেয়েছে।
বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাঃ ৩০-৩২ বছর বয়সের এক বাংলাদেশী রোগীর কথা বলছি। ৩ মাস আগে এনজিওগ্রামে তার লেফট এন্টেরিয়র ডিসেন্ডিং আর্টারিতে ৮৫-৯০ শতাংশ ব্লক ধরা পড়ে। ডাক্তাররা তাকে তাৎক্ষণিক এনজিওপ্লাস্টি করার পরামর্শ দেন। কিন্তু টাকার অভাবে তিনি তা করাতে পারেননি। তাকে প্রাণায়াম ও মেডিটেশন পদ্ধতি চালিয়ে যেতে বলা হয়। তিনি বিগত আড়াই-তিন মাসে এখন আগের অপেক্ষা অনেক ভালো আছেন। যেখানে তার আগে আধা মাইল হাঁটতে কষ্ট হতো, এখন সে কষ্ট ছাড়াই দুই-তিন মাইল হাঁটতে পারেন। তিনি এর মধ্যে ভারতের এক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখিয়ে এসেছেন। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার বর্তমান অবস্থা দেখে তাকে আগের পদ্ধতিগুলো মেনে চলার পরামর্শ দেন এবং আপাতত এনজিওপ্লাস্টি করার দরকার নেই বলে মত দেন।
কারা করবেনঃ (১) যাদের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যেমন­ হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, পরিবারে হার্টের অসুখের ইতিহাস, উচ্চ কোলেস্টেরল ও স্থূলতা তারা উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো মেনে চলে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন যাতে তাদের করোনারি আর্টারি ডিজিস না হয়। (২) যাদের এনজিওগ্রাম করার পর করোনারি আর্টারিতে ব্লক ধরা পড়েছে তারা সেকেন্ডারি, প্রতিরোধ করে এ রোগের ভয়াবহ উপসর্গ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। (৩) যাদের এনজিওপ্লাস্টি বা বাইপাস অপারেশন করা হয়ে গেছে তাদের যেন আবার ব্লক না হয় সে জন্য তারা টারসিয়ারী প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।
অধিকাংশ ডাক্তার মনে করেন করোনারি আর্টারি একবার ব্লক হতে শুরু করলে এর গতি আর পাল্টানো যায় না। কিন্তু উপরিউক্ত গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনধারা পরিবর্তন করে বিশেষত খাওয়ার পরিবর্তন, সুচিন্তা, প্রাণায়াম ও মেডিটেশনের মাধ্যমে ব্লক সারানো সম্ভব। আমাদের দেশের লাখ লাখ হৃদরোগী যারা এ রোগের নিরাময়ের জন্য প্রচুর টাকা ব্যয় করে এমনকি অনেকে বাড়িঘর, জমিজমা বিক্রি করে এনজিওপ্লাস্টি বা বাইপাস অপারেশন করছেন বা অনেকে বিদেশে যাচ্ছেন, আবার অনেকের হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তারা উপরিউক্ত পদ্ধতি প্রয়োগ করে আবার পরিপূর্ণ সুস্থ জীবন পেতে পারেন।
লেখকঃ বিভাগীয় প্রধান, ইমিউনোলজি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা। ফোনঃ ০১৭১১৫৯৪২২৮


হৃদরোগ প্রতিরোধে

‘ফ্ল্যাভোনয়েডস’ নামের এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ সমৃদ্ধ খাবার হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনে। সম্প্রতি একটি গবেষক দল ওই ধরনের যৌগ ‘কের্সেটিন’ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন ৈএই যৌগ চা, পেঁয়াজ, আপেলে রয়েছে। এই কের্সেটিন’ হলো এক ধরনের ফাইটোকেমিক্যাল, যা কি না রঙেরও একটি অংশ। এটি শরীরে অ্যান্টি-অিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ‘কের্সেটিন’ ক্যান্সার রোধেও কার্যকর। বিশেষ করে প্রোস্টেইট ক্যান্সার রোধেই এটি বেশি সহায়ক। দেহে ‘কের্সেটিন’ যৌগ ভেঙে যাওয়ার পরই এর প্রতিক্রিয়া শুরম্ন হয়। এটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গের ক্রমবর্ধমান প্রদাহ রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এর আগের গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, ‘কের্সেটিন’ অন্ত্র ও যকৃতের কার্যকারিতায় খুব কম সময়ে শরীরে শোষিত হয়। যে কারণে এর উপস্থিতি মানব দেহের রক্তে পাওয়া যায়নি। এ ধরনের গবেষণার পর গবেষকরা সিদ্ধান্তেô পৌঁছেন, রক্তপ্রবাহে কের্সেটিন প্রবেশ করার পরই এটি বিপাক ক্রিয়ায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে শোষিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, কম মাত্রায় এ ধরনের যৌগসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে এর প্রভাব বেশি কার্যকর। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ ধরনের খাবার গ্রহণের ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমে আসে।


হার্ট সুস্থ রাখতে খাদ্য শস্য

বিজ্ঞানীদের মতে আঁশসমৃদ্ধ পূর্ণ খাদ্যশস্য (যিড়ষব মৎধরহং) হৃদরোগে আক্রান্তেôর ঝুঁকি কমায়। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ ৪২,৮৫০/- জন লোকের উপর গবেষণা চালিয়ে এ তথ্য উদঘাটন করেন। গবেষণায় দেখা যায় যারা দৈনিক ২৫ গ্রামের বেশি পূর্ণ খাদ্যশস্য খেয়েছেন তাদের হৃদরোগে আক্রান্তেôর ঝুঁকি পনেরো ভাগ কমে যায়। আবার যারা প্রতিদিন এগারো গ্রামের বেশি শস্যভূমি (নৎধহ) যাতে পর্যাপ্ত আঁশ থাকে খেয়েছেন তাদের ঝুঁকি শতকরা ত্রিশ ভাগ কমেছে। গবেষকরা মনে করেন পূর্ণ খাদ্যশস্যের আঁশ ( ঋরনৎব), স্টারলস এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান কোলেস্টরল হ্রাস করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এসব খাদ্যের অ্যান্টি-অিডেন্টও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসে অবদান রাখতে পারে। আঁশ সমৃদ্ধ হওয়ায় এসব খাবার গ্রহণে অল্পতেই ড়্গুধা মিটে যায়ফৈলে মোটা হবার প্রবণতাও কমে এবং সেই সাথে হৃদরোগে আক্রান্তেôর ঝুঁকিও হ্রাস পায়। বাদামী চাল, ওটমিল, ভুট্টা, পূর্ণ গমের তৈরি আটা, শস্যবীজের আবরণ দ্বারা তৈরি ভুষির কেক (ইৎধহ সঁভভরহং) ইত্যাদি পূর্ণ খাদ্যশস্যের আদর্শ উৎস।

রিউমেটিক ফিভার বা বাতজ্বরঃ
বাতজ্বর সাধারণত শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত বড় বড় জোড়া বিশেষ করে হাত ও পায়ের জোড়া বেশি আক্রান্ত হয়। অনেকদিন এ রোগে ভুগলে হৃৎপিণ্ডে অসুবিধা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্যারাসিটামল বা এসপিরিন জাতীয় ওষুধ উপসর্গ কমানোর জন্য দেয়া হয়। কিন্তু জীবাণু ধ্বংস করার জন্য পেনিসিলিন জাতীয় ওষুধ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদে অন্তত ৫ বছর গ্রহণ করতে হয়। স্পনডাইলো অর্থোপ্যাথিঃ এ ধরনের বাতজনিত রোগে সাধারণত কোমড়ে ব্যথা হয়। সকাল বেলা ঘুম থেকে কোমড় উপরে তুলতে খুব অসুবিধা হয়। মনে হয় কোমড়ের ওপর কে যেন জেঁকে বসেছে। কোমড়ের ব্যথা ছাড়াও হাঁটু, গোড়ালি ও অন্যান্য জোড়ায় ব্যথা হতে পারে। এ রোগেও বেদনানাশক ওষুধের পাশাপাশি ব্যায়াম ও ফিজিক্যাল থেরাপি নিয়মানুযায়ী করতে হয়। তাহলে এই রোগ নিয়ে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষের মতো জীবনযাপন করতে পারে। বাত জাতীয় রোগ যথাযথ চিকিৎসা না করালে রোগী কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। যা গোটাপরিবার এমনকি দেশের জন্য বোঝা হয়ে যেতে পারে। তাই এ রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনে বাত ব্যথা রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। লেখকঃ সহযোগী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, চেম্বারঃ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ইমেজিং সেন্টার, বাড়ি নং-৪৮, রোড নং-৯/এ, সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯ মোবাইলঃ ০১৮১৯৪১০০৮০