লিভার আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। তাই এর যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনিয়তা অপরিসীম।লিভারের রোগ সমূহ নির্ণয়ে ফাইব্রোস্ক্যান বিষয়ক লেখার ইচ্ছা অনেক আগে থেকেই ছিলো,আমার দেশে ১ জুন এই বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়,যা সাধারণ ,মানুষের জানার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করি। আপনাদের সাথেও শেয়ার করলাম।
বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতি ১২ জনে ১ জন হেপাটাইটিস ‘বি’ বা ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত। বাংলাদেশও এ হিসাবের বাইরে নয়। আমাদের পরিচালিত গবেষণায় দেখতে পেয়েছি, এদেশে এক কোটিরও বেশি লোক এ দুটি ভাইরাসে আক্রান্ত। এসব ব্যক্তি সময়ের ব্যবধানে লিভারের নানা ধরনের জটিলতায় ভুগে থাকেন। পাশাপাশি মানুষের জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের ফলে ফ্যাটি লিভারের মতো রোগও পাশ্চাত্যের মতোই এখন আমাদের ঘরে ঘরে। লিভারের বিভিন্ন রোগ নিরূপণের জন্য আমাদের দেশেই নানা আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে লিভার রোগের চিকিত্সার জন্য লিভার বায়োপসির প্রয়োজন পড়ে। পরীক্ষাটি খুব বেশি জটিল না হলেও, বায়োপসি করার জন্য রোগীকে হাসপাতালে একদিন ভর্তি থাকতে হয়।
উন্নত বিশ্বের অগ্রগতির ধারায় বর্তমানে বাংলাদেশেও লিভার ও অন্যান্য রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য লেটেস্ট সব টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ধারারই সর্বশেষ সংযোজন ‘ফাইব্রোস্ক্যান’। বিশ্ববাজারে এ প্রযুক্তির আবির্ভাব মাত্র কয়েক বছর আগে, আর এখন এটি রয়েছে আমাদের হাতের মুঠোয়—আমাদের রোগীদের সাধ্যের মধ্যেই।
লিভার সিরোসিসের কথা আমরা সবাই কমবেশি জানি। আমাদের জানা আছে, এর নানা কমপ্লিকেশনের কথাও। উন্নত প্রযুক্তির আবির্ভাব, লিভার চিকিত্সার প্রসার এবং পাশাপাশি হেপাটাইটিস ‘বি’, ‘সি’ ও ফ্যাটি লিভারের মতো রোগগুলো বিস্তার লাভ করায় বাংলাদেশে লিভার সিরোসিস রোগ এখন ধরা পড়ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। লিভারে সিরোসিস হতে, কারণ বুঝে সাধারণত বেশ কিছুদিন সময় লাগে। এতদিন পর্যন্ত একমাত্র বায়োপসি করলেই লিভার সিরোসিস হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যেত। বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ের লিভার সিরোসিসের ক্ষেত্রে একথাটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
‘ফাইব্রোস্ক্যান’র কল্যাণে উন্নত বিশ্বের মতো এদেশেও আমরা এখন বায়োপসি না করেই বায়োপসির চেয়ে কম খরচে এবং রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি না করে, মাত্র কয়েক মিনিটে লিভারে সিরোসিস আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে পারি। লিভারে হেপাটাইটিস ‘বি’, ‘সি’, ফ্যাটি লিভার বা অন্য যে কোনো কারণে ক্রনিক হেপাটাইটিস হলে লিভার টিস্যু ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে যায়। একে আমরা বলি ফাইব্রোসিস। এই ‘ফাইব্রোসিস’ ধীরে ধীরে একসময় ‘সিরোসিসে’ রূপ নিতে পারে। ফ্রান্সের ঊপযড়ংবহ কোম্পানির উদ্ভাবিত ‘ফাইব্রোস্ক্যান’ যন্ত্রটির সাহায্যে লিভারে ফাইব্রোসিসের বিভিন্ন ধাপ নিরূপণ করা যায়। ফলে আমরা খুব সহজেই বলে দিতে পারি কারও সিরোসিস আছে কিনা কিংবা সিরোসিস না হয়ে থাকলে তা হওয়ার আশঙ্কা ঠিক কতখানি। লিভারের অবস্থা জানার জন্য যে কোনো সুস্থ ব্যক্তিও রুটিন পরীক্ষা হিসেবে ফাইব্রোস্ক্যান করাতে পারেন।
‘ফাইব্রোস্ক্যান’র কয়েকটি বিশেষত্ব হলো—এটি সহজে ও তাড়াতাড়ি করা যায়, কোনো আগাম প্রিপারেশনের দরকার হয় না, হাসপাতালে ভর্তিও থাকতে হয় না, ৫ থেকে ৮ মিনিটেই পরীক্ষাটি করা যায়। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, প্রয়োজনে বার বার করা যায়। লিভারের ফলোআপের জন্যও এটা খুব কার্যকর। বিশেষ করে যারা বায়োপসি করাতে ভয় পান তাদের জন্য উপযোগী এবং লিভারের রুটিন পরীক্ষা হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি ‘ফাইব্রোস্ক্যান’র মতো আধুনিক পরীক্ষার সুযোগ আজ আমাদের দেশেও আছে। আজকের মানুষ অনেক বেশি স্বাস্থ্যসচেতন—আর স্বাস্থ্য সচেতন সবার জন্যই ফাইব্রোস্ক্যান, যা লিভার বিষয়ে আমাদের সর্বশেষ জ্ঞান।
লেখক : ডা. মামুন-আল-মাহতাব (স্বপ্নীল)
সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়